Rabindranath in Dual Contemplation: Exploring the Complexity of His Perspectives


Dr. Mali Mitra. Memari College, Asst. Prof. In Music.
Abstract:
Of all the songs compiled in Rabindranath Tagore’s Gitabitan, those that are
formal can be expressed in a dual sense. These songs were originally printed
in the second volume of the Psalms. In this discussion, an attempt has been
made to express Rabindranath’s dualistic thinking by expressing the formal
songs of Rabindranath in written form rather than in tune. For example, the
first song at this stage can be said”Dual Contemplation, ‘Patiya Boso O
Hridyanath—“This song was composed by the poet on the occasion of the
marriage of a relative (1304). As such, this song can be called a “wedding
song”, but it can also be expressed in another way – formless through the
lyrics Brambha is invoked to sit on the throne for offering pujas.
In this discussion, an attempt has been made to bring out the dualistic style
of some formal songs composed by Rabindranath from the Writing Fence
through qualitative discussion.
Word index: Rabindranath, Gitbitan, formal stage, Ambiguity.etc.

দ্বৈত চিন্তায় রবীন্দ্রনাথ

ডঃ মলি মিত্র, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেশর, সঙ্গীত বিভাগ, মেমারী কলেজ, মেমারী, পূর্ব বর্ধমান

কালজয়ী সৃষ্টি রবীন্দ্রনাথের গান। তাঁর সাহিত্য, নাটক, নৃত্য ও সংগীত অমর কীর্তি বহন করে, যাতে আমরা নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে পারি। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সৃষ্টি হয়েছিল বাংলার প্রাণ স্পন্দনকে কেন্দ্র করেই, আজ তার বিশাল ব্যাক্তি। সকল সম্প্রদায়িক ভাবের ঊর্ধ্বে সংগীত বলে আমার মনে হয়। তাঁর গানের চর্চার মধ্যে দিয়ে প্রতিনিয়ত নিজেকে সমৃদ্ধ করে তুলছি এবং তাঁর রচনা থেকে নানা প্রকার আলোচনা করার জন্য উদ্বুদ্ধ হচ্ছি তাই আজ আমি রবীন্দ্রনাথের আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের গান নিয়ে অর্থাৎ সেই গানের কথা আমার কাছে ঠিক কিভাবে পৌঁছায় তা আলোচনা করব বলে তৈরি হয়েছি।

প্রকৃতপক্ষে রবি ঠাকুর প্রকৃতির ও সৌন্দর্যের কবি । ধর্ম ও ছিল তা একান্তভাবে তাঁর কবির ধর্ম। রবীন্দ্রনাথ কোন এক জায়গায় বলেছিলেন আমাদের দেশের গান অন্তরের অন্তস্থল থেকে উদ্ভূত হয়, ইউরোপীয় সংগীতের মতো তা সমাজের মধ্যে থেকে জীবন লীলার সূত্রে আসে না। তাঁর সচল অনুভূতি সকল প্রকার রচনার মধ্যেই অন্তর নিবিষ্ট ছিল। সেই জন্যেই আমাদের সংগীতে হাসির গান বা ওই জাতীয় চপল চালের চলন নেই । কথাটা বোধহয় সত্য যে গানের উদ্দেশ্য শুধু সাম্প্রদায়িক আনন্দদান , তার বাইরে তার আর কোন মূল্য থাকে না। তবে রবি ঠাকুরের গানের মধ্যে আমরা সদা সর্বদা উপলব্ধি করি যে গানের রস কে সুরে এবং কথার সুর সরস্বতীকে প্রতিস্থাপন করতে যা শুধু সাময়িক নয়।

আমি আমার মূল লেখাতে যাওয়ার আগে কিছু বিষয় সকলকে জানানো আমার কর্তব্য বলে মনে হচ্ছে , তাই কিছু বিষয় সবাইকে অবগত করিয়ে আমি আমার মূল লেখাতে যাব।  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রায় সকল গান ই যে গীতসংকলনে প্রকাশিত হয়েছিল তার নাম গীতবিতান। যা সর্বজন পরিচিত এবং জনপ্রিয় বটে । তবে একটা কথা বলা অবশ্যক যে এই গীত সংকলনটি প্রকাশের ক্ষেত্রে কবির বিশেষ আগ্রহ ছিল না। কারণ গান একান্তই সুর নির্ভর হলে মুদ্রিত গানের কথায় সুরের অভাব কবিকে পীড়া দিত। যখন চিত্রাঙ্গদা (নৃত্যনাট্য) প্রকাশক উল্লেখ্য তাই একবার কৌতুক করে তিনি বলেছিলেন যে ওরাই যে পাখির ডানার ধর্ম তার মাটিতে হেঁটে চলা হাস্যকর ঠেকে।

তা সর্তে ও কবির গীতগ্রন্থ প্রকাশের দাবি ও প্রয়োজন ছিল, দুটি কারণে – প্রথমতঃ, কবির গানগুলির ক্রমশ জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছিল, পাঠকদের কাছে গানগুলির একত্র রূপে থাকা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দ্বিতীয়তঃ রবীন্দ্রনাথের গানগুলি সুর ছাড়া আদর্শ গীতি- কবিতা হিসাবে পাঠ করা যায় এবং তা অত্যন্ত সুখ শ্রাব্য এই কারণে ও গ্রন্থের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

১৯২৫ সালে কবির  গানের একটি সংকলন প্রকাশিত হয় “প্রবাহিনী” নামে, এতে গানের সংখ্যা ছিল ২৩৪। গানগুলিকে গীতগান, প্রত্যাশা, পূজা অবসান ঋতুচক্র এবং বিবিধ এই পর্যায়ে গুলিতে ভাগ করা হয়েছিল, কিন্তু এই সময়ের মধ্যে তাঁর রচিত গানের সংখ্যা আরো বেশি ছিল,  এরপর চৈত্র ১৩৩২ থেকে জ্যৈষ্ঠ  ১৩৩৩ পর্যন্ত রচিত গান “প্রবাসী” পত্রিকায় “চৈতালি” নামে প্রকাশিত হয়, কিন্তু এগুলি ও গীত সংকলন হিসাবে প্রকাশিত হয়নি। তাই কবি ৭0 বছর বয়সে “গীতবিতান” প্রকাশের আয়োজন করা হয়।

১৯৩৮ সালে গীতবিতানের প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয় , এই দুটিতে গানের সংখ্যা ১১২৮টি। পরের বছর প্রকাশিত হয় তৃতীয় খন্ড এতে গানের সংখ্যা ৩৫৭। অতএব গীতবিতান প্রথম সংস্করণে প্রকাশিত কবির মোট গীতসংখ্যা ছিল ১৪৮৫ টি । এই তিনটি খন্ডের সম্পাদনা করেছিলেন তৎকালীন আশ্রম স্বামী শ্রী সুধীর চন্দ্র এবং একে সহায়তা করেছিলেন কবি অমিয় চক্রবর্তী। সম্ভবত এই কাজটির নেপথ্যে ছিলেন দীনেন্দ্রনাথের ।  প্রথম সংস্করণ “গীতবিতান” কবিকে প্রসন্ন  করেনি । এর গানগুলি কালানুক্রমিক ভাবে সাজানো হয়েছিল, অর্থাৎ কবির প্রথম বয়স থেকে  প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ বা গানের বই ধরে প্রকাশকালের হিসেব করে পরপর সাজানো হয়েছিল গানগুলিকে। এর সাথে ছিল বিস্তারিত সূচিপত্র,  কিন্তু প্রেম, পূজা, প্রকৃতি বা অনুরূপ কোনো বিষয় বিভাগ গানগুলিতে ছিল না। কবির নিজের ইচ্ছায় তাঁর রচিত ১৪৮ টি গান এতে বাদ দেওয়া  হয়েছিল।

রবীন্দ্রসংগীতের কালানুক্রমিক  ভাবে তাঁর বিচারে গীতবিতান প্রথম সংস্করণে যথেষ্ট ভুল ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও এই গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে কবি স্বয়ং তাঁর সমগ্র সংগীতকে নতুন ভাবে বিন্যস্ত করলেন এবং ১৩৪৮ এর পূর্বে গীতবিতান প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড বর্তমানে আমরা যে রূপে পাই সেই রূপের নির্দেশে কবির নির্দেশে প্রস্তুত হয় এবং তার সাথে সাথে প্রকাশিত হয়।  

নতুন সংস্করনের গান গুলির গীতি পর্যায়ে কবি এইভাবে বিন্যস্ত করেছিলেন। প্রথম পূজা পর্যায়, দ্বিতীয় স্বদেশ পর্যায়, তৃতীয় প্রেম পর্যায়, চতুর্থ প্রকৃতি পর্যায় পঞ্চম বিচিত্র পর্যায় সর্বশেষ অর্থাৎ ষষ্ঠ আনুষ্ঠানিক পর্যায়। তিনি পূজা পর্যায়ের আবার কয়েকটি উপ পর্যায়ের তৈরি করেছিলেন সেগুলি যথাক্রমে গান, বন্ধু, প্রার্থনা, বিরহ, সাধনা ও সংকল্প, দুঃখ, আশ্বাস, অন্তর্মুখে, আত্মবোধন, জাগরণ, নিঃশ্বয়, সাধক, উৎসব, আনন্দ, বিশ্ব, সুন্দর, বাউল, পথ শেষ, পরিনয়় ও বিবিধ। এছাড়াও তিনি প্রেম পর্যায়ের দুটি উপপর্যয়কে দেখিয়েছেন প্রথম গান, দ্বিতীয় প্রেম বৈচিত্র।

কবির মৃত্যুর পরে আরো একটি খন্ড প্রকাশিত হয় গীতবিতানের। যা আমরা সবাই তৃতীয় খন্ড হিসেবে জেনে আসছি। এই খন্ডের গীত সংকলন গুলির ক্ষেত্রে কবির কোন নির্দেশ ছিল না। প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়নি এমন যাবতীয় গানই তৃতীয় খন্ডে স্থান পেয়েছে। ১৯৫১ সালে অর্থাৎ কবির মৃত্যুর ১০ বছর পর যখন প্রকাশিত হয় তখনকার গানের সংখ্যা ছিল ৭৩২। কবির আরো অনেক গানের সন্ধান পাওয়াতে সেই সংখ্যা বর্তমানে আরো বেড়েছে।এই খন্ডের স্ংকলিত গান গুলির বিষয়  বিভাগ ও গীতসংখ্যা এই রূপ- ভানুসিংহ (২০), নাট্যগীতি (১২৬), জাতীয় সংগীত (১৬), পূজা ও প্রার্থনা (৮২), অনুষ্ঠানিক (১৭), প্রেম ও প্রকৃতি (১০২), এছাড়াও এই  গ্রন্থে গীতিনাট্য বাল্মিকী প্রতিভা, মায়ার খেলা, ও মায়ার খেলা, নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা, চন্ডালিকা, শ্যামা। এই খন্ডের গ্রন্থে শ্যামার পূর্ব রূপ পরিশোধ ও মায়ার খেলার নৃত্যনাট্য রূপ মুদ্রিত হয়েছে।

এর থেকে আমি বিশেষভাবে উপনীত হলাম যে আজকে আমি আমার আলোচনায় আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের গান নিয়েই আলোচনা করব। তবে লেখনীর পরিধি যেহেতু সংক্ষিপ্ত সেই জন্য আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের সমস্ত গানকে নিয়ে আলোচনা না করে আমি বিশেষ কয়েকটি গানকে নিয়েই আলোচনা করব।

প্রথমে বলি আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের গীতসংখ্যা। আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে বলে যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে গীতসংখ্যা ২১ এবং আনুষ্ঠানিক সংগীত ও বলে যে সংখ্যাটি রয়েছে সেটি হল ১৭।  এই অনুষ্ঠানিক পর্যায়ের যে ২১ টি গান আছে সেই ২১ টি গানের মধ্যেই কয়েকটি গানকে নিয়ে আলোচনা করব।

আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের প্রথম গানটি হল – “দুটি হৃদয়ের একটি আসন পাতিয়া বসো হে হৃদয়নাথ” – এই গানটি কবি মাত্র ৩৬ বছর বয়সে রচনা করেছিলেন, রচনা কাল ছিল ১৩০৪, এই গানটি স্বরবিতান ৫৫ তে আছে। কবি কোন এক আত্মীয়ের  বিয়ে উপলক্ষে এই গানটি রচনা করেন অর্থাৎ এই গানটি বিবাহ উপলক্ষে গাওয়া হয়ে থাকে। গানটি সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে আসীন। গানটির কথা কে যদি আমরা লক্ষ্য করি সেখান থেকে একেবারেই ফুটে ওঠে যে কবি তাদের যথার্থভাবে আশীষ জানিয়েছেন। তাদের বিবাহ এবং বিবাহিত জীবন যেন সুখের হয়। তাই তিনি বলেছেন – “প্রাণেশ” , তোমার  প্রেম অনন্ত জাগাক হৃদয়ে ছিল বসন্ত, যুগল প্রাণের মধুর মিলনে করো হে ক্রন্দন নয়ন পাও।“ এই একই গানে তিনি আরো বলেছেন-  “আজি কি তোমার প্রসাদ অরুণ করুক প্রকাশ নবপ্রভাত তব মঙ্গল তব মহত্ব, তোমারি মাধুরী, তোমারে সত্য দোঁহার চিত্তে রহুক নিত্য নব নব রূপে দিবস রাত।“

রবি ঠাকুর এই গানটিকে বিয়ের গানে প্রকাশ করলেও অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে এর পূজার নিবেদন লক্ষ্য করা যায়। গানটির বিশ্লেষণের মধ্যে আমরা যদি যাই সেখানে দেখতে পাব রবি ঠাকুর এই রূপ গানের শব্দের মধ্যে বেশ কিছু শব্দ খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে নিরাকার দেবতা সিংহাসনে আসীন। যেমন- “হৃদয়নাথ”, “প্রাণেশ”। এছাড়াও এই গানটি কে বিশেষভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পাওয়া যায় যে কবির ঈশ্বরের কাছে যে নিবেদন এই গানটির কথার দিক থেকে ও যথাযথ ভাবেই সেই নিবেদন । যেমন- “ তব মঙ্গল, তব মহত্ব, তোমারি মাধুরি তোমারি মতো দোঁহার চিত্তে রহুক নিত্য নব নব রূপে দিবস রাত।“ অর্থাৎ আমাদের সামনে অধিষ্ঠান করেন এবং তার মাহত্বের ফলে আমাদের জীবনে সকল প্রকার মঙ্গল সাধন , আর সবকিছুই সত্য। পুরো ঘটনাটা প্রত্যেক লাইনের ব্যাখ্যা না করে কিছু কিছু জায়গায় অন্য দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে লক্ষ্য করা যায় যে এটি শুধু অনুষ্ঠানের পর্যায়ের গান নয় এটি পূজার গান বটে। কারণ জেনে নিরাকার ব্রম্ভ তার ব্যাক্তি অপরিসীম তিনি নব নব রূপে বিরাজ করেন সর্বত্র।

এই পর্যায়ের আরো একটি গানের কথা উল্লেখ করি সেটি – “সুখে থাকো আরো সুখী করো সবে” – এই গানটি আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে পঞ্চম গান এই গানটিতে কবি যেমন দুটি নর-নারীর প্রেমের কথা বলেছেন ঠিক তেমনি ভাবেই তিনি তাঁর লেখনীর মধ্যে দিয়ে দ্বৈত মনোভাবের কথা স্পষ্ট করেছেন বলে মনে হয়। এই গানটির কথাগুলিকে যদি আমরা পড়ি তাহলে আমরা সেখানে দেখতে পাবো তিনি আমাদেরকে পথভ্রষ্ট যাতে না হয়ে যাই সেদিকে তিনি লক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন হে করুণা-সিন্ধু তুমি আমাদের পথ দেখাও আমরা যেন সদা সর্বদা তোমার উপর নির্ভর  করে থাকতে । জীবনের যা কিছু কাজ আছে তা যেন নীরবে পালন করতে পারি। সব শেষে বলেছেন- হে দীন দয়াময় এমন বল দিও যাতে দুঃখ কষ্টেও অবিচল থাকতে পারি, শুধু তোমার নামে প্রেম বলে অটল থাকতে পারি। আমাদের  ইচ্ছা বিপদে, সম্পদে, শোকে, উৎসবে তুমি আমাকে তোমার ছায়ার তলে আটকে রেখো। এই অভিব্যক্তি বা অনুভুতি সম্পূর্ণ একান্তভাবেই তার বলে মনে হয়। এই গানটি খুবই ২৭ বছর বয়সে রচনা করেন। এই গানটির রাগ ইমন-ভূপালী, তাল – কাওয়ালী, গানটি স্বরবিতান ৮ নম্বর খন্ডে পাওয়া যায়। এই গানটি সম্পর্কে জানা যায় যে ফরমায়েশি গান, রবীন্দ্রনাথকে অনেক লিখতে হয়েছে জীবনে এই গানটি তারই আরো একটি দৃষ্টান্ত। সত্যেন্দ্রনাথের পর  দ্বিতীয় হলেন আই সি এস হল বিহারীলাল গুপ্ত। ঠাকুর পরিবার ও রবীন্দ্রনাথের সাথে অনেকদিন থেকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আটকে তিনি জেলা জর্জ ছিলেন।  রবীন্দ্রনাথ সেখানে  জমিদারি সংক্রান্ত কাজে গিয়ে তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন ১৮৯৩ সালে। এর পত্নী সৌদামিনী গুপ্ত সখি সমিতির অন্যতম সখী ছিলেন। এর কন্যা স্নেহলতার সঙ্গে কুমুদনাথ সেনের বিবাহ হয় ২রা মে ১৮৮৯ সালে। এদের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ (তিনি তখন মহারাষ্ট্রের কিরাকতে) আশীর্বাদী  স্বরূপ গানটি লিখে পাঠিয়ে দেন। স্নেহলাতা দেবীর আত্মীয় স্বজনের কাছে থেকে জানা যায় রবীন্দ্রনাথ সরলা দেবীকে গানটিতে সুর দিতে বলেছিলেন। সরলা দেবী বিবাহ সবাই গানটি করেন। সরলা দেবী মাতুলের প্রিয় অনুচরী ছিলেন।  শত গান নাম দিয়ে তার একশত গানের স্বরলিপি প্রস্তুত করেছিলেন।

আরো একটি গানের উল্লেখ করি, সেটি হল- “যে তরণী খানি ভাসালে দুজনে আজি,   / হে নবীন সংসারী, কান্ডারী করো তাহারে তাঁহার যিনি এ ভবের কান্ডারী” । এই গানটি অনুষ্ঠানিক পর্যায়ের অষ্টম গান রাগ — ভূপালী তাল – কাওয়ালী । স্বরলিপির রচনাকাল ১৩১০, কবির বয়স তখন মাত্র ৪২ এই গানটি বিবাহের গান এবং এটি ব্রাহ্মসমাজের জন্যই তিনি লেখেন। তাই  আবার অন্য উপলব্ধি থেকে বলতে পারি এই গানের  প্রতিটি কথাতেই তিনি যেন তাঁর জীবন দেবতাকে মিনতি জানাচ্ছেন কান্ডারী করো তাঁহার যিনি এ ভবের কান্ডারী। কবি জীবনের ঘাটে তরী ভিরিয়েছেন বার বার। বিশ্বের বুকে বিরহের গান তো বিচ্ছিন্ন, তার শুরু আছে, শেষও আছে। কিন্তু আদি- অন্তহীন ‘কান্ডারীর’ নিত্য সুরের গান ধ্বনিত হয় এক অনন্ত লোকে জীবন দেবতারই সভা মাঝে। কবি তাঁর জীবন দেবতার পায়ে সব কিছু উজাড় করে দিতে চান- “ তোমাদের প্রেম দিয়ো দেশে দেশে বিশ্বের মাঝে বিস্তারিত”। এটাই তো বিশ্বমানের পরিচয়। কবির জীবনদেবতা বিশ্বের বৈচিত্রের অনুপরমানুতে নিজেকে ছড়িয়ে রেখেছেন। তিনি অনন্ত অসীম।

