মনিপুরী নৃত্য : মন্ডপের গন্ডি থেকে মঞ্চে উপস্থাপনা
রিঙ্কি মাহাতো
উন্নত জীবন ঙ্গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পঞ্চ পিতার অবদানের কথা বলা হয়। যা আমরা শাস্ত্র থেকে পাই। আমরা গুরুকে সেই পঞ্চ পিতার একজন বলে মেনে থাকি। মনিপুরী গুরুরা অভাব অনটনের মধ্যেও গুরু সম্প্রদায় ধারাকে রক্ষা করে চলেছে বংশ পরম্পরায়। বাস্তবিকপক্ষে নৃত্যগুরুদের জন্যই প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবাহী নৃত্যকলার সঙ্গে আমরা পরিচিত হতে পেরেছি। গুরু কলাবতী দেবী ও গুরু দর্শনা ঝাভেরির লেখা ‘মনিপুরী নর্তন’ বইটিতে গুরুর কথা বলতে গিয়ে বলেছেন-“একজন শিশুকে গড়ে তুলতে সাহায্য করে গুরুর নজর। গুরু ভুল সংশোধন করে দেন। তিনি দেখান ন্যায় ও সত্যের পথ । পিতা-মাতার ন্যায় গুরুকে সম্মান করা প্রতিটি শিষ্যের কর্তব্য। গুরুর প্রতি ভক্তি একজন শিষ্যকে সাফল্যের পথ দেখায়। নৃত্যে গুরুর স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ”।
বহু নৃত্য গুরু একান্ত ভাবে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন নৃত্যের জন্য। মনিপুর সমাজে গুরুরা অত্যন্ত সম্মানের স্থান গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, এদেশের শিল্পানুরাগী সমাজ নৃত্যের সাথে সাথে গুরুকে দেবতার আসন দিয়েছেন। মনিপুরের সমাজ ও সংগীতকে বেষ্টন করে আছে ধর্ম। নম্রতা কোমলতা সহজতর প্রাধান্য মণিপুরী নৃত্যের বৈশিষ্ট্য । মনিপুরি নৃত্যে ক্ষেত্রে মন্ডপএকটি বিশেষ স্থান ।দেবতার আরাধনা করার আগে যেভাবে মন্দির সজ্জিত করা হয়, ঠিক তেমনি মণিপুরী নৃত্যের আগে মন্ডপ সজ্জিত করা হয়। মণিপুরী নৃত্য একটি ভক্তিপ্রধান নৃত্য হাওয়ায় এই নৃত্যে মন্ডপ সজ্জা ও অন্যান্য শাস্ত্রীয় নৃত্যের তুলনায় ভিন্ন।
ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকে নয়টি পর্বতমালা বেষ্টিত পাহাড় ঘেরা ছোট্ট রাজ্য মনিপুর। সৌন্দর্য কিংবা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এই রাজ্যের কোন তুলনা নেই। মনিপুরী ভাষা “মৈতৈ” অর্থাৎ মনিপুরী। সেই কারণে মনিপুরীরা নিজেদের “মৈতৈ” বলে থাকে। এই রাজ্যের কলা কেন্দ্রিক আবহাওয়ায় মনিপুর বাসীরা বড় হয়ে ওঠে। অনেক কার্যকলাপ নৃত্যের মাধ্যমে করে থাকে। জন্ম কিংবা মৃত্যু সমস্ত কিছুই নৃত্যের সাথে জড়িত।মনিপুর বাসিরা মনে করেন ভগবানকে তুষ্ট করতে পারলেই তাদের সমস্ত কার্য সম্পূর্ণ হবে।সুতরাং তারা সমস্ত কার্য নৃত্যের মাধ্যমে ভগবানের তুষ্টির উদ্দেশ্যেই করে থাকে।এ প্রথা আজ নয় বহু প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। এদেশের মানুষের মধ্যে ভক্তি ও কলা প্রেম দেখা যায়।মণিপুরী নৃত্যের ইতিহাসে দিকে তাকালে আমরা নানা পৌরাণিক কাহিনী ও উপকথা পেয়ে থাকি।সেই সকল পৌরাণিক কাহিনী ও উপকথার ওপর মণিপুরী বাসীদের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস অটুট।একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে মনিপুরী নৃত্য আজ অনেক বেশি উন্নত ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যান্য শাস্ত্রীয় নৃত্যের মত মনিপুরী নিত্য সবার কাছে সমাদৃত।তবেই মনিপুরী নিত্য কি বা এর উৎপত্তি কিভাবে সে বিষয়ে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। সাধারণত দেহের সাবলীল ছন্দের সাথে স্মরণীয় ভঙ্গি কেই মনিপুরী নিত্য বলা হয় কিংবা মনিপুরের নিত্য করা হয় তাকে আমরা মনিপুরী নৃত্য বলতে পারি।মণিপুরী নৃত্যের আমরা দুটি যুগ দেখতে পাই এক প্রাকবৈষ্ণব যুগ ও বৈষ্ণব যুগ।
