September 1, 2024

The uniqueness of Dwijendralal’s song

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Dr. Srabani Sen, Associate Professor, Department of Music, Tarakeswar Degree College, e-mail-srabanisn1@gmail.com Mobile no- 6290242709

Dwijendralal Roy was a prominent figure in the realm of Bengali music and
literature. An eminent poet, lyricist, and composer Roy made significant
contributions to Bengali song with his inspiring and patriotic compositions.
In addition to his patriotic songs, he composed many devotional and
romantic songs, collectively known as Dwijendrageeti. These songs are still
sung today and are cherished for their lyrical beauty and melodic richness.

দ্বিজেন্দ্রলালের গানের অনন্যতা

রবীন্দ্র সমকালীন কবিদের মধ্যে যিনি কাব্যপ্রত্যয় ও কাব্য রীতির অভিনবত্বের
সুস্পষ্ট চিহ্ন রেখেছেন তিনি কবি, গীতিকার ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-
১৯১৩)। গীতিকাব্য, হাস্যরসাত্মক কাব্যসঙ্গীত, বিচিত্রধর্মী নাটক, প্রহসন,
দেশাত্মবোধক সংগীত প্রভৃতি বিচিত্র উপকরণের দ্বারা তিনি তাঁর শিল্পরূপকে
ঐশ্বর্যমণ্ডিত করেছেন। দেশাত্মবোধ, স্বদেশপ্রেমকে তিনি শুধু আত্মোপলব্ধির
বিষয় করেন নি, তাকে মন্ত্রের মতো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দেশের আপামর মানুষের মধ্যে।
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাঙালির নবজাগ্রত চৈতন্য জাতীয় জীবনের নানা ক্ষেত্রে
সংক্রামিত হয়। সংকীর্ণ  গণ্ডীবদ্ধ জীবনের অচলায়তন ভেঙে সৃষ্টিশীল জীবনস্রোত
বিচিত্র ধারায় ছড়িয়ে পড়ে, সেইসঙ্গে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্মুক্ততার
সংস্পর্শে এদেশে আসে নবজাগরণ। এই প্রস্ফুটিত নবজাগরণের ধারক প্রবাহ হিসেবে
আমরা যেসব মনীষীকে পেয়েছি যাঁরা সাহিত্য, ধর্ম, সমাজ, শিক্ষায় এনেছিলেন তাঁদের
যুগান্তকারী চিন্তাভাবনা।  অন্ধ কুসংস্কারের বেড়াজাল ভেঙ্গে মানুষ প্রথম দেখতে
পেয়েছিল মুক্তির আলো, ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বরূপ। এই নবজাগরণেরই অন্যতম এক
পথিকৃৎ ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ।