“ মরু বিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে হে প্রবল  প্রাণ, / ধুলিরে ধন্য করো করুনার পূণ্যে হে কোমল প্রাণ”। ২৫ শে বৈশাখ ১৩৩২ শান্তিনিকেতন কবির বয়স তখন ৬৪, আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের ১২ তম গান এই গানটি। রাগ – মিশ্র কেদারা, তাল – দাদরা।  রবীন্দ্রনাথের ৬৫ তম জন্মদিন উপলক্ষে গাওয়া হয়েছিল। ১৭ই বৈশাখ থেকে শান্তিনিকেতনের গ্রীষ্মকালীন ছুটি আরম্ভ হয়ে গেলেও রবীন্দ্রনাথ আশ্রমেই ছিলেন।এইদিনে কলকাতা থেকে    আগত বহুজনের উপস্থিতিতে সকালে তাঁর জন্মদিন পালন করা হয়।  তিনি উত্তরায়নের উত্তর-পূর্ব কোণে পথের ধারে মন্ত্র ও “ মরু বিজয়ের কেতন উড়াও” গানের সঙ্গে পঞ্চবটি রোপন ।১ (রবি জীবনী – প্রশান্ত কুমার পাল পৃঃ ৯)।

এছাড়াও জানা যায় যে শান্তিনিকেতনের যে বৃক্ষরোপণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় সেখানে এই গানটি মানে “মরু বিজয়ের কেতন উড়াও” নৃত্য সহযোগে গাইতে গাইতে গাছের চারা গুলিকে নিয়ে উৎসবে স্থানে যাওয়া হয়। অর্থাৎ কবি এই বৃক্ষরোপণের মধ্যে দিয়ে নগর পত্তনিক সভ্যতার সাথে সাথে যে বৃক্ষ সম্পদ লোপ পাচ্ছে তার প্রতি ও তাঁর দৃষ্টি সজাগ ছিল। গাছের সবুজ পাতা ঋতু পরিবর্তনের পর পরেই  ফুলে ফুলে নতুন নতুন পাতার রঙে প্রাণচঞ্চলের একটা বিশেষ রূপ ফুটে ওঠে এবং এই জীবন্ত ছোঁয়ায় শিশুর বা বয়স্ক মানুষের মনের কোমলতা সজীবতার যোগসূত্র পাওয়া যায়। এ তো গেল কবির একদৃষ্টির কথা অন্য দৃষ্টিতে গানটি প্রকৃতি পর্যায়ের অন্তর্গত বলে মনে করছি, প্রকৃতি বলতে গ্রীষ্মকালকে উল্লেখ করছি। কেননা স্থায়ী তে উল্লেখ আছে – “ ধুলিরে ধন্য করো করুণার পুণ্যে হে কোমল প্রাণ”।  আবার সঞ্চারিত বলছেন – পথিক বন্ধু, ছায়ার আসনপাতি এসো শ্যামসুন্দর । / এসো বাতাসের অধীর খেলার সাথী, মাতাও নীলাম্বর “ । কবির চিন্তার জগত থেকে দেখতে পাচ্ছি পথিক বন্ধুকে ছায়ার আসন পেতে দিচ্ছেন কবি । যা আমরা তপ্ত দগ্ধ গ্রীষ্মেই লক্ষ্য করে থাকি, এবং এই গানের মধ্যে দিয়ে কবি একদিকে বৃক্ষরোপণ উৎসবও করেছেন অন্যদিকে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করেছেন। বিশেষ করে শান্তিনিকেতন গ্রীষ্মের দিনে খুবই ভয়াবহ। সেইখানে তিনি শিক্ষাধারা এবং পরিবেশের মধ্যে তৃণলতা বৃক্ষাদির ভূমিকাও আছে। এছাড়া শিশু মনের থেকে প্রাণ রস আরোহন করে , মানসিক উজ্জ্বলতা লাভ করে, বৃক্ষ বন্দনার মন্ত্রে এই উজ্জ্বলতা লাভ করে । বৃক্ষ বন্দনার মন্ত্রে এই বাণী যেন প্রতিধ্বনি করে।  

“আয়রে মোরা ফসল কাটি, ফসল কাটি , ফসল কাটি,

 মাঠ আমাদের মিতা ওরে, আজ তারি সওগাতে

মোদের ঘরের আঙন সারা ভরবে দিনে রাতে” ।  এই গানটি এই পর্যায়ের ১৬ তম গান। যখন এই গানটি কবি রচনা করেন তখন তাঁর বয়স ৬২ বছর। রচনাকাল পৌষ ১৩৩০, এই গানটি কবি শান্তিনিকেতনে রচনা করেন গানটির রাগ ভৈরব তাল দাদরা । এই গানটি চন্ডালিকা নৃত্যনাট্য ব্যবহার করেছেন। এইরকম অনেক গান আছে যা বিশেষ বিশেষ উপলক্ষে ব্যবহারে বিচিত্র রকমের ভাবের প্রকাশ করে।   পৃথিবীর দান গ্রহণ করতে করতে মানুষের লোভ বেড়ে উঠলো ক্রমশ, তখন অরণ্যের হাত থেকে কৃষি ক্ষেত্রে কে সে জয় করে নিল। অবশেষে কৃষি ক্ষেত্রের একাধিপত্য অরণ্যকে শেষ করে দিল। নানা প্রয়োজনেই গাছ কেটে কেটে পৃথিবীকে ছায়া বস্ত্রহরণ করে তাকে নগ্ন করে দিতে লাগলো, এবং কৃষি ক্ষেত্রে মানুষ নিজের মাতৃভাণ্ডারকে পূরণ করবার তাগিদ অনুভব  করেছেন । তাঁর জন্য ই কবি রচনা করলেন – “আয়রে মোরা ফসল কাটি” । এই গানটির প্রত্যেক কথার উপর দৃষ্টিপাত করলে কোথাও কি মনে হয় না যে এই গানটি আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের গান না হয়ে প্রকৃতি পর্যায়ের গান হিসাবে এটিকে গণ্য করা যেতে পারে বলে। কেননা “আয়রে মোরা ফসল কাঠি , ফসল কাঠি,  ফসল কাঠি, / মাঠ আমাদের মিতা ওরে আজ তারি সওগাতে মোদের ঘরের আঙন সারা বছর ভরবে দিনে রাতে” । এই উদ্ধৃত অংশে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে তিনি বলেছেন ফসল কাটি সবাই মিলে, মাঠ আমাদের সবার বন্ধু, এখানে ফসল ফলেছে এবং যা হয়েছে তাতে তাদের সারা বছর দিনে রাতের জন্য ভান্ডার ভর্তি। চারিদিকে শস্য শ্যামল বসুন্ধরা আমরা ঋতু চক্রের বর্ষাতেই লক্ষণীয় এবং এখানে কবি বলেছেন – “ বাদল এসে রচে ছিল ছায়ার মায়া ঘর / রোদ এসেছে সোনার জাদুকর ও সে সোনার জাদুকর” । অর্থাৎ এখানে কবি সেই বর্ষার গান ই গেয়েছেন। কবির কাছে বর্ষা এক নতুন সৃষ্টির পরশুরা নিয়ে আসে। তাই কবির এই গানটিতে বর্ষার আভাস পাওয়া যায়, এবং এই গানটিকে অন্য দৃষ্টিতে যদি প্রকৃতি পর্যায়ের অন্তর্গত বলে মনে করি সেখানে তাহলে বিশেষ একটা সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।

এই গানটি এই গানটি আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের সংযোজন বলে জানা যায়, গানটি হল – “বিশ্বরাজালয়ে বিশ্ববীণা বাজিছে” । রচনাকাল ১৩০২, (১৮৯৫) কবির বয়স তখন ৩৪ বছর। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রথম প্রকাশ এই গানটির । এই গানটির রাগ – শঙ্করাভরণ । এটি দক্ষিণ ভারতীয় একটি রাগ। এই গানে তাল ঝাঁপতাল, আবার কেউ কেউ এটিকে কাহারবা তালে গেয়ে থাকেন । স্বরলিপিকার হিসেবে সরলা দেবী , জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুর , ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম পাওয়া যায়।

এই গানটি মারাঠি ভজনের আদর্শে রচিত। ভাঙ্গাগান – “নাথ বিদ্যা পরমব্রম্ভ রস” । এই গানটি মাঘোৎসবে গাওয়া হয়ে থাকে। এই একই আদর্শে রচিত – “বিশ্ববীণা রবে”- গানটি। এবার এই গানটির কথার দিকে লক্ষ্য করলে কি কোথাও অন্য দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পাই না ? যে প্রকৃতির এক অপরূপ রূপের বর্ণনা করা আছে এই গানটির প্রতিটি ।  রবীন্দ্রনাথের এই পর্যায়ের এই গানের বিস্তৃত্ব অঙ্গনে বৈচিত্র্যের আলোছায়ায় আন্দোলিত। প্রাকৃতিক নৈব্যক্তিতার দেখা যেমন মিলে সেগুলি তেমনি আবার ব্যক্তিরস অনুভূতিতে ভরা। উৎসবের প্রয়োজনে রচিত হলেও উৎসবকে ছাপিয়ে এক বিশালতর রসের ক্ষেত্রে বিচরণ করে । “নব বসন্তে নব আনন্দ – উৎসব নব – / তব স্নিগ্ধ সুশোভন লোচনা শোভন শ্যাম  সভাতলে মাঝে , কলগীত সুললিত বাজে”।

প্রকৃতি ও মানুষের অন্তর রহস্য মিলেমিশে এক হয়ে দেখা দিয়েছে তাঁর অনুভূতিতে।  প্রকৃতির সভায় ঋতু উৎসবের আভাস যখন পাই , তখন আমাদের উচ্ছ্বাস আরো বড় হয়ে দেখা যায় । কবির এই সৃষ্টিগুলির মধ্যে দিয়ে কবির দ্বৈত উপলব্ধির কথা আলোচনা করছি। তাঁর মনের বিচিত্র ছবি ফুটে উঠেছে – “দিকে দিকে তব বাণী – নব নবতর গাঁথা – অবিরল রস ধারা” ।এই স্তবকের  কথাগুলির দিকে দৃষ্টিপাত করলে শেষে একবারেই যেন বলতে পারি যা চিরকালই আছে তাকে কালে কালে উপলব্ধি করা । রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতির প্রতিযে উপলব্ধি তিনি তাঁর অভিব্যক্তি গানে এত সহজে প্রকাশ করেছেন যা অনায়াসে মনকে অভিভূত করে।

সবশেষে কবির কথায় বলি –“সকল সৃষ্টির মধ্যে একটি দ্বৈত আছে; তার একটা দিক হচ্ছে অন্তরের সত্য,  আর – একটা দিক হচ্ছে তার বাহিরের বাহন। অর্থাৎ একদিকে ভাব, আর-এক দিকে ভাষা । দুইয়ের মধ্যে প্রাণগত যোগ আছে কিন্তু প্রকৃতিগত ভেদ দুইয়ের মধ্যে আছে। ভাষা সার্বজনীন নয়, অথচ এই সত্যে সার্বজনীন “।২ (সংগীত চিন্তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৃষ্ঠা ১০২)।

এর থেকে কবি মনের উপলব্ধির কথা প্রকাশ পায় । লেখনীর মধ্যে দ্বৈত ভাবের অভিব্যক্তিকে কবি প্রকাশ করেছেন। কবি সংগীত চিন্তায় প্রকাশ করেছেন “এই বাহিরের জিনিসটা পাওয়ার অপেক্ষা করতেই হবে তা হলে ভিতরের জিনিসটিও ধরা দেবে” । ৩ (সংগীত চিন্তা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -পৃষ্ঠা ১০৩)  

আমাদের মধ্যে নানান অনুভূতির বাস আর সেই জন্যেই আমরা নানান প্রকার অনুভূতির প্রকাশ দেখতে পাই নানান রূপে বিশ্ব প্রকৃতি আমাদের কাছে সামগ্রী মনের সঙ্গে হৃদয়ের সহচর হয়ে ওঠে মনের মধ্যে কখনো যে দ্বৈত ভাব কখনো বহু বিচিত্র ভাব ফুটে ওঠে বিচিত্র প্রকাশ ঘটে এই দ্বৈত ভাবে এবং নানান প্রকার ভাবের মধ্যে নানান রকমের উপলব্ধি হয় কোথায় সুরে এমনই উপলব্ধির ফল আমরা কবির আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের গানের মধ্যে দেখতে পাই।  

তথ্যপঞ্জী  :

১) রবি জীবনী – প্রশান্ত কুমার পাল – পৃষ্ঠা ৯

২) সংগীত চিন্তা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – পৃষ্ঠা ১০২।

৩) সংগীত চিন্তা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -পৃষ্ঠা ১০৩।

গ্রন্থপঞ্জী :

১) ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ – জীবনস্মৃতি – বিশ্বভারতী।

২) ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ – গীতবিতান – বিশ্বভারতী।

৩) ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ – স্বরবিতান – বিশ্বভারতী।

৪) ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ – সংগীত চিন্তা – বিশ্বভারতী।

৫) ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ – ছবি ও গান – বিশ্বভারতী।

৬) দেবনাথ ধীরেন্দ্রনাথ- রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে মৃত্যু – রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা

৭) বসু  ডঃ অরুন কুমার – বাংলা কাব্য সংগীত ও রবীন্দ্রসঙ্গীত – দেজ পাবলিশিং।

৮) বন্দ্যোপাধ্যায় কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরেন্দ্র – রবীন্দ্রসংগীতঃ কাব্য ও সুর – করুণা প্রকাশনী।

৯) মুখোপাধ্যায় প্রভাত কুমার – গীতবিতান কালানুক্রমিক সূচী – টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

১০) স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ – সংগীতে রবীন্দ্র প্রতিভার দান – শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ, কলকাতা।

অঞ্জলী লহ সঙ্গীতে

পণ্ডিত অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

‘বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক, যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গে প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।’

নজরুল ছিলেন বাংলা গানের জগতে একজন সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত গীতিকার, সুরকার, এবং এবিষয়ে তিনি নিঃসন্দেহ শ্রেষ্ঠ ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের মতোই আর গান ছিল নানা শাখায় পল্লবিত। যদিও রবীন্দ্রনাথের গানের সাংগীতিক শৃঙ্খলা, দার্শনিক ভাবের গভীরতা ও সুরের আত্তীকরণ এবং সহজ প্রকাশভঙ্গির মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবার যে প্রয়াস সংগীত গবেষকদের চোখে ধরা পড়েছে, সেগুলি আমরা নজরুলের গানে সেই অর্থে পাইনা। এতদসত্ত্বেও আমরা স্বীকার করতে কুন্ঠিত বোধ করব না যে রবীন্দ্রনাথের পরের প্রজন্মের বাংলা গানকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করার যে দুঃসাহসিকতা তিনি এই সময়টিতে দেখিয়েছিলেন তা সত্যিই প্রশংসনীয় এবং অন্যান্য গীতিকার ও সুরকার দের মধ্যে সেই প্রচেষ্টার অভাবও লক্ষণীয়।

রবীন্দ্রনাথ একটা নিজস্ব স্টাইল বা শৈলী তৈরি করেছিলেন, যার সাহায্যে রাগ সংগীত, লোকসংগীত, কীর্তনাঙ্গ, টপ্পা এবং অন্যান্য দেশি-বিদেশি সংগীতকে আত্তীকরণ এর মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন। সেটা কিন্তু নজরুল সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। এর ফলে কি হয়েছে বাণী বর্জিত গানের সুর শুনলেও আমরা সহজে বলতে পারি যে এটি রবীন্দ্র সংগীতের সুর। নজরুল কিন্তু এ ব্যাপারে বেশ গোঁড়া ছিলেন। ফলে তাঁর গানের সংগীত শৈলির ব্যবহার শুনে সব সময় নজরুলের গান হিসাবে চিহ্নিত করা যায় না। ফলে অন্যের দ্বারা নজরুলের গানের বিকৃতির এটা একটা প্রধান কারণ তা আমরা সহজেই চিহ্নিত করতে পারি।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বা রাগ সংগীতের প্রতি কাজী নজরুল ইসলামের বিশেষ ঝোঁক ছিল কারণ বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী জমির উদ্দিন খান সাহেবের শিক্ষা উনাকে খুব প্রভাবিত করেছিল।সঙ্গীতকার হিসাবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি তার এই আগ্রহ ছিল সহজাত। তাঁর রচনায় শাস্ত্রীয় সংগীত মূলত খেয়াল, ঠুংরী ও গজল এর প্রভাব সর্বাধিক।এই কারণবশত নজরুলের গানে রাগ সঙ্গীতের আভাস মিললেও রাগ ভিত্তিক নজরুলগীতি আলাদা করা মুশকিল। কাব্যগীতি, ভক্তি গীতি, দেশাত্মবোধক, এহেন বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা গেলেও এর মূল নিহিত রয়েছে খেয়াল ও ঠুংরিতে।

তাই নজরুল ভিত্তিক গান বলতে আমরা তার খেয়াল ধর্মী গানকেই বুঝি। এটি একটি আধুনিক গানের ধারাও বটে। সেই সময়ের কলকাতাকেন্দ্রিক গ্রামোফোন কোম্পানি গুলিতে বিভিন্ন ধরনের সাঙ্গীতিক গবেষণার পরিসর  ছিল। তাই রাগ সঙ্গীতের প্রাঙ্গণও ছিল বিশেষভাবে সমৃদ্ধ। এই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নজরুল অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। এই ধারায় রচিত গান মূলত খেয়াল ধর্মী হলেও, এতে খেয়ালের সৃষ্টিশীলতা ও বাংলা গানের কাব্যময়তার সংমিশ্রণ ঘটেছিল। নিজেকে এইটুকুতে সীমাবদ্ধ না রেখে নজরুল বেশ কিছু নতুন রাগ সৃষ্টি করেন এবং পুরনোগুলোর প্রসার ঘটান। সেই সময়ে সম্প্রসারিত রেডিও প্রোগ্রাম গুলির মাধ্যমে এই গানগুলি ছড়িয়ে পড়ে বাঙালির মুখে মুখে।

নজরুলের রাগভিত্তিক গানগুলি কিছু ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে প্রথমে আসে ভাঙ্গা গানের প্রসঙ্গ। শাস্ত্রীয় সংগীতের বন্দিশ ভাঙ্গা গান এগুলি। মূল বন্দিশগুলি নজরুল জমির উদ্দিন খান ও এইচএমভির সঙ্গে যুক্ত শাস্ত্রীয় সংগীতের ওস্তাদ দের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। দ্বিতীয় ভাগে আমরা রাখতে পারি সেইসব গান, যেগুলি ওনার সৃষ্ট নতুন রাগগুলির আধারে রচিত ও কিছু গান যেগুলি অপ্রচলিত রাগাশ্রিত।এই ক্ষেত্রে নজরুলের সাফল্য সর্বজনবিদিত এবং এই ধরনের গানে উনি পুরোধা। এ কথা মনে রাখা উচিত যে, এই কাজ উনি শুরু করলেও শেষ করে যেতে পারেননি। আকস্মিক রোগভোগ তার থেকে সবটুকু ছিনিয়ে নিয়েছিল।

জানাযায়, নজরুল তিরিশটির মত নতুন রাগ সৃষ্টি করেছিলেন। যদিও শুধুমাত্র সতেরোটির সন্ধান  কিছু লক্ষণ গীত রচনা করেছিলেন যাতে রাগ বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়। ওর রচিত তাল গুলির মধ্যে ছ’টি বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। সেগুলি হলো প্রিয়া, স্বাগতা, মন্দাকিনী, মঞ্জুভাসিনি, মনিমালা ও নব নন্দন। হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতে নজরুল যে বিশেষ দক্ষতা লাভ করেছিলেন তার ফলস্বরূপ বিভিন্ন ধারায় সংগীত রচনা করে গেছেন তিনি। কাজরী, হোলি, ঝুলা, শাওনি, শাওন এর আধারেও গান রচনা করেছেন।

