July 1, 2022

Rabindranath’s Dilemma and Conflict: Navigating the Inner Turmoil of a Literary Giant

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Dr. Mali Mitra. Asst. Prof. In Music.  Memari College. Memari. Burdwan.

Abstract:

Ravi Tagore’s songs, stories, poems, and novels, are involved in the life of every Bengali. This world poet inspires us in many ways. We all know that he was first a poet, then a composer, we see in each of his works, that he introduces us to something new, and thus he uses a word in different ways in the composition. One such word is “heart”. For example, “Tumi Rabe Nirave Hridide Maam” and “Hridyo Amar Oi Bhimi Tor Kalbaisakhi Bhyra” are compositions of completely different tastes. The two hearts of the two songs create different feelings. A small attempt has been made in this discussion to find out how this heart was involved in his feelings.

 Word Index –  Hriday, Rabindranath, Poets, Musicians, etc.

হৃদয়ের টানাপোড়ানে রবীন্দ্রনাথ

ডঃ মলি মিত্র, সংগীত বিভাগ, মেমারী কলেজ,  মেমারী, পূর্ব বর্ধমান

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায় প্রত্যেক বাঙালির জীবনেই হয়তো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা একজন কবি। এই অগ্নিময় আধুনিক কবি আমাদের নানান রকম ভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আমরা হয়তো সকলেই জানি যে রবীন্দ্রনাথ প্রথমে একজন কবি, তারপর তিনি সংগীত স্রষ্টা, বা অন্যভাবে বলতে গেলে বলতে পারি তিনি একাধারে গীতিকার এবং সুরকার। তাঁর সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রতি পদক্ষেপে দেখা গেছে তিনি বাঁকের পর বাঁক নতুন এর সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন আমাদের, কোথাও থেমে যাননি তিনি । ইচ্ছা শক্তি, বোধ শক্তি, এবং প্রাণশক্তির জোরে সক্রিয় কাব্য রীতি উলঙ্ঘন করে নতুন নতুন কাব্য ছন্দ প্রয়োগ করেছেন। তাঁর গানের যে নিজস্ব জগত ছিল তা সাধারণভাবে একান্তই একার এবং নিজস্ব।

রবি ঠাকুর যে গানের কথাগুলি সৃষ্টি করেন তা যেমন গান আকারে গাওয়া হয় তেমনি আবার তা অন্যদিকে কবিতা আকারে ও পাঠ করা সম্ভব। অনেকেই আছেন যারা গান পরিবেশন না করে ওই গুলিকে কবিতা আকারে পাঠ করেন । রবি ঠাকুরের ব্যপ্তি অপরিসীম। তিনি তাঁর বিচিত্র ভাব ও ভাবনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তাঁর গানে কথা ও সুরের মাধ্যমে। তাঁর এই বিপুল সৃষ্টি থেকে একটি শব্দকে বেছে নিয়ে আমি আমার কথা বলব। তবে তার আগে জানাই যে এই স্বল্প লেখনির মধ্যে সবটা আলোচনা করা সম্ভব নয় বলে একটি গন্ডুষ জলের মতোই সীমায় মধ্যে থেকে আলোচনা করব। আমার আলোচনার বিষয়বস্তু হল – “হৃদয়ের টানা পোড়ানে রবীন্দ্রনাথ”- অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের মননে “হৃদয়” শব্দটি ঠিক কতটা সক্রিয় ছিল তা কয়েকটি গানের মধ্যে দিয়ে দেখাবার চেষ্টা করব।

তাঁর গানের মধ্যে হৃদয় শব্দটি রবি ঠাকুরের হৃদয়ে কিভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছিল সেটাই লক্ষ্য করার বিষয়। হৃদয় একটি মানুষকে ঠিক কোন কোন দিকে উপনীত করতে পারে তা আমরা হয়তো হৃদয় দিয়েই বুঝতে পারি আর এই হৃদয় দিয়েই একটি মানুষ সুখ-দুঃখ, আনন্দ বিরহ , হাসি কান্না সবকিছুই উপলব্ধি করতে পারেন।  আমরা যদি আমাদের হৃদয় দিয়ে এইসব অনুভব করতে পারি, তাহলে যিনি বিশ্বকবি তিনি কিভাবে তাঁর এই অনুভূতির থেকে দূরে থাকেন? তিনিও এই হৃদয়ের বেড়াজালে বদ্ধ হয়ে আছেন । তাই তিনি ৩৯ বছর বয়সে , একটি বর্ষার দিনে হঠাৎ করেই বলে উঠতে পেরেছিলেন-“হৃদয় আমার  নাচে রে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে / শত বরণের ভাবউচ্ছ্বাস কলাপের মতো করেছে বিকাশ ,/ আকুল পরান আকাশে চাহিয়া উল্লাসে কারে যাচে রে।“ – বর্ষা রবি ঠাকুরের একটি প্রিয় ঋতু। এই ঋতুতে তিনি নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি বলেই, তিনি শিলাইদহে বসে এটি লেখেন ১৩০৭ শ্রাবণে “ক্ষনিকা” কাব্যগ্রন্থে “নব বর্ষা” শিরোনামে এটিকে প্রকাশিত করেন। এই হৃদয়ের মধ্যে আনন্দের প্রকাশ।

