Dr. Krisnapada Das
Abstract
Drama has always mirrored societal changes and served as a powerful tool for both entertainment and social reform. From the early influences of Charyapad and Sri Krishnakirtan, which drew from public life, drama evolved to reflect the socio-political currents of its time. Beginning with the British era, when theatre construction gained momentum, playwrights like Ramnarayan and Michael Madhusudan Dutt laid the foundation for modern drama by integrating epic themes and addressing illusions of traditional forms. Over time, drama transcended entertainment to become a medium for protest, reform, and societal commentary.
The socio-political upheavals of the 20th century, including the Partition of Bengal, world wars, and the emergence of movements such as the Communist Party of India, profoundly influenced dramatic narratives. Notable playwrights and directors like Rabindranath Tagore, Tulsi Lahiri, and Bijan Bhattacharya incorporated themes of survival, human struggle, and social justice into their works, reflecting the turbulent history of Bengal.
Despite the challenges posed by modern entertainment mediums such as television and digital platforms, drama continues to thrive through the dedication of individuals and groups committed to preserving its essence. The group theater movement, in particular, emerged as a courageous voice for life and truth, breaking away from traditional constraints and addressing the concerns of the common people. While urban theaters have flourished, the potential of rural and suburban drama remains largely untapped, necessitating further exploration and support to bridge this divide.
Key Words
Drama evolution, Charyapad, Sri Krishnakirtan, social reform, British period theater, group theater movement, socio-political impact, Rabindranath Tagore, rural and urban theater, modern entertainment challenges.
চাওয়া-পাওয়ার সীমানায় নাটক
ড. কৃষ্ণপদ দাস
নাট্যচর্চার সূচনা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে চর্যাপদ ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। কেননা পদকর্তাদের লেখনীতে মুখ্য রয়েছে জন-জীবন। আবার এই জনজীবনই নাটকের প্রধান উপকরণ। সময়ের পরিবর্তনের ঢেউ নাটকের বিষয়েও পরিবর্তন এনে দিল। ব্রিটিশ আমল থেকেই এদেশে নাট্যশালা তৈরীর প্রবণতা দেখা যায়। ধনী জমিদার নাট্যশালা তৈরী করে নিজেকে মহান ভাবেনা সে সময়ের সকল নাট্যকার হিসেবে রামনারায়ণের নাম করতেই হবে। তারপর হার ধরলেন মধুসূদন। অলীক কুনাট্য থেকে নাটককে মুক্তি দিতে লিখলেন মহাকাব্যের ঘটনা অবলম্বনে নাটক। তার পরের ইতিহাস সকলের জানা। আমাদের দেশীয় রঙ্গালয়ে রামনারায়ণ প্রথম মৌলিক নাটক রচনা করেন – ‘কুলীন-কুল-সর্বস্ব’। বেলগাছিয়া নাট্যশালায় অভিনীত হয়। তখনও কিন্তু নাটকের মধ্যে শৌখিনতা, বিনোদন, সমাজ সংস্কারের বিষয় প্রাধান্য পেত। তারপর মৌলিক নাটকের বিকাশ শুরু হলে নাটক অন্য রূপ নিলো। আনন্দের উপকরণ ছাড়াও সমাজ সংস্কারের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠল নাটক। অস্ত্রের সেই ঝনঝনি দেখার জন্য তৈরী হল ১৮৭২ সালে জাতীয় নাট্যশালা বা National Theatre.
