Tala and Rhythm in Rabindranath’s songs
Rima Dey, Research Scholar, Department of Performing Arts, Sister Nivedita University
Abstract:
Tala (rhythmic cycles) and rhythm hold a foundational role in the compositions of Rabindranath Tagore’s songs, which blend classical Indian music traditions with a distinctive poetic sensibility. Tagore’s approach to rhythm transcends mere metric patterns, embodying the nuanced moods, thematic content, and emotional depth of each song. In his compositions, tala is not only a structural component but also a vehicle for enhancing the expressive character of lyrics. By exploring the intricacies of Tagore’s rhythmic innovations, this study illuminates how he adapted and reinvented traditional talas, creating new rhythmic textures that resonate with both his poetic language and the thematic requirements of his compositions. The interplay between tala and melody in Tagore’s songs provides insight into his artistic vision and his contribution to modern Indian music. This paper examines Tagore’s approach to tala and rhythm, analyzing its impact on the listener’s experience and its significance in the broader context of Indian musicology.
Keywords:
Rabindranath Tagore, Tala, Rhythm, Indian Music, Tagore Songs, Poetic Expression, Melody, Rhythmic Innovation, Indian Musicology
রবীন্দ্রনাথের গানে তাল ও ছন্দ
রিমা দে, রিসার্চ স্কলার, পারফর্মিং আর্টস ডিপার্টমেন্ট, সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি
রবীন্দ্রনাথ ,কবি , সাহিত্যিক, গীতিকার , নাট্যকার , সংগীত বিশ্লেষক এবং জীবনের প্রায় উপান্তে এসে চিত্র শিল্পীও। এ যেন একের মধ্য শতক সম্ভার এবং তার সহস্র সার্থক প্রকাশ ।তবে তাঁর সৃষ্টির অন্যতম সার্থক নিদর্শন তাঁর গান।যা সর্বজন গৃহীত। এ গান যেন তৎকালীন সময়ের সামনে উত্তর আধুনিকতার প্রতীক।যাকে বাংলা সংস্কৃতির নবজাগরণ বল্লে অতিশয়োক্তি হবেনা।আমাদের দেশজ রাগ-রাগীনির বৈচিত্র্য এবং ব্যাপ্তি (বাংলার লোকগান, কীর্তন, পুরাতনী ইত্যাদি সকল প্রকার গান) তাঁকে আকৃষ্ট করে,সমভাবে তিনি প্রবল অভিসন্ধিৎসু হন বৈচিত্র্যময় “তাল” এর প্রতি। যার প্রভাবে অনবদ্য ছন্দের স্বাদ পেল তাঁর গান।তাল বিষয়ে কবির স্বচ্ছ নব চিন্তাভাবনা, তাঁর গানে নতুন তাল-ছন্দের প্রয়োগ এই বিষয়ে “সংগতচিন্তা” প্রবন্ধ সংকলনের “সংগীতের মুক্তি” প্রবন্ধে তাঁর মতামত “কাব্যে ছন্দের যে কাজ, গানে তালের সেই কাজ।” ব্যাকরণের যুক্তি মেনে গানের কথার সাথে তালের দাঙ্গার বরাবরের বিরোধী রবীন্দ্রনাথ, কবিতার কথার সাথে ছন্দের যে সক্ষতা, গানের কথার সাথে তালের সেইরূপ বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে তাঁর কবিতা ও গান নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করেছেন। “ তাল জিনিসটা সংগীতের হিসাব-বিভাগ। এর দরকার খুবই বেশী সে কথা বলাই বাহুল্য”।(সঃ মুঃ;