৩৪ বছর বয়সে তিনি প্রেমের গানেও বলেছিলেন –“ তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম/  নিবিড়  নিভৃত পূর্ণিমা নিশীথিনী-সম।/  মম জীবন যৌবন  মম অখিল ভুবনে / তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম। এই গানটি কবি ১৩০২ কার্তিক মাসে জোড়াসাঁকোতে বসে রচনা করেন । এখানে একটি কথা না বললেই নয় আগের গানটির সাথে এই গানটির সুরের চলন একেবারেই অন্যরকম এবং হৃদয়ে প্রকাশভঙ্গিও আলাদা। বর্ষার আনন্দে কবিকে হৃদয়ে যেভাবে ময়ূরীর মত নাচতে বাধ্য করেছিল ঠিক তার অন্যদিকে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রেমের আবেদনের একেবারেই আলাদা রকমের ছিল যা আমরা সুর এবং কথার দিক থেকে লক্ষ্য করতে পারি। দ্বিতীয় গানে হৃদয় শব্দটি কবি প্রেমের আকুতির রূপ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

গ্রীষ্মের দাবদাহের প্রকাশ ঘটে হৃদয়ের মধ্যে দিয়েই তাই তিনি ৬১ বছর বয়সে তাঁর লেখনীর মধ্যে দিয়ে সুর ও কথার সমন্বয় সৃষ্টি হয় যে গানটি তা হল- “হৃদয় আমার ওই বুঝি তোর বৈশাখী ঝড় আসে / বেড়াভাঙ্গার মাতন নামে উদ্দাম উল্লাসে। /  তোমার মোহন এলো ভীষণ বেশে , আকাশ ঢাকা জটিল কেশে – / বুঝি এলো তোমার সাধনধন চরম সর্বনাশে এই গানটি কবি শ্রাবণ ১৩২৯ রচনা করেন। প্রথমে গানটি ১৩২৯ সালের ২২শে শ্রাবণ শান্তিনিকেতনের বর্ষামঙ্গল উৎসবে গাওয়া হয় । এরপরে নটরাজ ঋতুরঙ্গশালা ১৩৩৩ সালে রচিত এবং ওই সালে শান্তিনিকেতন এটি প্রথম অভিনীত   হয়। এইখানে কবির হৃদয় বৈশাখী ঝড়। এর সাথে আরও একটি গানের কথা বলবো যে গানটি হয়তো সবাইকারে জানা এবং শোনা গান। গানটি হল – “আমার হৃদয় তোমার আপন হাতের দোলে দোলাও, /  কে আমারে কি যে বলে ভোলাও ভোলাও ।। / ওরা কেবল কথার পাকে নিত্য আমায় বেঁধে রাখে, / বাঁশির ডাকে সকল বাঁধন খোলাও। এটি কবি ষাট বছর বয়সের রচনা করেন এবং এই গানটির মধ্যে ঈশ্বরের কাছে একটি নিবেদনের ছবি ফুটে ওঠে । এই গানটি পূজা পর্যায়ের অন্তর্গত ১৩২৮ শরৎ শান্তিনিকেতনে বসে তিনি রচনা করেন । এই গানটি বন্ধু উপ পর্যায়ের গান এর সুরের দিক থেকে এবং কথার দিক থেকে পৌঁছে দেয় আমাদের এক অন্য জগতে। হৃদয়কে আমি চারটি গানের উদাহরণ দিলাম এর মধ্যে যে চারটির হৃদয়কে নিয়ে আমি আলোচনা করলাম তা সবার কাছে নিশ্চয়ই আলাদা আলাদা অনুভূতির জায়গায় পৌঁছাতে পারলাম সুরের দিকে এবং কথার দিকে সুরের দিকটি আমি আলাদা করে না বোঝাতে পারলেও কথার দিক থেকে নিশ্চয়ই আমরা আমাদের অনুভূতিকে চারটি আলাদা স্থলে পৌঁছে দিতে পারলাম। সবশেষে আরও একটি গানের উদাহরণ দিয়ে আমি আমার লেখার ইতি টানবো । আমি আমার মতো করে রবীন্দ্রনাথের হৃদয়কে দেখাবার চেষ্টা করলাম,  জানিনা কতটা প্রয়োগ করতে পারলাম তবে চেষ্টা করলাম অবশ্যই ভাবে । এবারে শেষ গানে বলি এই গানটি পূজা পর্যায়ের এবং দুঃখ উপ- পর্যায়ের একটি গান এই গানটি সুরের দিক থেকে এবং কথার দিক থেকে অন্য রকমের একটি উপলব্ধির জায়গায় পৌঁছে দেয় আমাদেরকে গানটি হল – “হৃদয় আমার প্রকাশ হল অনন্ত আকাশে। /  বেদন বাঁশি উঠল বেজে বাতাসে বাতাসে ।। / এই যে আলোর আকুলতা এ তো জানি আমার কথা – / ফিরে এসে আমার প্রাণে আমারে উদাসে এই গান কবি ৫৩ বছর বয়সে রচনা করেন। এ ছাড়াও কবি রচিত বহু গান কবিতা রয়েছে যার মধ্যে হৃদয়কে নিয়ে তিনি বহু রকম ভাবে ব্যবহার করেছেন এবং  তার মধ্যে দিয়ে নানান প্রকার অনুভূতি ও তৈরি হয়েছে। কবি  মনে আমাদের মনেও বটে। রবীন্দ্রনাথের সংগীতের মধ্যে বিচিত্র রকমের সমাবেশ আছে তার ভেতর থেকে আমি আমার অনুভূতির দৃষ্টি থেকে রবি ঠাকুরের হৃদয়ের টানাপোড়ন বোঝার চেষ্টা করেছি মাত্র। তাঁর সঙ্গীতে এক অনন্য সাধারণ আবেদন আছে যা সহজ ও সরল অথচ মনের অন্তস্থলস্পর্শে, গভীর ও সুন্দর।