প্রাক বৈষ্ণব যুগের আমরা যে নৃত্য গুলি দেখতে পাই তা হলো –১) হাও জগোই
২) লাই হারাওবা
৩) থাংতা
এবং বৈষ্ণব যুগে আমরা যে নৃত্য গুলো দেখতে পাই তা হল-১) বঙ্গদেশ পালা
২) নট সংকীর্তন
৩) ধ্রুমেল
৪) রাস নৃত্য
বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবে মণিপুরী নৃত্যের যে শুধু প্রবর্তন হল সেটি শুধু বলা যায় না বরং সমগ্র মনিপুরী নৃত্য ধারা এমনকি মণিপুরী সমাজ জীবনেও নৃত্যের ভূমিকায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছিল।পরিবর্তন এসেছিল নৃত্যের ব্যাকরণ অনুষঙ্গ বাদ্যযন্ত্র এমনকি সঙ্গীতেও।একথা বলা ভুল হবে না যে বৈষ্ণব ধর্মের প্রবেশের ফলে যে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এলো তার ফলেই মণিপুরী লোকনৃত্য থেকে মণিপুরী নৃত্যের উত্তরণ শাস্ত্রীয় নৃত্যে ঘটলো।
মণিপুরে প্রাগৈতিহাসিক কালে শৈব ও তান্ত্রিক এই দুই ধর্মের প্রচলন ছিল।এখনো কোন কোন পাহাড়ের উপর আমরা শিবের মন্দির দেখতে পাই যা মনিপুরিরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পূজা করেন। মনিপুরী হিন্দুরা এখনো তাদের লাইহারাওবা অনুষ্ঠানে প্রাচীন দেবতাদেরিই পূজা করে থাকেন।
মনিপুরী নৃত্য এখন এক গৌরবময় সংস্কৃতি স্থান পেয়েছে। সংস্কৃতির মূল স্রোত মণিপুরী নৃত্যের একচেটিয়া প্রকৃতি মণিপুরী নৃত্যের সহজ-সরল বৈশিষ্ট্য।মনিপুর রাজ্য সৌন্দর্যের লীলাভূমি নামে পরিচিত। অপরূপ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশের জনসাধারণ সুখী ।এদেশের প্রত্যেকটি মানুষ কলা প্রেমী এবং ধার্মিক ।পৌরাণিক কাহিনী এবং নানা উপকথার ওপর মণিপুরীদের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস থেকে মণিপুরী নৃত্যের ও সংগীতের নানা উপকরণ সংগৃহীত হয়েছে ।মণিপুরী নৃত্যের খ্যাতি আছে সুদূরপ্রসারিতো যা ভারত ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিস্তার লাভ করেছে।
মণিপুরী নৃত্য ভক্তি প্রধান হওয়ায় মণিপুরী নৃত্য প্রত্যেকটি অনুষ্ঠিত হয় ভগবানের তুষ্টির জন্য। মনিপুর বাসী এর মাধ্যমে ভক্তি নিবেদন করে ভগবানকে এবং সেটি অনুষ্ঠিত হয় মন্ডপে ।মনিপুরে মণ্ডপ সংস্কৃতি জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে মন বলতে আমরা কি বুঝি?
বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের অধীনে বড় একটা ঘর থাকে সেই ঘরের উপরের দিকটা একটা ছাউনি দিয়ে ঢাকা থাকে সেটাকেই সাধারণত মণিপুরীরা মন্ডব বলে থাকেন। মণিপুরী সমাজের যাবতীয় ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো এই মন্ডপে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে যেমন অন্নপ্রাশন ,বিয়ে ,শ্রাদ্ধ ,ঝুলন রথযাত্রা ,সংকীর্তন ইত্যাদি । মণিপুরেসাধারণত তিন ধরনের মন্ডপের কথা জানা যায়। যথা-
১-লাইহারাওবা মন্ডপ (লাইহার ও বাগি সং)
২-মন্দিরের সঙ্গে লাগোয়া মন্ডপ (লাইসংগ কন্নবা মন্ডপ)
৩-দেব কর্মের জন্য তৈরি অস্থায়ী মন্ডপ
