May 1, 2025

Rabindranath’s religious consciousness – Dr. Srabani Sen

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Associate Professor, Department of Music, Tarakeswar Degree College
e-mail-dr.ssen8693 @gmail.com Mobile no- 6290855102

Tagore’s religion was rooted in the human spirit. He belived that true religion involved realizing one’s own true nature and its connection to the universal consciousness. His multifaceted personality was evolved by the influence of Upanishads, Bramha Samaj, Bhagabat Gita, Buddhism etc. He was against religious institution and religious practice. According to Rabindranath true religion is a rhythm of life, joy, action and existence.

রবীন্দ্রনাথের ধর্মচেতনা
রবীন্দ্রনাথের ধর্মজীবন ও ধর্মদর্শনের প্রধান লক্ষ্য হল উপনিষদের আদর্শে এক অর্নিবচনীয় অখণ্ড আনন্দময় সত্তার মধ্যেই মানজীবনকে প্রতিষ্ঠিত করা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ধর্মচেতনার স্বরূপ ব্যাখ্যায় কবির ধর্ম, স্রষ্টার প্রকাশধর্মের সংকীর্ণতায় আবদ্ধ না থেকে সত্যের রসলোকে উত্তীর্ণ হওয়াকে ধর্ম বলেছেন। অর্থাৎ ‘মানবধর্ম’কেই তিনি স্বীকৃতি জানিয়েছেন। বলা যায় রবীন্দ্রনাথের ধর্মদর্শন তিনটি স্বতন্ত্র ধারায় সম্বন্বিত – বেঙ্গল রেনেসাঁ, মধ্যযুগীয় সমন্বয়ী বৈষ্ণববাদ ও সুফীবাদ আর বাংলার বাউল সম্প্রদায়ের জীবনধারা। এছাড়াও পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদও তাঁকে আন্দোলিত করেছিল।
রবীন্দ্রনাথ ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন, সর্বনিয়ন্তা এক শক্তির অস্তিত্বে বিশ্বাসী, নিজের বিশ্বাস অনুসারে ধর্মাচরণ, ধর্মানুশীলনেও রত। সেই অর্থে তিনি ধার্মিক। রবীন্দ্রনাথ বলছেন- ‘ঠিক যাকে সাধারণে ধর্ম বলে, সেটা যে আমি নিজের মধ্যে সুস্পষ্ট দঢ়রূপে লাভ করতে পেরেছি,তা বলতে পারি নে। কিন্তু মনের ভিতরে ভিতরে ক্রমশ যে একটা সজীব পদার্থ সৃষ্ট হয়ে উঠেছে, তা অনেক সময় অনুভব করতে পারি। বিশেষ কোন একটা নির্দিষ্ট মত নয়- একটা নিগূঢ় চেতনা, একটা নতুন অন্তরিন্দ্রিয়।’ – এই অনুভব স্রষ্টার, এ অনুভব নতুনতর ধর্মের, এ অনুভব বিশ্বের সামগ্রিকতার সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নেওয়ার। কোথাও যদি অসামঞ্জস্য থাকে, অনাচার থাকে, বিভেদ- বিচ্ছেদের গ্লানি থাকে রবীন্দ্রনাথের ধর্ম মন্ত্র উচ্চারণ করে তারই বিরুদ্ধে। সে ধর্ম ‘বৈরাগ্যসাধনে’ মুক্তির খোঁজ করে না, কর্মের মাঝেই তার ‘মহানন্দময়’ মুক্তি।

