November 1, 2019

ফিরে দেখা : কলকাতায় সরোদ চর্চা

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

পণ্ডিত অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

 সরোদ যন্ত্রের সৃষ্টিতে ভারতে আসা আফগানকে ব্যবসায়ীদের উত্তরসূরীদের বিরাট অবদান আছে। সেই সব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকত রবাব নামে একটি বাদ্যযন্ত্র।  এটি একটি লোক বাদ্যযন্ত্র। যা তারা লোক সংগীতের সঙ্গে বাজাতেন। রপ্তানির সুবাদে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তাদের অনায়াসে যাতায়াত ছিল। দরবারী সঙ্গীত অর্থাৎ ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের প্রতি তাঁরা ক্রমশ আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। 

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তাদের অনেকেই পাঞ্জাবে ও উত্তরপ্রদেশের শাজাহানপুর বুলন্দশহর, বেরেলী, মোরাদাবাদ, নাজিবাবাদ ইত্যাদি অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন।  ক্রমশ তারা ভারতের বৃহৎ সংগীত পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েন। উল্লেখ্য ভারতে প্রাচীনকাল থেকে রবাব এর মতো একটি বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন ছিল। যেটি রুদ্রবীণা নামে পরিচিত ছিল। মোগল দরবারে সংগীতরত্ন মিয়া তানসেন এই যন্ত্রটি বাজাতেন। তখন থেকে রুদ্রবীণা বাদ্যযন্ত্রটিকে ধ্রুপদী বীনা বা তানসেনী রবাব বলা হত। তবে এই বাদ্য যন্ত্রটির গঠন ও বাজাবার পদ্ধতি আফগানি রবাব থেকে একেবারেই আলাদা।

Arabian Rabab
Rebab of Uzbekistan

 ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে তানসেন বংশের জাফর খাঁ,  সুর সৃঙ্গার যন্ত্রের উদ্ভাবন করেন। ধ্রুপদী রবাবের কাঠের প্লেটের বদলে ধাতুর প্লেট, চামড়ার জায়গায় কাঠের তবলী ও তাঁতের তারের জায়গায় লোহা, পিতল বা তামার তার লাগিয়ে এই যন্ত্রটি তৈরি হয়। ফলে এই নতুন যন্ত্রটির ধ্বনি বা মীড় দীর্ঘস্থায়ী হয়।

নবাব ওয়াজেদ আলী শাহ যখন ব্রিটিশদের কাছে হেরে কলকাতায় নির্বাসিত হলেন, তখন শিল্প ও কলা রসিক নবাব সঙ্গে করে নিয়ে এলেন অনেক বাইজি, বাদক, গায়ক ও কত্থক নাচিয়ে ইত্যাদিদের। ওয়াজেদ আলীর সঙ্গে যাঁরা এসেছিলেন তারমধ্যে নিয়ামতুল্লা খাঁর নাম প্রধান, কারণ তাঁর একটা বিরাট গুনগ্রাহীর দল গড়ে ওঠে, যারা ছিলেন ব্যবসায়ী এবং সেই অর্থে জমিদার নয়। বলাহয় নিয়ামতউল্লা খাঁই প্রথম হিন্দুস্থানী সঙ্গীতের উচ্চমানের যন্ত্রসংগীত শিল্পী। তাঁর দুই পুত্র কেরামত উল্লা খঁ  ও কৌকব খাঁ। কৌকব খাঁ, কুকব খাঁ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন বাঙালি ধনী সংগীত-সৌখিন মহলে। 

নিয়ামতুল্লা খান ও আশাদুল্লা খান

 বেঙ্গল ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন এদেরকে রানী ভিক্টোরিয়ার করনেশন অ্যানিভার্সারিতে লন্ডনে বাজাতে পাঠান। ঝকমকে পোশাক ও দ্রুতলয়ের গৎ তোড়া বাজিয়ে সাহেব দর্শকদের মন জয় করে নেন। পরবর্তীকালে এঁরা বেশ কিছু রেকর্ড করেন যা সেই সময় বাঙালির ঘরে ঘরে নিয়মিত বাজত। 

