September 23, 2019

The Artistry of Kolkata Tabla Makers: A Harmonious Blend of Tradition and Craftsmanship

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Biswajit Bhattacharjee

Abstract:

Kolkata, a prominent center for tabla manufacturing in India, has distinguished itself with a unique approach to crafting this revered percussion instrument. The tablas produced in Kolkata, known for their exceptional sound quality, are crafted from heavy wood, setting them apart from those made in Mumbai, Delhi, and Varanasi. The use of dense wood is believed to enhance the resonant sound of the Kolkata tabla. Notable features include smaller heads and a preference for heavier wood compared to other regions like Jaipur. The skilled artisans in Kolkata contribute significantly to the melodious and clear tones produced by the tabla and baya. The meticulous craftsmanship, particularly in the intricate black gab work on the tabla, adds an aesthetic dimension to the instrument. The success of Kolkata’s tabla makers is attributed not only to superior raw materials but also to the artisans’ exceptional artistic skills, combining technical prowess and musical understanding.

Regarded as one of the world’s finest percussion instruments, the tabla holds a special place in Indian classical music. Kolkata, with its unparalleled tabla craftsmen, boasts a legacy deeply rooted in history. The instrument, composed of two single-headed small drums – the tabla and baya, is an integral part of South Asian classical music. The complex art of playing these drums involves intricate rhythms, tabla, sap, and ornamentation. The rich tradition of tabla making in Kolkata dates back centuries, flourishing during the time of Wajid Ali Shah or even earlier. Despite the passage of time and changes in musical styles, Kolkata’s tabla makers have preserved the essence of their craft. Notable figures like Zakir Hossain, Alla Rakha, and Keramtullah have become legends, their work immortalized in books, records, cassettes, and other forms of media. This article sheds light on the continuing legacy of Kolkata’s tabla artisans, focusing on one such master craftsman, Mukto Das. Mukto Das, like many others, exemplifies the dedication and innovation that has allowed Kolkata’s tabla makers to remain at the forefront of their craft, catering to the diverse needs and styles of tabla players.

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য

কলকাতা কয়েক বছর ধরে ভারতে তবলা তৈরির অন্যতম প্রধান স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে মুম্বাই, দিল্লি বারাণসীতে তৈরি তবলার তুলনায় এখানকার তবলা ভারি কাঠের যা কলকাতার তবলাকে আরও ভাল শব্দ উত্পাদন করতে সাহায্য করেছে  বলে মনে করা হয় জয়পুর বা অন্যান্য রাজ্যের থেকে কলকাতার তবলাগুলির মাথা ছোট থাকে এবং ভারি কাঠ দিয়ে তৈরি হয় এখানকার কারিগরদের অসাধারণ দক্ষতা নিপুণতায় তবলা বাঁয়ার থেকে উৎপন্ন ধ্বনি সুমধুর অনুরণন যুক্ত হয়ে থাকে তবলা বাঁয়া থেকে যে বোল বানী উৎপাদন হয় সেগুলিও খুব স্পষ্ট মিষ্টি শোনায় তবলার উপরে কালো রঙের গাবের কাজও অসাধারণ

কলকাতা সংলগ্ন অঞ্চল থেকে তবলা প্রস্তুতকারকরা কেবলমাত্র উন্নত মানের কাঁচামালের জন্যই সাফল্য লাভ করে এমন নয় তাদের শৈল্পিক দক্ষতাও অসাধারণ  গুনসমৃদ্ধ সুরের সম্বন্ধে উপযুক্ত শিক্ষা ধারণা না থাকলে উন্নত বাদ্যযন্ত্র নির্মান সম্ভব নয় এক্ষেত্রে এইসব অঞ্চলের কারিগরদের সাফল্যের মূল কারণ তাদের পণ্যের উচ্চমান যা কারিগরী শৈল্পিক উভয় গুনেই সমৃদ্ধ 

