Bengali Nationalism Movement, Language, and Melodies
Dr. Debasish Mandal
Abstract: This exploration delves into the multifaceted tapestry of Bengali identity, unravelling the historical narrative of the Bengali nationalism movement, the significance of the Bengali language, and the evocative melodies that have woven the cultural fabric of the Bengali community. From the fervor of the independence movement to the linguistic and cultural renaissance, this study navigates the socio-political landscape that shaped Bengali nationalism. Furthermore, it examines the pivotal role played by the Bengali language as a symbol of cultural resilience and unity, transcending geographical boundaries. Lastly, the analysis extends to the realm of Bengali songs, elucidating their role as carriers of emotions, traditions, and societal reflections, fostering a deep connection between the past and the present. Through this comprehensive exploration, a nuanced understanding of the rich cultural heritage of the Bengali people emerges, highlighting the intricate interplay between nationalism, language, and the expressive power of music.
বাঙালি জাতিসত্ত্বা আন্দোলন, বাংলাভাষা ও বাংলা গান
দেবাশিস মণ্ডল
বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল এখন থেকে প্রায় সহস্র বছর আগে। বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর ভাষার সংমিশ্রণে বাংলা ভাষার সূচনা ও বিকাশলাভ হয়ে থাকতে পারে। অনেকে এ সম্পর্কে তাদের মতামত দিয়েছেন। এর স্বপক্ষে বা বিপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি বা তথ্য নেই। একথা ধরে নেওয়া যেতে পারে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভাষা বিবর্তিত হতে হতে বাংলা ভাষায় উন্নীত হয়েছে। বাংলা বা বঙ্গ শব্দটি কোথা থেকে এসেছে সে সম্পর্কে অনেকে অনেক মত দিয়েছেন। কেউ বলেছেন বং নামের দ্রাবিড় ভাষাভাষীদের থেকেই বাংলা বা বঙ্গ শব্দটির উৎপত্তি। এমনও হতে পারে যে বাংলা বা বঙ্গ শব্দটি গঙ্গা বা গাং থেকে এসেছে। আলেকজাণ্ডারের সময় অর্থাৎ খৃষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে ভারতের পূর্ব দিকে যে রাজ্যটি আলেকজান্ডার জয় করতে পারেনি, সে সম্পর্কে বিবরণ দিতে গিয়ে বলা হয়েছে এখানে গঙ্গারিডি নামে একটি রাজ্য রয়েছে যেখানকার সেনাবাহিনী এবং তাদের কর্ম পদ্ধতি অত্যন্ত বলিষ্ঠ। ‘ডিওডোরাস (খ্রিস্টপূর্ব ৪১-১৪),মহাকবি ভার্জিল (খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক) টলেমি (খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক) কারাতিবাস, স্ট্রাবো, প্লিনি (খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক) প্রমুখ গ্রিক ও ল্যাটিন লেখকদের বিবরণ থেকে এই রাজ্যের নাম ও ইতিহাস জানা যায়। খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে লিখিত ‘পেরিপ্লাস অব দি ইরিথ্রিয়ান সি’ গ্রন্থে গঙ্গারিডিদের বীরত্বের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কোনো কোনো লেখক গঙ্গা নদীকে এই দেশের পূর্বসীমা আবার কেউ কেউ এর পশ্চিম সীমারূপে বর্ণনা করেছেন। প্লিনি বলেন, গঙ্গা নদীর শেষভাগ এই রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মেহচন্দ্র রায় চৌধুরী গ্রিক লেখকদের বিবরণ পরীক্ষা করে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, পদ্মা ও ভাগীরথীর মধ্যস্থলে গঙ্গারিডি রাজ্য অবস্থিত ছিল। গবেষকরা অনুমান করেন বাংলাদেশের চারটি বৃহত্তর জেলা ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা এবং পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, উত্তর চব্বিশ পরগান, নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা নিয়ে এই রাজ্য গঠিত হয়েছিল।’১
