Dr. Hare Krishna Halder.
Abstract:
The Mridanga, a traditional Indian percussion instrument, holds a unique position at the intersection of media representation and everyday cultural experiences. This paper delves into the multifaceted relationship between the Mridanga, the media that portrays it, and the resonance it finds within the hearts of common people. Examining how the Mridanga has been portrayed in various forms of media, from classical art to contemporary film and digital platforms, we aim to unravel the instrument’s evolving significance in the cultural tapestry. Furthermore, we explore how the Mridanga transcends its portrayal in media, becoming a symbol of cultural identity and connectivity for people from diverse backgrounds. This exploration encompasses the instrument’s historical roots, its portrayal in the media landscape, and its enduring presence in the daily lives of individuals, highlighting the dynamic interplay between tradition, media representation, and cultural continuity.
মৃদঙ্গ : গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষ, ড. হরেকৃষ্ণ হালদার।
মৃদঙ্গ বর্তমানে দেশে ও বিদেশে অতি সুপরিচিতি লাভ করেছে। এই বাদ্যটি খোল বা শ্রীখোল নামেও পরিচিত। সুপ্রাচীন কাল থেকে এই বাদ্যযন্ত্রটি মৃদঙ্গনামে বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লিখিত রয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে এই বাদ্যযন্ত্রটি প্রচলিত থাকলেও খুব বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌছুতে পারেনি। শ্রীচৈতন্যের যুগে মৃদঙ্গ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। শ্রীচৈতন্যের সঙ্গে নাম সংকীর্তন আর মৃদঙ্গও একই সঙ্গে ফিরেছে শত সহস্র মানুষের মাঝে। ইদানিং গত ২২-২৫ বছর ধরে ক্রমেই এই বাদ্যযন্ত্রটি নতুন প্রজন্মের কাছে আরো অনেক বেশি করে পৌঁছে গেছে ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