এর পরের ইতিহাস কারও অজানা নয়। ১৯০৫ যে বঙ্গভঙ্গ, ১৯১৪ – প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু, ১৯২১ যে মস্কোতে গঠিত ভারতের প্রবাসী কম্যুউনিস্ট পার্টি, ১৯২৩ যে AITUC-র প্রতিষ্ঠা, ১৯২৯ যে মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা – এসবের মধ্যে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদের করাল থাবা সমাজের বুকে আকার নিল। সামাজিক এই চিত্র নাটকেরও স্থান করে নিল। অন্যদিকে অজানাকে জানার ইচ্ছা মানুষের সহজাত। কতরকম যন্ত্র আবিষ্কার হল। সুচতুর মানুষ যন্ত্র আর প্রযুক্তির কৌশলে মানবতার কণ্ঠ রোধ করতে চাইল – এ চিত্র দেখলাম রবীন্দ্রনাথের ‘মুক্তধারা’ নাটকে। সমাজে ভাঙন প্রকট, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা তুঙ্গে এই সময়ের সমাজিক দায়বদ্ধতা তুলে নিলেন প্রগতি-লেখক-সংঘ-সময়কাল ১৯৩৬। উল্লেখযোগ্য অনেকেই স্বল্প সময়ে দু-একটি নাম বলতেই হয়। তুলসী লাহিড়ী, বিজন ভট্টাচার্য, বাদল সরকার, শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, মনোজ মিত্র, মোহিত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
১৯৩৯। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাংলার পরিস্থিতি উত্তাল। ১৯৪০ – ৫০ -এই দশ বছরে সামাজিক ও রাজনৈতিক সব পট ভূমি বদলে গেল। প্রাকৃতিক ঝড়-বন্যা, সৃষ্টি করা দুর্ভিক্ষ যাকে বলি ৫০ এর মন্বন্তর, লক্ষ লক্ষ লোক মারা গেল, ছায়াসুনিবিড় শান্তিময় গ্রামীণ জীবন, অর্থনীতি সব ভেঙে চুরে তৈরী হল চলমান মুখর সংগ্রাম; অশান্ত জীবন-যাবন প্রণালী। এই পরিস্থিতিতে বাঁচার লড়াই চলে এলো নাটকের উপজীব্য হয়ে। সামাজিক দায়বদ্ধতায় জড়িত নাট্যকার, পরিচালক, প্রযোজন, বিভিন্ন নাট্যব্যক্তিত্ব সকলেই নাটককে দেশীয় গণ্ডিতে আবদ্ধ না রেখে দেশান্তরে ছড়িয়ে দিলেন। নাটক যেহেতু মানুষের কথা বলছে তাই এটা একটা প্ল্যাটফর্ম বা মিডিয়ার রূপ নিল। কিন্তু বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব জয়যাত্রায় সহজ বিনোদনের জন্য এসে গেল নানা টি.ভি. সিরিয়াল, দামী মোবাইল, ল্যাপটপ, দেশী-বিদেশী মনোরঞ্জনী চ্যানেল। বর্তমান প্রজন্মের একটা অংশ নাটকের দিক থএকে বা পথ-পরিশ্রম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ঠিকই; তবু আশার দিকও রয়েছে। নাট্যশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে বেশ কিছু ঝকঝকে কৃতী ব্যক্তিত্ব সর্বদা চেষ্টা করেন যাচ্ছেন পড়াশুনা ও গবেষণার মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য অনেকেই – কয়েকটি নাম বলি, সৌমিত্র বসু, দেবশঙ্কর হালদার, বিভাস চক্রবর্তী, নন্দন সেন, সম্প্রতি চলে গেলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, ঊষা