ভারতে সংবিধান স্বীকৃত ভাষা ২৩ টি। (India’s central government has 23 constitutionally recognized official languages.) প্রাচীন কালের ভাষা ও জনগোষ্ঠী সম্বন্ধে ডিওডোরাস লিখেছেন, ‘ভারতবর্ষে বহু জাতির বাস। তার মধ্যে গঙ্গারিডি জাতি সর্বশ্রেষ্ঠ। তাদের ৪ হাজার বৃহৎকায় সুসজ্জিত রণহস্তী আছে। এ জন্য অপর কোনো রাজা এই দেশ জয় করতে পারেননি। স্বয়ং আলেকজান্ডারও এই সমুদয় হস্তীর বিবরণ শুনে এই জাতিকে পরাস্ত করার দুরাশা ত্যাগ করেন।’২
আদমশুমারির সর্বশেষ বিশ্লেষণ অনুসারে ভারতে ১৯,৫৬৯ টি মাতৃভাষা (ভাষা বা উপভাষা) রয়েছে। ১২১ টি ভাষাতে ভারতের ১০,০০০ বা তারও বেশি লোক কথা বলে। যার জনসংখ্যা ১২১ কোটি। ভারতে বেশ শতাধিক ভাষা রয়েছে। বেশিরভাগ ভারতীয় ইন্দো-ইউরোপীয় (সি। ৭৭%), দ্রাবিড় (সি। ২০.৬১%), অস্ট্রোসিয়েটিক (মুন্ডা) (সি। ১.২%), বা সিনোর পরিবারগুলির সাথে সম্পর্কিত একটি ভাষা বলতে পারেন – তিব্বতীয় (সি। 0.৪%), হিমালয়ের কিছু ভাষা এখনও অবিকৃত নেই। ভারতে এখনো ৪১৫ টি জীবন্ত ভাষা রয়েছে।হিন্দি এবং ইংরেজি সাধারণত কেন্দ্রীয় সরকার একটি সরকারী ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। রাজ্য সরকারগুলি তাদের নিজ নিজ অফিসিয়াল ভাষা ব্যবহার করে।
হিন্দি ভারতের উত্তরাঞ্চলে সর্বাধিক বেশি মানুষের ভাষা। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, ভারতীয় জনসংখ্যার ৫৩.৬% জনগণ ঘোষণা করেছিলেন যে তারা হিন্দিকে তাদের প্রথম বা দ্বিতীয় ভাষা বলে, যার মধ্যে ৪১% এটিকে তাদের মাতৃভাষা বা মাতৃভাষা হিসাবে ঘোষণা করেছে। ১২% ভারতীয় ঘোষণা করেছিল যে তারা দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইংরেজি বলতে পারে।
ত্রিশটি ভাষা ভারতীয় জনসংখ্যার ১% এরও বেশি এবং নিজেদের মধ্যে ৯৫% এরও বেশি; এগুলি সবই “সংবিধানের তফসিলী ভাষা”। ভারতীয়দের ১% এরও কম সংখ্যক দ্বারা স্বীকৃত ভাষা হ’ল সাঁওতালি (0.৬৩%), কাশ্মীরি (0.৫৪%), নেপালি (0.২৮%), সিন্ধি (0.২৫%), কোঙ্কানি (0.২৪%), ডোগ্রি (0.২২%), মাইটেই (0.১৪) %), বোড়ো (০.০৩%) এবং সংস্কৃত (ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারিতে কেবল ১৪,১৩৫ জন সংস্কৃতকে তাদের মাতৃভাষা হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন)। এছাড়াও অন্যতম বৃহত্তম ভাষা হ’ল ভিলি (০.৯৯%), তার পরে গন্ডি (০.২৭%), খন্দেশি (০.২১%), টুলু (০.০7%) এবং কুরুখ (০.০১%) রয়েছে। ১৯৯১-এ ভারতীয় জনসংখ্যার মধ্যে ১৯.৪% দ্বিভাষিকতা এবং ২.২% ত্রিভাষিকতা প্রদর্শন করেছিলেন। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, সর্বাধিক সংখ্যক কথ্য ভাষাগুলি হল, হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, তেলেগু, তামিল, গুজরাটি, উর্দু, কন্নড়, ওড়িয়া ও মালায়ালাম।৩