এই জনপ্রিয়তা সম্ভব হয়েছে আধুনিক বহুল প্রচলিত গণ মাধ্যধ্যমগুলির বিভিন্ন উদ্যোগ ও কিছু মৃদঙ্গবাদকের একনিষ্ঠ সাধনা ও উদ্যোগের ফলে। বর্তমানে বেশ কিছু জনপ্রিয় বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম মৃদঙ্গ বাদ্য যন্ত্রটির প্রচার পৌঁছে দিয়েছে, প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরে, দেশ থেকে দেশান্তরে অগণিত মানুষের কাছে আর সেই প্রচেষ্টার সার্থক রূপায়ন ঘটিয়েছে কয়েকজন বিশিষ্ট শ্রীখোল শিল্পী। শুধু গণমাধ্যম এককভাবে এই কাজ করতে পারেনা বা কোন কিছুর জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারে না। মনে রাখতে হবে বিষয়টি অবশ্যই মানুষের ভাল লাগতে হবে, তবেই মানুষ সেটিকে গ্রহন করবে। এই ভাল লাগা নির্ভর করে বিষয়ের বিশেষ বৈশিষ্টের উপর, আর শিল্পীর একাগ্র সাধনা ও যথাযথ উপস্থাপনার উপর। আর মৃদঙ্গ বিষয়টি জনপ্রিয়তার জন্য দরকার হয় আধ্যাত্মিক উপলব্ধি, আভিজাত্য বোধ, নান্দনিকতা, শ্রুতিমাধুর্য ইত্যাদির। যেগুলি মৃদঙ্গ (শ্রীখোল) বাদ্যে শিক্ষালাভ ও সৃজন সম্ভব। তাই মৃদঙ্গ বাদ্যযন্ত্রটি এত জনপ্রিয়।
আমি এখানে মৃদঙ্গের জনপ্রিয়তার অনেকগুলি দিক উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। মৃদঙ্গের আধ্যাত্মিকতা – “তে রে খে টা”। তে অর্থাৎ তিনি, রে অর্থাৎ রয়, যে অর্থাৎ খোলে, টা অর্থাৎ এটাই বলে, অর্থাৎ “তেরেখেটা” শব্দের অর্থ “তিনি রয় খোলে বা মৃদঙ্গে”। এই হল মৃদঙ্গ বাদ্যের আধ্যাত্মিক বীজ মন্ত্র। আভিজাত্য – আভিজাত্য হল প্রচীন মূল্যবান সম্পদ। কবি জয়দেব গোস্বামী রচিত অমর কৃতি “অষ্টাতাল বসী” দ্বাদশ শতকে এই প্রবন্ধ আজও কীর্তনের আসরে কীর্তনীয়াদের মুখে মুখে ফেরে। এই অষ্টাতাল হল- আড়, দোজ, যতি শশি, গঞ্জন, পঞ্চম, রূপক,সম। গানটি হল- বৃদসী যদি কিঞ্চিদপি দন্তরুচি কৌমুদী, হরতিদর তিমিরমতি ঘোরং।
সুন্দর তত্ত্ব বা নান্দনকিতা-
বাম বাম ঝানো যিটি তিন তিন তি
বাম বাম বাম বাম বাম ঝানো যিটি তিন তিন তিন তি দেখে ঝাঁ
তিনি তিনি তিনি বিটি তিনি তিনি বিটি তি তিকতা ঝাঁ ঝাঁ
তিন তিনা তিক তেরে বেঁটা তা তিন তিনা তিক তেরে যেটা তিক
ঝী ঝী গুর গুর গুর জাবেনা বেনা ঘেনা বেনা ঝেনা তা তা
ধেনা তা তা গদিঘনা ঝাঁ গদি ঘেনা ঝী গদি বেনা
২৮ মাত্রার এই বোল রচনা কাল থেকে আজোবধি সমান ভাবে মানুষের প্রিয়, তার সুন্দর তত্ত্বের জন্য৷ এই বোলটি রচনা প্রথমে রয়েছে বৃষ্টির ঝম ঝম শব্দ তারপরে দ্রুত বেগে বোঝাতে বোলের গতি বারানো, তারপরে পাহাড়ে পাথরের গীরিখাদে পতীত জনের তরঙ্গ সমতল ভূমির আঁকা বাঁকা পথ বেয়ে সাগরে মেশা।
মৃদঙ্গ বা শ্রীখোলের শ্রুতিমাধুর্য – বৈষ্ণব পদাবলীতে এর উল্লেখ পাই –
‘ভালি গোরা চাঁদের আরতি বনি।I
বাজে সংকীর্তনে সুমধুর ধ্বনি।।
শঙ্খ বাজে ঘন্টা বাজে বাজে করতাল।
মধুর মৃদঙ্গ বাজে শুনিতে রসাল’।[1]
বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নতির কারনে মিডিয়া বা গণমাধ্যমের ব্যপক প্রসার ঘটেছে। আর এই গণমাধ্যমের উন্নতির ফলে মৃদঙ্গ বা শ্রীখোল বাদ্যযন্ত্রটির প্রচার ও প্রসার লাভ করেছে। এই গণমাধ্যমের দ্বারা মানুষ ঘরে বসে শুনতে পাচ্ছে, এবং দেখতে পাচ্ছে শ্রীখোলের বাদন শৈলী। এর ফলে মৃদঙ্গ বাদ্য যন্ত্রটি সাধারণ মানুষের অতি প্রিয় হয়ে উঠেছে। যে কারণে মৃদঙ্গ বাদ্য শিক্ষার প্রতি অনুরাগ বেড়েছে এবং মিডিয়ার মাধ্যমে ঘরে বসে তারা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। শিল্পী একটি গণ্ডিবদ্ধ সীমায় শিল্প পরিবেশন করেন কিন্তু মনে রাখতে হবে মিডিয়ার কারনে এই মঞ্চ আজ বিশ্বজোড়া। তাই শিল্পীর পরিবেশনা সর্বসাধারণের গ্রহনযোগ্যতার দিকে তাকিয়ে পরিবেশন করতে হবে। তবেই সেটা মানুষের মনোগ্রহী হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বর্তমানে মৃদঙ্গ পরিবেশিত হয় বলেই মৃদঙ্গ বাদ্য সাধারণ মানুষের অতি প্রিয়। তাই বলা যায় মৃদঙ্গ নিজস্বতায় সমৃদ্ধ। গণমাধ্যমের কারনে নীল বিশ্বময় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
শ্রীচৈতন্যযুগে দেখা যায় মহাপ্রভুর ভগবৎ সত্ত্বার মহিমা প্রকাশ। শ্রীচৈতন্য দেবের ঈশ্বরিক শক্তির মহিমা প্রকট হলে, কেবল তাঁর পার্ষদরাই নয়, অগণিত ভক্ত, এমন কি মুসলমান কবিরাও শ্রীচৈতন্য দেবের গুণকীর্তন গাইতে লাগলেন ও লিখতে লাগলেন। ফলে মানুষের মনে মনে, মুখে মুখে কীর্তনের প্রচার ও প্রসার করতে থাকে। সেই সঙ্গে সঙ্গে অগণিত কবির লেখনিত বৈষ্ণব সাহিত্যের ভান্ডার সমৃদ্ধ হতে থাকে।
শ্রীচৈতন্যদেবের নির্দেশ পরম বৈষ্ণব রূপ ও সনাতন, (যাদের পূর্বে নাম ছিল দাবির খাস ও শাখর মল্লিক) চলে যান বৃন্দাবনে, সেখানে রাধা কৃষ্ণ তত্ত্ব লিপিবদ্ধ করেন এবং গ্রন্থকারে প্রকাশ করে যেমন “উজ্জ্বল নীলমণি”, “ভক্তিরসামৃত সিন্ধু”, “রাধাকৃষ্ণ গণোদেশ দীপিকা” ইত্যাদি। এছাড়াও “গোপাল চম্পু”, “নাটক চন্দিকা” ভক্তিরত্নাকর প্রভৃতি গ্রন্থে রাধা কৃষ্ণ তত্ত্ব গোস্বামী পরম্পরা লিখিত হয়। এই তত্ত্বগুরু শিষ্য পরম্পরা প্রচার শুরু হয়। এই বৈষ্ণব সাহিত্যে সুর ও তালে যোজনা করে, কীর্তনাকারে প্রচার ও প্রসার লাভ করতে থাকে। পরবর্তী কালে অনেক পদ রচয়িতা গায়কে রূপান্তরিত হয়ে যায়। আবার বহু গায়ক পদ রচনা করে গাইতে থাকেন। এইভাবে বৈষ্ণব ধর্ম ও সাহিত্য প্রচার ও প্রসারের প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে কীর্তন৷ কীর্তন প্রধানত দুই প্রকার যথা শুরু কীর্তন ও নারদ কীর্তন।
