January 1, 2015

ভারতে বয়স্ক শিক্ষার ইতিহাস

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

১৯৭৭ সাল থেকে বয়স্ক শিক্ষাশক্তি মন্ডল

ষষ্ঠ পরিকল্পনায় সকল নাগরিকের ন্যূনতম শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। এই শিক্ষার সুযোগ-সৃষ্টির জন্য নমনীয়তা, বিভাগগুলির মধ্যে সহযোগিতা এবং সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করা হয়। পড়া ও গণিতের বিস্তৃত করা এবং মনুষের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দের জন্য ব্যবহারিক দক্ষতা বিকাশ করার ব্যাপারে প্রযুক্তিকে মুখ্য হাতিয়ার হিসাবে ভাবা হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল, প্রাথমিক সাক্ষরতার পরবর্তী ধাপগুলি হবে। সাক্ষরোত্তর চর্চা এবং গ্রামীন পাঠাগারের সুবিস্তৃত ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে ধারাবাহিক শিক্ষাক্রম এর সঙ্গে গণসংযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে, বিশেষত কক্ষপথে উপগ্রহ স্থাপনের পর নির্দেশিত পাঠক্রমেরও আয়োজন করা হবে।

আগের পরিকল্পনাগুলিতে চালু বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচিকে এই পরিকল্পনায় আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হয়। ন্যূনতম প্রয়োজনীয় কমসূচির অন্তর্গত বুনিয়াদী শিক্ষার অংশ হিসাবে বয়স্ক শিক্ষাকে অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ ও কর্ম বিনিয়োগ সংস্থার সহায়তায় রূপায়ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর ২০ দফা কর্মসূচির  মধ্যেও এটি স্থান লাভ করে। কর্মসূচির মধ্যে মহিলা, তপশিলী জাতি, উপজাতি, কৃষি-মজুর, বস্তিবাসি প্রভৃতি সমাজের দুর্বলতর অংশগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি, যারা ইতিমধ্যেই সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, তাদের এই ক্ষেত্রে যুক্ত করা হয়। ষষ্ঠ পরিকল্পনায় বয়স্ক শিক্ষাকে কী বিরাট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় সরকারী অর্থ বরাদ্দর মধ্য দিয়েও। পঞ্চম পরিকল্পনায় বরাদ্দকৃত ১৮ কোটি টাকার জায়গায় এই পরিকল্পনায় বয়স্ক শিক্ষাখাতে বরাদ্দ হয় ২০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনায় কৃষি ও গ্রামীন উন্নয়নের মধ্যে সংস্থান রাখা হয় কৃষকদের জন্য ব্যবহারিক সাক্ষরতা কর্মসূচিরও।

বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জনসাধারণের নিজেদের সম্পর্কে ও তাদের চারপাশের সামাজিক বাস্তবতা সম্পর্কে চেতনার বিকাশ। নাগরিকতা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা, সাংস্কৃতিক কাজকর্ম, দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রভৃতি ছিল শিক্ষণীয় বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। 

জাতীয় ব্যাঙ্ক শিক্ষা কার্যক্রম বছরের মধ্যে ১৫০ কোটি প্রাপ্ত বয়স্কের মধ্যে বয়স্ক  শিক্ষাকে প্রসারিত করার লক্ষ্য নিয়ে এক অতি উচ্চাশাপূর্ণ ও বৈপ্লবিক কার্যক্রম জাতীয় বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয় ১৯৭৮ সালের ২রা অক্টোবর। সামাজিক ন্যায় য় সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের সক্ষম নাগরিকদের সংখ্যা গরিষ্ঠ অংশ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের জন্য সদর্থক ভূমিকা পালন করবেন।

