November 1, 2019

সংগীত শিক্ষা: গুরুশিষ্য পরম্পরা থেকে দূর শিক্ষা

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

লোপামুদ্রা চক্রবর্ত্তী

“নমো যন্ত্র, নমো-যন্ত্র, নমো-যন্ত্র, নমো-যন্ত্র!

তুমি চক্রমুখরমন্দ্রিত, তুমি বজ্রবহ্নিবন্দিত,……

…………তব পঞ্চভূতবন্ধনকর ইন্দ্রজালতন্ত্র।।”

মানব সমাজ যে সময় থেকে সভ্য এবং উন্নততর হয়ে উঠেছে তখন থেকেই অর্থনীতি, রাজনীতি প্রভূত অনেক বিষয়ের সাথে শিল্প-সংস্কৃতি একটি অন্যতম অঙ্গ হিসেবে মানব সমাজে জায়গা করে নিয়েছে কারণ একটি সভ্য সমাজ কখনোই শিল্প-সংস্কৃতি ছাড়া গড়ে ওঠে না। শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম আকর্ষিত বিষয় হলো “সংগীত” এ কথা বলাই বাহুল্য। “সংগীত” ছাড়া মানব সমাজ মৃতপ্রায়। আমরা যখন আমাদের নিত্যকার জীবন যাপনে এক এক সময় হাঁপিয়ে উঠি তখন “সংগীত” শ্রবণের মাধ্যমে অনেকেই মানসিক ভাবে শান্তি অনুভব করি। আর আমাদের যারা গান-বাজনার ছাত্র-ছাত্রী আছেন তাদের কথা বলাটা ‘মায়ের কাছে মাসির গল্প’ শোনানোর মতো। এ কথা ঠিক যে, সকলের ক্ষেত্রে গান-বাজনা শেখা সম্ভব হয়ে ওঠেনা কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নত থেকে উন্নততর হয়ে ওঠার কারণে সবাই তা শুনতে পারেন। এখন আমি যদি এই বিষয়ের ওপর সবিশেষ  আলোকপাতকরি তাহলে সেই লেখনী প্রকান্ড আকার নেবে তাই আমি ‘সংগীত প্রশিক্ষণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদান’-কে উপলক্ষ্য করে একটি ছোট্ট বিষয়ের ওপর আলোচনা করবো যে, “সংগীত প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুশিষ্য পরম্পরা তথা Virtual  and    Distance   or Correspondence Teaching Process.”

সংগীত একটি প্রাথমিক রূপকলা বিদ্যা। যে কোনো শিক্ষাই মানুষকে Disciplined  করে এবং এর মধ্যে সংগীত শিক্ষার একটু বিশেষত্ব আছে এবং এটাই সংগীত কলার বিশেষত্ব। খাদ্য-জল-বায়ুর আবশ্যকতা মানুষের জীবন ধারণের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং বিজ্ঞান হলো এর ধারক-সহায়ক। বিচিত্র এই বিচ্ছিন্ন জগতে একটি ঐক্য খোঁজার অর্থ হলো সুরের দিশা পাওয়া। আমাদের জীবনের প্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম্ম, স্বার্থ, দ্বন্দ, সংঘাত ইত্যাদির মধ্যে যে সম্পূর্ণতা ফুটে ওঠেনা- সেই অসম্পূর্ন জীবনকে সম্পূর্ণ করে তুলতেই সংগীত শিক্ষা। বর্তমানে “সংগীত” বিষয়কে ভিত্তি করে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা গড়ে উঠেছে যেমন- সংগীতবিদ্যা(Musicology), যন্ত্রসংগীত(Instrumental Music), কন্ঠসংগীত(Vocal Music), নৃত্যকলা(Dance) প্রভৃতি। শিক্ষার্থীরা কেউ যাচ্ছেন Academic Teaching process-এর দিকে, কেউ হচ্ছেন Educationist আবার কেউ বা যাচ্ছেন Stage Performance- এর দিকে। “সংগীত” বিষয়ের এই প্রত্যেকটি শাখা-প্রশাখার ক্ষেত্রে বর্তমানে বিজ্ঞানের ভূমিকাকে যেমন মোটেই অগ্রাহ্য করা যায়না ঠিক তেমনই “সংগীত” বিষয়ক উপরোক্ত শাখা-প্রশাখা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ‘গুরু’-র ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন Music Performer যখন গুরুগৃহে গুরুর সামনে বসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন তখন গুরু সেই শিক্ষর্থীকে অত্যন্ত গুরুত্ব এবং যত্ন সহকারে কীভাবে সুরের ভাঙা-গড়া করা হয়ে থাকে প্রভৃতি বিষয়ে বুঝিয়ে দিতে সামর্থ্য হন। কিন্তু একজন Academic  গুরু তথা Educationist  শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দান করবেন সেই যে সুরের ভাঙা-গড়া হচ্ছে সেটা কেন বা কি কারণেই বা সম্ভব হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদান এই ক্ষেত্রে যেমন গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা শিক্ষার্থীকে শিখতে সাহায্য করছে সুরের ভাঙা-গড়ার কারণ ঠিক তেমনই যিনি শিক্ষাদান করছেন অর্থ্যাৎ ‘গুরু’ শেখাচ্ছেন বলে শিক্ষার্থী সেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে সুরের ভাঙা-গড়া। সুতরাং  ভারতীয় সংগীত শাস্ত্র হলো “গুরুমুখী বিদ্যা” এইটা বললে মনে হয় খুব একটা অত্যুক্তি হবেনা।  