গাঙ্গুলী প্রমুখ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ভারতের জনজীবনে যে আমূল পরিবর্তন এসেছি, তার হাত ধরে তৈরী হল গ্রুপ থিয়েটার। গ্রুপ থিয়েটার জীবনের কথা বলতে সাহস দেখালো। সাহস দেখালো – শাসকও যদি অন্যায় বলে তার প্রতিবাদ করতে। গ্রুপ থিয়েটার আরও শেখালো অন্যায়ের প্রতিবাদ মানেই কিন্তু জঙ্গিপনা নয়। তৎকালীন সরকার নাট্যদলের টিকে থাকার জন্য বেশ কিছু সদর্থক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বলে কিন্তু তা সীমাবদ্ধ ছিল কেবল শহরের বুকে। শহুরে নাট্যদল প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হলেও জেলা বা শহরতলির নাট্যদলের অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তারা পিলসুজের মতো অন্ধকারেই রয়ে গেল। কেয়কটি নাটক আলোচনায় আমার বক্তব্য স্পষ্ট রূপ পাবে।
• দেবেশ রায়ের লেখা ‘তিস্তা পারের বৃত্তান্ত’। নাট্যবিষয়ক প্রান্তিক জনজীবনের সমস্যা। প্রান্তিক মানুষেরা চিরকাল অবহেলিত, নিবীড়িত। তাদের মাথা তুলে কথা ব বার যেন কোন অধিকার নেই। চিরদিন তো এভাবে যায় না। ঘা খেতে খেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় যখন, তখনই বাঘারু, কেলু, ফ্যাতারুরা অনুভব করে সামাজিক উন্নয়ন হয়, এম.এল.এ সাহেবকে নিয়ে হৈচৈ হয়, উন্নয়নের রথ উড়ে জলে কিন্তু কেউ জানতে চায় না উন্নয়নের পিছনে কাদের শ্রম ছিল ? কারা মাটি কাটল ? তবে না উন্নয়নের ধ্বজা উড়ল ! আসলে চিরকাল শাসকসমাজ এই সত্য এড়িয়ে যায় বলেও এই ধরণের বিষয় অবলম্বনে নাটক তৈরী হওয়া বিশেষ প্রয়োজন।
• ব্রাত্য বসুর লেখা ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ নাটকে ১৯৬০ – ৭০ দশকের রাজনৈতিক বন্দী সব্যসাচী সেন ১৮৭৬ সালে পুলিশি হেফাজত থএকে পালান – দীর্ঘ ২৬ বছর বাদে ফিরে আসেন এক কট্টর মার্কসবাদী নেতার ভূমিকায়। তিনিও অনুভব করেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছুর পরিবর্তন করতে হয় ; নয়ত জীবন্মৃত হয়েই বেঁচে থাকতে হয়।
• অর্পিতা ঘোষের নির্দেশনায় পঞ্চমবৈদিক উপস্থাপন করে পশুখামার নাটকটি। মালিকের অত্যাচারে পশুখামারের পশুরাও যে বিপ্লবী হয়ে ওঠে, তারাও নিজেদের মতো বিধি তৈরী করে, ক্ষমতার লড়াইয়ে যে জেতে একচ্ছত্র অধিকার তার। সেই নিজের ইচ্ছামতো আইন তৈরী করে, পছন্দ না হলে সংশোধন করে, নিজেকে বাঁচিয়ে আইনের অপপ্রয়োগ করে অন্যদের ওপর। একটু ধৈর্য্য সহকারে দেখলেই বোধগম্য হবে এ নাটকের Call show যে বাতিল হবে এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।
• মনোজ মিত্রের নির্দেশনায় ‘অপারেশন ভোমরাগড়’ প্রযোজনা করে সুন্দরম্ নাট্যগোষ্ঠী। রূপকথার আদলে বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলে সরকারের পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে স্বজনপোষণের রূপটি তুলে ধরেছেন।