দ্বিজেন্দ্রলাল ছিলেন কবি, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক ও সর্বোপরি গায়ক ও সংগীত
রচয়িতা। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার মত সঙ্গীতেও ছিলেন অনন্যসাধারণ প্রতিভার
অধিকারী। বাংলা গানে আধুনিকতার জনক রবীন্দ্রনাথ হিন্দুস্তানি রাগ রাগিণীর
দুর্বোধ্যতা থেকে বাংলা গানকে মুক্ত করে সর্বসাধারণের আঙিনায় পৌঁছে দিয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক গীতিকার ও সুরকার অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন ও
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রবীন্দ্রানুসারী হলেও নিজস্ব গায়নভঙ্গিতে, স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে
শুধু দীপ্যমান নন, তাঁরা হলেন বাংলাগানের ভান্ডারের রূপকার। রবীন্দ্রনাথ
দ্বিজেন্দ্রলালের অভিনব কবিশক্তিকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
দ্বিজেন্দ্রলালের রক্তে ছিল গান। পারিবারিক পরিবেশ দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীত ও
সাহিত্যের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। তাঁর পিতা দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র রায়
ছিলেন উনিশ শতকের প্রখ্যাত কালোয়াত। পিতার সংগীত-সংস্কার দ্বিজেন্দ্রলালের
চেতনায় সঞ্চারিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের চেয়ে দু’বছরের অনুজ দ্বিজেন্দ্রলাল
স্বপ্রবর্তনায় গান লিখতে শুরু করেন খুব কিশোর বয়সে। এদেশে ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চ
শিক্ষা সমাপ্ত করে কৃষিবিদ্যায় আয়ত্ত করতে স্টেট স্কলারশিপ নিয়ে তিনি
ইংল্যান্ডযাত্রা করেন। সেখানেই তাঁর ইংরেজি গানের সঙ্গে পরিচয়। বিলেতি গান
দ্বিজেন্দ্রলাল আয়ত্ব করেন আন্তরিকতা নিয়ে, একই সঙ্গে আইরিশ ও স্কচ গানের
সঙ্গেও পরিচিত হন। সংগীত রচনার ক্ষেত্রে হিন্দুস্তানি রাগ রাগিনী এবং বাংলার
নিজস্ব সম্পদ কীর্তন, বাউল, ভাটিয়ালির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটে পাশ্চাত্য সংগীতের।
প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের অপূর্ব সমন্বয়ে দ্বিজেন্দ্রলালের বাংলা গান সংগীত জগতে
অভিনবত্বের সূচনা করে বলা যায়।
বিলেতে থাকাকালীন দ্বিজেন্দ্রলালের সেখানকার বিখ্যাত রঙ্গালয়ে নিয়মিত পাশ্চাত্য
নাটক দেখার, পাশ্চাত্য নাট্যকলার সম্যক অভিজ্ঞতা স্বরূপ আমরা পাই নাট্যকার
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়কে। প্রায় তিন বছর বিলেতে থেকে দেশে ফিরে তিনি মুঙ্গেরে
কর্মজীবন শুরু করেন। শৈশব ও কৈশোরে যে রাগসংগীত চর্চা দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীত
মানসকে পরিপুষ্ট করেছিল তারই প্রত্যাবর্তন ঘটে মুঙ্গেরে। সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার
নতুন করে দ্বিজেন্দ্রলালকে রাগসংগীত চর্চার লোকে ফিরিয়ে আনেন। সুরেন্দ্রনাথ
মজুমদারের প্রেরণায়ই দ্বিজেন্দ্রলাল টপখেয়াল, টপ্পা অঙ্গে প্রশিক্ষণ ও গান
রচনায় উদ্যোগী হয়ে ওঠেন। খেয়ালের অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করে দ্বিজেন্দ্রলাল
অন্তর্মুখী প্রেমের ও বিষাদবেদনার গানগুলো টপ্ খেয়ালের রীতিতে রচনা করেন। তাঁর
হাসির গানের রচনার সূত্রপাতও এখান থেকেই। এ সময় রচিত গানসমূহ আর্যগথা
দ্বিতীয় ভাগ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়।