অন্যের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আমরা অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল হবো, কিন্তু আমাদের নিজস্ব বাঙালি সংস্কৃতিকে নিয়েই আমাদের এতকালের পথ চলার যে ঐতিহ্যও ইতিহাস, সে বড়ো গর্বের। এ সংস্কৃতি আমার অহংকার। যে কোন সংস্কৃতির সঙ্গে ভাষার সম্পর্ক নিবিড়। আমাদের চিন্তা চেতনা গড়ে ওঠার একটা ভাষা আছে। সেটা মাতৃভাষা। জন্মের পর থেকে যা লালিত হয়ে মস্তিস্কে এক বৃহৎ আধার রচনা করে। সেখানে মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় চেতনার বিকাশ হয় না। কিছু বিদেশী শব্দ সেখানে জায়গা পায়, নতুন নতুন উপকরণ এসে জড়ো হয়, কিন্তু চিন্তার যে যোগসূত্র তা মাতৃ ভাষাতেই হয়ে থাকে। তাকে উপেক্ষা করতে চাইলেও উপেক্ষা করা যায় না। যোগসূত্রের ভাষা মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করেই নির্দিষ্ট অঞ্চল বা বৃহৎ পরিসরের কোন ছোট বা বড়ো পরিসরের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, চর্চিত ও লালিত হয়। আমারা বলি ‘ভাষা কেন্দ্রিক সংস্কৃতি’। সেই ভাষার গান, কবিতা, সাহিত্য ইত্যাদি সেই সংস্কৃতিকে লালিত করে। এক এক অঞ্চলে ভাষার আঞ্চলিকতার কারনে এই সংস্কৃতিরও কিছু হেরফের হয়। কিন্তু মূলত সেই ভাষার বৃহৎ পরিধির মধ্যেই সংস্কৃতির বিস্তার ঘটে।
আঞ্চলিকতা সত্বেও ভাষার মূলগত সম্পর্কের কোন পার্থক্য হয় না। কিন্তু আমাদের এই রাষ্ট্র চায়না ইংরেজী বা হিন্দি বাদে অপরাপর জাতির শিশুদের জন্য তাদের নিজ মাতৃভাষায় উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে। যে ভাষায় আমাদের রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, অতুলপ্রসাদ, অন্নদাশঙ্কর, সুকান্তের। ‘মুখে আমার উসখুস করা বারুদ, বুকে আমার জ্বলে ওঠার দুরন্ত উচ্ছ্বাস’কে ভুলিয়ে দেবার এই ঘৃন্য প্রয়াসের কাছে কী আমরা নত হবো? অসীম কালের হিল্লোল, জোয়ার ভাঁটার জীবন দোলার’ উদ্ভাষিত আনন্দ অন্য কোণ ভাষায় পাওয়া যাবে?
অনেক মাতৃ ভাষাই এই দেশে উপেক্ষিত। কত শত মাতৃভাষা ঝরে যাচ্ছে প্রতিদিন। বিলীন হয়ে যাচ্ছে সরকারী সংকীর্ণতায়। ইংরেজী আর হিন্দি সংস্কৃতির দাপট ভয়ানকভাবে গ্রাস করতে চাইছে আমাদের। দেশে অন্যতম বৃহত্তর ভাষাভাষী শিক্ষিত লোকজনেরাও নিজেদের মাতৃভাষাকে উজ্জীবিত রাখার কথা ভালো করে ভাবতে পারছেন না। আর কীভাবে ভাববো সাঁওতাল, গারো, খাসিয়াদের কথা। যে বাংলা ভাষার জন্যে আসামের শিলচর আর বাংলাদেশের ঢাকায় অনেকগুলি তাজা প্রাণ ঝরে গিয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মাতৃভাষা দিবসের প্রতি শ্রদ্ধার আসন এনে দিয়েছে। আশঙ্কা হয়! সব কিছুকে উপেক্ষা ও অস্বীকার করে শিলচরের বাংলা ও বাঙালিদের উপরে আক্রমন নেমে এসেছে। ভয়ানক নৃশংস আক্রমন। দ্বিখণ্ডিত করে দেওয়া হচ্ছে বাংলা ও বাঙালিদের। বাঙালি হিন্দু আর বাঙালি মুশলমানদের। একদিকে মানবিকতাকে পদদলিত করে এন আর সি, সি এ এ, এন পি আর। মূল লক্ষ্য বাঙালিদের ঐক্য ও বাংলা ভাষার উপর আক্রমন।
আমরা বাংলার ভাষাকে খুঁজে পেয়েছি দশম শতক থেকে। চর্যাচর্যবিনিশ্চয় গ্রন্থ আবিস্কারের পরে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এই গ্রন্থের আবিস্কার করেন ও এই ভাষার পরিচয় উদ্ধার করেন। যদিও বৌদ্ধ সাধকদের হাতে এই ভাষা হয়ে উঠে ছিল দুরুহ। সে সময় সাধারণের যে ভাষা বা দেশীয় বাংলা ভাষার কোন রূপ আমাদের কাছে প্রামান্য হিসাবে এখনো আসেনি। যাই হোক সাহিত্যমূল্য সমন্বিত চর্যাগীতির এই অসাধারণ রচনাগুলো বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন। এমনও হতে পারে এই ভাষা তখন ‘সবেমাত্র অন্যান্য ভাষা থেকে এক স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নিয়ে জন্মলাভ করতে শুরু করেছে। পরবর্তী কয়েক শতাব্দী ধরে আধুনিক বাংলা ভাষা ধীরে ধীরে বহু ভাষার দ্বারস্থ হতে হতেই সম্পূর্ণতা পেয়েছে। এর পরিপূর্ণ পরিশীলিত রূপায়ণ ঘটেছে ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে বেঙ্গল রেনেসাঁসের মধ্য দিয়ে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয় কুমার দত্ত, প্যারীচাঁদ মিত্র, মাইকেল মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং সবশেষে কবি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ইসলামের হাত ধরে’।৪
