Historical and Literary Significance of Udaipur: The Dream City of Rabindranath Tagore
Ratnadeep Roy, Research Scholar, Rabindra Sangeet Dance and Drama Department, Sangeet Bhavan, Visva Bharati
Abstract:
Agartala, the current capital of Tripura, was not always the centre of power and cultural significance in the region. Before Agartala, the ancient city of Udaipur held the capital status for approximately 1200 years. Originally named Rangamati, Udaipur is renowned for its rich history, temples, and lakes, and is closely associated with the literary works of the Nobel laureate Rabindranath Tagore. Despite never physically visiting Udaipur, Rabindranath Tagore intricately wove the city into the fabric of his literary creations. His novels, such as ‘Rajarshi’ and the play ‘Bisarjan,’ draw inspiration from various events during the reign of Maharaja Govinda Manikya. Tagore’s connection with Udaipur was facilitated by Colonel Mahim Tagore, whose family shared strong ties with the royal family of Tripura. Through discussions with Colonel Mahim Tagore and Kailash Chandra Singh, who had firsthand knowledge of Tripura’s history, Rabindranath gathered information that shaped his writings. The city of Udaipur, situated on the banks of the Gomti River, gained international recognition through Tagore’s literary contributions. Despite not physically experiencing Udaipur, Rabindranath Tagore’s dreams and imagination of the city manifested in his works. ‘Rajarshi’ and ‘Bisarjan’ shed light on the humane aspects of historical events, particularly during Maharaja Govinda Manikya’s reign. Rabindranath Tagore’s engagement with the kings of Tripura extended beyond literature, as evidenced by his correspondence with King Birchandra Manikya Bahadur. This relationship led to the creation of the poem ‘Bhagnahridaya’ and earned Tagore the first poet honour from the King. Interestingly, Rabindranath Tagore refrained from visiting Udaipur, maintaining the city as a dream and preserving the context of his literary masterpieces. The dance of Rajnya Shasit Udaipur, with a history spanning over 1430 years, continues to captivate the world through Tagore’s immortalized characters and philosophical reflections in ‘Rajarshi’ and ‘Bisarjan.’This abstract explores the historical evolution of Udaipur, its literary significance in Rabindranath Tagore’s works, and the enduring impact of Tagore’s imagination on the portrayal of the city in the realms of both history and literature.
নৃত্য চর্চায় রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের উদয়পুর
সূচনা: বর্তমান ত্রিপুরার রাজধানী তথা প্রধান শহর আগরতলা; কিন্তু তার আগে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী ছিল উদয়পুর। আগরতলার পূর্বে প্রায় ১২০০ বছর উদয়পুর ত্রিপুরার রাজধানী ছিল। উদয়পুরের পূর্বের নাম ছিল রাঙামাটি। এই শহরটি মন্দির ও দীঘির শহর হিসেবে ত্রিপুরার বাইরেও পরিচিত। উদয়পুর শহরটির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম নিবিড়ভাবে জড়িত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজর্ষি উপন্যাস ও বিসর্জন নাটক এর পটভূমি এই উদয়পুর শহর। গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত উদয়পুর শহর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার মধ্যে দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে আরও পরিচিতি লাভ করে। তবে অবাক হবার বিষয় হল যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনো উদয়পুর যাননি। উদয়পুরের আলো, বাতাস রাজবাড়ী, ভুবনেশ্বরী মন্দির, গোমতী নদী, দীঘি, রাজন্য স্মৃতি কিছুই তিনি নিজ চোখে দেখেননি। উদয়পুর শহর তার স্বপ্নের মধ্যেই বিরাজমান ছিল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রাজর্ষি’ উপন্যাস ও ‘বিসর্জন’ নাটক মহারাজ গোবিন্দ মানিক্যের রাজত্বের বিভিন্ন ঘটনাকে