Role of Media in popularizing Rabindra Sangeet
DR. MAUSUMI PAL
PURNIDEVI CHOWDHURY GIRL’S COLLEGE, BOLPUR, BIRBHUM, PINCODE : 731204, Ph. No. : 9830353952, Email Id : palkundu.mausumi9@gmail.com
Abstract
Radio and Television Broadcasts: Public radio and television stations often air Rabindra Sangeet, especially during significant occasions like Tagore’s birth or death anniversary, cultural festivals, and national holidays. Regular broadcasts expose a wide audience to these songs, thereby popularizing them across generations. Online Platforms and Streaming Services: With the advent of the internet, Rabindra Sangeet has found a new avenue for dissemination. Online platforms and streaming services offer a vast repository of Rabindra Sangeet albums, playlists, and performances. This accessibility allows people worldwide to explore and enjoy Tagore’s music. Music Albums and Record Labels: Various music labels produce albums featuring Rabindra Sangeet sung by renowned artists. These albums are promoted through traditional and digital media channels, contributing to the continued popularity of Tagore’s music. Concerts and Performances: Media coverage of concerts and performances featuring Rabindra Sangeet artists helps generate public interest in these events. Through reviews, interviews, and live broadcasts, the media exposes audiences to different interpretations and renditions of Tagore’s compositions. Documentaries and Films: Documentaries and films about Rabindranath Tagore often include his music, thereby introducing new audiences to Rabindra Sangeet. The visual medium complements the auditory experience, enhancing the appreciation and understanding of Tagore’s musical legacy. Social Media and Digital Marketing: Social media platforms serve as powerful tools for promoting Rabindra Sangeet. Artists, music labels, and cultural organizations leverage social media channels to share performances, engage with audiences, and organize virtual events, thus expanding the reach of Tagore’s music globally. Educational Institutions and Cultural Events: Schools, colleges, and cultural organizations organize competitions, workshops, and cultural events centred around Rabindra Sangeet. Media coverage of these events encourages participation and fosters a deeper appreciation for Tagore’s musical heritage among students and enthusiasts. Overall, the media acts as a catalyst in popularizing Rabindra Sangeet by amplifying its reach, fostering appreciation, and preserving its cultural significance for future generations.
রবীন্দ্রসংগীতকে জনপ্রিয় করতে মিডিয়ার ভূমিকা
মিডিয়া প্রভাব হল ব্যক্তি বা শ্রোতাদের চিন্তাভাবনা, মনোভাব এবং আচরণের উপর গণমাধ্যম এবং মিডিয়া সংস্কৃতির প্রভাব সম্পর্কিত বিষয়। লিখিত, টেলিভিশন বা কথ্য চ্যানেলের মাধ্যমে, গণমাধ্যম বড় শ্রোতাদের কাছে পৌঁছায়। আধুনিক সংস্কৃতি গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা বিশেষ কার্যকরী। বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে গণমাধ্যমকে ৭টি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। যথা-