দেশজোড়া কার্যক্রমের মধ্যে এই আশা পোষন করা হয়েছিল। উন্নয়ন কার্যক্রমে ব্যাপক জনগনের সক্রিয়তাকে বাড়ানোও ছিল এই কার্যক্রমের অন্যতম আশা। জাতীয় বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমের (National Adult Education Programme) মূল উপাদান তিনটি। সচেতনতা, সক্ষমতা ও সাক্ষরতা। এর মধ্যে কোন ক্রম বা অগ্রাধিকার ছিল না। কোন কোন ক্ষেত্রে সচেতনতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। আবার কোথাও সক্ষমতাকে গণ্য করা হয়েছিল অন্যান্য উপাদানগুলিকে কার্যকর করার পূর্বশর্ত হিসাবে। শিক্ষার্থীরা যেসব সমস্যার মধ্যে বাস করেন, সেগুলি দূর করার জন্য এব্যাপারে সচেতনতা দরকার। দেশের প্রচলিত আইন, প্রদত্ত অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কেও তাদের জানা দরকার। তাছাড়া, তাদের জীবনের বিচিত্র সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য তারা কোথায় কি ধরনের সহায়তা পাবেন, সে সম্পর্কেও তাদের সচেতন করা এই কার্যক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।

সক্ষমতা ছিল এই কার্যক্রমের এক অপরিহার্য অঙ্গ। শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনে ও কর্মে যেন আরও ভালভাবে সক্রিয় হতে পারেন, তা ছিল একান্তভাবে কাম্য। অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষদের নতুন অবস্থায় খাপ খাওয়ানো, স্বাস্থ্যের যত্ন, পরিবার কল্যাণ প্রভৃতিও ছিল সক্ষমতার অন্তর্ভূক্ত। সাক্ষরতার উপর জোর দেওয়া হলেও বয়স্ক শিক্ষা ছিল

১। শিক্ষার্থীদের পরিবেশ ও প্রয়োজনের সাথে প্রাসঙ্গিক।

২। কাল পর্ব, সময়, স্থান, শিক্ষা-ব্যবস্থা প্রভৃতি ব্যাপারে নমনীয়।

৩। শিক্ষাক্রম, শিক্ষা-উপকরণ, পদ্ধতি ক্ষেত্রে প্রয়োজনানুগ ও বৈচিত্রপূর্ণ।

৪। যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা সমন্বিত। এই কার্যক্রমে যে ধরনের কাজের সুপারিশ করা হয়েছে, তা হল

১। সুনিশ্চিত অনুবর্তী কার্যক্রম সহ সাক্ষরতা।

২। প্রচলিত ব্যবহারিক সাক্ষরতা।

৩। বিশেষভাবে উন্নয়নমূলক কর্মসূচির সহায়তা পুষ্ট ব্যবহারিক সাক্ষরতা।

৪। শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রয়োগকারী দলের সাথে সংযুক্ত সাক্ষরতা।

৫। বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ার লক্ষ্যে সাক্ষরতা এবং গরীবদের সংগঠন গড়ে তোলা।

কোঠারী পর্যালোচনা কমিটি :

জাতীয় ব্যাস্ত শিক্ষা কার্যক্রমের কাজকর্ম পর্যালোচনা এবং আরও ভালভাবে রূপায়ণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের সুপারিশ করার জন্য ১৯৭১ সালের অক্টোবরে ডঃ ডি এস কোঠারীর সভাপতিত্বে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি বয়স্ক শিক্ষার প্রতি অবহেলার বিষয় সম্পর্কে মন্তব্য করার সময় ১৯৫০ সাল থেকে শিক্ষার বিভিন্ন বিভাগে আর্থিক বরাদ্দের নিম্নোক্ত চিত্রটি তুলে ধরে।

পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনার ব্যয়
শিক্ষার বিভাগপ্রথমদ্বিতীয়তৃতীয়চতুর্থপঞ্চম
উচ্চ শিক্ষা১৪.০ (৯,৭)৪৮.০ (১৯.৪)৮৭.০ (১৬.৮)৬৩৫.২ (১৩.৯)১৪৬৮.২ (১৫.২)
কারিগরি শিক্ষা২০.০ (১৩.৯)৪৯.০ (১৯.৮)১২৫.০ (২৪.১)২৬১.৯ (৫.৮)৪৪৩.৪ (৪.৬)
মাধ্যমিক শিক্ষা২০.০ (১৩.৯)৫১.০ (২০.৭)১০৩.০ (১৯.৯)১৪৮৭.১ (৩২.৬)৩১২৭.৭ (৩২.৪)
প্রাথমিক শিক্ষা৮৫.০ (৫৯.০)৯৫.০ (৩৮.৫)২০১.০ (৩৮.৮)২১৬৮.১ (৪৭.৬)৪৫৮১.৯ (৪৭.৫)
বয়স্ক শিক্ষা৫.০ (৩.৫)৪.০ (১.৬)২.০ (০.৪)৫.৯ (০.১)৩২.৬ (০.৩)
      

