May 1, 2020

প্রসঙ্গ বিশ্ব নৃত্য দিবস

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

রাহুল দেব মণ্ডল (নৃত্যশিল্পী ও অধ্যাপক )   

কলাতত্ব থেকে রসতত্ব ও সৃষ্টি তত্বের নান্দনিক আঙ্গিক প্রকাশ মাধ্যমের ভাবনাত্বক প্রয়োগীক উপস্থাপনা হল নৃত্য । আর এই নৃত্যকে বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণের লক্ষে  বিশ্ব নৃত্য দিবসের আয়োজন করা হয়েছে ২৯ শে এপ্রিল এই দিনটিকে । বিশ্বের ১৯৫ টি দেশ সরাসরি এই দিনটি বিশ্ব নৃত্য দিবস পালন করে ।

    বিশ্ব নৃত্য দিবস প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আমাদের দিনটির গুরুত্ত্বকে বুঝতে হবে । সুদূর প্যারিসের প্রত্যন্ত গ্রামে ১৭২৭ সালের ২৯ শে এপ্রিল জন- জর্জেস- নাভেরে জন্ম গ্রহন করেন —-এক মহান শিল্পী ফ্রেঞ্চ নৃত্যের বিশেষ পারদর্শী ছিলেন , এই মানুষটিকে বিশ্ব বরেণ্য ব্যালেট নৃত্যের প্রবাদ প্রতিম জনক বলাহয় , আর তারই জন্ম দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৮২ সালে আন্তর্জাতিক থিয়েটার সংস্থা (আই টি আই)  র সহযোগিতায় ইউনেস্কো তাঁর প্রয়োগীক সৃজন শিল্পী সমন্বয় কমিটি এই দিনটিকে বিশ্ব নৃত্য দিবস হিসাবে ঘোষণা করে ।

     প্রতিবছর ইউনেস্কো অন্তর্ভুক্ত দেশ গুলি এই দিনটি বিশ্ব নৃত্য দিবস হিসাবে উৎযাপন করে । প্রতিবছর এই দিনটি উৎযাপন কমিটি অর্থাৎ  ইউনেস্কো পৃথিবীর প্রতিটি দেশকে নৃত্য সম্বন্ধীয় বার্তা প্রেরনের জন্য আহ্বান করে থাকে। ইতিমধ্যেই বিশ্বের প্রথম সারির দেশ গুলির সাথে ভারতবর্ষও ১৯৮৬ সালে বার্তা প্রেরণ করেছে । প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী চেতনা জালাণ তিনি এই বার্তা বিশ্ব সৃজনকে সমৃদ্ধ করতে উপস্থাপনা করে ছিলেন ।

এই বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে এই বিশ্ব নৃত্যের ছন্দে অণুতে অণুতে সৃষ্টির বার্তা উপস্থাপিত করবেন #গ্রেগরি মাকোমা ,এক বিশ্বজয়ী অসামান্য অভিনয়শিল্পী, শিক্ষক এবং নৃত্যের মার্জিত রূপের স্রষ্টা, গ্রেগরি মাকোমা দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন প্রজন্মের অন্যতম প্রতিভাবান শিল্পী হিসাবে বিবেচিত, বিশ্ব ব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী আস্ফালনের  প্রতিবাদে তাঁর সৃষ্টি অমর হয়ে থাকবে । আর এই শিল্পীর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত উল্লেখ করলাম ।

 সভ্যতা বিভিন্ন সময়ে নানা সঙ্কটের মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হয় , কিন্তু তা স্বত্বেও সৃজনচিন্তা, কল্পনা, স্বপ্ন , বিকার , অবয়ব কল্পনা , গঠন এ সব কোনটাই বদ্ধ থাকতে পারে না , আর তাই বৃত্তির প্রগল্বতা অনুঘটকের মতো নিরন্তর সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মত্ত থাকে ।   

গ্রেগরি মাকোমা  ( কুর্নিশ হে শিল্পী ,  )

