July 1, 2024

History and Journey of Annan Theatre Group (1971-2020)  

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Dr. Ankush Das

Abstract :

It was during the turbulent Naxalite movement. As many as 56 lives have been lost to police or police-aided shootings across the district. In 1971 alone more than 70-71 lives were lost in the ‘Khatam Abhiyan’ of the CPI (ML). Comrade Charu Majumder wrote a letter to the Naxalists of Birbhum on October 11 this year, “Dear Comrade, there are victories as well as defeats in the struggle…”. A large part of the youths of that time were involved in this movement at various stages. Some of them were active members of local clubs or non-political social and cultural organizations. If one or more clubs or organizations are associated with the Naxal movement, those clubs also come under police surveillance. Even many members who were not directly or in any way associated with the movement were influenced by the state. The ‘Jonaki Club’ was established in the theatre practice of Siuri, the capital of the Birbhum district. Jonaki was also active in various social and cultural activities.. But in the last phase of the sixties, several people of Jonaki got directly or indirectly involved with that turbulent movement. Club members Jagannath Singh and Tapan Narayan Roychowdhury were arrested. Police search for Karunamay Ghosh, Brajgopal Das and Pushpit Mukherjee. In such an exciting situation, in the middle of 1971, an important member of Jonaki’s theatre practice, promising young actor Rajkumar Saha realized the need to build a completely separate organization only for cultural practices such as drama-music and not in a multi-purpose institution (club). This is how the context for the debut of ‘Anan’, the largest theatre group in Birbhum district after independence was created. This research article traces the long history and journey of Annan theatre group.

Keywords :

Group Theatre of Bengal, Theatre of Birbhum, Annan Theatre group, Siuri, Birbhum.

আনন নাট্যদলের ইতিহাস ও যাত্রাপথ (১৯৭১-২০২০)

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তথা জেলার বিশিষ্ট নাট্যজন রজকুমার সাহা হতে জানা গেছে সুব্রত নন্দনের (গুরুপদ নন্দনের পুত্র) তৎকালীন চাঁদনীপাড়া বাজারের চৌরাস্তা মোড় নিকটস্থ বাড়িতে আয়োজিত আলোচনা সভায় শ্রী সাহা ছাড়াও সমমনস্ক পীযূষ গাঙ্গুলি , বিভাস গাঙ্গুলি , রামগোপাল দে , পরেশ রায় , সুব্রত নন্দন ও আশীষ ঘোষের উপস্থিতিতে অভিধান হতে খুঁজে সর্বসম্মতিতে দলের নাম ‘আনন’ ঠিক করা হয়। দলের সভ্যদের বাড়িতেই চলতে থাকে মহড়া। অবশেষে ১৯৭১ সালের ৭ই ডিসেম্বর সিউড়ী জেলা গ্রন্থাগারে রতন কুমার ঘোষ রচিত ও রজকুমার সাহা নির্দেশিত ‘শেষ বিচার’ অভিনয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে ‘আনন’ যা বছর ঘুরতেই জেলার অন্যতম বৃহৎ দলে পরিণত হতে শুরু করে। সেদিন ‘শেষ বিচার’ প্রযোজনায় বিভিন্ন চরিত্রে রূপদান করেন বিভাস গাঙ্গুলি , বাবুন চক্রবর্তী , সুব্রত নন্দন , পরেশ রায় , রামগোপাল দে ও মানিক দত্ত।

অলক দাস অঙ্কিত লোগো

আননের চল্লিশ বছর পূর্তিতে প্রকাশিত তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে জেলায় দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী পত্রিকা ‘কল্লোলিত চল্লিশ : আনন’ হতে জানা যায় অলক দাস সূচনা পর্বে কয়েকটি রেখার মাধ্যমে আননের প্রতীক বা লোগো তৈরি করেন যা ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। প্রসঙ্গত, সদর শহরের নাট্যদলগুলির মধ্যে এটিই ছিল প্রথম। ইতিপূর্বে সিউড়ীর আর কোন নাট্যদলের প্রতীক ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায় না। পরবর্তীতে বর্ধমান নিবাসী শিল্পী স্বপন রায় অলক দাসের রেখা অবলম্বনেই প্রতীককে নব রূপদান করেন যা এখনও পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়ে চলেছে।  

                                                     

 শিল্পী স্বপন রায় নির্মিত লোগো

বছর ঘুরতেই চারটি প্রযোজনা মঞ্চস্থ হয় ১৯৭২ সালে। রজকুমার সাহা নির্দেশিত ‘ঝুমুর’ , ‘শতাব্দী মরে না শতাব্দী’ , ‘ইতিহাস কাঁদে’ ও ‘নীলদর্পণ’ বিপুল জনপ্রিয়তা ও সমাদরের সাথে অভিনীত হয়। সিউড়ীর একাধিক নাট্যপ্রিয় মানুষ এই প্রযোজনাগুলির সাথে যুক্ত হওয়ায় কলেবরে মুখরিত হতে থাকে আনন। ১৯৭১ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে ২৭টি প্রযোজনা উপস্থাপনা করে এই নাট্যদল। ১৯৭৫ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর প্রথম প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আনন। গুরুসদয় মঞ্চে আয়োজিত ‘বীরভূম জেলা নাট্য প্রতিযোগিতা’-তে অংশগ্রহণ করেন ডায়মন্ড ক্লাব (লাভপুর), অর্ঘ্য নাট্য সংস্থা (সিউড়ী), রঙ্গম (রামপুরহাট), গন্ধরাজ নাট্য সংস্থা (সিউড়ী) ও অভিযান (পরবর্তীতে থিয়েটার অভিযান হিসেবে পরিচিত ; সিউড়ী)। এখানে উল্লেখ্য এই প্রতিযোগিতায় অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় , রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের মত বেশ কিছু নাট্যব্যক্তিত্বের নাট্য প্রতিযোগিতার স্বপক্ষে ও বিপক্ষে মতামত সম্বলিত একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। যদিও সেই পুস্তিকাটির সন্ধান বর্তমান গবেষক এখনও পর্যন্ত পায়নি তথাপি বলতে হয় এই উদ্যোগ ছিল সেই সময়ের নিরিখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেই সময় নাট্য প্রতিযোগিতার প্রতি একটি বৃহৎ অংশের মনোভাব ছিল সদর্থক। যদিও নব্বই দশকের পর হতেই সেই মনোভাবে ভাঁটার টান প্রকট হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে দাঁড়িয়ে স্রোতের বিরুদ্ধে বিকল্প চিন্তার উর্বর ফসল স্বরূপ নাট্য প্রতিযোগিতার ভালো মন্দ নিয়ে বীরভূমের মত প্রান্তিক জেলায় মতামত প্রকাশের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী ও প্রশংসনীয়। এই পর্বের (১৯৭১-৮১) উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় দুটি প্রযোজনা হল ঝুমুর ও মিছিল। ১৯৭২ সালের জানুয়ারির অন্তিমে প্রথম মঞ্চস্থ হয় ঝুমুর। প্রথম অভিনয়ের কলাকুশলীরা ছিলেন রজকুমার সাহা (মদন), বিভাস গাঙ্গুলি (ফটিক), কল্যাণ ঘোষ (রসিক), মানিক দত্ত (বিহারীলাল), পীযূষ গাঙ্গুলি (চরণ), পীযূষ সরকার (জুয়ারি), বাবুন চক্রবর্তী (বিড়িওয়ালা), রামগোপাল দে (কর্তা), পরেশ রায় (নিজামুদ্দিন), বিজন রায়চৌধুরী (সন্তোষ দাস), হেমন্ত ঢুলী (ঢোল বাদক), সুকুমার চৌধুরী (হারমোনিয়াম বাদক), স্বপ্না চৌধুরী চক্রবর্তী (নেপথ্য গায়িকা), শিখা দত্তগুপ্ত (রাধাবালা)। ঝুমুরের জনপ্রিয়তার দৌলতে ১৯৮২ সালের জানুয়ারির ৩ তারিখে ৫০তম অভিনয় উপস্থাপিত হয়। ১৯৮১ সালে জানুয়ারির অন্তিমে জেলা গ্রন্থাগারে ‘মিছিল’ প্রযোজনার উপস্থাপনা সিউড়ী শহরের নাট্যচর্চায় উল্লেখযোগ্য ঘটনা। প্রথম অভিনয়েই দর্শক মন জয় করে নেয় এই প্রযোজনাটি। সেই থেকে প্রতি সপ্তাহে জেলা গ্রন্থাগারে দর্শকপূর্ণাবস্থায় নিয়মিত অভিনয় হতে থাকে মিছিল যা সিউড়ীতে শহরে নিয়মিত নাট্যাভিনয়ের ক্ষেত্রে ছিল প্রথম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের এই যে ২৫তম অভিনয়ের পরে জেলা গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে মিছিলের নিয়মিত অভিনয়ে ছেদ পড়ে। যদিও তারপরে সিউড়ীর মিউনিস্যাল গার্লস স্কুল ও বেণীমাধব ইন্সটিটিউশনে ‘মিছিল’ উপস্থাপনার চেষ্টা হলে সেখানেও কর্তৃপক্ষের অপত্তিতে তা ফলপ্রসূ হয়নি। অনুমান, বাদল সরকারের কর্মকাণ্ডের সাথে রাজনৈতিক মতাদর্শগত পার্থক্য আপত্তির নেপথ্য কারণগুলির একটি হয়ে থাকতে পারে। টিকিটের বিনিময়ে আননের প্রথম প্রযোজনা এই মিছিল। এছাড়াও অভিনয়ান্তে দর্শকদের লিখিত মতামত সংগ্রহ করা হয় মিছিল প্রযোজনায় যা সদর শহরে তো বটেই সম্ভবত সমগ্র জেলায় নাট্যদলের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম। ১৯৮৭ সালের ১৭ই জানুয়ারিতে মিছিলের ৫০তম অভিনয় উপলখ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং নাট্যকার। সেইদিন একটি আলোচনাচক্রেরও আয়োজন করা হয় যেখানে বক্তা ছিলেন বাদল সরকার।