রবীন্দ্রনাথের ধর্মচেতনা ‘নরদেবতা’কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। কবি লিখছেন, “আমি ভালোবেসেছি এই জগৎকে, আমি প্রণাম করেছি মহৎকে, আমি কামনা করেছি মুক্তি – যে মুক্তি প্রকাশ পেয়েছে পরমপুরুষের কাছে আত্মনিবেদনে। আমি বিশ্বাস করেছি মানুষের সত্য-মহামানবের মধ্যে যিনি “সদা জনানং হৃদয়ে সন্নিবিষ্ট”। অমৃতের সন্তান সকলেই – পৃথিবীর যে যেখানে আছে, তারা সকলেই কোনও ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়-গোত্র ও আবরণ- আভরণের মধ্যে আবদ্ধ নয়। রবীন্দ্রনাথ বলছেন- “সকল মানুষেরই ‘ আমার ধর্ম’ বলে একটা বিশেষ জিনিস আছে। কিন্তু সেইটাকেই সে স্পষ্ট করে জানে না। সে জানে আমি খ্রিস্টান, আমি মুসলমান, আমি বৈষ্ণব, আমি শাক্ত ইত্যাদি। কিন্তু সে নিজেকে যে ধর্মাবলম্বী বলে জন্মকাল থেকে মৃত্যকাল পর্যন্ত নিশ্চিত আছে সে হয়তো সত্য তা নয়। নাম গ্রহণেই এমন একটা আড়াল তৈরি করে দেয় যাতে নিজের ভেতরকার ধর্মটা তার নিজের চোখেও পড়ে না।
কোন ধর্মটি তার? যে ধর্ম মনের ভিতরে গোপনে থেকে তাকে সৃষ্টি করে তুলেছে। জীবজন্তুকে গড়ে তোলে তার অন্তর্নিহিত প্রাণধর্ম। সেই প্রাণ ধর্মটির খবর রাখা জন্তুর পক্ষে দরকার নেই। মানুষের আর একটি প্রাণ আছে, সেটা শরীরপ্রাণের চেয়ে বড়ো – সেইটে তার মনুষ্যত্ব। এই প্রাণের ভিতরকার সৃজনীশক্তিই তার ধর্ম।”

রবীন্দ্রনাথের ধর্ম বা ধর্মাচারণ প্রচলিত নিয়মরীতিতে বাধা নয়। যুগ যুগ ধরে প্রেয়কে পেরিয়ে শ্রেয়কে পাওয়ার যে সাধনা মানুষের এই পূজা তারই সঙ্গে সম্পৃক্ত, এক সূত্রে বাঁধা। রবীন্দ্রনাথের সাধনা সেই অন্তরের মানুষটিরই উদ্বোধন, আবিষ্কার সেই ‘অন্তরতর’ দেবতার। এই নতুন ধর্মবোধ যা বিভক্ত করে না, বিচ্ছিন্ন করেনা, হৃদয়কে নিয়ে যায় যা শুভ, যা মঙ্গল, যা সত্য তারই দ্বারপ্রান্তে যা রবি-কবিরই রচনা। এই ধর্ম মত আমাদের উত্তীর্ণ করে মনুষ্যত্বে- খন্ডিত, দর্পিত আত্মহংকারে নয়, অন্তঃসলিলা ‘আমি’-র জাগরণে। এই ধর্ম তাই এক অর্থে আত্মবিকাশও বলা যায়-
“ অন্তর মম বিকশিত কর অন্তরতর হে
মঙ্গল করো, নির্মল করো, উজ্জ্বল করো হে
জাগ্রত করো, উদ্যত করোৌ, নির্ভয় করো হে
মঙ্গল করো,নিরলস নিঃসংশয় করো হে
যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে মুক্ত কর হে বন্ধ
সঞ্চার করো সকল কর্মে শান্ত তোমার ছন্দ।’’ ১

ধর্মের ক্ষেত্রেও উদারতা এবং মানবতা সংযুক্ত হয়ে এগিয়ে চলে। তাই, যখন মধ্যযুগের সাধক কবির কণ্ঠে উচ্চারিত হয়- “ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই” – সেই সত্যই যে শাশ্বত সত্য তা রবীন্দ্রনাথ জানেন বলেই বেদান্তের বাণীর সঙ্গে তাকে মিশিয়ে মিশিয়ে মানুষের মধ্যে খুঁজে ফেরেন অন্তরদেবতাকে। বৈদান্তিক রবীন্দ্রনাথ সহমত পোষণ করেছেন বাউল ও সুফি সাধকদের সমন্বয় সাধনার। তাদের কাছে মানুষই দেবতা। মানুষে মানুষে প্রেমিই তাদের কাছে মূল কথা। আর, মানব প্রেমই সকল ধর্মের শেষ কথা। রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাসই উন্মোচিত হয়েছে গানে –
তাই তোমার আনন্দ আমার পর
তুমি তাই এসেছো নীচে আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর।
তোমার প্রেম হতো যে মিছে। ২