হিন্দুস্তানি রাগ প্রত্যেক মত অনুসারে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। মৌলিক রাগ গুলিকে শুদ্ধ, এক রাগে অপর একটি বা একাধিক রাগের ছায়া থাকলে সালগ বা ছায়ালগ এবং একাধিক রাগের স্পষ্ট মিশ্রণ ঘটলে মিশ্র বা সংকীর্ণ বলা হয়। বাঙালি সুরকারগণ এই প্রকৃতির সংকীর্ণ রাগ-রাগিনীকে অত্যন্ত খুশি মনে গ্রহণ করেছিলেন।  হিন্দুস্তানি ওস্তাদেরা বাঙালির এই স্বভাবকে খুশিমনে গ্রহণ করতে পারেননি।ফলে এই জাতীয় তৃতীয় শ্রেণীর মিশ্রণ বা সংকীর্ণ রাগ রাগিনী সারা ভারতের মধ্যে একমাত্র বাংলাতেই প্রচলিত ছিল। নজরুল ও তার প্রথম জীবনে এই জাতীয় রাগ অবলম্বন করে অনেক গান তৈরি করেছিলেন। যেমন-

অমর কানন মোদের – বেহাগ খাম্বাজ

আজি দোল পূর্ণিমাতে – কালাংড়া বসন্ত

আজি বাদল ঝরে মোর – ভৈরবী আশাবরী

আধো ধরণী আলো – তিলক কামোদ পিলু

আমরা পানের নেশায় পাগল -বাগেশ্রী কাফি

আসলো যখন ফুলের ফাগুন – দুর্গা মান্ড

ঊষা এলো চুপি চুপি – আশা টোড়ি

এত কথা কি গো কহিতে – খাম্বাজ দেশ

ওই পথ চেয়ে থাকি – খাম্বাজ পিলু

আমি চঞ্চল – শাহানা বাহার

আজি নন্দদুলালের সাথে – খাম্বাজ কাফি

আবার ভালোবাসার সাধ – ইমন পূরবী

আমরা দুঃখের বন্ধু – ছায়ানট কেদারা

এ কোন পাগল পথিক – মেঘ ছায়ানট

উচাটনো মন ঘরে রয় না – গারা খাম্বাজ ইত্যাদি।

এইসব ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে যেটা দেখা যায় সেটা হলো যে রাগটির নাম শেষে থাকে তার প্রাধান্য বেশি থাকে। তবে উল্টোটা যে দেখা যায় না তা নয়। নজরুলের গানে এই জাতীয় মিশ্র রাগে উভয় প্রকার রীতিই লক্ষনীয়।

নজরুল যেমন হিন্দুস্তানি পদ্ধতির শুদ্ধ সংকীর্ণ শ্রেণীর রাগকেও সমধিক গুরুত্ব দিয়েছেন এবং প্রায় সব রকম মতকেই সম্মান জানিয়েছেন। তেমনি হিন্দুস্তানি পদ্ধতির মান রক্ষার জন্য অনেক সময় বাংলায় প্রচলিত মিশ্র বা সংকীর্ণ শ্রেণীর রাগগুলিকেও মিশ্র রূপে চিহ্নিত করেছেন।যেমন বেহাগ মিশ্র বা মিশ্র বেহাগ, মিশ্র মালবশ্রী, বা মালবশ্রী মিশ্র, বাগেশ্রী মিশ্র, ভূপালী মিশ্র, ভৈরবী মিশ্র, পিলু মিশ্র, খাম্বাজ মিশ্র, মিশ্র বেলাবল, মিশ্র খাম্বাজ ইত্যাদি।

নজরুল তাঁর গানে আরো তিন প্রকারের রাগরাগিণীর রূপের ব্যবহার করেছেন। যেমন উত্তরীয় লুটায় আমার- হৈমন্তী রাগে আধারিত। দ্বিতীয়তঃ বাংলার নিজস্ব কিছু শুদ্ধ রাগ রাগিনী বা প্রচলিত হিন্দুস্তানি রাগরাগিণীর থেকে ভিন্ন ছিল। যেমন শুদ্ধ মধ্যম যুক্ত হিন্দোল বা সোহিনী, কোমল নিযুক্ত ভৈরব, তীব্র মধ্যম বর্জিত রামকেলি, শুদ্ধ ‘ধা’ যুক্ত পূরবী, কোমল ‘নি’ যুক্ত মুলতানি ইত্যাদি। নজরুল এই জাতীয় রাগেও তাঁর গানের সুর করেছেন। সবশেষে নজরুল অনেক রাগ রাগিনী ও তৈরি করেছিলেন যেমন রেনুকা, দোলনচাঁপা ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথের মতো তিনি স্বল্পসংখ্যক দক্ষিণ ভারতীয় রাগও ব্যবহার করেছেন। যেমন, নাগসরাবলী, মনোরঞ্জনী, কর্নাট  সামন্ত ইত্যাদি।

এহেন সৃষ্টিশীলতার নান্দনিক প্রকাশে নজরুল রেখে গেছেন বাংলা গানের এক সমৃদ্ধ ভান্ডার। বাংলা আধুনিক সঙ্গীতের ধ্রুপদী ধারার তিনিই কান্ডারী।

তথ্যসূত্র

১। https://bani.com.bd/author/11/

নজরুলের বই সমূহের তালিকা http://nazrulinstitute.portal.gov.bd/sites/default/files/files/nazrulinstitute.portal.gov.bd/publications/d7989160_07b4_46fe_88ab_b594f55530df/Publication%20List%202017.pdf

নজ্রুলের গানের একটী গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট https://www.kazinazrulislam.org/%E0%A6%A8%E0%A6%9C%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%B8%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%80%E0%A6%A4/

মানবিক বিকাশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সঙ্গীতের গুরুত্ব

ফাতিমা আক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ  

শিক্ষায় সঙ্গীতের গুরুত্ব অপরিসীম। জন্মের সময় থেকে একটু একটু করে বেড়ে ওঠার প্রতিটি স্তরে শিশুদের মধ্যে ছন্দ বোধ জেগে উঠে। এই ছন্দকে নিয়েই তার ওঠা, বসা, হেঁটে চলা। ছন্দে মা-বাবা, দাদা, পাপা, ইত্যাদি শব্দগুলো সে শোনে ও বলতে থাকে। হাঁটি হাঁটি পাপা করে একপা দুপা করে যখন একটু একটু করে এগিয়ে যায় তখন তার কাছে এই ছন্দের গুরুত্বটা ধরা পড়ে। আমরা বড়রা এটা বুঝি বলেই নিজেদের জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতেই শিশুর সঙ্গে যখন কোন কথা বলি বা তাকে আনন্দ দেবার চেষ্টা করি, তখন ছন্দ এবং সুরই আমাদের কাছে প্রধান মাধ্যম হয়। যখন কোন ভাষা থাকেনা, তখন অর্থহীন কিছু শব্দ বা কিছু অর্থবোধক শব্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় এই শিশুর সামনে। সেও নানারকম শব্দে, ছন্দে, সুরে নিজের কন্ঠস্বরকে আন্দোলিত করতে করতে বড়দের কাছে ছুটে আসে। সে বড় মজার ও আনন্দের ব্যাপার। আমরা যে যেমনই হই না কেন আমাদের কাছে শৈশবের প্রতিটি মুহূর্ত ভালো লাগে। নিজের শৈশবের কথা মনে না থাকলেও যে কোন শিশুর প্রতিটি অভিব্যক্তিকে আমরা অন্তর দিয়ে অনুভব করে থাকি।

Read more

An Overview of the Context and Related Literature Review of the Sena Period Sculptures of Bengal

Arindam Mandal Ph.D. Research Scholar Kala-Bhavna, Department of History of Art

Literature review gives the knowledge about the identified area in order to gain a background history of the research topic. It identified appropriate methodology, research design, methods of measuring concepts. A precise definition of the research problem is critical. To solve the critical problem it is needed to analyse the whole situation of the research topic. Besides with the help of literature review it identified data sources used by other researchers It describes how others structured their report in a particular style or manner and it gives knowledge about what others have found out in the related field of study and how they have done so.

       Literature review analyses relevant previous publications and it finds out problems that are already investigated and that need further investigation. Moreover, the literature review is a funnel that narrows down our topic to a research problem that we can study in the available time and within our available resources. We develop our logic on the basic of others approaches. Already published literature books help to clarify theory and methods that can be very useful. Without a focused literature review, research will be vague and lack regress with it. A focused well studied literature would give a good start to analytical project. It gives a strong indication of the data.

      With the study of literature review researches gain the skill of self criticism. One needs to narrow down the research topic and describe it analytically. Literature review focuses on the main problem and gives a strong indication of data, so it is analytical type which belongs to solid style of method. Research project is a practical work where different component parts are situated. To create a new idea in the field of research, researchers established with the help of higher level of intellectual skill and scholarly style. Without literature review, it is not possible to get bibliography and the information of data collected, moreover it helps to write the foot notes and the list of the texts.

       The literature review presents one of the greatest challenges of the research proposal to experience of research.

  • Provides a conceptual framework for the reader so that the research question and methodology.
  • Demonstrates to the expert reader that the researcher is aware of the breadth and diversity of the research question.

A conceptual or theoretical framework can be all of the review

  • A set of coherent idea or concepts organized in a manner that makes that easy to communicate.
  • An organized way of thinking about how and why a project takes places, and about how we understand it.

The basic for thinking about what we do and about what it means, influenced by ideas and concepts.                                                                           An overview of ideas and practices that shape the way work is done in a project                                                                                                                 A set of assumptions, values, and definitions under which we all work together.

Literature review considered as a framework

       It is very important because a framework can help us to explain why we are doing a project in a particular way and it also gives the ideas of others who have done similar things. We can use a framework like a travel map. We can read a map, because others before us have symbols to mark streets, lacks, highways, cities, mountains, rivers, etc. The scale on a map places are, so we will get an idea how long it might take us to get from one point to the next. It may be many different paths that can be taken to get to the same place. A framework can help us to decide and explain the route we are taking; why would we use certainly get to a certain point. People might have tried a similar path before and have had different experiences versus another or, there may be paths that have never been explored. With a conceptual frame we would try this or that path, based on the experiences of others, and on what we ourselves discover.

      It is important that one is able to provide an integrated overview of the field of study. This means the most important and relevant theories, models, studies and methodologies.-The literature review chapter is much easier to read if it is divided into sections In this form it is also easier to write. However, it is not always easy to determine a stretch for divide up the chapter. Perhaps the first step in the process is to conduct a preliminary survey of the literature which is relevant to the title.

      A preliminary survey will reveal a considerable number of publications or multiculturalism, although all of these books or articles will entail a discussion of multiculturalism, within a particular context. There areas might involve multiculturalism in society in general, in various sectors of the educational system, or in a variety of professions. Equally there will be many publications on different aspects of the secondary curriculum. There will certainly be separate publication of the different subject areas of the secondary curriculum. In addition to the body of literature, there are many publications on ethnicity, ethnic relations, comparative culture, comparative religion, and the different religious groups within the educational system. There are probably far too many potential categories here and hence it would necessary to try to define the larger, broad categories which are relevant to the subject matter of thesis.

      This is where it is useful to return to the aims of the thesis, because these provide a provisional statement within which one can begin to organize the literature review. For example, one of the first aims is to explore the educational achievement of the different culture of groups. The aim might suggest that one relevant area would be a body of literature which discussed the name of culture and ethnicity, and attempted to clarify something of the conceptual issues surrounding theme terms. Another relevant area could be of educational achievement and particularly achievement related to any aspect of culture, religion or ethnicity.

      In other words, although it is relatively easy to think of possible subdivisions for the literature review chapter, it is important that those subdivisions have some relevance to the remainder of the thesis. It is not always possible to write a thesis in a purely linear fashion. The aims, the literature review, the methodology and the date are all interlinked as a coherent whole, and it is important to ensure that there is some correspondence between different sections. Here is a survey of some of the previous researcher body which may be used to develop categories for the literature review.

Literature review of Sena period of Bengal

      As Sena era emerges axpansion of “apovrangsho’ and Bengali sohajia literature diminishes and Sanskrit begins to flourish again. The Sena Rajas were the devotees of Saiva and Vaishnava religion and they observed/Vedik rites and ritual. So, with their support, like other states of India, with the support in Bengal too, the Renaissance of Hinduism took place. Because of Buddhist and Tantric ideas, the ceremonial rites of Hindu religion almost got obsolete. So there was a special need for books releted to these things in the Sene era. Anurudha Bhatta, the´’guru’of Ballal Sen in his books’ harlata’ and ‘Pitridoyita’, discussed about various Hindu rites and rituals like ‘ashoucha’,’sraddha’, ’saudhya’, ‘tarpan’ and soon. Ballal Sen himself wrote five books, namely, Brata-Sager’, ‘Acharsager’, ‘Pratistha Sagar’, ‘Dan-Sagar’and ‘Advut-Sagar’.By quoting ideas and guotations from various ancient religious books, BallalSen documented descriptions of several Hindu rites, institutions (These books of Ballal Sen claimed huge popularity at point of time in Bengal and outside).

      Halayudh was renowned writer of this age. He because a ‘Rajpandit’ at a very young age. Lakshman Sen appointed him as court poet in his young age and as religious head when he was old age. Halayudh wrote books like ‘Brahmansorbosyo’, ‘Mimangshasorbosyo’,

 ‘VaishnabSorbosyo’, ‘Shaiba sorbosyo’, and ‘Pandit sorbosyo’ Halaudh wrote that the Brahmins of (Rara) Rad and Barendra neither read Veda, nor did they have adequate knowledge of Vaidik ceremonies. That is why, to explain the importance of ‘mantras’ used in the Anhik ceremonies and other rites, he wrote the book called ‘Brahmin sorbosyo’. Ishan and Pashupati-two elder brother of Halayudh, wrote a book about daily ceremonies of Brahmin’s. (‘Brahmin darpan’).

      One of the scholar in this era excelled in linguistics; among them son Artihar, Bandyaghati Sarbananda requires special mention. ‘Tikasarbosyo’ note on Amarkosh, is famous in throughout India. Sarbananda wrote this book in 1159-60, which he showed great learning and mentioned many native words. Most of these words are still used (current) in Bengali language. Purushottam was a great linguistic of this period who wrote Dictionary and Grammar books like ‘Varnabritti’, Trikandoses’, ‘Haralata’, ‘Barnodesona’, and ‘Dirupakosha’.

       Most of the Sena Rajas wrote poetry that is why this period may be called as the golden era of Sanskrit poetry. Lakshman Sen’s courtier and friend Btudas’s son Shidhardas published a collection of Sanskrit poetry named ‘Suduti-karnamrita’in the year 1206.This contained 2370 poems of 485 poets. This book also contains poems composed by Raja Ballal Sen, Lakshman Sen and Keshab Sen There were five famous poets (Pancharatna) in Lakshman Sen’s court. Dhoyee, Umapatidhar, Gobardhan, Sharan and Jaydev. Several poems composed by them can be found in Sridhardas’s collection. In one of his slokas, poet Dhoyee had compared Lakshman Sen with the King Vikramaditya, This is no poetic hyperbole. The five court poets of his court were truely gems (Pancharatna).Dhoyee’s ‘Pabandut’ is modelled on ‘Meghduta’ when the king of Gour LakshmanSen went to conquer the South (Dakshinatya),then the Kubalaybati the princes of Malaya hills was fascinated by his charm-based upon this whole work is composed of 104 slokas. Among all the verses modelled on Kalidas’s ‘Mehduta’, ‘Pabanduta’secure high rank. Except Pabandut, Dhoyee  also wrote other poetry. Jaydev called him as the poet laureate.

      Jaydev wrote about Umapati that he was ‘Bachah Pallabayati’, meaning, he was a master of Verse/language. His panegyric (Deowara Calligraphy ) on Bijay Sen supports this comment. A shloka of Tamrashashana, which was got in Madhai city, also ascribes ‘Sudukti-Karnamriti’ to Umapati. So, this ‘tamrashashana’ is also composed by him, ninety sloka of Umapatidfhar has been mentioned in ‘Sudukti-Karnamriti’ and this also speaks of ‘Chandrachur Chorit’, verse. It is to be noted in this context,that Umapatidhar and Umapati is the same poet. Jaydev had claimed that there as a poet of Sringar Rasa, Acharya Gobordhan was unparalleled. There is no doubt that the poet Gobardhannath of ‘Aryasaptadashi’. This book proves his great skill and ability in Sanskrit Literature. Because of his vast knowledge, he was regarded as a Acharya. He wrote about poet Sharan that he is ‘Shlaglya durahdrata’, that is he was the master of difficult writings. Some people conjecture from this that he and the author of ‘Durghatabritti’. Boiakoran and Sharan is the same person. However this is only a conjecture. Sharan’s poems are quoted ‘Sudukti-Karnamrita’, but his no other book can be found.

      Undoubtedly, Joydev was the greatest poet among the court poet among the court poets Lakshman Sen.His ‘Kamal-kanta-Padabali’ does not please the Vaishnavas, rather continues to impress all the readers through ages there are not much instances of such a charming, popular, yet high literary piece in Sanskrit literature. Almost 12/14 poems had been written which are modelled on it. This is the ample proof of the popularity of the ‘Gita-Govinda’ throughout India.

      Late 12th century can be termed as the greatest era of Sanskrit literature. Religious books on the one hand and the high poetic art on the other, together made this period memorable. The presence of erudite men and poets like Anirudha Vatta, Halayudh, BallalSen Sarbananda, Jaydev, Umapati, Dhoyee, Gobardhan and Sharan within half a century is a matter of pride for any country.

      However, Dewara inscription plate of Bijay Sen records that there existed an artist organization in Bengal Nicely crafted letter of the 32 lines have been considered as piece of rich art. The last Sloka of the inscription records the identity of the artist who had crafted these. His name is Ranak Sulapani, who was the emblem of Dharma, grandson of Manadas and son of Brihaspati and also the leader of the artists association of Barendra. It is conjecture from this that there existed an artist association in Barendra and the other parts of the Bengal and that Sulapani was the leader of this association. The first name ‘Ranak’ suggests that he was a respectable person of this empire .However according to Bhatta Bhavadev’s ‘Prayaschitto Prakarana’, are considered as belonging to the lower strata of society, if any Brahamin had taken up these profession he had to penance for it. Sulapani was an artist by birth.

      It was been mentioned in a sloke of the stone inscription of Selimpur that the word inscribed in stone was also the work of a artist usually who carved sculpture. This inscription say that just like a pramour who images the colourful image of his own beloved, the great artist Someswar wrote this inscription in a similar way. Those sentence express the nature and the inherent mood of the art beautifully. The artists of Bengal know the deep passion (attraction) that is the soul an art. We get the names of the several artists from inscriptions and some authors mentioned in their books they are-Tatat, grandson of Vagot, son of Subhat; Mankhodas, son of Subhadas and his son Bimaldas; Thetraditional craftmaster Visnuvadra; Mahidhar, son of Bikramaditya and his son the master artist

Sashidhar; sculptor Karnavadra; sculptor Tathagatasar. Some of them had been clearly entitled as silpi (artist). It will not be incoherent to conjecture that those eight artists, along with the artists like Sulapani and Someswar not only they were carved of stone sculpture and inscription plate but they were artists of high class and they also made metal and stone sculpture.