ভিত্তি করে লেখা। তৎকালীন ত্রিপুরার রাজাদের ভাতৃদ্বন্দ্ব ও মানবতাবাদী বলি প্রথা বিরোধী এই লেখাগুলোর আগেও রবীন্দ্রনাথ ত্রিপুরা নিয়ে লেখা লিখেছিলেন। রাজা বীরচন্দ্রের পত্নী বিয়োগের ঘটনাকে প্রেক্ষাপট করে ভগ্নহৃদয় কাব্যগ্রন্থ লিখেছিলেন। রাজর্ষি ও বিসর্জন লেখার পূর্বেই ত্রিপুরার রাজাদের সঙ্গে গুরুদেবের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এক্ষেত্রে কর্নেল মহিম ঠাকুরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত কর্নেল মহিমঠাকুরের পরিবার। ১৮৮০ এর কিছুকাল পূর্বে কর্নেল মহিম ঠাকুর তার উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় যান। সেখানে তার পরিচয় ও সুসম্পর্ক গড়ে উঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাত্রি পুত্র সহপাঠী বলবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে। পরবর্তীতে কর্নেল মহিম ঠাকুরের যাতায়াত শুরু হয় ঠাকুর বাড়িতে। সেখানে কর্নেলের রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ত্রিপুরার রাজাদের বিষয়ে বিভিন্ন আলাপ আলোচনা হয়। অন্যদিকে কৈলাস চন্দ্র সিংহ, যিনি ব্রাহ্মণ্য আন্দোলনের সহ-সভাপতি ছিলেন তার থেকেও কবিগুরু ত্রিপুরার রাজাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য, সমসাময়িক কালের ঘটনা সম্পর্কে অবগত হতেন। কৈলাস চন্দ্র সিংহের পিতা ছিলেন ত্রিপুরার রাজার অর্থ দপ্তরের আমলা। কৈলাস চন্দ্র সিংহ নিজেও কিছুদিন ত্রিপুরার রাজদরবারে চাকরি করতে ত্রিপুরায় থাকেন। তখন কৈলাস চন্দ্র সিংহ ত্রিপুরার রাজাদের বিভিন্ন ইতিহাস সম্বন্ধে বিস্তৃত ভাবে অবগত হন; যা তিনি রবীন্দ্রনাথের সাথে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা করেন। এরও পূর্বে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ত্রিপুরার রাজা কৃষ্ণকিশোর মানিক্য বাহাদুরের সঙ্গে যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। সেই সব সূত্র ও তথ্যমূলে রবীন্দ্রনাথ ১৮৮১ সালে রচনা করেন কাব্যগ্রন্থ ‘ভগ্নহৃদয়’, যা ১৮৮০ এর পূর্বের রাজা বীরচন্দ্র-এর স্ত্রী মনিপুরী কন্যা ভানুমতির অকাল প্রয়ান-এর ঘটনা থেকে উঠে আসা লেখা। রবীন্দ্রনাথের ‘ভগ্নহৃদয়’ পরবর্তী কালে কর্নেল মহিম ঠাকুরের হাত ধরে ত্রিপুরার রাজার কাছে পৌঁছলে, রাজার বিরহ কাতর হৃদয়কে তা স্পর্শ করে যায়। তখন ত্রিপুরার রাজা বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুরই রবীন্দ্রনাথকে প্রথম কবি সম্মানে ভূষিত করেন। রবীন্দ্রনাথের ত্রিপুরার রাজাদের সঙ্গে যোগাযোগের এই যাত্রা থেমে থাকেনি, ত্রিপুরা সম্বন্ধে আরো বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করে রবীন্দ্রনাথ ত্রিপুরার রাজাকে চিঠি লেখেন যে, তিনি ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দ মাণিক্যের রাজত্ব কালের ঘটনাকে তাঁর মত করে লিখতে চান, এই মূলে রাজা যেন উনাকে বইপত্র ও বিভিন্ন তথ্যাদি দিয়ে সাহায্য করেন। সেই সাথে রাজা গোবিন্দ মাণিক্যের সময় কালের ত্রিপুরার রাজধানী উদয়পুরের ভৌগোলিক অবস্থান ও পারিপার্শ্বিক অবস্থানের প্রাথমিক ধারণাও যেন লিখে পাঠান। রাজা উৎসাহিত হয়ে বিস্তৃতভাবে তথ্য প্রেরণ করলে এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে এবং রবীন্দ্রনাথের কিছুটা কল্পনাকে যুক্ত করে ১৮৮৭ এর সমসাময়িক কালে তৈরি করেন ‘রাজর্ষি’ উপন্যাস। তখন পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ত্রিপুরায় আসেননি, তার স্বপ্নের নগরী উদয়পুরকেও দেখেননি। এমনকি পরবর্তী কালে তিনি মহারাজা রাধাকিশোর মানিক্য বাহাদুরের রাজত্ব কালে ১৮৯৯ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত পরপর পাঁচবার ও পরে আরো দুই বার ত্রিপুরার আগরতলায় আসলেও উদয়পুর যাননি। এই না যাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ শোনা যায়। কারণগুলোর মধ্যে এও শোনা যায় যে গুরুদেব তার স্বপ্নের উদয়পুর কে স্বপ্নেই যত্ন করে রেখে দিতে চেয়েছিলেন। ‘রাজর্ষি’, ‘বিসর্জন’, ‘মুকুট’ এর প্রেক্ষাপট উদয়পুর শহরটিকে তিনি তার কল্পনা দিয়ে যেভাবে সাজিয়েছিলেন সেভাবেই যেন তা সযত্নে থাকে সেটাই তিনি চেয়েছিলেন। সেই লেখাগুলিতে রবীন্দ্রনাথ ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দ মাণিক্যের সময় কালের বলি প্রথা বিরোধী মানবতাবাদী আধুনিক দর্শনযুক্ত সিদ্ধান্তকে তুলে ধরে হাসি, তাতা, অপর্ণা, রঘুপতি, জয়সিংহ, গোবিন্দ মাণিক্য, নক্ষত্র রায় এর মত চরিত্র গুলিকে অমর করে দিয়েছেন বিশ্ববাসীর কাছে। ‘রাজর্ষি’ ও ‘বিসর্জন’-এর এই অমর লেখনি যেই ভূমি কে কেন্দ্র করে, সেই ভূমি ত্রিপুরার উদয়পুর।