রবীন্দ্রনাথের ধর্ম সীমার মাঝে অসীমকে উপলব্ধি করার ধর্ম, ক্ষুদ্রের মধ্যে ভূমাকে স্পর্শ করার ধর্ম – তাই মানবধর্ম। তিনি যে স্বপ্রকাশ দেবতার আরাধনা করেছেন তিনি নিত্য বর্তমান, তিনি চিরকালের। নিজের ধর্মকে, উপাসনাকে অভ্যাসের মধ্যে এনেছেন প্রতিদিনের জীবনে কিন্তু তার সাম্প্রদায়িকীকরণ হতে দেননি। পরমব্রহ্ম নামক সত্তাকে স্বীকার করেও সত্য বলে জেনেছেন মানুষের অন্তর্গত শক্তিকে। উপাসনার মাঝে নিজেকে খোঁজার আন্তরিকতা তিনি পেয়েছেন উত্তরাধিকার সূত্রে, পেয়েছেন দেশচেতনা। আর শিক্ষায়- বিশ্বপরিচয়ে- সৃজনের প্রেরণায় তিনি অনুভব করেছেন জীবনকে। বিশ্ববীক্ষার মধ্যে দিয়েই সার্থক হয়ে উঠেছে তাঁর ধর্ম পরিচয়।

মানব ধর্ম আমাদের ভালবাসতে শেখায়, মিলতে শেখায় সৃজনে ব্যাপৃত করে। রবীন্দ্রনাথের শিরায় ও উপশিরায় প্রবাহিত হয়েছে মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। বেদান্ত অনুধ্যান রবীন্দ্রনাথকে এই উপলব্ধিতে উপনীত করেছিল যে, মৃত্যুছায়াছন্ন এই পৃথিবীতে মানুষই পারে অমৃতবারি সিঞ্চন করতে- কারণ, মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের অধিষ্ঠান। মানুষ যে অমৃতের পুত্র -এ কথা যদি উপলব্ধ হয় তাহলে পৃথিবী হয়ে সুন্দর, পবিত্র। প্রেমধর্মের বিকাশ, একমাত্র পারবে মানুষের হৃদয়কে ক্ষুদ্র অহংবোধ, বৈনাশিক নীতি পরিহার করাতে। কবির তাই আকুল আর্তি – “বিতরণ বিতর প্রেম পাষাণ হৃদয়ে।” সত্য ও সুন্দরের উপাসক কবি কণ্ঠে তাই উদগীত হয় –
‘‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি
শুষ্ক হৃদয়ে লয়ে আছে দাঁড়াইয়ে ঊর্ধ্বমুখে নরনারী।”৩

১৯১৪ সালের ৮ই জুলাই ব্রিটিশ কবি রবার্ট সেইমর ব্রিজকে রবীন্দ্রনাথ লেখেন – “ আমার ধর্মই আমার জীবন –এটা আমার বয়সের সাথে সাথে বেড়ে উঠেছে –বাইরে থেকে কখনোই এটা আমার গায়ে লেখা হয় নি’’ (My religion is my life- It is growing with my growth- it has never been grafted on me from outside. পরবর্তীকালে তিনি “The Religion of Man’’ এ লিখেছেন – “এটা স্পষ্ট যে আমার ধর্ম একজন কবির ধর্ম এবং কোনো গোঁড়া ধার্মিক লোকের মত নয় এবং কোনো ধর্মতাত্ত্বিকের মতোও নয়। আমার গানের অনুপ্রেরণার মত অদেখা এবং নাম না জানা পথ ধরে আমার কাছে এসেছে। কোন না কোনো ভাবে তারা একে অপরের সাথে মেলবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। যদিও তাদের এই মেলবন্ধন অনুষ্ঠানের সময় ছিল দীর্ঘ, তবুও তা আমার কাছে ছিল অতিসংগোপনে”।(For it is evident that my religion is a poet’s religion, and neither that of an orthodox man of piety nor that of a theologian. Its touch comes to me through the unseen and trackless channels as does the inspiration of my songs. My religious life has followed the same mysterious line of growth as has my poetical life. Somehow they are wedded to each other and, though their