• কল্যাণীর ঋত্বিক সদনে অভিনীত হয় ‘হারিয়ে যায় মানুষ’ নাটকটি। সন্ত্রাসবাদের আদর্শে দীক্ষিত অনীক, সুহাস, রাহুল প্রমুখ। প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারেও বন্টনে সরকারী দুর্নীতি ধরা পড়তেই ওরা মাওবাদীর তকমা পায়। অথচ ওরা তো আমাদেরই কারোর ছেলে, কারো বন্ধু, তাই বা স্বামী। মাওবাদীর তকমায় হারিয়ে যায় মানুষ।
• সংগীত শিল্পী গওহরজানের জীবন নিয়ে লেখা ‘গওহরজান’ নাটক। ছোট বেলা থেকেই অসামান্য প্রতিভার অধিকারী গওহরজান। তাঁর শিল্পী সত্ত্বা যত সুন্দরই হোক, তাঁর নারীসত্তা সামাজিক ভাবে বঞ্চিত, নিপীড়িত, অবহেলিত। সাঙ্গীতিক আবহে বহরমপুরের প্রান্তিক দল গওহরজানের ট্রাজিক জীবন সংগ্রাম অভিনয় করে দেখালে দর্শকের চোখের কোন্ চিক্ চিক্ করে ওঠে।
• ঊষ্ণা গাঙ্গুলীর নির্দেশনায় ‘হাম মোখতারা’ নাটকে পাকিস্তানের এক নির্যাতিতা নারীর প্রতিবাদী সত্তা দেখানো হয়েছে। মৌলবীদের অহেতুক রোজ-নামচা থেকে বেরিয়ে এক নারী ‘মানুষ’ হিসেবে নারীর বিচার চেয়েছে পুরুষ তান্ত্রিক সমাজের কাছে। খুব সহজ সরল কাহিনীও যে প্রতিবাদী চরিত্রের জন্ম দিতে পারে – তা দেখালেন বঙ্গকর্মীর কুশীলবেরা।
এতক্ষণ যে নাট্য কাহিনীগুলো অতি সংক্ষেপে উপস্থাপন করলাম এ থেকে এটা স্পষ্ট হল যে বাংলায় থিয়েটার কর্মীদের সম্ভাবনা ছিল অসীম, কিন্তু ছিল তাদের পেশাগত সমস্যা। এটা কেন হল? আমার মতে –
১. থিয়েটারের জন্য গভীর মনোযোগ ও অনুশীলন দরকার – যা চাকরী করে করা সম্বব নয়।
২. চাকরী না করলে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় – যা নিজের, পরিবারের তথা সমাজের পক্ষেও ক্ষতিকর।
৩. সরকারী অনুদান থাকলেও দর্শকের দাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভর করতেই হয়।
৪. প্রেক্ষাগৃহের ভাড়া, বিজ্ঞাপনের খরচ যোগানো অসম্ভব হলেও আপ্রাণ চেষ্টা করে দল আর্থিক ক্ষতি মেটাতে, কিন্তু সম্ভব হয় না।
৫. থিয়েটারকে সকল নাট্যপ্রেমীদের কাছে জীবিকা করে তুলতে সীমাবদ্ধতা হ্রাস পাবে বলেই মনে হয়।
নাটক জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। আমাদের প্রতিটি নাট্যশিল্পীসত্তার দাবি থিয়েটারকে বাঁচাতেই হবে। সরকারকেই সেই গুরুদায়িত্ব নিতে হবে। মনে রাখতে হবে – নাট্যচর্চা কেবল শৌখিনতা নয়, বাণিজ্যীকরণ নয়, নাটক মানুষের জন্য মানুষের শিল্পীসত্তা জাগরণের জন্য, তার হাসি-কান্নার সহমর্মী হবার জন্য।
