রবীন্দ্র-জীবনে সংঘাত
-শক্তি মণ্ডল
রবীন্দ্রনাথের জীবন অতিবাহিত হয়েছিল অনেক দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে। তিনি বারবার তাঁর সৃষ্টিকে ভেঙেছেন; নতুন করে গড়েছেন। গানের মধ্য দিয়ে বলেছেন,”আমার এ ধূপ না পোড়ালে গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে”। পরিণত বয়সে নিজের কিশোর বয়সের কিছু কবিতা সম্পর্কে বলেছেন, “কুয়াশা যেমন বৃষ্টি নয় এরাও তেমনি কবিতা নয়।… সান্ধ্যসংগীতর কবিতা সেই জাতের।”
অন্যদিকে নানা ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থার বিদ্রুপ বা বিরূপ আচরণ তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। এরকম কয়েকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা হল। বিদগ্ধ পাঠকরা এর সঙ্গে আরও কিছু যোগ করতে পারেন-
- রবীন্দ্রনাথের একজন তীক্ষ্ণ সমালোচক ছিলেন স্বখ্যাত সাহিত্যিক দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। তিনি প্রায় ধারাবাহিকভাবে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির বিরূপ সমালোচনা করে গেছেন।’চিত্রাঙ্গদা’ নাটকটি প্রকাশের প্রায ১৭ বছর পরেও ‘সাহিত্য’ পত্রিকায় (জৈষ্ঠ্য ১৩১৬) তিনি এতে অশ্লীলতার অভিযোগ এনে লেখেন,”..দ্বিধা নাই, সঙ্কোচ নাই,ধর্ম্ম নাই, কেবল নিত্য ভোগ,ভোগ; .. রবীন্দ্রবাবু এই পাপকে যেমন উজ্জ্বলবর্ণে চিত্রিত করিয়াছেন,তেমন বঙ্গদেশে আর কোনও কবি পারেন নাই। সেই জন্য এই কুকীর্তি আরও ভয়ঙ্কর।”
দ্বিজেন্দ্রলাল ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ গানে লিখলেন ‘সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি’। রবীন্দ্রনাথ উগ্র দেশাত্মবোধকে কখনও সমর্থন করতেন না। তিনি ‘সার্থক জন্ম আমার’ গানে লিখলেন,’জানিনে তোর ধনরতন আছে কিনা রানির মতন, শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে।’ - ১৮৮৪ সালে ‘নবজীবন’ ও ‘প্রচার’ পত্রিকায় হিন্দু ধর্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মতো আজগুবি বিষয়কে কেন্দ্র করে শুরু হয় জোরালো বিতর্ক।এতে অংশগ্রহণ করে বঙ্কিমচন্দ্র তীর্যক মন্তব্য করেন রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে। পরবর্তী কালে সাহিত্যে শ্লীলতা-অশ্লীলতার প্রশ্নে শরৎচন্দ্রও কবিগুরুর চিন্তাধারাকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন।পরে অবশ্য বঙ্কিমচন্দ্র ও শরৎচন্দ্র, উভয়েই তাদের পূর্ব অবস্থান থেকে সরে আসেন।
- বিলেতের যে প্রখ্যাত কবি ইয়েটস রবীন্দ্র- কাব্যকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, কবিগুরু নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হবার পর তিনিই আবার রবীন্দ্রনাথের সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন। ‘টাইমস’ পত্রিকায় একজন সাংবাদিক তো এমনই লিখলেন যে ‘গীতাঞ্জলি’ ইয়েটস -এর নতুন করে লেখা এক কাব্যগ্রন্থ।এখবর আসার পর এদেশেও নতুন উদ্যমে কবিকে কালিমালিপ্ত করার প্রয়াস শুরু হয়।
- কবির নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হবার খবর বঙ্গদেশে এসে পৌঁছায় ১৯১৩ সালের নভেম্বরে। শুরু হয় কবিকে বিপুলভাবে সংবর্ধনা জানানোর আয়োজন।যাঁরা তাঁকে অবিরত নিন্দা করেছেন তাঁদের অনেকেই শান্তিনিকেতনে আয়োজিত এই সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ এঁদের দেখে তাঁর ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি। তিনি বললেন,”.. সমস্ত দেশের নামে আপনারা যে সম্মান দিতে এখানে উপস্থিত হয়েছেন,তা অসংকোচে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করি এরকম সাধ্য আমার নেই। .. দেশের লোকের হাত থেকে যে অপযশ ও অপমান আমার ভাগ্যে পৌঁছেছে তার পরিমাণ নিতান্ত কম হয়নি।”