তবলা, বিশ্বের অন্যতম সেরা চর্মবাদ্য যন্ত্র হিসাবে বিবেচিত  ভারতের সবচেয়ে অবিচ্ছেদ্য এবং জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রগুলির মধ্যে তবলা বাঁয়া খুব ভালভাবে নিজের জায়গা তৈরি করেছে এক জোড়া ছোট চামড়ার ছাউনির ড্রামের সমন্বয়ে এই তবলা বাদ্য যন্ত্র গঠিত হয়  যেটি দক্ষিণ এশিয়ার ধ্রুপদী সংগীত এবং অন্যন্য সংগীতের ঐতিহ্যবাহী বাদন শৈলীর অন্যতম প্রধান উপাদান কলকাতায় এদেশের সেরা তবলা কারিগররা রয়েছেন তবলা যন্ত্রটিতে দুটি এককমাথাযুক্ত ছোট ড্রাম রয়েছে যা আকারে আয়তনে আলাদা ছোটটি তবলা বা ডাঁয়া  এবং বড়টি বাঁয়া এই দুটি মিলিয়েই তবলা বাদ্যযন্ত্র  এগুলি বাজানোর পদ্ধতি রীতিমতো জটিল, এবং এর জন্য ধারাবাহিক দীর্ঘ চর্চার প্রয়োজন রয়েছে  এই দুটি বাদ্যযন্ত্রে নানা ধরণের রিদ্‌ম তবলা সপ আর অলঙ্কার মিলিয়ে অপূর্ব সৌন্দর্য রচিত হয় বাঁ হাতে বাঁয়া আর ডান হাতে তবলা বা ডাঁয়া বাজানোর সময় হাতের আঙ্গুলগুলি নিপুনভাবে তবলার নানা ওজনের নানা স্থানে আঘাতের ফলে অনেক রকমের বোলবানী রচিত হয়

তবলা ভারত উপমহাদেশের সর্বত্রই বহুল প্রচলিত জনপ্রিয় একটি বাদ্যযন্ত্র কলকাতায় কত কারিগর আছে যারা তবলা নির্মান করে সেই কবে তবলা এসেছিল কলকাতায় ওয়াজিদ আলি শাহ এর সময় বা তারও আগে সপ্তদশ বা অষ্টাদশ শতকে ঠুংরী গানে, বাঈজি নাচের আসরে, পরে কত্থক নাচ আর ঠুংরী গানের দরবারে উত্তরী ঢোল আর তবলা কে জানে সব কথা? আর যারা তবলা বাজাতেন তাদের কথা হয়তো অনেকেই জানে, কেউ কেউ পুরোনো কথা, পুরোনো দিনকে ধরে রেখেছে বইয়ের পাতায়, রেকর্ডে, ক্যাসেটে, সিনেমায়, গল্পের পাতায়, কবিতায়, গানে কিন্তু যাঁরা এই অসাধারণ যন্ত্রের কারিগর যারা এই যন্ত্রটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়, যেখানে বাদকের বা শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় কলতান গান হয়ে যায় সেই কারিগরেরা হারিয়ে যায় শুধু মনে থাকে জাকির হোসেনকে, আল্লা রাখা, কেরামতুল্লাদের  আমি এইসব কারিগরদের কাজ সামনে বসে দেখেছি কী অপূর্ব শৈল্পিক কৌশলে তারা প্রতিটি যন্ত্রকে অপরূপ করে তোলে এদের হাতের গুন ছাড়া জাকির প্রতিভা বিমুখ হতে পারত কলকাতার কারিগররা প্রতিযোগিতায় নিজেদের সামনের দিকে এগিয়ে রাখতে পেরেছে বহু বছর ধরে অনেক তবলা বাদক গ্রাহকদের প্রয়োজনকে এবং আলাদাভাবে বিভিন্ন বাদকের বাদন পদ্ধতি শৈলীকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলাদা রকমের তবলা নির্মান করে থাকেন  তবলা নির্মাতাদের মধ্যে এরকম একজনের কথা আমি লিখছি যার নাম মুক্তো দাস  

কলকাতার টালিগঞ্জে তার তবলার দোকানের নাম রিদ্‌ম তবলা সপ টালিগঞ্জে তার বাড়ি কর্মকেন্দ্র দোকানও টালিগঞ্জেই আগে বাড়ি ছিল নদিয়া জেলার রানাঘাটে সেখানে দোকান ছিল বাবার দোকান সেখানেই কাজ শিখেছিল মুক্তো  অসাধারণ তার তবলা অন্য অনেক কারিগরের থেকে স্বাতন্ত্র রয়েছে তার প্রতিটি কাজে কলকাতার বড়ো বড়ো শিল্পীরা সকলেই মুক্তোর হাতের তবলা পরিদ্‌ম তবলা সপ করেন  কলকাতার অনেককেই  মুক্তো দাস তবলা সরবরাহ করেছেন। যাঁদের মধ্যে পণ্ডিত শঙ্কর ঘোষ, পণ্ডিত অনিল ভট্টাচার্যের মতো কিংবদন্তি বাদকদেরাও রয়েছেন