রবীন্দ্রনাথ) উদাহরণ হিসাবে পাই –
“কাঁপিছে দেহলতা থরথর,
চোখের জলে আঁখি ভরভর।।
দোদুল তোমাদেরই বনছায়া তোমার নীলবাসে নিল কায়া,
বাদল-নিশীথেরই ঝরঝর
তোমার আঁখি-‘পরে ভরভর”।।
১২৩৪ এর ভাদ্রে “সবুজপত্র পত্রিকা”য় “সংগীতের মুক্তি” প্রবন্ধে এই কবিতাটি প্রথম গান রূপে
প্রকাশিত । এখানে লক্ষণীয় যে প্রতি লাইনে মাত্রা সংখ্যা ১১। কবিতার এই ছন্দকেই স্বরলিপিতে তালে
বাঁধা পাওয়া যায় (৩+৪+৪=১১ মাত্রা)।
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১
। কাঁ পি ছে । দে হ ল তা । থ র থ র ।
।চো খে র । জ লে আঁ খি । ভ র ভ র।
এই ছন্দের তালে কাব্য পাঠ করলেও কথার ভাবার্থ বজায় থাকে দেখা যায়। (একাদশী তাল। পরে আলোচনা করা হয়েছে।)
“কবিতায় যেটা ছন্দ,সংগীতে সেইটাই লয়।এই লয় জিনিসটি সৃষ্টি ব্যাপিয়া আছে,…………………………….এই লয়কে যদি মানি তবে তালের সঙ্গে বিবাদ ঘটালেও ভয় করিবার প্রয়োজন নাই” – এই যুক্তিতে কবির সাক্ষ এই কবিতা,
“ ব্যাকুল বকুলের ফুলে
ভ্রমর মরে পথ ভুলে।
আকাশে কী গোপন বাণী
বাতাসে করে কানাকানি,
বনের অঞ্চলখানি
পুলকে উঠে দুলে দুলে”।।
‘সংগীত চিন্তা’য় কবির সরল স্বীকারোক্তি “এটা যে কী তাল তা আমি আনাড়ি জানি না”।এক্ষেত্রে দেখা যায় প্রতি লাইনে মাত্রা সংখ্যা ৯ (৩+৬=৯) এবং এবারেও গানে এবং কবিতায় ছন্দে তালে কোন বিরোধ ঘটল না।কথার ভাবও থাকল অব্যাহত।(নবতাল, পরে আলোচনা করা হয়েছে।)
এবার আমরা কবিতার ছন্দে কবি গানকে তালে বাঁধলেন কিভাবে তা সংক্ষিপ্তাকারে দেখে নেব। অনেক রবীন্দ্র গবেষক বলেন, তাঁর এই কাজ কবিতা পর্বকে তাল পর্বে চিহ্নিত করা কেবল, সেখানে বাড়তি সুরসংযোজন এর কারুকার্য নেই। মুদ্রিত স্বরে সুর বসানো মাত্র।
উদাহরণ ১:- (৯ মাত্রার তাল)
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯
। ব্যা কু ল । ব কু লে র ফু লে ।
। ভ্র ম র । ম রে প থ ভু লে ।
। আ কা শে। কী গো প ন বা ণী ।
। বা তা সে। ক রে কা না কা নি ।
এই গানটিই আবার ভিন্ন ছন্দেও স্বরলিপি পাওয়া যায় ‘গীতপঞ্চাশিকা’তে (পর পর দুটি স্বরলিপি আছে)। এখানে কবিতাটি ৫+৪=৯ ছন্দে ভাগ করা।গানের ছন্দ বজায় রাখতে কোথাও কোন অসুবিধা হলো না ।
উদাহরণ ২:-
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯
। ব্যা কু ল ব কু । লে র ফু লে ।
। ভ্র ম র ম রে । প থ ভু লে ।
আবার ‘সংগীতের মুক্তি‘ প্রবন্ধে এই ৯ মাত্রার আরো একটি উদাহরণ আমরা পাই। যেখানে ছন্দ ৬+৩=৯ এ বিভক্ত।
উদাহরণ ৩:-
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯
। যে কাঁ দ নে হি য়া । কাঁ দি ছে ।
। সে কাঁ দ নে সে ও । কাঁ দি ল ।
। যে বাঁ ধ নে মো রে । বাঁ ধি ছে ।
। সে বাঁ ধ নে তা রে । বাঁ ধি ল ।