রাজন্য শাসিত উদয়পুরের নৃত্যচর্চা: উদয়পুর শহরটির ইতিহাস বহুদিনের। এই শহরটি ইতিহাসের নগরী, মন্দির নগরী, সরোবর নগরী বিভিন্ন নামে পরিচিত। বর্তমানে কলকাতা শহরের বয়স যেখানে ৩৩০ থেকে ৩৫০ বছর। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথের ‘বিসর্জন’-এরএইশহরটির বয়স প্রায় ১৪৩০ বছর। ৫৯০ সালে ত্রিপুরার রাজা ঝুঝাড়ুফা ছম্বল নগর থেকে (বর্তমান কৈলাশহর ধর্মনগর অঞ্চলের কোন একটি স্থান) ত্রিপুরার রাজধানী সরিয়ে এনে তৎকালীন রাঙ্গামাটিতে মানে বর্তমান উদয়পুরে প্রতিষ্ঠা করেন। তার পরবর্তী সময় ১৬৬৭ সালে ত্রিপুরার রাজা গুপি প্রসাদ উদয় মানিক্য নাম ধারণ করে রাঙামাটির নাম পরিবর্তন করে উদয়পুর নাম দেন। দীর্ঘ সময় উদয়পুর শহর ত্রিপুরার বহু রাজাদের রাজত্বের সাক্ষী বহন করছে।
পরবর্তী সময়ে ১৭৬০ সালে উদয়পুর থেকে রাজধানী পুরাতন আগরতলায় স্থানান্তরিত করা হয়। রাজধানী স্থানান্তরিত হলেও, দীর্ঘ প্রায় বারোশো বছর উদয়পুর প্রথমে রাঙ্গামাটি ও পরবর্তীতে উদয়পুর নামে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী থাকায় এখানে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক এক ব্যাপক কাঠামো গড়ে ওঠে। রূপ নিতে থাকে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল।
১৪৫০ সালে রাজা ধন্য মানিক্য এর রাজত্বকালে ব্রাহ্মণ পণ্ডিত বানেশ্বর ও শুভ্রসর ত্রিপুরার রাজাদের নিজস্ব গ্রন্থ রাজমালার প্রথম লহর বাংলায় লিখেছিলেন। সেখানে উল্লেখ পাওয়া যায় রাজদরবারে সংগীতচর্চার ও রাজাদের সংস্কৃতি প্রেমের। সেখানে আরও উল্লেখ আছে রাজা নিজে তখন কালীয়দমন নাটক অভিনয় করেন। যদিও সেখানে নৃত্যের উল্লেখ নেই। কিন্তু কালিয়দমন এর গল্প অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ কালীয়া সাপকে পরাজিত করে তার মাথার উপরে নটবরী নৃত্য পরিবেশন করেন। মহারাজা কর্তৃক অভিনীত কালিয়দমনেও যে গল্পের বিবরণ অনুযায়ী নৃত্যের প্রয়োজন পড়েছিল ও নৃত্য পরিবেশিত হয়েছিল তা ধারণা করলে ভুল হবে না। ১৭০৯ থেকে ১৭১৫ সালের মধ্যে রত্নকুণ্ডলী শর্মা ও অর্জুন দাস বৈরাগী নামের আসামের দুজন দূত তিনবার উদয়পুরে আসেন। এই দু’জন দূত তাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা অসমীয়া ভাষায় লিখেন। পরবর্তীতে তা’ বাংলায় রূপান্তরিত হয় ‘ত্রিপুর দেশের কথা’ নামে একটি বাংলা বই রূপে। সেই বই এর মধ্যে উনারা তৎকালীন তিনজন রাজার কথা উল্লেখ করেন এবং রাজা রত্ন মানিক্য-এর সম্পর্কে বলেন “রাজার রাস্তার দক্ষিণ দিকে চকরায় যুবরাজের একটি পুকুর আছে, অনুমান ৬ পুরা জায়গা লইয়া এই পুকুরটি অবস্থিত, এই পুকুরটির পশ্চিম দিকে একটি ইটের তৈরি দালান আছে, পুকুরের জলের মাঝখানে ৮ কোনা ইটের ভিটার উপরে ৮ মাঝখানে ৮টি খুটা বসাইয়া তাহাতে কাসার পাত মারিয়া তাহার উপর আটকোনা করিয়া তামার দোলমঞ্চ তৈয়ার করা হইয়াছে, ওই দোল মঞ্চে রাজা রত্ন মানিক্য কালিয়দমন অভিনয় করিয়া বসিয়া ছিলেন, সেই জায়গায় আমাদিগকে লইয়া যাওয়া হইয়াছিল।” অতিথি দূতরা সেসময়ের সংস্কৃতি চর্চা, বিশেষ করে রাজদরবারে নাট্য, নৃত্য, সংগীত চর্চার সুস্পষ্ট উল্লেখ করেন। মাঝের কিছু সময়ের সুস্পষ্ট ভাবে বিশেষ কিছুর আবার উল্লেখ নেই। পরবর্তী সময়ে মহারাজা বীরচন্দ্রের শাসন কালের ও সমসাময়িক কালের থেকে কিছুটা স্পষ্ট করে রাজমালাতে নৃত্য চর্চার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ততদিনে ত্রিপুরার রাজধানী স্থানান্তরিত হয়ে যাওয়ার ফলে রাজা বীরচন্দ্র ও পরবর্তী সময়কালের রাজাদের রাজ দরবারের নৃত্য সঙ্গীতচর্চা আর উদয়পুর কেন্দ্রিক থাকেনি। ফলে উদয়পুরের নৃত্য চর্চায় রাজবাড়ী রাজদরবারের প্রভাব ১৭৬০ সালেই ইতি ঘটে। অর্থাৎ উদয়পুরে ৫৯০ সালে রাজধানী স্থাপনের পরই যে নৃত্য চর্চা শুরু হয়েছে এবং ১৭৬০ সালে রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পর নৃত্যচর্চা স্থগিত হয়ে গেছে এমনটা কিন্তু নয়। রাজধানী স্থাপনের পূর্বেও এই শহরে সমাজবদ্ধ মানুষের বসবাস ছিল; ছিল তাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, শিল্প। রাজধানী যখন স্থানান্তরিত হয়ে যায়, সাথে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা কর্মকাণ্ডও স্থানান্তর হয়। কিন্তু রাজধানীর এই স্থানান্তরের সাথে সকল অংশের মানুষও যে স্থানান্তরিত হয়ে গেছেন তা নয়। দীর্ঘ সময় উদয়পুর ত্রিপুরার রাজধানী থাকায় বহু স্থাপত্য, বহু নির্মাণ কাঠামো বহু মানুষের বসতি এখানে থেকে যায়, সেই সাথে রক্ষিত হয় তাদের সংস্কৃতি, তাদের নৃত্য। আমাদের কাছে পরিষ্কার যে, উদয়পুরে বহুকাল আগে থেকে নৃত্যের যে ধারাটি বইছিল সেই ধারাটির সাথে রাজদরবার কেন্দ্রিক বহুমুখী নৃত্যের ধারাটি সমান্তরাল ভাবে বয়েছে। পরে রাজধানী পরিবর্তিত হলে পুরানো ধারাটি আবহমান ভাবেই এগিয়ে গেছে, সেই ধারাটি লোকসংস্কৃতি, লোকসংগীত, লোকাচার ভিত্তিক ধারা।
রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত উদয়পুর শহরের নৃত্য চর্চা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে রাজন্য আমলের কিছু তথ্য পাওয়া গেলেও খুব বিস্তারিত আলোচনা নেই। এ’বিষয়ে জানতে গেলে উদয়পুরে নৃত্য চর্চার ইতিহাস ও বর্তমানের বিবরণ সম্বন্ধীয় পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তৃত লেখা প্রায় দুর্লভ। কালীপ্রসন্ন সেনের চন্দ্রোদয় বিদ্যাবিনোদ-এর শিলালিপি সংগ্রহ বিষয়ক বই, কৈলাস চন্দ্র সিংহ-এর বই ইত্যাদি থেকে রাজন্য আমলের কিছু তথ্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালানো যায়। সেই সাথে উদয়পুরের বিশিষ্ট ইতিহাস অনুসন্ধানকারী শ্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও শ্রী পার্থপ্রতিম চক্রবর্তীর বিভিন্ন লেখা থেকে কিছু কিছু তথ্য জোগাড় করে স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসের উপর আলোকপাত করে এবং এই সব বিভিন্ন তথ্য গুলোর উপর ভিত্তি করে ধারণা মূলক একটা প্রেক্ষাপট রচনা করার চেষ্টা করা হলো।
রাজমালা ও সেইসব তথ্যগুলো থেকে একটা বিষয় জানা যায় যে, রাজধানী স্থানান্তরিত হয়ে যাওয়ার পরের সময়ে ১৯০১ সালে রাজন্য ত্রিপুরা সরকারের একটি বিভাগীয় অফিস উদয়পুর শহরে চালুর সিদ্ধান্ত হয়। তখন আবার উদয়পুর শহর প্রশাসনিক ভাবে ধীরে ধীরে গুরুত্ব ফিরে পেতে শুরু করে। বিভিন্ন দপ্তরের অফিস, থানা, তহশীল ইত্যাদি পুনরায় উদয়পুরে শুরু হয়। বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মীরা ও করণিক কর্মীরা উদয়পুরে আবার আসতে শুরু করেন। সেই সময় বজেন্দ্র চন্দ্র দত্ত নামে একজন বিভাগীয় হাকিম রাজন্য ত্রিপুরা সরকারের চাকরিতে যোগ দিয়ে উদয়পুরে আসেন। বজেন্দ্র চন্দ্র দত্ত সেই সময়কার উদয়পুরের সমসাময়িক বিভিন্ন তথ্য তার লেখা গ্রন্থ ‘উদয়পুর বিবরণ’-এ তুলে ধরেন। গ্রন্থটি ১৯৩০ সালে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটিতে ১৮০০ শতকের শেষভাগ থেকে ১৯০০ শতকের তৃতীয় দশক পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। গ্রন্থটি থেকে আমরা জানতে পারি উদয়পুরে নগর কেন্দ্রিক সংস্কৃতি চর্চা তখন ব্যাপক ভাবে শুরু হতে থাকে। গোমতী নদী পথে বিভিন্ন ব্যবসায়ী উদয়পুরে বাণিজ্য করতে আরো বেশি বেশি করে আসতে থাকেন। অল্প দিনেই উদয়পুরে আবার শুরু হয়ে যায় নগরকেন্দ্রিক বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা। যাত্রাপালা, নাটক, পালাগান, নৃত্যসঙ্গীত এর জলসা জনজীবনে এক বিশেষ স্থান করে নেয়। সেই সাথে প্রবাহমান ভাবেই ত্রিপুরার জনজাতিদের নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতির গতিধারা ও বিকাশের দিকে এগিয়ে চলেছিল; যা নগর কেন্দ্রিক ধারাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে পারিনি। কিছু পরেই ১৯১৯ সালের দিকে উদয়পুরে টাউন হল স্থাপনের পরিকল্পনা গৃহীত হতে থাকে। হ্যাঁ, এই সেই সময়; যে সময় গুরুদেব একদিকে বিশ্বভারতী স্থাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, অপরদিকে উনার স্বপ্নের উদয়পুর তার সংস্কৃতির অঙ্গন ‘টাউন হল’ স্থাপনের কাজ শুরু করে দিয়েছে।