আনন আয়োজিত আলোচনা সভায় মধ্যমণি বাদল সরকার

                         এরপর আসা যাক আশির দশকে। ঝুমুর ও মিছিল ছাড়াও এই দশকও আনন তথা সিউড়ীর নাট্যচর্চার ইতিহাস ঘটনাবহুল। রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে অদূরদর্শিতা ও পরিকল্পনাহীন ভাবে মূল শহর হতে বেশ কিছুটা দূরে নির্মিত রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহের অবস্থা তখন অত্যন্ত সঙ্গিন। বিভিন্ন অব্যবস্থা সত্ত্বেও কেবলমাত্র তার ভাড়া প্রায় ১০০ টাকা (সর্বোচ্চ টিকিটের দাম অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১ টাকা থাকত)। শব্দ, আলো, জেনারেটার সহ বিবিধ খরচ আলাদা ভাবে দলগুলিকে বহন করতে হত। ইতিপূর্বে লীজ ক্লাবের আমলা ও সরকারী-বেসরকারি স্থানে উচ্চপেশায় কর্মরত সভ্যদের অসীম বাদান্যতায় জেলার ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক মঞ্চ ‘দীননাথ দাস মেমোরিয়াল হল’ তথা ‘গুরুসদয় মঞ্চ’ ততদিনে ‘চৈতালি’ সিনেমা হলে পরিবর্তন হয়ে গেছে। ওদিকে জেলা গ্রন্থাগারেও নাটকের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই উপযুক্ত প্রেক্ষাগৃহের অভাব প্রকট হয়ে ওঠে। পাশাপাশি মুক্তমঞ্চের জন্যও স্থানাভাব সৃষ্টি হয়। উপযুক্ত স্থায়ী মঞ্চের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে জেলা সহ সিউড়ীর সংস্কৃতি মনস্ক বা বিশেষত নাট্যপ্রেমী মানুষেরা। আনন এই দাবির এক উপযুক্ত শরীক হিসেবে পথে নামে কখনও নিজস্ব উদ্যোগে তো কখনও যৌথ ভাবে। মুক্তমঞ্চ স্থাপনে উদ্যোগী হয়ে ১৯৮১ সালে জুলাই মাসে আননের পক্ষ হতে সিউড়ী পৌরসভার কাছে শহরের কেন্দ্রস্থলে কাঠা তিনেক জমির জন্য আবেদন করা হয়। তার প্রেক্ষিতে তৎকালীন পৌরপিতা ব্রজগোপাল সাহা ওই বছরই ৩০শে নভেম্বর পত্র মাফৎ (মেমো নং- ৪৮৫/এস. এম.) নির্দিষ্ট কিছু শর্তে লীজ ক্লাব নিকটস্থ রাজার পুকুর সংলগ্ন স্থানে ২০ শতক জায়গা (চাঁদনী সাহেবগঞ্জ মৌজা ; প্লট নং- ১৫/৯৯৫) আননের দায়িত্বে বরাদ্দ করেন। সেই সাথে যুব কল্যাণ দপ্তর হতে ১১,২৫০ টাকাও বরাদ্দ করা হয়। সেই সূত্রে ৭ই ডিসেম্বর উক্ত স্থানে ‘আনন মুক্তমঞ্চ’ নির্মাণের জন্য ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও মঞ্চের নামকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ হতে আপত্তি জানালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কর্মসূচী বাতিল হয়। এ বিষয়ে দিদিভাই সংবাদপত্রে নির্মাল্য মল্লিকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় ‘…মঞ্চের নামকরণ নিয়ে কোন কোন মহলে অবশ্য আপত্তিও উঠেছে। অনুষ্ঠানের সভাপতি পুরপিতা ব্রজগোপাল সাহা দশটি প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের সূচনা করেন। ১৪টি ওয়ার্ডের কমিশনারগণ আননের নামেই মঞ্চ হোক বলে সর্বসম্মতি জানিয়েছেন। তবে এখনও দলিল হয়নি বলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়নি। নামকরণকে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন গোষ্ঠীতে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশাসনের কিছু ব্যক্তিও একটি গোষ্ঠীর নামে নামকরণে আপত্তি প্রকাশ করেছেন। তবে সিউড়ীর নাট্যামোদীরা একত্রিত হয়ে টাকা ও জায়গা প্রাপ্তির বিষয়ে আইনগত দিকটি জেনে নিয়ে মঞ্চ স্থাপনের উদ্দেশ্যে যথেষ্ট সচেষ্ট হবেন – এটাই আজ অনেকের প্রত্যাশা ’। এখানে উল্লেখ্য লীজ ক্লাবের মত প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন স্থানে তাদের প্রভাব থাকাটা স্বাভাবিক। সেই সাথে সমগ্র সিউড়ীর মঞ্চ আন্দোলনের দাবীর মান্যতা স্বরূপ বরাদ্দ মঞ্চের নামের সাথে নিজ সংস্থার নাম যুক্তকরণের চিন্তা ভাবনা এবং লীজ ক্লাবের অতীত কর্মকাণ্ডের সুবাদে তাদের প্রভাবকে পর্যালোচনার মত বিষয়গুলি কূটনৈতিক দৃষ্টিতে আরও গভীর ভাবে দেখার প্রয়োজন ছিল। যাইহোক , ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কর্মসূচী বাতিল হওয়ার কিছুদিন পরে সিউড়ীর সুরভারতীতে দুইবার আলোচনায় বসা হলেও কোন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছান যায়নি। ফল স্বরূপ একটি সম্ভবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। বর্তমানে পূর্বোক্ত বরাদ্দ স্থান লীজ ক্লাবের নিয়ন্ত্রণাধীন।     

                         এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠেই এক দায়িত্বশীল সংগঠনের মত পুনরায় মঞ্চের দাবীতে সোচ্চার হতে খুব বেশি সময় নেয়নি আনন। পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চার ধারাও অক্ষুণ্ণ ছিল। ১৯৮২ সালের আগস্টের ২৯ তারিখ সিউড়ী শহরে সর্বপ্রথম (সম্ভবত জেলাতেও) নাট্য কর্মশালার আয়োজন করা হয় যার প্রশিক্ষক ছিলেন প্রবীর গুহ। ওই বছরই ১৬ই অক্টোবর স্বপন রায় (সুধীন্দ্র কুমার রায়ের পুত্র) ও পীযূষ দে সম্পাদিত জেলায় দ্বিতীয় (প্রথম- অমিত ঘোষ দস্তিদার সম্পাদিত ‘ইস্পাত’ যার ৪টি সংখ্যা প্রকাশ হয় ১৯৮১ নাগাত) নাট্য সংবাদপত্র ত্রৈমাসিক ‘আনন’-এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন বিভাস গঙ্গোপাধ্যায় যা পরবর্তী ৩-৪ বছর ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।

                              ১৯৮৩ সালের ১১ই জুন ‘পশ্চিমবঙ্গ সংবাদ’ পত্রিকার ‘জনমত বিভাগ’-এ আননের শিল্পীবৃন্দ প্রেরিত চিঠি ‘সিউড়ীতে স্থায়ী উপযুক্ত সাংস্কৃতিক মঞ্চ চাই’ শিরনামে প্রকাশিত হয়। যেখানে লীজ ক্লাব দ্বারা গুরুসদয় দত্ত মঞ্চকে সিনেমা হলে রূপান্তরিত করাকে সমালোচিত করে সরাসরি বলা হয় ‘… চৈতালি সিনেমা হলে পরিণত করাতে আর্থিক লাভবান হয়েছেন ঠিকই কিন্তু শ্রদ্ধেয় গুরুসদয় দত্তের নামাঙ্কিত মঞ্চের প্রতি অবিচার করেছেন’। পাশাপাশি ‘রবীন্দ্রসদন’ মঞ্চের সমস্যার কথাগুলিও উল্লেখিত হয়। ওই বছরই ৩০শে জুলাই সিউড়ী শহরের কেন্দ্রস্থলে স্থায়ী মঞ্চ সহ চার দফা দাবি নিয়ে উন্মুক্ত আকাশ তলে অভিনীত বাবুন চক্রবর্তী নির্দেশিত ‘যদি আমরা সবাই’ প্রযোজনার মাধ্যমে প্রচার অভিযানের সূচনা হয় যার ২৫তম অভিনয় হয় ১৯৮৩ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর। মূলত প্রতি সপ্তাহের শনিবার , রবিবার ও ছুটির দিনগুলিতে বিকাল নাগাত শহরের নানা উন্মুক্ত স্থানে এই প্রযোজনা উপস্থাপিত হত। পাশাপাশি আননের পক্ষে রাখা চারটি দাবি সম্বলিত ‘মঞ্চের দাবীতে আনন’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন বা সংবাদ একই বয়ানে ময়ূরাক্ষী পত্রিকায় (১৮ই আগস্ট ’৮৩) , মিত্রাঞ্জলি পত্রিকায় (১৫ই আগস্ট ’৯৩) , দৈনিক চন্দ্রভাগায় (২রা আগস্ট ’৯৩) , চণ্ডীদাস পত্রিকায় (২১শে আগস্ট ’৮৩) ও তীর্থভূমি পত্রিকায় (১০ই আগস্ট ’৮৩) প্রকাশিত হয়। উক্ত চারটি দাবী ছিল – ১) সিউড়ীর কেন্দ্রস্থলে উপযুক্ত মঞ্চ ২) গুরুসদয় মঞ্চ নাটক উপস্থাপনার জন্য নাট্যদল বা সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করতে দেওয়া ৩) রবীন্দ্র সদনের ভাড়া নাট্যদল বা সংস্থাগুলির জন্য কমানো ও ৪) রবীন্দ্র সদন প্রযোজনা মঞ্চায়নের জন্য উপযোগী করে তোলা। ওই বছর ৩০শে সেপ্টেম্বর আদালত চত্বরে ‘যদি আমরা সবাই’ অভিনীত হওয়ার পরে উক্ত দাবীগুলি নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ৫৮৭ জন মানুষের স্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি তৎকালীন জেলা শাসক অরুণ ভট্টাচার্যের কাছে সকাল ১১টা নাগাত দেওয়া হয়

