May 1, 2025

বর্তমান সময়ে বঙ্গে মণিপুরী নৃত্যচর্চার অবস্থান : সমস্যা ও বিশ্লেষণ – তন্ময় পাল

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

গবেষক, মণিপুরি নৃত্য
রবীন্দ্রসঙ্গীত, নৃত্য ও নাটক বিভাগ, সঙ্গীত ভবন, বিশ্বভারতী

ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের মধ্যে অন্যতম একটি শাস্ত্রীয় নৃত্য হল মণিপুরী নৃত্য যার জন্ম উত্তর- পূর্ব ভারতের একটি ছোট্ট রাজ্য মণিপুরে। শাস্ত্রীয় মণিপুরী নৃত্যের সৃষ্টি হওয়ার পিছনে যে দুটি প্রধান উপাদান কাজ করেছিল তার প্রথমটি হল ধর্ম এবং হল দ্বিতীয়টি সাহিত্য এই দুটি ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলার অবদান অনস্বীকার্য।
গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের মণিপুরে আগমনের পর মৈতৈ১ সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন এসেছিল, যুক্ত হয়েছিল দুটি প্রধান বিষয় রাসলীলা ও সংকীর্তন, যা ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদান রেখেছে। একটা সময় পর্যন্ত মণিপুরী নৃত্য শুধুমাত্র ভক্তি বা উপাসনার অঙ্গ হিসাবে পরিবেশিত হয়ে এসেছে তা কোন অর্থে বিনোদনের জন্য ছিল না। যদিও ভারতীয় সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিন্তু ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে বেশ কিছুটা দূরত্বে অবস্থানের জন্য ভারতের বাকি অংশ তথা বিশ্বের মানুষের কাছে মণিপুরী নৃত্য মণিপুরী সংস্কৃতি বহুল প্রচলিত ছিল না। পরবর্তীতে গুরুদেব শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে মণিপুরী নৃত্য বিশ্ব দরবারে পৌঁছায়। এক্ষেত্রে বিশেষ অবদান ছিল শ্রী উদয়শঙ্কর ও গুরু মায়স্নাম আমুবী সিং এই দুই মহান ব্যক্তির।
বর্তমান সময়ে সমগ্র ভারতবর্ষ তথা বাংলা জুড়ে মণিপুরী নৃত্যের যথেষ্ট প্রচার ও প্রসার হচ্ছে, যার সূত্রপাত হয়েছিল গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে। ১৯১৯ সালে শান্তিনিকেতনে মণিপুরী নৃত্যচর্চা শুরু হয় গুরু বুদ্ধিমন্ত সিং দ্বারা, ১০০ বছর অতিক্রান্ত হয়ে তা এখনও হয়ে চলেছে। পরবর্তী সময়ে শ্রী উদয়শঙ্কর এক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা নিয়েছিলেন, ‘উদয়শঙ্কর ইন্ডিয়া কালচারাল সেন্টার’- এ গুরু মাইস্নাম আমুবী সিং মণিপুরী নৃত্যগুরু হিসাবে বিশেষ ভুমিকা রেখেছেন, সেইসময় তিনি মণিপুরী নৃত্য কে মঞ্চ উপযোগী পরিবেশনার জন্য বিশেষ নৃত্যনির্মাণ করেছিলেন ঐতিহ্যবাহী মন্দির পরিবেশনা থেকে মঞ্চে আনার জন্য এবং এই সময়েই প্রথম একক পরিবেশনার জন্য নৃত্যনির্মাণ করেন যা প্রথম পরিবেশন করেছিলেন একজন বাঙালি মহিলা স্বর্গীয় শ্রীমতী অমলাশঙ্কার(সাল আনুমানিক ১৯৩৯খ্রীঃ)।
বর্তমান সময়ে ক্ষেত্রসমীক্ষা ও বিশ্লেষনের দ্বারা যে তথ্য হাতে পায় তাতে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ও উদয়শঙ্কর পরবর্তী যুগে যে দুজন মণিপুরী নৃত্যের চর্চা ও প্রসারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন তারা হলেন স্বর্গীয় গুরু বিপিন সিং এবং গুরু শ্রীমতি দেবযানী চালিহা।
