July 1, 2024

Beneficial Impact of School Music Education in Childhood: A Comprehensive Review

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Moumita Majumder, PhD Research Scholar, Department of Performing Arts and Music, University of Calcutta. Under The Guidance and Supervision of Dr. Rajasree Bhattacharya (PhD Supervisor), University of Calcutta, Department of Performing Arts and Music.

Abstract

This research paper examines into the various benefits of music, education in childhood within the school environment and its positive effects on the child mind, body and soul.  By synthesizing existing literature and empirical studies the paper explores the social, emotional and academic advantages of incorporating music education into the curriculum. Furthermore, it discusses the implications of these findings for parents, policymakers, educators. Through a comprehensive review of literature and empirical studies this paper highlights the importance of music in school curricula to enhance overall childhood development.

    Key Words: Music Education, Childhood Development, Curriculum, Cognitive Benefits, Memory, Attention.

শৈশবে বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষার উপকারী প্রভাবের একটি : বিস্তৃত পর্যালোচনা 

আমরা মনের ভাব প্রকাশ করে থাকি কথা ও সুরের মাধ্যমে। কথার দ্বারা ঠিক যতখানি মনের ভাব প্রকাশ হয়ে থাকে ঠিক ততখানি সুরের দ্বারাও মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। অর্থাৎ কথার যে ভাব তা সুরের ওপর নির্ভরশীল। যদি বলি, “আমার খুব দুঃখ” এই কথাটি শুধু বললে মনের ভাব যতটা প্রকাশ পাবে তার থেকে যদি এই কথাটি ভাবসহকারে দুঃখের সহিত প্রকাশ করি তাহলেই মনের ভাবটি আরও বেশি প্রকাশ পাবে। সংগীতের মধ্যে রাগ ও রাগিনীর মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। কোনো রাগ শুনলে সেটি দুঃখ না সুখের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে সেটি আমরা বুঝতে পারি। শিশুর জন্মের সময় থেকেই তার মধ্যে ধীরে ধীরে ছন্দের বোধ জাগতে থাকে। বাবা মা-রাও একটি শিশুকে গান গাইতে গাইতে ঘুম পাড়ায়, খাওয়ায়, ছড়া শোনায়। এই সময়েই একটি শিশুর মধ্যে সুর, ছন্দ, আবেগের সৃষ্টি হতে থাকে। একটি শিশু কথা বলতে পারার আগে থেকেই আকার-ইকার শব্দ ব্যবহার করে মনের ভাব প্রকাশ করে। সুতরাং জন্মের থেকেই একটি শিশুর মধ্যে সূরের জ্ঞান আপনা আপনি জন্মাতে থাকে। দেশ হোক বা বিদেশ সব শিশুরই জন্ম থেকে ভাষা আয়ত্ত্ব করার ক্ষমতা সমান থাকে। ভাষার সাথে সুর ও ছন্দ বোঝার ক্ষমতা তাদের মধ্যে সমানভাবে জন্মাতে থাকে। সংগীত হল একপ্রকার শক্তি যা সকলরকমের অনুভূতি প্রদান করতে সক্ষম। সংগীত ও ভাব হল একে অপরের পরিপূরক। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন “আমরা যে গান গাই তা শ্রোতাকে দৈনন্দিন সুখ-দুঃখ থেকে দূরে সরিয়ে এক সঙ্গীহীন বৈরাগের দেশে পৌঁছে দেয়। তাই সংগীত সীমা থেকে অসীমের মধ্যে বিরাজ করতে পারে।” [সুর-চিকিৎসা, অধীর বাগচী, পৃ: ১০]