                     ১৯৮৪/৮৫ সালের (নির্দিষ্ট সাল জানা যায়নি) ১১ই মে মঞ্চ নির্মাণ ও সংস্করণের উদাসীনতা, অনীহা ও অবহেলার প্রতিবাদে আনন সহ ১০-১২টি নাট্যদল বা সংস্থা সমবেত হয়ে সদর শহরের বুকে এক বিশাল মিছিল করে। সম্ভবত তারই প্রেক্ষিতে প্রশাসনের টনক নড়ে। ১৯৮৫ সালের ২০ই মে দৈনিক চন্দ্রভাগা পত্রিকায় তড়িঘড়ি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা পরিষদের সহকারী বাস্তুকার লীজ ক্লাবের প্রাঙ্গণে একটি মুক্তমঞ্চ তৈরির টেন্ডার ডাকে। উক্ত চিঠির ভিত্তিতে আননের পক্ষ হতে ২১শে মার্চ বিভিন্ন পত্রিকায় চিঠি পাঠিয়ে সুষ্ঠ ও সুপরিকল্পিত ভাবে মঞ্চ নির্মাণের দাবী জানানোর পাশাপাশি এক প্রকার আশঙ্খা নিয়েই সতর্ক করা হয় রবীন্দ্র সদনের মত ত্রুটিপূর্ণ অবৈজ্ঞানিক মঞ্চ যেন আর নির্মাণ না করা হয়। আননের সেই চিঠি দৈনিক চন্দ্রভাগায় (২২শে মে), সেবায় (৫ই জুন), ময়ূরাক্ষীতে (৬ই জুন), বিজয় বার্তায় (৮ই জুন) প্রকাশিত হয়। অবশেষে লীজ ক্লাবের মাঠে তড়িঘড়ি মুক্তমঞ্চ নির্মিত হলে দেখা যায় আননের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। অপরিকল্পিত মঞ্চে অভিনয় করতে গেলে মঞ্চ নির্মাণ সহ আনুসাঙ্গিক খরচের যা বহর তা সামলানো নাট্যদলগুলির পক্ষে সম্ভব হল না। সূচনা পর্বে কিছু উপস্থাপনা হলেও অচিরেই নাট্যাভিনয়ের জন্য পরিতক্ত্য হতে শুরু করে লীজ ক্লাব প্রাঙ্গণে সরকার নির্মিত মুক্তমঞ্চ।

ডাকঘর প্রযোজনায় সুধার চরিত্রে মহুয়া চট্টোপাধ্যায় (বামে) ও অমলের চরিত্রে শিল্পী মুখোপাধ্যায় (ডানে)

ইতিমধ্যে ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আননের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রজকুমার সাহা ‘এখনই’ নাট্যদল গঠন করেন। যদিও প্রযোজনা তালিকা থেকে অনুমান ১৯৮৩ সাল থেকেই তিনি যে কোন কারনেই হোক আননে পূর্বের মত সময় দিতে পারছিলেন না। কারণ এই সময়ে বাবুন চক্রবর্তী নির্দেশনার দায়িত্ব একপ্রকার ধারাবাহিক রূপে পালন করতে থাকেন। তাছাড়া এখনই প্রতিষ্ঠার পরে আননের গুটি কয়েক প্রযোজনা ছাড়া শ্রী সাহার যুক্ত থাকার (নির্দেশনা / অভিনয় / অনুসাঙ্গিক কর্ম) তথ্য পাওয়ায় যায় না। রজকুমার সাহার অনুপস্থিতে আনন বেসামাল হয়ে যায়নি ঠিকই কিন্তু এটা বলা বাহুল্য যে তাঁর মত নাট্যকর্মীর অমন অবস্থান আননের কাছে নিশ্চই অনাখাঙ্খিতই ছিল।

                             ১৯৮৫ সাল। বর্তমানের বিশিষ্ট নাট্যজন শুভ জোয়ারদার সমসাময়িক সময়ে অডিট সংক্রান্ত কাজে বীরভূমে অবস্থান করছেন। তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরে কর্মরত অরুণ মাড্ডিও তখন আননের সাথে যুক্ত। ১২ই অক্টোবর ইরিগেশন মঞ্চে বাবুন চক্রবর্তী নির্দেশিত ও শুভ জোয়ারদার রচিত ‘সীতাকাহিনী’ মঞ্চস্থ হয় যাতে প্রায় ২২জন আদিবাসী শিল্পী অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেন। প্রসঙ্গত, এই প্রযোজনার গানের কথা ও সুরও ছিল শুভ বাবুর এবং অরুণ বাবুর সৌজন্যেই আদিবাসী শিল্পীদের একত্রিত করা গেছিল। প্রথম অভিনয়ে অংশগ্রহণ করা আদিবাসী শিল্পীদের কয়েকজন হলেন অরুণ মাড্ডি, বাবুই মাড্ডি, গেড়ু মুর্মু , সুকুল মুর্মু, শিবু মাড্ডি, শঙ্কর মুর্মু, গাঙ্গু হাঁসদা, বলাই বেসরা, বিজলী সোরেন, মেনকা কিস্কু, ছবি মুর্মু, মানি মুর্মু, লিলি মুর্মু, সুন্দুরী বেসরা, পাকু টুডু প্রমুখ। এই সময়েও যখন আদিবাসীদের বা সমগোত্রীয় জনজাতিদের নাট্য মঞ্চে ঢাক-ঢোল পিঠিয়ে এনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৌশল প্রচার চালানো হয় তখন ভেবে দেখার মত বিষয় আজ থেকে কয়েক দশক আগে আনন নীরবে সেই কাজটি করে ফেলেছে।

সীতাকাহিনী প্রযোজনার একটি মুহূর্ত

১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে আননের রেজিট্রেশন হয় (এস/৪৯৫০০)। ওই বছরই জুন মাসের ৪ তারিখে (পরে ১৭ই জুন একই স্থানে অভিনীত) কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী (১২৫তম) উপলক্ষে বেণীমাধব বিদ্যালয়ে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে রথের রশি ও রথযাত্রার সমন্বয়ে ‘কালের যাত্রা’ অভিনীত হয়। সেখানে বিদ্যালয়েরই একটি পরিসরকে অভিনয় ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ প্রসঙ্গে অজয় পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে বলা হয় – ‘মঞ্চ অলঙ্করণ ও মঞ্চের ব্যবহারিক প্রয়োগ কৌশল সিউড়ী শহরে নতুনত্বের দাবী জানাতে সক্ষম হয়েছে’। প্রথম অভিনয়ের দিন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের (লোডশেডিং) ফলে শব্দ ও আলো প্রক্ষেপণের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হলেও প্রযোজনাটি দর্শক প্রশংসা হতে বঞ্চিত হয়নি। এই প্রযোজনার প্রথম অভিনয় নিয়ে সত্যযুগ পত্রিকায় বলা হয় –  ‘জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ীতে কবি যেভাবে নাট্যাভিনয়ের জন্য মঞ্চ করতেন – আনন এই নাটকের ক্ষেত্রে সেই ধারাকে যথার্থ ভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে। মঞ্চে কবি আসার পর তার সংলাপের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কবি মূর্তিটির ব্যবহার পরিকল্পনা দর্শকের নিকট গভীর ভাবে সমাদৃত হয়েছে…’

বেণীমাধব ইন্সটিটিউশনে অভিনীত ‘কালের যাত্রা’-র একটি মুহূর্ত [ ছবিতে – উজ্জ্বল হক , অশোক ভট্টাচার্য , বাবুন চক্রবর্তী , উত্তম চট্টোপাধ্যায় , তরুণ সেনগুপ্ত , শিবেন দে , দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় , পীযূষ গাঙ্গুলি , সালাউদ্দিন আহমেদ , পীযূষ সরকার , প্রদীপ রুজ  ]

                         ১৯৮৭ সালের ১৭ই মার্চ পশ্চিমবঙ্গের নৃত্য, নাট্য, সংগীত ও দৃশ্যকলা একাডেমী রবীন্দ্রভারতীর অনুমোদন পায় আনন। এবং ওই বছরই ২৮শে এপ্রিল রাজ্য সরকার হতে ৪,০০০ টাকা অনুদান পায়। ১৯৮৮ সালে ২৮শে মার্চ বাবুন চক্রবর্তীর পরিচালনায় জেলা পরিষদ হলে শুক্লা মিত্রের একক অভিনয়ে উপস্থাপিত হয় মালিনী ভট্টাচার্য অনুবাদিত ‘জাগরণ’ প্রযোজনার। এই অভিনয়ে দ্বারা তৈরি হয় আরও এক ইতিহাস। বীরভূম জেলায় মহিলাদের মধ্যে সর্ব প্রথম একক অভিনয়ের ক্ষেত্রে  আননের ‘জাগরণ’ নাম জেলার নাট্য ইতিহাসে স্থান করে নেয়।  