যদিও কবিতার ছন্দকে গানের তালের ছন্দে মেলানতেই কবির আনন্দ ছিল, তবুও স্বরবিতান ১৬ তে এই গানটিতেই আরো তিন মাত্রা যোগ করে (৩+৩+৩+৩=১২) একতালে নিবদ্ধ স্বরলিপি রয়েছে ।হয়ত কবিতার ৯ মাত্রায় গীত গানটি সুখশ্রাব্য মনে হয়নি তাঁর , তাই পরিবর্তন করে গায়নরীতিতে স্বস্তি এনেছেন । ( এখানে এই প্রসঙ্গটি অপ্রাসঙ্গিক, তাই বিস্তারিত আলোচনা করা হলো না।)
উদাহরণ ৪:-
“দুয়ার মোর পথপাশে,
সদাই তারে খুলে রাখি।
কখন তাঁর রথ আসে
ব্যাকুল হয়ে জাগে আঁখি।”
এক্ষেত্রে লক্ষণীয় প্রতি লাইনে স্বর সংখ্যা ৯ । ৪-৫ বা ৬-৩ এ নয়-ছয় না করে কবিতার স্বর অনুসারে একটানা ৯ এ তাল যোগ করলেন কবি।
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯
। দু য়া র মো র প থ পা শে ।
। স দা ই তা রে খু লে রা খি ।
। ক খ ন তা র র থ আ সে ।
।ব্যা কু ল হ য়ে জা গে আঁ খি ।
কবিতার ছন্দকে গানের তালের সাথে মিলিয়ে দেবার আনন্দে কবির এই গবেষণা বলা যেতে পারে। তবে ‘নবতাল’, ‘একাদশী’ তালের নাম ‘সংগীতচিন্তা’য় উল্লেখ পাওয়া যায় না।
এ পর্যন্ত ছন্দ যে নিয়মে কবিতায় চলে ,সেই নিয়মে গানকে তালবদ্ধ করার তাগিদে কবির যে চিন্তাধারা এবং তাল-ছন্দ বিভাগ ‘সংগীতের মুক্তি’ প্রবন্ধে উদাহরন সহ কবি দেখিয়েছেন তা আলোচনা করা হলো; এবার তাঁর গানে তালের সর্বাঙ্গীন ব্যবহার সম্বন্ধে আমরা সংক্ষিপ্তকারে নজর দেব। পরিচিত গতে-বাঁধা পথ ধরেই সর্বদা নতুন পথ সৃষ্টি করা কবির সহজাত, তার নিদর্শন তাঁর সৃষ্টি সম্ভারে আমরাপ্রতিনিয়ত পাই।সাধারণত উত্তর ভারতীয় সংগীতে প্রচলিত সব তালেই প্রায় রবীন্দ্রনাথ গান রচনা করেছেন।তাছাড়াও নতুন তাল সৃষ্টিতে কবি নিপুনতার দাবী রাখেন। ‘নবতাল’ এর বিভিন্ন ছন্দ ও গানের উদাহরণ আমরা আগেই জেনেছি। ষষ্ঠী, ঝম্পক, অর্দ্ধঝাঁপ, রূপকড়া, একাদশী, নবপঞ তালের স্রষ্টা হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই কৃতিত্ব দেওয়া হয়। আমাদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে দক্ষিন ভারতে প্রচলিত কিছু তালের নমুনা পাওয়া যায় যাদের চলন বড় বিচিত্র।বাংলার কীর্তনে কিছু তাল প্রচলিত আছে যেগুলি অন্যান্য কোন সংগীতে ব্যবহৃত হতে দেখা যায় না, বা ব্যবহার করা হয় না।কবি সম্ভবত এই তালগুলি থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন তাল সৃষ্টি করলেন। যেমন, দক্ষিণ ভারতের ‘সারতাল’ (৩।২।২)এর সাথে ‘রূপকড়া’ তালের মিল পাওয়া যায় ।কর্ণাটি ‘দুষ্কর’ তালের মাত্রা (৫।২।২) সংখ্যা এবং বরীন্দ্রনাথের ‘নবতাল’ এর মাত্রা সংখ্যা ৯। কর্ণাটি ‘মণিতাল’, ‘বিন্দুতাল’, ‘নীলতাল’ এবং রবীন্দ্রনাথ কৃত ‘একাদশী’ সমতুল্য (৩।২।২।৪)। তবে তাঁর সৃষ্ট নতুন তালগুলিতে ফাঁকের হিসেব রাখেননি কবি,হয়তো তালের ওজন কোথাও ক্ষুন্ন না হয় সেই চিন্তাধারায় ।কবিতার ছন্দে তাল, গানের তাল- ছন্দ সমগ্র বিষয়টি তাঁর সুদক্ষ চিন্তাধারায় যেভাবে প্রকাশিত তার আভাস নিম্নে আলোচিত করা হলো –
২|২ ছন্দ; বলা হয় সমপদী তাল (নামকরণ হয়নি)। মাত্রা সংখ্যা: ৪
১ ২ ৩ ৪ ১
। ধাগে তেটে । তাগে তেটে । ধাগে
+ ২ +
গান:- ১. আজি ঝরঝর মুখর বাদরদিনে
২. এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে
৩. মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে
৪. সবারে করি আহ্বান।
অখন্ড ৪ মাত্রা ছন্দ। সমপদী তাল(নামকরণ হয়নি)। মাত্রা সংখ্যা: ৪
১ ২ ৩ ৪ ১
। ধা ধা ধি না । ধা
+ +
গান:- ১. নির্জন রাতে নিঃশব্দ চরণখানি
৩।২ ছন্দ। ঝম্পক তাল। বিষমপদী। মাত্রা সংখ্যা: ৫
১ ২ ৩ ৪ ৫ ১
। ধি ধি না । ধি না । ধি
+ ২ +
গান:- ১. আমারে যদি জাগালে আজি
২. এই লভিনু সঙ্গ তব
৩. বিপদে মোরে রক্ষা করো
৪. নিবিড় অমা তিমির হতে
২।৩ ছন্দ। অর্দ্ধঝাঁপ তাল । বিষমপদী । মাত্রা সংখ্যা: ৫
১ ২ ৩ ৪ ৫ ১
। ধি না । ধি ধি না । ধি
+ ২ +
গান :- ১. একদা তুমি প্রিয়ে
২. তোমার আমার এই
৩. দীপ নিবে গেছে মম
৪. মিলনরাতি পোহালো
২।৪ ছন্দ । ষষ্ঠী তাল । বিষমপদী । মাত্রা সংখ্যা: ৬ (দক্ষিণ ভারতীয় ‘পত্তি’ তালের তুলনীয়)
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ১
। ধি না । ধিন ধিন নাগে তেটে । ধি
+ ২ +
গান:- ১. এবার এল সময়ের তোর
২. কে রঙ লাগালে বনে বনে
৩. নিদ্রাহারা রাতের এ গান
৪. মধ্যদিনের বিজন বাতায়নে
৫. শ্যামল ছায়া নাইবা গেলে
[বিঃ দ্রঃ: – যদিও রবীন্দ্রসৃষ্ট তাল হিসাবে ‘ষষ্ঠী’ চিহ্নিত, কিন্তু হিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৩ তে প্রথম
ব্রহ্মসংগীতে এইরূপ তাল ব্যবহার করেন পাওয়া যায়।তত্ত্ববোধিনী পত্রিকাতে ‘চপক’ নামে সমরূপ একটি তালের উল্লেখ পাওয়া যায় ।]
৪।২ ছন্দ। বিষমপদী তাল ( নামকরণ হয়নি) । মাত্রা সংখ্যা: ৬
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ১
।ধা গে তে টে । ধা গে । ধা
+ ২ +
গান:- ১ . হৃদয় আমার প্রকাশ হল
অখন্ড ৬ মাত্রা । নামকরণ হয়নি। মাত্রা সংখ্যা: ৬
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ১
। ধি না না ধি না ধি । ধি
+ +
গান: – ১. একটুকু ছোঁয়া লাগে
২. জয় ভৈরব জয় শঙ্কর
৩. ধীরে বন্ধু গো, ধীরে
৪. হিমগিরি ফেলে নীচে নেমে এলে
৩। ৪ ছন্দ। বিষমপদী (নামকরণ হয়নি)। মাত্রা সংখ্যা: ৭ (শাস্ত্রীয় ‘পোস্তা’ তালের সমরূপ)
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ১
। ধা দেন তা । তেটে কতা গদি ঘেনে । ধ
+ ২ +
গান :- ১. তোমার গীতি জাগালো স্মৃতি
২. তোমার বৈশাখে ছিল
৩।২।৩ ছন্দ। রূপকড়া তাল । বিষমপদী। মাত্রা সংখ্যা: ৮ [দক্ষিণ ভারতীয় ‘মতং’ তালের সমরূপ]
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ১
। ধি ধি না । ধি না । ধি ধি না । ধি
+ ২ ৩ +
গান:- ১. কেন সারাদিন ধীরে ধীরে
২. কত অজানারে জানাইলে তুমি
৩. গভীর রজনী নামিল হৃদয়ে
৪. শরৎ আলোর কমল বনে
৩।২।২ ছন্দ। নবতাল । বিষমপদী । মাত্রা সংখ্যা: ৯
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১
। ধা দেন্ তা । তেটে কতা । গদি ঘেনে । ধাগে তেটে । ধা
+ ২ ৩ ৪ ১
গান :- ১. নিবিড় ঘন আঁধারে
২. প্রেমে প্রাণে গানে গন্ধে
