পণ্ডিত বি. এন .ভাতখণ্ডেজীর ঠাট কেরামতি
দীপঙ্কর হালদার
উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ইতিহাসে পণ্ডিত ভাতখণ্ডেজী চীর স্মরণীয় হয়ে আছেন তার দশ ঠাটের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত রাগ রাগিনীর অত্যাধুনিক এক বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রদানের জন্য। কিন্তু এই দশটি ঠাটের ব্যবহৃত স্বর সম্পর্কে আমাদের প্রতি প্রত্যেকের জ্ঞান ও ধারণা যথেষ্ট থাকলেও তার অন্তর্দৃষ্টি মূলক বৈজ্ঞানিক স্বর স্থাপন, স্বর চালন ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে কিন্তু সবাই জ্ঞাত নয়। এতদিন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অধ্যায়নে আমারা শুনে এসেছি ঠাট-রাগ বিশ্লেষণ শব্দটি। যার মূল আলোচ্য বিষয়ের পরীধিতে আলোচিত হয় এক ঠাটের অন্তর্ভুক্ত অজস্র রাগ রাগিনী গুলি। কিন্তু ইতিপূর্বে সঙ্গীত শাস্ত্রের কোথাও আলোচিত হয় নাই এক ঠাটের অন্তর্ভুক্ত একাধিক ঠাট শব্দটির। এক ঠাটের অন্তর্ভুক্ত একাধিক রাগ রাগিনী সৃষ্টি হওয়া যেমন অসম্ভব নয় অনুরূপ গভীর অন্তর্দৃষ্টিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির একটি পরীক্ষনের মধ্যে দিয়ে দেখলে দেখা যাবে পণ্ডিত জীর সৃষ্ট ঠাট গুলির কয়েকটি ঠাটের ব্যবহৃত স্বর গুলির চালনায় অন্যান্য একাধিক ঠাটও সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব নয়। অর্থাৎ একটি ঠাট বা মেলের ব্যবহৃত স্বরগুলির ঠিকঠিক ভাবে চালনা করলে একই ব্যবহৃত স্বরে অন্যান্য ঠাট বা মেলের সৃষ্টি হওয়া সম্ভব। এই প্রবন্ধে পণ্ডিত ভাতখণ্ডের দশটি ঠাট সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক স্বর স্থাপনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
ঠাট ও মেল একই বিষয়ের দুইটি ভিন্ন নাম। ঠাট শব্দটি উত্তর ভারতের সঙ্গীত শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয় অনুরূপ মেল শব্দটি দক্ষিণ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রযোজ্য হয়। ঠাটের সুত্রপাত যেহুতু মেল তাই এই প্রসঙ্গে দক্ষিণ ভারতীয় মেলের সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য আলোচনা করা বিশেষ প্রয়োজন। ঠাট সম্পর্কে উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত শাস্ত্রীদের জ্ঞান যথেষ্ট থাকলেও দক্ষিণ ভারতে এর ভিন্ননাম মেল সম্পর্কে জ্ঞান অতখানি স্বচ্ছ নয়। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে দক্ষিণ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বাহাত্তর মেল থেকে যেহুতু উত্তর ভারতীয় সঙ্গীতে দশ ঠাটের সৃষ্টি হয়েছে। সেহেতু দক্ষিণ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে পণ্ডিত ব্যঙ্কটমুখীর নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য যিনি এই বাহাত্তরটি মেলের সৃষ্টি করেছেন। তবে মেল সৃষ্টির পুরো বিষয়টি যে গানিতিক হিসাবে যে সৃষ্ট [1] তা আর পুনরায় বলার অপেক্ষা রাখে না। গানিতিক তথ্যটি এইরূপ একটি সপ্তকের অন্তর্গত শুদ্ধ ও বিকৃত মিলিয়ে মোট বারোটি স্বরকে দুই ভাগে ভাগ করে তা পূর্ব মেলার্ধ ও উত্তর মেলার্ধ নাম দিয়ে একের সঙ্গে অন্যান্য দের মেল বন্ধনে বাহাত্তর মেলের রচনা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে শুদ্ধ মধ্যম যুক্ত ছত্রিশ মেল পাওয়া যাবে যেগুলিকে পূর্ব মেল বলে আখ্যা ব্যাখ্যা করা হয় এবং তীব্র মধ্যম যুক্ত বাকি ছত্রিশ মেল গুলিকে উত্তর মেল রূপে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। মেল সৃষ্টির এই কাঠামো কে উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত গুনী পণ্ডিত ভাতখণ্ডেজী একটু ভিন্ন চিন্তা ধারার মধ্যে দিয়ে নিয়েছেন। তার মতে এতগুলো মেল বা ঠাটের প্রয়োজনীয়তা নেই। ঠাট বা মেল শব্দের অর্থ যেহেতু কাঠামো। তাই বিচার বিবেচনার মধ্যে দিয়ে সামান্য কয়টা ঠাট বা মেল নির্বাচন করা বিশেষ প্রয়োজন যেগুলির অন্তর্ভুক্ত থাকবে সমস্ত রাগ রাগিনী গুলি। পণ্ডিত ভাতখণ্ডেজী দক্ষিণ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের থেকে সেই জন্য পছন্দ মতো দশটি ঠাট নির্বাচন করেছিলেন [2]। কিন্তু ঠাট বিশ্লেষণ পর্বে এমন কয়েকটি ঠাট তিনি নির্বাচন করেন যে তার উপর সত্যিই গবেষণা কার্যের বিশেষ দাবি রাখে।