সফদার হাসমির হত্যার প্রতিবাদে সিউড়ীর সাংস্কৃতিক কর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের সাথে আননও প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হয় ১৯৮৯ সালের ৯ই জানুয়ারি। সেই সূত্রেই সমগ্র দেশে পথনাটক সপ্তাহ উপলখ্যে শহরের সফদার হাসমি স্মৃতি রক্ষা কমিটির আহ্বানে ‘চিৎকার’ পথনাটক ওই বছর ১৬ই এপ্রিল সিউড়ীর বিভিন্ন স্থানে উপস্থাপিত করা হয়। ওই মাসেরই ২৮ তারিখে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য একাডেমী হতে ৪,০০০ টাকা আনুদান করে। এই বছর ২৫শে সেপ্টেম্বর আননের দ্বিতীয় নাট্যোৎসবের প্রথম দিনে সিধুকানু মঞ্চে ‘চণ্ডালিনী’ প্রযোজনার উপস্থাপনা ছিল আননের সে পর্যন্ত ৩৫০তম অভিনয় (রজনী)। ওই বছরের অন্তিমে আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল ১৪ই ডিসেম্বর ‘পুতুলখেলা’ প্রযোজনার মঞ্চায়ন। আননের প্রথম মহিলা নির্দেশক হিসেবে অপরাজিতা মুখোপাধ্যায় উক্ত প্রযোজনায় নির্দেশকের ভূমিকা পালন করেন।

এরপর নব্বই দশক। এই পর্বে বাবুন চক্রবর্তীর পাশাপাশি স্বপন রায়, পীযূষ দে, প্রদীপ রুজ, যতীন দে এবং উজ্জ্বল হকের মত আননের সক্রিয় নাট্য সম্পদদের নির্দেশকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। নাট্যকার নরেশ গিরির জীবন অবলম্বনে আননের স্বপন রায় রচিত ‘সুদিনের লেগে’ বাবুন চক্রবর্তীর সম্পাদনায় ও নির্দেশনায় সিউড়ী রবীন্দ্র সদনে ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম অভিনয় (১৯৯৬ সালের ১লা ফেব্রু. রাজনগর উৎসবে ২৫তম অভিনয়) হয়। জলপাইগুড়ির বীরপাড়া কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক অমিত চক্রবর্তী সম্ভবত ওই বছর রাজ্য নাট্যোৎসবে ২৯শে মার্চ শিশির মঞ্চে অভিনীত এই প্রযোজনার অভিনয় দেখেই একটি মতামত/প্রতিবেদন লেখেন- ‘সংগ্রামের মধ্যে বেঁচে থাকার এক নতুন শপথ’ শিরনামে। আননায়ুধে প্রকাশিত তাঁর মতামতের একটি অংশে লেখেন ‘…মার্কসীয় তত্ত্ব অবলম্বন করে নাটক লেখা আজকাল ফ্যাসান হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই নাটকের শিল্পরস রাজনৈতিক শ্লোগান সর্বস্বতায় পর্যবসিত হয়। আনন-এর নতুন নাটক সুদিনের লেগে নিঃসন্দেহে তার ব্যতিক্রম… সুদিনের লেগে মনে হয় যাদের নিয়ে এবং যাদের জন্য তাদের কাছে পুরোপুরি অর্থবহ হবে। দৈনন্দিন জীবনের চেনা-জানা গল্পকে বীরভূমের গ্রাম্য কথায় উপস্থাপন করায় ভাষার ব্যবধান এবং বক্তব্যের বক্রগতি অর্থ গ্রহণে কোন বাধা সৃষ্টি করে না। তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি বহুরূপী কিংবা নান্দীকারের চেয়েও আনন-এর প্রচেষ্টা এখানে বেশি সফল…’। ওই বছরই ৮ই অক্টোবর সকাল ৮টায় আকাশবাণী ‘ক’ প্রচার তরঙ্গে সৌম্যেন্দু ঘোষের কণ্ঠে রঙ্গমঞ্চ পর্যালোচনায় আননের এই প্রযোজনা সম্পর্কে সম্প্রচারিত সমালোচনার অংশ সুব্রত নন্দন দ্বারা টেপ রেকর্ডারে সংরক্ষিত হয়। যদিও কোন তারিখের কোন মঞ্চের অভিনয় প্রসঙ্গে সেই পর্যালোচনা তা জানা যায় নি। ‘সুদিনের লেগে’ প্রসঙ্গে সম্প্রচারিত পর্যালোচনায় বলা হয় ‘…সামগ্রিক ভাবে স্বাভাবিক অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল দলের সকলের। সুজনের ভূমিকাটি চিত্রিত করেছেন স্বপন রায়। তিনি আরও সপ্রতিভ হলে মনে হয় আরও ভালো লাগত। আনন্দের চরিত্রে উজ্জ্বল হক একটি সুন্দর চরিত্র উপহার দিয়েছেন। ভুবন ঘোষের ভূমিকায় পীযূষ দে, বড় দারোগার ভূমিকায় শিবেন দে এবং নকড়ির ভূমিকায় পীযূষ সরকার বেশ চমৎকার অভিনয় করেছেন। সতীর ভূমিকায় পলি সেনের নাম আলাদা ভাবে নিশ্চয় আলোচনার যোগ্যতা রাখে।… গ্রামবাংলায় শুধু নয়, প্রযোজনাটি কলকাতায় মঞ্চস্থ হয়েও সুধীজনের প্রশংসা কাড়তে পেরেছে। গ্রামে-গঞ্জে স্থানীয় সমস্যা নিয়ে আরও নাটক হওয়া উচিৎ তাতে বাংলার নাটকই সমৃদ্ধ হবে’। ১৯৯১ সালের ২৮শে জুন এই প্রযোজনার জন্য পশ্চিমবঙ্গ নাট্য একাডেমী হতে ২০,০০০ টাকা অনুদান পায় আনন।

 ১৯৯২ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর আনন অভিনীত ৪০০ রজনী উপলখ্যে একই দিনে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় পাঁচটি একাঙ্ক প্রযোজনা প্রবল উৎসাহে সিউড়ীর রবীন্দ্র সদন মঞ্চে অভিনীত হয়। এ প্রসঙ্গে মোহিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন ‘…আননের প্রযোজনা সব সময়ের জন্যই একটা ঐকান্তিক নিষ্ঠার ছাপ রাখে। পরিচালক বাবুন চক্রবর্তী চেখভের একগুচ্ছ নাটকের বাংলা রূপান্তরিত পরিবেশনায় দর্শকচিত্তকে রুদ্ধশ্বাসে মুগ্ধ করেছে।… প্রতিটি নাটিকা প্রশংসায় অভিনয়কুশলতায় সুধী দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। পীযূষ গাঙ্গুলি, স্বপন রায়, বাবুন চক্রবর্তী, উত্তম চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় দে, সোমদত্তা চট্টোপাধ্যায়, চুমকি লাহিড়ী, পীযূষ দে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অশোক ভট্টাচার্য, মানিক দাস, মলি সেনগুপ্ত , শুক্লা মিত্র প্রত্যেকেই নিজ নিজ ভূমিকায় সুন্দর ভাবে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করেছেন…’

‘অন্ধের নগরী চৌপট রাজা’ প্রযোজনার একটি দৃশ্য [ ছবিতে – উত্তম চট্টোপাধ্যায় , প্রদীপ রুজ , নিবাস দত্ত , মলি সেনগুপ্ত , অমিত মজুমদার , বহ্নি চক্রবর্তী প্রমুখ ]