বিঃ দ্রঃ- প্রাচীন তালশাস্ত্রে ৯ মাত্রার তালের উল্লেখ পাওয়া যায় । রবীন্দ্রনাথের ৯ মাত্রার তাল-ছন্দের Experiment এর উৎসাহ সেখান থেকেও হতে পারে। প্রসঙ্গত ৩+৬ , ৬+৩ , ৫+৪ , অখন্ড ৯ মাত্রার আলোচনা আমরা আগে করেছি। তালের ঠেকা তবলায় এবং পাখোয়াজ এ ভিন্ন। আবার গানের কথা ও পরিবেশনার প্রক্ষিতে ভিন্ন ভাবে বাদক তাল পরিবেশন করেন। এখানে প্রচলিত ঠেকা ব্যবহার করা হয়েছে।
এখানে রবীন্দ্রনাথের গানে যে ছন্দ বিভাগ পাওয়া যায় সেগুলি ঠেকা সহ আমরা দেখে নেব । (আগে আলোচিত তাল ছন্দগুলি ব্যাতিরেখে)
# অখন্ড ৯ মাত্রা। নামকরণ হয়নি
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১
। ধা দেন্ তা ক তা গ দি ঘে নে । ধা
+ +
গান :- দুয়ার মোর পথপাশে
# ৫।৪ ছন্দ । নামকরণ হয়নি
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১
। ধা ধি না ধি না । ধা ধি ধি না । ধা
+ ২ +
গান :- ব্যাকুল বকুলের ফুলে
# ৩।৬ ছন্দ। নামকরণ হয়নি
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১
। ধা ধি না । ধা ধি ধি না ধি না । ধি
+ ২ +
গান :- ব্যাকুল বকুলের ফুলে
# ৬।৩ ছন্দ । নামকরণ হয়নি
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১
। ধিন্ ধিন্ ধাগে তেটে ধিন্ না । ধি ধি না । ধা
+ ২ ১
গান:- যে কাঁদনে হিয়া কাঁদিছে
# ৫।৫ ছন্দ । নামকরণ হয়নি [ পূর্বে আলোচিত কবিতার ছন্দ, গানের ছন্দ মেলানো পরীক্ষার আরেকটি
উদাহরণ। ]
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১
।ধা ধি ধি না ধি । না ধি ধি না তি । ধা
+ ২ +
গান:- ও দেখা দিয়ে যে চলে গেল
# ৩।২।২।৪ । একাদশী
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ ১
। ধা দেন তা । তেটে কতা । গদি ঘেনে । ধাগে তেটে তাগে তেটে । ধা
+ ২ ৩ ৪ +
(পাখোয়াজ এর বোল দেওয়া হল।দক্ষিণ ভারতীয় তালের প্রসঙ্গ পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। )
গান:- দুয়ারে দাও মোরে রাখিয়া
# ৩।৪।৪ ছন্দ । নামকরণ হয়নি
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ ১
। ধা দেন্ তা । কৎ তাগে দেন্ তা । তেটে কতা গদি ঘেন । ধা
+ ২ ৩ +
গান:- কাঁপিছে দেহলতা থরথর
২।৪।৪।৪।৪ ছন্দ । নবপঞ্চ তাল
১ ২ । ৩ ৪ ৫ ৬ । ৭ ৮ ৯ ১০ ।
। ধা গে । ধা গে দেন্ তা । কৎ তাগে দেন্ তা ।
+ ২ ৩
১১ ১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১
তেটে কতা গদি ঘেনে । ধাগে তেটে তাগে তেটে । ধা
৪ ৫ +
গান:- জননী তোমার করুন চরণখানি
দেখা গেল রবীন্দ্রনাথ তাঁর সৃষ্ট তালগুলিতে ফাঁকের ব্যবহার করেননি।অর্থাৎ বলা যেতে পারে ছন্দে লয়ে গান, গানের কথার ভাব প্রকাশকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। যদিও ঝম্পক, অর্দ্ধঝাঁপ, ষষ্ঠী, রূপকড়া,নবতাল, একাদশী ও নবপঞ্চ রবীন্দ্রসৃষ্ট তাল বলে পরিচিত ,কিন্তু স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ যে এই তালগুলির নামকরণ করেছিলেন এমন প্রমাণ কোথাও পাওয়া যায় না।বিশ্বভারতী প্রকাশিত স্বরলিপি গ্রন্থসমূহে এই তালগুলির নাম পাওয়া যায়।
