Tracing the Evolution of the Western Notation System
Mohammed Shoeb
Abstract:
The importance of study in Western music performance has long established this music as a written text. Its applications in the form of notation or staff notation are numerous. Also since this music is a collective effort, this notation system is essential for preserving the musical heritage of many artists together. As a result, a complete language model has been obtained through various experiments over a long period. Its importance in the musical development of every region of world music is noticeable. The essay on the notation system of Western music and its development is presented keeping that need in mind. Currently, I think this article will play an important role in the academic evaluation and education development of music care.
পাশ্চাত্য স্বরলিপি পদ্ধতি ও তার ক্রমবিকাশ
মোহাম্মদ শোয়েব, সহকারী অধ্যাপক, সংগীত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সার-সংক্ষেপ : পাশ্চাত্য সংগীত পরিবেশনার ক্ষেত্রে অধ্যয়নের যে গুরুত্ব রয়েছে, তার জন্য সুদীর্ঘকাল ধরে এই সংগীত লিখিত শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্বরলিপি বা স্টাফ নোটেশন আকারে তার প্রয়োগ সবৈব। এ ছাড়া এই সংগীত ঐকতানিক বা যৌথ প্রয়াস হওয়ার কারণে অসংখ্য শিল্পীর একসাথে সুরের পারম্পর্য রক্ষার জন্য এই স্বরলিপি পদ্ধতি অপরিহার্য। ফলে দীর্ঘকাল ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে একটি পরিপূর্ণ ভাষার আদল পেয়েছে। এবং বিশ্ব সংগীতের প্রত্যেক অঞ্চলের সংগীত বিকাশে তার প্রয়োজনীয়তা লক্ষণীয়। পাশ্চাত্য সংগীতের স্বরলিপি পদ্ধতি ও তার ক্রমবিকাশ প্রবন্ধটি সেই প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনা করে উপস্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে সংগীত পরিচর্যা একাডেমীক মূল্যায়ন ও শিক্ষা উন্নয়নে এই প্রবন্ধটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।
ভাষার মত স্বরলিপিকে সংগীতের প্রকাশমাধ্যম বলা হয়। এই স্বরলিপির উপর ভিত্তি করে সুরকার বা গীতিকার তাঁর সৃষ্টিকে সংরক্ষণ করতে পারেন এবং অন্যের কাছে এই সংগীতকে পৌঁছে দিতে পারে। দীর্ঘদিনের ব্যবধানেও সেই গান বা সুর অক্ষত, অবিকৃত অবস্থায় থেকে যায়।