Note:

  1. Mortimer J.Adler and Charles Van Doren, 1940 How to read a book, Siman and Schuster Publication, new York,                                                                                                                Turabian, Kate,1995, A manual for the writers term paper, Thesis and Dissertation, University of Chicago.                                                                        Redman and Mory, 2010, research Methodology, London.
  2. Krathwohi, David R .1988.How to prepare a Research proposal; guidelines for Funding and dissertation in the social and Behavioral sources. Syracuse University Press.                                                                                                                                                                                      Gerard Guthrie, 2020 Basic Research Methods, an entry to social science Research, SAGE publication.
  3. Ancient History of Bengal-Ramesh Chandra Majumder,1936  History of Bengal vol.III Jadunath Sarkar,1942                                                                                                Inscriptions of Bengal-N.G.Majumder,1929, published by Bhabderkar oriental Research  Institute,review Jogendra Chandra Ghosh, vol.15 no1/2(1933-34)p.p129-136
  4. Manuscript- ‘Tikasorbosyo’ note on Amarkosh by Artihar,Bandyaghati Sarbananda,year1159-60  Manuscript- ‘Sudukti-Karnamrita’ by Sridhardas year1206.edited by Akhaykumar Maitra and                   Aparna Banerjee ,Sahitya Academy, New Delhi,1975                                                                                                     Manuscript- ‘Aryasaptadashi’ by  Gobardhannath
  5. Dewara inscription by Ranak Sulapani Selimpur inscription by Someswar

      

সাধারণ মানুষ

অবহেলিত বা নিম্নবর্গীয় মানুষ কথাটা শুনতে খুবই খারাপ লাগে। স্বাধীনতার পরে অনেকগুলো বছর পেরিয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশ পরে স্বাধীন হয়েও নিজেদের দারিদ্র্যকে মোকাবিলা করেছে। আমাদের দেশের মতো এত বেশি সংখ্যক দরিদ্র মানুষ পৃথিবীর আর কোন্‌ দেশে আছে?  এত বৈষম্য আর কোথায়? রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষের নজর বা দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেবার চেষ্টা করে নানাভাবে।  কখনও নোট বন্দি, বিনা জমায় ব্যাংক একাউন্ট, ঋণ ছাড়, ভারত পাকিস্তানের লড়াই, হত্যা বন্ধ করার জন্য আইন, চীনের জিনিস বয়কট করার মতো নানা হুজুক তৈরি করে। বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করে রাজনৈতিক দল, সরকার। কিন্তু ফুটপাতে, বস্তিতে, ঝুপড়িতে নিরন্ন মানুষদের নিয়ে কোন কথা কখনো কেউ বলেছে? কোন সরকার? রাজনৈতিক দল? না, বলেনি। এরই মধ্যে অনেকেই পাপ পূণ্যের হিসাব কসে নিয়েছে!  মাঝেমধ্যে সাধারণ নিরন্ন মানুষদের কোন দাবি দাওয়া নিয়ে বড়ো আন্দোলন হলে কিংবা নিজেদের ঔদার্য প্রমাণ করার জন্য রুটির টুকরো ছেড়ে দেবার মতো করে কিছু প্রকল্প ঘোষণা করা হয়।  পথ শিশুদের জন্য, বস্তির শিশুদের জন্য, কন্যা সন্তানদের জন্য, বিধবাদের  আর বৃদ্ধদের জন্য কিছু বরাদ্দ হয়। দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেয়। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ দেয় সরকার। আমরা সাধারন মানুষ এতেই খুশি। আমরা হাততালি দিই। সরকারের জয়গান করি। তাদের কথায় লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। গরিব মানুষের হাতে লাঠি, তাদের হাতে পতাকা। তাদেরকেই মিছিলের সারিতে দেখি, মিটিংয়ে দেখি।

সাধারণ মানুষের একটা সংজ্ঞা দেওয়া যাক্‌।  এরা চালের দাম বাড়লে কিংবা কেরোসিনের লাইনে দাঁড়িয়ে তেল না পেয়ে নিজেদের অদৃষ্টকে কিংবা ডিলারকে দোষারোপ করতে করতে বাড়ি ফিরে যায়। ব্লাকে কেরোসিন কিনে চালে ডালে মিশিয়ে খাবার তৈরি করে। অভাবের সংসারে যাদের নিত্য অশান্তি মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, শশুর-শাশুড়িরা বাদানুবাদ করে ঘুমোতে যাওয়া, ঝগড়া করে বাড়ি থেকে চলে যাওয়া, তুচ্ছ কারণে আত্মহত্যা করা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। আবার কেউ গৃহদেবতার কাছে মনের কথা জানায়, ছেলেটা যেন একটা চাকরি পায়। মেয়ের বিয়ে যেন ভাল ছেলের সঙ্গে হয়। কর্তার অসুখটা যেন তাড়াতাড়ি সেরে যায়। জল পড়া, কবিরাজি, হোমিওপ্যাথির সঙ্গে ঝাড়ফুঁক টোটকা মাজারে কিংবা মন্দিরে আশীর্বাদ ভিক্ষে করে। দুবেলা ঘরে ক্যালেন্ডারের ছবিতে সিঁদুর, ফুল, মালা দিয়ে পুজো করে। একই ঘরে মন্দির মসজিদ গির্জা। এরাই হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এরাই আবার কখনো কেউ খাঁটি হিন্দু, খাঁটি মুসলমান। কেউ ব্রাহ্মণ, কেউ শূদ্র। একটা ছুতো পেলেই হল। রাম রহিমের কোলাকুলি হাতাহাতিতে পরিণত হয়। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হতে বেশি সময় লাগে না। তারপর গুলি বন্দুক, রক্ত আর কান্নার দীর্ঘশ্বাস বাড়তে থাকে। ‘হায় ছায়াবৃতা, কালো ঘোমটার নীচে অপরিচিতের চেহারা। মুহূর্তেই হারিয়ে যায় সব বন্ধুত্ব!

দারিদ্র আর পিছিয়ে পড়া মানুষদের মধ্যে গভীর একটা সম্পর্ক আছে। সাধারণভাবে কায়িক পরিশ্রম যারা বেশি করে, তারা অনেক বেশি পরিশ্রম করে কম হয় উপার্জন করে। আর যারা মেধা বা বুদ্ধি নিয়ে কাজ করে তাদের আয় বেশি। তাই গ্রাম নগর মাটির দিকে মুখ করে দিনান্ত পরিশ্রমী মানুষরাই পিছিয়ে পড়েছে। তাদের না ছিল অতীত, না আছে বর্তমান। এরা নাম-গোত্রহীন  হয়ে পড়ে। এরা কাজের সঙ্গে মিলিয়ে একটা পদবী জোগাড় করতে পেরেছে ঠিকই, কিন্তু সেটা তাদের নিজেদের জন্যে নয়, বাবুদের সুবিধার জন্যে।  রামু মুচি,  শ্যাম মেথর, গগন  চণ্ডাল, কৃষ্ণ ডোম, গৌর হাঁড়ি ইত্যাদি, ইত্যাদি। জন্ম জন্মান্তর ধরে সেই পদবী বয়ে নিয়ে চলেছে সবাই। দাসত্বের এ এক শৃঙ্খল সরকারী নিয়মে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে  জন্ম জন্মান্তর ধরে। আর এটা হয়েছে অভিভাবকদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঠিক ঠিকভাবে লোক গুলোকে চিনে নেবার জন্য, আইন রক্ষার জন্য, অভিজাতদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য। একসময় ছিল এরা নিজেদের এক একটা পাড়ায় মিলেমিশে থাকতো। এখনো থাকে, তবে এরাও বদলে যাচ্ছে। এরা কোথাও ভূমিজ, কোথাও চন্ডাল।

সাধারণ মানুষ ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিনে পায়ে হাঁটে, ট্রেনে বাসে ঝুলতে ঝুলতে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকা সামগ্রী নিশ্চিন্তে কুড়িয়ে নেয়। আবার এরাই কুড়িয়ে পাওয়া টাকার থলি থানায় জমা দিয়ে আসে। ভোট দেয়। নেতারা ডাকলে দল বেঁধে হাজির হয়। মাঠে ময়দানে, কলে কারখানায় তুফান তোলে। এদের হাতেই বোমা আর পিস্তল দিয়ে নেতারা নিশ্চিন্তে ঠাণ্ডা ঘরে বসে ফোন করে। গণতন্ত্রের স্বাদ এরা বোঝে না। নেতারা বললে থালা বাজায়, মোমবাতি জ্বালে, বাজি আর বোমা বাঁধতে গিয়ে খণ্ড বিখণ্ড হয়ে হারিয়ে যায়। তবু গণতন্ত্রে এরাই শেষ কথা বলে। সবুজ থেকে গেরুয়া হয়ে লালে কিংবা তেরঙ্গায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাওয়া।

https://lokogandhar.com/wp-content/uploads/2020/10/অবহেলিত-বা-নিম্নবর্গীয়-মানুষ.docx-2.pdf

মণিপুরী নৃত্যশৈলীতে একক নৃত্যের পুনর্নবীকরণ

Rinki Mahato, Ph.D. Scholar, Sangeet Bhawan, Bisva-Bharati University

রাজা পামহৈবার রাজত্বকাল থেকেই মনিপুরের আধুনিক ইতিহাসের সূচনা বলা যেতে পারে। রাজা পামহৈবা শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রেমভাবশ্রিত বৈষ্ণবধর্মের দ্বারা বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে মনিপুরের পুরানো সকল ধর্মীয় সংস্কার ও ধর্মগ্রন্থ নিশ্চিহ্ন করবার প্রবাসে লিপ্ত হন। পুরানো সকল ধর্মীয় পুঁথি ও প্রামণ্য নথিপত্র অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করা হয়, এবং সকল জনসাধারণকে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত হবার নির্দেশ জারি করা হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধিকার শরণে সকল মণিপুরীবাসীকে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত হতে একপ্রকার বাধ্য করা হয় এবং ইতিপূর্বে মনিপুরের সাধারণ মানুষ যে শৈব ধর্মের উপাসনায় রত ছিলেন সেই শৈব ধর্মকে কোণঠাসা তথা নিষিদ্ধ করে তোলে হয়। ধীরে ধীরে শিব-পার্বতীর পরিবর্তে শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণ প্রধান আরাধ্য দেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠেন। এইভাবেই ধর্মীয় পালা বদলের পটভূমিকায় ক্রমে রাজা পামহৈবার পৌত্র মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র সিংহ মনিপুরের রাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।

মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র সিংহ ছিলেন বৈষ্ণবধর্মের প্রচারক। তাঁর সময়ে বৈষ্ণবধর্ম মনিপুরের জাতীয় ধর্মে পরিণত হয়। শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর আত্মমগ্ন প্রেমরসাশ্রিত বৈষ্ণবধর্মের সূচনা হয় মনিপুরের জনজীবনে। মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র সিংহ ছিলেন মনিপুরের সে ধর্ম প্লাবনের মহান পুরুষ। বিভিন্ন প্রকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ধর্মীয় টানা-পোড়েনের পটভূমিকায় প্রেমরসাশ্রিত বৈষ্ণবধর্মে আত্মমগ্ন শ্রীকৃষ্ণ-সাধক মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র বিভিন্ন প্রকার প্রচার ঘটনাবহুল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে ১৭৭৯ সালে ১১ই কার্ত্তিক পূর্ণিমা তিথিতে মনিপুরে মহারাস উৎসবের সূচনা করেন। মনিপুরের সংস্কৃতি বিপ্লবে যা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী ঘটনা। মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র পাঁচদিন ব্যাপী উৎসবের মধ্য দিয়ে মনিপুরে মহারাসের সূচনা হয়। তাঁর রাজত্বকালে এবং তাঁর পরবর্তীতে অন্যান্য রাজাদের রাজত্বকালে বর্তমানে প্রচলিত অন্যান্য রাসলীলা গুলির এবং বিভিন্ন প্রকারের মণিপুরী নৃত্যধারার প্রবর্তন ঘটে। মণিপুরী নৃত্যধারার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ইতিহাস। প্রথম অধ্যায়ে বিষাদ রূপে আলোচিত হবার কারণে আলোচ্য অধ্যায়ে সে বিষয়ে বিশেষ আলোকপাত প্রয়োজন হীন।

ঐতিহ্য ও ধর্মীয় পালা পরিবর্তনের পটভূমিকার মধ্যেও মনিপুরবাসীর আপন ও ধর্মের প্রতি অটল আস্থার প্রতিফলন স্বরূপ রাসলীলার পাশাপাশি পুরানো ধর্ম সংস্কৃতির নিদর্শন লাইহারাওবা উৎসব এবং নৃত্য আজও মনিপুরে সমান ভাবে সংঘটিত হয়ে আসছে। ধর্মীয় দ্বন্দ্ব বা সংঘাত সংস্কৃতির সে ধর্মময় ধারাকে পরিবর্তন বা হ্রাস করে তোলে নি।

মণিপুরী সংস্কৃতি তথা রাসলীলা বা অন্যান্য মণিপুরী নৃত্যধারার উপাদান সংগ্রহের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় মণিপুরের সংস্কৃতির উপাদান গুলি মূলত সংগৃহীত হয়েছে মণিপুরবাসীর ধর্মীয় বিশ্বাস এবং বিশিষ্ট ধর্মীয় গ্রন্থ সমূহ থেকে। যার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলি হল–প্রাচীন মৈথিলী ভাষায় রচিত গ্রন্থ “লাইথেক লাইকা জগোই”, সংস্কৃতে রচিত “সংগীত দামোদর” এবং “সংগীত সংগ্রহ”। এছাড়াও আছে “শ্রীকৃষ্ণরস সংগীত সংগ্রহ”, এবং মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র সিংহ রচিত “গোবিন্দ সংগীত লীলা বিলাস”, প্রভৃতি গ্রন্থ। তবে উল্লিখিত গ্রন্থ গুলি থেকে সংগৃহীত উপাদান ভরতমুনি রচিত নাট্যশাস্ত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং নাট্যশাস্ত্রে বিধান অনুসারেই গৃহীত। এই গ্রন্থগুলি ব্যতীত  অন্যান্য যে সকল উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলি থেকে মণিপুরী সঙ্গীত ও নৃত্যের উপাদান গৃহীত হয়েছে সে গুলি-“নারদ প্রণীত পঞ্চমসার সংহিত, রায়শেখর ও শশীশেখর প্রণীত নায়িকারত্নমালা, পীতাম্বর দাস প্রণীত রাসমঞ্জরী, রূপ গোস্বামী প্রনীত ঊজ্জ্বলীলমণি, কবি কর্নপুরের আনন্দ-বৃন্দাবন চম্পূ, বিশ্বনাথ চক্রবর্তী প্রণীত কৃষ্ণভাবনামৃতম কৃষ্ণদাস কবিরাজ লিখিত গোবিন্দলীলামৃতম, শাঈদেব প্রণীত সংগীত-রত্নাকর এবং জয়দেব প্রণীত গীতগোবিন্দ”[১] ।এছাড়া আছে ভাগবত।

এই সকল প্রাচীন ও মহামূল্যবান গ্রন্থাদি থেকে সংগৃহীত উপাদান এবং তারসাথে মনিপুরের জনজীবনের বিশ্বাস ও লোকগাথা আশ্রয়ে উদ্ভূত নৃত্যধারায় মূলত দলগত নৃত্যেরই রূপ পরিলক্ষিত হয়। মনিপুরের প্রাচীন সাংস্কৃতিক ধারা অনুসারে অথবা মণিপুরের রাজাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পৃষ্ঠপোষকতার ইতিহাস নিরীক্ষণ করলে দেখা যায় যে মণিপুরী নৃত্যধারা মূলত দলগত উপস্থাপনার প্রয়াস পেয়ে এসেছে।

বর্তমান পৃথিবীর আধুনিক জীবনযাত্রায় বিভিন্ন প্রতিকূলতার প্রেক্ষিতে প্রয়োজন হয়েছে সেই দলগত নৃত্যধারায় পর্যালোচনার এবং পুনর্নবিকরন পর্বের। বর্তমান সময়ে দলগত নৃত্যের ক্ষেত্রে অন্যতম বাঁধার কারণ হয়ে দাড়ায় বহু সংখ্যক শিল্পী সমন্বয়ে একটি সাংস্কৃতিক দলকে বা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দলকে পৃষ্ঠপোষকতা করা। জনসাধারণের মনে মণিপুরী নৃত্যকলার গ্রহণীয়তা বা জনপ্রিয়তা সর্বজন জ্ঞাত কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এহেন জনপ্রিয় শিল্পকলা উপস্থাপনার প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বহুসংখ্যক শিল্পী সমন্বয়ের একটি দলকে পৃষ্ঠপোষকতা করবার মত পৃষ্ঠপোষক বা তহবিলের সঙ্কুলান, কারণ যে কোনও ধারার সংস্কৃতিকে বিস্তৃত পরিসরে উন্মুক্ত করতে গেলে প্রয়োজন তাঁর নিরন্তর বিকাশের তথা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করা। আর সেই বিকাশের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করার অর্থ হল তার মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করা। বলা-বাহুল্য দলগত শিল্পকলা উপস্থাপনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে সেই মঞ্চায়নের সম্ভাবনাটি ব্যাহত হয়। বহুসংখ্যক শিল্পীর একটি দলের সাজ-সজ্জা, পোশাক-আশাক, তাদের  এক স্থান হতে আরেক স্থানে যাওয়া বা থাকার ব্যবস্থা সকল বিষয়েই অত্যন্ত অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এই ধরনের শিল্পকলা উপস্থাপনের কারণে প্রয়োজনীয় অর্থবল ও লোকবলের অভাব বহু ক্ষেত্রেই তার উপস্থাপনের প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এরসঙ্গে জড়িয়ে থাকে শিল্পীগনকে দেওয়া সাম্মানিকের বিষয়টিও। কারণ শিল্পীদের উপার্জনের দিকটিও কোনও ভাবেই অবহেলিত হতে পারে না। জীবন ও জীবিকার দিকটি শিল্পীদের শিল্পকলা উপস্থাপনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। মণিপুরী নৃত্যধারায় যেহেতু দলগত শিল্প উপস্থাপনার দিকটি প্রাধান্য পেয়ে এসেছে সে কারণে মণিপুরী নৃত্যধারা বা মণিপুরী নৃত্যশিল্পীদের এই সকল বাধা গুলির সম্মুখীন হতে হয় প্রতিনিয়ত। এই কারণেই বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ভারত সংস্কৃতির অন্যতম গৌরবময় উপাদান মণিপুরী নৃত্যকলার দেশে ও বিদেশে প্রচার-প্রসার এবং ভবিষ্যতের উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিষয় গুলি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা একান্ত আবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে মণিপুরী নৃত্যকলার একক উপস্থাপন দলগত মণিপুরী নৃত্য উপস্থাপনার সেই সকল বাঁধা গুলি কাটিয়ে ওঠার অন্যতম উপায় হয়ে উঠতে পারে। আমাদের দেশের অন্যান্য শাস্ত্রীয় নৃত্যধারায় ন্যায় মণিপুরী নৃত্যধারারও একক উপস্থাপনার উপযোগিতা, সম্ভাবনা এবং পন্থা নির্ধারণের দিকটি খতিয়ে দেখবার আন্তরিক চাহিদায়  এই গবেষণার অবতারণা। সেই সঙ্গে এই নৃত্যধারার বিশুদ্ধ রূপটি তার সঙ্গে ভারত সংস্কৃতির গভীরতর সাত্ত্বিক ও নান্দনিক ঐতিহ্যময়তা বিশ্বের কাছে উপস্থাপনের নতুনত্বর দিক উন্মোচনের প্রচেষ্টায় এই অন্বেষণ।

আমাদের দেশের প্রাচীন ধ্রুপদী নৃত্যধারা গুলির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখাযায় বর্তমানে এই নৃত্যধারা গুলিতে যে একক নৃত্য উপস্থাপনার পরম্পরা বা ধারা প্রচলিত সেই রূপটি কিন্তু বিভিন্ন প্রকার পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের মধ্যে দিয়ে আত্ম প্রকাশ করেছে। শাস্ত্রীয় নৃত্যধারা গুলির এই পরিবর্তন সূচিত হয়েছে কালের গতিতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত করে তোলবার প্রেষ্ঠায়। “বর্তমানে ভারতনাট্যম অনুষ্ঠান বলতে সাধারণ ভাবে আল্লা রিপু, যতিস্বরম, শব্দম, বর্নম, পদম, তিল্লানা-এইগুলিই প্রচলিত। কিন্তু এই ধারাগুলি বহুপরে ভারতনাট্যম নৃত্যপদ্ধতিতর সংযোজিত হয়েছে। সাদিরনাট্যম, ভগবতমেলা নাটক, কুরুভাঞ্জি ও কুচিপুড়ি-এই চার পদ্ধতিতেই পূর্বে ভারতনাট্যম প্রচলিত ছিল।