১) মুদ্রিত (বই, ক্ষুদ্র পুস্তক, সংবাদপত্র, সাময়িকী প্রভৃতি) মাধ্যম পঞ্চদশ শতক থেকে প্রচলিত হয়ে আসছে। ২) সিনেমা- ঊনবিংশ শতক থেকে প্রচলিত। ৩) রেকর্ডিং (গ্রামোফোন রেকর্ড, ম্যাগনেটিক ট্যান, ক্যাসেট, কার্ট্রিজ, সিডি, ভিডিও ইত্যাদি) মাধ্যম ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে প্রচলিত। ৪) রেডিও – ১৯১০ সাল থেকে প্রচলিত। ৫) টেলিভিশন – সম্প্রচার ব্যবস্থা ১৯৫০ সাল থেকে প্রচলিত। ৬) ইন্টারনেট ব্যবস্থা – ১৯৯০ সাল থেকে প্রচলিত। ৭) মোবাইল ফোন – ২০০০ সাল থেকে গণমাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কনসার্ট এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রবীন্দ্রসংগীত প্রচারে এবং ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই অনুষ্ঠানগুলি প্রতিভাবান শিল্পীদের তাদের দক্ষতা প্রদর্শন এবং রবীন্দ্রসংগীতের সৌন্দর্য্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে শ্রোতাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরী করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে। লাইভ পারফরম্যান্সের পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যাপক শ্রোতাদের কাছে রবীন্দ্রসংগীত প্রচারের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। অনলাইন কনসার্ট, স্ট্রিমিং পরিষেবা এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি শিল্পীদের বিশ্বব্যাপী সঙ্গীত উৎসাহীদের কাছে পৌঁছানোর এবং বিভিন্ন শ্রোতাদের সাথে রবীন্দ্রসঙ্গীতের জাদু শেয়ার করার অনুমতি দেয়। এইভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীত ভারতে এবং এর বাইরেও সমাজ ও সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। রবীন্দ্রসংগীতের জনপ্রিয়তা আন্তর্জাতিক শিল্পী এবং ভারতীয় সংগীতজ্ঞদের মধ্যে ব্যাপকহারে আদরনীয় হয়ে উঠেছে। সহযোগিতার দিকে পরিচালিত করেছে, ধারাটিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে এবং অনন্য সঙ্গীতের সংমিশ্রন তৈরি করেছে। এই ক্রম-সাংস্কৃতিক সহযোগিতাগুলি মানুষকে একত্রিত করতে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং উপলব্ধি বৃদ্ধিতে সঙ্গীতের শক্তির প্রমাণ হিসাবে কাজ করে।
রবীন্দ্রসংগীতের উত্তরাধিকার সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য বেশ কিছু সংগঠন ও উদ্যোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সংস্থাগুলি রবীন্দ্রসংগীতের কর্মশালা, প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে, যা উদীয়মান শিল্পীদের তাদের প্রতিভা প্রদর্শনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে এবং প্রবীণ শিল্পীদের কাছ থেকে শিখতে পারে। এই সংস্থাগুলির প্রচেষ্টার পাশাপাশি, ভারত সরকারও রবীন্দ্রসংগীতকে একটি মূল্যবান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে সংরক্ষণের পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার স্পনসর করা সংগীত একাডেমি এবং প্রতিষ্ঠানগুলি উচ্চাকাঙ্খী সংগীত শিল্পীদের কোর্স এবং বৃত্তি প্রদান করে, যাতে আগামী প্রজন্মের জন্য বিকাশ অব্যাহত থাকে।
মিডিয়ার প্রভাব হল একটি বার্তা দ্বারা প্রয়োগ করার শক্তি, যার ফলে শ্রোতা বা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের পরিবর্তন বা শক্তিবৃদ্ধি হয়। একটি মিডিয়া বার্তা তার শ্রোতা সদস্যদের মধ্যে কোন প্রভাব ফেলবে কিনা তা দর্শক জনসংখ্যা এবং মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যসহ অনেকগুলি কারণের উপর নির্ভরশীল। এই প্রভাবগুলি ইতিবাচক বা নেতিবাচক, আকস্মিক বা ধীরে ধীরে, স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সব প্রভাব পরিবর্তনের ফলে হয় না, কিছু মিডিয়া বার্তা বিদ্যমান বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে।