আননের ইতিহাসে নব্বই দশকের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা আশা করি উজ্জ্বল হক নির্দেশিত ‘অন্ধের নগরী চৌপট রাজা’ যার প্রথম অভিনয় হয় ১৯৯৫ সালের ১২ই এপ্রিল হাসমির জন্মদিন ও জাতীয় পথনাটক দিবসকে কেন্দ্র করে সিউড়ীর সমন্বয়পল্লীতে। প্রথমাভিনয়ে সমীর দাস সংগীতের, প্রদীপ রুজ আলোর দায়িত্বে এবং প্রদীপ মাঝি ও মনোজ মাঝি যন্ত্রানুষঙ্গের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ‘ফেরাইঘাট’ উজ্জ্বল হকের আননে প্রথম নির্দেশনার কাজ। পরবর্তীতে তিনটি প্রযোজনায় নির্দেশক হিসেবে সুনামের সাথে কাজ করলেও অন্ধের নগরীর মত ব্যপকতা প্রাপ্তি হয়নি। যদিও ততদিনে রাজ্য ও জাতীয় স্তরের বিভিন্ন নাট্যকর্মশালায় যোগদান ও তাঁর নাট্যাধ্যাবসার দরুন তিনি জেলায় যথেষ্ট সুপরিচিত। ওই বছর (১৯৯৫) ৩রা সেপ্টেম্বর নাট্য একাডেমীর উদ্যোগে রামপুরহাট টাউন হলে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী জেলা নাট্যোৎসবের প্রথম দিনে অভিনীত ‘অন্ধের নগরী চৌপট রাজা’ প্রযোজনা প্রসঙ্গে সঞ্জীব সরকার বলেন ‘…একজন সচেতন নাট্যকর্মী হিসেবে পরিচালক উজ্জ্বল হক সমগ্র নাটকটি বেঁধেছেন বেশ টানটান ভাবে। নাট্যকারের চিন্তাকে আরও গতিময় করেছেন বর্তমান প্রাসঙ্গিকতার সাথে খাপ খাইয়ে। গল্প আঙ্গিকের প্রতি বিশ্বস্ততা দেখিয়েছেন আবার ফ্যান্টাসি এবং রিয়েলিস্টিক সংমিশ্রণে তিনি সচ্ছন্দ ও সাবলীল রাখতে পেরেছেন প্রযোজনাটিকে। এ ব্যাপারে তাঁকে সর্বতোভাবে দাপুটে অভিনয়ের মাধ্যমে সহযোগিতা করে গেছেন আননের ২৬জন দক্ষ অভিনেতা-অভিনেত্রী। যারা চলনে-বলনে হিন্দী সংলাপ উচ্চারণে এবং মুহূর্তের মধ্যে দৃশ্যপট পাল্টে নতুন দৃশ্যপটে হাজির হয়ে আমাদের মুগ্ধ করেছেন। আননের টিমওয়ার্ক সত্যিই ঈর্ষণীয়….’১০। ১৯৯৭ সালে ৭ই জানুয়ারিতে বাংলা নাটকের ২০০ বছর উপলক্ষে নাট্য একাডেমী আয়োজিত কলকাতার শিশির মঞ্চে একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণীর পরে এই প্রযোজনা অভিনীত হয়। রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় সেই অভিনয় দেখে বলেন ‘…প্রয়োগ উজ্জ্বল হকের। ভরতেন্দুর নাটিকার মেজাজ, তাৎপর্য সুন্দর ভাবে আবিস্কার করা গেছে এই প্রয়োগে। লোককথার আড়ম্বরহীনতা, সহজিয়া ভাব চমৎকার মিশে ছিল এই প্রয়োগে। এইখানেই উজ্জ্বলবাবুর প্রয়োগ উৎসাহিত করবে, স্মরণীয় হয়ে থাকবে।… দারুণ অনুশীলিত ছিল দলগত অভিনয়ও। ব্যক্তিগত অভিনয়ের ত্রুটি-বিচ্যুতি তেমন করে নজরই পড়েনি, পড়ার কারণও নেই। বাঙালি অভিনেতাদের হিন্দি নাটকে অভিনয় করা নতুন কিছু নয়। কিন্তু আরটিকুলেশন, ইনটোনেশন, জেশ্চার, পশ্চার-এ একটা সীমাবদ্ধতা অনেক সময় থাকেই। আননের বেশির ভাগ শিল্পীর ক্ষেত্রে তেমন থাকেনি, এটা শ্লাঘার। সৌমিত্র মুখোপাধ্যায় (মোহন্ত), প্রদীপ রুজ (গোবর্ধন দাস), শুক্লা মিত্র (নারঙ্গীবালী), মলি সেনগুপ্ত (কুজরিন), বহ্নি চক্রবর্তী (মছলীবালী), বাবুন চক্রবর্তী (রাজা), উজ্জ্বল হক (জাতবালা)-এর মতো অভিনেতা অভিনেত্রীদের অভিনয় যে কোনও প্রযোজনায় বাড়তি মাত্রা যোগ করবেই, এখানেও তাই…’১১। ঠিক তার পরের দিন অর্থাৎ ৮ই জানুয়ারি তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অধিকর্তা সাংবাদিক সম্মেলনে ১৯৯৫ সালের পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ একাঙ্ক নাট্য প্রযোজনা হিসেবে আননের ‘অন্ধের নগরী চৌপট রাজা’-র নাম ঘোষণা করেন১২। এই স্বীকৃতি আননের নাট্যচর্চার পাশাপাশি জেলার নাট্য ইতিহাসেও মাইল ফলক।

১৯৯৯ সালে জানুয়ারির ৯ তারিখে বাবুন চক্রবর্তী নির্দেশিত বীরভূমের দুবরাজপুর নিবাসী অনুপম দত্ত রচিত সুন্দরম পুরষ্কার প্রাপ্ত আননের প্রযোজনা ‘দ্বাদশ ভক্ত্যা চাড়ুম’ আননের নাট্যোৎসবে সিউড়ীর রবীন্দ্র সদনে অভিনীত হওয়ার সাথে সাথে ১০০টি প্রযোজনা অভিনয়ের বিরল কৃতিত্ব অর্জন করে এই নাট্যদল যা পশ্চিমবঙ্গের গ্রুপ থিয়েটারের ইতিহাসে প্রথম। উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত আলোক শিল্পী তাপস সেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন তীর্থঙ্কর চন্দ, আশিস গোস্বামী ও অনুপম দত্ত। এই প্রযোজনা প্রসঙ্গে পরিচয়লিপিতে দলের পক্ষ হতে বলা হয় – ‘মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা ও লোকসংস্কৃতির মনোজ্ঞ উৎসবের একটি সংযোজন ঘটাতে চাওয়া হয়েছে, সেই সঙ্গে এই নাটক তুলে আনতে চেষ্টা করেছে সেই সব শিল্প উপাদান যা জনগণের নিজস্ব চর্চায় আজও প্রকাশিত উত্ত্রাধিকারের মহিমায়’। সেই দিনের অভিনয়ের ভিত্তিতে আশিস গোস্বামীর পর্যালোচনা আননায়ুধ পত্রিকায় ১০ই জানুয়ারি প্রকাশিত হয়। পর্যালোচনার অন্তিম স্তবকে তিনি লেখেন ‘…এই নাটকে ষাট/পঁয়ষট্টিটা চরিত্র থাকলেও মূল চরিত্র চারটি মাত্র। ওবিন দেবাংশী, চামুণ্ডা মূর্তি, গোঁসাই বাগদী ও চাড়ুম বাগদী – যথাক্রমে সৌমিত্র মুখোপাধ্যায়, উজ্জ্বল হক, স্বপন রায় ও মোহন বাগদী। এদের মধ্যে মোহনকেই একটু চড়া সুরে অভিনয় করতে দেখলাম। আর বিশেষভাবে বলার এ নাটকে গানের কথা। সুরকার ও নয়ন গায়করূপী অনুপম চক্রবর্তী অসাধারণ সুর দিয়েছেন এবং গেয়েছেনও। কেবলমাত্র গান শুনবার জন্যই প্রযোজনাটি আর একবার দেখার ইচ্ছে – দেখার ইচ্ছে প্রযোজনাটির আরও সফল আরও পরিশীলিত এক রূপ….’।   

এর পরের সময়টা ২০০০ থেকে ২০১০ যেখানে ২৮টির মত প্রযোজনা নির্মাণ করেছে আনন। এই পর্বের উল্লেখযোগ্য প্রযোজনার মধ্যে একটি ‘বদনচাঁদ লগনচাঁদ’। খুব সম্ভবত ২০০০ সালের ১০ই জানুয়ারি বাবুন চক্রবর্তী দ্বারা রচনা কার্য শেষ হয় ও তাঁর নির্দেশনাতেই পরের মাসে ২৬ তারিখে ডি.পি.ই.পি-এর (ডেভলাপমেন্ট অফ প্রাইমারী এডুকেশন প্রোগ্রাম) স্বাক্ষরতা সংক্রান্ত প্রচার কর্মসূচীর সূচনায় পথনাটক উৎসবে বহরমপুরে প্রথম (৭৫তম অভিনয় কাপিস্ঠা গ্রামে ১৬ই নভেম্বর , ২০০১) অভিনয় হয়। ওই একই প্রকল্পের প্রচারে জুন-জুলাই মাসে দুই পর্যায়ে (২০শে জুন হতে ৫ই জুলাই এবং জুলাই ১০-১৩ তারিখে) মোট ৩৯টি স্থানে অভিনীত হয়। প্রথম পর্যায়ে ১৬দিনে ১৬টি ব্লকের ৩২টি গ্রামে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩টি ব্লকের ৬টি গ্রামে ও সদর শহরে ১টি অভিনয় হয়। পাশাপাশি এই প্রকল্পের অধীনে উত্তর দিনাজপুর জেলায় ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারীর ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ২০টি গ্রামে প্রদর্শিত হয় ‘বদনচাঁদ লগনচাঁদ’। ওই মাসেই ২০ তারিখে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য একাডেমী আয়োজিত পথনাটক উৎসবে বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে কলকাতার রবীন্দ্র সদন প্রাঙ্গণে অভিনীত হওয়া এই প্রযোজনা আননের সর্বাধিক অভিনীত প্রযোজনা হয়ে দাঁড়ায়। ইতিপূর্বে ‘ঝুমুর’ ছিল ওই স্থানে। আননে ‘বদনচাঁদ লগনচাঁদ’ আনুমানিক ১০৩-০৬ বারের মত অভিনীত হয়েছে। প্রসঙ্গত, আননের ‘মহাজ্ঞানী’ অভিনয় সংখ্যাও ‘বদনচাঁদ লগনচাঁদ’-এর সমান্তরাল। এই বছরেই ১৪ই ডিসেম্বর রেডিওর জন্য ‘মহাজ্ঞানী’ ও ‘জটাইবাবা’ রেকর্ডিং হয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালের জুনের ২৩ তারিখে কলকাতা দূরদর্শনের জন্য তাদের স্টুডিওতেই সিরাজুল হকের তত্ত্বাবধানে ‘মহাজ্ঞানী’ অভিনীত হয় যা ওই বছরই ডি.ডি. বাংলায় দুই পর্বে সম্প্রচারিত হয়। প্রথম পর্ব ১৫ ও ১৬ই সেপ্টেম্বর যথাক্রমে দুপুর ১২টায় ও রাত্রি সাড়ে ১১টায় এবং দ্বিতীয় পর্ব ২২ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর দেখানো হয়।   

