গুরুসদয় দত্ত ও বাঙালি জাতিসত্তার আন্দোলন
-শক্তি মণ্ডল
বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও সামগ্রিকভাবে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে যে মনীষীরা তাঁদের সারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম হলেন গুরুসদয় দত্ত। তাঁর সবথেকে বড়ো অবদান, তিনি বাঙালি জাতিসত্তার আন্দোলনকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বাংলার নিজস্ব নৃত্য,গীত, শিল্প-সংস্কৃতিকে গৌরবের আসনে বসিয়েছিলেন এবং এগুলির নিরন্তর চর্চার জন্য গঠন করেছিলেন ‘বাংলার ব্রতচারী সমিতি’।
প্রেক্ষাপট:১৮৮২ সালের ১০ মে অবিভক্ত বঙ্গের শ্রীহট্ট জেলার কুশীয়ারা নদীতীরে বীরশ্রী গ্রামে গুরুসদয়ের জন্ম। তখন বাংলায় ইংরেজ শাসনের ১২৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ধূর্ত, দাম্ভিক মেকলের ১৮৩৫ সালের পরিকল্পনা অনুসারে শহরে, গঞ্জে গড়ে উঠছে ব্রিটিশের সেবাদাস ‘বাবু’ সম্প্রদায়।অন্যদিকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সৃষ্ট নব্য জমিদারদের এবং মহাজন,আমলা, নীলকর, বেনিয়াদের দৌরাত্ম্যে দুর্ভিক্ষ-পীড়িত গ্রামাঞ্চলে গভীর হতাশার পাশাপাশি ঘটছে নানা বিক্ষোভ, বিদ্রোহ। মাতৃভাষা ও লোকসংস্কৃতিকে তখন অবজ্ঞার চোখে দেখা হত।এরই মধ্যে রামমোহন ডিরোজিও বিদ্যাসাগর যে নবজাগরণের ঢেউ গড়ে তোলেন, তাতে অবগাহন করেন গুরুসদয়। প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি শিক্ষাগুরু হিসাবে পেয়েছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র ও জগদীশচন্দ্রকে।১৯০৫ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি যখন বিলেত থেকে একই সঙ্গে কৃতিত্বের সঙ্গে আই সি এস এবং ব্যারিস্টারি পাশ করে ফিরলেন, তখন বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের গান গেয়ে পথে নেমেছেন রবীন্দ্রনাথ।
লোকসংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন:গুরুসদয় সরকারি প্রশাসক হিসাবে প্রথমে কাজ করেছেন বিহারের আরা ও গয়া জেলায়। তারপর বিচার বিভাগীয় কাজে গিয়েছেন বঙ্গের বগুড়া, যশোর, ফরিদপুর, কুমিল্লা,ঢাকা, বরিশাল, খুলনা প্রভৃতি জেলায়। এরপর বীরভূম, বাঁকুড়া,হাওড়া ও ময়মনসিংহের জেলা শাসক, শিক্ষা বিভাগের অধিকর্তা,স্বশাসিত প্রাদেশিক সরকারের সচিব, কেন্দ্রীয় আইনসভার মনোনীত সদস্য প্রভৃতি নানা পদের দায়িত্ব পালন করছেন। আন্তর্জাতিক নানা সভা, সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
গ্রাম বাংলার নানা প্রান্তে নিবিড়ভাবে কাজ করার সময় তিনি ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হন পল্লীর অতুলনীয় সম্পদ- বৈচিত্র্যপূর্ণ লোকনৃত্য, লোকগীতি ও লোকশিল্পের সঙ্গে। তিনি উপলব্ধি করেন,”আমাদের জাতীয়তার পরিণতি ও পরিচয় হবে বাংলার সংকৃষ্টির নিবিড় প্রকাশে; একমাত্র তাতে করেই আমরা ভারত-মানবতার ও বিশ্ব-মানবতার ক্ষেত্রে আমাদের বৈশিষ্ট্যকে দান করতে পারব।নতুবা আমাদের জীবন হবে অর্থহীন ও মূল্যহীন।”
