ঠাকুরবাড়ির দুই সংগীত বিদুষী : প্রতিভা ও ইন্দিরা
৩০
ডঃ জয়ন্তী মন্ডল
রবীন্দ্রনাথ তখন বিলেতে। জোড়াসাঁকো বাড়িতে বইছে গীতিনাট্যের হাওয়া। রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ‘মানময়ী’ গীতিনা্ট্যের জোড়াসাঁকোর বাড়ির আনাচে কানাচে। জোড়াসাঁকোর বাড়িতে ‘মানময়ী’র অভিনয় হলো কয়েকবার। এমন সময় রবীন্দ্রনাথ বিলেত থেকে এসে পড়লেন। রবীন্দ্রনাথ লিখে ফেললেন অপেরা স্টাইলে গীতিনাট্য ‘বাল্মিকীপ্রতিভা’। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল গীতিনাট্যের মহড়া। এবারের দর্শকাসনে কেবল ঘরের লোকজন নয় ‘বিদ্বজ্জন সভা’র বাইরের সদস্যরাও থাকবেন। মহর্ষি ভবনের বাইরের তিন তলার ছাদে স্টেজ বাঁধা হল। রবীন্দ্রনাথ সাজলেন বাল্মিকী। রবীন্দ্রনাথের দাদা হেমেন্দ্র কন্যা প্রতিভাদেবী হলেন সরস্বতী। লক্ষী সাজলেন বিবি অর্থাৎ কবির আর এক দাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে ইন্দিরাদেবী। মঞ্চে বীণা হতে প্রতিভা দেবীকে দেখে দর্শক একেবারে স্তব্ধ এবং উচ্ছ্বসিত।
তবে মঞ্চে প্রতিভা দেবীর আগমন এটা প্রথম নয়। এর আগে ‘বিদ্যোৎসাহিনীসভা’য় প্রতিভাদেবীর গান ও সেতার শুনে খুশি হয়ে শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর তাকে দিয়েছিলেন স্বরলিপির বই। রঘুনন্দন ঠাকুর দিয়েছিলেন বিশাল তানপুরা। মঞ্চে গান গাওয়া অভিনয় ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের কাছে নতুন নয়। কিন্তু প্রতিভাদেবীর মা, জেঠিমা, কাকি্মা, পিসিমারা জোড়াসাঁকো বাড়ির সদস্যদের সামনেই সেসব গান বা অভিনয় করেছেন বা হাজির হয়েছেন। একেবারে ঘরোয়া আসরে। সেখানে ঠাকুরবাড়ির সভ্যরাই গায়ক-অভিনেতা- অভিনেত্রী। আবার ঠাকুরবাড়ির সভ্যরাই দর্শক। প্রতিভাদেবীই প্রথম সাধারণ মানুষের সামনে গান গেয়ে, সেতার বাজিয়ে এবং অভিনয় করে বাঙালি মেয়েদের পথ দেখালেন। জোড়াসাঁকো বাড়ির মাঘোৎসব এ প্রতিভা দেবী প্রথম তার ভাইদের সঙ্গে ব্রহ্ম সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
রবীন্দ্রনাথের দাদা হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কন্যাটির সংগীতে হাতেখড়ি ছোটবেলাতেই জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। ছোটবেলা থেকেই তিনি দেশি-বিদেশি সঙ্গীতের তালিম নেন বাড়ির ওস্তাদ বিষ্ণু চক্রবর্তীর কাছে। গান শেখার পাশাপাশি বিদেশি গান ও পিয়ানো শিখতেন। এছাড়াও
৩১
তিনি নানা রকম বাদ্যযন্ত্রও শিখেছিলেন। দেশী-বিদেশী গান শেখার ব্যাপারে প্রতিভা দেবীর পিতা হেমেন্দ্রনাথ ছিলেন প্রধান। বিলিতি গান শেখার ব্যাপারে তিনি প্রতিভা দেবীকে চিঠিতে লেখেন –
“কেবল নাচের বাজনা ও সামান্য গান না শিখিয়া যদি Beethoven প্রভৃতি বড় বড় German পন্ডিত দের গান বাজনা শিক্ষা করিতে পার এবং সেইসঙ্গে ইউনিয়ন থিওরি শেখো তবে আসল কর্ম হয়।“১