ভারতীয় সংগীত প্রাচীত কাল থেকে মূলতঃ ‘গুরুমুখীবিদ্যা’ বলেই আমরা দেখে আসছি। ‘গুরু’-র কাছ থেকে সংগীতাভ্যাস করা প্রয়োজন কারণ সংগীতে প্রযোজ্য স্বর  বিশেষের প্রয়োগ পদ্ধতি বা শ্রুতিস্থান কানে শুনে আয়ত্ব করা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র সংগীতের ক্ষেত্রেই নয় আমাদের দেশে যে কোনো বিদ্যাশিক্ষাই গুরুগৃহে সম্পন্ন করার রীতি ছিলো বহুকাল। কিন্তু বর্তমানে এই ধরণের রীতির প্রচলন প্রভূত পরিমাণে কমে গেছে তার কারণ, বৃহত্তর প্রয়োজনে আজ সংগীত শিক্ষা স্কুল, কলেজ, মহাবিদ্যালয় ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান পাওয়ার সাথে সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নত থেকে উন্নততর হওয়ার কারণে। বর্তমানে আন্তর্জাল মাধ্যম তথা Internet-এর দ্বারা দূরশিক্ষা বা পত্র-বিনিময় (Distance or Correspondence Teaching Process) এর মাধ্যমে বিভিন্নভাবে শিক্ষাদান এবং শিক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়ার প্রচলন হয়েছে। এখন আমরা একটু অতীতের দিকে তাকিয়ে দেখবো যে কবে থেকে এই আন্তর্জাল মাধ্যমের দ্বারা যেকোনো বিদ্যাশিক্ষার সাথে সংগীত প্রশিক্ষণ পদ্ধতিও শ্রুত-দ্রষ্টব্য(Audio-Visual) ভাবে প্রচলিত হয়েছে।