ভারতনাট্যম নৃত্যের শুদ্ধ মৌলিক রূপ সাদিরনাট্যম। বহু শতাব্দী ধরে মন্দিরে ও রাজদরবারে দেবদাসীদের দ্বারা এই নৃত্য অনুষ্ঠিত হত। সাদিরনাট্যম, দাসীঅট্যম, চিন্নমেলন, ভোগমেলম, তাঞ্জোরী নাচ প্রভৃতি বিভিন্ন মানে এই নৃত্যধারা বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয়”।[২]

নৃত্য,সঙ্গীত ও বাদ্য এই তিন ধারার শিল্পকলাই ভারতীয় সংস্কৃতির আঙিনায় ক্রমে সঙ্গীত নামে পরিচিত। অর্থাৎ ভারত সংস্কৃতির পরিভাষায় নৃত্য, গীত ও বাদ্য এই তিন ধারার শিল্পকলাকে একত্রে সঙ্গীত নামে অভিহিত করা হয়েছে এবং এই সঙ্গীত ভারতীয় সাহিত্য ও দর্শনের ঊর্ধ্বে উঠে দেব-সাধনার অঙ্গ তথা পন্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইংরেজ শাসনকালে আমাদের সাধন সংস্কৃতি তার সেই গৌরবময় অর্চনার মাধ্যম থেকে ধীরে ধীরে নিম্ন স্খলিত হয়ে পরে যা আমাদের দেশে মুসলিম রাজত্বকালে তার গতিপথ হারিয়ে ফেলে পূজার্চনার মাধ্যম থেকে আনন্দ উল্লাস ও প্রমোদের উপকরণে পরিণত হয়। নৃত্য ও নর্তকীরা সম্ভোগের বস্তুতে পরিণত হন। ভারতের নৃত্যধারা তার গৌরবময় অবস্থান থেকে লাঞ্ছনার ও অসম্মানের অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। আমাদের দেশের অন্যতম জনপ্রিয় শাস্ত্রীয় নৃত্যধারা ওড়িশি নৃত্য ও সেই ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করেছে। কালক্রমে সমাজ সংস্কারকদের হাত ধরে নবজাগরণের পথে পুনরায় তার হৃতগৌরব উদ্ধার করে সমগ্র জগতের সম্মুখে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠটি করতে এবং ভারত সংস্কৃতির গৌরববৃদ্ধি করতে সার্থক হয়েছে। এক্ষেত্রেও রূপটি বিভিন্ন প্রকার পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বর্তমান রূপটি ধারণ করেছে। ওড়িশি নৃত্যকলাতেও একক নৃত্য অনুষ্ঠান উপস্থাপনের পদ্ধতিটি প্রকাশ হয়েছে।

“But soon, the ‘maharis’ who danced in the temple faded out of the picture. Then, by the 19th century the ‘nachunis’ also disappeared. We were fighting for our independence from British rule. The British did not understand these customs. India was also seeking progress and looking towards the West for a more universal education pattern. This resulted in some intolerance for old systems and those that held back, society, especially women. However, thie ‘gotipua community survived. And it was from this community, that the return of Odissi as a dance form took place. They had a system of training and items. And although it is rave to see the original ‘qotipua dances now, the style you do see and recognise as Odissi is based on ‘that’ system.

The people who revived the dying art of Odissi, put it together by looking closely at the

Seulpture carved on the walls of temples in Orissa, by looking at some old texts like the ‘Abhinaye Chandrika’ and lastly by the technique used by the little gotipua boys.

The items you see today are the ‘batu’-which is made up of seulpture poses are to be seen in the temple seulptures. Next, is the ‘pallavi’, which is ‘bringing to life’ of the swaras or notes in the music. When an Odissi dancer does a ‘pallavi’, you can actually ‘see’ the music with yours eyes! Every musical pattern is made’ visual’. The asthapadi’ is a must in an

Odissi performance. These are verses from the ‘Gita – Govind’ – the love poem of Jayadeva. ‘Moksha’ is a concluding item and here the dancer pays homage to god, to the ‘guru’ and to the ‘sabha’ or audience, before ending her programme”. [৩]

আমাদের দেশের শাস্ত্রীয় নৃত্যধারাগুলির মধ্যে অন্যমত জনপ্রিয় নৃত্যধারা হল কত্থক।  মূলত উ ও পশ্চিম ভারতে এই নৃত্যধারা উৎপত্তি ও বিস্তার। এই নৃত্যেরও ভাবধারার পরিবর্তনের ইতিহাসটি অত্যন্ত ভিন্ন। বৈষ্ণব দর্শন ও ইসলামিক সংস্কৃতির এক বৈচিত্র্যপূর্ণ সহবস্থান এই নৃত্যধারার আঙ্গীকে পরিলক্ষিত হয়। বৈদিক যুগ থেকে যাত্রা শুরু করে হিন্দু, মুসলমান ও ইংরেজ শাসনকালে এই নৃত্যধারা বহু পরিবর্তন ও সংমিশ্রণের মধ্যে দিয়ে গিয়ে একটি বিচিত্র রূপ গ্রহণ করেছে। কত্থক নৃত্যের শুদ্ধ রূপটি মূলত বৈষ্ণব ভাবধারা উদ্ভূত। এবং মন্দির ও ধর্মানুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই এই নৃত্যের গতিধারাটি প্রবাহিত ছিল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণই ছিলেন এই নৃত্যধারার প্রাণপুরুষ। স্বামী হরিদাস, সুরদাস, গোবিন্দ স্বামী প্রভৃতি ভক্তকবি ও সুরসাধকদের সঙ্গীত অবলম্বনেই এই নৃত্যধারা বিকশিত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু মুসলমান রাজত্বকালে মন্দির থেকে রাজদরবারে আর্বিভাবের সাথে সাথে এই নৃত্যধারার ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। যদিও একথা অনস্বীকার্য যে শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম সম্রাটরা অসামান্য অবদান রেখেছেন। তথাপি একথা গৌণ রাখবার বিষয় নয় যে মুসলিম আমলেই আমাদের সংস্কৃতির গতিপথ অবনত হয়েছে। বিশেষত কত্থক নৃত্যধারা তথা নৃত্যশিল্পীকুল। আমাদের দেশের নর্তকী-গন নাচনে-ওয়ালীতে পরিবর্তিত হয়েছে মুসলিম সম্রাটদের ভোগ-বিলাসের কুরুচিকর দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে। ফলস্বরূপ দেবার্চনার অঙ্গস্বরূপ নৃত্যধারা পরিণত হয়েছে প্রমোদ বিলাসের উপকরণে এবং সম্ভ্রান্ত নর্তকী সম্প্রদায় করুণ দুর্দশার মধ্যে দিয়ে সম্ভোগের উপাদানে পরিণত হয়েছেন। মন্দিরের ধর্মপ্রাণ, ত্যাগ-সংযমী জীবনের অধিকারী নৃত্যশিল্পীরা ঠাঁই নিতে বাধা হয়েছেন রাজদরবারের প্রমোদ ভবনে বা আমির ওমারোহদের কোঠির অলিন্দে।

মুসলমান আমলে কত্থক নৃত্যধারা পারসীয় ভাবধারার প্রভাবে তার গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন করে বহুলাংশে। সম্রাট বা আমির ওমারোহদের মনোরঞ্জনের প্রেক্ষিতে কত্থক নৃত্যধারায় মূলত একক উপস্থাপনার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ পছন্দসই নর্তকী গনকে তখন বাদশা, সম্রাটদের সম্ভোগের আশ মেটাবার উপকরণে পরিণত হতে একপ্রকার বাধ্য করা হত। তাই একক উপস্থাপনাই হয়ত নবাব, বাদশী, সম্রাটদের অধিক পছন্দের ছিল।

এরপরে ধীরে ধীরে ঊন-বিংশ শতকের নবজাগরণের আলোকে এবং ইংরেজ শাসনকালের আবসানে কত্থক নৃত্যধারা বর্তমান আসনে অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়। তবে নৃত্যের একক উপস্থাপনার রীতিটি প্রবাহমানতা পেয়ে এসেছে।

সৌভাগ্যক্রমে আমাদের দেশের কেরালা প্রদেশের কথাকলি নৃত্যধারা এবং মনিপুর প্রদেশের মণিপুরী নৃত্যশৈলী মুসলিম প্রভাব বা ইংরেজ শাসন দ্বারা ততোখানি বিঘ্নিত হতে পারেনি। ফলত এই দুই শাস্ত্রীয় নৃত্যধারা শেষ পর্যন্ত তাদের বিশুদ্ধ রূপখানি বজায় রেখে চলেছে। সামান্য যে পরিবর্তন তাতে সংযোগ হয়েছে তা তাদের পরিপার্শ্বিক ও গঠনগত পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের সাপেক্ষ। তবে এই দুই ধারার শৈলীতে এখনও দলগত উপস্থাপনার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। যেহেতু কথাকলি নৃত্যের বিশদ আলোচনা আমার গবেষণার আলোচ্য বিষয় নয় সে কারণে আমার গবেষণা মণিপুরী নৃত্যধারা সম্পর্কিত আলোচনাকে কেন্দ্র করেই অগ্রসর হতে থাকবে।

মণিপুরী নৃত্যধারায় একক নৃত্য মঞ্চায়নের পথটি সুগম করা বা সুপ্রতোষ্ঠিত করবার একান্ত প্রচেষ্টায় এই গবেষণার অবতারণা। এই কাজটি যেমন খুব সহজ বিষয় নয় অপরপক্ষে এটি নিতান্তই বিধি বর্হিভূত, গর্হিত এবং অসম্ভব কোনও কল্পনা মাত্রই নয়। তবে কাজটি নিঃসন্দেহে দুরূহ একথা অনস্বীকার্য। সেই কারণে দরকার এই নৃত্যধারার গতিপ্রকৃতিকে যথার্থ রূপে অনুধাবন করবার। যাতে একক নৃত্য হিসেবে উপস্থাপিত হবার অবকাশে মণিপুরী নৃত্যধারার গভীরতর ধর্মীয় ও সাত্ত্বিক রূপটির সাথে সাথে তার বাহ্যিক রূপ ও পরিকাঠামোগত বৈশিষ্ট্যাবলীর কোন হানি না ঘটে। সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে মানিয়ে নিয়ে বিভিন্ন প্রকার গ্রহণ-বর্জন রীতি-নীতির মধ্যে দিয়ে গিয়েও উদবর্তনে ভাস্বর হয়ে ওঠার মাধ্যমেই একটি শিল্পধারা তার আপন বৈশিষ্ট্যে অনন্য হয়ে উঠতে সক্ষম হয়।

মণিপুরী নৃত্য শৈলীতে একক নৃত্যের পুনর্নবীকরণ বিষয়ে প্রথিতযশা শিল্পীদের প্রতিবেদনে বর্তমান প্রেক্ষিতে গবেষিকার মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা-

মণিপুরী নৃত্য ধারার পরম্পরাগত উপস্থাপনার বিষয়টির প্রতি আলোকপাত করলে আমরা দেখি একটি দলগত নৃত্যধারা হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ, মূলত একটি নৃত্যনাট্যের আঙ্গিক বা পরিকাঠামোর আদলে, সেখানে এই নৃত্য ধারা তার সামগ্রিক উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে যেন এক অপূর্ব পুষ্পস্তবকের ন্যায় সৌন্দর্য মণ্ডিত রূপ দর্শকের হৃদয় কে ভক্তি ও আনন্দে ভরে তোলে এবং এক সুন্দর অনুভবের জগতের সাথে জারিত করে তোলে। মণিপুরী একক নৃত্যের কথা বলতে হলে প্রথমেই যে মানুষের কথা স্মরণে আসে তিনি হলেন মাইস্নাম গুরু আমুবী সিং। পরবর্তীকালে বহু গুরুদের মাধ্যমে এই একক নৃত্যের প্রচার ও প্রসার লাভ সম্ভবপর হয়। গুরু বিপিন সিং একক নৃত্যের প্রচারের মাধ্যমে মণিপুরী নৃত্যের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সৃষ্টি করেছিলেন বললে বোধহয় ভুল হবেনা।

বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলা যায় এই দলগত ধারাকে একক উপস্থাপনার সম্ভাবনার দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখবার পর তার রূপের প্রকাশ এভাবেও ব্যক্ত হতে পারে যে-পুষ্পস্তবক এর মধ্যে থেকে একটি ফুলকে পৃথক করে যদি উপস্থাপনা করা হয় বা প্রতিষ্ঠা করা হয় সে ক্ষেত্রে সমগ্র পুষ্পস্তবকের উপস্থাপন  সুযোগ না থাকলেও, অন্তত তাঁর একটি ফুলের সৌরভে ও সৌন্দর্যের পরিস্ফুটনে সমগ্র পুষ্পস্তবকের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যাবলী ফুটে ওঠায় অধিকতর গ্রহণীয় হয়ে  নতুন পথের সন্ধান খুঁজে পায় এবং বহুল অনুশীলনের ক্ষেত্রে উপযোগী করে তোলে। মনিপুরের এই একক নৃত্যের উপস্থাপন হিসেবে বলা যায় যে সপ্তসুরের সুমিতির মধ্যে থেকে কোন একটি বিশেষ স্বরের প্রয়োজনীয়তা। যেমন তুলনা করা যায় রামধনুর সাতটি রঙের সাথে। সাতটি রঙের মধ্যে থেকে প্রত্যেকটি রঙের পৃথক বৈশিষ্ট্যের, অস্তিত্বের ও প্রয়োজন অনুসারে তার প্রয়োগের সম্ভাবনা গুলিকেও খতিয়ে দেখা। আবার উদাহরণ হিসাবে ছাতিম পাতার উল্লেখ করা যেতে পারে, যেমন প্রত্যেকটি পাতার পৃথক পৃথক অস্তিত্বের প্রেক্ষিতেও তাদের অবস্থান কিন্তু একটিমাত্র বৃত্তের উপরেই, তাসত্ত্বেও ছাতিম পাতা সমগোত্রীয় উদ্ভিদকুলের সকল গুণাবলী সম্বলিত হয়েই কিন্তু উদ্ভিদ রাজ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে।

নৃত্যনাট্যের উপর গঠিত মণিপুরী রাস লীলা কিংবা লাইহরাওবা অনুষ্ঠান সেইরকমই মণিপুরী নৃত্য ধারার বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছে তথাপি মণিপুরী নৃত্য নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ এর পথ একক নৃত্য। পরম্পরা গত ভাবে মণিপুরী নৃত্য ধারার দলগত উপস্থাপনের ঐতিহ্য বিবর্তনের সাপেক্ষে এককভাবে মণিপুরী নৃত্য উপস্থাপনের সঙ্গে তুলনা করে একটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্ধৃতি উদাহরণ সহযোগে বলা যেতে পারে-

বহু জনতার মাঝে অপূর্ব একা

যে জায়গায় চোখে নতুন-দেখার দেখা

অবাক আলোর লিপি যে বহিয়া আনে”(৪)

অর্থাৎ উদ্ধৃতি অংশটিতে কবিগুরু অনেকের মধ্যে বা বহুর মধ্যে পৃথকভাবে আত্মপ্রকাশের মধ্যে একটি একক উপস্থিতি গৌরবময় এক অনন্য বৈশিষ্ট্য দীপ্তিমান প্রকাশ রূপকে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই সঙ্গে স্বাগত জানানো হয়েছে তার নতুনত্বর দ্যোতনার সকল সম্ভাব্য দিকগুলি খাতিয়ে দেখবার। এক্ষেত্রে এই উপমার মাঝের ও শেষের চরণ দুটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য এই কারণে যে মণিপুরী নৃত্যের একক উপস্থাপনার ভাবনাটি এই নৃত্য ধারা সম্পর্কে হয়তো একটি নতুন ভাবনা দিগন্ত উন্মোচন সক্ষম হবে আর সেই কারণে এই কথাটি অধিক প্রত্যয় এর সাথে প্রতিষ্ঠা করা একান্ত প্রয়োজন বলে বোধ করি।

একক মণিপুরী নৃত্য উপস্থাপনার বিষয়টির প্রতি নজর রেখে এখানে বিশেষ কতগুলি উপাদানের উল্লেখ করা যেতে পারে-

  • নৃত্য উপাদান
  • দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা
  • পোশাক

নৃত্যের উপাদান বলতে উল্লেখ করা যেতে পারে মহারাজ ভাগ্য চন্দ্রের দ্বারা রাসলীলার প্রারম্ভের সময় থেকেই বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে মণিপুরী নৃত্য ধারার উপাদান সংগৃহীত হয়ে আসছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলি হল-

  • প্রাচীন মৈথিলী ভাষায় রচিত গ্রন্থ লাইথেক লাইকা জগোই। যেটি সম্প্রতি মৈতৈ ভাষায়  প্রকাশিত হয়েছে। প্রাচীন মণিপুরী সংস্কৃতি মৈথিলী ভাষায় রচিত সংগীত সে সময়ে প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ ছিল।
  • মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র রচিত গ্রন্থ “গোবিন্দ সংগীত লিলাবিলাস”।
  • শ্রীকৃষ্ণ রস সংগীত সংগ্রহ
  • সংস্কৃত ভাষায় রচিত “সঙ্গীত দামোদর”।
  • সংস্কৃতি ভাষায় রচিত মণিপুরী সংগীত ও সংস্কৃতির অন্যতম উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল “সঙ্গীত সংগ্রহ”।
  • জয়দেব রচিত “গীতগোবিন্দ”।

এ ছাড়াও বহু সংখ্যক ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে মণিপুরী সাংস্কৃতিক ধারার উপাদান সংগ্রহীত হয়েছে। সম্প্রতি কালে মণিপুরী নৃত্য কে অধিক মাত্রায় জনপ্রিয় করে তোলবার প্রয়াসে বহুসংখ্যক শিল্পীগণ এককভাবে মণিপুরী নৃত্য উপস্থাপনে ব্রতী হয়েছেন। জনসম্মুখে এর গ্রহণীয়তাকেও মান্যতা দেওয়া হয়। বর্তমানকালে বিভিন্ন মঞ্চানুষ্ঠানে দর্শকদের পরিতৃপ্তি কে সমীক্ষা করে বলা যায় শিল্পী দ্বারা মণিপুরী নৃত্যের একক উপস্থাপনাতেও দর্শকরা উদার আহ্বান জানায়। এই সকল বিষয়গুলো বিবেচনা সাপেক্ষে হয়তো বলা যায় মণিপুরী নৃত্যের দলগত পরিবেশনের পাশাপাশি মণিপুরী নৃত্যের একক উপস্থাপনার দিকটিও এই নৃত্যধারার প্রচার-প্রসারে এবং একটি বিবর্তনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে আরও জনপ্রিয়তা অর্জনের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়ে উঠবে।