এদেশে প্রাচীনকাল থেকেই সংগীত ছিল এবং তার গুরুমুখি শিক্ষা ছিল । বৈদিক শাস্ত্রের সূচনা লগ্ন থেকেই সংগীত অপরিহার্য বিদ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। সামবেদের বিভিন্ন শাখার গায়ন পদ্ধতি থেকে শুরু করে আধুনিক কালের উচ্চাঙ্গসংগীতের মধ্যে নানা পার্থক্য ও বৈচিত্রযুক্ত-গায়নশৈলী গড়ে উঠেছিল। গায়কের প্রতিভা ও নিজস্ব প্রকাশভঙ্গির ভিত্তিতে সৃষ্টি হয়েছিল বিভিন্ন ঘরানার। কারন গানের সুরকে লিপিবদ্ধ করে রাখার কোন প্রয়াস গায়কদের মধ্যে ছিলনা। প্রাচীন শাস্ত্রগ্রন্থগুলিতে স্বর লিখনের কিছু কিছু নমুনা বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখা গেলেও কোনো নিয়মবদ্ধ স্বরলিপি পদ্ধতি সর্বসম্মতভাবে প্রচলিত হয়নি। তাই তানসেনের মত কিংবদন্তীতুল্য গায়কদের গানের অবিকৃত রুপ সংগীতজ্ঞদের কাছে খানিকটা অজানাই থেকে গেছে। অথচ তানসেনেরই সমসাময়িক গুণী ইটালির Palestrina (১৫২৫-১৫৯৪) তাঁর Mass, Motel, Madrigal ইত্যাদি১ অক্ষত রেখে গেছেন স্বরলিপির মাধ্যমে। তাই একথা মানতেই হবে যে আর্য সংগীতের ইতিহাসে ভারতবর্ষ এগিয়ে থাকলেও স্বরলিপি পদ্ধতির ব্যাপক প্রচলনে পশ্চিমজগৎ ছিল অনেকটা অগ্রগামী।
প্রাচীন মিশরের সংগীতকলার অনুসরণে ইউরোপীয় সংগীতের ক্রমবিকাশ ঘটল। কারন গ্রীসের কাছ থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশ সংগীতের পাঠ গ্রহণ করেছে, আর গ্রীসের সংগীত মিসরীয় সংগীতের কাছে যে বহুলাংশে ঋণী, গ্রীক পণ্ডিত পিথাগোরাস (570 BC- 495 BC) মিশরে গিয়েছিলেন গণিত ও অন্যান্য বিদ্যা শিক্ষা অর্জন করতে, এর মধ্যে সংগীতবিদ্যাও ছিল। এছাড়াও বাণিজ্যিক কারনে প্রাচীন সভ্যদেশগুলির মধ্যে সাংগীতিক উপাদানেরও আদান-প্রদান চলত। তাই প্রাচীন সভ্যদেশগুলির মধ্যে দেখা যায় সর্বত্রই melody ধর্মী Modal music প্রচলিত ছিল। Alain Daniclon (৪ অক্টোবর, ১৯০৭- ২৭ জানুয়ারি, ১৯৯৪)
ছিলেন একজন ফরাসি ইতিহাসবিদ, বুদ্ধিজীবী, সঙ্গীতজ্ঞ, ভারতবিদ এবং একজন বিখ্যাত পশ্চিমা ধর্মান্তরিত এবং হিন্দু ধর্মের শৈব সম্প্রদায়ের বিশেষজ্ঞ। ১৯৯১ সালে তিনি সংগীত নাটক আকাদেমি, ভারতের জাতীয় সংগীত, নৃত্য ও নাটকের জন্য পান সর্বোচ্চ সম্মান) এই প্রসঙ্গে বলেছেন-
“Greek music, like Egyptian music most probably had its roots in Hindu music, or, at least in that universal system of modal music of which the tradition has been fully kept only by the Hindus”২
এখানে Hindu music বলতে অবশ্যই ভারতীয় সংগীতকে বোঝানো হয়েছে। প্রাচীন গ্রীসে Dorian, Phrygian, Lydian, mixolydian ইত্যাদি যে Mood গুলি প্রচলিত ছিল, সেগুলির ভাব এবং প্রয়োগের তাৎপর্য সম্পর্কে বিখ্যাত দার্শনিক Aristotle (৩৮৪ খ্রিস্টপূর্ব- ৩২২ খ্রিস্টপূর্ব ) বলেন।
“Phrygian mode should be used to inspire enthusiasm and the Dorian to produce calm in a person. Many of these ideas were applied to the musical aducation,” …৩
হার্মোনির প্রচলন পাশ্চাত্য সংগীতে শুরু হয় অনেক পরে। স্বরলিখনের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল তার বহু আগেই। এই প্রসঙ্গে শ্রী দীপঙ্কর সেন বলেছেনঃ