প্রতিভা দেবী সারা জীবন সংগীতের সাধনা যেমন করেছেন তেওমনি সঙ্গীত নিয়ে গবেষণাও করেছেন। স্বামী প্রখ্যাত সাহিত্যিক আশুতোষ চৌধুরীর সান্নিধ্যে এসে তাঁর সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগৎ আরো শানিত হয়েছে। সংগীতের পরিসরে প্রতিভা দেবীর কৃতিত্ব সহজ স্বরলিপি রচনা। প্রতিভা দেবি প্রথম মহিলা যিনি সঙ্গীতের স্বরলিপি নির্মাণ করেন। তিনি প্রথমেই দ্বিজেন্দ্রনাথ এবং জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রণয়ন করা স্বরলিপি পদ্ধতি এবং স্বরসন্ধি প্রয়োগ পদ্ধতিতে নতুনত্ব এনে সঙ্গীতকে সকলের ব্যবহারের উপযোগী করে তোলেন। প্রতিভা দেবীর জেঠিমা জ্ঞানদানন্দিনী দেবী প্রকাশিত ‘বালক’ পত্রিকায় প্রতিভা দেবী স্বরলিপি পদ্ধতি প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথের ‘বাল্মিকী প্রতিভা’ ও ‘কালমৃগয়া’র গানগুলির প্রথম স্বরলিপি রচয়িতা প্রতিভা দেবীই। শুধু দ্বিজেন্দ্রনাথ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বা রবীন্দ্রনাথের গান নয় পিতার আদেশে তিনি বহু ব্রহ্মসংগীত এবং হিন্দুস্তানী সংগীতের স্বরলিপি রচনা করেন। প্রতিভা দেবীর ভাইয়ের মত অনুযায়ী ‘সে প্রায় তিন চারশ হবে’।
স্বরলিপি নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে তিনি গান শেখানো শুরু করলেন। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী প্রকাশিত বালক পত্রিকায়। নাম দিলেন ‘সহজ গান শিক্ষা’। পরে গানের চর্চার প্রয়োজনে নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘আনন্দ সভা’ আরো পরে ‘সঙ্গীতসংঘ’। সঙ্গীতসঙ্ঘে তিনি শেখাতেন ওস্তাদি হিন্দুস্থানী সংগীত। এই প্রথম বাঙালি মেয়েরা এভাবে ভালো করে গান শেখার সুযোগ পেলেন। প্রতিভা দেবীর এই স্কুলে এসে যোগ দিলেন জ্ঞানদানন্দিনী দেবী কন্যা ইন্দিরা দেবী। অবশ্য সেটা
৩২
পরে তিনি চৌধুরী বাড়ির বউ হয়ে এখানে যোগ দিয়েছিলেন। প্রতিভা দেবীর স্বামী আশুতোষ চৌধুরীর সহোদর ভাই ছিলেন প্রমথ চৌধুরী। প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে ইন্দিরা দেবী বিবাহ হয়। সেই সুবাদে প্রতিভাদেবী এবং ইন্দিরা দেবী দুই বোন একই পরিবারের বধূ হয়ে একসঙ্গে ‘সংগীতসংঘ’ পরিচালনার ভার নিলেন। ‘আনন্দসভা’র নামে নিজে প্রকাশ করলেন ‘আনন্দ পত্রিকা’। পত্রিকাটি প্রতিভা দেবী এবং ইন্দিরা দেবীর যুগ্ম সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় আট বছর। পত্রিকাটিতে থাকতো সংগীত বিষয়ক আলোচনা। সেখানেই স্বরলিপি প্রকাশের পাশাপাশি লুপ্ত সংগীত শিল্পী ও যন্ত্রসংগীত শিল্পীদের কথা তুলে ধরলেন তিনি। তানসেন, সদারঙ, বৈজু বাওয়া, নায়্ক, শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর প্রভৃতি সংগীত শিল্পীদের এবং সঙ্গীত গুণীদের জীবন ও তাঁদের সাংগীতিক চিন্তার ধারা তুলে ধরলেন পত্রিকাটিতে। তাঁর সঙ্গীত চিন্তার পরিচয় বহন করে তাঁর মৃত্যুর পর ‘সঙ্গীতসংঘ’ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কাকা রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যের মধ্যে। রবীন্দ্রনাথ বলেন, “সঙ্গীত শুধু যে তাঁর কন্ঠে আশ্রয় নিয়েছিল তা নয়, তাঁর প্রাণকে পরিপূর্ণ করেছিল। এরই মাধুর্য প্রবাহ তাঁর জীবনের সমস্ত কর্ম কে প্লাবিত করেছে।