- জালিয়ানওয়ালাবাগে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটল ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল। কলকাতায় বেশ কিছুদিন পরে খবর এল।অস্থির হয়ে উঠলেন কবি। তিনি প্রকৃত তথ্য জানবার জন্য পাঠালেন এন্ড্রুজকে। তাঁকে মাঝপথে আটকে দিল ব্রিটিশ পুলিশ।কবি এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করার জন্য গান্ধীজির কাজ টেলিগ্রাম করলেন। যোগাযোগ করলেন দেশবন্ধুর সঙ্গে। কিন্তু যুদ্ধের আবহে কেউই এগিয়ে এলেন না।তখন ক্ষুব্ধ কবি একাকী প্রতিবাদী চিঠি লিখলেন ব্রিটিশশাহীর কাছে। ঘৃণাভরে ত্যাগ করলেন তাঁর ‘স্যার’ উপাধি।
*গান্ধীজির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধার। কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে
তিনি গান্ধীজির প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছিলেন-
(১) গান্ধীজি স্বরাজের আন্দোলনের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিলেন আধ্যাত্মবাদ,রামরাজ্যের স্বপ্ন, খিলাফতের মতো ধর্মীয় বিষয়গুলিকে। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে হিন্দু মুসলমান ঐক্য গড়ে তুলতে। তিনি লিখেছিলেন,”..মহাত্মাজিকে আমি দোষ এই কারণে দিয়েছিলাম যে, আমাদের দেশবাসীর মধ্যে বিশ্বাসপ্রবণতার যে অন্ধশক্তি আছে সেটাকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন।তাতে আশু কিছু ফললাভ হয়েছে; সৌধটি নির্মিত কিন্তু তার ভিত্তি দুর্বল হয়েছে।”
গান্ধীজি কবির এক বন্ধুকন্যার অটোগ্রাফের খাতায় লিখেছিলেন,” না ভেবে চিন্তে কোনো প্রতিজ্ঞা কোরো না; একবার যদি প্রতিজ্ঞা করো তো প্রাণ দিয়ে তা রক্ষা করবে”।কবি এটি দেখে বিচলিত হলেন।ওই খাতায় লিখে দিলেন, “যদি দেখ প্রতিজ্ঞাটা ভুল, ছুঁড়ে ফেলে দাও।”
(২) গান্ধীজি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করলেন খদ্দর পরা,চরকা চালানো এবং বিদেশি দ্রব্য বর্জন। বিদেশি কাপড়ের বহ্ন্যুৎসব চলতে লাগল।কবি প্রশ্ন তুললেন, এতে গরিবদের কী লাভ হচ্ছে ? আর, মানুষকে গভীরভাবে ভাবানোর কোনও উপায় কি চরকার মধ্যে আছে ? বললেন,”চরকায় কিছু ভাবার দরকার হয় না।.. পুরাকালে ‘উদ্ভাবিত’ একটি যন্ত্রকে বিচারশূন্য ও শক্তিহীনভাবে চালিয়ে গেলেই হল।”
(৩) গান্ধীজি ভারতে আধুনিক কল কারখানা প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন। উল্টোদিকে রবীন্দ্রনাথ বলেন আধুনিক কল কারখানাই হবে স্বাধীন স্বনির্ভর ভারত গড়ে তোলার অন্যতম প্রধান ভিত্তি।
(৪) গান্ধীজি ও রবীন্দ্রনাথ উভয়েই ছিলেন অস্পৃশ্যতার বিরোধী।১৯৩৫ সালে বিহারে প্রবল ভূমিকম্পে হাজার হাজার লোকের প্রাণ গেল। গান্ধীজি লিখলেন,এটা অস্পৃশ্যতাকে মেনে চলার পাপের ফল। রবীন্দ্রনাথ এর তীব্র বিরোধিতা করে লিখলেন, ভূমিকম্প একান্তই প্রাকৃতিক ঘটনা।এর সঙ্গে পাপ-পূণ্যের কোনও সম্পর্ক নেই ।..”এটা অধিকতর দুর্ভাগ্যজনক এই কারণে যে, আমাদেরই দেশবাসীর এক বৃহৎ অংশ অত্যন্ত সহজেই প্রাকৃতিক ঘটনায় এই ধরনের অবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মেনে নেয়।” - ১৯২৬ সালে সংস্কৃত সাহিত্যের অধ্যাপক কার্লো ফরমিচি- র মাধ্যমে কবির কাছে ইতালি ভ্রমণের আমন্ত্রণ এল। রাজকীয় আয়োজন।