আমীর আলি খান

এই ঘরানার দ্রুত গত গুলি ছিল খুব আকর্ষণীয়। তানসেন বংশের নানা বন্দিশকে এরা নিজেদের মত করে গড়ে সাজিয়ে নেন। কলকাতায় যারা এদের কাছে শিখে পরের প্রজন্মে তার প্রচার শিষ্যদের মাধ্যমে করেন তারা হলেন কালী পাল, ধীরেন বসু, শ্যাম গাঙ্গুলি প্রমুখ। এই বংশের আর এক গুনী শিষ্য ওমর খাঁ কলকাতায় স্থায়ীভাবে বাস করতেন এবং এর পুত্র ইরফান খানের কাছে ভালো ভালো বন্দিশ শোনা যেত। 

বাবা আলাউদ্দিন

A rectangular wooden frame fitted on both sides with goat skin forms the resonator of this instrument. The single steel string is tunable with a wooden peg mounted on the long neck. It is played with a bow. Body is approximately 11″ w x 20″ t; over all length is approximately 34.5″. The term Rabab is found in ninth and tenth century texts,and is the oldest known Arabic word for a bowed instrument Capable of a range of dynamic accents. This instrument is the essential melody instrument of the nomadic Bedouins; customarily played by the sha’ir, or poet-singer, to accompany heroic and love songs. A rabab player rests the instrument vertically on his or her knee and draws the bow across the string in a similar fashion to a cello player. Never handle the hair of the bow with your hands. Oils from your skin will be absorbed by the bow hairs and leave permanent slick spots on the hair. The bow hair, whether it is made of real horsehair or synthetic fibers, will be slick. In order to grab the strings it will need to be coated with rosin. Rosin is sold seperatley.

রাজশাহীর জমিদার ললিত মোহন মৈত্রেয় ভগবান দাস পাখোয়াজজীর শিষ্য ছিলেন। পাখোয়াজ রেওয়াজ করার জন্য শাহজাহানপুর থেকে সরোদিয়া মহাম্মদ আবদুল্লা খাঁ ও তাঁর দত্তক পুত্র আমির খাঁ কে রাজশাহীতে নিয়ে আসেন বাঁধা মাইনের চাকরিতে। এঁদের বাজনা শুনে আকৃষ্ট হয়ে নাতি রাধিকা মোহন আমির খানের কাছে নিয়মিত তালিম নিতে শুরু করেন।  হাফিজ আলী খাঁ সাহেবের কাকা মুরাদ আলি খাঁ ছিলেন আব্দুল্লা ও আমির খানের গুরু। ইনি ওই ঘরানার বিভিন্ন রকম গতের খাজানা ছিলেন। কোন কারনে বাড়ির উপর রাগ করে বাড়ির বাইরের লোকজনদের শেখাতে আরম্ভ করেন, যা তখনকার দিনে খুব বিরল ছিল। পরবর্তীকালে আমি আমীর খাঁ যখন কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলেন তখন সেই সব গৎ বাঙালি ছাত্র রাধিকা মোহন মৈত্র, বাণীকন্ঠ মুখোপাধ্যায়, তিমির বরণ ভট্টাচার্য্য এদের মধ্যে পৌঁছে গেলো যা এখনো এদের  শিষ্য-প্রশিষ্যদের মধ্যে শোনা যায়। রাধিকামোহন, যিনি পরবর্তীকালে  সেনী বীনকার দবীর খাঁর কাছে শেখেন। রাগদারীর শুদ্ধতার খাতিরে ওইসব বহুমূল্য গদ সম্পাদনা করে তাঁর ছাত্রদের শিখেছেন। যা তাঁ দুই সুযোগ্য শিষ্য বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, সমরেন্দ্র সিকদার এর শিষ্যদের মাধ্যমে এখনো শোনা যায়।