“২
রবীন্দ্রসঙ্গীতে প্রতিভা দেবীর কৃতিত্ব স্বরসন্ধি সহ রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপি নির্মাণ। রবীন্দ্রনাথের ‘কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ’ গানটি এর উজ্জ্বল উদাহরণ। সংস্কৃত স্তোত্রে সুর দিয়ে গান গাওয়া রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছে। এই ইচ্ছেকেও তিনি রূপ দেন। রবীন্দ্রনাথের দেওয়া সুরে বেদ গানের স্বরলিপি তৈরি করেন প্রতিভা দেবী। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে মাঘোৎসব এর সূচনা হত একটি বেদ গানের ভাবগম্ভীর পরিবেশে দিয়ে। প্রত্যেকবার সে সব বেদ গান বা কখনো গীতার স্তোত্র এ প্রতিভা দেবী নিচে স্বরলিপি তৈরি করে সকলকে গান শেখাতেন। এমনই সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন প্রতিভা দেবী। তাঁর নিজের লেখা গানের সংখ্যাও কম ছিল না। ‘সাঁঝের প্রদীপ দিনু জ্বালায়ে’, ‘দীন দয়াল প্রভু ভুলো না অনাথে’ গানগুলি সে সময় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। জোড়াসাঁকো পরিবারেরে ব্রাহ্ম ধর্মের হাওয়া, পিতার ধর্মানুরাগ গভীর ভাবে সঞ্চারিত হয়েছিল প্রতিভা দেবীর মননে। তাঁর লেখা প্রবন্ধের কিছু অংশ পড়লেই ফুটে ওঠে তার ধর্মানুরাগ এবং জ্ঞানের স্পৃহা –-
৩৩
‘ভালো চিন্তা হৃদয়কে অধিকার না করিলে ভালো হইবার দিকে অগ্রসর হওয়া যায়না । চিন্তার ভালো-মন্দ গতি আমাদের আচার-ব্যবহার এর গতি নিয়ন্ত্রিত করে। চিন্তা সংযত না হইলে আমাদের স্বভাব যথেচ্ছাচারী ও ও শিথিল হইয়া পড়ে। কিন্তু কাহার চালনায় এই চিন্তাকে আমরা সংযত করতে পারি? কুপথ হইতে ফিরাইয়া লইতে পারি? সে সারথি কে? সে আর কেহ নয় – জ্ঞান।‘৩
ইন্দিরা দেবী ঠাকুরবাড়ির নবজাগরণের আর এক নাম। ঠাকুরবাড়ি মেয়েদের মধ্যে তিনিই প্রথম বি এ পাস করেন। ইন্দিরা দেবী হলেন রবীন্দ্রনাথের দাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা। রবিকাকার আদরের ‘বিবি’। রবীন্দ্রনাথ তাঁর এই ভাইঝিটিকে খুব পছন্দ করতেন। কোনো লেখা ‘বিবি’ কে না দেখিয়ে সন্তুট হতেন না। ছোট বেলা থেকেই ইন্দিরা দেবী পাশ্চাত্য এবং ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নেন। কবিগুরুর অসংখ্য গানের স্বরলিপি লিখেছেন ইন্দিরা দেবী। এছাড়াও কয়েকটি ব্রাহ্ম সঙ্গীতও রচনা করেন। প্রতিভা দেবী যেমন গানের জগতে বাঙালি মেয়েদের মুক্তি দিয়েছিলেন। ইন্দিরা দেবী উদ্ধার