ফরমিচি ইতালির নয়া শাসকের আমলে উন্নয়নের গোলাপী চিত্র তুলে ধরলেন। বাছাই করা কিছু জায়গা দেখানো হল। কিন্তু চাতু্রি করে কোনও বিরোধী চিন্তার মানুষের সঙ্গে কবিকে দেখা করতে দেওয়া হল না।কবি নয়া শাসকের আমলে সরকারি কাজের কিছু প্রশংসা করলেন।সাত কাহন করে দেশে বিদেশে তার প্রচার করা হল। এরমধ্যে অতি গোপনে কবির সঙ্গে দেখা করলেন প্রতিবাদী সাহিত্যিক ক্রোশে। তিনি জানালেন ইতালিতে কী ভয়ংকর ফ্যাসিবাদের অভ্যুদয় ঘটছে। সুইজারল্যান্ডে ফিরে গেলে রমা রল্যাঁ কবির কাছে ফ্যাসিবাদের স্বরূপ তুলে ধরলেন।ফরমিচির চাতু্রিতে দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হলেন কবিগুরু।
- অনুরূপভাবে ১৯৩৮ সালে বিশ্বযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে জাপানি কবি নগুচি নানা ভুল তথ্য দিয়ে চিন-জাপান বৈরিতায় জাপানের জন্য কবিগুরুর সমর্থন চাইলেন। কবিগুরু প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করলেন।জাপান তখন চিনের মূল ভূখণ্ড দখলের জন্য আক্রমণ শুরু করেছে।নগুচির
দ্বিতীয় চিঠি পেয়ে তিনি তাঁকে ধিক্কার দিলেন। লিখলেন,চিন এখন জাপান অপেক্ষা বহুগুণে শ্রেষ্ঠ নৈতিক আদর্শের পরিচয় দিচ্ছে।লিখলেন,”তোমার নিজের লোকদের মধ্যে যদি দরিদ্রকে শোষণ না থাকে এবং যদি শ্রমিকরা ন্যায্য ব্যবহার পাচ্ছে বলে মনে করে, তবে তোমাদের ‘কমিউনিজমের ভূত’-কে ভয় করার কারণ নেই।” - কবি সারা জীবন ধরে দাবি করেছেন বঙ্গদেশের সর্বত্র সরাকারি স্তরে এবং শিক্ষার সকল পর্যায়ে বাংলাভাষার ব্যবহার হোক। উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে ১৯৩৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন উৎসবে কবি এযাবৎকালের মধ্যে প্রথম বাংলায় দীক্ষান্ত ভাষণ দিলেন।ওই বছর থেকে বাংলা ভাষা বিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে স্বীকৃত হল। বিশ্ববিদ্যালয়েও বাংলা সাহিত্যচর্চার উপর জোর পড়ল। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে আবার ইংরেজি বাবুদের চাপে পুরোনো ধারা ফিরে আসতে শুরু করল। দারুণ ক্ষোভে কবি লিখলেন,..” শিক্ষায় মাতৃভাষাই মাতৃদুগ্ধ, জগতে এই সর্বজন স্বীকৃত নিরতিশয় সহজ কথাটা বহুকাল পূর্বে একদিন বলেছিলেম। সেদিন যা ইংরেজী শিক্ষার মন্ত্রমুগ্ধ কর্ণকুহরে অশ্রাব্য হয়েছিল,আজও যদি তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, তবে আশা করি পুনরাবৃত্তি করবার মানুষ বারেবারে পাওয়া যাবে।”
- জাতীয় কংগ্রেস দলের সঙ্গে কবির সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর। কিন্তু ১৯৩৯ সালে কংগ্রেসের ত্রিপুরী অধিবেশনে গান্ধীপন্থীরা যখন কংগ্রেস নেতৃত্ব থেকে সুভাষচন্দ্র এবং তাঁর সহযোগী শরৎচন্দ্র বসু ও তৎকালীন বামপন্থীদের সমূলে উৎখাত করার জন্য ফ্যাসিস্তসুলভ দাপাদাপি করলেন এবং নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিলেন,কবি তখন দারুণভাবে ক্ষুব্ধ হলেন।ওই বছর ১৭মার্চ তিনি কবি অমিয় চক্রবর্তীকে লিখলেন,”অবশেষে আজ কংগ্রেস মঞ্চ থেকে হিটলার নীতির নিঃসংকোচ জয় ঘোষণা শোনা গেল।” ওই বছর ২০মে ‘কংগ্রেস’ শীর্ষক ঐতিহাসিক পত্রে তিনি প্রকাশ্যে দেশবাসীকে সতর্ক করে জানালেন,”..ভিতরে ভিতরে কংগ্রেসের মন্দিরে এই যে শক্তিপূজার বেদী গড়ে উঠেছে, তার কি স্পর্ধিত প্রমাণ এবার আমরা পাইনি,যখন মহাত্মাজীকে তাঁর ভক্তেরা মুসোলীনি ও হিটলারের সমকক্ষ বলে বিশ্বসমক্ষে অসম্মানিত করতে পারলেন ?”