“গ্রীকদের আগে পৃথিবীর অন্য কোন জাতিই গানের সুরকে বেঁধে রাখবার চেষ্টা করেছেন বলে জানা যায়নি। আদি যুগের স্বরলিপি কোনমতেও নিখুঁত ছিলনা। তবে সর্বপ্রকার দোষ ত্রুটি থাকা সত্বেও সঙ্গীতকলার ভবিষ্যৎ অগ্রগতির দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছিল সেই প্রাথমিক স্বরলিপি। গ্রীকরা তাঁদের বর্ণমালার অক্ষরগুলিকে স্বরলিপি লিখবার জন্য ব্যবহার করতেন। সঙ্গীতের ‘শার্প’ অংশগুলির নির্দেশক চিহ্ন হিসাবে অক্ষরগুলিকে উল্টো করে লেখা হত। প্রাথমিক স্বরলিপির মধ্যে বহু জটিলতা থাকলেও গ্রীকদের প্রাচীন সঙ্গীত এবং বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে একটি সহজ, সরল সৌন্দর্য ছিল।“৪
রোমানরা গ্রীকদের কাছ থেকে সংগীত শিক্ষা করেছিল। অন্যান্য দেশের মত ধর্মীয়-উপাসনা ও যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য রোমেও সংগীত চর্চা প্রসার লাভ করল। খৃষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দী থেকে ইউরোপে সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে গির্জাগুলিতে লিখিত গায়ক নিযুক্ত করার উদ্দেশ্যে। সেইন্ট এম্ব্রস (৩৪০-৩৯৭ খ্রিষ্টাব্দ) এবং সেইন্ট গ্রেগরি (৫৪০-৬০৪ খ্রিষ্টাব্দ ) এই সময়ে সংগীত সংস্কারে নিজেদের নিয়োগ করেন। তাঁরা সমকালীন ধর্মসংগীতকে সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল করার জন্য কতগুলি নতুন শৈলীর উদ্ভাবন করেন।
এ পর্যন্ত রোমে স্বরলিপি ব্যবহার তেমন ভাবে ছিল না। নবম শতক থেকে ( কোনো কোনো মতে ষষ্ঠ শতক) ক্যাথিড্রাল বা রোমান-ক্যাথলিক চার্চে সুরকে অবিকৃত অবস্থায় ধরে রাখার প্রচেষ্টা শুরু হয়। প্রচলিত গ্রেগারিয়ান চ্যান্ট অথবা প্লেইন চ্যান্ট এতদিন স্মৃতি থেকেই গাওয়া হত। কিন্তু নবম শতকের শেষ দিক থেকে কিছু কিছু চিহ্ন, যেমন বিন্দু, ড্যাশ ইত্যাদি দিয়ে সুরের উঠা নামা বোঝানো শুরু হল। এই চিহ্নগুলিকে বলা হত ‘neume’ (বাদ্যযন্ত্রের স্বরলিপিতে, একটি বা ধারাবাহিক বাদ্যযন্ত্র পিচগুলির একটি গোষ্ঠীর জন্য একটি চিহ্ন, আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের পূর্বসূরি। খ্রিস্টান (যেমন গ্রেগরিয়ান, বাইজেন্টাইন) লিটারজিকাল গানের পাশাপাশি প্রথম দিকের মধ্যযুগীয় পলিফোনিতে ( অনেক কণ্ঠে বা অংশে সংগীত) এবং কিছু ধর্মনিরপেক্ষ মনোফোনিতে ( একটি সুরযুক্ত লাইন সমন্বিত সংগীত) নিউম ব্যবহার করা হয়েছে। প্রারম্ভিক নিউমগুলি গ্রীক পাঠ্য উচ্চারন থেকে বিকশিত হয়ে ধিরে ধিরে আকারে পরিবর্তিত হয়েছিল যা পিচ, দিক এবং কণ্ঠ অলঙ্কার দেখায়। এই কর্মহীন, বা কাইরোনোমিক, নিউমগুলি সেই সময়ের আধা-মৌখিক বাদ্যযন্ত্রের অনুশীলন অনুসারে একটি মুখস্ত সুরের কথা স্মরণ করতে সাহায্য করত ) সুরের সঠিক পরিবেশনে গায়কের স্মৃতিকে এই চিহ্নগুলি কিছুটা সাহায্য করত। কিন্তু এগুলি খুব নির্দিষ্ট বা পদ্ধতিগত ছিল না, গায়ক নিজেই শুধু চিহ্নগুলির অর্থ অনুধাবন করতে পারতেন, আর সুরটি উঠছে না নামছে তা বুঝতে পারতেন। সুরটি ঠিক কতখানি উঠছে বা কতক্ষন স্থায়ী হচ্ছে, এই চিহ্নদ্বারা তা কিছুই বোঝা যেত না।