(১) প্রথম বন্ধনীর মধ্যে মোট বরাদ্দের শতাংশ উল্লিখিত হয়েছে।

(২) প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কেবল পরিকল্পনা-খাতে বরাদ্দের উল্লেখ আছে। কিন্তু চতুর্থ ও পঞ্চম পরিকল্পনার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ও পরিকল্পনা-বহির্ভূত উভয় খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে।

দেখা যাচ্ছে যে শিক্ষার অন্যান্য বিভাগগুলিতে বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। কিন্তু বয়স্ক শিক্ষা বিভাগটি বঞ্চিতই থেকে গেছে।

জাতীয় বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমের সাফল্য ও ঘাটতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে কোঠারী কমিটি মন্তব্য করে, “এই কার্যক্রমটিকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে একটি এলাকায় সম্ভাবনা, প্রশিক্ষক হিসাবে কর্মী পাওয়ার সুযোগ, এদের প্রশিক্ষণ, আর্থিক সংস্থান প্রভৃতি দিকগুলি সম্পর্কে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয় নি।”

শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি সম্পর্কে কমিটি উল্লেখ করে যে, “এই কার্যক্রম শুরুর আগে বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল ৬,৭৫,০০০ জন। কার্যক্রমটিরপ্রস্তুতি বর্ষে অনুমিত ১৫,০০,০০০ জনের জায়াগায় শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভূক্তি দাড়িয়েছে ২১,৭১,০০ (প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি)। ১৯৭৯-৮০ সালে এটা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ লক্ষ।

এর মধ্যে ৭০ শতাংশই আসে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত অংশ থেকে ৩৫.৮% মহিলা জাড়ি এবং ১৫.১% তপশীলি উপজাতি সম্প্রদায়ভূক্ত।” কোঠারী কমিটি পর্যালোচনান্তে নিম্নোক্ত সাধারণ সিদ্ধান্তে আসে। “এ পর্যন্ত কার্যক্রমটি মূলত সীমাবদ্ধ থেকেছে সাক্ষরতার ভেতরেই। …এমনকি সাক্ষরতার বিষয়টিও যতখানি কার্যকর হওয়া সম্ভব, তা হতে পারেনি।…এই কর্মসূচির উন্নয়নমুখীনতা থেকেছে উপর উপর এবং সক্ষমতা বা কার্যকারীতার দিকটি প্রায় অনুপস্থিত। সচেতনতার অর্থ এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে কর্মীদের ধারণা সাধারণভাবে অস্পষ্ট হয়ে থেকেছে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে কার্যক্রিয়াটি যথেষ্ট পরিমাণে নমনীয় বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বিকেন্দ্রীকৃত হতে পারেনি।”

কমিটির মতে শিক্ষার্থীদের বহুমুখী আগ্রহ ও প্রয়োজনের দিকে যথাযথ লক্ষ্য রেখেই শিক্ষোপকরণগুলি তৈরী করা হয়েছে। “বয়স্ক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রমের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে ক্রমেই বেশি করে গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে কর্মক্ষেত্রে এর যথার্থ প্রয়োগের দিকে আরও নজর দিতে হবে। এ এক সম্পূর্ণ নতুন ক্ষেত্র। কাজেই এক্ষেত্রে বিস্তৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।”

কমিটি আরও বলে যে, সামাজিক সমন্বয়ের অঙ্গনে বয়স্ক শিক্ষা শিক্ষিত ও নিরক্ষরদের মধ্যে মিলন ঘটায়। যদি কার্যক্রমটিকে একটি যৌথ শিক্ষণ-প্রক্রিয়া হিসাবে দেখা হয়, তবে প্রত্যেকেই অন্যের কাছ থেকে শিখতে পারে। কিন্তু এই কার্যক্রমের কর্মীদের মধ্যে এবিষয়ে কোন চেতনা নেই বললেই চলে। ফলে শিক্ষাকেন্দ্রের মধ্যে এর খারাপ প্রতিফলন ঘটেছে।”

সুপারিশ সমূহ :