ভাষাবিদেরা এ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তাঁদের মতে মাগধী প্রাকৃত বাংলা ভাষাই পূর্বাঞ্চলে অন্যান্য ভাষার জননী। সেই কারনেই বাংলা ভাষার সঙ্গে অসমীয়, মৈথেলি, ভোজপুরী, মাঘী ওড়িয়া ইত্যাদি ভাষার স্পষ্ট মিল রয়েছে। বিভিন্ন ভাষাভাষী গোষ্ঠী যখন অন্য বৃহৎ ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে এসে বসবাস করে তখন এইসব গোষ্ঠীর ভাষার মধ্যে নতুন নতুন উপকরণ এসে হাজির হয়। সমৃদ্ধ হয় ভাষা ও সংস্কৃতি। অন্যদিকে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর পরিবর্তন হয়। অনেক সপময় এইসব জনগোষ্ঠী বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে হারিয়ে যায়।
দ্বাদশ শতক থেকে ভারতে বিভিন্ন ভাষার মানুষ এসেছে। সুলতানী ও মোঘল শাসনের কালে তাদের ভাষা হয়েছে রাষ্ট্র ভাষা। বাংলাতেও তাদের ভাষার প্রভাব বিস্তৃত হয়েছিল। সে সময় বাংলা ভাষার সঙ্গে মিশেছিল আরবি, পারসিয়ান, তুর্কি শব্দ। তেমনি ষোড়শ শতক থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পর্তুগিজ, ডাচ, ফ্রেঞ্চ, ইংরেজের রাজ্যপাট শেষ না হওয়া অবধি প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সন্নিবেশিত হয়েছে অনেক পশ্চিমা শব্দাবলিও। সভ্যতার ক্রমবিকাশ যেমন একটি চলমান প্রক্রিয়া, তেমনি সভ্যতা সংস্কৃতির ধারক হিসেবে ভাষার ক্রমবিকাশেরও থেমে থাকার কোনো সুযোগ নেই। থেমে ছিলওনা, এখনো সেই ধারা অবিরাম রয়েছে। এভাবেই বাংলা ভাষা নিজের ধারাকে বিকশিত করেছে ও বিস্তৃতিলাভ করেছে।
ভাষাতো শুধু কিছু অক্ষর বা বর্ণ সমষ্টি নয়। ভাব ও ভাবনা প্রকাশ, হৃদয়ের আবেগের প্রকাশ, ভালোবাসা, ব্যাথা বেদনার কত অজস্র রকমের প্রকাশের দরকার হয় মানুষের। নাহলে সব কথা লিখেই বলা যেত। উচ্চারণের দরকার হতনা। ‘মা’ বাবা, ভাই, দিদি ডাকের মাধুর্য, আর ভিন্ন ভাষায় আপনার মাকে সেভাবে কী পাওয়া যায়? ‘তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ র অনুবাদ করে সেই বোধকে কী খুঁজে পাবো? কখনোই নয়। তাই মা কে রক্ষা করার জন্যই মাতৃভাষাকেও রক্ষা করার জন্য কঠোর সংগ্রাম করতে হয়। এটা কোণ সংস্কার নয়। এটা প্রয়োজন। যেমন আমাদের এই সম্পর্কগুলো রক্ষা করার দরকার, তেমনি দরকার বঁচে থাকার, নিজেকে প্রকাশ করার জন্য ভাষার দরকার।
বাংলা ভাষার উপরে যখনি আক্রমন নেমে এসেছে তখনই সংগঠিত ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে বাঙালি। এখনো ভিতরে ভিতরে বাংলা ও বাঙ্গালির ক্রোধ ছাই চাপা আগুনের মতো জ্বলছে। অপেক্ষায় আছে ছোট্ট একটি দেশলাই কাঠির। সি এ এ কিংবা এন আর সি র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে বাংলার মহিলারা। স্তরে স্তরে শাহবাগের মতো শাহীনবাগ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে দিল্লি, ইউপি, বাংলা আর ছত্রিশগড় সব একাকার।
বাংলাদেশে মাতৃভাষার অধিকারের দাবি নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। ভারতের দ্বিতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন ধর্মনিরপেক্ষ যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতা আনবে এই বিশ্বাস আমার বা আমাদের অনেকের আছে। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের জাতিসত্বার গৌরবকে মহিমান্নিত করেছে। সেই অভিজ্ঞতা আমাদের থাকা দরকার।