ত্রিপুরার ভারত ভুক্তির পরবর্তী সময় কালের উদয়পুরে প্রাতিষ্ঠানিক নৃত্যচর্চা : স্বাধীনতার পরবর্তীতে ত্রিপুরা ভারত ভুক্তির পর উদয়পুর শহরটি দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার জেলা সদর হওয়াতে প্রশাসনিক দিক থেকে গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। তখন জন জাতিদের নিজস্ব সংস্কৃতির পাশাপাশি উদয়পুরের শহরাঞ্চলে কিছু কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক নৃত্য চর্চা শুরু হতে থাকে। যার সূত্রপাত ১৯ শতকের গোড়ার দিকেই পোতা হয়ে গেছিল। উদয়পুর-এর নৃত্য চর্চা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে প্রারম্ভ কাল নির্দিষ্ট ভাবে কবে সেটা হয়তো আর জানার সুযোগ নেই। তবে বিভিন্ন প্রবন্ধ থেকে জানা যায় ১৯৪৮-৪৯ সালে লক্ষ্মী চন্দ (ওরফে ঝরনা দত্ত) উদয়পুরের টাউনহলে নাটকের প্রয়োজনে নৃত্য করেছিলেন। সম্ভবত তিনিই রাজ্যের প্রথম মহিলা অভিনেত্রী তথা নৃত্যশিল্পী। তার পরবর্তী সময়ে উদয়পুরের কিরীট বিক্রম ইনস্টিটিউশনে একটা সাংস্কৃতিক সংগঠন জন্ম নেয়। সেখানে নাচ, গান, আবৃত্তি ইত্যাদি চর্চাশুরু হয়। ঐ প্রতিষ্ঠানটি প্রয়াত স্মৃতিকণ্ঠ সেনগুপ্ত সহ আরো কয়েকজন সমকালীন শিক্ষক ও সংস্কৃতি প্রিয় মানুষেরা মিলে পরিচালনা করতেন।
তার পরবর্তী সময়ে ১৯৬১ বা তার ২-১ বছর পরে প্রয়াত ডঃ ইন্দুভূষণ রায়ের কন্যা শিউলি রায় এবং প্রয়াত অধীর মোদকের ছোট বোন প্রণতি মোদক উদয়পুরে নাচ শেখাতেন বলে জানান স্বপন ভট্টাচার্য মহাশয়। সমসাময়িক কালে ডক্টর গৌতম রায় চৌধুরীর ছোটবোন ভাস্বতী রায় চৌধুরী, পার্বতী রায় চৌধুরী, শিউলি রায়ের ছোট বোন শ্যামলী রায়, পন্ডিত মনোরঞ্জন চক্রবর্তীর কন্যা কৃষ্ণা চক্রবর্তী, মেঘু ভট্টাচার্যের কন্যা শান্তা ভট্টাচার্য সহ আরো অনেকে উদয়পুরে নৃত্য করতেন। তখনকার সময়ে ওনারা নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নৃত্যে অংশ নিতেন। পরে উদয়পুরে ব্রতচারী নৃত্যের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন শারীর শিক্ষক পরেশ নন্দী। সত্তরের দশকের একটা সময়ে সম্ভবত ১৯৭৫ সালে উদয়পুরে ব্রতচারী নৃত্যের ব্যাপক জোয়ার আনেন প্রয়াত মিহির চক্রবর্তী। তখন তিনি ‘তরুন তীর্থ’ নামে একটা সংস্থা তৈরি করেন। পরবর্তী সময়ে ‘তরুন তীর্থ’ সংস্থাটি উদয়পুরের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক শাখা বিস্তার করে এবং নৃত্য শিক্ষা দান করতে থাকে। মাস্টার পাড়া, রাজনগর, শান্তিপল্লী, ভাঙারপার সহ উদয়পুরের আরো বিভিন্ন প্রান্তে ‘তরুণ তীর্থ’-এর শাখা গুলো বিস্তৃত ছিল। মিহির চক্রবর্তী, অমল রায়, ফনি রায়, পান্নালাল ঘোষ, কান্তি কুমার চক্রবর্তী সহ আরো অনেকে ‘তরুণতীর্থ’-এর প্রধান সংগঠক ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এদের অনেকেই এখন প্রয়াত বা কর্মক্ষম। সেই সময়ে উদয়পুরের বিভিন্ন প্রান্তের ছেলেমেয়েরা স্ব-স্ব স্থানের ‘তরুণ তীর্থ’-এর শাখায় ব্রতচারী নৃত্য শিক্ষা গ্রহণ করতেন। মিহির চক্রবর্তীর বিশেষ উদ্যোগে সে সময়ে উদয়পুরে ৭ দিন ব্যাপী ব্রতচারী নৃত্যের এক কর্মশালার আয়োজন হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ থেকে একজন বিশিষ্ট ব্রতচারী নৃত্যশিল্পী তথা কবিকে এই কর্মশালায় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিতে আনা হয়েছিল। সত্তরের দশকে সাত দিনব্যাপী এ’ধরনের কর্মশালা উদয়পুরের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সত্যিই এক বিস্ময়কর কর্মকাণ্ড।
তার আগে ষাটের দশকের গোড়ার দিকে জগন্নাথ দীঘির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে আইনজীবী প্রফুল্ল মজুমদারের বাড়িতে সংগীত ও নৃত্য শিক্ষার চল হয়েছিল। উনার দুই মেয়ে অঞ্জু মজুমদার ও প্রতিমা মজুমদার শিক্ষাদানের কাজটি করতেন। অঞ্জু মজুমদার সঙ্গীত শিক্ষিকা হিসেবে এবং প্রতিমা মজুমদার নৃত্য শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করতেন। বর্তমানে কে বি আই বোডিং এর জায়গায় তখন বেসিক স্কুল ছিল। সেখানে পরিতোষ রায় নামের একজন শিক্ষক নাচ, গান, আবৃত্তি ইত্যাদি শেখাতেন। কিছুদিন পরে তিনি উদয়পুর ত্যাগ করলে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। পরিতোষ রায় ১৯৭০ সালে আবার মডেল স্কুলে বদলি হয়ে আসেন এবং ‘রাজেন্দ্র মনিমালা’ নাম দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় চালু করেন। তিনি আবার চলে যাওয়ার পর সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়। গৌরী দাসগুপ্ত নামে একজন নৃত্যশিল্পী উদয়পুর কোর্টে চাকরি সূত্রে আসেন। তখন তিনি ‘রংরুপ’ নাট্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন। ‘রংরুপ’ নাট্য সংস্থার উদ্যোগে তখন একটি নৃত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হয়। রমেশ স্কুলের বিচিত্রা হলে ‘সামান্য ক্ষতি’ শীর্ষক একটি নৃত্যনাট্য সে সময়ে গৌরী দাস গুপ্তের পরিচালনায় পরিবেশিত হয়। উদয়পুরের অনেক শিল্পীরা এতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। নৃত্যশিল্পী বাণী দেব একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন গৌরী দাস গুপ্ত তখন টিটু দে, মিষ্টু দে, নূপুর দত্ত, সুমনা দাস, বাণী দেব সহ আরো অনেককে নৃত্য প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