রবীন্দ্রনাথের গান যা কিনা একসময়ে ছিল রবিবাবুর গান, পরবর্তীকালে সেই গানই, একটি স্বতন্ত্র শ্রেনীতে পর্যবসিত হয়ে ‘রবীন্দ্রসংগীত’ নামে রূপান্তরিত হয়। এই রবীন্দ্রসংগীত যার দ্বারা জনসাধারণের কাছে পৌঁছায় তাই-ই মাধ্যম। এই মাধ্যমের আছে নানারূপ। তা মুদ্রিত মাধ্যম হিসাবে (যেমন সংবাদপত্র, ব্রোশিওর, নিউজলেটার, বই, লিফলেট) বিষয়বস্তুকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে, এতে ফোটোগ্রাফী এবং পাবলিশিং কোম্পানীগুলি সাহায্য করতে পারে। আবার সম্প্রচার মাধ্যম হিসাবে যা ইলেকট্রনিক মিডিয়া নামে পরিচিত, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে তাদের তথ্যাবলী প্রেরণ করতে পারে। যেমন – টেলিভিশন, সিনেমা, ইন্টারনেট, রেডিও, সিডি, ডিভিডি, ক্যামেরা, ভিডিও – চিত্রগ্রহণ ইত্যাদির সাহায্য নেওয়া হয়। মোবাইল, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ও নিজস্ব ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ন মাধ্যম হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষ করে ই-মেইল, ওয়েব সাইট, ব্লগিং ইত্যাদির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
প্রিন্ট মিডিয়া হল তথ্য ও সংবাদপত্রের ছাপানো রূপ। প্রিন্টিং প্রেস আবিষ্কারের আগে, মুদ্রিত উপকরণগুলি হাতে লিখতে হত, যার ফলে ব্যাপক বিতরণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। প্রথাগত গণমাধ্যমের পরে সংবাদপত্রগুলিকে গণমাধ্যমের প্রাচীনতম রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ দীর্ঘ সময় ধরে, সাধারন জনগণ তাদের স্থানীয় অঞ্চলের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি জানতে সংবাদপত্রের উপর নির্ভর করত। এইভাবে প্রিন্ট মিডিয়া বলতে মূলতঃ সংবাদপত্রকে উল্লেখ করা হয় এবং তারপর ম্যাগাজিন, ট্যাবলয়েড, প্রচারমূলক ব্রোশিওর, জার্নাল, বই, উপন্যাস এবং কমিক্সে প্রসারিত হয়।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মধ্যে ভারতী (১৩০৫), বালক, সাধনা, বঙ্গদর্শন (বঙ্কিমচন্দ্র), ভান্ডার (১৩১২), তত্ত্ববোধিনী ইত্যাদি নানা পত্র পত্রিকার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এবং ঠাকুরবাড়ীর অনেক সদস্য/সদস্যরা যুক্ত ছিলেন।
দেশ ও জাতির সমস্ত রকম হিত সাধনের উদ্দেশ্যে ‘ভান্ডার’ পত্রিকার প্রকাশ। এই পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের অজস্র স্বদেশী গান বেরিয়েছিল। প্রথম বছরে (১৩১২ বঙ্গাব্দ) পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংখ্যায় তিনি লিখেছেন,
‘‘এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে, জয় মা বলে ভাসা তরী’’
এই পত্রিকাতেই তিনি বাউলের সুর লিখলেন ‘একা’ নামের বিখ্যাত গানটি। সকল বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে ব্যক্তিমানুষকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে দৃপ্তকন্ঠে বললেন,
‘‘ যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে।’’
তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’’ কবিতাটি প্রথম মুদ্রিত হয় পরবর্তীকালে তা ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পেয়েছে।