হাতে লেখা ‘বদনচাঁদ লগনচাঁদ’ প্রযোজনার কিছু অংশ  

এই সময় আননের আরও একটি উল্লেখযোগ্য কর্মসূচী হল প্রতিমাসের দ্বিতীয় রবিবারে বাবুব চক্রবর্তী প্রস্তাবিত নিয়মিত অভিনয় যার সূচনা হয় ২০০২ সালের ১৩ই জানুয়ারি সিউড়ীর ডি.আর.ডি.এ-এর দর্শক পরিপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে ‘খোলখঞ্জনী’র দুইবার অভিনয় দিয়ে। সারা বছর বিপুল জনপ্রিয়তায় এই কর্মসূচী (আনন প্রতি মাসের থিয়েটার) নির্বিঘ্নে পালিত হয়। এই কর্মসূচীতে ডি.আর.ডি.এ (জেলা পরিষদের হল) প্রেক্ষাগৃহে (রবীন্দ্র সদনে তখন সংস্কারের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি) অভিনীত প্রযোজনাগুলি হল ‘খোলখঞ্জনী’ (১৩ই জানুয়ারি), ‘মহাজ্ঞানী’ (১০ই ফেব্রুয়ারী), ‘মিছিল’ (১৩ই মার্চ), ‘হারুন অল রশিদ’ ও ‘অন্ধের নগরী চৌপট রাজা’ (১৪ই এপ্রিল), ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ (১২ই মে), ‘পান্তাবুড়ি’ (৯ই জুন), ‘কিনু কাহারের থেটার’ (১৪ই জুলাই), ‘খেলাঘর’ (১১ই আগস্ট), ‘রাজদর্শন’ (৮ই সেপ্টেম্বর), ‘আবাদ’ ও ‘প্রস্তাব’ (৬ই অক্টোবর), ‘মোহনলাল স্বর্ণকার’ (১০ই নভেম্বর) এবং ‘হু ইজ দ্যা গ্রেটেস্ট’ (৭ই ডিসেম্বর ; দলের বর্ষপূর্তি)১৩

আননের এই কর্মসূচী সিউড়ীর সর্বস্তরের সংস্কৃতিপ্রেমীদের ভিতর দারুণ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঞ্চার করে। সঞ্চারিত সেই আবেগকে মাথায় রেখেই আননের প্রতি মাসে থিয়েটার চর্চার এই উদ্যোগকে বিভিন্ন নাট্যদলের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দলের তৎকালীন অন্যতম কর্ণধার বাবুন চক্রবর্তী সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। তারই ফল স্বরূপ ২০০২ সালের অক্টোবর মাসে আননের তৎকালীন মহড়া কক্ষ ইরিগেশন কলোনির টিনের ঘরে সিউড়ীড় সমস্ত নাট্যদলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি আলোচনা সভা করা হয়। পরবর্তীতে আনন সহ চিরন্তন থিয়েটারের মহড়াকক্ষেও তিনবার আলোচনায় বসা হয়। ততদিনে সংস্কারের পরে ২০০৩ সালের ১৩ই জানুয়ারি পবিত্র সরকার রবীন্দ্র সদন উদ্বোধন করেছেন। ১৯শে জানুয়ারি ‘আনন প্রতি মাসের থিয়েটার’-এর উত্তরসূরি হিসেবে আরও বৃহৎ ভাবনায় ‘বাঁধি সেতু মিলনের অঙ্গিকারে’-র কর্মসূচীতে চিরন্তন থিয়েটারের ‘লোহার ভীম’ অভিনীত হয় রবীন্দ্র সদনে। সিউড়ীর একাধিক নাট্যদলের অংশগ্রহণে ও বিভিন্ন সংগঠন সহ আননায়ুধ ও নয়াপ্রজন্ম পত্রিকার সহযোগিতায় ‘বাঁধি সেতু মিলনের অঙ্গিকারে’-র প্রতিমাসের থিয়েটারে একাধিক প্রযোজনা মঞ্চস্থ হয় ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। সূচনা বর্ষে (২০০৩) সারা বছর মঞ্চের ব্যয়ভার বহন করে নয়াপ্রজন্ম এবং পরবর্তীকালে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ।  

‘কহেন কবি কালিদাস’-এর কলাকুশলীরা 

এই দশ বছরে ( ২০০০-১০) আরও একবার আননকে ভাঙনের সম্মুখীন হতে হয়। ২০০৮ সালে আননের অন্যতম বলিষ্ঠ সেনাপতি তথা নাট্যজন বাবুন চক্রবর্তী আনন হতে বেরিয়ে আলাদা ভাবে নিজের নাট্যদল ‘বীরভূমের আনন’ তৈরি করেন। নবনির্মিত আননের প্রতীক সহ প্রযোজনার মোট মঞ্চায়ন সংখ্যা নিয়েও আদি আননের সাথে বাদানুবাদ শুরু হয়। সব মিলিয়ে এই সময়টা দুই আননের জন্য মোটেও সুখকর ছিলনা। বিশেষত প্রায় পঞ্চাশ-পঞ্চান্নটি প্রযোজনার নির্দেশক বাবুন চক্রবর্তীর মত এক নাট্যজনের দল হতে সরে দাঁড়ানো আননের জন্য আদেও প্রত্যাশিত ছিল না।  

পরবর্তী পর্বে (২০১০-২০) নির্দেশকের ভূমিকায় জয়দেব সাহ , পীযূষ রায় , পীযূষ সরকার , জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি উজ্জ্বল হককে সক্রিয় হতে দেখা যায়। এই পর্বে ১৯টি প্রযোজনা নির্মাণ করে আনন। উল্লেখ্য করোনা মহামারীর কারণে গৃহবন্দী অবস্থার জন্য ২০১৯ ও ২০২০ সালে স্বাভাবিক ভাবেই নতুন কোন প্রযোজনা নির্মিত হয়নি। কিন্তু এই পর্বে আনন পূর্বের তুলনায় কিছুটা হলেও শিথিল। এর অন্যতম কারণ সাংগঠনিক ভাবে যাদের অক্লান্ত অকৃত্রিম শ্রমে ও নিষ্ঠায় আনন ‘আনন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তাদের অনেকেই আজ প্রবীণ। জীবন যাপনের একাধিক ব্যস্ততা সহ বয়স জনিত শারীরিক সমস্যা ধীরে ধীরে গত শতেক সত্তর-আশির দশকের উদ্যাম তরুণদের আজ ধীরে ধীরে বাস্তবিক ভাবেই কাবু করে ফেলছে। নবীনদের হাত ধরে উত্তরাধিকার সূত্রেই আনন আবার পূর্বের মত কল্লোলিত হোক বা না হোক বীরভূম জেলার নাট্যচর্চার ইতিহাসে এই দুরন্ত নাট্যদলের নাম আগামী দিনগুলিতেও মুখরিত হবেই।   