শুক কীর্তন – মহামুনি শুকদেব ব্রহ্মসাপ অভিশাপগ্রস্ত রাজা পরিক্ষীতকে জীবনের শেষ সাতদিন যে কীর্তন শুনিয়ে ছিলেন তাকেই শুককীর্তন বলা হয়। নারদ কীর্তন – নারদ মুনি সর্বদা বীনা যন্ত্র সহযোগে প্রভুর নাম গুণকীর্তন করতেন তাকেই নারদ কীর্তন বলা হয়। বর্তমানে এই ধারাই কীর্তন রূপে প্রচলিত৷ কীর্তন গানের প্রধান সহযোগী বাদ্যযন্ত্র হল মৃদঙ্গ বা শ্রীখোল মানুষ যুগ যুগ ধরে এটা দেখে ও শুনে আসছে। তাই মানুষ তার সহজাত প্রবৃতির বসে মৃদঙ্গ বা শ্রীখোল বাদ্যযন্ত্রটি কোলে তুলে নিতে খুবই তৃপ্তি বোধ করে। তাই দেখা যায় মৃদঙ্গ বা শ্রীখোল বাদ্যযন্ত্রটি সাধারণ মানুষের অতি আপন বা প্রিয় এককথা বলার আর অপেক্ষা রাখেনা।
তাই অতি সাধারণ মানুষ নিজের বাড়িতে বা কোন দেবাঙ্গনে রাখা মৃদঙ্গ বা শ্রীখোল কোলে তুলে নিয়ে বাজাতে কোন কুণ্ঠাবোধ করে না, বরং প্রিয় বাদ্যযন্ত্রকে কোলে তুলে নিয়ে বাজানোর উৎসাহ যোগায় তার সহজাত প্রবৃতি। তাই শিক্ষার আগেই সুকৃতি হিসাবে সহজাত প্রবৃতি একজন অতি সাধারণ মানুষকেও মৃদঙ্গ বা শ্রীখোল বাজাতে উৎসাহিত করে।
তাই মৃদঙ্গ বা শ্রীখোল অতি সাধারণ মানুষের প্রিয় বাদ্যযন্ত্র। এই বাদ্যযন্ত্রটি অতি প্রচীন। এই বাদ্যটির প্রনাম মন্ত্ৰ পাই মৃদঙ্গ ব্রহ্ম রূপায়, লাবণ্যম্ রস মাধুরী৷ সহস্র গুণ সংযুক্তম্ মৃদঙ্গায়ৈ নমো নমো৷৷
কেবল মাত্র গরুর চামড়া ব্যবহার করা হয়৷ মৃদঙ্গ বা শ্রীখোলে বত্রিশটি ঘাটে ডোর বা ছোটে বেঁধে রাখা হয় দুই মুখ, এই বত্রিশটি ঘাট, ষোল নাম বত্রিশ অক্ষরের ন্যায় জপ্যধন। এই মৃদঙ্গের বা শ্রীখোলের একদিক সরু তিক্ষ্ণ সুর সর্গের সংকেত সূচনা করে, অন্যদিকে বড়ো মুখের গুরু গম্ভীর আওয়াজ ভূতলের শব্দ সংকেত দেয়৷
“মধ্যস্থলে ব্রহ্ম বসতি সর্বদা[2]”- “সঙ্গীত পরিজাত”
‘মধ্য দেশে মৃদঙ্গস্য ব্রহ্মা বসতি সর্বদা যথা তিষ্টিতি তল্লোকে দেবা অত্রাপি সংস্থিতাং’
মৃদঙ্গের মধ্যে ব্রহ্মার অবস্থিতি৷ ব্ৰহ্মলোকে যেমন সব দেবগণের অবস্থিতি অনুরুপ অবস্থিতি মৃদঙ্গে। তাই মৃদঙ্গ সর্ব দেবময় বা দেববাদ্য তাই দেখা যায় কীর্তনের আসরে মৃদঙ্গ বা শ্রীখোলকে দেবতা জ্ঞানে মালা ও চন্দন দিয়ে বরণ করে নেওয়ার রীতি আজও। তাই ভক্তির রাজ্যে ভক্তদের কছে মৃদঙ্গ বা মৃদঙ্গের জনপ্রিয়তা সর্বাধিক।
নাট্যশাস্ত্র, সঙ্গীত দামোদর প্রভৃতি গ্রন্থে বাদ্যযন্ত্রের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বিচারে বাদ্যযন্ত্রকে চার শ্রেনীতে বিভক্ত করা হয়েছে। ১. ততযন্ত্র, ২. সুষীর যন্ত্র, ৩. অবনদ্ধ বা আনদ্ধ যন্ত্র, ৪. ঘনযন্ত্র। বিভিন্ন গ্রন্থে আনদ্ধ বাদ্যযন্ত্র গুলির ব্যবহার ভেদেও শ্রেনী বিন্যাস করা হয়েছে। ১. সংগ্রামিক, ২. বহিদ্বরিক।