গভীর দুঃখে তিনি লিখেছিলেন,”কেন চেয়ে আছো গো মা,মুখপানে;এরা তোমায় কিছু দেবে না যে, আপন মায়েরে নাহি জানে।” - সারা বিশ্বের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ও এ দেশে প্রগতি সাহিত্য সংঘ গঠনে কবিগুরুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। শুরু থেকেই এদেশে তিনি ছিলেন এই সংঘের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ।অথচ কলকাতায় অনুষ্ঠিত এর দ্বিতীয় সম্মেলনে সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু তাঁর লিখিত ভাষণে কবির কদর্য সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, .”রবীন্দ্রনাথ হচ্ছেন বুর্জোয়া শিল্প সংস্কৃতির শেষ পরিণত ফসল, বহুদিন আগেই রবীন্দ্র-যুগ অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।” অবশ্য কেবল ‘শনিবারের চিঠি’ নয়, ‘পূর্বাশা’-র মতো বামপন্থী পত্রিকাও এর তীব্র প্রতিবাদ করেছিল।
প্রকাশ্য এই ভাষণের আগেই অবশ্য রবীন্দ্রনাথ এর আভাস পেয়েছিলেন। খুবই ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এই সংঘের বঙ্গীয় শাখার সম্পাদক অধ্যাপক সু্রেন্দ্রনাথ গোস্বামীকে চিঠি দিয়ে (২৯.১১.১৯৩৮) বলেছিলেন,”আমি বেঁচে থাকতে থাকতেই জায়গা ছেড়ে দিতে চাই।অনেক যোগ্য উমেদার আছে, তাদের প্রতি দৃষ্টি রেখো। তারা স্থান না পেলে আমাকে অতিষ্ঠ করে তুলবে।” - কবিগুরু তাঁর সমগ্র সাহিত্যে এবং কর্মকাণ্ডে এদেশীয় অযৌক্তিক লোকাচার ও ধর্মীয় নিগড়ের উপর আঘাত দিয়েছিলেন। মানুষের মধ্যে মুক্তচিন্তা আনতে চেয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, .” যে মোহান্ত জেলে যাইবার যোগ্য তাহার চরণামৃত পান করিয়া আমরা আপনাকে অপমানিত জ্ঞান করি না, যে পুরোহিতের চরিত্র বিশুদ্ধ নহে এবং যে লোক পুজানুষ্ঠানের মন্ত্রগুলির অর্থ পর্যন্তও জানে না তাহাকেও ইষ্ট গুরুদেব বলিয়া স্বীকার করিতে আমাদের মুহুর্তের জন্যও কুণ্ঠাবোধ হয় না”।
এই ধর্মধ্বজাধারী ও তার অনুগতদের তাণ্ডবে তিনি এতটাই ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন যে হেমন্তবালা দেবীর কাছে একটি চিঠিতে (২০ আষাঢ়,১৩৪১) তিনি লিখেছিলেন,”.. আমার বাঙালী জন্ম প্রায় শেষ করে এনেচি, আজ আমার ক্লান্ত আয়ু্র অন্তিম নিবেদন এই যে,যদি জন্মান্তর থাকে তবে যেন বাংলা দেশে আমার জন্ম না হয়– এই পুণ্যভূমিতে পুণ্যবানেরাই লীলা করতে থাকুন–আমি ব্রাত্য, আমার গতি হোক সেই দেশে যেখানে আচার শাস্ত্রসম্মত নয় কিন্তু বিচার ধর্মসম্মত।।”