কর্নাটক সঙ্গীতে দুই মেলার্ধের সাহায্য যেমন বাহাত্তর মেলের সৃষ্টি হওয়া সম্ভব অনুরূপ উত্তর ভারতীয় সঙ্গীতে এই গানিতিক পদ্ধতিতে বত্রিশ ঠাটের সৃষ্টি করা সম্ভব। প্রখ্যাত সঙ্গীতবিদ ড. বিমল রায় সর্বপ্রথম একটি গানিতিক পদ্ধতির সাহায্যে সেই পরীক্ষা প্রথম স্থাপন করে দেখান [3]। ড. রায় বলেন যদিও এর মধ্যে দশটি মুখ্য ঠাট। যেগুলি জনক ঠাট নামে পরিচিত কিন্তু বাকি বাইশটিকে সম্পূর্ণ জনক ঠাটের আখ্যা দেওয়া যায় না তার মুখ্য কারণ সেগুলির থেকে রাগ উৎপাদন ক্ষমতা নেই সেই হিসাবে [4]। দক্ষিণ ভারতীয় বাহাত্তর মেল যে কারণে উত্তর ভারতীয় সঙ্গীতে গ্রহণযোগ্য হয়নি তার কয়কটি কারণের কথা বিশেষ ভাবে অনুমান করা যেতে পারে। তা হল, প্রথমত: দক্ষিণ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে একই স্বরের শুদ্ধ ও বিকৃত এই দুইটি রূপের পারস্পরিক প্রয়োগ স্বীকার্য ও গ্রহনযোগ্য হয়। কিন্তু উত্তর ভারতীয় সঙ্গীতে এই তথ্য স্বীকৃত হয় না। উত্তর ভারতের অধিকাংশ সঙ্গীত গুনীরা রাগ পরিবেশনের ক্ষেত্রে একই স্বরের দুইটি রূপ (শুদ্ধ ও বিকৃত) পরস্পর একসঙ্গে প্রয়োগের তথ্যকে ভুল বলে মনে করা হয় (ব্যতিক্রম ললিত)। কিন্তু দক্ষিণ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে মেল সৃষ্টির গোড়া পত্তন তথা গানিতিক রচনায় সেই রূপ স্বর সমষ্টি সাজানোর বিশেষ প্রয়োজন হয়।। সেখানে পূর্ব মেলার্ধের স্বরগুলি সাজানো হয় ― সা রে রে গা গা মা/হ্ম ও উত্তর মেলার্ধের স্বর গুলি সাজানো হয়― পা ধা ধা নি নি র্সা। কিন্তু হিন্দুস্থানী পদ্ধতিতে এই একই সূত্র কে অনুসরণ করলেও সেখানে একই স্বরের দুই রূপ ( শুদ্ধ ও বিকৃত) ক্রমিক প্রয়োগ যেহেতু নিষিদ্ধ তাই সেই অনুযায়ী বত্রিশ ঠাটের বেশী সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। পূর্ব মেলার্ধের সঙ্গে উত্তর মেলার্ধের মেল বন্ধনে দক্ষিণ ভারতীয় সঙ্গীতে বাহাত্তর মেল সৃষ্টি হবে আর উত্তর ভারতীয় সঙ্গীতে বত্রিশ ঠাটের সৃষ্টি হবে। [i] দ্বিতীয়তঃ দক্ষিণ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে যে বারোটি মেলচক্রের সন্ধান মেলে উত্তর ভারতীয় সঙ্গীতে তার কোনো গুরুত্ব বা অস্তিত্ব নেই। কারণ ঠাট বা মেল যাইহোক না কেন তার মধ্যে দিয়ে রাগ সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক স্বরস্থাপন থাকা বিশেষ প্রয়োজন। কিন্তু দক্ষিণ ভারতে তার পরিবর্তে বারোটি মেল চক্রের উপর অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই বারোটি মেল চক্রের নাম – ইন্দু, নেত্র, অগ্নি, বেদ, বান, ঋতু, ঋষি, বসু, ব্রহ্মা, দিসি, রুদ্র, ও আদিত্য। এক একটি মেল চক্রের অধীনে ছয়টি করে মেল রাখা হয়েছে। এই চক্র গুলি নাকি শারীরিক বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ (gland) সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু হিন্দুস্থানী স্বরলিপি পদ্ধতির স্রষ্টা পণ্ডিত ভাতখণ্ডে ঠাটের অন্তর্ভুক্ত রাগ সৃষ্টির উপর অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তৃতীয়ত, মেলের সংখ্যা গানিতিক হিসাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। সৌন্দর্য শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে নয়। কিন্তু পণ্ডিত ভাতখণ্ডেজী যে দশটি ঠাটের নির্বাচন তথা রচনা করেন তা একদিকে যেমন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সৃষ্ট অন্যদিকে সৌন্দর্য শাস্ত্রের ভিত্তিতেও গঠিত। যে কারণে অসংখ্য রাগ রাগিনী গুলি পণ্ডিতজীর ঠাট রাগ বর্গীকরণের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