  • ২০১৪ সালের ১০-ই নভেম্বর প্রখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান চিত্র পরিচালক জর্জ মিলার-এর একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, প্রথম দূরশিক্ষা(Distance Teaching) ব্যবস্থা্র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল ১৭২৮ খ্রীষ্টাব্দে। আমেরিকায় মি. ক্যালেব ফিলিপ নামে একজন শিক্ষা-ব্রতী(Educationist)পত্রবিনিময়(short hand letter exchange)-এর মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্তের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণে সহায়তা করতেন। আমেরিকার বোস্টন শহরে “Boston Gazette”(১৭১৯-১৭৯৮) নামে একটি সাপ্তাহিক খবরের কাগজে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
  • এরপর ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে আমেরিকার The Society to Encourage Studies at Home নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায় যেখানে পত্র-বিনিময়(Correspondence Teaching)ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।
  • ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে আমেরিকার The Calvert School of Baltimore নামক একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা জানা যায় যেখানে পত্র-বিনিময়(Correspondence Teaching)পদ্ধতির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো শিক্ষার্থীদের।
  • এরপর ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে আমেরিকার Pennsylvania State Collage-এ পত্র-বিনিময় তথা Correspondence course শুরু হলো প্রথম বাতাস-তরঙ্গ বা Radio Wave-এর মাধ্যমে।
  • এরপর ১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দে আমেরিকার The State University of Lowa তে শুরু হলো পাঁচটি বিষয় নিয়ে Correspondence Course বা পত্র-বিনিময়-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ Radio Wave দ্বারা।
  • ১৯৫৩ সালে আমেরিকার The University of Huston শুরু করলো Televised Collage Credit Classes অর্থ্যাৎ Television-এর মাধ্যমে Visually প্রশিক্ষণ সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন।
  • এরপর ভারতীয় সংগীতের ইতিহাসে ১৯৫৬ সালে প্রথম হাওয়ার তরঙ্গের মাধ্যমে সুদূর থেকে সংগীত ভেসে এলো জনসাধারণের কানে “All India Radio”-এর মাধ্যমে যার নামকরণ করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “আকাশবাণী”।
  • ১৯৬৫ সালে আমেরিকার The University of Wisconsin প্রচলন করেছিলেন রাজ্যভিত্তিক Distance Education তথা দূরশিক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ শুধুমাত্র চিকিৎসকদের জন্য দূরভাষ(Telephonic) প্রশিক্ষণের দ্বারা।
  • ১৯৬৮ সালে আমেরিকার The University of Nebraska তে চলচিত্র(Film Studies)সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ শুরু হয়। পরে University based Correspondence High School হিসেবে এটি স্বীকৃতি পায়।
  • এরপর ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম INTERNET বা আন্তর্জাল আবিষ্কার করে U.S Department of Defence Commissions ARPANet(United States. Department of Defence Commissions The Advanced Research Projects Agency). এটি হলো The Central Research and Development Organisation যার Financial Backbone হলো U.S Computer Research. ১৯৫৮ সালে এটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো এবং সেই সময়ে এই প্রতিষ্ঠানের President ছিলেন – Eisenhower.
  • ১৯৭৬ সালে দক্ষিণ আমেরিকার Coastline Community Collage প্রথম প্রকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে Television Broadcasting-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। এখন বর্তমানে এখানে Campus Class-ও করানো হচ্ছে।
  • ১৯৮২ সালে New Hampshire-এর Rindge শহরে The Computer Assisted Learning Center(CALC)-এর নাম পাওয়া যায় একটি ছোটো Offline Computer Based Adult Learning Center হিসেবে যেখানে শুধুমাত্র ১৮ বৎসর বয়সের উর্ধ্বে ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।

এরপর থেকে শুরু হয় সারা পৃথিবীব্যাপী দূরশিক্ষা(Distance Teaching)বা পত্র-বিনিময় পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ(Correspondence Teaching Process)-এর জয়যাত্রা। বিভিন্ন বিষয় এর অন্তর্ভূক্ত হতে থাকে সে Academic হোক বা Performing। অবশেষে ২০০৫ সালে আবিষ্কৃত হয় Youtube যেখানে আমরা পাই বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কিত Audio-Visual. ২০১০ সালে “www” অর্থ্যাৎ “World Wide Web” আবিষ্কৃত হয় যা আমাদের বর্তমানে পথ চলার ক্ষেত্রে অনস্বীকার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন কথা হচ্ছে সংগীত প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই ব্যবহারিক পর্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন বলা হয়েছে। সংগীত প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ইতিবাচক কিছু দিক আছে। যেমন- প্রথমত, Skype বা বিভিন্ন রকমের Audio-Visual website আছে যার মাধ্যমে অনেক দূরে বসে গুরুর কাছ থেকে সংগীত প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব হয় কারণ অনেক সময় নানা কারণবশতঃ গুরুগৃহে এসে প্রশিক্ষণ সম্ভবপর হয়ে ওঠেনা। সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ভাবে শিক্ষর্থীর যদি কিছু প্রয়োজন থাকে তবে সে বিনা কষ্টে ঘরে বসে বিভিন্ন রকম Audio-Visual website-এর মাধ্যমে গুরুর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পেতে পারে। দ্বিতীয়ত, Youtube নামের Audio-Visual website-এর মাধ্যমে নামী অনামী বিভিন্ন শিল্পীর কাছ থেকেও প্রশিক্ষণ প্রাপ্তি সম্ভব তাঁদের ঘরাণা বা Style follow করে। এই প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়াকে আমি Mass Teaching or Learning-এর পর্যায়েও ফেলতে পারি। তৃতীয়ত, প্রাচীন যুগে ও মধ্যযুগে সংগীত ছিলো বংশানুক্রমিক শিক্ষা। ফলে সর্ব্বসাধারণের এই বিদ্যার প্রচার ও প্রসার ছিলো অতি সীমিত। শ্রোতা বা বোদ্ধার গণ্ডি ছিলো পরিমিত। কিছু শিক্ষাপ্রেমী বৈজ্ঞানিকদের অধ্যাবসায়, পরিশ্রম ও ত্যাগের ফলশ্রুতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নতির যে শিখরে আজ পৌঁছেছে তার জন্য সংগীত আজ সর্ব্বসাধারণের নাগালের মধ্যে। আমরা যেমন “Youtube”-এর মাধ্যমে এখনকার শিল্পীদের কাছ থেকে কিছু শিখতে পারি তেমনই মধ্যযুগের শিল্পী যাঁরা এখন অনেকেই স্বর্গতঃ, কণ্ঠসংগীতের ক্ষেত্রে তাঁদের ঘরাণার গায়কী বা যন্ত্রসংগীতের ক্ষেত্রে বাদন পদ্ধতিও অনায়াসেই আয়ত্বে আনতে পারি এবং এই ধরণের প্রশিক্ষণ পদ্ধতির কারণে বর্তমান গুরু ছাড়াও সেই সকল শিল্পীকেও আমরা গুরুর আসনে বসাতে পারি।