তিনি পল্লীর এই সম্পদগুলি সংগ্রহ ও প্রচারে ব্রতী হলেন। এইভাবে সংগৃহীত হল বাউল, জারী,সারি, কীর্তন, ভাটিয়ালি,কাঠি, মুর্শিদি, ব্রত,ঝুমুর, যশোরের যুদ্ধনৃত্য ঢালী,ঘাটওলানো, ফরিদপুরের বিবাহ নৃত্য ও গীত প্রভৃতি। সংগ্রহ করলেন পট, আলপনা,কাঠ ও পাথরের মূর্তি, দেওয়াল চিত্র,আসন,পোড়ামাটির কাজ, অসংখ্য প্রত্ন নিদর্শন প্রভৃতি।বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিতে মাতোয়ারা হয়ে তিনি লিখলেন-
“মানুষ হ’, মানুষ হ’আবার তোরা মানুষ হ’-অনুকরণ খোলস ভেদিকায়মনে বাঙ্গালী হ’।শিখে নে দেশ বিদেশের জ্ঞান,তবু হারাস না মা’র মান।.. বাংলা ভাষার বুলি বলে,বাংলা ভাবে নেচে-খেলেষোলোআনা বাঙ্গালী হ’-সম্পূর্ণ বাঙ্গালী হ’-বিশ্ব-মানব হবি যদি,
শাশ্বত বাঙ্গালী হ’।”
ময়মনসিংহের জেলা শাসক থাকাকালীন তিনি নেত্রকোণার বাউল এবং আধারবাড়ীর ইমাম বক্সের জারী দলকে আমন্ত্রণ করে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন।খালি গায়ে নাচলেন ওদের সঙ্গে। গাঁয়ের লোকদের সঙ্গে নিজে কোদাল কুড়ুল ঝুড়ি নিয়ে নামলেন জঙ্গল সাফাই,পানা পরিষ্কার, নর্দমার পাঁক তোলার কাজে। সাধারণ মানুষ চিনে নিল,এ আমাদেরই লোক। উন্নাসিকরা বলল,’পাগল’।
বাঙালি জাতিসত্তা আন্দোলনের তাত্ত্বিক ভিত্তি : গুরুসদয় দত্ত বা গুরুজি বাঙালি জাতিসত্তার আন্দোলনকে যে তাত্ত্বিক ভিত্তির উপর দাঁড় করান, তার দুটি স্তম্ভ- (১) ভূমিবাদ ও (২) ছন্দবাদ।
ভূমিবাদকে তুলনা করা যায় চারাগাছের বেড়ে ওঠার সঙ্গে।চারার শিকড় মাটিতে ছড়িয়ে থাকে। সেখান থেকে রস নিয়ে সে বেড়ে ওঠে।তার ডালপালা ছড়িয়ে পড়ে আকাশের দিকে। সেখানকার আলো বাতাস তাকে পুষ্ট করে।এই মাটি জল আলো বাতাস না পেলে সে বাঁচতে পারে না। মানুষও বিশেষ এলাকায় জন্মায়।মা বাবা আত্মীয় পরিজনের যত্ন ছাড়া সে বড়ো হতে পারে না। তার সামাজিকীকরণ হয এদের সঙ্গে মিলেমিশে, স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার মধ্য দিয়ে। এদের প্রতি দায়বদ্ধ না থাকলে সে সমাজকে কিছু দিতে পারে না।গুরুজির ব্যাখ্যা অনুসারে, ” প্রত্যেক প্রাকৃতিক দেশ একটা বিশিষ্ট ভূমি। সেই ভূমির আকাশে বাতাসে জলে স্থলে নদীতে একটি ছন্দ-স্রোতের ধারা প্রতিনিয়ত প্রবাহিত হয়ে সেই দেশের মানুষকে একটা বৈশিষ্ট্য দান করে; তাদের চরিত্রে- তাদের ভাষায়- তাদের সাহিত্যে- তাদের কণ্ঠের সু্রে- তাদের গতিভঙ্গীতে- তাদের নৃত্যে ও গীতে একটা বৈশিষ্ট্যময় ভাব দান করে।” গানের মাধ্যমে তিনি বলেছেন-
“আমরা বাঙ্গালী সবাই বাংলা মা’র সন্তান-বাংলাভূমির জল ও হাওয়ায় তৈরী মোদের প্রাণ।মোদের দেহ মোদের ভাষা মোদের নাচ আর গানবাংলাভূমির মাটি হাওয়া জলেতে নির্মাণ।বাংলাভূমির প্রেমে মোদের ধর্ম্ম আর ইমান-
বাংলাভূমি মোদের কাছে স্বর্গ-সম স্থান।”