এই প্রবন্ধে পণ্ডিত বি. এন. ভাতখণ্ডের বৈজ্ঞানিক ঠাট নির্মাণের বৈজ্ঞানিক কিছু তথ্য পরীক্ষনের মধ্যে দিয়ে দেখানো হবে। বিষয়টির সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর পূর্বে সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ের কয়েকটি পরীক্ষনের জন্যে একটি হারমোনিয়াম বাদ্যের বিশেষ প্রয়োজন। তবে পরীক্ষন পর্যায়ে যাওয়ার পূর্বে পণ্ডিতজীর সৃষ্টি সেই দশটি ঠাটের [5]নাম ও তার ব্যবহৃত স্বরাবলি, এছাড়াও দক্ষিণ ভারতীয় যে মেল থেকে এসেছে এই দশটি ঠাটের নাম সম্পর্কে প্রথমে একটু আলোচনা করতেই হয়।
দশ ঠাটের নাম | ঠাট গুলির ব্যবহৃত স্বরসমূহ |
বিলাবল কল্যাণ কাফি আশাবরী ভৈরবী খাম্বাজ পূর্বী ভৈরব মারাবা তোড়ী | বিলাবল ঠাটে সব শুদ্ধ স্বর ব্যবহৃত হয় কল্যাণ ঠাটে মধ্যম তীব্র ও বাকি সব শুদ্ধ স্বরের ব্যবহার হয়। কাফি ঠাটে গান্ধার নিষাদ কোমল ও বাকি সব শুদ্ধ স্বরের ব্যবহার হয়। আশাবরী ঠাটে গান্ধার, ধৈবত, নিষাদ কোমল ও বাকি সব শুদ্ধ স্বরের প্রয়োগ। ভৈরবী ঠাটে ঋষভ গান্ধার ধৈবত নিষাদ কোমল ও বাকি সব শুদ্ধ স্বর। খাম্বাজ ঠাটে কোমল নিষাদ ও বাকি সব শুদ্ধ স্বরের ব্যবহার। পূর্বী ঠাটে ঋষভ ধৈবত কোমল, মধ্যম তীব্র ও বাকি সব শুদ্ধ স্বরের প্রয়োগ। ভৈরব ঠাটে ঋষভ ও ধৈবত কোমল বাকি সব শুদ্ধ স্বরের প্রয়োগ হয়। মারাবা ঠাটে ঋষভ কোমল ,মধ্যম তীব্র ও বাকি সব শুদ্ধ স্বরের প্রয়োগ হয়। তোড়ী ঠাটে ঋষভ গান্ধার ধৈবত কোমল, মধ্যম তীব্র ও বাকি সব শুদ্ধ স্বর। |
দক্ষিণ ভারতীয় যে মেলগুলি হতে উত্তর ভারতীয় দশটি ঠাট এসেছে
উত্তর ভারতীয় দশ ঠাট | দক্ষিণ ভারতীয় যে মেল নামে পরিচিত |
1. বিলাবল 2. কল্যাণ 3. কাফি 4.আশাবরী 5. ভৈরবী 6. খাম্বাজ 7. পূর্বী 8. ভৈরব 9. মারাবা 10. তোড়ী | 1. ধীরশঙ্করাভরণম্ 2. মেচ কল্যাণী 3. খরহরপ্রিয়া 4. নট ভৈরবী 5. হনুমত তোড়ী 6. হরি কম্ভোজী 7. কামবর্ধনী 8. মায়ামালব গৌলম 9. গমন প্রিয়া 10. শুভপন্তুবরালী |
এইবার পরীক্ষণ পর্বে যাওয়া যাক। পরীক্ষার জন্যে যে হারমোনিয়ামটি নেওয়া হবে তার কোনো একটি স্কেলকে [6] নির্বাচন করে উপরিউক্ত এই ছয়টি ঠাটের ( ব্যতিক্রম পূর্বী, মারাবা, টোড়ি ও ভৈরব) কোনো একটি ঠাট কয়েকবার বাজাতে হবে। এইবার শিল্পী যে ঠাটটি নির্বাচন করবে তার ব্যবহৃত স্বরগুলি হারমোনিয়ামের যে সব পর্দা গুলির উপর স্থাপিত হবে সেগুলিকে মনে রাখতে হবে। দেখা যাবে হারমোনিয়ামের ওই একই পর্দা গুলির ক্রমিক প্রয়োগে এই ছয়টি ঠাটের অন্যান্য কয়েকটি ঠাট সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। তবে এই পদ্ধতিতে যে ঠাট গুলির সৃষ্টি হবে তা অন্যান্য বিভিন্ন স্কেলের ঠাট রূপে পরিচিত হবে। কিন্তু পর্দা গুলির কোনোরূপ পরিবর্তন হবে না। এই পরীক্ষার জন্য হারমোনিয়ামের (C scale) ‘সি’ স্কেলটি নির্বাচন করে তাতে আমি প্রথমে বিলাবল ঠাটের ব্যবহৃত স্বর গুলির ক্রমানুসারে প্রয়োগ করলাম ।
ঠাট – বিলাবল
মূল ঠাট বিলাবল ― সা রে গা মা পা ধা নি র্সা।
প্রথম পরীক্ষণ
(First Analysis)
সি’ স্কেলে বিলাবল ঠাটটির স্বরগম কয়েকবার বাজানোর পর এবার ষড়জের পরিবর্তে ওই স্কেলের ঋষভ কে ষড়জ রূপে ধরতে হবে। ঋষভকে ষড়জ ধরে ক্রমানুসারে ওই একই স্বরগুলির প্রয়োগ করলে দেখা যাবে নতুন একটি ঠাটের জন্ম হচ্ছে। এক্ষেত্রে তার সপ্তকের একটি স্বরকে বাড়াতে হবে। পরীক্ষাটি নিম্নে দেখানো হল ;
Scale – C