মণিপুরী সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মণিপুরী নৃত্য সমকালীন শিক্ষা পদ্ধতি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব থেকে শুরু হয়েছে এই পদ্ধতিটির মূলে ছিলেন গুরু মাইস্নাম আমুবি সিং।সমকালীন শিক্ষা পদ্ধতিটি হল মণিপুরী শাস্ত্রীয় ও ধর্মীয় কঠিন সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সুসাম্য বজায় রেখে নতুনভাবে নির্মিত করা। ১৯২১খ্রিস্টাব্দে মহারাজ চূড়া চাঁদের রাজত্বকালে প্রিন্স অব ওয়েলস কলকাতায় আসেন রাজা গুরু আমাকে ডেকে বললেন রাস নৃত্য কে ছোট করে তৈরি করে একটি গ্রুপ নিয়ে কলকাতায় নৃত্য পরিবেশন করতে যাওয়ার জন্য। গুরুজি প্রথমে না বললেও পরে অনেক বিবেচনা করে রাজি হলেন কলকাতায় যাবার জন্য গুরুজী তার শিষ্যদের নিয়ে রাজনীতিকে ১৫ মিনিটের একটি নৃত্যে রূপ দিলেন এবং কলকাতায় গেলেন প্রিন্স অব ওয়েলস এর সামনে পরিবেশন করতে এটি ছিল প্রথম মন্ডপ গন্ডিথেকে বেরিয়ে মঞ্চে নৃত্য প্রদর্শন। এরপর একের পর এক তিনি নির্মাণ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দিকে তাকালে একটি প্রত্যেকটি মানুষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছে যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনিপুরী নৃত্য কে এক নতুন মাত্রায় রূপান্তরিত করেছেন এবং মনিপুরের গণ্ডি ছেড়ে বহির্জগতের সাথে পরিচয় ঘটিয়েছেন।
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কবিগুরু সিলেট জেলায় প্রথম মণিপুরী রাসলীলা উপভোগ করেন এবং মণিপুরী নৃত্যের প্রতি তার গভীর আগ্রহ জন্মায়।শান্তিনিকেতনে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মণিপুরী নৃত্য প্রশিক্ষণের জন্য তিনি ত্রিপুরা থেকে দুজন শিক্ষক গুরু নবকুমার সিংহও বুদ্ধিমন্ত সিংকে আমন্ত্রণ করেন। নৃত্য নাট্য রচনারপ্রারম্ভের সময়কালে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে পূজারিণী কবিতাটি নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ করে নটীর পূজা হিসাবে। গুরুদেবের ৬৫তম জন্মদিনে সন্ধ্যায় মনিপুরী নৃত্য আঙ্গিকে তা পরিবেশিত হয় শান্তিনিকেতনে, কবি স্বয়ং উপালির ভূমিকা অভিনয় করেন শ্রীমতি ভূমিকায় বালিকা গৌরীর সংযত ভক্তির শুভ্রসুচিতা অভিনয় অত্যন্ত মর্মস্পর্শী করে তুলেছিল। ভারতে ভারতীয় নৃত্যের পুনরুজ্জীবনের ইতিহাসে এই ঘটনা বিশেষভাবে স্মরণীয়। শান্তিনিকেতনে প্রবর্তিত নৃত্যধারার মনিপুরী নৃত্য আঙ্গিকে সুচারুরূপে আত্তীকরণের বহমান ধারায় কবির নৃত্য ভাবনা ক্রোম উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এসে পৌঁছেছিল এক অতীন্দ্রিয় শিল্পলোকে এটি অতি সত্যি যে কবিগুরুর প্রচেষ্টায় প্রথম মনিপুরী নৃত্য মনিপুরের বাইরে পা রাখার সুযোগ পেয়েছিল। এরপর থেকে মনিপুরী নৃত্য যেন কায়ায় ধরা পড়ল। কবিগুরু ছাড়াও মনিপুরী নৃত্য আর যেই গুরুদের সহযোগিতা ও প্রচেষ্টায় মন্ডপ গন্ডি পেরিয়ে মঞ্চে উপস্থাপিত হতে পেরেছিল তারা হলেন
১–গুরু মাইস্নাম আমুবি শর্মা
২–গুরু হাওড়ায় অতোম্বা সিং।
৩–-গুরু তখেলচংবম আমুদন শর্মা।
এই তিনজন গুরুর দান মনিপুরী নৃত্যো অনস্বীকার্য। এনাদের একসাথে ত্রিমূর্তি বলা হয়। জহরলাল নেহেরু মনিপুরি ডান্স একাডেমির সামনে এই তিনজন গুরু মূর্তি স্থাপিত আছে।
গুরু মাইস্নাম আমুবি সিং
মনিপুরী নৃত্যের উজ্জল রত্ন গুরু মাইস্নাম আমুবি সিংহের জন্ম হয় ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর মাসের 2১ তারিখ।পিতা “শামু সিং” মাতা “সানাচোবি দেবী”। তিনি ছিলেন পিতামাতার ষষ্ঠ সন্তান। তার একটি মাত্র দিদি ছিল।বাল্যকাল থেকেই নৃত্যের পতি তার আকর্ষণ ছিল।১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে মাইস্নাম গুরু আমুবি সিং ছয় বছর বয়সে রাধার ভূমিকায় নৃত্য করেছিলেন।