একটি শিশু যখন বিদ্যালয়ে তার প্রথম শিক্ষা শুরু করে সে কবিতা, ছড়া ইত্যাদি শিখতে শুরু করে। শিক্ষকেরা সেই কবিতা, ছড়াগুলি ছন্দের মাধ্যমে শিশুদের শেখাতে শুরু করেন। তাতে শিশুদের মনে রাখার ক্ষমতাও বাড়তে থাকে। আনন্দের সহিত বিদ্যালয়ে তাদের পাঠ্যবই-এর ওপর আগ্রহ বাড়তে থাকে। সংগীত শিক্ষা শিশুদের সার্বিক বিকাশে অসাধারণ প্রভাব ফেলে। সংগীত শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের জ্ঞানের বিকাশ হয়, সাথে সামাজিক ও শারীরিক বিকাশও হয়। গবেষণায় দেখা গেছে সংগীত শিক্ষা শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং তাদের ভাষাগত দক্ষতা ও মানসিক বিকাশেরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, সংগীত শিক্ষা মস্তিষ্কের বিকাশে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাতে পারে। নিউরোসায়েন্টেফিক গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে একটি যন্ত্র বাজাতে শেখা বা বাদ্যযন্ত্রের ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত থাকা কোষ স্নায়বিক পথকে উদ্দীপিত করে। মস্তিষ্কের বৃদ্ধি বাড়ায়। শরীরের মধ্যে আবেগের পরিবাহন করে নিউরোট্রান্সমিটার নামক এক রাসায়নিক দ্রব্য যা স্নায়ুর প্রেরক হিসাবে কাজ করে। যখন কোনো মস্তিষ্কের কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটে এবং মানসিক রোগের ঔষধ প্রদান করা হয় তখন স্নায়ুতন্ত্রের নিউরোট্রান্সমিটারের কাজের ওপরই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যে সব শিশুরা নির্দিষ্ট সময় হওয়ার আগেই জন্ম নেয় তাদের মস্তিষ্ক বিকশিত হয় না পুরোপুরি। সংগীতকে ব্যবহার করে এই ঘাটতি পূরণ করা যাবে কিনা এই নিয়ে সুইজারল্যান্ডে গবেষণা চলছে। জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দু সপ্তাহ বয়সের মেয়ের ওপর গবেষণা চলেছে। তার নির্দিষ্ট জন্মের সময়ের তিনমাস আগে জন্মানোর কারণে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ হয়নি। তাকে সপ্তাহে তিনবার সংগীত শোনানো হয়েছে এবং ধীরে ধীরে তার প্রভাবও লক্ষ্য করা গেছে। এই গবেষণায় প্রমাণিত হয় প্রিম্যাচিওর শিশুদের ওপর সংগীত এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাদের মস্তিষ্ক বিকাশে। Schlang elal (2005) পাওয়া গেছে, যে শিশুরা সংগীত প্রশিক্ষণ পেয়েছে তাদের মস্তিষ্কের বৃদ্ধির হার বেশি দেখা গেছে। অধ্যাপক অধীর বাগচী তাঁর সুর-চিকিৎসা বইয়ে বলেছেন “মানুষের সকল চিন্তা, আবেগ, অনুভূতি ও কাজের রহস্য রয়েছে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে। মস্তিষ্কের বৃদ্ধিতে স্নায়ুতন্ত্রের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” [সুর-চিকিৎসা, অধীর বাগচী, পৃ: ২২] তাই তিনি বলেছেন, স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও ভারসাম্য রক্ষা করতে সুরের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সংগীত শোনা ও বাজানোর সময়ে প্রেফ্রন্টাল কটেক্স, মটর কর্টেক্স, করপাস ক্যালোসাম, অডিটরি কর্টেক্স সক্রিয় হয়ে ওঠে যা মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়। তাই যেসব শিশু সংগীত শিখতে শুরু করে তাদের স্নায়ু আরও শক্তিশীল হতে থাকে ও তা মস্তিষ্কের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