মূল ঠাট বিলাবল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে |
ঋষভকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |
কাফি ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
প্রথম পরীক্ষণে ঋষভ কে ষড়জ ধরা হলে দেখা যায় হিন্দুস্থানী কাফি ঠাটের জন্ম হয়। অর্থাৎ এই পরীক্ষণে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে ‘সি’ স্কেলের বিলাবল ঠাটের ব্যবহৃত স্বর সমূহে কাফি ঠাটের রাগ রাগিনী গুলি বাজানো সম্ভব। তবে তার স্কেল পরিবর্তন হয়ে ‘ডি’ তে গিয়ে দাঁড়াবে।
দ্বিতীয় পরীক্ষণ
(Second Analysis)
প্রথম পরীক্ষনে বিলাবল ঠাটের ঋষভ কে ষড়জ ধরার পর দ্বিতীয় পরীক্ষণে এই ঠাটের গান্ধার কে ষড়জ রূপে ধরে পূর্বের স্বর গুলিকে ধরে পরীক্ষা করা বিশেষ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তার সপ্তকের দুটি স্বর অতিরিক্ত ব্যবহার করতে হবে। যথা― তার সপ্তকের ঋষভ ও গান্ধার। তবে মনে রাখতে হবে পূর্বে যে স্কেল ছিল সেই স্কেলেই প্রতিটি পরীক্ষা চলতে থাকবে স্কেলের কোনোরূপ পরিবর্তন হবে না। পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে দেখা যাক দ্বিতীয় পরীক্ষনে কোন ঠাটের সৃষ্টি হয় ,
Scale – C
মূল ঠাট বিলাবল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা |
গান্ধারকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||
ভৈরবী ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
দ্বিতীয় পরীক্ষণে গান্ধার কে ষড়জ রূপে ধরে বিশ্লেষণ করার পর দেখা যাবে এই পরীক্ষা পর্বে হিন্দুস্থানী দশটি ঠাটের অন্তর্ভুক্ত ভৈরবী ঠাটটি উৎপন্ন হচ্ছে। অর্থাৎ ‘সি’ স্কেলে বিলাবল ঠাটের গান্ধার কে ষড়জ রূপে ধরার পর ওই ব্যবহৃত স্বর সমূহে ভৈরবী ঠাটের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত রাগ গুলিকে অনায়াসে গাওয়া সম্ভব। যদিও হারমোনিয়ামের ব্যবহৃত পর্দা গুলির একটিরও পরিবর্তন না হলেও উহা ( E Scale) ‘ই’ স্কেলের ভৈরবী ঠাটের স্বর সমষ্টি বা স্বরগমের সৃষ্টি করবে।
তৃতীয় পরীক্ষণ
(Third Analysis)
তৃতীয় পরীক্ষন পর্বে কোন ঠাটের জন্ম নেয় তার সঠিক সীদ্ধান্তে পৌঁছনোর জন্যে আগের ন্যায় একটি স্বরকে বাড়িয়ে গান্ধারের পরিবর্তে মধ্যম কে ষড়জ ধরা লাগবে। সেজন্য আরোহক্রমের সপ্তস্বর তার সপ্তকের মধ্যম পর্যন্ত ব্যবহার করার বিশেষ প্রয়োজন। এখন আমি ‘সি’ স্কেলে বিলাবল ঠাটের মধ্যমকে ষড়জ রূপে ধরে পূর্বের ন্যায় অনুসন্ধান করব। দেখা যাক আর অন্যান্য কোন ঠাটের রাগ রাগিনী গুলি এই একই পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত হয়।
Scale – C
মূল ঠাট বিলাবল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা |
মধ্যমকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |||
কল্যাণ ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা |
পূর্বের ন্যায় এই বিশ্লেষণ পর্বেও একই ভাবে একটি নতুন ঠাটের জন্ম হল। বিলাবল ঠাটের মধ্যম কে ষড়জ রূপে ধরে আরোহক্রমে তার সপ্তকের মধ্যম পর্যন্ত যেতে হবে। দেখা যাবে নতুন হিন্দুস্থানী কল্যাণ ঠাটের স্বরসমষ্টির সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থাৎ ওই একই পর্দাগুলির প্রয়োগে কল্যাণ ঠাটের রাগ রাগিনী গুলি বাজানো সম্ভব। তবে তা ( F scale). ‘এফ’ স্কেলের কল্যাণ ঠাট রূপে স্থায়িত্ব লাভ করবে।
চতুর্থ পরীক্ষণ
( Fourth Analysis)
চতুর্থ পরীক্ষণে আমরা পূর্বের মতো আরো একটি স্বরকে বাড়িয়ে তাকে ষড়জ রূপে ধরব। এবার আরোহ ক্রমে তার সপ্তকের পঞ্চম পর্যন্ত যেতে হবে। অর্থাৎ এই অনুসন্ধান পর্বে ‘সি’ স্কেলের বিলাবল ঠাটের পঞ্চমকে ষড়জ রূপে ধরে তারপর বিচার বিশ্লেষণ করা বিশেষ প্রয়োজন। দেখা যাক এই পদ্ধতিতে ওই একই পর্দায় আর অন্য কোন ঠাটের রাগ রাগিনী সৃষ্টি হওয়া সম্ভব !
