দ্রোহকাল- দেবাশিস মণ্ডল
সময়টাকে নাম দেয়া হয়েছে দ্রোহকাল। আর জি কর এখন শুধু একটি হসপিটাল নয় একটি আন্দোলনের অভিমুখ বা কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সারা দেশ এবং সারা পৃথিবীতে পরিচিত নাম। আন্দোলনটা শুধুমাত্র একজন চিকিৎসকের হত্যা ধর্ষণ অত্যাচারের ঘটনা নয়, ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরজি কর হাসপাতালের পরিসর ছাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ক্ষমতার লোভী একশ্রেণীর অমানুষদের বৃহৎ ষড়যন্ত্রকারী ব্যবস্থা। হিংস্র দানবীয় ক্ষমতার অধিকারী, অর্থলোভী মানুষদের যে সিন্ডিকেট, তার বিরুদ্ধে চিকিৎসক ও সর্বসাধারণের এক তীব্র ধিক্কার আন্দোলন। সেখানে এই সরকারের একনায়কতন্ত্র কায়েম করার জন্য চিকিৎসকদের মধ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে গভীর কদর্যতা হিংস্রতা এবং অর্থ উপার্জনের এক চরম ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। যা হাসপাতালের ভিতরকার সুচিকিৎসক ছাত্র, নার্স, কর্মী বাহিনী সবার কাছেই স্পষ্ট থানার সমস্ত অফিসাররাই তা জানেন, রাজনৈতিক নেতারা এখানে দিনে দুপুরে রাতে সব সময় অবাধ বিচরণ করার অধিকার নিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে। আর সমস্ত ব্যবস্থাটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য রাজ্যের প্রধান ক্ষমতাধর যে মানুষটি তিনি তার ক্ষমতাকে সেভাবেই নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরিকল্পনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হয়েছেন। সাধারণ মানুষ তার স্বরূপ সম্পর্কে অবহিত কিন্তু একটা হসপিটালে এই ধরনের অত্যাচার অবিচার ও হিংস্রতা কে যে তিনি সর্বতোভাবে সহযোগিতা করছেন এবং তার মৃত্যুর জন্য দায়ী মানুষগুলিকে আড়াল করার জন্য এবং সেখানকার হত্যাকাণ্ডের সমস্ত তথ্য প্রমাণ লোপাট করার জন্য খুব বড় ধরনের ভূমিকা তিনি নিয়েছেন। সেই ঘটনাও মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। রাজ্যের প্রধান ক্ষমতা ভোগী মানুষটির ক্ষমতা লিপ্সা অর্থলিপসা এবং ধর্ষক খুনি লুটেরাদের তার সঙ্গে যুক্ত হবার ঘটনা যখন গণমাধ্যম থেকে চিকিৎসক সমাজ এবং বিশিষ্ট মানুষেরা প্রকাশ করে ফেলে তখন তার মুখাপেক্ষী মানুষেরাও অনেকেই তীব্র ধিক্কারে পেটে পড়েন।
এবার আন্দোলন প্রসঙ্গে কিছু কথা আলোচনা করা যেতে পারে। আন্দোলন একটা চলছিল বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াগুলো এই আন্দোলনকে বয়ে নিয়ে চলেছিল। আরজিকর হাসপাতালে, হত্যাকাণ্ডের আগে থেকেই এই আন্দোলন চলছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অজস্র সাধারণ মানুষ শিক্ষিত সমাজ এবং নতুন প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রী যুবক-যুবতী কিশোর কিশোরী সবাই। ক্ষমতাধর অর্থলিপসুরা এর বিরুদ্ধে নানারকম ভাবে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা এবং অজস্র রকমের ও অজস্র মানুষের প্রতিবাদী মুখকে বন্ধ করে দেবার চেষ্টা হলে তা আরো বেশি করে সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ঘটনার সাক্ষী বাংলার মানুষেরা।