মণিপুরে এটি বিশ্বাস করা হয় যে -রাধা ও কৃষ্ণের ভূমিকায় কেবল ছোট বাচ্চারা অংশগ্রহণ করতে পারে মনিপুরীরা বিশ্বাস করেন যেহেতু এই নৃত্য দেবতাকে আরাধনা কিংবা দেবতাকে তুষ্টির জন্য করা হয় তাই কোন পার্থিব ও আসক্তি এটিকে দূষিত করতে না পারে। তাই ছোট বাচ্চারাই রাধা ও কৃষ্ণের ভূমিকায় অংশগ্রহণ করতে পারে। গুরু দেবযানি চালিহার আর মাইস্নাম গুরু আমুবি সিং বইটি লেখার সময় এক সাক্ষাৎকারে গুরুজি বলেছিলেন-“সেইদিনের নৃত্যে রাধা চরিত্রের নৃত্যটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সেই নৃত্যে মা সানাচোনবি দেবী গোপির ভূমিকায় ও দিদি মাপোপ চিংবির ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেছিল। গুরু মুভি সিন বলতেন তাঁর প্রথম শিক্ষক মা ও দিদি ছিলেন।গুরু মাইস্নাম আমুবি সিং নৃত্য বাদ সানাজোবা মনোহর পাই এর কাছ থেকে নৃত্য চর্চা শুরু করেন। তিনি নটপালা সংকীর্তনে পারদর্শী ছিলেন।গুরু মুভি সিং রসশাস্ত্র শিখলেন, তিনি উচ্চ স্তরে সংকীর্তন করা শুরু করলেন ।
তিনি উচ্চ সামাজিক স্তরে স্বীকৃতি পেলেও সে সময় সংকীর্তন শিল্পীদের উপার্জন ছিল অনেক কম।একে একে বহুগুরুর কাছে তিনি নৃত্যশিক্ষা করেন।শীঘ্রই মণিপুরী নৃত্যের অন্যতম বিশারদ হিসেবে তার খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল।তিনি তার বাল্যকালের নৃত্যগুরুর সান্নিধ্য গ্রহণ করেন সেই সময় গুরু ঝুলন মাচা রাসেল সংমিশ্রণ এবং পাঠদান ও নৃত্যনির্মিতি করছিলেন। গুরু ঝুলন মাচার সান্নিধ্যে তিনি রাসনৃত্যে ও নৃত্য নির্মিতি তে পারদর্শী হন।গুরু ঝুলন মাচার তত্ত্বাবধানে তিনি বসন্ত রাস ,কুঞ্জ রাস ,দিবারাস ও নিত্য রাসের সংযোজন করেন।রাসলীলা ছাড়াও গোষ্ঠ লীলা ও উলুখলা রাসেও সংযোজনের প্রয়োজন ছিল সেটাতেও গুরু ঝুলন মাচাকে সহায়তা করেছিলেন মাইস্নাম গুরু আমুবি সিং। এইভাবে মাইস্নাম আমুবি সিং তার পছন্দসই কাজে লেগে পড়েন।নৃত্য ও সঙ্গীতা দৈনন্দিন জীবনের সাথে যুক্ত হতে শুরু করল। নৃত্য মনিপুরের এক ধরনের উপাসনা।গরু মাইস্নাম আমুবি সিং রাজা চুরাচাঁদের রাজত্বকালে মনিপুরের রাজবাড়ির গোবিন্দজী মন্দিরের নৃত্য কার্যের সঙ্গে যুক্ত হন।গুরুজি মণিপুরে “লাম্বি দেবীকে” বিবাহ করেন এবং “সিনাম লেইকাইয়ে” থাকতে শুরু করেন।গুরুজি নৃত্য শেখানো ও সংমিশ্রণের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন।
ইংল্যান্ডেররাজা এবং ব্রিটিশ ভারতের সম্রাট “প্রিন্স অব ওয়েলস” পূর্ব ভারতের ভ্রমণে আসেন।রাধাচূড়া চাঁদ কাদেরকে সম্মানের জন্য একটি নৃত্য পরিবেশনের আয়োজন করেন মনিপুরের বাইরে কলকাতায়।এটি ছিল প্রথম যেখানে মনিপুরের বাইরে প্রথম মনিপুরী নৃত্য প্রদর্শন হবে। রাধাচূড়া চাঁদে অনুষ্ঠানের ভার দেন গুরু আমুবি সিং কে।গুরুজি প্রথমে রাজি না হলেও পরে বিচার-বিবেচনা করে তিনি রাজী হন এবং রাজার সম্মান রক্ষার খাতিরে ৫ ঘন্টা ব্যাপি রাসলীলাকে ১৫ মিনিটে তৈরি করা হয়, লাশের সঙ্গে নোট পালা সংকীর্তন যোগ করে ৩০ মিনিটের একটি নৃত্যানুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।১৯২১ খ্রিস্টাব্দে 2৭ শে ডিসেম্বর মনিপুরী নৃত্যশিল্পীরা কলকাতায় প্রিন্স অফ ওয়েলস এর সামনে রাসলীলা পরিবেশন করেন।গুরুজি রাসলীলা ৫ ঘন্টা থেকে ১৫ মিনিট করলেও তিনি কোনোভাবেই অভ্যন্তরীণ নিস্ঠাকে ক্ষুন্ন করেননি তা বজায় রেখেই পরিমার্জিত করা হয়েছিল।মণিপুরী নৃত্যের ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন দিশা ছিল বলে বলা যেতে পারে প্রথমে কলকাতা তারপর টাটানগর ও বাংলার বিভিন্ন স্থানে নৃত্য প্রদর্শন করা হয়েছিল।