Scale – C
মূল ঠাট বিলাবল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা |
পঞ্চমকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||||
খাম্বাজ ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
পূর্ব পর্বের বিশ্লেষণ গুলির মতো এই পর্বের পরীক্ষণেও একটি স্বর বাড়াতেই দেখা গেল হিন্দুস্থানী সঙ্গীতের মূল দশটি ঠাটের অন্যতম প্রধান এক ঠাট খাম্বাজ ঠাটের জন্ম হল। অর্থাৎ সি স্কেলে বিলাবল ঠাটের পঞ্চমকে ষড়জ রূপে ধরার পর ওই একই পর্দায় খাম্বাজ ঠাটের রাগ রাগিনী গুলির প্রতিটি বাজানো সম্ভব। তবে তা ( C scale ) এর বিলাবল ঠাট হলেও প্রকৃত পক্ষে তা ‘জি’ স্কেলের (Scale-G) খাম্বাজ ঠাটই দাঁড়াবে।
পঞ্চম পরীক্ষণ
(Fifth Analysis)
এই পরীক্ষণ পর্বে আমি বিলাবল ঠাটের ধৈবত কে ষড়জ রূপে ধরে পর্যবেক্ষণ শুরু করব।
তবে এই পর্বে তার সপ্তকের আরো একটি স্বরকে বাড়িয়ে ধরতে হবে। পূর্বের পরীক্ষণে পঞ্চম পর্যন্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সেজন্য ক্রমান্বয়ে তার সপ্তকের ধৈবত পর্যন্ত স্বরকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধান করা হবে। এই পরীক্ষণে আর অন্য কি রাগ সৃষ্টি হতে পারে তা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে দেখে নেওয়া যাক।
Scale – C
মূল ঠাট বিলাবল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা | র্ধা |
ধৈবতকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |||||
আশাবরী ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
উপরিউক্ত এই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে বিলাবল ঠাটের ধৈবত স্বরটিকে ষড়জ রূপে ধরে তা তার সপ্তকের ধৈবত পর্যন্ত পৌছালেই আশাবরী ঠাটের রাগ রাগিনী গুলি সৃষ্টি হতে পারে। একই ব্যবহৃত পর্দায় নতুন আশাবরী ঠাটের সৃষ্টি হলেও তা প্রকৃত পক্ষে (A Scale) ‘এ’ স্কেলের আশাবরী ঠাট।
ষষ্ঠ পরীক্ষণ
(Sixth Analysis)
ষষ্ঠ পরিক্ষণ পর্বে স্বর সপ্তকের অন্তিম স্বর নিষাদ কে ষড়জ রূপে ধরে তারপর আরোহক্রমে ক্রমানুসারে তার সপ্তকের নিষাদ পর্যন্ত বাজাতে হবে। দেখা যাক এই পরিক্ষনে কোন ঠাট উৎপন্ন হতে পারে।
Scale – C
মূল ঠাট বিলাবল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা | র্ধা |
নিষাদকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |||||
অজ্ঞাত ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা |
ষষ্ঠ পরীক্ষণে নিষাদ কে ষড়জ রূপে ধরার পর যে স্বরগ্রামের সৃষ্টি হল তা পণ্ডিতজীর দশটি ঠাটের কোনোটির অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ আমরা জানি যদিও এর একেবারে পাশেই দুইটি ঠাট রয়েছে। এক তোড়ী অন্যটি ভৈরবী। কিন্তু ভৈরবী ঠাট রূপে বিবেচিত নয় এই কারণে এখানে তীব্র মধ্যমের সৃষ্টি হয়েছে। আবার অন্য দিকে তোড়ী ঠাট রূপে বিবেচিত নয় এই কারণে কোমল নিষাদের সৃষ্টির কারণে। অতএব এই পরীক্ষণে যে ঠাট টির সৃষ্টি হল তা হিন্দুস্থানী দশটি ঠাটের একটিরও অন্তর্ভুক্ত নয়।
বিলাবল ঠাটটির প্রতিটি পরীক্ষণে (নি ব্যতীত) সা থেকে ধা পর্যন্ত প্রতিটিতে একটি করে নতুন নতুন ঠাটের জন্ম নিল। এখন অন্যান্য ঠাট গুলিও এই একই ভাবে পরীক্ষনে দেখানো হবে।
এখন ভৈরবী ঠাট কে নিয়ে এই একই পরীক্ষণে দেখা যাবে সেই একই ছয়টি ঠাট ঘুরে ফিরে সৃষ্টি হচ্ছে। ভৈরবী ঠাট কে নিয়ে এই একই পরীক্ষণে ক্রমান্বয়ে যে ঠাট গুলির সৃষ্টি হতে দেখা গেছে তা হল – প্রথমে কল্যাণ ঠাটের সৃষ্টি হচ্ছে, দ্বিতীয়ে খাম্বাজ ঠাটের, তৃতীয়ে আশাবরী ঠাটের, চতুর্থে অজ্ঞাত ঠাটের, পঞ্চমে বিলাবল, ও ষষ্ঠে কাফি ঠাটের সৃষ্টি হবে। পরীক্ষাটি নীচে দেখানো হল
ঠাট – ভৈরবী
ঠাট ভৈরবী ― সা রে গা মা পা ধা নি র্সা।
Scale- C
First analysis
মূল ঠাট ভৈরবী – | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | |
ঋষভকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||
কল্যান ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Second analysis
মূল ঠাট ভৈরবী – | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা |
গান্ধারকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||
খাম্বাজ ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Third analysis
মূল ঠাট ভৈরবী – | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | মা |
মধ্যামকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |||
আশাবরী ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Fourth analysis
মূল ঠাট ভৈরবী – | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা |
পঞ্চম কে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||||
অজ্ঞাত ঠাটের সৃষ্টি | সা | রে | গা | মা | হ্মা | ধা | নি | র্সা |
Fifth analysis
মূল ঠাট ভৈরবী – | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা | র্ধা |
ধৈবত কে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |||||
বিলাবল ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Sixth analysis
মূল ঠাট ভৈরবী | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা | র্ধা | র্নি |
নিষাদকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||||||
কাফি ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
অনুরূপ কাফি ঠাট কে নিয়ে এই একই পরীক্ষনে ক্রমানুসারে ভৈরবী, কল্যাণ, খাম্বাজ, আশাবরী, অজ্ঞাত ঠাট, শেষে আশাবরী ঠাটের সৃষ্টি হবে।
ঠাট – কাফি
ঠাট কাফি – সা রে গা মা পা ধা নি র্সা।
Scale – C
First analysis
মূল ঠাট কাফি | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | |
ঋষভকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||
ভৈরবী ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Second analysis
মূল ঠাট কাফি | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা |
গান্ধারকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||
কল্যান ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Third analysis
মূল ঠাট কাফি – | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা |
মধ্যমকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |||
খাম্বাজ ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Fourth analysis
মূল ঠাট কাফি- | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা |
পঞ্চমকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||||
আশাবরী ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Fifth analysis
মূল ঠাট কাফি- | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা | র্ধা |
ধৈবতকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |||||
অজ্ঞাত ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | মা | হ্মা | ধা | নি | র্সা |
Sixth analysis
মূল ঠাট কাফি- | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা | র্ধা | র্নি |
নিষাদকে ষড়জ ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||||||
বিলাবল ঠাটের সৃষ্টি হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
আশাবরী ঠাটকে নিয়ে এই একই পরীক্ষণ করলে দেখা যাবে সেখানেও এই ছয়টি ঠাটের পুনঃপ্রকাশ। সেখানে প্রথমে অজ্ঞাত ঠাটের সৃষ্টি হচ্ছে, এরপর ক্রমানুসারে বিলাবল, কাফি, ভৈরবী, কল্যাণ, ও অবশেষে খাম্বাজের সৃষ্টি হবে।
ঠাট ― আশাবরী
ঠাট আশাবরী ― সা রে গা মা পা ধা নি র্সা।
Scale – C
First analysis
মূল | ঠাট | আশাবরী | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | |
ঋষভ | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |
অজ্ঞাত | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | মা | হ্মা | ধা | নি | র্সা |
Second analysis
মূল | ঠাট | আশাবরী | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | ||
গান্ধার | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |||
বিলাবল | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Third analysis
মূল | ঠাট | আশাবরী | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | |
মধ্যম | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||
কাফি | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Fourth analysis
মূল | ঠাট | আশাবরী | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা | |
পঞ্চম | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||||
ভৈরবী | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Fifth analysis
মূল | ঠাট | আশাবরী | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা | র্ধা | |
ধৈবত | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |||||
কল্যাণ | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Sixth analysis
মূল | ঠাট | আশাবরী | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা | র্ধা | র্নি | |
নিষাদ | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||||||
খাম্বাজ | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা |
কল্যাণ ঠাটেও সেই ঠাট গুলির একই ভাবে পুনরাবৃত্তি হবে। এই ঠাটটির পরীক্ষণে ক্রমান্বয়ে খাম্বাজ, আশাবরী, অজ্ঞাত ঠাট, বিলাবল, কাফি ও শেষে ভৈরবী ঠাটের আবির্ভাব হবে। পরীক্ষাটি নিম্নে দেখানো হল;