বাংলাদেশ ভাগের প্রতিটি অধ্যায় অজস্র মানুষের রক্ত আর অশ্রুতে মেশা। বহু ত্যাগ আর যন্ত্রনার অতীত ও ঐতিহ্যের গৌরব বহন করছে এদেশের মাটি-আর প্রতিটি ধুলিকনা। জর্জরিত হৃদয় থেকেই জেগে ওঠে নতুন রক্তস্রোত। হৃদয়াবেগের অহংকার থেকেই একুশের আহ্বান, বাহান্নর ব্যাথায় মর্মর হয়ে মুশড়ে পড়েনা। নতুনের ডাক ওঠে। সেদিনের ভোর, মুক্তির ডাক আর মুক্তির গানে গলা মিলিয়েছিল একাত্তরের দিকে। সেই ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনে গান, কবিতা, নাটক মানুষের হৃদয়াবেগকে আকুল করে তুলেছিল। জীবন মরন পন করার যে আহ্বান তা শোনা গিয়েছিল সেদিনের গানে। ধমনীর রক্তস্রোত, পথে টেনে এনেছিল দেশের মানুষকে। পৃথিবীর সব মুক্তিযুদ্ধেই অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে গান। কিন্তু এখানে, মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগেই শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলন। সেই গানেও শোনা গিয়েছিল মুক্তির আহ্বান।
প্রথম দেশভাগের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের চাপিয়ে দেওয়া আইন কানুনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল সারা বাংলা জুড়ে। জোর করে উর্দু চাপিয়ে দেবার বিরুদ্ধে সেই আন্দোলন সর্বাত্মক হয়ে ওঠে। আর এই আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গান আর কবিতাকেই অন্যতম হাতিয়ার করে নিয়েছিল বাঙালিরা।
ভারতের মাটিতেও ঐক্যের আন্দোলন হয়েছিল ইংরেজ সরকার বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব আনলে। বিচ্ছিন্নতার আতঙ্ক শুরু হয়েছিল। নানা বিভেদের চক্রান্ত করে বাঙালি ও বাংলা ভাষাকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেবার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল সব মানুষ। তখন ঐক্য ও সম্প্রীতির গান গেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, ঈশ্বরগুপ্ত, দ্বিজেন্রলাল রায় প্রমুখরা। হয়েছিল রাখিবন্ধন উৎসব। চিতপুরের রাস্তায় সেদিন লক্ষ মানুষের ঢল জমে গিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ গেয়েছিলেন’ বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি। পাশাপাশি শতশত কবি গীতিকারের কবিতায় গানে বাংলার জয়গানে সম্প্রীতির সুর মুখরিত করেছিল দিক-বিদিক। আর সেইসব গান কালজয়ী হয়ে দীর্ঘকাল ধরে লক্ষ কণ্ঠে গীত হয়েছিল। তবু দেশ ভাঙ্গল। ভাঙল বাংলা। কিন্তু বাংলা ভাষা ভুলিয়ে দেবার ষড়যন্ত্র বাংলার মানুষ মানল না। প্রতিবাদ ক্রমে প্রতিরোধ হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে (তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে)ও তাই হয়েছিল। যেখানে লক্ষ মানুষের পথে নেমে বিক্ষোভ আর লক্ষকণ্ঠে গান। সেদিনও সহ্য করতে পারেনি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা। বাঙালি সেদিনের তীব্র ঘৃণা নিয়ে যত ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, ততই নেমে এসেছে অত্যাচার। অত্যাচার শাসকের, অত্যাচার সৈরাচারীদের।