নাট্য সৃষ্টির ঊষাকালে নাটক ছিল মূলতঃ পৌরাণিক কাহিনী বা দেব-দেবীর নির্ভর। তারপর সময়ের পরিবর্তনে নাটক জীবনের কথা বলতে শুরু করল। সকলেই জানি, বাংলা সাহিত্য ধারার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম নাটক এবং একই সঙ্গে পাঠ ও অভিনয়ের মেলবন্ধন। বর্তমানে নাটকের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞাপন, থিয়েটার কোম্পানী, নাটকের কুশীলবেলা এবং দর্শক। নাটকের বিষয় তৈরী হয়েছে নাট্যকারদের ভিন্ন ভিন্ন সচেতনতা থেকে। নাটক যেহেতু দেশ-কাল-পাত্রের পরিপ্রেক্ষিত তাই দেশভাগ, স্বাধীনতা অর্জন, সন্ত্রাস, আন্দোলন, অধিকারবোধ সব উঠে এসেছে নাটকে। তাই একুশ শতকে বাংলা নাটকে প্রত্যাশা কি – এ প্রশ্নের সম্মুখীন হলে এককথায় উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন।
যে কোন সাহিত্যকর্ম সমাজ বাদ দিয়ে সম্ভবই নয়। নাটক ও সাহিত্য কর্ম – তাই সব দেশে সবকালে তৎকালীন প্রেক্ষিতকে নাটকের বিষয়বস্তু করে সমাজের দর্পণ হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছেন নাট্যকারেরা। সাহেবদের হাত ধরে এদেশে নাটকর্চার সূত্রপাত। তখন অবশ্য নাটক ছিল কেবল শৌখিনতার তকমাধারী। ধীরে ধীরে নাটক জনপ্রিয় হতে শুরু করে। ব্রিটিশদের সহযোগিতায় এদেশে বাবুসমাজ নাট্যশালা বা রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠার দিকে নজর দিলেন। এ প্রসঙ্গে বিশেষ ভাবে স্মরণীয় লেবেডেফ সাহেব।
প্রসঙ্গত বলা ভালো, একুশ শতকে নাট্যচর্চা প্রসঙ্গে মূল্যবোধ বিশেষভাবে জায়গা করে নেয়। প্রকৃতপক্ষে মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে জীবনবোধ, জীবনচর্চা ও সমকালীন সভ্যতা-সাহিত্য। তাই মূল্যবোধ শব্দটি বড়ো আপেক্ষিক। আদিম যুগ থেকেই সমাজে পরিবর্তনের ঢেউ চলেছে সেই হিসেবে মূল্যবোধও পরিবর্তনশীল। আবার সমাজ বাদ দিয়ে সাহিত্য নাটক কিছুই হওয়া সম্ভব নয়, তাই সমাজের প্রতিটি ঘটনার খুঁটিনাটি মূল্যবোধ নাটকে স্থান পায় বলেই নাটক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যেমন – দেবেশ রায়ের ‘তিস্তা পারের বৃত্তান্ত’, কুন্তর মুখোপাধ্যায়ের ‘কালচক্র’ ইত্যাদি। যেমন – জ্যোৎস্নাময় ঘোষের লেখা ‘জিয়নপালা’ আসলে নাটক তো জীবনেরই অঙ্গ, তাই জীবনের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ, রাজনীতি-সমাজনীতি সব এসেছে নাট্যকারের মূল্যবোধের পথ ধরে। নাট্যকার নন্দন, সেনের ‘বিয়ে গাউনি কাঁদন চাপা’ – এটি প্রান্তিক নারীর জীবন – যন্ত্রণার ছবি ; সামাজিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে ব্রাত্যজন অভিনীত ‘রুদ্ধ সংগীত’ নাটক। সমাজের খুন, আত্মরক্ষা, অবৈধ-প্রেম, সন্তানের দায়িত্ব পালন না করার ছবি, যৌথ পরিবারের ভাঙন – কি আসেনি নাটকে ! যে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ আমাদের সংকটে ফেলেছে, – তার জন্য সভ্যতাগর্বী ক্ষমতালোভী মানুষেরাই দায়ী। এর ফলে কত কত বন্যপ্রাণী অবলুপ্তির পথে – এই বিষয় নিয়ে নাটক লিখলেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় ‘ধৃতবানসী’ – বহুরূপীর প্রযোজনা এটি। অর্থ আর ক্ষমতার লোভ মানুষকে মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিতে বাধ্য করেছে। এই সব অসাম্য থেকে ব্যক্তি মানুষ ও সমাজকে কলুষমুক্ত করে তোলা নাট্যকারের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তবে নাটক ছাড়াও তো বিনোদনের অনেক সহজ এবং চটুল মাধ্যম এসে গেছে – তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নাটককে অবিরাম পরিশ্রম করতেই হবে। তবু বলব, নাটকের কেবল আনন্দদান মুখ্য উদ্দেশ্য নয়; এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাণিজ্যিক সফলতা, পেশাদারিত্ব, লাভ-ক্ষতির হিসেব এবং সমাজ-সংস্কার। নাট্যচর্চা আজ অনেকেরই পেশা। মন প্রাণ দিয়ে নাট্য শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে নেমেছন যাঁরা – তাঁদের চর্যাতেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে নাটক জীবনধর্মী শিল্প হিসেবে মর্যাদা পাবে। এটাই প্রত্যাশা, এটাই প্রাপ্তি।
তথ্যসূত্র
১) অদ্বিতীয় নাট্য সাপ্তাহিক, প্রতি বৃহস্পতি নাট্য মুখপত্র, বর্ষ – ২১, সংখ্যা ১০৪০, তারিখ – ০৯.০৬.২০১৬, ইব্রাহিম আলেকাজির মন্তব্য
২) নাট্য সংবাদ সাপ্তাহিক, প্রতি বৃহস্পতিবার নাট্য মুখপত্র, বর্ষ – ২১, সংখ্যা – ১০২৫, তারিখ – ২৫.০২.২০১৬, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস মন্তব্য করেছন
৪) বাংলা নাটক নাট্যতত্ত্ব ও রক্ষামঞ্চ প্রশাখা, ড. প্রদ্যোত সেুগুপ্ত, বর্ণালী, ৭৩, মহাত্মা গান্ধী রোড, কলকাতা – ৭০০০০৯
৫) নাট্যচিন্তা – বেঙ্গল লোলিত প্রিন্টার্স, প্রাঃলিঃ, ১০-বি, ক্রিক লেন, কলকাতা – ৭০০০১৪
৬) রঙ্গকর্মীর ‘হাম মোখতারা’, নাট্য মুখপত্র, বর্ষ ১৮, সংখ্যা ৮৭২, ৩১/০১/২০১৩
৭) নৃপেন্দ্র সাহা, ‘থিয়েটারের বাজার বা থিয়েটার বিপণনঃ একটি উৎকেন্দ্রিক প্রস্তাব, নাট্য আকাদেমি পত্রিকা সংখ্যা ১০, ২০০৪, পৃঃ ৭৮
৮) মনীশ মিত্র, ‘প্রসঙ্গঃ আজকের থিয়েটার, পঃ বঃ নাট্য আকাদেমি পত্রিকা সংখ্যা ১০, ২০০৪, পৃঃ ৯৪
৯) আশিস চট্টোপাধ্যায়, ‘তুই পেশাদার না মুই পেশাদার, নাট্য আকাদেমি পত্রিকা সংখ্যা ১০, ২০০৪, পৃঃ ৯৬
১০) রবিবাসরীয় জনতা – ২৩শে নভেম্বর, ১৯৮০-তে প্রকাশিত চৈতালী চট্টোপাধ্যায়ের আলোচনা থেকে প্রাপ্ত।
১১) ‘The Times of India’, Thursday, 16 November 2017, তে ব্রাত্য বসুর মন্তব্য।
১২) নাট্টান্বেষী – সম্পাদক – জয়ন্ত মালাকার, ৪০-এ/১, উপেন্দ্রচন্দ্র ব্যানার্জি রোড, কলকাতা – ৭০০০৫৪
ড. কৃষ্ণপদ দাস
৪৩৯, কালিকাপুর রোড, পোঃ মুকুন্দপুর,
২ নং ইস্টএন্ড পার্ক, ফ্ল্যাট নম্বর (জি-১),
কলকাতা – ৭০০০৯৯
ফোন নম্বর – 7003787726 / 9836680333
E-mail : krishnapadadas57@gmail.com