উপরি উল্লিখিত তালগুলি ছাড়াও রবীন্দ্রনাথের গানে ৬ থেকে ১৮ মাত্রা পর্যন্ত তালের প্রয়োগ আমরা পেয়ে থাকি।রবীন্দ্রগানে যে তালগুলির প্রয়োগ পাওয়া যায় তার একটি তালিকা (একটি করে গানের উদাহরণ সহ ) নিম্নে প্রদত্ত হল –
৬ মাত্রার তাল (৩।৩) ‘দাদরা’ – আলো আমার আলো ওগো
৭ মাত্রার তাল (৩।২।২) ‘তেওরা’ – আমার মাথা নত করে
৭ মাত্রার তাল (৩।২।২) ‘রূপক’ – হে মন তাঁরে দেখো
৮ মাত্রার তাল (৪।৪) ‘কাহারবা’ – অগ্নিশিখা এসো এসো
৮ মাত্রার তাল (২।২।২।২) ‘যৎ’ – কেন জাগে না
১০ মাত্রার তাল (২।৩।২।৩) ‘ঝাঁপতাল’ – প্রতিদিন আমি হে জীবনস্বামী
১০ মাত্রার তাল (৪।২।৪) ‘সুরফাঁকতাল’ – প্রতিদিন তব গাথা
১২ মাত্রার তাল (৩।৩।৩।৩) ‘একতাল’ – মন্দিরে মম কে
১২ মাত্রার তাল (৩।৩।৩।৩) ‘খেমটা’ – এরা পরকে আপন করে
১২ মাত্রার তাল (৩।৩।৩।৩) ‘আড়খেমটা’ – আমার প্রাণের পরে
১২ মাত্রার তাল (২।২।২।২।২।২) ‘চৌতাল’ – বাণী তব ধায়
১২ মাত্রার তাল (৪।৪।৪) ‘চতুর্মাত্রিক একতাল’ – নয়ান ভাসিল জলে
১৪ মাত্রার তাল (২।৪।৪।৪) ‘আড়া চৌতাল’ – শুভ্র আসনে বিরাজ
১৪ মাত্রার তাল (৩।২।২।৩।৪) ‘ধামার’ – জাগে নাথ জোছনা রাতে
১৪ মাত্রার তাল (৩।৪।৩।৪) ‘দীপচন্দ্রী’ – মেঘ বলেছে যাব যাব
১৫ মাত্রার তাল (৪।৪।৪।৩) ‘পঞ্চমসওয়ারী’ – আজি মোর দ্বারে
১৬ মাত্রার তাল (৪।৪।৪।৪) ‘ত্রিতাল’ – রাখো রাখো রে জীবনে
১৬ মাত্রার তাল (৪।৪।৪।৪) ‘ঢিমা ত্রিতাল’ – আজি মম জীবনে
(ঠেকা আলোচনা করা হল না বিষয়টিকে আরো দীর্ঘায়িত না করার তাগিদে)। এগুলি ছাড়া একটি গানে বিভিন্ন তালের প্রয়োগ আছে তেমন কিছু গানও আমরা পাই। যেমন: আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে, নৃত্যের তালে তালে প্রভৃতি।
রবীন্দ্রনাথের গান এক অনন্ত সাগর। বর্তমান সময়ে যখন সারা বিশ্বের সংগীতের সঙ্গে সব
প্রজন্মের নিত্য পরিচিতি ঘটছে, পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীতকার রবীন্দ্রনাথের কালোত্তীর্ণ সুরগুলি বৈচিত্র্যময় তাল এর সমারোহে সমকালীন সংগীতের প্রতিভূ রূপে আত্মপ্রকাশ করছে। তাঁর চিন্তাধারার একটি দিক এই স্বল্পপরিসরে আলোচনা করা হল।
উল্লেখপঞ্জী:-
১. ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ, সংগীতচিন্তা (পৃষ্ঠা: ৫৮, ৫৯), বিশ্বভারতী
২. প্রজ্ঞানানন্দ স্বামী, সংগীতে রবীন্দ্র প্রতিভার দান (পৃষ্ঠা:৪৭), শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ
৩. বসু অরুণকুমার, রবীন্দ্রসংগীতের রূপ-রূপান্তর (পৃষ্ঠা:১৭৪), দে’জ পাবলিশিং
৪. ঘোষ ইন্দ্রাণী, রবীন্দ্রসংগীতে তাল ও ছন্দ বৈচিত্র্য, রবীন্দ্রসংগীত (পৃষ্ঠা: ৯৪) রবীন্দ্রভারতী
বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা
লেখিকা পরিচিতি:-
রিমা দে
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী।
রিসার্চ স্কলার, পারফর্মিং আর্টস ডিপার্টমেন্ট, সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি।
যোগাযোগ: 9433345582 (Whatsapp)
Mail : rimadoc2024@gmail.com