আননের প্রযোজনা তালিকা

সালতারিখপ্রযোজনার নামকাহিনিনাট্যকারের নামনির্দেশকের নাম
১৯৭১৭ই ডিসেম্বরশেষ বিচাররতন কুমার ঘোষরজকুমার সাহা
১৯৭২২৭শে জানু/ফেব্রু.ঝুমুরশৈলেশ গুহ নিয়োগীরজকুমার সাহা
১৯৭২১৫ই আগস্টশতাব্দী মরে না শতাব্দীরজকুমার সাহা ও বিভাস গঙ্গোপাধ্যায়রজকুমার সাহা
১৯৭২১০ই অক্টোবরইতিহাস কাঁদেরাধারমণ ঘোষরজকুমার সাহা
১৯৭২২৪শে ডিসেম্বরনীল দর্পণদীনবন্ধু মিত্ররজকুমার সাহা
১৯৭৩১২ই মার্চঠাকুর যাবে বিসর্জনলোকনাথ ভট্টাচার্যরজকুমার সাহা
১৯৭৩৮ই মেসিঁড়িরতন কুমার ঘোষরজকুমার সাহা
১৯৭৩১৪ই নভেম্বরআলিবাবাক্ষীরোপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদরজকুমার সাহা
১৯৭৪১২ই জানুয়ারিসমুদ্র সন্ধানেরতন কুমার ঘোষরজকুমার সাহা
১৯৭৪২রা মেতাহার নামটি রঞ্জনাবিধায়ক ভট্টাচার্যরজকুমার সাহা
১৯৭৪১৭ই অক্টোবররৌদ্দুরঅনিল দেরজকুমার সাহা
১৯৭৫৪ঠা জানুয়ারিহারাধনের দশটি ছেলেরাধারমণ ঘোষরজকুমার সাহা
১৯৭৫২রা মেশিকারশচীন ভট্টাচার্যরজকুমার সাহা
১৯৭৫২১শে জুলাইছুটিঅচিন্ত সেনগুপ্তরজকুমার সাহা
১৯৭৫২০শে সেপ্টে.বিলাসীশরৎচন্দ্রগোবিন্দ ভট্টাচার্যরজকুমার সাহা
১৯৭৫৭ই ডিসেম্বরবাদুড় (হিন্দী)অনিল দেরজকুমার সাহা
১৯৭৬৫ই জুনআলিবাবা পাঁচালীশ্যামকান্ত দাসরজকুমার সাহা
১৯৭৭৩১শে জানুয়ারিমুঘলং কুল নাশনংঅর্চনাপুরীরজকুমার সাহা
১৯৭৭১২ই এপ্রিলসাজানো বাগানমনোজ মিত্ররজকুমার সাহা
১৯৭৭১৭ই সেপ্টেম্বরবাবা বদলমনোজ মিত্ররজকুমার সাহা
১৯৭৭১৬ই ডিসেম্বরবর্ধমানের বর বরিশালের কনেসব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়রজকুমার সাহা
১৯৭৯৯ই মার্চদলিলআশিস চট্টোপাধ্যায়রজকুমার সাহা
১৯৭৯২৬শে এপ্রিলআশান্ত বিবররবীন্দ্র ভট্টাচার্যরজকুমার সাহা
১৯৭৯২৮শে আগস্টস্ফিংক্সপ্রবীর দত্তরজকুমার সাহা
১৯৮০৭ই ডিসেম্বরকিছু সংলাপকমল সেনরজকুমার সাহা
  ১৯৮১  ২৫শে জানুয়ারি  মিছিল  বাদল সরকাররজকুমার সাহা ও বাবুন চক্রবর্তী
১৯৮১৫ই ফেব্রুয়ারিআততায়ীনিরূপ মিত্ররজকুমার সাহা
১৯৮২১৬ই এপ্রিলবিনি পয়সার ভোজরবীন্দ্রনাথ ঠাকুররজকুমার সাহা
১৯৮২১৬ই অক্টোবরগুপী গাইন বাঘা বাইনউপেন্দ্রকিশোরঅনিল দেরজকুমার সাহা
১৯৮৩১৫ই জানুয়ারিসুবর্ণ গোলকবঙ্কিমচন্দ্ররাধারমণ ঘোষরজকুমার সাহা
১৯৮৩৬ই ফেব্রুয়ারিসেইদিনপল্টু বন্দ্যোপাধ্যায়রজকুমার সাহা
১৯৮৩৩রা এপ্রিলমহাভারতের বিদ্রোহবিকাশানন্দরজকুমার সাহা
১৯৮৩৩রা মেতেঁতুল গাছমনোজ মিত্রবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৩৩০শে জুলাইযদি আমারা সবাইনিখিল কুণ্ডুবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৩৬ই অক্টোবরনহবতসত্য বন্দ্যোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৩২৫শে নভেম্বরকবয়ঃবনফুলবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৩৭ই ডিসেম্বরগোপাল অতি সুবোধ বালকজহর দাশগুপ্তবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৪৪ঠা জানুয়ারিশেতলের খিদেপ্রবীর দত্তরজকুমার সাহা
১৯৮৪১৭ই মার্চমুক্তিদীক্ষাউৎপল দত্তবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৪১৭ই জুনএকলব্যমঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়প্রদীপ রুজ
১৯৮৪১৭ই জুনরাজযোটকচেকভরমেন লাহিড়ীবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৪২৯শে জুনছুঁচবিমল বন্দ্যোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৪২৯শে জুনপাথরবিমল বন্দ্যোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৪২৯শে জুনগৌ গাবৌ গাবঃবিমল বন্দ্যোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৪৭ই আগস্টডাকঘররবীন্দ্রনাথ ঠাকুরবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৪১৫ই সেপ্টেম্বরস্বাক্ষরঅর্ণব মজুমদারঅর্ণব মজুমদার ও বাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৪২৪ই সেপ্টেম্বরআমি মন্ত্রী হবসুনীল চক্রবর্তীবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৪৭ই ডিসেম্বরভানুমতির খেলবাদল সরকারসৌমিত্র মুখোপাধ্যায়
১৯৮৪৭ই ডিসেম্বরচোখে আঙুল দাদামনোজ মিত্রদেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়
১৯৮৫১২ই জানুয়ারিরাজদর্শনমনোজ মিত্রবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৫১লা মেমাগোর্কিবিষ্ণু চক্রবর্তীবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৫১২ই অক্টোবরসীতাকাহিনীশুভ জোয়ারদারবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৬১২ই জানুয়ারিকেনারাম বেচারামমনোজ মিত্রবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৬২৫শে ফেব্রু.গুলশনশ্যামাকান্ত দাসবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৬৩রা মেভূমিকাকর্ণ সেনতরুণ সেনগুপ্ত
১৯৮৬৪ঠা জুনকালের যাত্রারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরস্বপন রায়
১৯৮৬১৯শে অক্টোবরবিছন (হিন্দী)মহাশ্বেতা দেবীহরিমাধব মুখোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৭২৬শে জুনফেরাইঘাটজহর দাশগুপ্তউজ্বল হক
১৯৮৭২৬শে জুনক্ষেতু বাগ্দী গোপাল কাহারঅরুণ মুখোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৮২৮শে মার্চজাগরণদারিয়ো ফোঁমালিনী ভট্টাচার্যবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৮৬ই এপ্রিলতার্ত্যুফমলিয়েরলোকনাথ ভট্টাচার্যবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৮২০শে এপ্রিলসুখী পরিবারল্যু-স্যুন অনুপ্রা.প্রবীর দত্তপ্রদীপ রুজ
১৯৮৮২০শে এপ্রিলছাতা ও ষণ্ড বিষয়ক একটি কিয়োগেনপবিত্র সরকারপীযূষ সরকার
১৯৮৮৩রা অক্টোবরফুলমোতিয়াপ্রশান্ত চৌধুরীসুপ্রিয় সর্বাধিকারীবাবুন চক্রবর্তী ও প্রদীপ রুজ
১৯৮৮৫ই অক্টোবরআলিবাবাক্ষীরোপ্রসাদমোহিত চট্টোপাধ্যায়উজ্জ্বল হক ও বাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৮১২ই নভেম্বরকামার কাহিনীউপেন্দ্রকিশোরচিত্তরঞ্জন দাসপীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়
১৯৮৯৭ই ডিসেম্বরকিনু কাহারের থেটারমনোজ মিত্রপ্রদীপ রুজ ও বাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৯১২ই এপ্রিলচিৎকারতাপস দত্তরায়স্বপন রায়
১৯৮৯২৫ই সেপ্টেম্বরচণ্ডালিনীদেবাশিস মজুমদারবাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৯২৬ই সেপ্টেম্বরপাখিচেখভঅজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৮৯৭ই ডিসেম্বরলাঠিমোহিত চট্টোপাধ্যায়পীযূষ দে
১৯৮৯৭ই ডিসেম্বরঘড়ি আংটি ইত্যাদিমনোজ মিত্রউত্তম চট্টোপাধ্যায়
১৯৮৯১৪ই ডিসেম্বরপুতুলখেলাহেনরিক ইবসেনশম্ভু মিত্রঅপরাজিতা মুখোপাধ্যায়
১৯৯০২৩শে ফেব্রু.সুদিনের লেগেনরেশ গিরিস্বপন রায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৯০৫ই সেপ্টেম্বরসদাগরের নৌকাঅজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৯২১০ই এপ্রিলপিদিমের আলাবাবুন চক্রবর্তীবাবুন চক্রবর্তী
১৯৯২৫ই সেপ্টেম্বরতামাকু সেবনের অপকারিতাচেকভঅজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৯২৫ই সেপ্টেম্বরগায়িকা দলের মেয়েচেকভঅজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৯২৫ই সেপ্টেম্বরনানা রঙের দিনঅজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৯২৫ই সেপ্টেম্বরশরতের মেঘঅজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৯২৫ই সেপ্টেম্বরপ্রস্তাবচেখভঅজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৯২১৬ই নভেম্বরগণশত্রুইবসেনমিলন চট্টোপাধ্যায়স্বপন রায়
১৯৯৩২১শে ফেব্রু.কবরমুনীর চৌধুরীপীযূষ দে
১৯৯৩১২ই এপ্রিলসাপের ঝাঁপিমনজেন্দু মুৎসুদ্দিউজ্জ্বল হক
১৯৯৩১লা মেচেনা কাহিনী অচেনা গল্পকমল সেনপ্রদীপ রুজ
১৯৯৩৩রা সেপ্টেম্বরকঙ্গোর কারাগারেউৎপল দত্তযতীন দে
১৯৯৩১৭ই অক্টোবরসূর্য শিকারউৎপল দত্তপ্রদীপ রুজ
১৯৯৪৫ই মেমহাবিদ্যামনোজ মিত্রবাবুন চক্রবর্তী
১৯৯৪৩রা অক্টোবরবেড়াতে বেরিয়েঅনমিত্র দাসউজ্জ্বল হক
১৯৯৪৩রা অক্টোবরআর একটা দিনসৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়স্বপন রায়
১৯৯৫৮ই ফেব্রুয়ারিশান্তিসেনাতীর্থঙ্কর চন্দস্বপন রায়
১৯৯৫১২ই এপ্রিলঅন্ধের নগরী চৌপট রাজাভরতেন্দু হরিশ্চন্দ্রউজ্জ্বল হক
১৯৯৫২২শে সেপ্টে.সিদ্ধান্তস্বপন দাসবাবুন চক্রবর্তী
১৯৯৫২২শে সেপ্টে.অপহরণবৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৯৫২২শে সেপ্ট.মেরুদণ্ডমধুসূদন মুখোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৯৬৪ঠা সেপ্টেম্বরমহাজ্ঞানীদুলাল করবাবুন চক্রবর্তী
১৯৯৭১২ই এপ্রিলকানা খোঁড়ার নীতিকথাদারিয়োঁ ফোঁওঙ্কার ঘোষবাবুন চক্রবর্তী
১৯৯৭১৪ই ডিসেম্বরশঠে শাঠ্যাংনিখিলরঞ্জন দাসপীযূষ দে
১৯৯৭১৪ই ডিসেম্বরচোরমানিক বন্দ্যোপাধ্যায়অম্বর রায়বাবুন চক্রবর্তী
১৯৯৯৯ই জানুয়ারিদ্বাদশ ভক্ত্যা চাড়ুমঅনুপম দত্তবাবুন চক্রবর্তী
১৯৯৯১২ই এপ্রিলনীলিমাসুপ্রিয় সর্বাধিকারীপীযূষ দে
১৯৯৯২৩শে জুনব্যতিক্রমব্রেশটরুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তবাবুন চক্রবর্তী
১৯৯৯৭ই ডিসেম্বরহারুন অল রশিদমোহিত চট্টোপাধ্যায়পীযূষ দে
২০০০২৬শে ফেব্রু.বদনচাঁদ লগনচাঁদবাবুন চক্রবর্তীবাবুন চক্রবর্তী
২০০০১৬ই এপ্রিলআবাদমধুসূদন মুখোপাধ্যায়উৎপল ফৌজদার
২০০০২৬শে আগস্টচল যাই যুদ্ধেবাবুন চক্রবর্তীবাবুন চক্রবর্তী
২০০০১৩ই ডিসেম্বরজটাইবাবাদিলীপ মজুমদারবাবুন চক্রবর্তী
২০০১২৫শে নভেম্বরখোলখঞ্জনী (সাধু সাবধান)বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়বাবুন চক্রবর্তী
২০০১৭ই ডিসেম্বরবুদ্ধিওলাসনঞ্জ চট্টোপাধ্যায়উজ্জ্বল হক
২০০২৯ই জুনপান্তাবুড়িউপেন্দ্রকিশোরশ্রীজীব গোস্বামীবহ্নি চক্রবর্তী ও বাবুন চক্রবর্তী
  ২০০২  ২০শে জুন  আড়ি আর ভাবকলকাতার শূদ্রক নাট্যদলের সহায়তায় কর্মশালা ভিত্তিক নির্মিতসিদ্ধার্থ চক্রবর্তী , গৌতম ভট্টাচার্য ও অদ্রিজা দাশগুপ্ত
২০০২১১ই আগস্টখেলাঘররমাপ্রসাদ বণিকউজ্জ্বল হক
২০০২১০ই নভেম্বরমোহনলাল স্বর্ণকারলাভশঙ্কর ঠাকুরসমীর দাসপীযূষ দে
২০০২৭ই ডিসেম্বরহু ইজ দ্যা গ্রেটেস্টরাখেশ জৈনবাবুন চক্রবর্তী
২০০৩১২ই এপ্রিলঘুমের মানুষমান্নান হীরাউজ্জ্বল হক
২০০৩৯ই ডিসেম্বরবুড্ডাজিনের তরবারীশুভঙ্কর চক্রবর্তীবাবুন চক্রবর্তী
২০০৪১২ই এপ্রিলজলীয়দীপায়ন ভট্টাচার্যজয়দেব সাহা
২০০৪২৬শে সেপ্টে.নীলনেশাকুন্তল রুদ্রপীযূষ দে
২০০৫২৬শে ফেব্রু.খরস্রোতাইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়উজ্জ্বল হক
২০০৫২৭শে মার্চআকাশপাখিশুভ জোয়ারদারপীযূষ দে
২০০৫১৬ই মেপাথরবাবাশিবরামনিখিলরঞ্জন দাসবাবুন চক্রবর্তী
২০০৬১২ই এপ্রিলরূপকথার কেলেঙ্কারীবাদল সরকারউত্তম চট্টোপাধ্যায়
২০০৬৯ই জুলাইদম্পতিমনোজ মিত্রউত্তম চট্টোপাধ্যায়
২০০৬২৯শে নভেম্বরভুত না পুতশিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুনন্দন চক্রবর্তীবাবুন চক্রবর্তী
২০০৭২২শে অক্টোবররোহিতাস্মমধুসূদন মুখোপাধ্যায়উত্তম চট্টোপাধ্যায়
২০০৭৭ই ডিসেম্বরচোরদেবেশ ঠাকুরশ্রীজিৎ সরকার
২০০৮১২ই এপ্রিলঅনির্বাণ (পথনাটক)বাবুন চক্রবর্তীবাবুন চক্রবর্তী
২০০৯১২ই এপ্রিলশিবহেশুভেন্দু মাইতিজয়দেব সাহা
২০০৯১৬ই জুনমরুবালিপ্রদীপ ভট্টাচার্যউজ্জ্বল হক
২০০৯৭ই ডিসেম্বরকহেন কবি কালিদাসঅতনু বর্মণউজ্জ্বল হক
২০১০১৮ই সেপ্টেম্বরসুপারীঅভিজিৎ তরফদারউজ্জ্বল হক
২০১১১৩ই নভেম্বরগুণধরঅনিল সাহাউজ্জ্বল হক
২০১২২৫শে জানুয়ারিআগামী*সম্মিলিত পান্ডুলিপিউজ্জ্বল হক
২০১২১২ই এপ্রিলমিড-ডে-মিলসুব্রত কুমার নাগউজ্জ্বল হক
২০১৩২৭শে জানুয়ারিবিদ্যাবালাইসুব্রত কুমার নাগউজ্জ্বল হক
২০১৪১৪ই জানুয়ারিকঙ্কলীলাবতী কথাসঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়উজ্জ্বল হক
২০১৫১৯শে এপ্রিলগৃধণুপূর্বাচল দাশগুপ্তউজ্জ্বল হক
২০১৫৩০শে আগস্টহাসির লড়াইআশিসকুমার মুখোপাধ্যায়উজ্জ্বল হক
২০১৬মেসম্পর্কউজ্জ্বল হক
২০১৬৩রা সেপ্টেম্বরমঘাপ্রভাত দাসপীযূষ সরকার
২০১৬৪ঠা সেপ্টেম্বরস্বপ্নস্নানমৈনাক সেনগুপ্ত
২০১৬৮ই নভেম্বরমিত্রচেনাজয়দেব সাহা
২০১৭২৭শে মার্চসহগমনসঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়জয়দেব সাহা
২০১৭৬ই জুনপথ সংস্কৃতিপীযূষ রায়পীযূষ রায়
২০১৭১৩ই নভেম্বরউত্তরণজয়দেব সাহাজয়দেব সাহা
২০১৭২৬শে নভেম্বরঢিসুমঢিসুমমোহিত চট্টোপাধ্যায়উজ্জ্বল হক
২০১৭২৮শে ডিসেম্বরফলবাগান ফুলবাগাননিরূপ মিত্র
২০১৮২৭শে মার্চদাদুর দাঁতঅমিতাভ ভট্টাচার্যজয় বন্দ্যোপাধ্যায়
২০১৮১৪ই এপ্রিলএই পৃথিবীটাঅনুপম দত্তজয়দেব সাহা