সবদিক বিবেচনার পর পর্যালোচনা কমিটি— সুপারিশ করে যে, “বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ১৫-৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। এই কার্যক্রমের জন্য যে উত্তাপ সঞ্চারিত হয়েছে, তাকে কোনক্রমেই দুর্বল হতে দেওয়া যাবেনা। জাতীয় বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমকে চালিয়ে যেতে হবে।

কার্যক্রমটির আমূল সংস্কার করা ও শক্তিশালী করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। যে সব পদক্ষেপ নেবার জন্য কমিটি সুপারিশ করে, তার অন্তর্গত হল একটি স্বশাসিত জাতীয় বয়স্ক শিক্ষা পর্যদ গঠন, কার্যক্রমের বিষয়বস্তুকে আরও বিস্তৃত ও গভীর করা, শিক্ষণ-কালকে বাড়ানো, সর্বস্তরে এর পরিকল্পনা ও প্রয়োগ, তদারকি মূল্যায়ন ও গবেষণাকে উন্নত করা।

কোঠারী কমিটির অধিকাংশ সুপারিশকেই সরকার গ্রহণ করে এবং ষষ্ঠ পরিকল্পনাতে (১৯৮০-৮৫) নিম্নোক্ত কর্মনীতি গৃহীত হয়। (ক) সাক্ষরতার ক্ষেত্রে জাতীয় হারের নিচে থাকা জেলাগুলি, মহিলা, তপশীল জাতি, উপজাতি, দূরাগত মজুর এবং সমাজের দুর্বল অংশের অন্যান্য মানুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া। (খ) প্রধানমন্ত্রীর ২০ দফা কর্মসূচি অনুসারে বয়স্ক শিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের আরও বেশি সংখ্যায় যুক্ত করা। (গ) আর্থিক সহায়তা দানের মাধ্যেমে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে এই কাজে যুক্ত করা।

(ঘ) সদ্য-সাক্ষররা যেন আবার নিরক্ষর না হয়ে পড়েন, এজন্য সাক্ষরোত্তর কার্যক্রমকে জোরদার করা।(3) শিক্ষার প্রতি প্রণোদনা-সৃষ্টির জন্য বৈদ্যুতিন মাধ্যম এবং লোক-সংস্কৃতির মাধ্যমকে ব্যবহার। ব্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রমের ছিল তিনটি পর্যায়। এইগুলি হল নিম্নরূপ

পর্যায়-১ :

সময় সীমা প্রায় ৩০০-৩৫০ ঘণ্টা। প্রাথমিক সাক্ষরতা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার উপর গুরুত্ব সহ সাধারন শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের জীবিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সক্ষমতা এবং তাদের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন আইন-কানুন ও রীতিসমূহ ছিল শিক্ষার্থীদের শিক্ষণীয় বিষয়ের অন্তর্গত।

পর্যায়-২:

এই পর্যায়ের সময় সীমা প্রায় ১৫০ ঘণ্টা। সাক্ষরতার দৃঢ়করণ, দৈনন্দিন জীবনে এর ব্যবহার, সঙ্গে সঙ্গে নিজস্ব পরিবেশে বিজ্ঞান, ভারতের বিস্তৃত ও বিচিত্র সংস্কৃতির পরিচয় সহ প্রাথমিক ভূগোল ও বিজ্ঞান প্রভৃতি সম্পর্কে শিক্ষার প্রসার ছিল এই পর্যায়ের লক্ষ্য। বৃত্তিমূলক দক্ষতাকে আরো বাড়ানো এবং গ্রামীণ শিল্প, গো-পালন, মুরগী পালন, শূকর চায় প্রভৃতির মাধ্যমে কিছুটা বাড়তি আয়ের প্রচেষ্টাও এই পর্যায়ে হবার কথা। আলোচনা-চক্র গড়ে তোলা ও উন্নয়নের ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে উদ্যোগী হবার জন্যও অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ দেওয়া হত।

পর্যায়-৩ :

সময়-সীমা প্রায় ১০০ ঘণ্টা। এই পর্যায়ের লক্ষ্য হল স্বনির্ভর সাক্ষরতা ও সক্ষমতার একটি যুক্তিসম্মত স্তরে শিক্ষার্থীদের আনা এবং বিজ্ঞানের বিস্তৃতি ও মূল্য সম্পর্কে তাদের আরও ভাল উপলব্ধি। শিক্ষার্থীরা যেন ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যাগুলি সম্পর্কে আরও ভালভাবে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন এবং উন্নতির জন্য সংগঠিত উদ্যোগ নিতে পারেন, তাও এই পর্যায়ে দেখার কথা।