ঈশ্বর ,মানব এবং প্রকৃতি এই তিন ভুবনের নাগরিক রবীন্দ্রনাথ ঈশ্বরের প্রতিই তাঁর সর্বাধিক আনুগত্য প্রকাশ করেছেন সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। জন্মসূত্রেই রবীন্দ্রনাথ অর্জন করেছিলেন অর্থ-বিত্ত-সংস্কৃতি-ধার্মিকতার উজ্জ্বল উত্তরাধিকার, নতুন ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন দেশ জাতিকে। সমগ্র বাঙালি জাতির চেতনায় এক গভীরতর ধর্মবোধের উদ্বোধন ঘটালেন, শেখালেন নতুন বেঁচে থাকার মন্ত্র। রবীন্দ্রনাথের ধর্ম চেতনা তাই শুধু উপন্যাসে- কবিতায়-গল্পে-গানে খুঁজে পাওয়া যায় তা নয়, তার বাসভূমি আমাদের অন্তরের অনুভবে।

ঈশ্বর ও ভক্তের নিবিড় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, নীরব বিশ্বাস, বিশ্বজগতের অচিন্ত্যশক্তির সঙ্গে কবিচিত্তের ব্যক্তিগত মানব-সম্বন্ধস্থাপন, ঐশ্বর্য-মাধুর্যের মধ্যে বিলসিত ধর্মচেতনা– যা রবীন্দ্রনাথের ভক্তিসংগীতের প্রধান সম্পদ। তাই পূজাপর্যায়ের গানগুলো একদিকে যেমন আনুষ্ঠানিক ব্রহ্মসংগীত আবার অন্যদিকের বীন্দ্রনাথের নিজস্ব ধর্মবোধ ও ভক্তিপ্রেরণা থেকে উৎসারিত পূজার গান। পারিবারিক ধর্মানুশীলনের অভ্যস্ত গণ্ডীতে লালিত হওয়ায় ব্রহ্মসঙ্গীতের ঐতিহ্যকে কবি ছোটবেলা থেকেই গ্রহণ করেছিলেন।
ব্রাহ্মধর্ম বাংলার ধর্ম ও সস্কৃতির ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেছিল। হিন্দুধর্ম ও সংস্কারের উদার শিক্ষাকে গ্রহণ করে, পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সভ্যতার দ্বারা বাঙালি সমাজ রামমোহন-দেবেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ধর্মদেশনার এক অতিশোভন পথ গ্রহণ করেছিল।রামমোহন থেকে শুরু করে ব্রাহ্মধর্মাবলম্বী সকলেই গানকে ব্রাহ্মধর্মের দ্বিতীয় মন্ত্ররূপে গ্রহণ করেছিলেন এবং রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীতসৃষ্টি সেই গীতধারাটিকে স্বচ্ছতোয়া করেছিল।রবীন্দ্রনাথের ভক্তিগীতরচনার প্রাথমিক প্রেরণা ছিল ব্রাহ্মসমাজের সাংগীতিক ঐতিহ্য এবং পরিবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গীতরচনা।
শুধু জীবনস্মৃতিতে নয়, অন্যত্রও রবীন্দ্রনাথ ব্রাহ্মসমাজের ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে তাঁর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।রবীন্দ্রনাথের প্রেমসংগীতের তুলনায় তাঁর ধর্মসংগীতের সংখ্যা বেশী যদিও রবীন্দ্রসাহিত্যে ধর্মচেতনা তাঁর প্রেম-প্রকৃতি-মানব বিষয়ক কবিতার তুলনা অপেক্ষাকৃত সীমাবদ্ধ বলে মনে হয় । ‘বলাকা’ থেকে রবীন্দ্রনাথ একান্তভাবে মানবের কবি। যদিও নিজস্ব একটা ধর্মচেতনা, যার সঙ্গে শাস্ত্রীয় ধর্মের কোন যোগাযোগ নেই, যাকে পরবর্তীকালে তিনি বলেছেন মানুষের ধর্ম।
রবীন্দ্রনাথের ধর্মানুভূতি ছিল নিবিড় অনুভবের বিষয়, তত্ত্বের নয়। মানুষের ধর্মগ্রন্থে ‘মানব সত্য’ প্রবন্ধে প্রথম জীবনের ধর্মবোধ সম্পর্কে কবি বলেছেন, এটা উপলব্ধি হয়েছিল অনুভূতিরূপে, তত্ত্বরূপে নয়। এই অনুভূতির ক্ষেত্রেই রবীন্দ্রনাথ ধ্যানের দৃষ্টিতে ভূমার যে সাধনা করেছেন, তাই তাঁর কবিধর্মের চরম অনুভূতি। ব্রাহ্মসমাজের ধর্মীয় উৎসবকেও রবীন্দ্রনাথের কবিদৃষ্টি গভীরভাবে দেখতে শিখিয়েছিল।
‘মানুষের ধর্ম’ গ্রন্থের রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন একই কথা- “ মানুষের দেবতা মানুষের মনের মানুষ। বাউল সাধনায় গানের মধ্যে বারেবারেই উঠে এসেছে ‘মনের মানুষের’ কথা