১৯৭১ সালে গুরু দেবযানী চালিহার প্রতিষ্ঠান ‘মৈতৈ জাগোই’ প্রতিষ্ঠা হয় কলকাতায় সেই সময় কলকাতায় সেভাবে বড় কোন শুধুমাত্র মণিপুরী নৃত্য শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ছিল না। আসামের কাছার ও শিলচর থেকে আগত কিছু গুরুরা মণিপুরী নাচ শেখাতেন টুকরো টুকরো বিভিন্ন জায়গায়, কলকাতায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মণিপুরী নৃত্যচর্চায় বিশেষ অবদান রেখেছে এই ‘মৈতৈ জাগোই’।গুরুর দেবযানী চালিয়া অসমীয়া হলেও তিনি মণিপুরী নৃত্যের চর্চা ও প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে গুরু বিপিন সিং এবং গুরু কলাবতী দেবী প্রতিষ্ঠা করেন ‘মণিপুরী নর্তনালয়’ যা পশ্চিমবঙ্গে মণিপুরী নৃত্যচর্চায় এক মাইল ফলক হয়ে দাঁড়ায়। এই দুটি প্রতিষ্ঠান বাঙালি শিক্ষার্থীদের মণিপুরী নৃত্যচর্চার অনেকখানি সুযোগ করে দেয় এবং পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতায় এই দুই গুরুর হাত ধরে বিভিন্ন নৃত্য নির্মাণ ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতি তৈরি হতে থাকে।
এছাড়াও গুরু খেলেন্দ্র সিং, গুরু আদিত্যসেনা রাজকুমার, গুরু নদীয়া সিং, শ্রীমতী ইভা সিং, শ্রী অমিয় বর্মণ প্রমুখের অবদান রয়েছে কলকাতায় মণিপুরী নৃত্যচর্চা ও প্রসারের জন্য।
পরবর্তীতে অধ্যাপিকা শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শ্রীমতি প্রীতি প্যাটেল মণিপুরী নৃত্য প্রচার ও প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন পরম্পরাগতভাবে শ্রীমতি মালা মজুমদার, গৌরি দত্ত, শ্রীমতি তপা সেনগুপ্ত, শ্রীমতি পৌষালী চ্যাটার্জী, শ্রীমতি সোমা রায়, শ্রীমতি বৈশালী বসু সরকার, করুণা দেবী, বিম্বাবতি দেবী, শ্রী সুজিত ঘোষ, অর্পিতা সাহা, মল্লিকা সাহা, প্রমুখের অবদান অনেকখানি।
প্রতিষ্ঠান হিসাবে অঞ্জিকা, শ্রুতি পারফর্মিং ট্রুপ, চালরমী, সল্টলেক নর্তনালয়, পূর্বাচল নান্দনিক মুভমেন্ট আর্টস এবং আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম পাই যারা বর্তমানে মণিপুরী নৃত্যচর্চা প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়াও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে মণিপুরী নৃত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে।
একদিকে যেমন শান্তিনিকেতনে সমসাময়িক ভাবে রবীন্দ্রনাথের গানের নৃত্যনির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে শাস্ত্রীয় মণিপুরী নৃত্যের চর্চা হয়ে আসছে বর্তমানে বিশ্বভারতীতে মণিপুরী নৃত্যে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং গবেষণার সুযোগ রয়েছে। বহু গবেষক এখান থেকে মণিপুরী নৃত্যের ওপর গবেষণা সম্পন্ন করেছেন এবং করে চলেছেন। বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার আগেই আমরা শান্তিনিকেতনে মণিপুরী নৃত্য গুরুদের সম্পর্কে জানা যায় যারা শান্তিনিকেতন আশ্রমে নৃত্যগুরু হিসাবে এসেছিলেন যেমন গুরু বুদ্ধিমন্ত সিং, গুরু নবকুমার সিং, গুরু সেনারিক রাজকুমার, গুরু নীলেশ্বর মুখার্জি, গুরু বসন্ত সিং, গুরু হওবাম অতোম্বা সিং, গুরু বৈকুণ্ঠো সিং, গুরু আর কে চন্দ্রজিৎ সিং, গুরু পাকা সিং এবং অন্যান্য। ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়ার পর গুরু আরামবাম আমুবি সিং বিশ্বভারতীতে যোগদান করেন। পরে ১৯৬৮ সালে গুরু কাব্রাবাম যতীন্দ্র সিং যোগদান করেন। তিনি শান্তিনিকেতনে ‘জিতেন দা’ নামে পরিচিত এবং এছাড়াও তিনি দীর্ঘতম সময় ধরে বিশ্বভারতীতে ছিলেন। শ্রী মাধব মুখার্জি কয়েক বছর শান্তিনিকেতনে মণিপুরী নৃত্যের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৯৩ সালে গুরু কঞ্জেংবম সুনিতা দেবী এবং গুরু য়াইখোম হেমন্ত কুমার বিশ্বভারতীতে যোগ দেন, টি. ঞ্জানপতি দেবী ১৯৯৮ সালে, ড. সুমিত বসু ২০০১ সালে এবং ড. শ্রুতি বন্দোপাধ্যায় ২০১৪ সালে বিশ্বভারতীতে যোগ দেন।
বিশ্বভারতীর বিদ্যালয় বিভাগে শ্রীমতী মাধুরী সিনহা, শ্রী দেবব্রত মুখার্জি, শ্রীমতি সুজাতা মিত্র, শ্রী সুজিত কুমার ঘোষ ছিলেন মণিপুরী নৃত্যের শিক্ষক।
কিন্তু তা সত্বেও অন্যান্য শাস্ত্রীয় নৃত্যের তুলনায় মানিপুরী নৃত্যের নৃত্যশিল্পী ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বর্তমানে কম, এর কারণ খুঁজতে গিয়ে কয়েকটি মুখ্য সমস্যা সামনে আসে যেমন
১) মণিপুরের ভৌগোলিক অবস্থান
ভৌগোলিকভাবে পশ্চিমবঙ্গ মণিপুর থেকে অনেকখানি দূরে এবং যাতায়াতের পথ ও বিশেষ সুগম নয়, যার ফলে শিল্পীদের নিয়মিত যোগাযোগ সম্ভব হয়ে ওঠেনা। বিশেষত বাঙালি নৃত্যশিল্পীদের যার ফলে নতুন শিক্ষার্থীদের বিশেষ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। যেহেতু নৃত্যকে আয়ত্তে আনতে গেলে তার সংস্কৃতি বোঝা এবং প্রত্যক্ষ করা খুবই প্রয়োজন, বিশেষত মানিপুরী নৃত্যের ক্ষেত্রে আরো প্রয়োজন, এর কারণ মৈতৈ জীবনযাত্রার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িয়ে রয়েছে নাচ এই কারণেই মণিপুরী নৃত্য শিক্ষা গ্রহণে মণিপুরী জীবনযাত্রার এবং সংস্কৃতিকে আয়ত্ত করা খুবই প্রয়োজন, ভারতবর্ষের অন্যান্য শাস্ত্রীয় নৃত্যগুলির ক্ষেত্রে এই সমস্যা কিছুটা হলেও কম, কারণ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা উদাহরণস্বরূপ ভৌগোলিক দূরত্ব খুব কম এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার জন্য ওড়িশি ও ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পীদের এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।
২) মণিপুরীর নৃত্যের প্রশিক্ষণ শৈলীর ও প্রদর্শনের নিয়মানুবর্তিতা
যেহেতু মণিপুরী নৃত্য সম্পূর্ণরূপে ভক্তিমূলক ভাবের ওপর দাঁড়িয়ে এবং একমাত্র ‘লিভিং ট্র্যাডিশন’২ বলা যায়, যা আজও মন্দিরেও প্রথাগতভাবে পরিবেশিত হয়ে আসছে এবং মঞ্চেও হচ্ছে তাই মণিপুরী নৃত্য প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়মানুবর্তিতা পালন করতে হয় এবং গুরুদের মতে প্রশিক্ষণের সময় মৈতৈ জীবনযাত্রা অনুসরণ করলে ভালো হয়। আমার গবেষণার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রবাদপ্রতিম গুরুদের সাক্ষাৎকারে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছি বর্তমান সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সেই নিয়মানুবর্তিতা কোথাও গিয়ে একটুখানি কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে যার ফলে মণিপুরী নৃত্যচর্চা ও প্রদর্শনে আগ্রহীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এর কারণ হিসাবে আরো একটি বিষয় সামনে আসছে যেটি হল বর্তমান বহুমুখীশিক্ষা পদ্ধতি, এই বহুমুখীশিক্ষা পদ্ধতির ফলে নতুন প্রজন্ম বিশেষ সময় দিতে পারছে না শাস্ত্রীয় নৃত্য চর্চায় একজন শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী হতে গেলে যতখানি সময় শাস্ত্রীয় নৃত্যচর্চায় ব্যয় করতে হয় সেই সময় তারা পাচ্ছে না।
৩) পোশাক এবং অন্যান্য অলংকারের ব্যয়সাপেক্ষতা
শাস্ত্রীয় নৃত্যের ক্ষেত্রে পোশাক ও অলংকার একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে, বিশেষত মণিপুরী নৃত্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পোশাক আমরা লক্ষ্য করি। যেমন রাসনৃত্যের জন্য আলাদা পোশাক, একক নৃত্যের জন্য আলাদা পোশাক, বিভিন্ন মণিপুরী লোকনৃত্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের পোশাক। এই পোশাকগুলি যথেষ্ট দামি এর কারণ বেশিরভাগ পোশাক ও অলংকার তৈরি হয় হাতের কাজের মাধ্যমে। যেমন হাতে বোনা এবং হাতে সেলাই করে বিভিন্ন ধরনের পোশাক নির্মাণ হয় এছাড়াও অলংকারের ক্ষেত্রে হাতে তৈরি অলংকারের ব্যবহারই বেশি, যেহেতু মণিপুরের পোশাক হাতের কাজের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে সে ক্ষেত্রে তার দামও অনেকখানি বেশি থাকছে যা বাঙালি মণিপুরী নৃত্যশিল্পী বা শিক্ষার্থীদের কাছে যথেষ্ট ব্যয়বহুল। একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষা সম্পন্ন করার পর নৃত্য প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন এই সমস্যা তার কাছে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী মণিপুরী নৃত্যচর্চায় বেশিদূর এগোচ্ছেন না।
ভৌগোলিক দূরত্ব থাকলেও নৃত্যগুরুদের সহায়তায় বিভিন্ন এই সমস্যার কিছুটা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে যেমন মণিপুর থেকে আগত বিভিন্ন গুরুদের পশ্চিমবঙ্গে পাকাপাকিভাবে থেকে যাওয়া বা সাময়িকভাবে বসবাসের কারণে বাঙালি শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছেন অপরদিকে মণিপুর থেকে নৃত্যগুরুরা এসে মণিপুরী নৃত্যের বিভিন্ন বিষয়ের কর্মশালা পরিচালনা করছেন যা শিক্ষার্থীদের কিছুটা হলেও এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিচ্ছে।
অপরদিকে প্রশিক্ষণ শৈলীতেও কিছু আধুনিকরণ করে যাতে ছাত্রছাত্রীদের শিখতে সুবিধা হয় এবং বিভিন্ন সাংগীতিক ব্যায়ামের দ্বারা দেহ ভঙ্গিমা সঠিক হয় সেই চেষ্টা করে চলেছেন বর্তমান গুরুরা।
পোশাক এবং অলংকারের ক্ষেত্রে বর্তমানে কলকাতাও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় মূল কিছু পোশাক তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে যার ফলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছেন।