মণিপুরী-নৃত্যের একক উপস্থাপনের পথকে সুগম করে তোলবার প্রচেষ্টায় কতগুলি নৃত্যের কথা উল্লেখ করা যায়। সেগুলি পরম্পরাগত মণিপুরী নৃত্য ধারার বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে তাকে ভবিষ্যতের পথে অগ্রসর করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করবে। এই নৃত্য গুলি ‘গীতগোবিন্দ’ বা পরম্পরাগত ভাবে মণিপুরী নৃত্য ধারার অথবা অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থাবলী থেকেই নিয়ে নৃত্য নির্মিতি করা হয়েছে, যেগুলি শাস্ত্রীয় মণিপুরী নৃত্য ধারায় বহু আগে থেকে গৃহীত হয়েছে বিভিন্ন নৃত্য গুরু দ্বারা। যেমন শ্রীরাধা কৃষ্ণের রাগ অনুরাগ সম্বলিত লীলার কাহিনী বিবৃত পদ “ধীর সমীরে যমুনার তীরে”। শ্রীকৃষ্ণের গাঁথা বিবৃতি পদ “শ্রীত কমল কুচ মণ্ডল”। “হরি রিহ মুগ্ধ বধূ নিকরেন” পদে অপরূপ বর্ণনা পাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দেব মহাত্মের। তেমনি “লোলিত বরন লোলিত বদন” পদে শ্রীকৃষ্ণের রূপের বর্ণনা এক অপূর্ব উদাহরণ খুঁজে পাই। “নাচত মৃদঙ্গ” পদটিতে শ্রীকৃষ্ণ নর্তন উপস্থাপনের জন্য উপযুক্ত বলা যায়। এখানে আরও উল্লেখযোগ্য এই যে উল্লেখিত সকল পদগুলি কেবল তাণ্ডব আঙ্গিকে রচিত নয়। সে ক্ষেত্রে একক নৃত্য শিল্পীর পক্ষে একসঙ্গে দীর্ঘক্ষণ তাণ্ডব আঙ্গিকের নৃত্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হওয়ার অসুবিধা বা বাধা দূরিভূত হতে পারে।

পরম্পরাগত ভাবে মণিপুরী নৃত্য ধারার বহু নৃত্যকে একক নৃত্য উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রচেষ্টায় শামিল করা হয়ে থাকে। যেমন-“দশাবতার”, ”প্রবন্দ্ধ নর্তন”, “তানুম”,” গৌরাঙ্গ বন্দনা”, “নীলকমল দল শ্যাম”, “কৃষ্ণ বিরহ”, “রাধা নর্তন” ইত্যাদি। উপস্থিত করা যেতে পারে “শ্রীকৃষ্ণ অভিসার” বা “শ্রীরাধা অভিসার” “শ্রীকৃষ্ণ নর্তন”। উপাদান গ্রহণ করা যেতে পারে “নায়িকা ভেদের” আখ্যানকে অবলম্বন করে। একক নৃত্য উপস্থাপনায় মন্দিরা চলোম বা করতাল চলোম নৃত্যও হতে পারে, যদিও এই নৃত্য সমবেত নৃত্য হিসাবেই উপস্থিত হয়ে আসার রীতি, তবুও বিবর্তনের ধারা বয়ে এবং স্বয়ী বৈশিষ্ট্যকে বিঘ্নিত না করে এই ধরনের নৃত্য একক উপস্থাপনের মাধ্যমে হয়তো মণিপুরী নৃত্য ধারার বহুল অনুশীলনের পথ প্রশস্ত করা যাবে। এই কারণেই “পুংচলোম” নৃত্য টিকেও একক প্রদর্শনীর কথা ও আলোচনার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। কারণ পুং চলোম নৃত্য মণিপুরী নৃত্য ধারার এক অন্যতম জনপ্রিয় নৃত্য উপাদান যার জনপ্রিয়তা সমগ্র বিশ্বব্যাপী। এছাড়াও আমাদের বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থাদি যেমন রামায়ণ-মহাভারত ইত্যাদি থেকেও বিভিন্ন কাহিনী অবলম্বন করেও একক মণিপুরী নৃত্য উপস্থাপনার উপকরণ সংগৃহীত হতে পারে।

সকল প্রথিতযশা মণিপুরী নৃত্য গুরুদের বক্তব্য স্মরণ রেখে বলা যায় একক নৃত্য একটি নির্দিষ্ট ক্রোম থাকা প্রয়োজন। যার মাধ্যমে শিল্পী একক নৃত্য উপস্থাপনা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান বা ধারণা রাখতে পারবে। এটি প্রথম অবস্থায় গুরু বিপিন সিংহ রাসের ক্রমানুযায়ী নৃত্য গুলিকে সাজাতেন এবং পরবর্তীকালে সকল গুরুর পক্ষ থেকেই এই বিষয়ে একই মন্তব্য শোনা যায়। অর্থাৎ প্রণাম দিয়ে নৃত্যের সূচনা ও প্রার্থনা দিয়ে নৃত্যের সমাপ্তি। সে ক্ষেত্রে একক নৃত্যশিল্পীকে সেভাবেই নৃত্যের উপাদানগুলি সাজাতে হবে। মণিপুরী নৃত্যের সকল গুরু বহু একক নৃত্য নির্মিতি করেছেন। সেগুলো থেকে নৃত্য গুলি নিয়ে বা পুরানো গ্রন্থ থেকে পদ নিয়ে নতুনভাবে নৃত্য নির্মিতি করে মঞ্চ উপস্থাপনা করা যেতেই পারে। উপস্থাপনার সময়সীমা ও পোশাকের পরিবর্তনকে স্মরণে রেখে নৃত্য পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে কোনভাবেই দর্শকদের কাছে সেটি অপ্রাসঙ্গিক না হয়ে ওঠে। দর্শক  সুন্দরকে কিংবা একজন পরিপূর্ণ শিল্পীকে চিরকাল আহ্বান জানায়। আর বলা যেতে পারে একজন শিল্পী গড়ে ওঠে দর্শকের গ্রহণীয়তার উপর ভিত্তি করেই। তাই দর্শকের চাহিদা স্মরণ করেই শিল্পীকে নৃত্য পরিকল্পনা রচনা করতে হবে।

মণিপুরী নৃত্যের একক উপস্থাপনের ক্ষেত্রে অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তার পোশাক সম্বন্ধে একটি সম্যক ধারণা রাখা। অন্যান্য ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য ধারায় পুরুষ ও মহিলা শিল্পী গনের জন্য নৃত্যের পোশাক মোটামুটিভাবে নির্ধারিত থাকে বলা যেতে পারে। একটি বিশেষ ধারার পোশাকেই শিল্পীরা মঞ্চে অবতীর্ণ হন। সে ক্ষেত্রে মণিপুরী শাস্ত্রীয় নৃত্য কলায় মণিপুরী নৃত্যের বিভিন্ন ধারার নৃত্য অনুসারে তার পোশাকটিও হয় ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। যেমন-রাসলীলার পোশাক অন্য ধরনের আবার লাইহরাওবা নৃত্যের পোশাক অন্য প্রকার। এই একই হিসাবে মাইবা, মাইবী, পুংচলোম, মন্দিরা চলোম প্রভৃতি বিভিন্ন ধারার নৃত্যের পোশাকের বৈচিত্র্য দেখা যায়। বিভিন্ন ধারার নৃত্যের পোশাক এর বিভিন্ন তার কারণে একজন শিল্পীর ভিন্ন ভিন্ন ধারার মণিপুরী নৃত্য একইসঙ্গে ক্রমান্বয়ে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পোশাক প্রধান বাধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেকারণে মণিপুরী নৃত্য ধারার মঞ্চে একক উপস্থাপনার ক্ষেত্রে পোশাকের কিছু সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করলে বোধহয় সেই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যেতে পারে। যেমন-শিল্পীর পোশাকের সৌন্দর্য রক্ষার তে পোশাকের বিভিন্ন জায়গায় সেলাই করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে সেলাই এর পরিবর্তে যদি সেফটিপিন ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটি বেশি সুবিধাজনক পোশাক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে। মহিলা শিল্পীদের ক্ষেত্রে পোশাক পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মণিপুরী আঙ্গিকে লাস্য ও তাণ্ডব দুই ধরনের আঙ্গিক উপস্থিত। সেক্ষেত্রে লাস্য আঙ্গিকের পোশাকে আমরা ফানেক বা কুমিনের ব্যবহার লক্ষ্য করি এবং তাণ্ডব আঙ্গিকে ফৈজম বা ধুতির ব্যবহার দেখে থাকি। শিল্পী প্রথমে লাস্য আঙ্গিকের নৃত্য উপস্থাপন করতে পারে, সেটি করলে মহিলা শিল্পী ফানেকের অভ্যন্তরে ধুতি পরিধান করলে কিছুটা সময় সে বাঁচাতে পারবে।এছাড়াও দড়ির বদলে যদি ভেলক্র ব্যবহার করা হয় তবে পোশাকের পরিবর্তনে অনেক সুবিধা হবে বলে মনে করা যায়। ব্লাউজে চেনের বদলে ভেলক্র ব্যবহারে ব্লাউজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও সুবিধা হতে পারে। যে সকল প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পীরা একক নৃত্য করেছেন বা করছেন তাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই এই পথ নিদর্শন। তাদের এত বছরের মঞ্চের অভিজ্ঞতা পরিপ্রেক্ষিতেই তাদের এই মন্তব্য। আমরা যদি লক্ষ্য করি গুরু বিপিন সিং বা কলাবতী দেবী “মণিপুরী নর্তনালয়ের” শিল্পীদের দিকে তাহলে দেখা যায় শিল্পীরা ফৈজম বা ধুতির ওপরে ওড়না বা ইনেফির ব্যবহার করেন এবং মাথায় অলংকার হিসাবে ঝাঁপার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। তাণ্ডব আঙ্গিকের নৃত্যের ক্ষেত্রে তারা খোপায় ব্যবহৃত অলংকার ব্যবহার করেন না, কিন্তু কপালে মাঙটিকা এবং কানের টানা পরিধান করতে তাদের দেখা যায়। এই পোশাকের কথা উল্লেখ করার কারণ হেতু বলা যায় পোশাক পরিবর্তনের সমস্যার দিকে লক্ষ্য রেখে এই পোশাকের কথাও সর্বসমক্ষে আনা দরকার এক্ষেত্রে শিল্পী লাস্য আঙ্গিকের নৃত্যে মাথায় অলংকার পরিধান করবে এবং তাণ্ডব আঙ্গিকে মাথায় কয়েৎ বা শ্রীকৃষ্ণের চূড়া ধারণ করতে পারে, সেটি অবশ্যই শিল্পীর নির্বাচিত উপাদানের উপর নির্ভর করছে। এই পোশাকের ধারণার মাধ্যমেও একটি পথ হতে পারে পোশাক পরিবর্তনের সমস্যাকে কিছুটা দূরীভূত করার। তবে একথা সত্য যে মণিপুরী নৃত্যের বৈচিত্র্য তার পোশাকে। মণিপুরী নৃত্য নিয়ে পড়াশোনা কালে শিল্পী পোশাক সম্বন্ধে সকল জ্ঞান অর্জন করে কিংবা উপস্থাপনার মাধ্যমে ও তার প্রভাব সম্বন্ধে ধারণা জন্মায়।একক নৃত্য পরিবেশনায় শিল্পীর যে পোশাক পরিবর্তনের অক্ষমতা সেটি দূরীভূত হতে পারে সঠিক পোশাক নির্বাচন করার জ্ঞানের মাধ্যমে। যেকোনো শিল্পী গড়ে ওঠার পেছনে থাকে গুরুর স্নেহভরা আশীর্বাদ এবং তার সাথে থাকে গুরু-শিষ্যের অক্লান্ত পরিশ্রম। তাই এই সকল বিষয়ে শিল্পী কে অভিহিত করাতে পারে একজন গুরুই।গবেষণাকালে বহু গুরুর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে পেরেছি যার মাধ্যমে এই সকল ধারণাগুলি জনসম্মুখে আনতে পারার সৌভাগ্য গবেষিকার  হয়েছে। যে সকল তথ্য সংগৃহীত হয়েছে সে সকল তথ্য মূল্যায়ন পর্বে এটি মনে হয় যে মণিপুরী নৃত্য দলগত প্রধান নৃত্য হলেও এটি সক্ষম ভাবে একক নৃত্য হিসাবে পরিচিত হতে পারে জনসম্মুখে।

যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মণিপুরী নৃত্য চর্চার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সে সকল বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিল্পীদের যদি একক নৃত্য শিল্পী হিসাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাহলে সেটি বেশি ফলপ্রসূ হবে বলে ধারণা করা যেতে পারে। সকল মণিপুরী নৃত্য শিক্ষার্থীদের যদি মণিপুরী নৃত্যের পোশাক বা সেই বিষয়ের ওপর কর্মশালা আয়োজন করা যায় তাহলে পরবর্তী কালে যে সকল নৃত্যশিল্পী নিজেকে একক নৃত্য শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে সে সকল শিল্পীদের কাছে পোশাক কোন সমস্যার অন্তরায় সৃষ্টি করবে না। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গুলি এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি একত্রিত হয়ে যদি একক নৃত্যের সুবিধার্থে একটি সঠিক নিয়মাবলী তৈরি করেন সেক্ষেত্রে একক নৃত্য শিল্পী নির্দিষ্ট বাঁধাধরা নিয়মের মধ্যে থাকবেন। এই সকল কর্মের জন্য প্রয়োজন সকল বয়োজ্যেষ্ঠ গুরু, প্রথিতযশা মণিপুরী শিল্পীদের, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ,বিভিন্ন সংস্থা যারা বিভিন্ন মণিপুরী একক নৃত্য উৎসব পরিচালনা করছেন সে সকলকে একত্রিত হয়ে একটি বৈঠকের মাধ্যমে একক নৃত্যের বাঁধাধরা নিয়ম প্রতিস্থাপন করা। সে ক্ষেত্রে সকল একক নৃত্য শিল্পীদের নিয়মাবলী ও নৃত্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক হতে পারে। মণিপুরী নৃত্য ঐতিহ্যবাহী এবং যে কোন নতুন পদ অনুসন্ধান কালে এটি স্মরণ রাখতে হবে যে মণিপুরী নৃত্যের ঐতিহ্য কোনভাবেই ক্ষুণ্ণ করা যাবে না সে ক্ষেত্রে নৃত্য শিল্পীদের পথ প্রদর্শনের কাজ করবে এই সকল বয়োজ্যেষ্ঠদের মতামত।

পরিশেষে বলা যায় “একক মণিপুরী নৃত্য শৈলীর বিবর্তন ও সমসাময়িক অবস্থান” সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বহুগুণী মানুষের স্নেহভরা আশীর্বাদ ও ভালোবাসা প্রাপ্ত হয়েছে। প্রাপ্ত হয়েছে তাদের মণিপুরী নৃত্য বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য, তাদের প্রত্যেকটি কথা গবেষিকা কে আগামী দিনের প্রথম নিদর্শন করতে সাহায্য করবে। মণিপুরী নৃত্যের একক নৃত্যের পুনর্নবীকরণ এর মাধ্যমে একজন শিল্পী তার নৃত্যে দক্ষতা ও ক্ষমতা দর্শকদের ও বিভিন্ন প্রথিতযশা শিল্পীদের সম্মুখে তুলে ধরতে পারবে। প্রত্যেক পর্বেই বাড়বে তার নতুন অভিজ্ঞতা। মণিপুরী নৃত্যে দলগত নৃত্য যেরূপ সমাদৃত সেই রূপ সমাদৃত একক নৃত্য। তবে একটি অনুষ্ঠান একাই সম্পাদনার ক্ষেত্রে যে একক নৃত্য বা solo Repertoire সে ক্ষেত্রে শিল্পীকে সচেতন হতে হবে। সঠিক পন্থা ও সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে হয়ে উঠতে পারে প্রকৃত একক নৃত্য শিল্পী। মণিপুরী নৃত্যের ভাব-গভীরতা, সংযম, ভক্তি এবং সৌন্দর্যের ভাব স্মরণ রেখেই সম্ভব মণিপুরী নৃত্য শৈলীতে একক নৃত্যের পুনর্নবীকরণ।

গ্রন্থপঞ্জী:

১। জাভেরী দর্শনা ও দেবী কলাবতি, শাস্ত্রীয় মণিপুরী নর্তন, মণিপুরী নর্তনালয় কলকাতা, ১৯৯৩, মুখবন্ধ পৃষ্ঠা: ২।

২। চট্টোপাধ্যায় গায়েত্রী, ভারতের নৃত্যকলা, করুনা প্রকাশনী, কলকাতা – ৯, ২০০৮ জুলাই, প্রথম সংস্করণ ২০০২, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০০৮, পঞ্চম মূদ্রণ ১৯৯৭ জুলাই, পৃষ্ঠা: ১৮৩

৩। Samson Leela, The Joy of Classical Dances of India, National Book Trust, New Delhi-70, First Reprint 2012. PP: 27-29.

৪। ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ,স্বরবিতান, উনষষ্টিতম খন্ড, প্রকাশক শ্রী অশোক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা- ১৭, ১৩৭১ বৈশাখ ২৫শে, পুর্নমুদ্রণ ১৪০৩ চৈত্র। পৃষ্ঠা: ৮।

ব্রত কথা

দেবাশিস মণ্ডল

ব্রত কথাটির প্রতিজ্ঞা, চর্চা বা সাধনা অর্থে ব্যবহার করা হয়, তবে সাধারণভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে কোনো বিশেষ লোকাচার উদযাপনকেই প্রচলিত অর্থে ব্রত বলা হয় । বাংলায় ঘরে ঘরে অনেক রকমের ব্রত বা সামাজিক অনুষ্ঠানের রীতি বহুকাল ধরে প্রচলিত রয়েছে। ভারতের সর্বত্রই নানা ধরনের ব্রত উদযাপন করা হয়ে থাকে। যদিও সেখানে ব্রত শব্দটি সেভাবে প্রচলিত নয়। বাংলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। তাদের মধ্যেও অনেকে অনেক রকমের রীতিনীতি মা ধর্মাচরণ করে থাকেন। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেও নানা রকমের ধর্মাচরণ লক্ষ্য করা যায়। সেখানে তারা নিজেদের মতো করে নিয়ম পালন করে। কেউ সারাদিন না খেয়ে, রান্না করা খাবার না খেয়ে, ফলমূল খেয়ে, কিংবা শরবত জাতীয় পানীয় খেয়ে সারাদিন ধরে নানা নিয়ম পালন করে ব্রত উদযাপন করে থাকে। বিভিন্ন ব্রত পালনে এক এক রকমের বিধি নিষেধ রয়েছে। কিছু ব্রত আছে যেগুলি ঘরের ভেতরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিছু ব্রত আছে যেগুলি বাড়ির বাইরে, উঠোনে কিংবা পুকুর ঘাটে গিয়ে উদযাপন করা হয়। ব্রত সম্পর্কে বিণয় ঘোষ লিখেছেন, মানুষের কামনার অনুষ্ঠান হল ‘ব্রত। কামনা ছাড়া মানুষ নেই, মানুষ ছাড়া কামনা নেই। বনবাসী নিষ্কাম সন্ন্যাসীরও কামনা আছে, ঐশি শক্তিলাভ ও ঈশ্বর দর্শনের কামনা। এই কামনা পূর্ণ করার জন্য সন্ন্যাসীকেও ব্রত করতে হয় এবং তার সাধনা ও সাধনপদ্ধতি হল তার ব্রত। মানুষই একমাত্র জীব যার কামনা আছে, আর কোনো জীবের কামনা নেই। মানুষের কামনা আছে বলেই সেই কামনা চরিতার্থ করার নানারকম কৌশলের কথা মানুষকে চিন্তা করতে হয়েছে, বিশেষ করে সেই সমস্ত কামনা যা সহজে ইচ্ছামতো পূর্ণ করা যায় না’।[১]  প্রাগৈতিহাসিক প্রস্তর যুগ থেকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পারমাণবিক যুগ পর্যন্ত লক্ষাধিক বছরের মানব সভ্যতার ইতিহাস হল এই কৌশল উদ্ভাবন চিন্তাধারার ইতিহাস। মানব বিজ্ঞানীরা সাধারণত এই চিন্তাধারাকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করে থাকেন। একটি প্রাক্‌বৈজ্ঞানিক চিন্তা, যাকে ঐন্দ্রজালিক চিন্তা বলা হয়, আর-একটি বৈজ্ঞানিক চিন্তা। সাম্প্রতিক কালে কয়েকজন বিখ্যাত মানব বিজ্ঞানী মানব চিন্তার রৈখিক ক্ৰমবিকাশ এবং তার এরকম পবিভাগ অযৌক্তিক বলে প্রতিপন্ন করেছেন। অবনীন্দ্রনাথ অবশ ‘বাংলার ব্রত’ অনুষ্ঠানের পর্যালোচনা করেছেন মানব চিন্তার এই ক্রমাে্ত পর্ববিভাগ মেনে নিয়ে, কিন্তু সে-বিষয় পরে আলােচ্য। বিশ্ময়কর হল ব্রত সম্বন্ধে অবনীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানসম্মত আলােচনা। যেমন প্রথর তার ইতিহাসবােধ, তেমনি প্রকৃত মানববিজ্ঞানীর মতাে তার সজাগ বিশ্লেষণধর্মী বুদ্ধি ও মন। শিল্পী ও বিজ্ঞানীর আশ্চর্য মিলন হয়েছে তার মধ্যে।  