সংগীত শিক্ষায় স্মৃতি উন্নত হয়। এটি মনোযোগ এবং একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে। সংগীতের মাধ্যমে তারা দলগত কাজ সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা আর্জন করে। শিশুদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে সমস্ত শিশুরা নিয়মিত সংগীত শিক্ষা চর্চা করে তাদের মুখস্থ করার প্রবণতা বেশি থাকে। তারা অন্যান্য বিষয়েও পারদর্শী হয়। এর কারণ হল কোনো গান গাওয়ার সময় শিশুরা সুর বা গান তাড়াতাড়ি মুখস্থ করতে পারে এবং তাদের মনে রাখার ক্ষমতাও বাড়তে থাকে। এই কারণেই বাবা-মা এবং শিক্ষকেরা কোনো বিষয় মুখস্থ করানোর জন্য শিশুদের গান গেয়ে সুরের সাথে মুখস্থ করায়, যাতে তাদের আগ্রহ বাড়ার সাথে সাথে মনে রাখার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

সংগীত শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের ভাষাগত দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়। শব্দ ও সুরের পার্থক্য বোঝার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে সংগীত শিক্ষা গ্রহণকারী শিশুরা পড়াশোনায় ভালো ফলাফল করে এবং তাদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার বেশি থাকে। সংগীত শিক্ষা শিশুদের গণিত এবং বিজ্ঞান শিক্ষার ভিত্তি মজবুত করে, যা তাদের ভবিষ্যতে আরও ভালো শিক্ষার পথে পরিচালিত করতে পারে। সংগীত শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। সংগীত শিক্ষা একটি শিশুর মধ্যে কল্পনাবোধ জাগাতে পারে, যার দ্বারা সে পরিবেশের সাথে নিজেকে মেলাতে সক্ষম হয় এবং নতুন সুর, কথা লিখতে চেষ্টা করে। সংগীত শিক্ষা একটি শিশুর শ্রবণক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে সমস্ত শিশুরা নিয়মিত গান গায় তাদের চাপ কম সৃষ্টি হয়। সর্বদা খুশি খুশি থাকে। আনন্দের সহিত সকল প্রকার কাজে নিযুক্ত হতে পারে।

স্কুল শিক্ষায় সংগীতের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক নিবন্ধে অধ্যাপক দেবাশিস মণ্ডল আলোচনা করেছেন যে, সংগীত শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের জীবনে সুস্থ মানসিক বিকাশ সম্ভব। তিনি বলেন, সংগীত, নৃত্য ও নাটকের মধ্যে দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা মানসিক প্রশান্তি লাভ করে এবং সমাজের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও সংগীত শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীলতা ও সামাজিক দক্ষতা অর্জন করে যা তাদের জীবনে সূদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন — শিক্ষায় দুটো আকর্ষণকে তুলে ধরার প্রয়োজন আছে, প্রথমত আবেগ ও অনুভূতির সুসংহত বিকাশের মাধ্যমে মানবিকতাবোধের বিকাশ জাগিয়ে তোলা ও দ্বিতীয়ত বিজ্ঞান ও সামাজিক বোধ দিয়ে জ্ঞানের বিকাশ ঘটা। কিন্তু বর্তমান শিক্ষায় প্রথমটিকে পরিহার করে দ্বিতীয়টির চর্চা ও অনুশীলন করা হয়। যেহেতু বর্তমান সমাজে মানুষ ক্রমাগত মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। সমাজের জটিল বিন্যাসের কারণে সেখানে সংগীত শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ ও সার্থক ভূমিকা পালন করতে পারে।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তাঁর “শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে সংগীতের স্থান” প্রবন্ধে বলেছেন, “আত্মপ্রকাশের জন্যে বাঙালি স্বভাবতই গানকে অত্যন্ত করে চেয়েছে। সেই কারণে কানাড়া, আড়ানা, মালকোশ রাগ থাকা সত্ত্বেও বাঙালিকে কীর্তন সৃষ্টি করতে হয়েছে।” [সংগীত চিন্তা, পৃ: ৭৪] গানকে ভালোবেসেছে বলেই গানকে আদর করে আপন মনের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করতে চেয়েছে। পশ্চিমবাংলায় তাই রাগ-রাগিনীর ওপর ভিত্তি করে বহু বাংলা আধুনিক গান সৃষ্টি হয়েছে।