তিনি ভারতের নানা স্থানে পরিভ্রমণ করে মণিপুরী নৃত্য প্রদর্শন করেন মনিপুরী নৃত্য গুরুদের মধ্যে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠছিলেন।
আলমোড়ায় উদয় শংকর এর নৃত্য শিক্ষাকেন্দ্রে তিনি বহুদিন শিক্ষকতা কাজ করেন ১৯৪০খ্রিস্টাব্দে আলমোড়ায় গুরু আমুবি সিংয়ের নেতৃত্বে “নিল কমল দল শ্যাম” বৈষ্ণব কবি গোপি চরণ দাসের লেখা এই গানটি প্রথম নৃত্যেরচিত করা হয়। এরপর গীতগোবিন্দ প্রধান হয়ে “শ্রীত কমল”( শ্রীকৃষ্ণ বন্দনা) ব্রহ্মসংহিতা আলোলা চন্দ্রকলাপ বনমালা শ্লোকটি আগে রেখে তারপর “শ্রীতকমল” রচনা করা হয়। অভিনয়ে ওনার অত্যন্ত জ্ঞান থাকায় তিনি অভিনয় বিষয়ক বহু নৃত্য সৃষ্টি করে অমর হয়ে আছেন ১৯৫৪সাল থেকে সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত তিনি জহরলাল নেহেরু মনিপুরি ডান্স একাডেমিতে জ্যেষ্ঠ গুরুপদ অলংকৃত করেন। ১৯৫৬ সালে সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার পান এবং ১৯৭০ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী উপাধিতে সম্মানিত করেন হাজার ১৯৭২ সালে এই মহান নৃত্যশিল্পী জীবন বসানঘটে।
গুরু হাওবাম অতোম্বা সিং
গুরু হাওবাম অতোম্বা সিং আসাম, ত্রিপুরা, পূর্ব বাংলার কিছু জায়গা, পশ্চিমবাংলা, বৃন্দাবন, রাধাকুন্জ, জয়পুর, দিল্লি
বিভিন্ন স্থানে মনিপুরী নৃত্য প্রচার ও প্রসার করেন।১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে সোমবার উরিপোক হাওবম দেবায়ন লৈকাই এ গুরু অতম্বা সিং এর জন্ম হয়।বাবা ফোরাবাজী কাঠের কাজ করতেন,তাই সংসার খুব কষ্টে চলতো।ছোটবেলায় গুরুজি ৩ বছরে “কৃষ্ণ”, ওদিদি ৫ বছরে “রাধা” হয়েছিলেন ,দাদা নিথোবা হাঁটুর ওপর তাল দিয়ে পুং বাজিয়ে রাসলীলা খেলতেন।তখনকার দিনে বাচ্চাদের খেলা ছিল রাসলীলা।সেই খেলা খেলতে খেলতে গুরুজি নিজেকে সত্যি কৃষ্ণ ভাবতেন। গুরুজী পাঁচ বছর বয়সে উরিপোকে ইয়াইস্কুলে ভর্তি হন। স্কুল থেকে ফেরার পথে হাওবাম চাওবি সিং এর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে পুং বাজনা শুনতেন। পড়াশোনার থেকে বেশি নাচ গান এই তার মন থাকতো। একদিন চাওবি সিং গুরু অতম্বা সিং কে দেখে ফেলেন এবং তিনি গুরুজীর পুং বাদনের এর প্রতি আকর্ষণ দেখে তাকে পং বাঁদন শেখাতে শুরু করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মনিপুর পরিবর্তন আসে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ধনো মঞ্জুরী কলেজ স্থাপিত হয়। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে “মণিপুরী সাহিত্য পরিষদ” স্থাপিত হয়।গুরু হাওবম অতম্বা সিং তার কাকা চাওবি সিং এর কাছ থেকে পুং,রাসলিলা,খুবাক ইশৈ, গৌরচন্দ্রিকা, রথযাত্রা, শিখেছিলেন। শ্রী গোবিন্দজির মন্দিরে তিনি সহায়ক মৃদঙ্গ বাদক ছিলেন। গুরু অতম্বা সিং থাম্বাল অরোঙবি দেবি কে বিবাহ করেন। বিবাহ সূত্রে তার প্রথম সন্তান হয় যার নাম রাখেন গৌরনিতাই। তারপরে তার চারটি মেয়ে ও দুটি পুত্র সন্তান হয়।তিনি হুইড্রম রুদ্র সিং এর শীষ্য হন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেমন রাসলীলা ,ঝুলন অনুষ্ঠানে গুরুজি কে সহায়ক মৃদঙ্গ বাদক হিসেবে নিয়ে যেতেন। গুরু হাওবম অতম্বা সিং খোলেন সেম্বা, হাওড়ায় চাবি,হাওবাম নিথম্বার কাছ থেকে মৃদঙ্গ ,গান ,বোল শেখেন।গুরু অতম্বা সিং এরনৃত্যে আপন এক বৈশিষ্ট্য ছিল যা সরল সৌন্দর্যের বিস্ময়কর অবদান বলা যেতে পারে,এই গুরু চিরকালই অমর হয়ে আছেন।