রূপায়ণ কার্যক্রমের বর্তমান সময় পর্বে যে সব কর্মসূচি রূপায়িত হয়, তা হল

(১) ব্যবহারিক সাক্ষরতা প্রকল্প  (RFLP)

১৯৭৮ সালে কৃষকদের ব্যবহারিক সাক্ষরতা সংক্রান্ত দুটি প্রকল্প কিছ সাড়া যোজনা এবং ১৫-২৫ বছর বয়সীদের জন্য বিমুক্ত শিক্ষা একসঙ্গে মিশে যায় এবং এর নামকরণ হয় গ্রামীণ ব্যবহারিক সাক্ষরতা । এই ধরনের প্রকল্পের সংখ্যা ৪৫২ টি। ১৯৮৪-র ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে চালু কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৭১ হাজানা। এতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৩.৯ লাখ।

(২) রাজ্য বয়স্ক শিক্ষা (SAEP):

১৯৮৪ সালের শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পের অধীন ৬৫ হাজার সংখ্যা ছিল ১৯.৩ লাখ।

(৩) ছাত্র ও যুবকদের মাধ্যমে বয়স্ক শিক্ষা :  কেন্দ্রে, শিক্ষাণীর ২০ দফা কর্মসূচি অনুসারে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলিতে বয়স্ক শিক্ষার কাজে যুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। দুটি ধাপে এই কাজ করার পরিকল্পনা হয় (১) ১৯৮৫ সালে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম ধাপ এবং (২)১৯৯০ সালে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপ। প্রথম ধাপে সমস্ত অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় ও ১,৫০০ মহাবিদ্যালয়কে যুক্ত করে ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ শিক্ষাকেন্দ্র খোলা হয়। দ্বিতীয় ধাপে কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রায় ৫০,০০০ করার কথা।

এই কাজের অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল যে সব ছেলেমেয়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় না, তাদেরও প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয় বা বিমুক্ত শিক্ষা কেন্দ্রে ভর্তির ব্যাপারে সাহায্য করা। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের চার দেওয়ালের বাইরে এই সম্প্রসারণমূলক কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল, আমাদের দেশের ব্যাপক সংখ্যক সাধারণ নারী-পুরুষ কোন অবস্থায় বাস করেন, সে সম্পর্কে যেন ছাত্র-ছাত্রীরা আরও স্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে পারেন।

অবশ্য সম্প্রসারণের কাজটিকে তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে সফল করতে হলে একে শিক্ষণ ও গবেষণার মতই সমান মর্যাদা দিতে হবে। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের সামগ্রিক মূল্যায়নের সময় সম্প্রসারণমূলক কাজে তাদের অবদানকেও বিশেষভাবে বিচার করতে

(8) নেহরু যুব কেন্দ্রঃ

যারা ছাত্র নায়, এমন যুবক-যুবতীদের বয়স্ক শিক্ষার কাজে অংশগ্রহণের জন্য নেহরু যুব কেন্দ্রকে এই কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা হয়েছে। ১৯৮৪ সালে জাতীয় সেবা স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে বয়স্ক শিক্ষার কাজ করার জন্য ২৩০টি নেহরু যুব কেন্দ্রকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

এই যুব কেন্দ্রগুলি প্রায় ২,৫০০ শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে ৭০ হাজার শিক্ষার্থীকে লেখাপড়ার জন্য সংগঠিত করে। নেহরু যুব কেন্দ্র কর্তৃক সংগঠিত চেতনা-সংঘগুলি বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। এই সংঘগুনি সচেতনতার উপর গুরুত্ব দিয়ে বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রের কাজ পরিচালনা করে।

(৫) নারীদের জন্য বিমুক্ত শিক্ষা :