উদয়পুরে নৃত্য চর্চার ব্যাপক জোয়ার আসে ১৯৭৮ সালে রবীন্দ্র পরিষদ গঠনের পর। তখনকার উদয়পুর উচ্চতর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়-এর (বর্তমান ভগিনী নিবেদিতা উচ্চতর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়) প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা প্রতিমা দাস এর চেম্বারে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় ‘ত্রিপুরা রবীন্দ্র পরিষদের উদয়পুর শাখা’ গঠিত হয়। সেখানে পরিষদের প্রথম সভাপতি হন উদয়পুর উচ্চতর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা প্রতিমা দাস এবং প্রথম সম্পাদক হন ত্রিপুরা সুন্দরী উচ্চতর বিদ্যালয় এর সহকারি প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় গুপ্ত। পরবর্তী কালে উনারা কর্মসূত্রে উদয়পুর থেকে চলে যাওয়ার পরে দীর্ঘ দিন রবীন্দ্র পরিষদের সভাপতি ছিলেন রমেশ স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক প্রয়াত ধীরেন্দ্র চন্দ্র দত্ত মহাশয় এবং আমৃত্যু সম্পাদক ছিলেন পরিষদের প্রাণ পুরুষ প্রয়াত নবদ্বীপ চন্দ্র দাস মহাশয়। সত্য রঞ্জন দাসের পরিত্যক্ত গম মিল ঘরে রবীন্দ্র পরিষদ যাত্রা শুরু করলে পরবর্তীতে তা রমেশ স্কুলে স্থানান্তরিত হয় এবং সেখানে বেড়ে উঠতে শুরু করে। তখন পরিষদে নৃত্য ভানুর ক্লাস করানোর জন্য আগরতলা থেকে আসতেন প্রখ্যাত নৃত্যগুরু হিরা দে। পরিষদের সম্পাদক নবদ্বীপ চন্দ্র দাস পরবর্তীতে নিজেই নৃত্য প্রশিক্ষণ দানের কাজ শুরু করেন। হিরা দের কাছে প্রশিক্ষিত এবং আগরতলায় গিয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ছাত্রীরাও নাচ শেখান বিভিন্ন সময়ে। সেই সময় সমবেত নৃত্য পরিবেশনা, একক নৃত্য পরিবেশনা, গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, নৃত্য গীতি আলেখ্য-এর মত আরো বিভিন্ন নৃত্য বিষয়ক কর্মকান্ড ব্যাপকভাবে শুরু হয়।
তখন যারা নাচ করতেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন নিতা দেব, সুমনা দাস, বাণী দেব, চিন্ময় দাস, ইয়াসমিন বেগম, সুতপা হোমরায়, সর্বানি দাস, দীপ্তি দে, শ্যমীমা বেগম, নাসমিন বেগম, বিজিত দাস, মনিকা নন্দী, শর্মিষ্ঠা দাস গুপ্ত, নন্দা সাহা, মানসী দাস, আদ্যা নন্দী, শাশ্বতী কর্মকার, দীপিকা নন্দী, মৌসুমী রবিদাস, মৈত্রী ভট্টাচার্য, পারমিতা দাস, ববি চক্রবর্তী, বোটন বেগম, অপর্ণা মজুমদার, কাকন রবিদাস প্রমুখেরা। এনারা প্রত্যেকেই তখনকার উদয়পুরে মঞ্চ দাপিয়ে নৃত্য পরিবেশন করেছেন। রবীন্দ্র পরিষদ থেকে তখন সমগ্র উদয়পুরে বহু নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশিত হতো। শুধু উদয়পুরই নয়, ত্রিপুরার প্রায় প্রতিটি কোনে পরিষদের আলো ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিষদ নিমন্ত্রণ পেলে সেখানে পরিষদের নৃত্য শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করতেন। ত্রিপুরা সরকারের প্রতিনিধি দল হিসেবে পরিষদের একটি নৃত্য দল আসাম রাজ্যে গিয়েছিল। ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যৌথ প্রযোজনায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান চুরুলিয়ায় এবং কলকাতার গিরিশ মঞ্চে রবীন্দ্র পরিষদ এর অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়েছে এবং দর্শকদের দারা প্রশংসিত হয়েছে। ত্রিপুরার সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় আয়োজিত নিখিল ত্রিপুরা সংগীত প্রতিযোগিতায় পরিষদ পাঁচবার শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েছিল; যা তখনকার ত্রিপুরার সংস্কৃতি মানচিত্রে এক বিস্ময়কর ঘটনা। জাতীয় যুব উৎসবের ত্রিপুরার সেরা লোকনৃত্যের দল নির্বাচিত হয়ে পরিষদের নৃত্য শিল্পীরা ১৯৯৮ সালে আমেদাবাদে, ১৯৯৯ সালে চেন্নাইতে ও ২০০০ সালে লখনৌতে, এবং ২০০৩ সালে কেরালার ত্রিবান্দরামে (বর্তমান নাম তিরুঅনন্তপুর) অংশগ্রহণ করে। তাছাড়া রাজ্যে, দেশে ও দেশের বাইরে পরিষদ তার নৃত্যানুষ্ঠান দ্বারা কবি গুরুর স্বপ্নের শহর উদয়পুরের সম্মান বৃদ্ধি করেছে।