করেছিলেন প্রায় লুপ্তপ্রায় প্রথমদিকের রবীন্দ্র সংগীতকে। ইন্দিরা দেবী বিদেশি সংগীত শিক্ষক সেন্ট পলস এর অর্গানিস্ট স্লেটার সাহেবের কাছে পিয়ানো এবং সিনর ম্যাঞ্জাটর কাছে বেহালার তালিম নেন। এরপর ট্রিনিটি কলেজ অফ মিউজিকের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পাশ করে বদ্রি দাস মুকুলের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নেন।৪
ইন্দিরা দেবী বহুমুখী প্রতিভার অধিকারিণী ছিলেন। একাধারে তিনি ছিলেন দক্ষ অনুবাদক অন্যদিকে সঙ্গীত জ্ঞানী। তাঁর অনুবাদের হাতে খড়ি সেই ছোট বেলাতেই। মা জ্ঞানদানন্দিনী দেবী যখন ঠাকুরবাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য ‘বালক’ পত্রিকা প্রকাশ করেন সেই সময় তিনি রাস্কিন এর রচনার বাংলা অনুবাদ করেন। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির ফরাসী অনুবাদ থেকে অনুবাদ করেন ইন্দিরা দেবী। অনুবাদ প্রকাশিত হয় প্রমথ চৌধুরীর ‘সবুজপত্র’ পত্রিকায়। রবিন্দ্রনাথের বহু কবিতা ও রচনার দক্ষ অনুবাদক ছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের ‘জাপানযাত্রী’ গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ প্রথম ইন্দিরা দেবী করেন। ইন্দিরা দেবীর অনুবাদে রবীন্দ্রনাথ নিশ্চিন্ত হতেন।৫
৩৪
আবার সঙ্গীতের কথায় ফিরে আসা যাক। ইন্দিরা দেবী অসংখ্য রবীন্দ্র সংগীতের স্বরলিপি করেছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের শুধু সুর এবং স্বরলিপি নয় রবীন্দ্র সংগীতকে তত্ত্ব ও তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। সঙ্গীত বিষয়ে তিনি অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন। স্বামী প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে যুগ্মভাবে লিখিত ‘হিন্দু সঙ্গীত’ গ্রন্থের ‘সঙ্গীত পরিচয়’ নামক প্রাথমিক অংশ উল্লেখযোগ্য। তাঁর লেখা ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের ত্রিবেণী সঙ্গম’ বইটির পুরো বই জুড়ে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার ফসল। ইন্দিরা দেবী দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ অন্যের সুরে নিজের কথা দিয়ে কত নতুন নতুন গান সৃষ্টি করেছেন। আবার এও দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের অন্যের কথায় সুর দেওয়া গানগুলি। রবীন্দ্রসঙ্গীতে হিন্দুস্থানী গানের অবদানের কথাও তুলে ধরেছেন। রবীন্দ্রনাথের সমস্ত ভাঙ্গা গানের তালিকা তৈরি করে দেখিয়েছেন যে কবি সামান্য অদল বদল করে কি অসাধ্য সাধন করেছেন। সঙ্গীত শাস্ত্রে বিশেষ করে রবীন্দ্র সংগীত শাস্ত্রে এই বইটি এক অমূল্য সম্পদ। রবীন্দ্র সংগীত নিয়ে এত বিপুল আলোচনা এখন পর্যন্ত তেমন দৃষ্টিগোচর হয় নি বলাই বাহুল্য। ইন্দিরা দেবীর হিসেব অনুযায়ী রবীন্দ্রনাথের ভাঙ্গা গানের সংখ্যা দুশো সাতাশটি।