ছন্দবাদের মর্মবাণী হল, মানুষের হৃদয়ের মধ্যে স্বতঃপ্রবাহিত সুর ও ছন্দ দিয়ে আনন্দ ও ঐক্যের ধারা গড়ে তোলা। তাঁর ব্যাখ্যা, বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে এই বিরাট ব্রহ্মাণ্ড এক অখণ্ড সত্তা; অবিরাম গতিশীল ও ছন্দশীল। নদীর স্রোত, সাগরের ঢেউ, দেহের রক্ত সঞ্চালন, শ্বাস প্রশ্বাস – সবকিছুই ছন্দে বাঁধা।এই বিশ্বের এবং আমাদের ভাষা, নৃত্য,গীতের ছন্দকে আয়ত্ত্ব করতে পারলেই আমরা খুঁজে পাব মানবতার সমতানতা।তিনি লিখেছেন,”আমেরিকার কাছে অতি- আধুনিকতা সাজে- কারণ তার নিজস্ব ধারা কিছু ছিল না। তার অন্তরের শূন্যতা ও নিঃস্বতাকে ঢাকতে গিয়ে সে এই অতি-আধুনিকতার সৃষ্টি করেছে।” কিন্তু বঙ্গদেশ-সহ এদেশের প্রতিটি অঞ্চলেরই তো সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক সম্পদ আছে। সেই তো তার প্রকৃত পরিচয়।”বাংলা্য প্রত্যক লোক যদি বাঙ্গালী হিসাবে, বাঙ্গালী ও বাংলার আত্মা্র বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ভিতরের ও বাহিরের ভাবে ও ছন্দে একটা অন্য জাতির নকল স্বরূপ হয়ে যায়, তাহলে সে যদি বাহ্য স্বাধীনতাও পায়, সেই স্বাধীনতাকে বাঙ্গালীর স্ব-স্বাধীনতা বা বাংলার স্বাধীনতা বলা যাবে না।কারণ বাংলার স্ব-ছন্দ বা স্বছন্দ এবং স্ব-ধারা যদি বাঙ্গালী হারায়, তাহলে বিশ্বে দান করার মত তার অবদান কিছু থাকবে না।”
গুরুসদয়ের এই প্রয়াসকে কেউ কেউ ‘প্রাদেশিকতা’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। তার উত্তরে তিনি বলেছিলেন,”..তারা যাকে প্রাদেশিকতা মনে করেন,সেটাই আসল জাতীয়তা।.. আমাদের জাতীয়তার পরিণতি ও পরিচয় হবে বাংলার সংকৃষ্টির নিবিড় প্রকাশে; একমাত্র তাতে করেই আমরা ভারত-মানবতার ও বিশ্ব-মানবতার ক্ষেত্রে আমাদের বৈশিষ্ট্যের দান করতে পারব।নতুবা আমাদের জীবন মূল্যহীন।”বাংলার ব্রতচারী সমিতি:গুরুসদয় তাঁর ভাবনাকে আন্দোলনের আকারে গড়ে তোলার জন্য গঠন করলেন,’বাংলার ব্রতচারী সমিতি’।এর সূচনা হয় সিউড়িতে ১৯৩২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি একটি লোকনৃত্য-গীতি প্রশিক্ষণ শিবিরে। ব্রতচারীর সাধনা শুরু হয় ‘জ-সো-বা’ অর্থাৎ ‘জয় সোনার বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে। ব্রতচারীর প্রধান দুই উপকরণ – পঞ্চব্রত ও ছন্দাত্মক সাধনা। পাঁচটি ব্রত হল- জ্ঞানব্রত,শ্রমব্রত,সত্যব্রত,ঐক্যব্রত ও আনন্দ ব্রত। গুরুজি শ্রমব্রতকে দাঁড় করালেন,’বাবু’ সংস্কৃতির পাল্টা হিসাবে। আহ্বান করলেন-”লাগো কাজে কোমর বেঁধে,খুলে দেখ জ্ঞানের চোখ-কোদাল হাতে খাটে যারা, তারাই আসল ভদ্রলোক।”
তিনি সম্ভাষণ,অভিবাদন ইত্যাদিতে প্রবর্তন করলেন চমৎকার বাঙালিয়ানা। তিনি জানালেন, “বাংলার ব্রতচারী সমিতি চায়, বাঙ্গালীকে নিবিড়ভাবে আত্ম-প্রবুদ্ধ,আত্ম-গৌরব সচেতন ও আত্মনির্ভর করে” গড়ে তুলতে। ব্রতচারীর আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত করলেন ষোলোটি পণ।এগুলির মধ্যে আছে-
” জ্ঞানের সীমা প্রসারণ
শ্রমের মর্যাদা বর্ধন ..