বেশ কিছু ব্রত আছে যেগুলি বহুকাল ধরে চলে আসা ধর্মাচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত। আবার বেশ কিছু ব্রত রয়েছে যেগুলি লৌকিক ভাবেই চলে এসেছে দীর্ঘকাল ধরে। পাশাপাশি অবস্থান করতে গিয়ে অনেক আদিবাসী বা অন্যান্য সমাজের কিছু সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়ম নীতি, আচরণ,  ব্রত ইত্যাদি আরেক সমাজের মধ্যে প্রবেশ করেছে। কালে কালে তা তাদের নিজেদের ধর্মাচরণের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে কোন অসুবিধা হয়নি।

বিভিন্ন প্রার্থনা ও কামনার সঙ্গে সম্পর্কিত এইসব ব্রত দীর্ঘকাল ধরে লালিত ও পালিত হয়ে আসছে। কখনো শস্য উৎপাদনের কামনায়, কৃষি কাজে বৃষ্টির জলের জন্য ও পানীয় জলের জন্য, প্রচন্ড গরমের সময় পুকুরের জল যাতে না শুকিয়ে যায়, বিভিন্ন মহামারী যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, পারিবারিক ও সামাজিক সুখ সমৃদ্ধি কামনায়, পুত্রের কামনায়, ধন-সম্পদের কামনায়, গবাদিপশুর কামনায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবার জন্য এছাড়াও আরও অনেক রকমের উদ্দেশ্য নিয়ে এই ধরনের ব্রত গলি উদ্‌যাপিত হয়ে আসছে।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেও এরকম নানা ব্রত পালন করা হয়। সূর্য চন্দ্র অগ্নি ইত্যাদি দেবতার কাছে নিজেদের কামনা বাসনার কথা উত্থাপন করা বা পৌঁছে দেওয়াই এসব ব্রতের একটা বড়ো দিক। এর জন্য বিভিন্ন ধরনের কৃচ্ছসাধন, ভক্তি সহকারে নিবেদন, ফলমূল ইত্যাদি নানা ধরনের উপকরণ দিয়ে দেবতাদের সন্তুষ্ট রাখার পরিকল্পনা বা আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেগুলি শ্রদ্ধার সাথে বহুকাল ধরে বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হয়ে আসছে।

কিছু ব্রত আছে যেগুলি প্রায় প্রতি মাসেই পালিত হয়ে থাকে যেমন একাদশী ব্রত, মা লক্ষ্মীর ব্রত, মঙ্গলচন্ডীর ব্রত, শুক্রবারে সংকটার ব্রত, মঙ্গল সংক্রান্তি ব্রত, এয়োঁ সংক্রান্তির ব্রত, মধু সংক্রান্তির ব্রত, নিত্য সিঁদুর ব্রত, সন্ধ্যামণির ব্রত, নখ ছুট এর ব্রত, ষোল কলা ব্রত,  মৌনী অমাবস্যা ব্রত, বারোমেসে অমাবস্যা ব্রত ইত্যাদি।

সাধারণভাবে এইসব ব্রত বিভিন্ন বয়সের মেয়েরা উদযাপন করে থাকে। বেশ কিছু ব্রত রয়েছে যেগুলি কুমারী মেয়েরা উদযাপন করে, কিছু ব্রত উদযাপন করে বিবাহিতা মেয়েরা, আবার বেশ কিছু ব্রত রয়েছে যেখানে মেয়েদের সঙ্গে পুরুষরাও অংশগ্রহণ করে। কুমারী মেয়েদের জন্য যে ব্রতগুলি রয়েছে সেগুলি হল শিবব্রত, পুণ্যিপুকুর ব্রত,  দশপুতুল ব্রত, হরির চরণ, অসত্থ পাতা, গোকুল ব্রত,  পৃথিবী ব্রত,  জম পুকুর ব্রত, কুলকুলোতি ব্রত,  সেঁজুতি ব্রত, তুঁস তুসলি ব্রত ইত্যাদি। অনেক ব্রত সধবা মেয়েরা উদ্‌যাপন করে থাকে।  এর মধ্যে রয়েছে এঁয়ো সংক্রান্তি ব্রত, ফল গোছানো ব্রত, গুপ্ত বন, মধু সংক্রান্তি ব্রত, নিত্য সিঁদুর, মধু সংক্রান্তি ব্রত ইত্যাদি। বেশকিছু ব্রত রয়েছে যেগুলি পারিবারিকভাবে উদযাপিত হয় পরিবারের সামগ্রিক মঙ্গলকামনায়। এগুলির মধ্যে রয়েছে ভাদ্র মাসের লক্ষ্মী পুজো পৌষ মাসের লক্ষ্মী পুজো কার্তিক মাসের লক্ষ্মী পূজা কোজাগরী লক্ষ্মী ব্রত ইত্যাদি।

অনেক রকম ষষ্ঠী পূজার প্রচলন রয়েছে যেগুলোকে ষষ্ঠী ব্রত বলা হয়। যেমন অরণ্য ষষ্ঠী, লোটন ষষ্ঠী, চাপড়া ষষ্ঠী, দুর্গা ষষ্ঠী, মূলা ষষ্ঠী, পাটাই ষষ্ঠী, শীতলা ষষ্ঠী, অশোক ষষ্ঠ্‌ নীল ষষ্ঠী ইত্যাদি। আর রয়েছে বিভিন্ন রকম চন্ডী দেবতার ব্রত। যেমন জয় মঙ্গলচন্ডীর ব্রত, বারোমেসে মঙ্গল চন্ডী, হরিশ মঙ্গল চন্ডী ব্রত, জয় মঙ্গলচন্ডীর ব্রত, সুয়ো দুয়োর ব্রত, সংকট মঙ্গলবার এর সংকট মঙ্গল চন্ডী ব্রত, নাটাইচন্ডী ব্রত ইত্যাদি।

বাংলায় যে ব্রতগুলি উদ্‌যাপন করা হয় সেই ব্রত উদযাপন এর গুরুত্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা করার জন্য নানারকম কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। এই কাহিনীগুলির মধ্যে রয়েছে কোন দেবতা দেবী কিভাবে সন্তুষ্ট হতে পারেন বা তিনি কোন ধরনের উপকার করতে পারেন। কোন একটি দেব বা দেবী সবরকমের সহযোগিতা করতে পারেন না বা করেন না। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বা বিভিন্ন রকম প্রার্থনা বা প্রয়োজনে আলাদাভাবে দেবতার ব্রত উদযাপন করতে হয়। যেমন মঙ্গলচন্ডীর ব্রত করলে যে ফল পাওয়া যাবে সেটা মনসার ব্রত করলে হবে না। মনসা ব্রথের জন্য যে ফল পাওয়া যায় তা শিবব্রত তে হয় না। এবং প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা উপকার বা সহযোগিতার জন্য পৃথক পৃথক ব্রত উদযাপন করার রীতি বাংলার বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে প্রচলিত রয়েছে। অবশ্য সবাই যে সব রকমের ব্রত উদযাপন করেন এমন নয় তবে নিজের বিশ্বাস এবং প্রয়োজনের সঙ্গে মিলিয়ে এবং বিভিন্ন অঞ্চলের প্রচারিত বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে সেখানকার নর-নারীরা তাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য বা সমৃদ্ধির জন্য পৃথক পৃথকভাবে ব্রত উদযাপন করেন।

অশোক ষষ্ঠী ব্রত

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার ব্রত প্রবন্ধে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন বাংলার প্রচলিত ব্রতগুলির সঙ্গে নেকক্ষেত্রে শাস্ত্রের যোগ রয়েছে। আবার বেশ কিছু ব্রত রয়েছে যেগুলি শাস্ত্র বহির্ভূত। অবনীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘আমাদের দেশে দু-রকমের ব্রত চলিত রয়েছে দেখা যায়। কতকগুলি শাস্ত্রীয় ব্রত, আর কতকগুলি শাস্ত্রে যাকে বলেছে যোষিৎপ্রচলিত বা মেয়েলি ব্রত।  মেয়েলি ব্রতেরও দুটো ভাগ; একপ্রস্থ ব্রত কুমারী ব্রত-পাঁচ-ছয় থেকে আট-নয় বছরের মেয়েরা এগুলি করে, আর বাকিগুলি নারী ব্রত-বড়ো মেয়েরা বিয়ের পর থেকে এগুলি করতে আরম্ভ করে। এই শাস্ত্রীয় বা পৌরাণিক ব্রত যেগুলি হিন্দুধর্মের সঙ্গে এদেশে প্রচার লাভ করেছে, এবং দুই-থাকে বিভক্ত এই মেয়েলি ব্রত যার অনুষ্ঠানগুলি খঁটিয়ে দেখলে পুরাণেরও পূর্বেকার বলে বোধ হয় এবং যার মধ্যে হিন্দু পূর্ব ও হিন্দু এই দুই ধর্মের একটা ইতিহাস গড়তে পারি, এই দুই প্রস্থ ব্রতের গঠনের ভিন্নতা বেশ স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়’।[২]

অবনীন্দ্রনাথ এইসব ব্রতকে যেভাবে ভাগ করেছেন তার রূপরেখা নীচে দেওয়া হল।

ব্রত

মেয়েলি ব্রত      শাস্ত্রীয় ব্রত               

কুমারী ব্রত              এঁয়োতি ব্রত

এঁয়োতি ব্রতর মধ্যে শাস্ত্রীয় প্রসঙ্গ থাকতে পারে, কিন্তু কুমারী ব্রতর সঙ্গে শাস্ত্রের যোগ সেভাবে লক্ষ করা যায় না। বিভিন্ন বারে যে ব্রত হয় তাকে বার ব্রত বলে। যেমন বৃহস্পতিবারকে লক্ষী বার বলা হয়। প্রতি সপ্তাহে লক্ষীর ব্রত উদ্‌যাপন করার রীতি অনেকে মেনে চলেন। আছে শিবের ব্রত। প্রতি সোমবার অনেকে শিবের ব্রত করে থাকেন। শনিবার হল বড়ো ঠাকুরের বার। এদিন শনির ব্রত করা হয়। মঙ্গলবারে মঙ্গল চণ্ডীর ব্রত, বিশেষ করে যে মাসে শেষ দিন মঙ্গলবার সেই বারটি বিশেষ জাঁক-জমকপূর্ণভাবে এই ব্রত করা হয়। এরকম শুক্রবার সন্তোষী মা এর ব্রত। বুধবারেও কিছু ব্রত করার রীতি আছে। একটি ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, ‘একটা জিনিস লক্ষ্য করার মতো যে, প্রত্যেকদিন প্রত্যেক দেবতার পুজো হয় না। এক একটি বিশেষ দিনে এক এক দেবতার পুজো করা হয়। আপনারাও নিশ্চয়ই করেন? জানেন পূরাণ মতে আসলে সপ্তাহের কোন দিন কোন দেবতার পুজো করা উচিত্‌? রবিবার- রবিবার সূর্য দেবতার দিন। এই দিন সূর্যের পুজো করা হয়। যাঁরা এই দিনে উপবাস করেন, তাঁরা সূর্য ওঠার আগে খাবার খান আর সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে খাবার খান। সোমবার- সোমবারের মাহাত্ম আমাদের প্রত্যেকেরই জানা আছে। সোমবার মানেই শিবের বার। অর্থাত্‌ নির্দিষ্ট এই দিনে ভগবান শিবের পুজো করা হয়। মহাদেবকে তুষ্ট করতে অনেক পূণ্যার্থীই এই দিন উপবাস করে থাকেন। অবিবাহিত মেয়েরা বিশেষ করে এই দিন উপবাস করে ব্রত করেন, ভগবান শিবের মতো স্বামী পাওয়ার জন্য। মঙ্গলবার- মঙ্গলবার কোনও একজন দেবতার নয়, বেশ কয়েকজন দেবতার পুজো করা হয়। এই দিন সিদ্ধিদাতা গনেশ, মা কালী এবং ভগবান হনুমানের পুজো করা হয়। যাঁরা এই দিন ব্রত করেন, তাঁরা খাবারে নুন দেন না। নুন ছাড়া খাবার খান। বুধবার- এই দিনে ভগবান ভিথালের পুজো করা হয়। এই দেবতা ভগবান বিষ্ণুর আর এক রূপ। এই দিন অনেকেই নতুন কাজ শুরু করেন। বৃহস্পতিবার- বৃহস্পতিবার মানেই লক্ষ্মীবার। এই দিন মা লক্ষ্মীর পুজো করা হয়। ধন সম্পত্তি, অর্থ, প্রতিপত্তি, কারবারে শ্রী বৃদ্ধির জন্য বৃহস্পতিবারে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা শুরু করেন।

অরন্ধন ব্রতর উপকরণ

শুক্রবার- মঙ্গলবারের মতো শুক্রবারেও একাধিক দেবতার পুজো করা হয়। এই দিন দেবী মহালক্ষ্মী, মা সন্তোষী, মা দুর্গা এবং দেবী অন্নপূর্ণার পুজো করা হয়’। [৩] এখানে বাংলার বাইরের বিভিন্ন জায়গার পুজোর কথা বলা হয়েছে। আর পুজো ও ব্রতর মধ্যে একটা পার্থক্যও রয়েছে। পুজো করা হয় একেবারে শাস্ত্র মেনে। তার জন্য নিয়মাবলী ও নির্ঘণ্ট নির্দিষ্ট। কিন্তু ব্রতে তা হয় না। মন্ত্র সব নিজেদের মতো। ছড়ায়, গানে, গল্পে। বাড়ির বা আশ-পাশের নানা সহজ লভ্য উপকরণ দিয়েই নৈবেদ্য সাজানো হয়।  বিভিন্ন পক্ষেও কিছু ব্রত আছে যেমন একাদশী, ষষ্ঠী, নবমী, অমাবস্যা, পূর্ণিমা তিথি পালন এত্যাদি।  

মাসের ব্রত চলে সারা মাস ধরে। বৈশাখ মাসে পূণ্যিপুকুর ব্রত।  ‘পুণ্যিপুকুর ব্রত বাংলার হিন্দুসমাজের অশাস্ত্রীয় বা মেয়েলি ব্রতগুলির অন্তর্গত একটি কুমারীব্রত। গ্রামীণ বাংলার বাঙালি হিন্দুঘরের পাঁচ থেকে নয় বছর বয়সী কুমারী মেয়েরা চৈত্র মাসের সংক্রান্তি থেকে বৈশাখ মাসের শেষদিন (সংক্রান্তি) পর্যন্ত একমাসব্যাপী এই ব্রত পালন করে। ব্রতের উদ্দেশ্য হল বৈশাখ মাসের খরায় যাতে পুকুর জলশূন্য না হয় অথবা গ্রীষ্মঋতুতে যেন গাছ না মরে এবং ফসল যেন ভাল হয়। ব্রতের ছড়ায় প্রকৃতির মঙ্গল কামনা ছাড়াও কুমারী নারীর সৌভাগ্য ও সন্তানলাভের কামনা পরিস্ফুট। [৪] এছাড়াও পৃথিবীর মঙ্গল কামনায় পৃথিবী ব্রত উদ্‌যাপন করা হয়। ‘পৃথিবী ব্রত বাংলার হিন্দুসমাজের অশাস্ত্রীয় বা মেয়েলি ব্রতগুলির অন্তর্গত একটি ব্রত। গ্রামীণ বাংলার বাঙালি হিন্দুঘরের কুমারী মেয়েরা চৈত্র মাসের সংক্রান্তি থেকে সারা বৈশাখ মাস ধরে একমাসব্যাপী এই ব্রত পালন করে। এটি চার বছর পরপর পালন করতে হয়। ব্রতের উদ্দেশ্য হল সাংসারিক অমঙ্গল দূরীকরণ’।[৫] এইসব ব্রত উদ্‌যাপনের সুফল সম্পর্কে নানা ধরণের লোক কাহিনী বা লোক কথা প্রচলিত রয়েছে। এইসব কাহিনীর মধ্যেই কীভাবে ব্রত উদ্‌যাপন করা হবে তার নিয়মাবলী উল্লেখ করা আছে। শেষে বলা হয়, যে ব্রত উদ্‌যাপন করে, যে ব্রত উদ্‌যাপনের মাহাত্ম বর্ণনা করে ও যে বা যারা এই কাহিনী শোনে তারা সবাই একই রকম ফল পায়। অর্থাত এই কাহিনীর মধ্যেই ব্রতর নিয়ম ও প্রচারের সমস্ত ব্যবস্থা থাকে। এমনকী লক্ষ্মীর পাঁচালী বা অন্য ব্রতর পাঁচালী যেগুলি পদ্যে রচিত সেখানেও এরকম দেখা যায়। যেমন আমরা এরকম দেখি মহাভারতেও ‘কাশিরাম দাস কহে শুনে পূণ্যবান’।  

১। http://www.mediafire.com/file/nsfjc328k4h6x2n/অবনীন্দ্রনাথ-বিনয়+ঘোষ.pdf/file

২। http://www.abanindranath.org/247624942434248224942480-2476250924802468.html   

৩। https://zeenews.india.com/bengali/lifestyle/know-which-day-of-the-week-is-dedicated-to-which-god_143279.html  

৪। চক্রবর্তী, ড. বরুণকুমার সম্পাদিত (১৯৯৫)। বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতিকোষ। কলকাতা: অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স। পৃষ্ঠা ২৪৩–২৪৪। আইএসবিএন 81-86036-13-Xhttps://bn.wikipedia.org/wiki/পুণ্যিপুকুর_ব্রত   

৫। বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ, দুলাল চৌধুরী, আকাদেমি অব ফোকলোর, কলকাতা: ৭০০০৯৪, প্রথম প্রকাশ:২০০৪, পৃষ্ঠা: ২৩৫ https://bn.wikipedia.org/wiki/wiki/পৃথিবী_ব্রত

লোকায়ত গানে কাজী নজরুল ইসলাম

 ড. মৌমিতা বৈরাগী

 সাধারণভাবে মানুষ বা লোকোমুখে যা প্রচলিত  বা প্রসারিত তাই হলো লোকায়ত।যেখানে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের লোক – ভাবনা প্রাধান্য পায়। নগর বা শহরের রুক্ষ বাস্তব ও যান্ত্রিক সভ্যতা থেকে অনেক দূরে, প্রকৃতির শ্যামল রূপের কোলে বেড়ে ওঠা মানব মনের অন্তস্থলের খুব সাধারন কথা এবং অতি সাদামাটা সুরে নিজের মনের ভাব প্রকাশের একটি অন্যতম মাধ্যম হলো লোকসংগীত। যার মাধ্যমে প্রকাশিত হয় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের  হাসি কান্না দুঃখ সুখ আনন্দ, মনের আবেগময় অনুভূতি। অন্যভাবে লোকসঙ্গীত হলো গ্রামীণ জনজীবনের অন্যতম এক বিনোদন। এই বাংলা নানা ধারার  লোকগানের  সম্ভারে সমৃদ্ধ। একদিকে যেমন পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ অঞ্চলের লোকগান, লালন সাঁইজি এবং অন্যান্য পদকর্তাদের গান আবার শ্রমজীবী মানুষের শ্রম লাঘবের গান, বিভিন্ন জাতি এবং উপজাতিদের উৎসবের গান – লোকগানের এত বৈচিত্র্য  আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ।