ইন্দিরা দেবীর লেখা রবীন্দ্র সংগীত বিষয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ গুলি হল ‘সংগীতে রবীন্দ্রনাথ’, ‘রবীন্দ্র সংগীতের শিক্ষা’, ‘রবীন্দ্র সঙ্গীতের বৈশিষ্ট্য’, ‘রবীন্দ্রনাথের সংগীত প্রভাত’, ‘স্বরলিপি পদ্ধতি’, ‘শান্তিনিকেতনে শিশুদের সংগীত শিক্ষা’, ‘হারমনি বা স্বর সংযোগ’, ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতে তানের স্থান’, ‘রবীন্দ্রনাথের গান’, ‘বিশুদ্ধ রবীন্দ্র সংগীত’, ‘হিন্দু সংগীত’, ‘আমাদের গান’, ‘স্বরলিপি’, ‘দি মিউজিক অফ রবীন্দ্রনাথ টেগর’। ইন্দিরা দেবী রচিত সংগীতের এই বিপুল সংখ্যক প্রবন্ধ সঙ্গীত বিষয়ে তাঁর গভীর সঙ্গীত চিন্তা ও চেতনার পরিচয় বহন করে।
ইন্দিরা দেবীর স্বামী জনপ্রিয় প্রাবন্ধিক এবং সবুজপত্রের সম্পাদক স্বামী প্রমথ চৌধুরীর সান্নিধ্যে এসে তাঁর সাহিত্য এবং সঙ্গীত চর্চা কে আরো বহুগুণান্বিত হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথের বড়দিদি সৌদামিনী দেবীর স্বামী, ঠাকুর বাড়ির জামাই সারাদা প্রসাদ মারা গেলে মহর্ষি রবীন্দ্রনাথকে
৩৫
শিলাইদহে পাঠান জমিদারি দেখাশোনা করার জন্য। শিলাইদহ থেকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর একান্ত অনুরাগী ভাইঝিটিকে অসংখ্য চিঠি লিখেন। এসব চিঠির কথা ইন্দিরা দেবী তাঁর লেখায় তুলে ধরেছেন। এছাড়াও তিনি নানারকম সামাজিক উন্নয়নের কাজে যুক্ত ছিলেন। মহিলা শিক্ষা লীগ, সর্ব ভারতীয় মহিলা সম্মেলন সহ নানা সামাজিক কর্ম কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্দিরা দেবীকে ‘ভুবনমোহিনী’ স্বর্ণপদক এবং বিশ্বভারতী থেকে ‘দেশিকোত্তমা’ উপাধি দেওয়া হয়।
রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের পর ইন্দিরা দেবী শান্তিনিকেতনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তখন থেকেই তিনি রবীন্দ্রভবনে রবীন্দ্র সংগীত শিক্ষা দেন। কিছুদিনের জন্য বিশ্বভারতীর উপাচার্যের পদও সামলান। শান্তিনিকেতনে আশ্রম কুটিরের সর্বত্র তাঁর ব্যক্তিত্বের ছাপ ছিল। তাঁর ব্যক্তিত্বে যেমন ছিল প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের শিক্ষিত নারীর আদর্শ রূপটি। তেমনি ছিল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের সাহিত্য সংস্কৃতির নিজস্ব ঢং টি।
তথ্যসূত্র
১। চিত্রা দেব – ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল, আনন্দ পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ৯৯
২। চিত্রা দেব — ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল, আনন্দ পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ১০৮
৩। চিত্রা দেব – ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল, আনন্দ পাবলিসার্স, পৃষ্ঠা ১০৯
৪। banglaamarpran.in/unto
৫। তদেব
৬। bangla.newsnextbd.com