এখন এইরূপ প্রশিক্ষণ পদ্ধতির ক্ষেত্রে কিছু নেতিবাচক দিকও আছে, যেমন- আমরা মানলাম যে অনেক দূর থেকে বসে Audio-Visual প্রযুক্তির পদ্ধতিতে সংগীত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঘরে বসে গুরুর কাছ থেকে শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করলেও গুরুগৃহে গিয়ে যেভাবে হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব যেমন- প্রথমত, আসে এখানে শব্দ প্রক্ষেপণের কথা। Audio-Visual প্রযুক্তির মাধ্যমে যে শব্দমান(Sound Production)শ্রুত হবে তার থেকে দশগুণ বেশি ভালো শব্দমান শ্রুত হবে গুরুর সামনে বসে শিক্ষাগ্রহণে। দ্বিতীয়ত, যন্ত্রসংগীতের ক্ষেত্রে কিছু Biological Factor রয়েছে, যেমন- শিক্ষার্থী বাদ্যযন্ত্রটি কীভাবে ধরলে সুবিধা হবে আবার কীভাবে বসে বাজালে অনেক সময় ধরে বসে বাজাতে সুবিধা হবে ইত্যাদি। তৃতীয়ত, পূর্বোল্লিখিত কথানুযায়ী আমাদের সংগীতকে ‘গুরুমুখী বিদ্যা’ নামে অভিহিত করা হয় কারণ ভারতীয় সংগীত মূলতঃ গুরুগৃহে থেকে গুরুর মুখ থেকে শ্রুতির মাধ্যমে শিক্ষা করার রীতি ছিলো। বর্তমানে প্রযুক্তির মাধ্যমে সংগীত প্রশিক্ষণ পদ্ধতির বহুল প্রচার ও প্রসার ঘটলেও আমাদের দেশের অনেক ঐতিহ্যপূর্ণ ঘরাণা বা Style শিক্ষার্থীর কাছে অজানা-অপরিচিত থেকে যায়। তাই বলা যায় যে, শিক্ষার্থীর প্রয়োজন সঠিক ও প্রকৃত শিক্ষার কারণে গুরুগৃহে গুরুর সামনে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজের একান্ত নিষ্ঠা ও তিতিক্ষা দিয়ে নিজেকে তথা দেশের শিল্প চেতনাকে জাগিয়ে তোলা এবং প্রত্যেক শিল্পীর এটাই মহান কর্ত্তব্য বলে আমি মনে করি।

পরিশেষে, আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, সংগীত প্রশিক্ষণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা বা অবদান যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনই গুরুত্বপূর্ণ ‘গুরু’-র ভূমিকা। কোনোটিকেই আমরা অগ্রাহ্য করতে পারিনা। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে পদ্ধতিতেই সংগীত প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক না কেন দুই ক্ষেত্রেই গুরুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুতরাং, এই ক্ষেত্রে একজন শিল্পী বা শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজে নির্বাচন করবেন যে গুরুশিষ্য পরম্পরা বা এই ভারতীয় ঐতিহ্যকে সংগতভাবে বজায় রেখে ঠিক কতখানি ও কিভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করবেন সংগীত প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ও কিভাবে তা নিজের আয়ত্বে আনবেন। আমার মতে এইখানেই একজন সাধারণ মানুষ থেকে শিল্পী হয়ে ওঠার সার্থকতা। 

তথ্যসূত্র

১। সংগীত তত্ত্ব (দ্বিতীয় খণ্ড)- দেবব্রত দত্ত।

২। নিঃশঙ্ক শার্ংগদেব প্রণীত সংগীত রত্নাকর- মূলসহ সঠিক ভাষান্তর ডঃ প্রদীপ কুমার ঘোষ।

৩। INTERNET (https://en.wikipedia.org/wiki/Distance_education)

৪। দাওগো সুরের দীক্ষা- নিখিল চক্রবর্তী।