বাঙালির রবীন্দ্রচর্চার আর এক মাধ্যম ছিল তখন চলচ্চিত্র। ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ই মনে হয় সর্বপ্রথম রবীন্দ্রনাথ আধারিত চলচ্চিত্র যা কিনা সর্বজনীন হয়েছিল। চারুলতা, তিনকন্যা উচ্চবিত্ত শ্রেনীর দর্শকদের বিশেষ মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছিল। অবশ্য এই সমস্ত চলচ্চিত্রের মনোগ্রাহী দর্শক হয়ে উঠতে বাঙালীর যথেষ্ট সময় লেগেছিল। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের ছবিতে রবীন্দ্রনাথের গানের ব্যবহার খুব বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি বলাই বাহুল্য। আদিযুগে চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রনাথকে বাঙালী পেয়েছিল পঙ্কজ মল্লিক ও কানন দেবীর গানের মধ্য দিয়ে। এরপর পাঁচের দশক থেকে চলচ্চিত্রে বিশেষ আসন করে নিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। মাঝে মাঝে সুমিত্রা সেনের স্বচ্ছ, পরিশীলিত ম্যানারিজম বিহীন কন্ঠকে ব্যবহার করা হয়েছে। কণিকা বন্দোপাধ্যায়ের কন্ঠকে ব্যবহার করেও বাণিজ্যিক ছবিতে যথেষ্ট সাফল্য লাভ করা গেছিল। এই ছিল সেই সময়ে মধ্যবিত্ত, নিন্মমধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্তের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল।
১৯২৯ সালে মুরারী ভাদুড়ীকে লেখা একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ তাঁর চলচ্চিত্র ভাবনা ও উদ্ভাবনীসত্তার প্রকাশ সম্পর্কিত বিষয়ে বলেছিলেন ‘‘স্বর মাধুর্যের, স্বর প্রবাহের গভীরতা যদি কোনো শব্দ ছাড়াই সংগীতের দ্বারা সম্ভব হয়, তাহলে স্বচ্ছ সৌন্দর্যবোধ সম্পন্ন অভিজ্ঞতা ধরলে দোষ কী’’? পরে অনেক প্রবন্ধে চলচ্চিত্র নিয়ে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন চিন্তা এবং পরিকল্পনার কথা জানা যায়। ইউরোপ সফর করে প্রথমবার দেশে ফিরে রবীন্দ্রনাথ নিজেকে চলচ্চিত্র শিল্প অর্থাৎ কাহিনীকার, গীতিকার, সুরকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা, পরিচালক ইত্যাদি রূপে নিজেকে ভাবতে শুরু করেন। তারই ফলস্বরূপ নিউথিয়েটার্সের ‘নটির পূজা’ ছবিটি রবীন্দ্রনাথ পরিচালনা করেন। তাছাড়া ১৯৩০ সালে মিঠুবসুর ‘গিরিবালা’ ছবিটির কাজেও তিনি জড়িয়ে পড়েন। এর পরবর্তীকালে জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে রবীন্দ্রনাথ ‘ডালিয়া’ ও ‘রাজর্ষি’ এই দুটি গল্প ও উপন্যাস মিলিয়ে একটি চিত্রনাট্য রচনায় মন দেন এরপর জার্মানির একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থার অনুরোধে ‘উফ দ্য চাইল্ড’ নামে ইংরেজিতে একটি চিত্রনাট্যের খসড়া রচনা করেন, যা কিনা পরে রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক কবিতায় রূপান্তরিত হয়ে নাম দেওয়া হয় ‘শিশুতীর্থ’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুঝেছিলেন চলচ্চিত্রের প্রথম এবং প্রধান জিনিসটাই হল ঘটনার দৃঢ়তা, দৃশ্যের গতিপ্রবাহ বা রূপের প্রবাহ। সংলাপের ভূমিকা সেখানে গৌণ বাংলা চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথই সর্বপ্রথম একটি মৌলিক এবং সার্থক চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ নিজেই মনে করতেন যে তাঁর সংগীত যেমন এক বিশেষ ধারায় পরিচিতি লাভ করেছে, তার গল্প উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রও এক বিশেষ রূপ লাভ করবে। রবীন্দ্রনাথের এই উপলব্ধির প্রকাশ সময়ের গতি-প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে যথাযথভাবে ঘটেছে। দেখা গেছে রবীন্দ্রনাথের ধ্রুপদী সব গল্প এবং উপন্যাস থেকে অসংখ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। এই সকল চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থেকেছেন