তাঁর প্রথম গীতসংকলন আর্যগাথা প্রথম ভাগ (১৮৮২) প্রকাশিত হয় তার বিলেত
যাত্রার আগে। দ্বিজেন্দ্রলাল বারো থেকে সতেরো বছর বয়সে যেসব গান রচনা করেন
অর্থাৎ আর্যগাথা প্রথম ভাগে যে সব গান অন্তর্ভুক্ত তা তাঁর সংগীত জীবনের
প্রথম স্তরের রচনা। এ সংকলনে রয়েছে তাঁর লেখা প্রকৃতি, ঈশ্বর ও স্বদেশস্তুতি
সম্পর্কিত একশো আটটি গান। গানগুলি ধরন অনেকটা কবিতার ভাষা। বিলেত প্রবাসে
তিনি পাশ্চাত্য সঙ্গীত চর্চা করেন এবং দেশে ফিরে এসে তিনি পাশ্চাত্য সংগীতরীতির
সঙ্গে মিলিয়ে বাংলা গান রচনায় ব্রতী হন। এ সময় তিনি বেশ কিছু আইরিশ, স্কচ ও
ইংরেজি গানের অনুবাদ করেন। আর্যগাথা দ্বিতীয় খন্ডে এসব গান সংগৃহীত হয়।
আর্যগাথা দ্বিতীয় খন্ডের গান সমূহের সময়কাল পর্যন্ত  দ্বিজেন্দ্রসংগীতের
দ্বিতীয় স্তর। বিলেত থেকে ফিরে তিনি যখন মুঙ্গেরে সরকারি কাজে যোগ দেন তখন
দ্বিজেন্দ্রলাল  অভিনিবেশের সঙ্গে রাগসঙ্গীতের চর্চা শুরু করেন। তখন থেকে শুরু
করে পত্নী-বিয়োগ  পর্যন্ত দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীত রচনার তৃতীয় স্তর। এই স্তরে
পাশ্চাত্যসংগীত ও রাগসঙ্গীতে সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। পত্নী- বিয়োগ পরবর্তীকাল
থেকে দ্বিজেন্দ্রলালের মৃত্যু পর্যন্ত যে সময়কাল তাকে তাঁর সঙ্গীত রচনার চতুর্থ
স্তর রূপে অভিহিত করা হয়েছে। পত্নী বিয়োগের পর থেকেই দ্বিজেন্দ্রলাল রঙ্গ ও
ব্যঙ্গের হাস্যোচ্ছল জগৎ থেকে নিজেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে নিতে থাকেন। তখন থেকে
তার সঙ্গীতের প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে বেদনা ও উদ্দীপনা। এসময় থেকেই
দ্বিজেন্দ্রলাল গভীরভাবে নাট্যরচনায় মনোনিবেশ করেন। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ
আন্দোলন দ্বারা তিনি গভীরভাবে প্রভাবিত হন। রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ,
রজনীকান্ত, কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ প্রমুখের মতো তিনিও স্বাদেশিক সংগীত
রচনায় ব্রতী হন। দ্বিজেন্দ্রলালের দেশাত্মবোধক সংগীত ও ঐতিহাসিক নাটকের
স্বাদেশিকতা সে সময় জনমনে বিশেষ প্রেরণা সঞ্চার করেছিল।
দ্বিজেন্দ্রলাল সমগ্র সংগীত রচনা সম্ভারের প্রাণস্বরূপ তাঁর গান। বিভিন্ন
আঙ্গিকের গান তিনি রচনা করেছেন। প্রকৃতি ও প্রেমের গান, নাটকের গান, হাসির গান
এবং সর্বোপরি স্বদেশচেতনার গান যা জাতীয় জীবনে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল
এবং আজও মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।
স্বদেশে ফিরে দ্বিজেন্দ্রলাল ভারতীয় সংগীতের দিক থেকে মুখ ঘোরান। ভারতীয়
সংগীতে পাশ্চাত্য সংগীতের প্রয়োগ পদ্ধতিতে গভীরভাবে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন
তিনি। বিলেত ফেরত মানুষ হয়েও বিলিতি আদব কায়দায় বিচরণ অপছন্দ করতেন। যাঁরা
কিছুদিন বিলেতে ঘুরে এসেই একেবারে আপাদমস্তক সাহেব বনে যেতেন, তাঁদের বিদ্রুপ
করে তিনি গান বেঁধেছিলেন – 

‘ আমরা বিলেত ফেড়তা ক’ ভাই
আমরা সাহেব সেজেছি সবাই

তাই কি করি, নাচার, স্বদেশি আচার করিয়াছি সব জবাই।’…১
আবার হাসির গানে দ্বিজেন্দ্রলালের অক্ষয় প্রতিভা। বিদেশের তথাকথিত ‘হিউমার’কে
দেশীয় ভাবনা ও বিষয়বস্তুতে অবগাহিত করে দেশীয় শ্লেষের প্রচলিত শব্দ ঘটনাকে
যুক্ত করে তিনি ‘ হাসির  গান’ রচনা করেন – যা বাংলা সাহিত্যে রসের নতুন মাত্রা
যোগায়- সেখানে গানের সুর ও তার নিজস্ব কন্ঠের পরিবেশন যে ভাবে হাসির দোলায়
বাঙালিকে মাতিয়েছে তা অভাবনীয়  ও অভূতপূর্ব। হাসির গানের শ্লেষের  মাধ্যমে
দ্বিজেন্দ্রলাল দেশব্রত ও দেশপ্রেমের কথা সঞ্চারিত করে মানুষের চেতনার আলো
জাগিয়ে ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হাসির গান- ‘নন্দ ঘোষ’, ‘আমরা পাঁচটি
ইয়ার’, ‘বিলেত ফেরতা’, ‘স্ত্রীর উমেদার’ ‘বিরহ’ ইত্যাদি। বিলেতে বাস করলেও তিনি
মনে প্রাণে ছিলেন খাঁটি বাঙালি। ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিতে তিনি ‘ বিলেত ফেরতা’ কবিতাটি
লেখেন-

আমরা বিলিতি ধরনের হাসি
আমরা ফরাসি ধরনের কাশি।
আমরা পা ফাঁক করিয়া
সিগারেট খেতে বড্ড ভালোবাসি।…২