৩. আনুষ্ঠানিক, ৪. মাঙ্গলিক৷ মৃদঙ্গ মাঙ্গলিক শ্রেনীর বাদ্যযন্ত্র। কারন মৃদঙ্গ প্রধানত মাঙ্গলিক ক্রিয়াদিতেই ব্যবহৃত হয়৷ মাঙ্গলিক ক্রিয়ায় ব্যবহার হয় বলে, মৃদঙ্গের অবস্থান দেবগৃহে বা দেবাঙ্গনে। মৃদঙ্গ দেব সানিদ্ধ লাভ করে বলে, দেবতাদের সৃষ্টি বলে মৃদঙ্গকে দেবজ্ঞানে পুজা করে৷ সাধারণ মানুষের যে কোন মাঙ্গলিক ক্রিয়াতে মৃদঙ্গের দ্বারাই মঙ্গল সুচনা করা হয়৷ বৈষ্ণব পদাবলীতে রয়েছে-
“খোল করতাল লইয়া, অগুরু চন্দন দিয়া, পূর্ণঘট করহ স্থাপন মাল্য চন্দনগুয়া, ঘৃত মধু দধি দিয়া, খোল মঙ্গল সন্ধাকালে৷৷”
পরমেশ্বর দাস।“আজ খোল মঙ্গলি রাখিয়া আনন্দ করি I বংশী কহে দেহ জয়রব।” বংশী দাসের এই পদাবলীতেও খোল বা মৃদঙ্গ দ্বারা মঙ্গল স্থপনের উল্লেখ রয়েছে। মাঙ্গলিক বাদ্যযন্ত্র হিসাবে মৃদঙ্গ কোথাও খোল আবার কোথাও মৃদঙ্গ নামে পরিচিত৷ সাধারণ মানুষের কাছে কলি যুগাবতার শ্রীচৈতন্যদেব যখন মদঙ্গকে তাঁর হরিনাম সংকীর্তনের প্রধান সহযোগী বাদ্যযন্ত্র হিসাবে গ্রহন করলেন। তখন শাস্ত্রে লিখলেন কলিকালে নবদ্বীপে শ্রীচৈতন্যদেব এলে৷ খোল বলে খোল খোল দুয়ারে দুয়ারে।।”
শ্রীচৈতন্য উক্তি –
‘কলির জীব কল্যাণে এমনি তোর রোল। ধন্য বাদ্যযন্ত্র নাম রহিল মৃদঙ্গ ।।” তবে বর্তমানে গ্রাম থেকে শহর, দেশ থেকে বিদেশ সর্বত্রই মাঙ্গলিক বাদ্য মৃদঙ্গ বা শ্রীখোল দেববাদ্য বা দেব সরূপেই পুজিত হয়৷ তাই গ্রন্থে লিখিত হল। লাগে নাকো মন্ত্র তন্ত্র, লাগে নাকো স্তুতি৷ স্পর্ষ করিলে ইথে বলে গৌর হরি। এই সুত্র গুলি গুরু পরম্পরা চলে আসছে৷ ফলে মৃদঙ্গ বা শ্রীখোল বাদ্যধারা সাধারণ মানুষের অতি পরিচিত। রাসলীলায় বৈষ্ণব পদাবলীতে রয়েছে সুচিত্রা বাজায় সপ্তসরা রাই দেখে রঙ্গ।।” গীতরত্নাবলীতে লেখা হয়েছে-
“ললিতা বাজায় বীনা, বিশাখা মৃদঙ্গ।
শ্রীরাস শ্রীরাসমন্ডলেমন্ডলকানুমাঝেনাচত রে…
নাচতরে..মৃদঙ্গ বাজছেদ্রাং দ্রিমিক দ্রিমি,
মৃদঙ্গ বাজত, রাধা প্যারী নাচত নাচত,
ছন্দে ছন্দে বাজে বোল।[3]
জ্ঞানদাসের এই পদটিতে ললিতার প্রহেলিকা গানের সঙ্গে মৃদঙ্গ বাজানোর কথা উল্লেখ আছে—
ললিতা ললিত হাসি প্রহেলিকা গায়।
আনন্দে বিশাখা সঙ্গে মৃদঙ্গ বাজায়।।[4]
কীর্তন হল সর্বশ্রেষ্ঠ। আর এই কীর্তনের প্রধান সহযোগী বাদ্যযন্ত্রই হল মৃদঙ্গ বা শ্রীখোল একথা বর্তমান বিশ্ববাসীর কাছে অজানা নয়।
বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটেছে। যান্ত্রিক সুবিধা জন্য গণমাধ্যমের প্রসার ঘটেছে। তারই সুফলে শিক্ষা ক্ষেত্রেও মানুষ সুবিধা পেয়েছে। যদিও যান্ত্রিক ব্যাবস্থাপনায় কোন কোন সময়ে কিছু কিছু ত্রুটি ঘটে যায়। সে ক্ষেত্রে বলা যায় গনমাধ্যমে মানুষ অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই পেয়েছে বেশি। একজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা অর্জনের জন্য যেতে হয় অন্যস্থানে, সেখানে যেতে সময়ও লাগে অনেক, অথচ সবাই সময়ের সীমায় আবদ্ধ। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করেছে গণমাধ্যম। যে কারণে দূরে থেকেও ঘরে বসে শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছে মানুষ। গণমাধ্যমের উন্নতির ফলে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে বসে মানুষ দেখতে পাচ্ছেও শুনতে পাচ্ছে, শ্রীখোলের গুরুপরম্পরা বাদ্যধারা, যেখান থেকে তাদের মধ্যে মৃদঙ্গ শিক্ষার প্রতি অনুরাগ জন্মায় গণমাধ্যমের উন্নতির কারেনে মানুষ ঘরে বসেই সেই শিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে তাই মৃদঙ্গ বর্তমানে দেশে ও বিদেশে সাধারণ মানুষের অতি প্রিয় বাদ্য যন্ত্র হয়ে ওঠেছে।
তবে একথা বলা যায় বর্তমানে গণমাধ্যমের কারণে বিশ্বজুড়ে মৃদঙ্গের জোয়ার এসেছে। সেই জোয়ারে প্লাবিত বিশ্বের অগণিত সাধারণ মানুষ। তাই মৃদঙ্গ বাদ্যের পরিচিতি লাভ করেছে সারা বিশ্বজুড়ে৷ তবে একথা বলতেই হয় মৃদঙ্গ বাদ্যযন্ত্রকে বিশ্বময় করতে গণমাধ্যমের অবদান অপরিহার্য। একথা সর্বজন বিদিত – অতি প্রাচীন কাল থেকে মৃদঙ্গ বা শ্রীখোল গুরুপরম্পরা শিক্ষা ধারায় সুসমৃদ্ধ হয়ে, কীর্তনের সেবায় নিযুক্ত থেকেই সতন্ত্র বিবিধ প্রকার মনোগ্রহী উপস্থাপনায় দেশে বিদেশে যথেষ্ট সুখ্যাতি অর্জন করেছে। তবে সর্বপরি একথা বলতে পারি বর্তমান সুশিক্ষায় সমৃদ্ধ মৃদঙ্গ বা শ্রীখোল শিল্পীগণ তাঁদের সৃজনশীল প্রতিভার বলে চিন্তশীল উদ্ভাবনী শক্তির প্রভাবে মৃদঙ্গ বাদ্য পরিবেশনের চমকপ্রদ নানা দিকের বিকাশ ঘটিয়েছে। অতি মনোগ্রাহী মৃদঙ্গ বা শ্রীখোল বাদন গণমাধ্যম দ্বারা সম্প্রচারিত হয়েছে দেশে বিদেশে, বিশ্বময় অগণিত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে বর্তমানে মৃদঙ্গ বা শ্রীখোল।
তথ্যসূত্র
[1] http://www.milansagar.com/kobi_4/boishnabpodaboli/birballabh_das/kobi-birballabhdas_kobita1.html
[2] https://saptswargyan.in/aahobal-sangeet-parijat/
[3] https://archive.org/stream/manohara_bhajana_dipika/manohara_bhajana_dipika_djvu.txt
[4] https://udbodhan.org/udbodhan-ezine/ বৈষ্ণব-পদাবলিতে-দোলযাত্র/