নরেশ মিত্র, মিঠু বসু, সত্যজিৎ রায়, অজয় কর, তপন সিংহ, ঋত্বিক ঘটক, ঋতুপর্ণ ঘোষের মত বিখ্যাত চলচ্চিত্রকারগণ। আর তাঁদের নির্মিত চলচ্চিত্রগুলি হল গোরা, ঘরে বাইরে, কাবুলিওয়ালা, পোস্টমাস্টার, চারুলতা, চোখের বালি প্রভৃতি। ১৯৩৭ সালে প্রমথেশ বড়ুয়া ‘মুক্তি’ চলচ্চিত্রে সর্বপ্রথম রবীন্দ্রসংগীতকে চলচ্চিত্রে আনেন। রবীন্দ্রনাথ নিজেই এ ছবির সংগীতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৩৮ সালে ‘গোরা’ ছবিতে সংগীত পরিচালক কাজী নজরুল ইসলাম যথেষ্ট সফলতার সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীতের সংযোজন করেন এবং এর জন্য তিনি যথেষ্ট প্রশংসিতও হন। পরবর্তীকালে অসংখ্য বাংলা চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসংগীতকে ব্যবহার করা হয়। যেমন ঋতুপর্ণ ঘোষ, নব্বইয়ের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রের এই তরুণ পরিচালক আক্ষরিক অর্থে বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান রেনেসাঁর সূচনা করেছিলেন। তিনি যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন সেখানে কৌশিক গাঙ্গুলী, অঞ্জন দত্ত এবং সৃজিত মুখার্জ্জীর মতো চলচ্চিত্র পরিচালকেরা বাংলা সিনেমাকে সত্যজিৎ রায় এবং মৃণাল সেনের চলচ্চিত্রের অভিজাত শ্রেনীতে ফিরিয়ে আনেন। ঋতুপর্ণ ঘোষের চলচ্চিত্রের অন্যান্য বিষয় ব্যতিত রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহার দর্শকমনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। যেমন – (ক) ‘শুভ মহরত’ চলচ্চিত্রের ‘জীবন মরনের সীমানা ছাড়ায়ে’ গানটি, (খ) নৌকাডুবি চলচ্চিত্রের ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি’ গানটি, (গ) আবহমান চলচ্চিত্রের ‘গহন কুসুম কুঞ্জমাঝে’ গানটি, (ঘ) ‘মার্চের স্মৃতি’ থেকে ‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’ গানটি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ, যা কিনা বাঙালি সংস্কৃতির একটি পরিবেশ তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিল। তাই রবীন্দ্রনাথের চলচ্চিত্র ভাবনা সম্পর্কে একথা নিঃসংকোচে বলা যায় বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে তিনি চলচ্চিত্র শিল্পেও যথেষ্ট অবদান রেখে গেছেন।
রবীন্দ্রসংগীতের প্রচার, প্রসার, শুদ্ধতা ও জনপ্রিয়তা নিয়ে ১৯২৯ সালের ২৯শে মার্চ প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ দিলীপ কুমার রায়ের সঙ্গে কথোপকথনে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে সংগীত প্রচারের আধুনিক প্রযুক্তির দুটি আবিষ্কারের কথা উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে একটি গ্রামোফোন। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে তাঁর গানের ব্যাপকভাবে, বিকৃতভাবে যান্ত্রিক পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে রবীন্দ্রসংগীতের সাধারণ সংস্কৃতির অবনতিতে অবদান রেখেছে বলে মনে করা হয়েছিল। তাঁর গানের রেকর্ডিংয়ের প্রাথমিক পর্যায়ে পেশাদার গায়ক নির্ধারিত স্বরলিপির মেনে চলার কোনো পরোয়া করতেন না। তাঁরা প্রায় সকলেই তাদের নিজস্ব শৈলী এবং স্বরলিপি অনুযায়ী রেকর্ডিং করেছেন। স্বরলিপি কোনো সংগীত নয়, কিন্তু তাকে যথাযথভাবে মেনে না চললেও বিপদ। এ ব্যাপারে রক্ষনশীলতার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ যথেষ্ট যত্নবান ছিলেন। শান্তিদেব ঘোষের মতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে রবীন্দ্রনাথের গানের প্রথম রেকর্ডিং হয়েছিল।