তাঁর হাসির গানের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল বাংলা শব্দের সঙ্গে ইংরেজি
শব্দ মিলিয়ে গান রচনা। দ্বিজেন্দ্রলালের মত এমন অবলীলাক্রমে বাংলার সঙ্গে
ইংরেজির মিলন আর কেউ ঘটাতে পারেননি। হাসির গান রচনায় দ্বিজেন্দ্রলাল বিলিতি
গানের গায়কী এবং ভারতীয় রাগ রাগিনী ব্যবহার করেছিলেন, এখানেই তাঁর নতুনত্ব।
উদাহরণ –

‘ যদি জানতে চাও আমরা কে-
আমরা Reformed Hindoos
আমাদের চেনে না কো যে
Surely he is an awful goose!…৩

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ  বিরোধী আন্দোলন সারাদেশে নতুন ভাবে জাগিয়ে তোলে
দেশাত্মবোধ। কলকাতার রঙ্গমঞ্চ উত্তাল হয়ে ওঠে দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক ও
জাতীয়তাবাদী নাটকের আবেগে। নাটক প্রতাপ সিংহ( ১৯০৫), দুর্গাদাস ( ১৯০৬),
নুরজাহান( ১৯০৮), মেবার পতন ( ১৯০৮), সাজাহান (১৯০৯) ও চন্দ্রগুপ্ত( ১৯১১) –
নাটকে তাঁর  অসামান্য স্বদেশী ভাবনা সংযোজিত হয়ে গান এক নতুন মাত্রা পায়।
বিশ্বাসের ওজস্বিতা, ভাবের গাঢ়তা এবং সুরের গুঢ় বিন্যাস তাঁর স্বদেশী গানে এক
চমকৃতি সৃষ্টি করল – বাঙালি লাভ করল এক নতুন গানের উত্তরাধিকার।

গীতিকার হিসেবে বাংলা সংগীত জগতে দ্বিজেন্দ্রলালের আর এক বিশেষ অবদান তাঁর
নাটকের গান। নাটকের প্রয়োজন হিসেবে দ্বিজেন্দ্রলালের নাট্যসংগীত এক স্বতন্ত্র
মূল্যের অধিকারী। নাটকের একটানা ঘটনার মধ্যে খানিকটা আনন্দময় বিরতি বা
dramatic relief এর জন্য কিছু গান কবি ব্যবহার করেছেন। কবি রচিত ও ব্যবহৃত
গানগুলো  নাটকের চরিত্র বিকাশে সহায়তা করেছে, অনেক সময় সংলাপের মধ্যে দিয়ে
যা সম্ভব নয়, নাটকে সংগীতের মধ্যে দিয়ে তার সম্ভব হয়েছে। বিবৃতি সর্বস্ব ঘটনা
একটি সম্পূর্ণ নাটকীয় ঘটনায় পরিণত হয়েছে সংগীত ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। ‘ভীষ্ম’
নাটকে ‘আমরা মলয় বাতাসে ভেসে যাব’ গানটি নাটকের আনন্দরস ফুটিয়েছে, অন্যদিকে
‘নীল আকাশের অসীম ছেয়ে’ গানটি একটি সূক্ষ্ম নাটকীয় তাৎপর্য ফুটিয়ে তুলেছে।
সংগীত প্রয়োগের ক্ষেত্রে ‘মেবার পতন’, ‘সাজাহান’,  এবং ‘চন্দ্রগুপ্ত’ – এই তিনটি
নাটক সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ‘মেবার পতন’ নাটকের সংগীতগুলো নাটকের সংঘাতকে
সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। মেবার পতন নাটকের বিখ্যাত গান-
মেবার পাহাড় মেবার পাহাড়
যুঝেছিল যেথা প্রতাপ বীর