নিম্নলিখিত উদাহরণটি এই চিহ্ন ব্যবহারের একটি নমুনা—
এই উদাহরণটিই বর্তমান পদ্ধতিতে লিখলে এইরকম দাঁড়াবে-
৯০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ গানের সুরটি বোঝা আর একটু সহজ হয়ে গেল। চড়াসুরের ক্ষেত্রে ‘neumes’ চিহ্নটি একটু উঁচুতে লেখা হতে লাগল, আর নিচু স্বরের চিহ্নটি একটু নিচে লেখা হল। তারও কিছুদিন পরে ‘F’ স্বরটিকে বোঝাবার জন্য গানের কথাগুলির ওপরে একটি লাল রঙের অনুভুম রেখা টানা শুরু হল। এরপরে গায়ক বুঝতে পারলেন যে গানের কোথায় কোথায় F note টি রয়েছে। অন্যান্য স্বরের অবস্থানের চিহ্নগুলি ঐ রেখাটির ওপরে বা নিচে লেখা হতে লাগল। কিছুদিন পরে আবার একটি হলুদ অথবা সবুজ রেখা টানা শুরু হ’ল লাল রেখাটির উপরিভাগে- যেটি Middle ‘C’ এই স্বরটিকে বোঝাতো। গানের ব্যবহৃত F এবং C স্বর গুলি ঐ রেখা দুটির ওপরে বিভিন্ন চিহ্ন দ্বারা লেখা হত। অন্যান্য স্বরের অবস্থান সুচিত হত আনুপাতিক ভাবে ঐ রেখার ওপরে বা নীচে যেমন-
Middle C————-হলুদ অথবা সবুজ রেখা
F————-লাল রেখা
ঐ লাল রেখাটি পরবর্তীকালে Bass clef এ F স্বরের অবস্থানকে সূচিত করতে থাকে এবং এর ফলে Bass clef কে F clef ও বলা হয়।
Guido d’ Arezzo (৯৯১-১০৫০) নামক একজন বিখ্যাত ইটালিয়ান পণ্ডিত সন্ন্যাসী (monk) কে Staff notation আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। শ্রী দীপঙ্কর সেন বলেছেনঃ
“প্রকৃতপক্ষে সুর নির্দেশনার কাজটিকে তিনি যে স্তরে নিয়ে গেলেন তারপর একটি সম্পূর্ণাঙ্গ অক্টেভের (সুরসপ্তকের) সুরের বিন্যাস বুঝে নেওয়া খুবই সহজ হয়ে দাঁড়াল।তিনিই প্রথম প্রতিটি note-এর স্বতন্ত্রভাবে নামকরণ করেন।”৫
প্রথম দিকে চারলাইনের staff প্রচলিত হয়। স্বরের চিহ্নগুলি এই লাইনের ওপরে বা লাইনের অন্তর্বর্তী ফাঁকা জায়গায় (space) বসানো হতো। এই Staff আবিষ্কারের ফলে স্বরগুলির অবস্থান যে শুধু সঠিকভাবে চিহ্নিত করা গেল, তাই নয়। সুরকারদের নতুন সুরসৃষ্টির এক বিশেষ সহায়ক হিসেবে এর মুল্য অপরিসীম হয়ে উঠলো। ক্যাথলিক চার্চের প্রাচীন গানগুলি এখনো এই চারলাইন বিশিষ্ট Staff-এই লেখা। যেমন-
অনেকে মনে করেন যে Guido D’ Arezzo ( বা Guido Aretinus) এর স্বরনাম জ্ঞ্যাপক একটি কবিতা থেকেই আজকের Tonic Solfa পদ্ধতির উৎপত্তি হয়েছিল। কবিতাটির প্রতি লাইনের প্রথমে স্বরনাম গুলি বসানো ছিল, যেমন UT, RF, MI, FA, SOL, LA ইত্যাদি। বর্তমানে কেবল ut এর বদলে প্রথম স্বরটির নাম হয়েছে Doh, এবং স্বরগুলির গতি C, D, E, F, G, A-র মতো। Guido কেবল নামকরণ করেননি, বিভিন্ন গানের কথায় স্বরগুলির প্রয়োগ করে দেখিয়েছিলেন এর ব্যবহার। স্বরলিপির ইতিহাসে এটিও একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