রাশির মধ্যে নিত্রাস বিষয়ে তার জ্ঞান ছিল অসম্ভব, প্রবন্ধের উপনীত রচনায় তাঁর প্রতিভার প্রকাশ তাই দেখতে পাওয়া যেত। গুরুজি প্রচন্ড সংস্কার প্রবন মানুষ ছিলেন। নিত্য প্রচারকার্যে তাকে প্রায় শান্তিনিকেতন শিলং এবং কলকাতায় যেতে হয়েছিল।এমনকি তিনি শান্তিনিকেতন থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেছিলেন। গুরু হাওবাম অতম্বা সিং কিছুদিন ঝুলন মাচার কাছেও নৃত্য শিক্ষা করেছিলেন।গুরুজী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঝুলন মাচার সঙ্গে যেতেন তার সহায়ক শিল্পী হিসেবে। গুরুজি ওঝা ঝুলন মাচার কাছ থেকে ভঙ্গি পরেং, খুরুম্বা ভঙ্গি পারেং, গোপী বৃন্দাবন পরেং, শিখেছিলেন। শ্রী গোবিন্দজির মন্দিরে গোবিন্দ সেবায় নিজেকে অর্পণ করেন। জহরলাল নেহেরু মনিপুরি ডান্স একাডেমিতে তিনি দীর্ঘ ১৬ বছর অধ্যাপনা করেছিলেন।১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে সংগীত নাটক একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন।১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে ভিজিটিং প্রফেসর হন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে মনিপুরী স্টেট কলা একাডেমী থেকে ফেলোশিপের সম্মান পান।১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে গুরুজীর দেহাবসান হয়।
গুরু তখেলচংবম আমুদন শর্মা
গুরু আমুদন শর্মা ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে বৃহস্পতিবার ইম্ফলে অবস্থিত ব্রহ্মপুরে ওনার জন্ম হয়। গুরুজীর পিতা তখেলচংবম খোমদন শর্মা(রাসধারী) ছিলেন এবং মাতা থোরা দেবী কৌই।গুরু পরম্পরায় ওনারা পুং ,বাজনা, গান ও নৃত্য শিখেছিলেন।গুরু খোমদোন শর্মা ও দাদু কানাই শর্মা দুজনেই রাসধারী ছিলেন। ওনাদের কাছ থেকে গুরুজি পুং, নৃত্য-গীত বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেছিলেন। বংশপরম্পরায় ওনারা সকলেই রাসধারী ছিলেন। কুঞ্জ রাস, মহারাস,বসন্ত রাস, গোষ্ঠ লীলা ,উলুখলিলা এই সকল বিষয়ে ওনার যথেষ্ট পাণ্ডিত্য ছিল। গুরুজি পুং বাজাতেও পারদর্শী ছিলেন। কার গুরুরা হলেন ক) অপোকপা খোমদোন শর্মা
খ) অরিবম উপাসনা শর্মা
গ) অমসুং অরিবম প্রশিক্ষিত দেব শর্মা।
আমোদন শর্মা ছোটবেতারপর তিনি পিতা খোমদোন শর্মার কাছে পুং চর্চা ও নৃত্য চর্চা শুরু করেছিলেন।পুং বাজনায় শিক্ষা লাভ করে তিনি নটপালায় “হন্জোবা” উপাধি পেয়েছিলেন। “হন্জোবা” উপাধি মণিপুরে গোবিন্দজী মন্দির থেকে এক্সপার্ট পুংবাদকে দেওয়া হয়।গোবিন্দ জির মন্দিরে যে “বামন পালা” হতো সেটি গুরু আমোদন শর্মা পরিচালনা করতেন। “বামন পালা” শুধু ব্রাহ্মণরাই করে থাকেন।গুরুজি ভালো পুং বাজাতে পারতেন ।লয়ের ওপর ওনার কন্ট্রোল ছিল ,তালে উনি পারদর্শী ছিলেন, ওনার পারদর্শিতা দেখে রাজা বোধচন্দ্র তাকে সম্বর্ধনা করেছিলেন- সোনার বালা,খামু চপ্পল,তাননচিংবি মনা(এক বিশেষ ধরনের কাপড়) দিয়েছিলেন।গুরুজি মণিপুরী পুং ও নৃত্য ক্ষেত্রে এক নিজস্ব নৃত্যশৈলী তৈরি করেছিলেন।গুরুজি মণিপুরী নৃত্যের এবং পুং বাদনে এক বিশেষ দিক দেখিয়েছিলেন।গুরু আমুদন শর্মা একাশিনি দেবীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। গুরু আমোদন শর্মা সংকীর্তনে পুংয়ৈব ছিলেন।গুরুজি বাবা খোমদোন শর্মার সাথে মনিপুরের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করতেন। গোবিন্দজির মন্দির এর পরম্পরা বজায় রেখে শ্রী মহান সিংহ নান্দৈবম লৈকাইতে ১৯৪৯-১৯৫০খ্রিস্টাব্দে “মনিপুর কলা ভবন” নামে একটি নৃত্য গীত ও বাদ্যের সংস্থান তৈরি করেছিলেন। সেখানে প্রধান গুরু হিসেবে ছিলেন গুরুআমুদন শর্মা।