নারীরা মুক্তি সংসাধন ” ইত্যাদি।
এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেছেন সতেরোটি মানা। এগুলির মধ্যে আছে-“..খিঁচুড়ি ভাষায় বলিব না ..দৈবে ভরসা রাখিব না” ইত্যাদি।লিখলেন তরুণদের বীরত্বব্যঞ্জক গান-“বাংলা মা’র দুর্নিবার আমরা তরুণ দল-শ্রান্তিহীন,ক্লান্তিহীন,সংকটে অটল।..”গুরুসদয়ের সুপরিকল্পনায় ও সুপরিচালনায় সারা বঙ্গদেশের নানা প্রান্তে,বহির্বঙ্গে, এমনকি বিদেশেও ব্রতচারী সমিতির শাখা গড়ে উঠল। সমষ্টিগতভাবে শারীরিক ব্যায়াম, নৃত্য-গীত প্রতিটি ব্রতচারী প্রশিক্ষণ শিবিরকে আকর্ষণীয় করে তুলল।এরই সঙ্গে চলতে লাগল বাংলার সম্পদ সম্পর্কে দেশ বিদেশের নানা গবেষণামূলক রচনা, পত্রিকা প্রকাশ।প্রায় ৩,৫০০ প্রর্দশনযোগ্য বস্তু নিয়ে ১৯৩২ সালে কলকাতার ‘সোসাইটি অভ আর্ট’ ভবনে তিনি বাংলার লোকশিল্পের প্রথম প্রকাশ্য প্রর্দশনীর আয়োজন করলেন।বিস্মিত হলেন দর্শকরা। ধন্য ধন্য করলেন অবনীন্দ্রনাথ, সুনীতি চট্টোপাধ্যায়, মনোজ বসু, দীনেশচন্দ্র সেন প্রমুখ গুণীজনেরা। পরবর্তীকালে এগুলি নিয়ে ঠাকুরপুকুরে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত ‘ব্রতচারী গ্রাম’-এ গড়ে ওঠে ভারতের পূ্র্বাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ লোকশিল্প প্রর্দশন কেন্দ্র, এখন যার নাম ‘গুরুসদয় সংগ্রহশালা’।শান্তিনিকেতন থেকে (১৩৪০ সালের ২৫ আষাঢ়) রবীন্দ্রনাথ গুরুসদয়কে লিখলেন, “.. ব্রতচারী অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক,এই কামনা করি।এই ব্রতচর্যা পালন করলে প্রাণের আনন্দ, কর্মের শক্তি, চরিত্রের দৃঢ়তা ও লোকহিত সাধনের উৎসাহ দেশে বল লাভ করবে,তাতে সন্দেহ নেই।” ব্রতচারীর কর্মপ্রয়াসকে অকুণ্ঠভাবে সমর্থন করলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র, জগদীশচন্দ্র, ডা.নীলরতন সরকার, গান্ধীজি,দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, (বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী ) এ কে ফজলুল হক প্রমুখ।গুরুসদয় তাঁর নিপুণভাবে প্রশিক্ষিত ব্রতচারী দল নিয়ে ভারতের নানা প্রদেশে এবং বিদেশে কয়েকটি অভি-প্রদর্শনী করে বিপুল সাড়া পেলেন।১৯৩৩ সালে বঙ্গদেশের তৎকালীন শারীর শিক্ষা অধিকর্তা মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রমে কিছু ব্রতচারী নৃত্যকে অন্তর্ভুক্ত করেন।ফলে বঙ্গদেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে ব্রতচারী চর্চা ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কিছু শিশু কিশোরদের সংঘ, সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান এবং ক্লাবও ব্রতচারী আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে। স্বাধীনতা উত্তরকালে আমাদের রাজ্যের বিদ্যালয়গুলির প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ব্রতচরী চর্চা বেশ কিছুকাল যথেষ্ঠ গুরুত্ব পায়। কিন্তু পরে শিক্ষা দপ্তর একে অনেকাংশে লঘু করে দেয়।’বাংলার ব্রতচারী সমিতি’ ছাড়াও গুরুজি ১৯২৫ সালে তাঁর প্রয়াত সহধর্মিণীর নামে নারীশক্তির জাগরণের জন্য গড়ে তোলেন ‘সরোজনলিনী নারী মঙ্গল সমিতি’।শহর ও গ্রামের প্রাপ্ত বয়স্ক নিরক্ষরদের মধ্যে জনশিক্ষা বিস্তারের জন্য আর্থিক সয়ায়তা করেন ‘বঙ্গীয় হিতসাধন মণ্ডলী” (BSSL), বিশ্বভারতীর পল্লী সংস্কার বিভাগ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে।বাংলায় জনশিক্ষার বহুমুখী কর্মকাণ্ড গড়ে তোলার জন্য তিনি নিজ ব্যয়ে ঠাকুরপুকুরে কেনেন ১০১ বিঘার এক বিশাল ক্ষেত্র।এই কর্মকাণ্ডে পূর্ণ সময় নিয়োগ করার জন্য তিনি চাকুরি ত্যাগ করেন ১৯৪০ সালের ১১ ডিসেম্বর। কিন্তু কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে বয়সে, ১৯৪১ সালের ২৫ জুন তিনি প্রয়াত হন।বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতিসত্তার জন্য আজও যারা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই করে যাচ্ছেন, তাদের কাছে গুরুসদয় দত্ত একজন মহান পথ- প্রদর্শক হিসাবে সর্বদাই স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।।