নিয়ামতুল্লাহ ঘরানার আধিপত্য ভেঙে নিজের সাম্রাজ্য স্থাপন করেন হাফিজ আলী খাঁ তার গান গাওয়া সরোদ বাজিয়ে। যদিও তিনি সুদূর গোয়ালিয়রে থাকতেন কিন্তু মাঝে মধ্যেই কলকাতায় বাজাতে আসতেন। অসাধারণ বাজনা শুনে বড় একটা উদগ্র সমর্থকের দল গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে জলুবাবু, লোহাপট্টির বেচাচন্দ্র, গৌরীপুর হাউজ রাইচাঁদ বড়াল ও দুর্লভ চন্দ্র ভট্টাচার্যের নাম  উল্লেখযোগ্য।  পরবর্তীকালে আমজাদ আলী খানের বাজনার প্রভাব বাঙালির ওপর পড়ে। এনার বাজনায় সেতারের মতন পরিচ্ছন্ন তান বাঙালি সরোদ বাদকদের আকৃষ্ট করে।

ধীরেন বসু
রাধিকা মোহন মৈত্র
আলি আকবর খান
তিমির বরণ

বাবা আলাউদ্দিন খাঁর সঙ্গীতের শিক্ষা শুরু হয় কলকাতার নুলো গোপাল ও হাবু দত্তের কাছে।  একজনের কাছে ধ্রুপদ-খেয়াল গান আর অন্যজনের কাছে পাশ্চাত্য রীতিতে বেহালার শিক্ষা। এছাড়া উনি নন্দবাবুর কাছে মৃদঙ্গ,  হাজারী ওস্তাদের কাছে সানাই, লোবো সাহেবের কাছে বেহালা ও আহমেদ আলীর কাছে সরোদ শেখেন রামপুরের উজির খাঁ সাহেবের কাছে শেখার আগে। কলকাতায় বীরেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ছাড়া বিশেষ কাউকে শেখাননি। সবাইকে বলতেন মাইহারে, যেখানে তিনি রাজসভা বাদক ছিলেন সেখানে গিয়ে শিখতে। কলকাতার দুই বিখ্যাত বাঙালি সরোদ বাদক, তিমির বরণ ও শ্যাম গঙ্গোপাধ্যায় দুজনেই মাইহারে গিয়ে শিক্ষা লাভ করেন। 

পঞ্চাশের দশক থেকে যখন বাবা আলাউদ্দিনের সুযোগ্য পুত্র আলী আকবর খাঁ ও ভ্রাতুষ্পুত্র বাহাদুর খাঁ কলকাতায় বসবাস শুরু করলেন তখন থেকেই সেই অর্থে কলকাতায় মাইহার ঘরানার সরোদ বাদন এর প্রচলন শুরু হল। উন্নত ও সুন্দর বাজনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্টিত আলি আকবর কলেজ অফ মিউজিকএ শিখতে যান।  এভাবেই মাইহার বাজের প্রভাব কলকাতা শহরের যন্ত্রসংগীতে পড়ে।

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত

তাঁরা ক্রমশ আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। 

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তাদের অনেকেই পাঞ্জাবে ও উত্তরপ্রদেশের শাজাহানপুর বুলন্দশহর, বেরেলী, মোরাদাবাদ, নাজিবাবাদ ইত্যাদি অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন।  ক্রমশ তারা ভারতের বৃহৎ সংগীত পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েন। উল্লেখ্য ভারতে প্রাচীনকাল থেকে রবাব এর মতো একটি বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন ছিল। যেটি রুদ্রবীণা নামে পরিচিত ছিল। মোগল দরবারে সংগীতরত্ন মিয়া তানসেন এই যন্ত্রটি বাজাতেন। তখন থেকে রুদ্রবীণা বাদ্যযন্ত্রটিকে ধ্রুপদী বীনা বা তানসেনী রবাব বলা হত। তবে এই বাদ্য যন্ত্রটির গঠন ও বাজাবার পদ্ধতি আফগানি রবাব থেকে একেবারেই আলাদা।

 ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে তানসেন বংশের জাফর খাঁ,  সুর সৃঙ্গার যন্ত্রের উদ্ভাবন করেন। ধ্রুপদী রবাবের কাঠের প্লেটের বদলে ধাতুর প্লেট, চামড়ার জায়গায় কাঠের তবলী ও তাঁতের তারের জায়গায় লোহা, পিতল বা তামার তার লাগিয়ে এই যন্ত্রটি তৈরি হয়। ফলে এই নতুন যন্ত্রটির ধ্বনি বা মীড় দীর্ঘস্থায়ী হয়।

নবাব ওয়াজেদ আলী শাহ যখন ব্রিটিশদের কাছে হেরে কলকাতায় নির্বাসিত হলেন, তখন শিল্প ও কলা রসিক নবাব সঙ্গে করে নিয়ে এলেন অনেক বাইজি, বাদক, গায়ক ও কত্থক নাচিয়ে ইত্যাদিদের। ওয়াজেদ আলীর সঙ্গে যাঁরা এসেছিলেন তারমধ্যে নিয়ামতুল্লা খাঁর নাম প্রধান, কারণ তাঁর একটা বিরাট গুনগ্রাহীর দল গড়ে ওঠে, যারা ছিলেন ব্যবসায়ী এবং সেই অর্থে জমিদার নয়। বলাহয় নিয়ামতউল্লা খাঁই প্রথম হিন্দুস্থানী সঙ্গীতের উচ্চমানের যন্ত্রসংগীত শিল্পী। তাঁর দুই পুত্র কেরামত উল্লা খঁ  ও কৌকব খাঁ। কৌকব খাঁ, কুকব খাঁ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন বাঙালি ধনী সংগীত-সৌখিন মহলে। 

 বেঙ্গল ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন এদেরকে রানী ভিক্টোরিয়ার করনেশন অ্যানিভার্সারিতে লন্ডনে বাজাতে পাঠান। ঝকমকে পোশাক ও দ্রুতলয়ের গৎ তোড়া বাজিয়ে সাহেব দর্শকদের মন জয় করে নেন। পরবর্তীকালে এঁরা বেশ কিছু রেকর্ড করেন যা সেই সময় বাঙালির ঘরে ঘরে নিয়মিত বাজত। 

এই ঘরানার দ্রুত গত গুলি ছিল খুব আকর্ষণীয়। তানসেন বংশের নানা বন্দিশকে এরা নিজেদের মত করে গড়ে সাজিয়ে নেন। কলকাতায় যারা এদের কাছে শিখে পরের প্রজন্মে তার প্রচার শিষ্যদের মাধ্যমে করেন তারা হলেন কালী পাল, ধীরেন বসু, শ্যাম গাঙ্গুলি প্রমুখ। এই বংশের আর এক গুনী শিষ্য ওমর খাঁ কলকাতায় স্থায়ীভাবে বাস করতেন এবং এর পুত্র ইরফান খানের কাছে ভালো ভালো বন্দিশ শোনা যেত। 

রাজশাহীর জমিদার ললিত মোহন মৈত্রেয় ভগবান দাস পাখোয়াজজীর শিষ্য ছিলেন। পাখোয়াজ রেওয়াজ করার জন্য শাহজাহানপুর থেকে সরোদিয়া মহাম্মদ আবদুল্লা খাঁ ও তাঁর দত্তক পুত্র আমির খাঁ কে রাজশাহীতে নিয়ে আসেন বাঁধা মাইনের চাকরিতে। এঁদের বাজনা শুনে আকৃষ্ট হয়ে নাতি রাধিকা মোহন আমির খানের কাছে নিয়মিত তালিম নিতে শুরু করেন।  হাফিজ আলী খাঁ সাহেবের কাকা মুরাদ আলি খাঁ ছিলেন আব্দুল্লা ও আমির খানের গুরু। ইনি ওই ঘরানার বিভিন্ন রকম গতের খাজানা ছিলেন। কোন কারনে বাড়ির উপর রাগ করে বাড়ির বাইরের লোকজনদের শেখাতে আরম্ভ করেন, যা তখনকার দিনে খুব বিরল ছিল। পরবর্তীকালে আমি আমীর খাঁ যখন কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলেন তখন সেই সব গৎ বাঙালি ছাত্র রাধিকা মোহন মৈত্র, বাণীকন্ঠ মুখোপাধ্যায়, তিমির বরণ ভট্টাচার্য্য এদের মধ্যে পৌঁছে গেলো যা এখনো এদের  শিষ্য-প্রশিষ্যদের মধ্যে শোনা যায়। রাধিকামোহন, যিনি পরবর্তীকালে  সেনী বীনকার দবীর খাঁর কাছে শেখেন। রাগদারীর শুদ্ধতার খাতিরে ওইসব বহুমূল্য গদ সম্পাদনা করে তাঁর ছাত্রদের শিখেছেন। যা তাঁ দুই সুযোগ্য শিষ্য বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, সমরেন্দ্র সিকদার এর শিষ্যদের মাধ্যমে এখনো শোনা যায়।