‘ছাড়পত্র’ পত্রিকায় ফাতেমা আহমেদ কলি তার একটি লেখা ‘শিশু শিক্ষায় সংগীতের প্রয়োজনীয়তা’ লিখেছেন সংগীত, বাদ্যযন্ত্র এবং নৃত্যের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষার উন্নতি ঘটে। সংগীত শিশুদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাদের সামাজিক দক্ষতা বাড়ায়। তিনি সম্প্রতি এক জাপানি বই পড়ে সেখানকার বিদ্যালয়ের সংগীত শিক্ষা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। সেখানে ইউরিদমিক্স পদ্ধতিতে বিদ্যালয়ে প্রতিদিন একটি করে ক্লাস নেওয়া হয়। এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পিয়ানো বাজায় এবং তার তালে তালে শিশুরা নৃত্য পরিবেশন করে। এই ইউরিদমিক্স-এর লক্ষ্য হল শিশুদের শরীরে ও মনের মধ্যে তাল ও ছন্দের বোধ জাগানো।

প্রথম আলো পত্রিকায় সৌরীন রহমান লিখেছেন একটি শিশুর বৃদ্ধিতে শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা জরুরি। একটি শিশুর জন্মের পর থেকে তার শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি শুরু হয়। সংগীত হল এমন একটি কলা যা শিশুর মন, শরীরে শান্তি আনতে পারে। তাই ছোটবেলা থেকেই সংগীত শেখানো কতটা জরুরি সেই কথাই তিনি লেখেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটা ভালো গান শুনলে মস্তিষ্ক থেকে একধরনের ডোপামিন নিঃসৃত হয়, তার ফলে একটি শিশু যে কোনো কিছু শেখার আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। তাই শিশুর দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সংগীত, খেলাধূলা, নাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষার পাঠক্রম

অতি শৈশব স্তর বা প্রাক প্রাথমিক পর্যায় : এই স্তরের শিশুদের আলাদা করে সংগীত বিষয়ের ওপর কোনো পাঠক্রম নেই। এই পর্যায়ে মূলত ৩ থেকে ৫ বছর বয়সের শিশুরা থাকে। শিশুদের মধ্যে এ সময়ে প্রচুর কৌতুহলপূর্ণ মন থাকে। এই পর্যায়ে সমস্ত শিক্ষাই সংগীত, অঙ্কন, নৃত্য ক্রিয়াকলাপের মধ্যে দিয়েই হওয়া উচিত। এই স্তরে শিশুদের ইংরাজী Rymes, বাংলা ছড়া গান গেয়ে মুখস্ত করানো যায়। জাতীয় সংগীত, প্রার্থনা সংগীত, রবীন্দ্রনাথের গান, কাজী নজরুল ইসলামের গানের মধ্যে দিয়ে তাদের মধ্যে সুর, ছন্দ, তাল ও বাংলা ভাষা আয়ত্ত্ব করার বোধ জাগাতে হবে। এই স্তরে শিক্ষার লক্ষ্য হল — আনন্দময় কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে শিশুদের শিক্ষায় মনোনিবেশ ঘটানো। শিশুকে স্বাধীনভাবে নিজের মনে কথা প্রকাশ করতে দেওয়া। শিশুকে ছন্দের ও সুরের মধ্যে দিয়ে সংগীতের সাথে পরিচয় করানো।