এক বিশ্বজয়ী অসামান্য অভিনয়শিল্পী, শিক্ষক এবং নৃত্যের মার্জিত রূপের স্রষ্টা, গ্রেগরি মাকোমা দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন প্রজন্মের অন্যতম প্রতিভাবান শিল্পী হিসাবে বিবেচিত, বিশ্ব ব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী আস্ফালনের  প্রতিবাদে তাঁর সৃষ্টি অমর হয়ে থাকবে ।

Ballet Dancer

গ্রেগরি ভুয়ানি মাকোমা ১৯৭৩ সালে সোয়েটোতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁর জন্মস্থানে  ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনা থেকে বাঁচার জন্য ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে নাচের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯৯০ সালে তিনি মুভিং ইন ডান্সে আনুষ্ঠানিক নাচের প্রশিক্ষণ শুরু করেন , পরবর্তীতে যেখানে ২০০২ সালে তিনি সহযোগী শিল্পী পরিচালক হন। মাকোমা নিজেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী, কোরিওগ্রাফার, শিক্ষক, পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি ১৯৯৯  সালে অ্যান টেরেসা ডি কীরসমেকারের পরিচালনায় বেলজিয়ামের পারফর্মিং আর্টস রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং স্কুল (পার্টস) এ বৃত্তি গ্রহণের সময় তিনি ভুয়ানি ডান্স থিয়েটার (ভিডিটি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

মাকোমা তাঁর প্রজন্মের শিল্পীদের সাথে সহযোগিতার জন্য সম্মানিত। ২০০২ সাল থেকে তিনি আকরাম খান, ভিনসেন্ট মানটসো, ফাউস্টিন লিনিয়েকুলা, দাদা মাসিলো, শ্যানেল উইনলক এবং সিডি লার্বি চেরকাউই সহ কোরিওগ্রাফারদের সাথে সফল ভাবে কাজ করেন ,

তাঁর ভিডিটি (ভুয়ানি ডান্স থিয়েটার) বেশ কয়েকটি সৃষ্টিশীল উপস্থাপনা আন্তর্জাতিক প্রশংসা অর্জন করেছে। এর মধ্যে তালিকায় , রিদম ব্লুজ এবং সাউদার্ন কমফোর্টের জন্য ১৯৯৯, ২০০১ এবং ২০০২এ বর্ষের এফএনবি ভিটা  কোরিওগ্রাফার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন । তিনি ২০০২ সালে  নৃত্যের জন্য স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ইয়ং আর্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। ম্যাকোমা ২০০২ সালে ডেইমলার ক্রাইসলার কোরিওগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড এবং ২০০৩ সালে রোলেক্স মেন্টারশিপ প্রোগ্রামে  জন্য তাঁর নাম চূড়ান্ত হয় ।তাঁর নেতৃত্বের জন্য ২০১২ সালের টুঙ্কি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। 

২০১৭ সালে ফরাসী সরকার মাকোমাকে সম্মানজনক শেভালিয়ার দে ল’র্ড্রে ডেস আর্টস এট ডেস লেট্রেসকে ভূষিত করেছিল ।

তার সৃষ্টিশীল মনন কে ও তার আজীবন নৃত্যের প্রতি উদার্ত নিবেদিত প্রাণকে সন্মান জানাতে এই বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে বিশ্ব নৃত্য দিবসে তার বার্তাই বিশ্বজনীন মান্যতা পেল ।

রবি ঠাকুরের ভাব ব্যাঞ্জনায় বারা বারে বিশ্ব তনুতে অনুতে অনুতে নৃত্যের মায়া বন্ধন উঠে এসেছে । একজন নৃত্য শিল্পী হিসাবে নিজের ভাবনাকে আপামরের কাছে তুলে ধরতে এর থেকে সহজ বোধয় আর কোন মাধ্যম আমার কাছে নেই , আসলে নৃত্যের শৈল্পিক ব্যাঞ্জনা এতটাই গ্রহনযোগ্য যে সে ধর্ম , বর্ণ , জাত, পাত , ভাষা , ভৌগলিক সীমাকে অতিক্রম করে সরাসরি ধরা দেয় হৃদয়পুরের স্নিগ্ধ বাতায়নে , আর প্রতিক্ষণে এই দিনটি খুঁজে পায়  তাঁর সার্থকতা  ।।