চার লাইনের staff আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে Chant Notatin এর স্বরস্থান নির্দিষ্ট হলেও স্বরগুলির স্থায়িত্বের মান সম্পর্কে ধারণা করা কিন্তু অসম্ভবই রয়ে গেল। ১২০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ পাঁচ লাইনের staff প্রচলিত হ’ল এবং ক্রমশঃ স্বরের স্থায়িত্বের মান (সময় ইত্যাদি) বোঝাবার পন্থাও আবিষ্কৃত হ’ল। ত্রয়োদশ চতুর্দশ শতক নাগাদ স্বরগুলির চেহারা পরিবর্তিত হ’ল এবং মান নির্দেশক কতগুলি চিহ্ন (stem বা দাঁড়ি ইত্যাদি) স্বরের সঙ্গে যুক্ত হ’ল। যেমন ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের একটি স্বরলিপির উদাহরণ-
এখানে দেখতে পাচ্ছি সব স্বরই সাদা এবং চৌকো অথবা বরফি। ১৬০০ অব্দ নাগাদ চৌকো এবং বরফি আকৃতির বদলে গোল স্বরচিহ্ন ব্যবহৃত হতে লাগল এবং প্রয়োজনানুসারে সাদা অথবা কালো স্বর (মান অনুযায়ী) বিভিন্ন চিহ্নসহ staff notation এর পরিণত রূপ প্রকাশ করতে আরম্ভ করল।
বর্তমান পদ্ধতি- বর্তমান পদ্ধতির দীর্ঘ আলোচনা এখানে নিষ্প্রয়োজন। তবু কয়েকটি বিষয়ের বা চিহ্নের গুরুত্বর কথা ভেবে সেগুলি সংক্ষেপে উল্লিখিত হ’ল।
Clef চিহ্ন- Staff- এরসঙ্গে সঙ্গে Clef চিহ্নের ব্যবহারও প্রবর্তিত হ’ল। ‘Clef’ শব্দটির অর্থ ফরাসি ভাষায় “চাবি” (Latin Klavis)। চাবি বলা হয় এই কারনে যে স্বরলিপি রহস্য উদ্ঘাটনের দ্বার উন্মোচন করে এই চিহ্নটি। প্রথমদিকে অনেকগুলি Clef ব্যবহৃত হ’ত কিন্তু বর্তমানে Treble ও Bass Clef এর ব্যবহারই স্থায়িত্ব লাভ করেছে বলা যায়। আমরা পূর্বে বলেছি যে staff প্রচলিত হবার আগেই গানের মধ্যে একটি লাল অনুভূম রেখা F স্বরটিকে সূচিত করত এবং পরে সেটিই Bass Clef এর সূচক হয়ে দাঁড়ায়। এখন পাঁচ লাইনের staff এ Bass Clef এর চিহ্নটি বসানো হয় এই ভাবে-
Staff এর যে লাইনে F স্বরের অবস্থান, চিহ্নটি আঁকা শুরু হয় সেই লাইন থেকে, এবং ঐ লাইনের ওপরে ও নীচে দুটি বিন্দু দেওয়া হয়। পিয়ানো বাজাবার সময় বাঁ হাতে এই Bass Clef এর স্বরগুলি বাজানো হয়ে থাকে। Cello প্রভৃতি গম্ভীর বাদ্য যন্ত্র ও নীচুস্বরের (খাদের) গলার জন্য এই Clef উপযোগী।
আধুনিক কালে G Clef বা Treble Clef এর ব্যবহারই সব থেকে বেশি। এই চিহ্নটিও আঁকা শুরু হয় সেই লাইন থেকে, staff এর যে line এ G স্বরের অবস্থান। অর্থাৎ-