শৈশব স্তর বা প্রাথমিক স্তর : এই স্তরে সংগীত শিক্ষার ওপর বেশি জোর দেওয়া উচিত। সংগীত বিষয়ের জন্য আলাদা সময় নির্ধারিত করা উচিত। তাদের রাগ, শুদ্ধ ও কোমল স্বর চিনতে শেখানো উচিত। তালের জ্ঞান দেওয়া উচিত। এই প্রাথমিক স্তরে লক্ষ্য হল আনন্দ সহকারে জ্ঞান অর্জন করা। শিশুদের মধ্যে ভালো ও খারাপ দিক বিবেচনা করতে শেখা। তাদের মধ্যে ছন্দের অনুভূতি জাগিয়ে তোলা। এই স্তরে শিশুরা চারপাশের পরিবেশ থেকে জ্ঞান উপলব্ধ করে। তাই তারা যা দেখছে সেগুলি নিজের মন থেকে ব্যক্ত করানো উচিত। তা গানের মাধ্যমে হোক বা নাচের মাধ্যমে কিংবা অঙ্কন, মাটির মডেলিং তৈরি করে। এই সমস্ত কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করালে বাচ্চারা মানসিক দিক থেকে ভালোভাবে বাড়তে পারবে। বিদ্যালয় শিক্ষা পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হল, যাতে শিশুরা বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায়। কোনো মানসিক চাপের স্বীকার তারা যেন না হয়। কারণ মানসিক চাপ যত সৃষ্টি হবে, বিদ্যালয়ে ড্রপ-আউটের হারও বাড়তে থাকবে। তাই সমস্ত বিদ্যালয়ে শিশুদের সার্বিক বিকাশের কথা মাথায় রেখে প্রত্যেকটি বিষয়ের সাথে সংগীত বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

National Curiculum Framework (NCF 2005)-এ বলা হয়েছে বিভিন্ন আর্থসামাজিক এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবার থেকে একটি বিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা শিক্ষা গ্রহণ করতে আসে। তাদের সমানভাবে শিক্ষা দেওয়া আবশ্যক। বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের পরিবর্তন হওয়ার কারণে একটি শিশুর ওপর মানসিক চাপ ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি শিশুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল হল ৬ থেকে ৮ বছর বয়স পর্যন্ত। এটি হল অতি শৈশবস্তর। এই স্তরেই প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়ে থাকে। এই সময় একটি শিশুর শারীরিক, মানসিক বৃদ্ধি হয় বিদ্যালয়ের শিক্ষাগ্রহণ করে। তাই এই নীতিতে বলা হয়েছে যদি পাঠক্রমের সাথে সংগীত, ছড়া, খেলাধূলার মাধ্যমে একটি শিশুকে কথা বলার ধরণ, বোঝানো, শোনা ইত্যাদি প্রকাশ করা শেখানো হয় তাহলে শিশুর বিদ্যালয়ের শিক্ষার ওপর আগ্রহ জন্মাতে থাকবে। আট বছর বয়স পর্যন্ত হল অতি শৈশব স্তর। এই স্তর ECCE (Early Childhood Care and Education)-এর আওতায় থাকে। এই স্তরে শিশুদের নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে শেখানো উচিত। তাদের সযত্নে পরিচর্যা করা উচিত। তারা যেন কোনোরকম মানসিক চাপ বিদ্যালয়ে অনুভব না করে। তাদের মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক বিকাশ সমানভাবে হয় তার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সংগীতকে প্রাধান্য দিতে হবে। সংগীতের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেকটি Rhymes, বাংলা ছড়া শেখাতে হবে। যাতে খুব সহজেই তারা না ভয় পেয়ে ভালোবেসে পড়ার আগ্রহ দেখাতে পারে।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-এ বলা হয়েছে একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ছয় বছর বয়সের আগেই শুরু হয়ে থাকে। এই সময় পাঠক্রমের সাথে যদি খেলাধূলা, নাচ, গান বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে একটি শিশুর মানসিক বৃদ্ধি ও সামাজিক দিক থেকেও তার বিকাশ হবে। এ‍ই কথা মাথায় রেখে NCERT-এর জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা তৈরি হবে যেখানে ৩ থেকে ৮ বছর বয়স পর্যন্ত একটি পাঠক্রমের রূপরেখা তৈরি হবে, যার মধ্যে খেলাধূলা, গান, কবিতা বিষয় অন্তর্ভুক্ত হবে।