সে সময় কালজয়ী হয়েছিল অজস্র গান। ‘১৯৪৮-এ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ আন্দোলনের প্রথম পর্ব থেকে ভাষার গান রচনা শুরু হয়। সর্বপ্রথম গানটি রচনা করেন কবি ও গীতিকার অধ্যাপক আনিসুল হক চৌধুরী। এতে সুরারোপ করেন প্রখ্যাত গণসংগীতশিল্পী শেখ লুৎফর রহমান। গানটির একাংশ এমন: ‘শোনেন হুজুর—/ বাঘের জাত—এই বাঙালেরা—/ জান দিতে ডরায় না তারা,/ তাদের দাবি বাংলা ভাষা/ আদায় করে নেবে তাই’।৫ ভাষা আন্দোলন জয়যুক্ত হল বহু শহীদদের রক্ত ও অশ্রুর বিনিময়ে। কিন্তু গান থামলো না। ভাষা আন্দোলনের সময় এবং তারপরেও মাঠে-ঘাটে, অফিসে, স্কুলে-কলেজে ছোট বড়ো সবার কণ্ঠে গান যেন স্রোতস্বিনী হয়ে উঠল। ভাষার মাধুর্যের নুতুন গান রচিত হতে থাকল। ভাষা আন্দোলনের গানই ক্রমে মুক্তির গানে পরিণত হল। বাংলা ভাষার মর্যাদার লড়াই ক্রমে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল।
একুশের আর মাতৃভাষার গান এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গান হয়ে উঠেছে। সেই কালজয়ী চিরস্মরণীয় গান, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী……’ । গানটি বাংলাদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতে ও অন্যান্য দেশে। একুশে ফেব্রুয়ারি আর একুশের গান। ভাষা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাদিবস মানেই একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। গানটি রচিত হয়েছিল ঢাকা কলেজের তৎকালীন কোয়ার্টার ৩৭ বেচারাম দেউরিতে। গানটি রচনা করেচিলেন প্রখ্যাত আব্দুল গাফফার চৌধুরী। তিনি ঢাকা কলেজের অধ্যাপক। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গানটি রচনা করেন। গানটি একটি খবরের কাগজের শেষের পাতায় ‘একুশের গান’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। তখন গীতিকারের নাম ছাপা হয়নি। পরে প্রকাশের সময় গীতিকারের নাম ছাপা হয়। ১৯৫৪ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে’ সংকলনে গানটি পুনরায় প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সরকার সংকলনটি বাজেয়াপ্ত করে। মানুষের হৃদয়াবেগকে শোষক ও অত্যাচারীরা ভয় পায়। হৃদয়াবেগ সমষ্টির কথাবলে। অন্ধকার থেকে নিংড়ে বের করে আনে আলোর শিখা। তাই এতো ভয়। আর ওরা যতই আঘাত করে ততই যেন হৃদয় থেকে আরো তীব্রবেগে গান উৎসারিত হয়ে পড়ে। কোন বাধাই সেখানে ব্যবধান সৃষ্টি করতে পারে না।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি গানটি ও সেসময়েরর আন্দোলনের সঙ্গে গানটি কীভাবে জড়িয়েছিল সে সম্পর্কে যা জানাযায় তা হল, ‘প্রথমে এটি কবিতা হিসেবে লেখা হয়েছিল। কবিতাটি আব্দুল লতিফকে দিলে তিনি এতে সুরারোপ করেন। লতিফ আতিকুল ইসলাম প্রথম গানটি গান। কিন্তু গানটি ছিল সমবেত সঙ্গীত। আবারো সময়ের সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে ঢাকা কলেজের কিছু ছাত্র কলেজ প্রাঙ্গনে শহীদ মিনার স্থাপনের চেষ্টা করার সময় গানটি গেয়েছিল। একারণে তৎকালীন কলেজ প্রশাসন তাদেরকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করে। পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদ, যিনি সে সময়কার একজন নামকরা সুরকার এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, গানটিতে পুনরায় সুরারোপ করেন। বর্তমানে এটিই গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। ১৯৫৪ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে সংকলনে প্রকাশিত হয় গানটি’।৬
বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের সময় আর যারা গান লিখেছিলেন তার মধ্যে সাধক কবি মহিন শাহ অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। তিনি লিখেছিলেন,
সালাম আমার শহীদ স্মরণে
দেশের দাবী নিয়া দেশপ্রেমে মজিয়া
প্রাণ দিলেন যে সব বীর সন্তানে॥
সাইদুর রহমান বয়াতি লিখেছেন,
জন্মভূমি মায়ের ভাষা বলতে কেন দাও বাধা
তোমাদের কি হয় মাথা বেথা?