বয়স্ক শিক্ষা আন্দোলন বরাবরই নারী-শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে, কেননা সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মেয়েদের ভূমিকা সর্বাধিক। সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মসূচীতে এরা সাফল্য অর্জন করতে পারেন, সামাজিক, অর্থনৈতিক মানের উন্নতি ঘটাতে পারেন, পরিবার পরিকল্পনা, শিশু বিকাশ ও প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতিতে সহায়তা করতে পারেন। এজন্য ইউনিসেফের (UNICEF) সাথে যৌথভাবে নারীদের জন্য বিমুক্ত শিক্ষার বিশেষ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। সাধারণভাবে পারিবারিক জীবনের শিক্ষা এবং বিশেষভাবে মা ও শিশুর যত্ন – এই শিক্ষা উদ্দেশ্য।

(৬) শ্রমিক বিদ্যাপীঠ:

১৯৬৭ সালে বোম্বাইতে একটি শ্রমিক বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, একথা আগেই বলা হয়েছে। সংগঠিত ও অসংগঠিত শহরের ও শিল্পের শ্রমিকদের ধারাবাহিক বিমুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা এই বিদ্যাপীঠগুলির কাজ। বড় শিল্প শহরগুলিতে মোট ৪০টি শ্রমিক বিদ্যাপীঠ আছে। ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যাপীঠগুলি ২,৫০০টি কর্মসূচি রূপায়িত করে, যাতে প্রায় ৬৩,০০০ জন শ্রমিক ও তাদের পরিবার উপকৃত হয়।

(৭) শ্রমিক শিক্ষার কেন্দ্রীয় পর্যদ :

সেই সমস্ত নির্বাচিত শিল্প, খনি ও বাগিচাতে এই স্বশাসিত পর্যদ, শ্রমন্ত্রকের অর্থানুকূল্যে ৪৩টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের ব্যবহারিক সাক্ষরতার কাজ করে চলছে, যেখানে নিরক্ষরতার হার খুব বেশি। পর্যদের পরিচালনায় দিনে এক ঘন্টা হিসাবে সপ্তাহে পাঁচ দিন করে ছয়মাস ব্যাপী নিয়মিত ক্লাস করা হয়।

১৯৭১ সালের অক্টোবর থেকে পর্যদ চালু করে পারিবারিক বয়স্ক সাক্ষরতা কর্মসূচি। ১৯৮৬ সালে এই কর্মসূচিতে ৬০০ টি ক্লাস সংগঠিত হয়।

(৮) বয়স্কা নারীদের জন্য ব্যবহারিক সাক্ষরতাঃ

গ্রাম ও শহরের মেয়েদের মধ্যে সাক্ষরতার দক্ষতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সুসংহত শিশু বিকাশ কর্মসূচির (ICDS) অধীনে ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারী বর্ষে এই তার্যক্রমটি চালু করা হয়। ১৯৮৪ সালে ৭৮০০ টি এলাকাতে ব্যবহারিক সাক্ষরতার কাজটি সম্প্রসারিত হয়। এতে উপকৃত হয় প্রায় চার লক্ষ বয়স্কা নারী।

(৯) সাক্ষরোত্তর ও অনুসারী কর্মসূচি :

১৯৮৪-৮৫ সালে যে সব ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, যেসব জায়গায় বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচি সমাপ্ত হয়েছে, সেখানে সাক্ষরোত্তর অনুসারী কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা। এর প্রয়োজনীয়তা শুধু পুনরায় নিরক্ষরতায় ফিরে যাওয়াকে রোধ করাই নয়, শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভরতার এবং ধারবাহিক শিক্ষার স্তরে আনাও।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির মাধ্যমে বয়স্ক শিক্ষা : স্বাধীন ভারতে বয়স্ত শিক্ষার প্রসারে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বারবার উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে রাজ্য পর্যায়ে সরকারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির মধ্যেকার সম্পর্ক এই কাজের পক্ষে সুখকর নয়। অর্থ মঞ্জুর ও প্রদানের ব্যাপারে নানা গড়িমসির মধ্যে ১৯৮৪-৮৫ সালে ৫০০ টিরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ২৬,৫৪৫ টি শিক্ষাকেন্দ্র চালায়। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৫.৭২ কেটি টাকা। প্রকৃত অর্থে বয়স্ক শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি পালন করতে পারে।

বহুমুখী ভূমিকা। তবে এসবের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সহায়ক হিসাবে কাজ করা এবং শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা। গরীব মানুষদের সংগঠিত করার কাজেও তারা সাহায্য করতে পারে।

বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি

নীচের সারনি থেকে দেখা যাবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ব্যাস্ত শিক্ষার শিক্ষার্থী হিসাবে কতজন তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। দেখা যাবে কি পরিমাণ কাজ আমাদের সামনে আছে, যা শত্রু, কিন্তু অসম্ভব নয়। সকলে মিলে উদ্যোগী হয়ে ১৯৯০ সালের মধ্যে ১৫-৩৫ বছর ব্যাস্ত ১০ কোটি মানুষকে সাক্ষর করে তোলার লক্ষ্য পূরণ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভূক্তি (লক্ষে)
সালশিক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যামোট শিক্ষার্থীর সংখ্যাপুরুষনারীতপশীলী জাতিতপশীলী উপজাতি
১৯৮০-৮১৯২,১০৫২৫.৯১৫.৯ (৬১.৪৩)১০.০ (৩৮.৫৭)২৬.২ (২৪.০১)০৪.৫ (১৭.৩)
১৯৮১-৮২১,০৯,২৩৮৩১.০১৮.৩ (৫৯.৪৩)১২.৭ (৪০.৮৩)০৮.৪ (২৭.১৫)০৫.৭ (১৮.৪৯)
১৯৮২-৮৩১,৫০,৮৪৯৪৩.৬২৫.৮ (৫৯.১৪)১৭.৮ (৪০.৮৬)১১.৭ (২৬.৭৫)০৭.৯ (১৮.১৩)
১৯৮৩-৮৪১,৭৬,১০৭৫১.৫২৭.৯ (৫৪.১৯)২৩.৬ (৪৫.৮১)১৩.৬ (২৬.৬২)০৮.৫ (১৬
১৯৮৪-৮৫১,৮৬,৫১০৫৫.৩২৬.৪ (৪৭.৭৭)২৮.৯ (৫২.২৩)১৫.৪ (২৭.৪৮)০৮.৮ (১৫.৯১)

দৃঢ়বদ্ধ প্রচেষ্টা :

উপরের তথ্য থেকে এটা দেখা যাচ্ছে যে, যদি আমাদের কৌশলে কিছুটা যায়, তাহলে আমরা নির্ধারিত লক্ষ্য পৌঁছতে পারি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির উপর বিশ্বাস স্থাপন, ছাত্র ও যুবদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়া, তৃণমূল স্তরের সংগঠন ও পরিচালনায় প্রত্যক্ষভাবে মেরেদের যুক্ত করা প্রভৃতির মাধ্যমে এটি করা   সম্ভব। ১৯৮৫ সালে বৈদেশিক বিভাগের প্রাক্তন রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীমতী লক্ষ্মী মেননকে সভানেত্রী এবং ডঃ সুশীলা নায়ার-কে সহ-সভানেত্রী করে মেয়েদের মূল সংগঠন গুলির যৌথ মোর্চা হিসাবে মহিলাদের মধ্যে নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য সারা ভারত কমিটি গঠন এই দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ভারতীয় বয়স্ক শিক্ষা সমিতিও সাক্ষরতার জন্য জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গঠনের কথা ঘোষণা করে। এর কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয় জাতীয় স্তরের সমস্ত,  মহিলা, শ্রমিক, তপশীলি জাতি ও উপজাতি সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে।

সপ্তম পরিকল্পনায় বয়স্ক শিক্ষাকে এক গণ-কর্মসূচি হিসাবে রূপ দেবার সর্বাত্মক প্রচেষ্ট নেওয়া হয়েছে। একটি লুচিন্তিত সাক্ষরতা অভিযানের মধ্যে শিক্ষিত নারী পুরষদের সমবেত করে নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের এক গণ উদ্যোগ গড়ে তোলার সংকল্প ঘোষিত হয়েছে। শ্রমিকদের মধ্যে সাক্ষরতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সংগঠিত ও আধা সংগঠিত শিল্পের মালিকদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেবার কথা বলা হয়েছে। পারিবারিক হস্ত শিল্প এবং প্রথাগত শিল্পে নিযুক্তনের জন্য বিশেষ সাক্ষরতার শিক্ষাক্রম ভাবা হয়েছে।

গণ-সাক্ষরতা অভিযানে সমাজের নানা স্তরের মানুষদের সহায়তা ও প্রতিভাকে কাজে লাগানো দরকার। প্রবীণ নাগরিক, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, গৃহবধু, প্রাক্তন  চাকুরীজীবী, মাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের এই কাজে যুক্ত করতে হবে।