নিয়ামতুল্লাহ ঘরানার আধিপত্য ভেঙে নিজের সাম্রাজ্য স্থাপন করেন হাফিজ আলী খাঁ তার গান গাওয়া সরোদ বাজিয়ে। যদিও তিনি সুদূর গোয়ালিয়রে থাকতেন কিন্তু মাঝে মধ্যেই কলকাতায় বাজাতে আসতেন। অসাধারণ বাজনা শুনে বড় একটা উদগ্র সমর্থকের দল গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে জলুবাবু, লোহাপট্টির বেচাচন্দ্র, গৌরীপুর হাউজ রাইচাঁদ বড়াল ও দুর্লভ চন্দ্র ভট্টাচার্যের নাম  উল্লেখযোগ্য।  পরবর্তীকালে আমজাদ আলী খানের বাজনার প্রভাব বাঙালির ওপর পড়ে। এনার বাজনায় সেতারের মতন পরিচ্ছন্ন তান বাঙালি সরোদ বাদকদের আকৃষ্ট করে।

বাবা আলাউদ্দিন খাঁর সঙ্গীতের শিক্ষা শুরু হয় কলকাতার নুলো গোপাল ও হাবু দত্তের কাছে।  একজনের কাছে ধ্রুপদ-খেয়াল গান আর অন্যজনের কাছে পাশ্চাত্য রীতিতে বেহালার শিক্ষা। এছাড়া উনি নন্দবাবুর কাছে মৃদঙ্গ,  হাজারী ওস্তাদের কাছে সানাই, লোবো সাহেবের কাছে বেহালা ও আহমেদ আলীর কাছে সরোদ শেখেন রামপুরের উজির খাঁ সাহেবের কাছে শেখার আগে। কলকাতায় বীরেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ছাড়া বিশেষ কাউকে শেখাননি। সবাইকে বলতেন মাইহারে, যেখানে তিনি রাজসভা বাদক ছিলেন সেখানে গিয়ে শিখতে। কলকাতার দুই বিখ্যাত বাঙালি সরোদ বাদক, তিমির বরণ ও শ্যাম গঙ্গোপাধ্যায় দুজনেই মাইহারে গিয়ে শিক্ষা লাভ করেন। 

পঞ্চাশের দশক থেকে যখন বাবা আলাউদ্দিনের সুযোগ্য পুত্র আলী আকবর খাঁ ও ভ্রাতুষ্পুত্র বাহাদুর খাঁ কলকাতায় বসবাস শুরু করলেন তখন থেকেই সেই অর্থে কলকাতায় মাইহার ঘরানার সরোদ বাদন এর প্রচলন শুরু হল। উন্নত ও সুন্দর বাজনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্টিত আলি আকবর কলেজ অফ মিউজিকএ শিখতে যান।  এভাবেই মাইহার বাজের প্রভাব কলকাতা শহরের যন্ত্রসংগীতে পড়ে।

সূত্রনির্দেশ

নাগরিক কথা, সেপ্টেম্বর, ২০১৭