আমি আমার আলোচনার মধ্যে দিয়ে সুরের প্রয়োগ দেখাতে পারিনি বটে কিন্তু কাব্য সৌন্দর্যের দিকে দৃষ্টিপাত করতে পেরেছি বলে মনে হয় একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না যে সংগীতে সুরকে রবীন্দ্রনাথ চিরদিনই শ্রেষ্ঠ আসন দিয়েছেন এবং কথাকে কাব্য সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ করে সুরের চরণে পড়িয়েছেন অলংকার রূপ

সংগীতের মুক্তি” – প্রবন্ধে তিনি বলেছেন বিশ্বের একটা হৃদয়ের আভা নিয়ত প্রকাশ পাইতেছে।[i]

আমি এই আলোচনা করতে গিয়ে উপলব্ধি করলাম –“হৃদয়ের আনন্দে আর পদ্মে অভেদ হইল ভাষার একেবারে উলট-পালট হইয়া গেল যার রূপ নাই যে রূপ ধরিল যার রূপ আছে সে অরূপ হইল সৃষ্টি যেখানে অনির্বাচনীয়তার আপনাকে আপনি ছাড়াইয়া যাইতেছে।“[ii]

      এই লেখা থেকে আমি এই উপলব্ধিতে পৌঁছাতে পারি তার হৃদয়ের অনুভূতি তার সমস্ত রচনার মূলে আছে যার ওপর ভরসা করে তিনি কবি তিনি সংগীত স্রষ্টা।

তথ্যসূত্র


[i] সংগীত চিন্তা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পৃষ্ঠা ৪৭ । এইখানে কবি হৃদয় দিয়েই অনুভব করেছিলেন বিশ্বের আভা।

[ii] সংগীত চিন্তা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পৃষ্ঠা ৪৮

গ্রন্থপঞ্জী

১) ঘোষ, শান্তিদেব – রবীন্দ্র সংগীত

২)  ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ – সংগীত চিন্তা

৩) ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ – গীতবিতান

৪) মুখোপাধ্যায়, প্রভাত কুমার – গীতবিতান কালাণুক্রমিক সূচী

৫) স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ – সংগীতে রবীন্দ্র প্রতিভার দান