১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে সবিতা বেন মেহতা গুরু আমুদন শর্মাকে মুম্বাই পোরবন্দর এ অবস্থিত “পরিমল একাডেমিতে” নিয়ে গেছিলেন। সবিতা বেন মেহেতা ওনার কাছে নৃত্যচর্চা শুরু করেছিলেন উনার কাছ থেকে ই। মুম্বাই থেকে ফিরে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ২০ তারিখ গুরু আমুদন শর্মা “গোবিন্দজী নর্তনালয়ে” প্রধান গুরু হিসেবে যোগদান করেন। জহরলাল নেহেরু মনিপুরি ডান্স একাডেমিতে তিনি visiting গুরু ছিলেন। “সঙ্গীত কলা সঙ্গম” এর সাথে তিনি কিছুদিন যুক্ত ছিলেন। মনিপুরে জগোই মারুপের সঙ্গেও তিনি কাজ করেছিলেন। গুরুজীর পুংবাদক হিসাবে ছিলেন “রাসবিহারী শর্মা”। মণিপুরী চীফ কমিশনার শ্রী রাবল অমর সিংহ দ্বারা ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি ২৩ তারিখে মৃত্যুর উপাধি পেয়েছিলেন।১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে মহারাজ বোধচন্দ্র সিংহ “নিত্যচার্য” শিরোমণি সম্মান দিয়েছিলেন।১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি ২১ তারিখে “সংগীত নাটক” একাডেমী পুরস্কার পান।১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে জুলাই ৩০ তারিখে মনিপুর সাহিত্য পরিষদ থেকে “নৃত্যরত্ন” উপাধি পান। মার্চের ২৫ তারিখ ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি.বি.গীরিজীনা “পদ্মশ্রী” উপাধিতে ওনাকে ভূষিত করেন।১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে এই মহান গুরু দেহবসান হয়।
মন্ডপসংস্কার একটি নিয়মের মধ্যে বাঁধা থাকে যেমন রাস সংকীর্তন এইগুলি শাস্ত্র অনুযায়ী করা হয় যেহেতু এই নৃত্য গুলি ধর্মের সঙ্গে যুক্ত।মন্ডপ সংস্কার গুলো দেখলে বোঝা যাবে যে উপস্থাপকদের পোষাক অঙ্গসজ্জা এবং অঙ্গভঙ্গির চারিদিকে বসে থাকা দর্শকদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।মনিপুরে মণ্ডপে নৃত্যের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে যে নিয়ম সবাই মেনে চলে।মনিপুরী নৃত্য সাধারণত গোষ্ঠী প্রধান যেমন রাস যেখানে রাধা কৃষ্ণ গোপীদের নিয়ে সমবেত নৃত্য অনুষ্ঠান করা হয়। মণিপুরী নৃত্যের সেভাবে একক নৃত্য তৈরি ছিল না পরবর্তীকালে মঞ্চ উপযোগী রচনা সময় রাস থেকে কৃষ্ণ অভিসার, কৃষ্ণ নর্তন প্রভৃতি একক নিত্য হিসেবে করা হয়।১৯৩০ সাল থেকেই এই এককনৃত্যের সূত্রপাত হলেওগুরুমাইস্নাম আমুবিসিং এর নেতৃত্বে তা কায়য় আকার ধারণ করে। পরবর্তীকালে গুরু মাইস্নাম আমুবি সিং, গুরু হাওড়ায় অতম্বা সিং,গুরু তখেলচংবম আমুদন শর্মা একের পর এক বহু হৃদয়স্পর্শী ও নৃত্য রচনা করেছিলেন। মনিপুরী নৃত্য মঞ্চ উপস্থাপনা এই গুরুদের দান অনস্বীকার্য। মন্ডপ সংস্কার থেকে মঞ্চ উপস্থাপনা পর্যন্ত সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মণিপুরী নৃত্যের ক্ষেত্রে এটি একটি দুঃসাহসিক কাজ বলা যেতে পারে।এ বিষয় নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো লিখিত প্রমাণ সেভাবে নেই তবে এটা কৃতজ্ঞতার শহীদ স্বীকার করতে হবে যে গুরুদেব ও মণিপুরী গুরুদের সহযোগিতা ও প্রচেষ্টায় মণিপুরী নৃত্য শুধু মন্ডপ থেকে মঞ্চে উপস্থাপিত হওয়ার পথ অনুসন্ধান করতে পেরেছে শুধুতাই নয় মনিপুরী নৃত্য মনিপুর ছাড়িয়ে ভারত ও বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