ছয়/সাতের দশকে লেখাপড়া জানা মধ্যবিত্ত, নিন্ম মধ্যবিত্ত বহু বাঙালি বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ শোনা বা চর্চার একমাত্র উৎস ছিল ট্রানজিস্টর। প্রতিদিন সকাল সাতটা চল্লিশে তিনটি গান শোনা যেত কুড়ি মিনিটের জন্য। শনিবার রাত সাড়ে নটায়, রবিবার দুপুর একটায় আধঘন্টা রবীন্দ্রসংগীত শোনা যেত। আর ছিল রবিবার সকালের সংগীত শিক্ষার আসর। যাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক, অশোক তরু বন্দোপাধ্যায়, কণিকা বন্দোপাধ্যায় প্রমুখ। আর ছিল ছোট ছোট স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তখন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আমন্ত্রন জানাতেন, সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস, সুবিনয় রায়, ঋতুগুহ প্রমুখকে। তাঁরা সাদরে সেই আমন্ত্রণ গ্রহন করতেন।
১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে, টেলিভিশনের ব্যাপক ব্যবহার সামাজিক জীবনে এর অভূতপূর্ব শক্তি নির্দেশ করে।
বাংলাদেশে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীর ভাষা আন্দোলনের সেই রক্তাক্ত দিনের পর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বের নিকট স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের অবদানকে অস্বীকার করা যায় না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৪ সালে, বাংলাভাষা ও রবীন্দ্রসমর্থক আপামর বাঙালির সমর্থনপুষ্ট রাজনৈতিক শক্তি বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করে। বাঙালির এই রবীন্দ্রচেতনাকে অপমান করে ১৯৫৮ সালে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের নেতৃত্বে সামরিক শাসন জারি করা হয়। এই সময় ১৯৬১ সালে যখন সারাবিশ্বের সংস্কৃতিপরায়ণ মানুষ রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদযাপনে রত তখন সামরিক সরকার পন্থি-ভারতবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সরকারিভাবে রবীন্দ্রনাথকে বিজাতীয় ঘোষনা করে। কিন্তু সেইসময়ে পূর্ব-পাকিস্তানের সংস্কৃতিপ্রাণ মানুষ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ব্যাপকভাবে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদযাপনের পরিকল্পনা করে। ১৯৬৭ সালের জুন মাসে পাকিস্তানের তৎকালীন তথ্য ও বেতারমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দীন জাতীয় পরিষদে ঘোষনা করেন যে বেতার ও টেলিভিশন থেকে পাকিস্তানবিরোধী রবীন্দ্রসংগীতের প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে রবীন্দ্রনাথের অন্য গানের প্রচারও হ্রাস করা হবে।
এই ঘোষনার প্রতিবাদে ‘বাঙালি’রা বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভ সংগঠনে নেতৃত্ব দেয় ‘ক্রান্তি’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রী সংসদ’, ‘অপূর্ব সংসদ’ প্রভৃতি সংগঠন। ১৯৬৭ সালের এই বিতর্কের ফলে রবীন্দ্রচর্চা আরও বিকশিত হয়ে ওঠে। এই সময়ের আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল রমনার বটমূলে প্রথম পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানের প্রবর্তন। দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে (১৯৭১ সাল ব্যতীত) এই অনুষ্ঠান রবীন্দ্রসংগীতকে যথেষ্ট জনপ্রিয় করে তুলেছিল। ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানের মতো প্রকৃতি ও অন্যান্য পর্যায়ের গানগুলিকে বাঙালীর অন্তরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ছায়ানটের অবদান অবিস্মরনীয়। ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে আইয়ুব সরকারের পতনের সময় পূর্ববর্তী ঘোষিত আদেশ পরিবর্তন করে ঢাকার বেতার ও টেলিভিশন কেন্দ্র রবীন্দ্রসংগীতের সম্প্রচার বাড়িয়ে দেয় এবং ওই বছরই ফেব্রুয়ারী মাসের শেষে বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের মুক্তিলাভের পর তিনি রেসকোর্সের ময়দানের এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দান প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসংগীত প্রসঙ্গ উথ্থাপন করেন। সেখানে তিনি বলেন ‘‘…………….. আমরা এই ব্যবস্থা মানি না – আমরা রবীন্দ্রনাথের বই পড়বই, আমরা রবীন্দ্রসংগীত গাইবই এবং রবীন্দ্রসংগীত এই দেশে গীত হবেই।’’ শেখ মুজিবুর রহমানের এই বক্তব্যের পরে তৎকালীন বেতার ও টেলিভিশনসহ নানা মাধ্যমে রবীন্দ্রসংগীতের প্রচার ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
Valkenburg & Peter (2009) বলেন যে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি প্রাথমিকভাবে তরুণদের মধ্যে বাস্তব জীবনের বন্ধুত্ব বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়। অতএব এই মিডিয়া ব্যবহার সেই বন্ধুত্ব বাড়াতে পারে।
এরপরে, মোবাইল ফোনের ব্যবহার (ইমেইল, ওয়েবসাইট, ইউটিউব, ব্লগিং এর মাধ্যমে) গণমাধ্যমকে আরও ডিজিটালাইজড্ করে তুলেছে।
তাই বলা যায় ২০ শতকের গোড়ার দিকে রবীন্দ্রসংগীতের জনপ্রিয়তায় মিডিয়ার প্রভাব সর্বব্যাপী এবং তাৎক্ষণিক হয়ে ওঠে, শতাব্দীর প্রথম দশকে এবং ১৯২০ এর দশকে রেডিও এর জনপ্রিয়তা গণ যোগাযোগে উচ্চতর তাৎক্ষণিকতা নিয়ে আসে এবং তা সঙ্গীত ব্যতীত অন্যান্য সকল বিনোদনেও বিপ্লব ঘটায়। এরপর ১৯৫০ এর দশকে যখন টেলিভিশন জনগণের পছন্দের গণমাধ্যম হিসাবে রেডিওকে প্রতিস্থাপন করেছিল তখনও রবীন্দ্রসংগীতের সম্প্রচারে এবং বিস্তৃতিতে এই মাধ্যম অগ্রণীর ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। পরবর্তীকালে একবিংশ শতাব্দীতে ইন্টারনেটের বিকাশ এবং ডিজিটাল মিডিয়ার প্রসারের সাথে, গণযোগাযোগের প্রায় প্রতিটি দিকই আবার নাটকীয়তা পরিবর্তিত হয়েছে। এই নতুন প্রযুক্তি বৃহত্তর ক্ষেত্রে শ্রোতাদের সাথে যোগাযোগ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় একসময় শুধুমাত্র সংবাদপত্র, রেডিও স্টেশন এবং টেলিভিশন, সম্প্রচারকদের মালিকদের কাছে জনপ্রিয় সঙ্গীত ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানকে প্রভাবিত করার উপায় ছিল, কিন্তু এখন যে কেউ সামাজিক মিডিয়া, ব্লগ ও অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পাবলিক ফোরামে অংশগ্রহণ করতে পারে। তাই বলা যায় এই বৈচিত্র্যময় এবং বিকেন্দ্রীভূত মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপের প্রভাব হল কন্ঠস্বর এবং দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তৃত পরিসরের প্রচার।
উল্লেখপঞ্জী
1) Nagorik – net
https://nagorik net > culture > geom. ………….
বাঙালির রবীন্দ্রসংগীতে শোনাঃ অনুভবের ছবি
2) –Somewhere in ………. Blog
https:// m.somewhere in blog.net > blog.net>blog
গণমাধ্যমের ভেতরে ও বাইরে – অস্তিত্ব,প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ
3) Wikipedia
গণমাধ্যম
4) Ministry of information and broadcasting
5) কালিদাস নাগ – সুরের গুরু রবীন্দ্রনাথ ; বুক ব্যাঙ্ক ; ২৫শে বৈশাখ ১৩৬৪, কলকাতা
6) সুধীর চক্রবর্তী – রবীন্দ্রসংগীতের ভবিষ্যৎ
7) আবদুল হক – রবীন্দ্রসংগীত : শিক্ষা ও প্রসার
8) NAGORIK.net
বাঙালির রবীন্দ্রসংগীত শোনাঃ অনুভবের ছবি-শান্তনু ব্যানার্জী
9) রবীন্দ্রনাথের গানের জ্যামিতি – অনিশ্চয় চক্রবর্তী
10) গান হতে গানে – সুধীর চক্রবর্তী