মুক্তো দাস তবলার নির্মাতাদের একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান তার বাবার ঠাকুরদা সুরেন্দ্রনাথ দাস উচ্চ মানের তবলা তৈরি করতেন রানাঘাটে নিজ গ্রামে পাঁচ ভাই খুড়তুতো ভাইদের সাথে বাবার দোকানে কাজ করে তবলা তৈরির কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ১৯৮৬ সালে মুক্তো তবলা নির্মাতা নারায়ণ দাসের অধীনে প্রশিক্ষণ নিতে কলকাতায় চলে আসেন বংশানুক্রমে খ্যাতনামা তবলা নির্মাতা নারায়ণ দাস কয়েক প্রজন্ম ধরে তবলা নির্মান করে চলেছেন নারায়ন দাসের নাতি শ্যামল দাসও তাদের পুরাতন কর্মশালা বিক্রয় কেন্দ্রনারায়ণ বাদ্য ভাণ্ডারে তাদের তবলা তৈরি করেন বিক্রি করেন কলকাতার তার পূর্ব প্রজন্মের ধারা বেয়েই এইসব তবলা নির্মিত হয় মুক্তো এখানে কাজ শিখেছেন নারায়ণ দাসের তবলার দোকানে পনেরো বছর একনাগাড়ে কাজ করার পরে, অবশেষে কলকাতার বেহালা অঞ্চলে রিদ্‌ম তবলা সপনামে নিজের একটি দোকান খুললেন ১৯৯৯ সালে তিনি বিশ্বব্যাপী তবলা রফতানির লাইসেন্স পেয়েছিলেন উচ্চ মানের তবলার জন্য এর আগে থেকেই তার দোকান রিদ্‌ম তবলা সপবেশ সমৃদ্ধ হয়েছিল এক বছর পর থেকে মুক্তো, আই.টি.সি সংগীত রিসার্চ আকাদেমিতে তবলা সরবরাহ মেরামত করে চলেছেন পরে দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ এলাকায় একটি নতুন এবং আরও বড় দোকান নির্মাণ করেন

মুক্তো বুঝতে পেরেছিলেন, যে তবলা গুণগতমানের জন্য সাঙ্গীতিক বোধ উপকরণগুলি যথাযথ হওয়া খুবই দরকার এই কারণে, তবলার ছট তৈরির জন্য তিনি উটের চামড়া বেছে নেন এবং বলির জন্য উতসর্গকৃত ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেন ছাউনির চামড়ার জন্যে এই সব চামড়ায় কোন গাঁট থাকেনা চামড়াগুলি খুব মসৃণ হয় তা থেকে সুরেলা শব্দও সুমধুর হয় ছাউনির উপরে যখন গাব চড়িয়ে ঘসে ঘসে সুর আনবেন সে মুক্তোর মতোই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে কে তার প্রশংসা না করে সকলেই কলকাতার বাইরে থেকেও কত শিল্পী আসে মুক্তোর তবলা নিতে জাকির হোসেন, স্বপন চৌধুরী, কুমার বোস, গোবিন্দ বোস প্রমুখরা সবাই মুক্তোর তবলা পছন্দ করেন বিদেশেও যায় মুক্তোর তবলা যখন তখন ডাক আসে বিদেশ থেকে সেখানে যেতেও হয় মুক্তোকে একবারে ঢাল তলোয়ার নিয়ে যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল নিয়ে মুক্তো যায় আমেরিকায় ইউরোপে সেখানে থেকেই তবলা তৈরি করে

মুক্তা নিজেকে এই মুহূর্তে ভারতের অন্যতম প্রধান তবলা প্রস্তুতকারক হিসাবে  প্রতিষ্ঠিত করেছেন পন্ডিত স্বপন চৌধুরী, ওস্তাদ জাকির হুসেন, পন্ডিত অনিন্দ্য চ্যাটার্জী, পণ্ডিত কুমার বোস, পণ্ডিত সমর সাহা, পণ্ডিত সুরেশ তালোয়ারকার, এবং পণ্ডিত বিক্রম ঘোষের মতো তবলা বাদকদের তিনি তবলা সরবরাহ করেন তবলা শিল্পীরা যতই সুনাম অর্জন করুননা কেন, তাদের সব্বাইকে এখনো মুক্তোর কাছে বা ওই রকম নির্মাতাদের কাছেই আসতে হয় তাই আলোর জন্য যারা সলতে পাকিয়ে দেন, তেল দিয়ে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করেন, তাদের কখনোই উপেক্ষা করা চলেনা নাটকে অভিনেতাদের চেনে সবাই, কিন্তু নেপথ্যে যারা নাট্য মুহুর্তগুলিকে প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য প্রাণপাত করেন, তাদের শৈল্পিক দক্ষতাকে সামনে আনার বা স্বীকৃতি দেবার কী কোন প্রয়োজন অনুভব করতে পারিনা আমরা ?   

তথ্যসূত্র

১। https://theculturetrip.com/asia/india/articles/discover-the-tabla-kolkatas-signature-sound/

২। http://www.rhythmtablashop.com/about.html