ঠাট ― কল্যাণ
ঠাট কল্যাণ ― সা রে গা হ্ম পা ধা নি র্সা।
Scale ― C
First analysis
মূল | ঠাট | কল্যাণ | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | |
ঋষভ | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |
খাম্বাজ | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Second analysis
মূল | ঠাট | কল্যাণ | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | |
গান্ধার | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||
আশাবরী | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Third analysis
মূল | ঠাট | কল্যাণ | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্হ্মা | |
মধ্যম | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |||
অজ্ঞাত | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Fourth analysis
মূল | ঠাট | কল্যাণ | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্হ্মা | র্পা | |
পঞ্চম | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||||
বিলাবল | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Fifth analysis
মূল | ঠাট | কল্যাণ | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্হ্মা | র্পা | র্ধা | র্নি | |
ধৈবত | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |||||
কাফি | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Sixth analysis
মূল | ঠাট | কল্যাণ | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্হ্মা | র্পা | র্ধা | র্নি | |
নিষাদ | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||||||
ভৈরবী | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
খাম্বাজ ঠাটের পরীক্ষণে প্রথমে আশাবরী ঠাটের জন্ম হয়, দ্বিতীয় পরীক্ষণে অজ্ঞাত ঠাটের, তৃতীয় পরীক্ষণে বিলাবল ঠাটের, চতুর্থ পরীক্ষণে কাফি ঠাটের, পঞ্চমে ভৈরবী ঠাটের, ষষ্ঠে কল্যাণ ঠাটের সৃষ্টি হচ্ছে।
ঠাট ― খাম্বাজ
ঠাট খাম্বাজ – সা রে গা মা পা ধা নি র্সা।
Scale- C
First analysis
মূল | ঠাট | খাম্বাজ | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | |
ঋষভ | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |
আশাবরী | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Second analysis
মূল | ঠাট | খাম্বাজ | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | |
গান্ধার | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||
অজ্ঞাত | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Third analysis
মূল | ঠাট | খাম্বাজ | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা | |
মধ্যম | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |||
বিলাবল | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Fourth analysis
মূল | ঠাট | খাম্বাজ | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা | |
পঞ্চম | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||||
কাফি | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Fifth analysis
মূল | ঠাট | খাম্বাজ | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা | র্ধা | |
ধৈবত | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | |||||
ভৈরবী | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা |
Sixth analysis
মূল | ঠাট | খাম্বাজ | সা | রে | গা | মা | পা | ধা | নি | র্সা। | র্রে | র্গা | র্মা | র্পা | র্ধা | র্নি | |
নিষাদ | কে | ষড়জ | ধরে | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ¥ | ||||||
কল্যান | ঠাটের | সৃষ্টি | হল | সা | রে | গা | হ্মা | পা | ধা | নি | র্সা |
সিদ্ধান্ত :– উপরোক্ত এই পরীক্ষণ গুলির মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, পণ্ডিত বি. এন. ভাতখণ্ডেজীর ঠাট নির্মাণ সম্পূর্ণ গণিত ভিত্তিক দর্শন ভিত্তিক যা সম্পূর্ণ যুক্তি নির্ভর এক সাঙ্গীতিক তথ্য রূপে হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মহলে বিবেচিত হয়। পণ্ডিতজীর সৃষ্ট দশটি ঠাটের অন্যতম প্রধান ছয়টি ঠাট ( ব্যাতিক্রম– পূর্বী, মারাবা, টোড়ি ও ভৈরব) যেভাবে বিনি সূতার মালার মতো একে অন্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তা সত্যিই অত্যন্ত পাণ্ডিত্য তথা বিশেষ গুণপানার দাবি রাখে। এখন এই পরীক্ষণ গুলির মধ্যে দিয়ে যে অজ্ঞাত তথ্যগুলির অনুসন্ধান সুসম্পন্ন হল সে সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন।