বিরাট সৈন্য দুঃখে তাহার শৃঙ্গের সম অটল স্থির।…৪
গানের মাধ্যমে নাটকের গতি সঞ্চারিত হয়েছে। নাটকের সর্বশেষ ও বিখ্যাত গান’
আবার তোরা মানুষ হ’ বিশ্বমৈত্রীর আদর্শকে বড় করে তুলেছে। ‘সাজাহান’ নাটকে
‘আজি এসেছি’ একটি প্রেমসংগীত। রাজপুত রমণীদের তেজস্বীতা ‘যেথা গিয়াছেন তিনি’
চারণী সংগীতের মাধ্যমে ব্যক্ত হয়েছে।
নাটকের বন্দনা সংগীত ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’, ‘আয় রে বসন্ত ও
তোর কিরণ মাখা পাখা তুলে’, ‘ আর কেন মিছে আশা’ , ‘সকল ব্যথার ব্যথা আমি হই’ক
সৈন্যদলের সমবেত সংগীত ‘ যখন সঘন গগন গরজে’ সার্থক নাট্য সংগীতে পরিণত
হয়েছে । ‘ঘন তমাসাবৃত অম্বর ধরণী’ ও ‘ঐ মহাসিন্ধুর ওপার থেকে’ নাটকীয়
পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করেছে। বাংলা নাটকে সংগীত সংযোজনা দ্বিজেন্দ্রলাল
রায়ের বিশেষ অবদান। নাটকের প্রয়োজনীয়তাকে অতিক্রম করে এই গানগুলো আপামর
জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল, এখানে এর বিশেষত্ব।
শেষ জীবনে দ্বিজেন্দ্রলালের সবচেয়ে আকর্ষণ ছিল নাটক রচনায়। শেষ দশ বছরের
দ্বিজেন্দ্রগীতির সবচেয়ে বড় আশ্রয় ছিলেন বাংলা রঙ্গমঞ্চের নটনটীরা । তাঁর গান
এঁদের কন্ঠেই রূপ পেয়েছিল। তাই মঞ্চের প্রয়োজনেই, দ্বিজেন্দ্রলালদের অনেক গান
বিন্যাসে খুব নাটকীয় এবং স্বগতোক্তির মত। তাঁর পাঁচশ গানের মধ্যে নাটকে বহুল
ব্যবহৃত গানের সংখ্যা প্রায় আড়াইশ। 

স্বদেশী আন্দোলনের সময় দ্বিজেন্দ্রলালের জাতীয় সংগীত ও ঐতিহাসিক নাটক
জাতীয় জীবনের অবরুদ্ধ বেদনাকে মুক্ত করে তুলেছিল। তাঁর অনেক গানই তাঁর নানা
নাটকের অন্তর্ভুক্ত। শেষ দশ বছরে বেদনায় ভারাক্রান্ত বিষাদে পরিম্লান
দ্বিজেন্দ্রলালের ভগ্নহৃদয়ে জেগে ওঠে স্বদেশী গান লেখার উন্মাদনা।
স্বদেশী আন্দোলনের সময় রবীন্দ্রনাথ থেকে অনেক অখ্যাতনামা গ্রাম্য কবিরাও
স্বদেশী গান রচনা করেছিলেন, কিন্তু দেশকে অবলম্বন করে উচ্চতর ভাবলোক সৃষ্টির
ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ও দ্বিজেন্দ্রলাল ছাড়া আর অন্য কোন কবির রচনায় তেমনভাবে
পাওয়া যায় না। স্বদেশ মন্ত্রে বাণীসহ দ্বিজেন্দ্রলাল কিশোর বয়সে ‘আর্যগাথা’র
প্রথম ভাগে মাতৃভূমি ছবি এঁকেছেন- ‘মনোমোহন মরতি’, ‘মলিন বীণার ঝংকার নীরব,
নয়নে অশ্রু’। আবার পরিণত বয়সের গানগুলো এক অভিনব উৎকণ্ঠায় বিধুর।
দেশপ্রেমকে তিনি এক নতুন অর্থে মন্দিত করে তুলেছিলেন, যেখানে দেশমাতৃকার
মূর্তিটি মানবীয় রসে সঞ্জীবিত হয়ে উঠেছে। মৃন্ময়ীকে তিনি চিন্ময়ী করে তুলেছেন-

‘ জননী তোমার বক্ষে শান্তি, কন্ঠে তোমার
অভয় উক্তি
হাসতে তোমার বিতর  অন্ন, চরণে তোমার
                           বিতর মুক্তি 
জননী, তোমার সন্তান তরে কত না বেদনা
                              কত না হর্ষ
  জগৎপালিনী জগত্তারিনি, জগজ্জননী
                               ভারতবর্ষ।….৫
 বিলাত প্রবাসকালে প্রকাশিত Lyrics of Ind কবিতায় স্নেহ ভক্তির আবেগ বিগলিত
অন্তরে অধঃপতিতা ভারতমাতাকে আমার দেশ (My land) সম্বোধন করে লিখেছেন-