হায়রে বনের পাখি বনে থাকে
যার যার ভাষায় সেই ডাকে
তাতেই খুশি আল্লাপাকে
বুলিতে তার নাম গাথা॥
ভাবসাধক আবদুল হালিম বয়াতি লিখেছেন,
“উর্দু হবে রাষ্ট্রভাষা জিন্নাহ সাহেব কয়
ছাত্ররা সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ জানায়
বাংলা হবে রাষ্ট্রভাষা উর্দু আমরা মানি না॥
জিন্নাহর সাথে নাজিমুদ্দিন মুসলিম লীগ আর নুরুল আমিন
উর্দুভাষা চাইল সেদিন বাংলাভাষা চাইল না॥”
মোশারেফ উদ্দিন আহমেদ রচনা করলেন ‘মৃত্যুকে যারা তুচ্ছ করিল’।
তবে প্রথম প্রভাতে ফেরির গান হিসাবে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল ‘ভুলব না, ভুলব না একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না। লাঠি, গুলি, টিয়ার গ্যাস, মিলিটারি ভুলবো না।’গানটি। ‘ভাষা আন্দোলনের সূচনার গান হিসেবে এটি সে সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এবং তা আন্দোলনের মহা অস্ত্র হিসেবে কাজ করেছিল। গানটির গীতিকার ছিলেন গাজীউল হক নিজেই। ১৯৫৩ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি আরমানিটোলা ময়দানে আয়োজিত জনসভায় গানটি প্রথম গাওয়া হয়। ১৯৫৩ সালে একুশের প্রথম বার্ষিকী ও প্রথম শহীদ দিবসের প্রথম প্রভাত ফিরিতে যে গানটি গাওয়া হয়েছিল। তা হলো :
‘মৃত্যুকে
যারা তুচ্ছ করিল
ভাষা বাঁচাবার তরে
আজিকে স্মরিও তারে।’৭
বিবিসি ডট কম লিখেছে, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনুপ্রেরণার অন্যতম মূল একটা উৎস ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে রচিত গণসঙ্গীত। গণ জাগরণের এই সঙ্গীত রচনা ও পরিবেশনায় সেসময় অসামান্য অবদান যাঁরা রেখেছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বাংলাদেশের বহু সঙ্গীত রচয়িতা, সুরকার-গীতিকার ও শিল্পী। সেই সময়ের আবেগ আর উদ্দীপনার ঢেউ তখন স্পর্শ করেছিল প্রতিবেশী পশ্চিমবাংলার বহু মানুষকেও। বিশেষ করে পশ্চিমবাংলার সঙ্গীতজগতকেও ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল ৭১য়ের স্বাধীনতা যুদ্ধ। রচিত হয়েছিল স্মরণীয় কিছু গান’।৮
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন স্থানে আক্রান্তদের নিরাপত্তার জন্য অনেক অস্থায়ী শিবির গড়ে উঠেছিল। সেগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাংলাদেশের বহু মানুষ। তাদের তাদের মনোবল বৃদ্ধি করার জন্য সেসব শিবিরে শিবিরে গান গেয়ে বেড়াতেন বাংলাদেশের বেশ কিছু শিল্পী। তাদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান বেনু ও আরো কারোকারো নাম জানা যায়।