মণিপুরী নৃত্য ছন্দ প্রকৃত সৌন্দর্যের রুপায়ন মনিপুর বাসি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস নিয়ে মনিপুরী নৃত্যকরে থাকে। মনিপুরী নৃত্য আজ শুধু মণিপুরে নয় বিভিন্ন দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে ।বহু ছাত্র-ছাত্রী এই নৃত্যচর্চা করছে, এটি সম্ভবপর হয়েছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রচেষ্টায় ।আগরতলা ভ্রমণ কালের রবীন্দ্রনাথ মনিপুরী রাস নৃত্যথেকে বিশেষভাবে মুগ্ধ হয়েছিলেন ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে মনিপুরীনৃত্যপদ্ধতিতে নটীর পূজা অনুষ্ঠিত হয় এরপর বহু গুরু শান্তিনিকেতনে আসেন এইভাবে মনিপুরী নৃত্য মনিপুরের বাইরে শান্তিনিকেতন ও দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আজও বহু গুরু তাদের প্রচেষ্টা য়নতুন নতুন নৃত্য নির্মিত করছেন এবং মনিপুরী নৃত্য কে এক অন্যতম স্থান অধিকার করতে সাহায্য করছেন। মনিপুরী নৃত্য মন্ডপ গন্ডি ছাড়িয়ে মঞ্চে উপস্থাপিত হলেও গুরুরা কোনভাবে তার ঐতিহ্যে ও সংস্কৃতি ক্ষুন্ন করেননি তা আজও সমান ভাবে মণিপুরী নৃত্যে প্রবাহমান।
গ্রন্থপঞ্জি
১-ভারতের নৃত্য কলা গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায় নবপত্র প্রকাশন হাজার ১৯৮৫.
২-মনিপুরী নর্তন দর্শনা জাভেরি কলাবতী দেবী মনিপুরী নর্তনালয়।
৩-নৃত্য-প্রতিমা দেবী বিশ্বভারতী।
৪-গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ও আধুনিক ভারতীয় নৃত্য শান্তিদেব ঘোষ আনন্দ পাবলিশার্স প্রথম সংস্করণ ১লা বৈশাখ ১৩৯০ তৃতীয় মুদ্রণ বৈশাখ ১৪১৪ পাবলিশার্স।
৫-নৃত্যে ভারত-মঞ্জুলিকা রায়চৌধুরী -ডি- এম-লাইব্রেরী, প্রথম সংস্করণ ১৩৯৩।
৬-নৃত্যকলা ও রবীন্দ্রনাথ শান্তিদেব ঘোষ আনন্দ পাবলিশার্স প্রথম সংস্করণ জানুয়ারি 1999।
৭-History of Manipuri dance-jyotirmoy 1924 mukhopadhyay original from the the university of mianigan।
৮-Dance of India Manipuri dance Surya Joshi 1989 Marg publication.
৯-sreebhumi sylhet rabindranath -nripendra lal das-1990 -swarnika publisher swarnika publisher.
১০-নৃত্যকলা ও রবীন্দ্রনাথ -ডক্টর ইন্দ্রাণী রায় -সর্বভারতীয় সঙ্গীত ও সংস্কৃতি পরিষদ-১৯৯৮
১১-ত্রিমূর্তি-জহরলাল নেহেরু মনিপুরি ডান্স একাডেমি প্রথম সংস্করণ ১৪ ই সেপ্টেম্বর ২০১৯।
১২-গুরু হাওবম অতোম্বা সিং। প্রথম সংস্করণ এপ্রিল ২০১৯, জহরলাল নেহেরু মনিপুরি ডান্স একাডেমি ইম্ফল।
১৩-গুরু তখেলচংবম আমুদন শর্মা-জহরলাল নেহেরু মনিপুরি ডান্স একাডেমি ইম্ফল এপ্রিল ২০১৯।
১৪-http://www.manipurijagoimarup.org/guru.
১৫–https://www.google.com/url?sa=t&source=web&rct=j&url=https://www.esamskriti.com/e/Culture/Dance/Homage-to-Guru-Amubi-Singh-1.aspx&ved=2ahUKEwiE65TM54_mAhU-wzgGHd1LCBUQFjACegQIAxAB&usg=AOvVaw0PkdSfOIoB_1Unifw0d4-o
১৮- https://sangeetnatak.gov.in › sna › ci…Web results,Haobam Atomba Singh – CUR_TITLE
১৯- https://www.britannica.com › Atom…Atomba Singh | Indian guru |
২০- https://www.oxfordreference.com › …Amudon Sharma – Oxford Reference
রিঙ্কি মাহাতো
Rinki Mahato
Doctoral Research Scholar, Sangit Bhawan, VISVA BHARATI, Santiniketan. Supervisor-Dr. Sumit Basu,
Assistant Professor, Sangeet Bhawan (Manipuri Dance)
Visva Bharati, Santiniketan