O my land! Can I cease to adore thee…
O dear Bharat My beautiful maidan
O sweet Ind! Once the queen of world. ৬

দ্বিজেন্দ্রলালের স্বদেশ প্রেমাত্মক গানগুলো একদিন সারা বাংলাদেশকে মাতিয়ে
তুলেছিল। ‘বঙ্গ আমার/ জননী আমার/ধাত্রী আমার /আমার দেশ’, ‘ ধনধান্য পুষ্প ভরা 
আমাদের এই বসুন্ধরা’, ‘যেদিন সুনীল জলধি হইতে উঠিলে জননী ভারতবর্ষ’,’ ভারত
আমার! ভারত আমার! যেথায় মানব মেলেলি নেত্র।’ এবং ‘জননী বঙ্গভাষা এ জীবনে,
চাহি না অর্থ চাহি না মান’- এইসব গান একদিন বাংলাদেশে সকলেরই কাছে জনপ্রিয়
হয়ে উঠেছিল।

কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ভবনে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে( ১৩১৫, ২১
অগ্রহায়ণ) দ্বিজেন্দ্রলাল গেয়েছিলেন দেশাত্মবোধের মাতৃ স্তোত্র ‘ আমার দেশ’
গানটি –

‘ বঙ্গ আমার
জননী আমার
ধাত্রী আমার
আমার দেশ
কেন গো মা তোর শুষ্ক নয়ন!
কেন গো মা তোর রুক্ষ কেশ!
কেন গো মা তোর ধূলায় আসন!
কেন গো মা তোর মলিন বেশ
সপ্ত কোটি সন্তান যার
ডাকে উচ্চ ‘আমার দেশ’।…৭

 গানটি দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ স্তরের মানুষকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছিল।
দ্বিজেন্দ্রলাল বাংলা সংগীতের ক্ষেত্রে প্রথম ‘কোরাস’ প্রবর্তন করেন। নানা বাংলা
গানের সুর ছন্দের মধ্যে তিনি ইংরাজী গানের সুর ছন্দের ঢং চালু করেছিলেন।
দেশপ্রেমিক দ্বিজেন্দ্রলালের গানে চারণব্রত বাণীরূপ লাভ করেছে। এ সকল গানের
সুর তিনি বিদেশের সামরিক সংগীত থেকে আহরণ করেছিলেন। জাতীয় ভাবোদ্দীপক
এষণার সঙ্গে সংগতি রেখে এই গানের বাণী যেমন  ওজঃ গুণ  সমৃদ্ধ, তেমনি সুরের
বাঁধুনিতেও রয়েছে বলিষ্ঠতা ও বীর্যব্যঞ্জকতা।  এই গানগুলোর সুর থেকে একটা
সামগ্রিক চেতনা যেন স্বতঃই ঝরে পড়ছে। এ গানে উচ্চকণ্ঠে গীত সমবেত কোরাস
বিদেশি সংগীত থেকে দ্বিজেন্দ্রলাল গ্রহণ করেছিলেন, যার রূপ বাংলা গানে সম্পূর্ণ
নতুন-

‘ ধাও ধাও সমর ক্ষেত্রে গাও উচ্চে রণজয় গাঁথা
রক্ষা করিতে পীড়িত ধর্মে শুন ওই ডাকে
ভারতমাতা।….৮