তথ্যসূত্র :

১)  পশ্চিমবঙ্গ সংবাদ ; জনমত বিভাগ ; ১১ই জুন ১৯৮৩

২)  কল্লোলিত চল্লিশ : আনন (চল্লিশ বছর পূর্তিতে আনন হতে প্রকাশিত পত্রিকা); সংরক্ষণ , সংকলন ও বিন্যাস- স্বপন রায় ; পৃষ্ঠা ১২৯

৩)  সাপ্তাহিক দিদিভাই ; ১৪ই ডিসেম্বর , ১৯৮১

৪)  বোলপুর বার্তা ; ৬ই অক্টোবর , ১৯৮৩ 

৫)  অজয় ; ৩০শে জুন , ১৯৮৬

৬) সত্যযুগ ; ৩রা জুলাই , ১৯৮৬   

৭)  চক্রবর্তী , অমিত ; ‘সংগ্রামের মধ্যে বেঁচে থাকার এক নতুন শপথ’ ; আননায়ুধ ; ১০ই এপ্রিল , ১৯৯০

৮)  কল্লোলিত চল্লিশ : আনন (চল্লিশ বছর পূর্তিতে আনন হতে প্রকাশিত পত্রিকা); সংরক্ষণ , সংকলন ও বিন্যাস- স্বপন রায় ; পৃষ্ঠা ১৯৪

৯)  বন্দ্যোপাধ্যায় , মোহিত কুমার ; দৈনিক চন্দ্রভাগা ; ২৩শে সেপ্টেম্বর , ১৯৯২

১০)  সরকার , সঞ্জীব ; আননায়ুধ ; ১০ই অক্টোবর , ১৯৯৫  

১১)  গঙ্গোপাধ্যায় , রঞ্জন ; পশ্চিমবঙ্গ ; ১৪ই ফেব্রুয়ারি , ১৯৯৭ 

১২)  বোলপুর বার্তা ; ১৬ই জানুয়ারি , ১৯৯৭  

১৩)  কল্লোলিত চল্লিশ : আনন (চল্লিশ বছর পূর্তিতে আনন হতে প্রকাশিত পত্রিকা); সংরক্ষণ , সংকলন ও বিন্যাস- স্বপন রায় ; পৃষ্ঠা ১১৮

তথ্যদাতা :

১)স্বপন রায়  ২)রজকুমার সাহা  ৩)তাপসকুমার চক্রবর্তী ওরফে বাবুন চক্রবর্তী  ৪)তথাগত চক্রবর্তী  ৫)উজ্জ্বল হক  ৬)শুভ জোয়ারদার (কলকাতা)  ৭)তপননারায়ণ রায়চৌধুরী  ৮)সুবিনয় দাস  ৯)শম্ভুনাথ সাহা  ১০)নির্মল হাজরা ও ১১) মুকুল সিদ্দিকী।