উদয়পুরের সংস্কৃতি জগতে নৃত্যকে সম্মান যুক্ত চিন্তা ধারায় যুক্ত করে রবীন্দ্র পরিষদ, আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে স্বর্গীয় নবদ্বীপ চন্দ্র দাস। নবদ্বীপ চন্দ্র দাসের হাত ধরেই উদয়পুরে প্রথাগত ও নিয়মিত নৃত্য চর্চার ক্ষেত্র ধারাবাহিকতার সাথে চালু হয়েছে। উদয়পুর শহর সহ অবিভক্ত দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার আরো বিভিন্ন প্রান্তে নৃত্য পরিমণ্ডল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নবদ্বীপ চন্দ্র দাস এর অবদান অনস্বীকার্য। বিলোনিয়া রবীন্দ্র পরিষদ নবদ্বীপচন্দ্র দাস-এর ই সন্তান। যা বর্তমানে শ্রীযুক্ত গোপাল চন্দ্র দাসের নিরস পরিশ্রমের দ্বারা আজ নিজ উচ্চতায় বিরাজ করছে। নবদ্বীপ চন্দ্র দাসের আমৃত্যু নিরলস পরিশ্রম, সাহস, উৎসাহ, পৃষ্ঠপোষকতা নতুন নতুন প্রয়োগ, চিন্তাধারার বিকাশ, সহ সার্বিক প্রচেষ্টাতেই বর্তমান উদয়পুরের নৃত্যের পটভূমি গড়ে উঠে।
পরবর্তী সময়ে ‘সেঁজুতি’ সাংস্কৃতিক চক্র গড়ে উঠলে সেখানেও নৃত্য বিভাগ চালু হয়। ১৯৮৮-৮৯ সালে নিতা দেব একটি নাচের স্কুল চালু করেন। যদিও সেখানে ধারাবাহিকতা থাকেনি।
বর্তমান উদয়পুরে প্রাতিষ্ঠানিক নৃত্যচর্চা: বর্তমানে উদয়পুর এর প্রায় প্রতিটি প্রান্তে নৃত্য ছড়িয়ে পড়েছে। শাস্ত্রীয় নৃত্য উদয়পুর এর প্রতিটি প্রান্তে প্রতিটি এলাকায় এভাবে পৌঁছে যাবে তা একসময় ভাবা কঠিন ছিল। উদয়পুরের নৃত্যের মান বেড়েছে অনেক অনেক গুণ। এখন উদয়পুরে শাস্ত্রীয় নৃত্যের কিছু অনুষ্ঠান সেমিনার কর্মশালা উৎসব নিয়মিত হচ্ছে। নৃত্যের প্রয়োগের ক্ষেত্রেও নতুন নতুন ভাবনা কৌশল লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ব্যক্তি কেন্দ্রিক প্রচেষ্টা, প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্মের সাথে সাথে সরকারি উদ্যোগেও প্রচুর অনুষ্ঠানের আয়োজন বর্তমানে উদয়পুরে হয়। রাজ্য সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর, দূরদর্শন কেন্দ্র আগরতলা এই কাজে বিরাট ভূমিকা পালন করছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে উদয়পুর শহরের পুরাতন রাজ বাড়িতে ভুবনেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে অর্থাৎ ‘রাজর্ষি’, ‘বিসর্জন’ এর পটভূমিতে তিন দিন ব্যাপী একটি উৎসবের আয়োজন এর মধ্যে অন্যতম। ‘রাজর্ষি’ উৎসব নামের এই উৎসবটিতে রবীন্দ্রনৃত্য-সঙ্গীত চর্চা অন্যতম প্রধান বিষয়। ত্রিপুরা সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর ও আরো কিছু দপ্তরের সমন্বয়ে এই মেলাটি বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে এ শহরে উদযাপিত হয়ে আসছে। গুরুদেবের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে যত ধরনের উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় কাল ধরে উদযাপিত অনুষ্ঠান গুলোর মধ্যে সম্ভবত ‘রাজর্ষি উৎসব’ অন্যতম। তাছাড়াও সরকারি উদ্যোগে বসন্ত উৎসব, বর্ষামঙ্গল, শারদ উৎসব-এরমত ঋতু উৎসব গুলি পালিত হয় নৃত্য সঙ্গীত ও সমারোহের মধ্য দিয়ে। রয়েছে ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসব যা সরকারি উদ্যোগে আয়োজন করা হয়, সেগুলির মধ্যে অন্যতম দীপাবলীর রাতে ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির প্রাঙ্গণের মেলা ও তাতে নৃত্য সঙ্গীত প্রদর্শনী। আরো বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে নৃত্য সঙ্গীত চর্চা বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান নিয়ে নিয়েছে। ত্রিপুরা সরকারের পাশাপাশি এখন ভারত সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন, সংগীত নাটক একাডেমি, নর্থ-ইস্ট জোন কালচারাল সেন্টার, ইস্ট জোন কালচারাল সেন্টার, নেহরু যুব কেন্দ্র সংগঠন সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। শচীন দেব বর্মন স্মৃতি সরকারি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগ-এর মত প্রতিষ্ঠান গুলোও দারুন ভূমিকা পালন করছে।