মণিপুরী নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য শিক্ষার্থীদের আপ্রাণ চেষ্টায় বর্তমান সময়ে মণিপুরী নৃত্য জনপ্রিয়তা লাভ করছে। কিছু সমসাময়িক প্রযোজনা, নতুন শিক্ষণ পদ্ধতি, কর্মশালার আয়োজন, ভৌগোলিক দূরত্ব মিটিয়ে মণিপুরের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, মণিপুর থেকে আগত গুরুদের অবদান এবং বিবিধ কারণে বর্তমান সময়ে মণিপুরী নৃত্যের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে যার ফলস্বরূপ আমরা দেখতে পাই প্রথম বাঙালি হিসেবে ডঃ শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায় মণিপুরী নৃত্যে অবদানের জন্য ভারত সরাকারের ‘সংগীত নাটক একাডেমী পুরস্কার(২০২০)’ লাভ করেন ২০২৩ সালে। মণিপুরী নৃত্যে অবদানের জন্য ভারত সরাকারের ‘সংগীত নাটক একাডেমী’ থেকে ‘টেগোর একাডেমী পুরস্কার(২০১১)’ লাভ করেন গুরু দেবযানী চালিহা, পশ্চিমবঙ্গ থেকে মণিপুরী নৃত্যের জন্য গুরু কলাবতী দেবী সরাকারের ‘সংগীত নাটক একাডেমী পুরস্কার(২০০৩)’ লাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে মণিপুরী নৃত্যের জন্য শ্রীমতী প্রীতি প্যাটেল সংগীত নাটক একাডেমী পুরস্কার(২০১১)’ পান। যদিও বিম্বাবতী দেবী মৈতৈ কিন্তু তিনি ছোটবেলা থেকেই কলকাতায় থেকেছেন এবং বাংলার পরিবেশে বড় হয়েছেন, তিনি মণিপুরী নৃত্য পরিবেশন ও শিক্ষাদানে অনেক অবদান রেখেছেন, তিনি ‘ওস্তাদ বিসমিল্লা খান যুব পুরস্কার (২০০৭)’ পান ২০০৮ সালে।
এছাড়াও ভারত সরকারের বিভিন্ন বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় এবং জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় বাঙালী মণিপুরী নৃত্যশিল্পীদের ভালো ফল করতে দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সংস্কৃতিমনস্ক দর্শক প্রভৃতি মণিপুরী নৃত্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে গুরুদেবের হাত ধরে যে মণিপুরী নৃত্য মণিপুরের বাইরে প্রথাগত শিক্ষায় হিসাবে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল তা আজ বিশ্বদরবারে প্রশংসিত হচ্ছে তাই বাংলা তথা বাঙালির অবদান মণিপুরী নৃত্যচর্চা ও প্রসারে অতুলনীয়।

পাদটীকা
১ মৈতৈ- মণিপুরি জাতিকে তাদের ভাষায় মৈতৈ বলা হয়
২ লিভিং ট্র্যাডিশন- জীবন্ত ঐতিহ্য (যা ধারাবাহিক ভাবে আজও হয়ে আসছে)
গ্রন্থপঞ্জি
১) মুখোপাধ্যায়, ডঃ শাঙ্করলাল ; ভারাতীয় নৃত্যধারার সমীক্ষা; ফার্মা কে এল এম প্রাইভেট লিমিটেড; ১৪ই এপ্রিল, ১৯৯৭।
.২) মুখোপাধ্যায়, মহুয়া ; গৌড়ীয় নৃত্য; দি এশিয়াটিক সোসাইটি; জানুয়ারী ২০০৪
৩) মজুমদার, ডঃ মালা ; ভারতীয় নৃত্যের পুনর্নবীকরণ পর্ব; এম এম পাবলিশিং; ১২ই জুলাই ২০০২।
৪) বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রুতি; নৃত্য অন্তরে-বাহিরে; কারিগর; ২০১৬।

সাক্ষাৎকার
• গুরু এন টিকেন সিং , মে ২০২৪, ইম্ফল , মণিপুর
• গুরু রঞ্জিত অধিকারিমায়ুম, মে ২০২৪, ইম্ফল , মণিপুর
• গুরু কলাবতি দেবী, জুন ২০২৪, কলকাতা
• গুরু য়াইখোম হেমন্ত কুমার, নভেম্বর ২০২৪, শান্তিনিকেতন
• গুরু শ্রীমতী প্রীতি প্যাটেল, জানুয়ারী ২০২৫, কলকাতা