 কাজী নজরুল ইসলাম সাহেবের বিভিন্ন ধারার সংগীতের মধ্যে এক অন্যতম সৃষ্টি হল লোকায়ত সুরে তার গান।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া থানার অন্তর্গত পুরুলিয়া গ্রামের এক দরিদ্র কাজী পরিবারে কাজী নজরুল ইসলাম সাহেবের জন্ম। বর্ধমান জেলায়  জন্মগ্রহণ করলেও পারিপার্শ্বিক অবস্থা, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রভাব, পূর্ববঙ্গের লোকসংগীতের নান্দনিকতা কাজী সাহেবকে লোকসংগীত রচনায় প্রভাবিত করেছিল একথা বলা বাহুল। খুব ছোট বয়স থেকেই সৃষ্টির প্রেরণা তাকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। ‘আমরা দেখি লোকগানে নজরুলই প্রথম আদিবাসী গানের স্তর থেকে ঝুমুর ঢঙ ব্যবহার করে, বাংলা গানে ব্যতিক্রমী ধারা সৃষ্টি করেন। কয়লা খনির জীবন, নর নারীর ভালোবাসা, রাধাকৃষ্ণ প্রেমকথা, প্রাকৃতিক শোভা প্রভৃতি নানাবিধ বিষয়ে রচিত নজরুলের অসংখ্য গানে ঝুমুরের এই দোলা লাগানো সুর, আমাদের উদ্বেলিত করে। এই ধারার উল্লেখযোগ্য একটি গান ‘চুড়ির তালে নুড়ির মালা রিনিঝিনি বাজে লো।’ নজরুলের ভাওয়াইয়া গান সম্পর্কে  ভাওয়াইয়া সম্্রাট আব্বাস উদ্দীন বলেছেন, ‘নদীর নাম সই কচুয়া/ মাছ মারে মা মাছুয়া/ মই নারী দিচঙ ছ্যাকাপাড়া।’ এই ভাওয়াইয়া গানটি তাঁর কণ্ঠে শুনে নজরুল লেখেন, ‘নদীর নাম সই অঞ্জনা/নাচে তীরে খঞ্জনা/পাখী তো নয়/নাচে কালো আঁখি।’ নজরুল অসংখ্য পল্লী গান, ভাওয়াইয়া রচনা করেছেন’।[1]

 লোকায়ত সুরকে আশ্রয় করে কাজী নজরুল ইসলাম সাহেবের লোকধর্মী গান একান্তই তার মৌলিক রচনা, সুরের আশ্রয়ে কখনো ভাটিয়ালি কখনো বা ঝুমুর আবার কখনো বা ভাওয়াইয়া, লোকগানের ভিন্ন ভিন্ন ধারার সুর সম্মিলিত হয়েছে তার গানে।

 বিস্ময়কর প্রতিভা ও সাহিত্য সংগীতের নিপুন দক্ষতা নিয়ে  কাব্য সাধনার এক পর্যায়ের সংগীত সৃষ্টির কাছে ব্রতী হলেন কাজী নজরুল ইসলাম। নতুন কথা ও সুরের পরীক্ষার দ্বারা গড়ে তুললেন এক বিশিষ্ট ধারা, যার ভিত ছিল লোকসুর। সাংগীতিক কুশলতা ও বিষয়বস্তুর উপস্থাপনায় দিলেন এক নতুন রূপ। যা অনন্য এবং যেখানে কাজী নজরুল ইসলামের সাংগীতিক স্বকীয়তা এবং মৌলিকত্ব  তার সৃষ্টিকে সবসময় স্বতন্ত্র করে রেখেছে। আর এই জন্যই কাজী নজরুল ইসলাম সাহেবের লোকায়ত সুরের গান বাংলা  সাহিত্যের ইতিহাসে

 আলাদা করে স্থান করে নিয়েছে।

               কাজি সাহেবের প্রাথমিক পর্যায়ের রচিত গান হলো  লেটো গান, এই গানের মধ্যে দিয়েই বালক কবির স্বভাব কবিত্বের স্বতঃস্ফূর্ততা প্রথম প্রকাশিত হয়। লেটো হল রাঢ় অঞ্চলের পালাধর্মী লোকগান। গ্রামের উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই এই পালার রস আস্বাদন করতে আসতেন তাই একে মিশ্র সংস্কৃতির একটি আকর্ষণীয় গীত এবং নৃত্য বহুল জনপ্রিয় শিল্প শৈলী বলা যায়। ‘মকতব, মাযার ও মসজিদ-জীবনের পর নজরুল  রাঢ় বাংলার (পশ্চিম বাংলার বর্ধমান-বীরভূম অঞ্চল) কবিতা, গান আর নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক  লোকনাট্য লেটোদলে যোগদান করেন। ঐসব লোকনাট্যের দলে বালক নজরুল ছিলেন একাধারে  পালাগান রচয়িতা ও অভিনেতা। নজরুলের কবি ও শিল্পী জীবনের শুরু এ লেটোদল থেকেই। হিন্দু পুরাণের সঙ্গে নজরুলের পরিচয়ও লেটোদল থেকেই শুরু হয়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবে কবিতা ও গান রচনার কৌশল নজরুল  লেটো বা কবিগানের দলেই রপ্ত করেন। এ সময় লেটোদলের জন্য কিশোর কবি নজরুলের সৃষ্টি চাষার সঙ, শকুনিবধ, রাজা যুধিষ্ঠিরের সঙ, দাতা কর্ণ, আকবর বাদশাহ, কবি কালিদাস, বিদ্যাভূতুম, রাজপুত্রের সঙ, বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ, মেঘনাদ বধ প্রভৃতি’।[2]

 কাজী সাহেব বাল্যকাল থেকেই এই লেটো দলের খুদে মাস্টার থেকেছেন লোক জীবনের অন্দরমহলে। এই লেটো প্রসঙ্গে কবি রচিত একটি বন্দনা গীতি বিশেষভাবে উল্লেখ্য, যে গানটি কিশোর কবি আকর্ষণীয় পোশাক পরিধান করে আসরে উপস্থিত শ্রোতাদের সামনে পরিবেশন করতেন—

‘সর্ব প্রথম বন্দনা গাই, তোমারী ওগো বারি তালা।
তার পরে দরুদ পড়ি মোহাম্মদ সাল্লে আলা॥
সকল পীর আর দেবতা কুলে,
সকল গুরুর চরণ মুলে,
সালাম জানাই হস্ত তুলে,
দোওয়া কর তোমরা সবে, হয় যেন গো মুখ উজলা॥ …..’[3]

 আবার কখনো গাইতেন —-

‘বুঝলাম নাথ এতদিনে, যুবকের ছলনা হে।

কোথা শিখিলে এ প্রণয়, আমারে বল না হে॥

তোমার হিয়া কঠিন অতি,

জান না শ্যাম প্রেমের রীতি,

তাই নিভালে প্রণয় বাতি, আর বাতি জ্বলে না হে॥ …’[4]

 আবার কখনো আসরে প্রতিপক্ষকে বিব্রত করার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছিলেন ইংরেজী -বাংলা মিশ্রিত লেটো গান —-

 ‘ওহে ছড়াদার , ওহে  that পাল্লাদার

    মস্ত বড় Mad

    চেহারাটাও Monkey Like

    দেখতে ভেরি Cad…’

 শুধুমাত্র ইংরেজি বাংলায় নয়  নিজ রচনায় উর্দু ফারসি শব্দ মিশিয়েও চিত্তাকর্ষক করে তুলেছেন লেটো গানকে –

     ‘ Monkey লড়বে বাবরকা সাথ

       ইয়ে বড় তাজ্জব কি বাত

       জানে না ও ছোট হলেও

       হামভি Lion Lad…’

 কাজী সাহেব পশ্চিমবাংলার মানুষ হলেও তার বাউন্ডুলে জীবন তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল পূর্ববঙ্গের নদীর স্রোতে। নদীমাতৃক দেশ পূর্ববঙ্গের প্রধান লোকসংগীত ভাটিয়ালির সুরে বাংলা গান রচনার কাজে ব্রতী হয়ে তিনি রচনা করেছেন বহু ভাটিয়ালি পর্যায়ের গান–

  ‘ আমার গহীন জলের নদী…’

   ‘পদ্মার ঢেউরে – মোর শূন্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা রে…’

      ‘গাঙের জোয়ার এলো ফিরে, তুমি এলে কই…’

       ‘এ কূল ভাঙ্গে ও কূল গড়ে এইতো নদীর খেলা…’ উল্লেখিত এই গানগুলো ছাড়া আরও ভাটিয়ালি পর্যায়ের গান বাংলা গানের ইতিহাসকে  সমৃদ্ধ করেছে।

   লোকসংগীত শিল্পী আব্বাসউদ্দিন সাহেবের কন্ঠে একটি প্রচলিত ভাওয়াইয়া গান শুনে অনুপ্রাণিত হয়ে কাজী সাহেব রচনা করেন ভাওয়াইয়া পর্যায়ের গান —-

  ‘ নদীর নাম সই অঞ্জনা, নাচে তীরে খঞ্জনা…. ‘

 ‘ পদ্মা দিঘির ধারে ধারে ওই…’

 বাংলা লোকসংগীতের পাশাপাশি আরেকটি ধারা বাংলা গানকে  সমৃদ্ধ করেছে তা হলো বাংলার বাউল। কাজী সাহেব বাংলা দর্শনের আদর্শে বাউল সুরের রেশ রেখে প্রয়োজন মত তাতে কিছু রাগ সঙ্গীতের সুর মিশিয়ে  রচনা করেছেন বাউলধর্মী গান। নিজের সৃজনী ক্ষমতার স্বাক্ষর রেখে যে গানের রস ও রূপ  আমাদের টেনে নিয়ে গেছে সেই মেঠো পথে –

  ‘ আমি বাউল হলাম ধুলির পথে

   লয়ে তোমার নাম…’

   ‘ আমি ভাই ক্ষ্যাপা বাউল আমার দেউল

   আমারি এই আপন দেহ…’

 আবার বাউল ধর্মী গানের পাশাপাশি দরবেশীধর্মী গানের রচনার সন্ধান মেলে, যেমন –

   ‘ চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়

 আজকে যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়…’

‘ আহার দেবেন তিনি  ও মন জিভ দিয়েছেন যিনি

 তোরে সৃষ্টি করে তোরি কাছে আছেন তিনি ঋণী  ‘

 চুরুলিয়ার অনতি দূরে সাঁওতাল পরগণা মাড়গ্রামের আদিবাসীদের মাদলের ছন্দে গ্রথিত মহুয়ার নেশা ভরা ঝুমুরের সুর কাজী সাহেবের

 লেখনির মাধ্যমে স্থান পায় বাংলা গানে, যেমন–

 ‘চুরির তালে নুড়ির মালা রিনিঝিনি বাজে… ( লো )

‘এই রাঙ্গামাটির পথে লো মাদল বাজে, বাজে বাঁশের বাঁশি…’

‘ গিরি মাটির দেশে গো নাই যদি আর ফিরি…’

‘ হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল…’                                         

 এছাড়াও  বেদে-বেদেনীর গান, সাপুড়ে, জিপসি, ঝাপান গানের  বিষয় বস্তু নিয়েও কাজী সাহেব গান রচনা করেছেন।

 আরো অনেক লোক আঙ্গিকের গান যেমন বিড়ি বাঁধানিদের গান, ছাদ পেটানোর গান, বিয়ের গান, ব্রত কথার গান, ঘুম পাড়ানি গান  বেঁধেছেন একের পর এক।

 ইসলামী গান রচনা করে কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি মুসলিমদের মুখের কথা ও অন্তরের ভাবনাকে প্রকাশ করেছেন বাংলা গানের আধুনিক সময়ে –

‘ ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ…’

 এই গান রচনার মধ্য দিয়ে কাজী সাহেব তার ইসলামী গান রচনার যাত্রা শুরু করলেন। এছাড়াও মারফতি গান–

‘ আল্লাহ নামের বীজ বুনেছি…’

এই রচনার মাধ্যমে  কবি মুসলিম জনজাতির সাংস্কৃতিক বুনিয়াদ গড়ে দিয়ে এক লোকজীবনের ঐতিহ্য তৈরি করে গেছেন। তাই লৌকিক জীবন – সংস্কৃতি ও ইসলামী ঐতিহ্যের অনুরণনে কাজী সাহেবের ইসলামী গান অনন্য ও অমলিন।

 অবশেষে বলতেই হয় সমস্ত জনগোষ্ঠী বা লোকজীবনের মুখের কথা ও অন্তরের ভাবনাকে সাহিত্য ও সংগীতে এক অদ্ভুত মুন্সিয়ানায় প্রয়োগ করতে পেরেছিলেন বলেই  কাজী নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে   সাধারণ মানুষের অনেক কাছাকাছি এবং অন্তরের অন্তঃস্থলে  বিরাজমান। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যতদিন ‘সৃষ্টি’ র প্রতি মানুষের আকর্ষণ এবং আনুগত্য থাকবে ততদিন কাজী সাহেবের সৃষ্টি কালজয়ী হয়ে থাকবে।

 ভীষণ রকম ভাবে বিস্মৃত হই খুব অল্প সময়ের মধ্য দিয়ে তার সৃষ্টিতে এত বৈচিত্র রেখে গেছেন, আমার মনে হয় এক বর্ণময় চরিত্রের অধিকারী ছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।

তথ্যসূত্র


[1] https://www.kalchitro.net/literature-culture/article/2577

[2] https://bn.banglapedia.org/index.php/ইসলাম,_কাজী_নজরুল  

[3] https://poetnazrul.com/index.php?r=site/lyrics_det&id=2839

[4] https://poetnazrul.com/index.php?r=site/lyrics_det&id=2888

Mudras of YOGA & Dance

 

NrityaChuramani  Rahul Dev Mondal

( Exponent Of BharatNatyam & Yoga / Assistant Professor , Rabindra Bharati University , Department of Dance ) 

A mudrā (muːˈdra; “seal”, “mark”, or “gesture”) is a symbolic or ritual gesture performed by the hands, often used in practicing Hinduism and Buddhism; it is a spiritual gesture that acts as an “energetic seal of authenticity”.  Most mudras are performed with the hands and fingers often in combination with movements of the wrists, elbows, and shoulders; some involve the entire body. Hundreds of mudras are used in the ceremonies, dance, sculpture and painting iconography (i.e. representations of Buddha).  In the yoga and spiritual practices, of Indian religions and traditions such as Dharma and Taoism, mudras have been used for thousands of years to assist in meditation and/or healing.

In yoga, mudrās are hand gestures used in conjunction with pranayama (yogic breathing exercises), and are generally done while seated in Padmasana, Sukhasana or Vajrasana pose.  Mudras act to stimulate different parts of the body involved with breathing and to affect the flow of energy in the body and even one’s mood.  The specific hand gestures and positions act as “locks” to guide energy flows and reflexes to the brain. By curling, crossing, stretching and touching the fingers and hands, we can manipulate the mind body connection as each area of the hand corresponds to a certain part of the mind or body.

On a more spiritual level, practicing specific mudras is an outward representation of one’s inward intentions. There are many different mudras and it is said that meditating on a specific mudra will help manifest certain hopes, energies, or devotions into your life. Mudras are a way to concretely see what we want to be, what we need most. When your hands come into a mudra, it allows a physical connection with an intangible wish.

Like any other Indian, the announcement of the International Yoga Day on 21st June piqued my interest. So, I researched books on Yoga and came across the ‘Hand Yoga’ aka ‘Yoga Mudras’.  And it dawned on me that I have practiced Hand Yoga throughout my childhood. It was a trip down memory lane when I had professionally learned Bharatnatyam. It amazed me to find that the ‘Hastas’/ ‘Mudras’ used in Bharatnatyam are very similar to the ‘Yoga Mudras’’.

Yoga states that the fingers of our hand represent the ‘Pancha Mahabhutas’ or the 5 elements. Touching one finger with others in different combinations creates circuits in our body through which energy flows. Such a flow of energy allows the body to gain better circulation of blood, indirectly formulating long-term health benefits. Different ‘Hastas’ are used to also communicate specific ideas, events, actions, or creatures. The basic Mudras which are common to all Indian Classical Dances were originally used by the Devdasis who performed in temples for entertainment of the Gods and Goddesses.

The book “Mudras: Yoga in Your Hands” by Gertrud Hirsch explicates the relation between hand positions and health. It reveals that the hands bring into use certain regions of the brain and thus, have an effect on them. In Hath Yoga, the thumb is considered symbolic of cosmos while the index finger stands for the individual consciousness. Yoga is directed towards bringing together and uniting individual to the cosmic consciousness. The adjacent mudra stands for this union.

While the birth of mudras is shrouded in mystery, the role of mudras in religious activities of India is recorded prominently with the use of hand poses to represent qualities of deities. In the words of Ingrid Ramm-Bonwitt, “With his or her hands, the Indian dancer expresses the life of the universe”. This gives testimony to the integral role of hath mudras in Indian dance forms. Here is a stream of hand yoga mudras representing the relation between hand movement and bodily health:

Hamsasya hasta

The ‘Hamsasya hasta’ in Classical Dance represents the shape of a ‘Swan’ and is also similar to ‘Gyan mudra’ in Yoga which increases the memory power, enhances concentration and prevents insomnia.

Trishula Hasta

The ‘Trishula Hasta’ depicting ‘Trishula/ Trident’ matches with ‘Varun Mudra’ which is claimed to balance the water content in body and prevent pain due to inflammation or shrinkage of muscles.

Mayura Hasta

The ‘Mayura Hasta’ symbolizing ‘Peacock’ resembles ‘Prithvi Mudra’ that improves the complexion of skin and helps to increase weight.

Simhamukha Hasta

The ‘Simhamukha Hasta’ typifying a ‘lion head’ is similar to the ‘Apana Mudra’ which regulates diabetes and helps to cure constipation and piles.

Kartarimukha Hasta

The ‘Kartarimukha Hasta’ represents ‘Scissors’ and tallys with the ‘Prana Mudra’. It removes vitamin deficiency and fatigue, improves immunity and power of eyes and reduces eye related diseases. 

‘Mudras’ or ‘healthy hastas’ are a small aspect of the Indian classical dances. Other than that these dances improve our body posture, increase our flexibility, improve our body balance, give us a grace and importantly teach us discipline. Moreover, it gives you seven different options to choose from – viz. Bharatnatyam, Kuchipudi, Odissi, Kathak, Kathakali, Mohiniattam  Manipuri and Satriya .

                   Your body is like a mini world, which consists of five elements or components Vayu (Air), Agni (Fire), Jala (Water), Bhumi (Earth), and Akasha (Aether). When any of these elements is disturbed, you can experience some imbalance in your mind and it can also make you suffer illnesses. While you can restore your body using physical postures, various yoga poses can assist you to balance all your body elements. That’s where Mudras come in. Hasta Mudras are hand gestures that assist in guiding energy flow to particular parts of your brain. Mudras come in different types, and each type has different benefits—but this depends on what you especially need. Mudras are combined with breathing in order to increase Prana flow in your body.Practicing various Mudras during yoga practice develops a connection with the brain patterns that affect the unconscious

reflexes in different parts of your body. Furthermore, the Mudra balances and redirects your internal energy, and this influences your tendons, glands veins, and sensory organs.

Yoga Mudras are great for personal growth and they can be done in a yoga retreat, meditation retreats or even at home. The good thing about yoga Mudras is that they only require hand gesture, which means that there is not much physical activity involved.

Bibliography :

  • Sastri Gourinath – Abhinaya Darpan
  • Das Nilmoni – Byam O Sastho – Iron Man Publishing House
  • Vivekananda Swami  – Patanjali Yoga Sutra – Vijay Goel( Publisher )

********************************************************************