মুক্তি যুদ্ধের গান কোন সীমানা মানেনা। তারা চেনে অত্যাচারী আর অত্যাচারিত মানুষকে। সেই কারনেই দেশের বাইরের বহু গানও সেসময় গাওয়া হয়েছিল। আর ছিল রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সলিল চৌধুরী প্রমুখরা। মুক্তিযুদ্ধে সেসব গান মুখে মুখে ফিরত। শাসকের কালো হাত, কিংবা স্বৈরতন্ত্রের চাহনির মধ্যে যেমন কোন ভেদ নেই, তেমনি জাগরণ ও প্রতিবাদের ভাষার মধ্যেও বেশ মিল রয়েছে যথেষ্ট। তাই আজও বাংলায় গীত হয় পিট সিগারের গান। জন হেনরি আর নিগ্রোভাই পল রবসন বাংলার মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। দেশ মুক্ত হলেও অত্যাচার চলে। যতদিন দারিদ্র ও বঞ্চনা থাকবে অত্যাচারী আর অত্যাচারিতের দ্বন্দ্বের থেকে মুক্তির জন্য লড়াইয়ও চলবে। আর তাই দেশে বিদেশে যেকোন জায়গার রক্তাক্ত হিংস্র নখরের নজর পড়লেই আমরা ঐক্যের সুর, মুক্তির গান গাইতেই থাকব। যেখানে পথ দেখাবে এইসব কালজয়ী মুক্তির গান।
বাঙালির সংস্কৃতি আজ অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে । এই সময়ে, এই নেট-প্রজন্মে এসে বাঙালি সবচেয়ে বেশি রপ্ত করেছে অবাঙালি সংস্কৃতি। ঘরে লক্ষ্মীপূজা, ইতু, নবান্ন হোক না হোক, আজ গণেশপুজো, ধনতেরাস, রামনবমী উদ্যাপন অবশ্যকর্তব্য। বাঙালি মুখের ভাষাকেও ঘৃণা করতে শিখেছে। বাংলাভাষা তার কাছে নির্ভরতার ভাষা নয়, হীনম্মন্যতার ভাষা। বাড়িতে ঠাঁই নেওয়া অনাত্মীয়ের মতো বাঙালি আজ বিব্রত মাতৃভাষা নিয়ে।
সোনার দোকানের এক মালিক বলছিলেন তাঁর ক্রেতাকে? ‘‘বাংলা শিখে কী হবে? বাংলা তো ভারতে চলে না। বরং সবার ইংরেজি মিডিয়ামে পড়া উচিত।’’ সব শোনার পর সেই ক্রেতা বলেছিলেন, ‘‘আপনার মা-বাবাকেও তো ভারতে কার্যত কেউ চেনে না। কিন্তু তা বলে কি আপনি আপনার বাবা–মাকে অস্বীকার করতে পারবেন?’’ সেই আপাত সরল ক্রেতা মানুষটি স্বর্ণ ব্যবসায়ীটিকে আরও বলেছিলেন, ‘‘ইংরেজি মাধ্যমে পড়লেই ইংরেজি শেখা যায় না। ইংরেজি একটা ভাষা। তা বাংলা মাধ্যমে পড়েও শেখা সম্ভব। ইংরেজি মাধ্যমে মানুষ ইংরেজি ভাষা শিখতে যায় না, ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষা নিতে যায়।’’ এই যুক্তিবাদী মানসিকতা ক’টা বাঙালির আছে!
তথ্যসূত্র
১। https://www.facebook.com/PuKoCh/photos/a.117409551788727/1235892429940428/?type=3
৩। https://www.facebook.com/PuKoCh/photos/a.117409551788727/1235892429940428/?type=3
৪। https://www.prothomalo.com/durporobash/article/382276
৬।https://www.facebook.com/notes/একুশের-গান-শহীদ-মিনার-ও-ভাষা-আন্দোলনে-ঢাকা-কলেজের-ছাত্র-শিক্ষক-দের-ভূমিকা/1321063944598822/
৭। https://www.bhorerkagoj.com/print-edition/2018/02/02/178212.php
৮। https://www.bbc.com/bengali/news/2011/01/110102_mb_mukhtijudhdher_gaan