- একটি ঠাটের ব্যবহৃত স্বরসমূহে অন্যান্য বিভিন্ন ঠাট গুলি লুকায়িত থাকায় স্কেল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ওই একই পর্দার প্রয়োগে অন্যান্য বিভিন্ন ঠাটের অন্তর্ভুক্ত অজস্র রাগ রাগিনী মূহুর্তে সৃষ্টি হতে পারে।
- ঠাট ছাড়া রাগ রাগিনী সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব। ঠাট যেহেতু রাগ রাগিনী সৃষ্টির কাঠামো স্বরূপ মূল ভিত্তি। তাই পণ্ডিত ভাতখণ্ডেজী রাগ রাগিনী সৃষ্টির পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিক কিছু ঠাট নির্মাণের ওপর বিশেষ ভাবে জোর দিয়েছিলেন।
- মেল চক্রের সঙ্গে মেল সৃষ্টির সম্পর্ক যতখানি সুদৃঢ় দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক মতবাদের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে তারচেয়ে অনেক বেশী বৈজ্ঞানিক মতবাদের উপর দাঁড়িয়ে আছে পণ্ডিত ভাতখণ্ডের সৃষ্ট দশ ঠাটের স্বরস্থাপন। অদৃষ্ট শরীর চক্রের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতীয় মেলের সম্পর্ক জড়িত করা হয়েছে আর উত্তর ভারতীয় সঙ্গীতে ঠাটের সঙ্গে রাগ সৃষ্টির সৌন্দর্য ব্যাখ্যাকে জড়িত করা হয়েছে।
- পণ্ডিত ভাতখণ্ডেজীর সৃষ্ট মূল দশটি ঠাটের ওপর গবেষণা করে ড. বিমল রায় দেখিয়েছেন গানিতিক পদ্ধতি অনুসরণ করলেও সর্বোচ্চ বত্রিশ ঠাট নির্মাণ হওয়া সম্ভব। কিন্তু গানিতিক পদ্ধতিতে বত্রিশ ঠাটের জন্ম হলেও সব ঠাটে সৌন্দর্য রাগ রাগিনী সৃষ্টি হতে পারে না। যদিওবা রাগ সৃষ্টি হয় তার স্বরূপ অত্যন্ত ক্ষুদ্র প্রকৃতি লাভ করবে। এই গবেষণায় ড. রায় স্পশ্ট প্রমাণ করেও দেখিয়েছেন যে পণ্ডিত বি. এন. ভাতখণ্ডের সৃষ্ট ঠাট গুলির দ্বারা জনপ্রিয় রাগ রাগিনী সৃষ্টি করা সম্ভব। তার কারণ সেই ঠাট গুলির মধ্যে যাদুকরী স্বরচালনা করা হয়েছে।
- পূর্বী, মারাবা, ভৈরব ও টোড়ি ঠাট ও সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে প্রতঃকালিন রাগ গুলির দিকে বিশেষ নজর রেখে। পণ্ডিতজী বলেছেন শুদ্ধ মধ্যম ও তীব্র মধ্যমের প্রয়োগে ঠাট যেমন পরিবর্তন হয়ে যায় তৎরূপ রাগ রাগিনীও পরিবর্তন হয়ে যায়। পণ্ডিতজীর সৃষ্ট দশটি ঠাটের মধ্যে যে কয়টিকে উপরোক্ততে পরীক্ষা করা হয়েছে তার পাঁচটি ঠাটের স্বর শুদ্ধ মধ্যম যুক্ত (ব্যাতিক্রম–কল্যাণ ঠাট)। কিন্তু যে কয়টি ঠাট কে নিয়ে অনুসন্ধান তথা পরীক্ষণ করা হল তার মধ্যে ভৈরবী ব্যাতিত অন্যান্য ঠাটের একটিও সন্ধিপ্রকাশ ঠাট নয়। তাই দিবা ও রাত্রির সন্ধিক্ষনে গাহিবার ও বাজাইবার জন্য পূর্বী, মারাবা, ভৈরব ও টোড়ি ঠাটের সৃষ্টি করেছেন পণ্ডিতজী।
- পণ্ডিত ভাতখণ্ডেজীর ঠাট নির্মাণের কেরামতিতে একটি অজ্ঞাত ঠাটের পরিচয় পাওয়া গেছে। যেখানে রে, গা, ধা, নি কোমলের সঙ্গে মধ্যমও তীব্র ( হ্ম ) স্বরের সৃষ্টি হয়েছে। এই অজ্ঞাত ঠাটকে পণ্ডিত ভাতখণ্ডে ঠাট রূপে প্রতিষ্ঠা করেনি, এক – সৌন্দর্য্য শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে। দুই– প্রাত কালিন বা সায়ংকালিন সন্ধিপ্রকাশের সূত্র কে বিনষ্ট যাতে না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিয়ে। রে গা ধা নি কোমল প্রাতঃ রাগের প্রতীক কিন্তু সেই ঠাটে যদি মধ্যম তীব্র করা হয় তা সায়ংকালিন ঠাটের জন্ম দেয়। তাই দুই দিকে বিচার বিবেচনা করে বোধহয় পণ্ডিতজী এই ঠাট কে অজ্ঞাত ঠাটের নামকরণে চিহ্নিত করেছেন।
- সর্বোপরি এই পরীক্ষণে প্রমাণিত হয়েছে যেহেতু হারমোনিয়ামের প্রতিটি পর্দা ক্রোমাটিক স্কেলের ভিত্তিতে দুই শ্রুতির পারস্পরিক ব্যবধানে নির্মিত হয় তাই যেকোনো পর্দা কে ষড়জ ধরে ঠাট নির্মাণ করা সম্ভব হয়। কিন্তু পাশ্চাত্য সঙ্গীতে এই নিয়মের পরিবর্তন হয়ে যায়। সেখানে TONIC, SUPER TONIC, MEDIANT, SUB DOMINANT, DOMINANT, SUPER DOMINANT, SUB TONIC স্কেল বলা হয়। সেখানে ‘ ফিক্সড কী ‘ এর নাম স্বাতন্ত্র্য। স্কেল অনুসারে সি, ডি, ই, এ্ফ, জি, এ, বি. এইরূপ নামে পরিচিত হয়ে থাকে। যেহেতু হিন্দুস্থানী পদ্ধতিটি দেশীয় সঙ্গীতের অংশ তাই এখানে যেকোনো স্বরকে ষড়জ ধরে ঠাট অনুসন্ধান করলে সেই একই পরিণতি হবে।
[1] সঙ্গীত পরিচিতি – শ্রী নীলরতন বন্দ্যোপাধ্যায়। পৃষ্ঠা ১৫
[2] ক্রমিক পুস্তক মালিকা – বি. এন. ভাতখণ্ডে
[3] ভারতীয় সঙ্গীত প্রসঙ্গ – ড. বিমল রায়
[4] রাগ ও তার প্রকারভেদ – ড. বিমল রায়।
[5] সঙ্গীতশাস্ত্র ১,২ খণ্ড – ইন্দুভুষন রায়।
[6] স্কেলের কোনোরূপ পরিবর্তন করা চলবে না। যে কোনো একটি স্কেলে পরীক্ষা টি সম্পূর্ণ করতে হবে।
[7] পন্ডিত ভাতখণ্ডের দশটি ঠাটের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন একটি ঠাটের উৎপত্তি হল।