NCERT-এর National Focus Group Arts, Music, Dance and Theatre-এ বিদ্যালয়ের শিক্ষায় সংগীত, নৃত্য, কলাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বহু বছর ধরে আইনের সুপারিশ হলেও বর্তমান অবস্থায় দেখা গেছে ধীরে ধীরে আমাদের সাংস্কৃতিক দিক হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার শিল্প শিক্ষার ওপর উৎসাহ কমতে থাকছে। স্কুলের উৎসবগুলির সময় যেমন — স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, প্রতিষ্ঠা দিবস-এ সংগীত, নৃত্য, নাটক যতটা প্রাধান্য পায় ততটা প্রাধান্য রোজকার শ্রেণীকক্ষে খুব কম দেখা যায়। ফোকাস গ্রুপের আলোচনায় বলা হয়েছে যে পাঠক্রমের কলাবিদ্যাকে বাধ্যতামূলক করা উচিত।

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার দিক ভালোভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে, শৈশব স্তর থেকে ছেলেমেয়েরা সংগীত, নৃত্য, খেলাধূলায় আনন্দের সহিত শেখার আগ্রহ দেখায়। কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের যখন বয়স বাড়তে থাকলে, মোটামুটি ষষ্ঠশ্রেণী অবধি পৌঁছলেই তাদের অন্যান্য বিষয়ের জন্য অনেক সময় দিয়ে হয়, তখন তারা আলাদা করে সংগীত, নৃত্যে সময় বের করতে পারে না। খুবই কম সংখ্যক শিশুরাই সংগীত নিয়ে আগ্রহ দেখায়। বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষদের তা নিয়ে ভাবা উচিত। বিদ্যালয়ে সংগীত বিষয়ের জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করতে হবে। নির্দিষ্ট জায়গা রাখতে হবে। যাতে প্রত্যেকটা শ্রেণী থেকে ছাত্রছাত্রীরা সংগীত শেখার সুযোগ পায়। বাদ্যযন্ত্র রাখতে হবে যেমন — হারমোনিয়াম, তবলা, কী বোর্ড, তানপুরা। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শেখার আগ্রহ দেখাতে হবে। তাতে শৈশব স্তর থেকেই শিশুদের সুর, ছন্দ, তালের জ্ঞান সরবরাহ করতে হবে। আট বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাতে হবে। যাতে প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানের গান তারা শিখতে পারে। সংগীত বিদ্যালয়ের পরিবেশে শুধুমাত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে নয়, বরং অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে একটি শিক্ষামূলক সরঞ্জাম হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। সংগীত শিক্ষা শুধু একটি বিষয় নয়, বরং এটি শিশুদের সার্বিক বিকাশে সাহায্য করে। বিদ্যালয়ের সংগীত চর্চার কোনো বিকল্প নেই। এটি আবেগীয় এবং সামাজিক শিক্ষার জন্য অপরিহার্য।

“যে মানুষের আত্মার সঙ্গে সংগীতের বাস সেই মানুষই ভালোবাসতে জানে।”

— এডমন্ড স্মিথ

তথ্যসূচী:

1. NCERT. (2006). March. National Focus Group on Arts, Music, Dance and Theatre Position Paper.

2. NCERT. (2005) National Curriculum Framework 2005, New Delhi, India.

3. NEP (2020) New Education Policy

4. সঙ্গীতচিন্তা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

5. সুর-চিকিৎসা- অধীর বাগচী

6.http://debasishrbu.blogspot.com/2016/08/blog-post.html

7. শিশু শিক্ষায় সংগীতের প্রয়োজনীয়তা (chharpatra.com)

8. মস্তিষ্কের বিকাশে সংগীতের ভূমিকা – DW – 31.01.2018

9. সংগীত শিশুদের সৃজনশীল করে তোলে | প্রথম আলো (prothomalo.com)