Middle C স্বরটির অবস্থান দুটি Clef এর মাঝখানে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে Treble Clef এ নীচ থেকে ধরলে line এ অবস্থিত স্বরগুলি E, G, B, D, F এবং মধ্যবর্তী ফাঁকা (space) জায়গার স্বরগুলি যথাক্রমে F, A, C, E Bass Clef এর বেলায় নীচ থেকে ধরলে লাইনের স্বরগুলি হল G, B, D, F এবং A একইভাবে ফাঁকা জায়গার স্বরগুলি হল Bass A, C, E, G।
বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের সাধারনতঃ এই দুটি Clef-ই শেখানো হয়। কিন্তু বিগত দিনের সুরকারদের রচনাগুলি বোঝার জন্য আরও একটি Clef সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। সেটি C Clef, এই Clef টিকে একটি চলমান বা Movable Clef-ও বলা যায়। কারণ Staff এর বিভিন্ন লাইনে এই Clef এর স্বরের অবস্থান দেখানো হয়েছে। আমরা যেমন মন্দ্র, মধ্য ও তার- এই তিনটি স্থানকে প্রধানতঃ মানি, পাশ্চাত্য সংগীতে সেরকম Bass, Tenor, Alto ও Soprano এই চারটি স্থানকে মানা হয়। C Clef এ Middle C স্বরটি যে line এ অবস্থান করে, সেই লাইনটিকে মাঝখানে রেখে তার ওপরে ও নীচে বিপরীত ভাবে দুটি উল্টো C চিহ্ন লেখা হয়। যেমন-
বর্তমান স্বরলিপি পদ্ধতিতে সাদা অথবা কালো, দাঁড়িছাড়া বা দাঁড়িযুক্ত- সবরকম স্বরচিহ্নই ব্যবহার করা হয়, স্বরের মান বা মাত্রাসংখ্যা অনুসারে। দাঁড়িচিহ্ন বা Stem স্বরের ডান দিকে না বাঁদিকে, কোন দিকে যুক্ত হবে, তারও বিশেষ নিয়ম আছে। এ ছাড়াও বর্তমান স্বরলিপি পদ্ধতিতে ছন্দ,পুনরুক্তি ইত্যাদি বোঝাতে আরও নানারকম চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, স্বরলিপিটিকে নিখুঁত এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে। পাশ্চাত্য স্বরলিপির ক্রমবিকাশে সেগুলির গুরুত্বও অনস্বীকার্য সে সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনার অবকাশ এখানে নেই, তবু আমরা দেখলাম কিভাবে neumes চিহ্নের ব্যবহার থেকে শুরু হয়ে পাশ্চাত্য স্বরলিপি পদ্ধতি তার পরিণত অবস্থায় পৌঁছেছে।
তথ্যসুত্র : এই আলোচনায় ব্যবহৃত উদাহরণগুলি (১, ২, ৩ ও ৪) Grolier Incorporated Newyork এর THE NEW BOOK OF KNOWLEDGE (Vol, 12) থেকে নেওয়া।
উল্লেখপঞ্জী
১.রোমান ক্যাথলিক Service এর প্রধান সাংগীতিক অংশকে বলা হয় Mass. Madrigal হল অনেকগুলি কণ্ঠের জন্য রচিত Chamber music এর একটি গুরুত্বপূর্ণ গান। আর Motet হল সমবেত কণ্ঠের ভক্তিসংগীত, প্রধানত Latin ভাষায় রচিত। এতে মধ্যে মধ্যে একক কণ্ঠের গান ও যন্ত্রসংগীতের সহযোগিতা থাকে।
২.Aliain Danielon (1943), Introduction to the study of musical Scales, London
৩.The new book of knowledge. Vol. 1 (Page-247)
৪. দীপঙ্কর সেন (১৩৯৮), য়ুরোপীয় সঙ্গীতের কাহিনী, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃ-২
৫. তদেব- পৃঃ ৪ ও ৫
Author: Mohammed Shoeb
Article Received: 21 March 2023, Article Accepted: 24 March 2023, Article Published: 01 May 2023