আমি কোথায় পাব তারে
আমার মনের মানুষ যে রে।
হারায়ে সেই মানুষে তার উদ্দেশে
দেশ–বিদেশে বেড়ায় ঘুরে ৪

রবীন্দ্রনাথের প্রাণধর্মের প্রেরণা আর বাউলের প্রেরণার উৎস অভিন্ন হলেও বাউলের মনের মানুষের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের জীবন দেবতার ঐক্য সহজেই লক্ষ্য করা যায়। বাউলদের যা ‘মনের মানুষ’ গুরুদেবের ‘জীবন দেবতা’ বা অন্তর্যামী তাই। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন “অন্তরতর হৃদয়াত্মা”, উপনিষদের এইবাণী বাউলদের মুখে ‘মনের মানুষ’ রূপ লাভ করেছে।
বাউলের দর্শন ও ধর্মচিন্তার সঙ্গে গুরুদেবের অন্তরাত্মার যোগ ঘটেছিল এবং গুরুদেব তাঁর জীবনদর্শন ও সৃষ্টির সঙ্গে বাউলদের ধর্মসাধনা ও গানকে যুক্ত করেছিলেন। বাউলের মত রবীন্দ্রনাথও বাহ্যিক সাম্প্রদায়িক ধর্মকে অগ্রাহ্য করে অন্তরের ধর্মকেই আপন বলে মনে করতেন। বাউলের ধর্ম নিজেকে জানার ধর্ম,সহজ মানুষেরর ধর্ম। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন – আমার ধর্ম কী, তা যে আজও আমি সম্পূ্র্ণ এবং স্পষ্ট করে জানি এমন কথা বলতে পারিনে – অনুশাসন আকারে তত্ত্ব আকারে কোন পুঁথিতে লেখা ধর্ম সে তো নয়। এই কথারই প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় লালনের গানে-
সব লোকে কয় লালন ফকির হিন্দু কি যবন
লালন বলে আমার আমি না জানি সন্ধান। ৫
বাউলের ধর্ম আত্মধর্মে সম্প্রসারিত হয়ে আন্তর্জাতিকতার আদর্শবাহী মানবধর্মের অনুষঙ্গী হয়ে উঠেছে।

তথ্যসূত্র
১। ড. অরুণকুমার বসু-পৃঃ-৪৯৮
২। লীনা চাকী-পৃঃ-৪৯
৩। রবীন্দ্ররচনাবলী ১২, পৃঃ-৫
৪।রবীন্দ্ররচনাবলী ১২, পৃঃ-৫৬৮
৫। লীনা চাকী-পৃঃ-৪৮
সহায়ক গ্রন্থ
১। বাংলার কাব্যসংগীত ও রবীন্দ্রসংগীত-ড. অরুণকুমার বসু
২। রবীন্দ্রনাথ ও বাউল – লীনা চাকী
৩। ভূমিকা মানুষের ধর্ম,রবীন্দ্ররচনাবলী
৪। শান্তিদেব ঘোষ¬- রবীন্দ্রসঙ্গীত।
৫। সুকুমার সেন -বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস(৩য় খণ্ড)।