১৯৮৬ সালের ১লা মে চালু করা হয় ব্যবহারিক সাক্ষরতার গণ কর্মসূচি। এটি দুলাগ জাতীয় সেবা প্রকল্পের (NSS) অন্তর্গত এবং এক লাখ সেবা প্রকল্পের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় স্তরের ছাত্র-ছাত্রীর জন্য প্রণীত। নিজেদের সুবিধামত এরা গ্রীষ্মাবকাশে প্রতিবেশী দু জন থেকে পাঁচজন পর্যন্ত বয়স্ক নিরক্ষরকে শেখাবেন। প্রায় ১৫০ ঘন্টা শিক্ষার মধ্য দিয়ে নির্ধারিত মানে পৌঁছানো যাবে। আরও ছোট শিক্ষার্থীদের দলকে একে অপরকে শেখাও’ (Each one teach one) ধরনে শেখানো যাবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য সম্পদ কেন্দ্রগুলি (SRC) বিনামূল্যে পড়া লেখার সরঞ্জাম সরবরাহ করবে।

প্রস্তাব করা হয়েছে যে শিক্ষার্থীদের স্থানীয় হস্তশিল্প প্রভৃতি দক্ষতা শেখানোর মাধ্যমেও উদ্বুদ্ধ করা হোক। বৈদ্যুতিন ও লোক-সংস্কৃতির মাধ্যমগুলিকেও প্রণোদনা জনশিক্ষা প্রসঙ্গে ও শিক্ষণের কাজে ব্যবহারের কথা।

মেয়েদের এবং তপশীলী জাতি ও উপজাতিভুক্ত মানুষদের জন্য বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যাপারটিকে উচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এই অগ্রাধিকার অব্যাহত রাখা দরকার। নব-সাক্ষরদের অর্জিত সাক্ষরতার ব্যবহারকে অব্যাহত রাখা ও তাকে জোরদার করার জন্য গ্রামীণ ধারাবাহিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলিকে যোগান দেওয়া হবে তাদের উপযোগী সংবাদপত্র ও পুস্তক-পুস্তিকা।

এই সঙ্গে, কর্মসূচিটির রূপায়ণ প্রসঙ্গে কোঠারী কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে, তাও মেনে চলতে হবে। বয়স্ক শিক্ষার নীতি নির্ধারক, পরিচালক ও রূপায়ণকারীদের জ্ঞাতার্থে কমিটির নিন্মোক্ত অংশটি উদ্ধৃত করা হল-

“আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত নতুন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার সম্ভাবনাপূর্ণ— এমন একটি বিশাল কাজকে এই প্রথম হাতে নেওয়া হয়েছে, যা প্রচলিত সামাজিক ও আর্থিক স্থিতিকে বদলে দেবার ক্ষমতা রাখে। এটি এমন একটি কার্যক্রম, যাকে শিক্ষার সুযোগের গণতন্ত্রীকরণ, সামাজিক শক্তির সমাবেশ ও জাতীয় উন্নয়নের দৃঢ় এক পদক্ষেপ হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। এই কার্যক্রমকে সফল করে তোলা কঠিন, কিন্তু আবশ্যিক, কেননা, ঢিলেঢালাভাবে একে রূপায়ণের চেষ্টা হলে তা সৃষ্টি করবে হতাশা এবং বাধা পাবে অগ্রগতি। সাফল্যের শর্ত হচ্ছে দৃঢ় এবং নিরন্তর রাজনৈতিক ঐকান্তিকতা, কার্যক্রমটিকে একটি জাতীয় আন্দোলনের রূপ দেওয়া, গরীব মানুষদের জীবন মানের উন্নয়নের সাথে একে যুক্ত করা, শিক্ষিত মানুষজন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলিকে এর অংশীদার করা, কার্যক্রমটির গুণগত মানবৃদ্ধির জন্য প্রাপ্ত সেবা-প্রতিভাগুলিকে কাজে লাগানো, একটি দক্ষ বিকেন্দ্রীকৃত পরিচালন-ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ সহায়তা। আগামী দিনে কার্যক্রমটিকে বেগবান করার ক্ষেত্রে এগুলিই হবে ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু।”