দ্বিজেন্দ্রলাল রচিত অন্যতম মহাসংগীত

‘ আমার জন্মভূমি’-

‘ ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা

ও যে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না ক’ তুমি

সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।….৯

বাঙালি মনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মধুর কোমলতায় ভরা এই মাতৃবন্দনা সারা বাংলার
আকাশ- বাতাস মুখরিত করে, বাংলার ঘরে ঘরে মানুষকে জাগিয়ে তুলেছিল।
গানের পশরা নিয়ে দ্বিজেন্দ্রলাল প্রথম বাংলার কাব্যক্ষেত্রে প্রবেশ করেছিলেন।
কথা ও সুরের সংমিশ্রণে রচিত কাব্যসংগীত। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘
আর্য্যগাথা’  অনেকগুলো সুরোচিত গানের সমষ্টি। ‘আর্যগাথা’ দ্বিতীয় ভাগের প্রেম
সংগীত গুলোতে কাব্য সংগীতের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে। ‘ কি দিয়ে সাজাব মুরতি’,
‘আয় রে বসন্ত ও তোর কিরণ মাখা পাখা তুলে’ , প্রভৃতি গানে দ্বিজেন্দ্রলালের
সুরকার প্রতিভার অপূর্ব বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। কাব্যসংগীতের লাবণ্যে অপূর্ব সুর
ও  বাণীর যুগল রস গানকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে- ‘এ জীবনে পুড়িল না সাধ ভালোবাসি’।
দ্বিজেন্দ্রলালের ১৬৮টি প্রেমের গান ( বিদেশি স্কটিশ, আইরিশ ও ইংরেজি গানের
অনুবাদ), হাসির গান ও প্রণয় সংগীত দ্বিতীয় গীতিসংকলন ‘আর্যগাথা’ দ্বিতীয় ভাগ (
১৮৯৩) প্রকাশিত হয়, যার অধিকাংশই প্রেমের গান। তাঁরপ্রেমের গান গুলোর
মধ্যে এক করুণ কোমলতা স্বতঃস্ফূর্ত  হয়ে উঠেছে। দ্বিজেন্দ্রলাল প্রেমের গানে
প্রিয়তমা স্ত্রীর মনের বাসনা গানের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন-
‘ আমি সারা সকালটি বসে বসে
আমার সাধের মালাটি গেঁথেছি-

আমি পড়াবো বলিয়া গলায় তোমার মালাটি আমি গেঁথেছি।
আমি সারা সকালটি করি নাই কিছু করি নাই কিছু বঁধুয়া- ….১০
 দ্বিজেন্দ্রলাল বস্তুগত কল্পনার কবি। তাঁর গানের বাণী প্রায়ই উচ্ছ্বসিত, লঘু
উদ্বেগে তরল এবং স্বভাবোক্তি অলংকারে আচ্ছন্ন। প্রকৃতির বর্ণনা শুধু নয়, মানব
হৃদয়ের সঙ্গে প্রকৃতির সংযোগের কথাই ব্যক্ত করেছে। প্রকৃতিকে এঁকেছেন গানে-

‘একি মধুর ছন্দ,মধুর গন্ধ
পবন মন মন্থর
একি মধুর মুঞ্জরিত নিকুঞ্জ
পত্রকঞ্জ মর্মর।’….১১

অথবা

 এ কি নিখিল বিশ্ব হাসি-

 এ কি সুরভী, স্নিগ্ধ শিশির সিক্ত কুসুম রাশি রাশি-
 এ কি শ্যাম হসিত নব বিকশিত ঘন কিশলয় পল্লব-
এ কি সরিৎরঙ্গ শত তরঙ্গ নৃত্যভঙ্গ নির্ঝর।…১২ 

‘নীল আকাশের অসীম ছেড়ে ছড়িয়ে গেছে চাঁদের আলো’, ‘ঐ মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কী
সংগীত ভেসে আসে’ প্রভৃতি  গানে দ্বিজেন্দ্রলালের কাব্য সংগীতের সুরের অসাধারণ
পরিচয় পাওয়া যায়। বাংলা গানের ক্ষেত্রে দ্বিজেন্দ্রলাল যে অসামান্য সব প্রেমের
গান রচনা করেছেন, ‘আর্যগাথা’ যুগে তাঁর মনে হয়েছিল-‘যতদিন না দুঃখিনী মাতৃভূমির
এই দুঃখ, দৈন্য ও দীনতা সম্পূর্ণ বিদূরিত হয়, ততদিন ভারতবাসীর মুখে প্রেম-সংগীত
ভাল দেখায় না’। ১৩
শেষ জীবনে গভীরতায় তথা আধ্যাত্মিকতায় নিমজ্জিত কবির নানা প্রেমের গানে আমরা
পাই বৈষ্ণবভাব। তাঁর ভক্তির গানে ভাবগাঢ়তা ও তৎসুখসুখিত্বের ভাব ফুটে ওঠে- 

‘ ও কে, গান গেয়ে গেয়ে চলে যায়
পথে পথে ঐ নদীয়ায়
এ কে, নেচে নেচে চলে
মুখে ‘ হরি’  বলে
ঢলে ঢলে পাগলেরি প্রায়।…১৪

দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীত জীবন শেষ পর্বে হয়ে ওঠে নিতান্ত আত্মমুখী ও সংবৃত।
গানের বিষয়বস্তুতে এসে যায়  প্রেম- হাসি- নাটক- নিসর্গ সব পেরিয়ে গভীর বৈরাগ্যের
আত্মসমর্পণ। অহেতুক ভক্তির লীলা। তিনি শেষ বয়সে লিখলেন:
পরি হরি ভবসুখ- দুঃখ যখন মা আমি শায়িত অন্তিম শয়নে,
বরিষ শ্রবণে তব জল কলরব  বরিষ  সুপ্তি মম নয়নে।
বরিষ শান্তি মম  শংকিত প্রাণে,, বরিষ অমৃত মম অঙ্গে
মা ভাগীরথি, জাহ্নবী, সুরধুনী,কলল্লোলিনী গঙ্গে।

পতিতোদ্ধারিণি গঙ্গে! ….১৫

 নিসর্গ ধ্যান থেকে স্বদেশ গরিমা, হাসির গানের বিদ্রূপ থেকে আনত মধুর
প্রেমসংগীত, নাট্যোচ্ছল তরল গীতিময়তা থেকে গভীর ভক্তিতে অবগাহন-
দ্বিজেন্দ্রলালের গান প্রগাঢ় ভাবে আত্মজৈবনিক। তাঁর সমগ্র জীবনের পটে এই গান
দ্যোতনা জ্ঞাপক-

সুখের কথা বোলো না আর, বুঝেছি সুখ কেবল ফাঁকি,
দুঃখে আছি,  আছি ভাল, দুঃখেই আমি ভাল থাকি।….১৬

তার ইচ্ছা ছিল ‘আলোর মতন হাসির মতন কুসুম গন্ধ রাশির মতন, হওয়ার মতন নেশার
মতন ঢেউয়ের মতন’ ভেসে যাওয়ার। ইচ্ছা ছিল মলয় বাতাসে ভেসে গিয়ে কুসুমের মধু পান
করার।

দ্বিজেন্দ্রলালের গান তার সবচেয়ে অকপট আত্মবিবৃতি। দ্বিজেন্দ্রলালের গানের
উৎস যাই হোক তার বর্ণনে ও আবেগে শেষ পর্যন্ত তাতে লেগেছে জীবনের কবোষ্ণ
সংরাগ – স্বপ্ন দিয়ে তৈরি, স্মৃতি দিয়ে ঘেরা তাঁর গান।
তথ্যসূত্র
১। দ্বিজেন্দ্রলাল, পৃঃ-৭৩
২। দ্বিজেন্দ্রলাল, পৃঃ-৮৯
৩। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা, পৃঃ-৭০
৪। বাংলা গানের বিবর্তন, পৃঃ-৩১৭
৫। দ্বিজেন্দ্রলাল, পৃঃ-৩০৮
৬। দ্বিজেন্দ্রলাল, পৃঃ-৩১০
৭। বাংলা গানের বিবর্তন, পৃঃ-৩১৭
৮। দ্বিজেন্দ্রগীতি স্বরলিপি-পৃঃ-১৯১
৯। দ্বিজেন্দ্রগীতি স্বরলিপি-পৃঃ-৮৪
১০। বাংলা গানের সন্ধানে, পৃঃ-১১৩
১১। দ্বিজেন্দ্রলাল(কবি ও নাট্যকার) পৃঃ-৩৯৮
১২। দ্বিজেন্দ্রলাল, পৃঃ-৩১২
১৩। বাংলা গানের সন্ধানে, পৃঃ-১০৫
১৪। দ্বিজেন্দ্রগীতি স্বরলিপি-পৃঃ-৫৫
১৫। বাংলা গানের সন্ধানে, পৃঃ-১১৪
১৬। বাংলা গানের সন্ধানে, পৃঃ-১১৪

সহায়ক গ্রন্হ
১। গোস্বামী প্রভাত কুমার – ভারতীয় সংগীতের কথা
২। গোস্বামী করুণাময় – বাংলা গানের বিবর্তন
৩। ঘোষ নবকৃষ্ণ –দ্বিজেন্দ্রলাল
৪। ঘোষ বারিদ বরণ-দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা
৫। চৌধুরী দেবকুমার – দ্বিজেন্দ্রলাল (জীবন)
৬। চক্রবর্তী সুধীর -বাংলা গানের সন্ধানে
৭। রায় বিশ্বপ্রিয়া- দ্বিজেন্দ্রগীতি স্বরলিপি
৮। রায় রথীন্দ্রনাথ- দ্বিজেন্দ্রলাল (কবি ও নাট্যকার)