পাশাপাশি উদয়পুর এর কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত নৃত্যচর্চা করে চলেছে। রবীন্দ্র পরিষদ, সেঁজুতি সাংস্কৃতিক চক্র, নৃত্য একাডেমী, সৃজন ডান্স একাডেমি, রূপকল্পম, রিফর্মিস্ট সোসাইটি, সুর সপ্তক, ঝলক ডান্স একাডেমি, সঙ্গম, নটরাজ ডান্স একাডেমি, নৃত্যাঙ্গনের মতো সংস্থাগুলো বর্তমানে উদয়পুরে নৃত্য নিয়ে কাজ করে চলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে বহু সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ দানের পাশাপাশি বিভিন্ন নৃত্য উৎসব কর্মশালা সেমিনার এর মত কর্মকাণ্ডেরও আয়োজন করছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নৃত্য উৎসব গুলি হল ‘রিফর্মিস্ট সোসাইটি’ আয়োজিত নৃত্য উৎসব ‘দা ইটারনিটী’। যা বিগত ছয় বছর যাবত নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। রিফর্মিস্ট সোসাইটি-এর বার্ষিক নৃত্যানুষ্ঠান ‘হৃদয়পুরের নৃত্যধারা’ গত তিন বছর যাবত সরোবর নগরীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দক্ষিণ ও গোমতী জেলা ভিত্তিক লোকসংগীত ও লোকনৃত্য উৎসব ও গত তিন বছর যাবৎ ‘রিফর্মিস্ট সোসাইটি’ আয়োজন করছে। পাশাপাশি গত পাঁচ বছর যাবত নিয়মিত কত্থক নৃত্যের কর্মশালা ও সৃজনশীল নৃত্যের কর্মশালা আয়োজন করছে। নৃত্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা সভা বা সেমিনার তাদের নিয়মিত কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম। এবছর রিফরমিস্ট সোসাইটির লোকনৃত্যের দল রাজ্য যুব উৎসবের প্রথম স্থান লাভ করে। দীর্ঘ কুড়ি বছর পরে উদয়পুর শহরের কোন প্রতিষ্ঠান লোকনৃত্য বিভাগে রাজ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে জাতীয় যুব উৎসব ২০২২ শে অংশগ্রহণ করার জন্য পন্ডিচেরিতে যাওয়ার সুযোগ পান। এবছর ভারত সরকারের সিসিআরটি এর কত্থক নৃত্যে স্কলারশিপ পায় উদয়পুরের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রিফরমিস্ট সোসাইটির নৃত্যশিল্পী অর্পিতা দাস। ২০১৭ সাল থেকে রিফর্মিস্ট সোসাইটি ‘রিফর্মিস্ট’ শীর্ষক একটি পত্রিকায় সংস্কৃতি বিষয়ক লেখালিখি ও প্রকাশনার কাজ করে আসছে। রিফর্মিস্ট সোসাইটির পাশাপাশি ‘রূপকল্পম’ সংস্থাটিও তাদের উৎসব ‘ত্রিপুরা সুন্দরী ডান্স এন্ড মিউজিক ফেস্টিভাল’ ২০১৫ সাল থেকে উদয়পুরের মাতাবাড়িতে ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত করেছে। ‘রূপকল্পম’ সংস্থাটি সম্ভবত উদয়পুরের প্রথম সংস্থা, যেটা সংগীত নাটক একাডেমির অর্থ সাহায্যে উদয়পুর শহরে প্রথমবার কুচিপুড়ি নৃত্যের কর্মশালার আয়োজন করেছে। এই সংস্থাটি উদয়পুর এর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন স্কুলে তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর, ত্রিপুরা সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় একাধিক নৃত্যের কর্মশালার আয়োজন করেছে। সেই সাথে ‘সৃজন ডান্স একাডেমি’ ও ২০১৮ সালে ১৯ জুন উদয়পুর টাউন হলে একটি নৃত্যানুষ্ঠান এর আয়োজন করেছিল। তাছাড়াও ঝলক ডান্স একাডেমী সহ এক দুটি সংস্থা দুই একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডাকে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে উদয়পুরের সংস্থাগুলো বেশকিছু নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশন করেছে। ‘রূপকল্পম’ ও ‘রিফর্মিস্ট সোসাইটি’ এর মত সংস্থাগুলো রাজ্যের বাইরেও বহু সম্মানজনক নৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে।
বর্তমানে উদয়পুরে বহুগুনী শিল্পী ও শিক্ষক তৈরি হয়েছে এবং তারা উল্লেখযোগ্য কাজ করছেন। বর্তমানে উদয়পুরে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেন শ্রীমতি শাশ্বতী কর্মকার, শ্রীমতি মানসী দাস, শ্রীমতি ববি চক্রবর্তী, শ্রী রত্নদীপ রায়, শ্রীমতি মৃণালিনী সূত্রধর, শ্রীমতি আঁখি দত্ত, শ্রীমতি মালবিকা সরকার, শ্রীমতি মিলি সাহা, শ্রীমতি সুস্মিতা মজুমদার, শ্রীমতি দিয়া ভট্টাচার্য, শ্রীমতি রুমকি কর্মকার প্রমুখেরা। বিভিন্ন সময় জাতীয় ক্ষেত্রে উদয়পুরের নৃত্যশিল্পীরা বিশেষ সম্মান ও স্বীকৃতি লাভ করেন; যা উদয়পুর-এর জন্য গৌরবের। বিশেষ স্বীকৃতি সম্মান গুলোর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো, কত্থক নৃত্যে উদয়পুর শহরের প্রথম জাতীয় বৃত্তি লাভ, যা পেয়েছেন শ্রীমতি মৈত্রী ভট্টাচার্য। জাতীয় যুব উৎসবে পশ্চিমবঙ্গের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে উদয়পুর এর মেয়ে শ্রীমতি ববি চক্রবর্তী ২০০৩ সালে কেরালা ত্রিবান্দম শহরে কুচিপুরি নৃত্যে সর্বভারতীয় স্তরে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। সেইসাথে শ্রীমতি চক্রবর্তী ২০১৫ সালে নৃত্য বিষয়ে জাতীয় সম্মান “ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ যুব পুরস্কার”-এ ভূষিত হন। ২০১৭ সালে রাজ্যের সেরা মহিলা সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে তিনি সম্মানিত হন। তাছাড়া তিনি দূরদর্শন কেন্দ্রের বি গ্রেড শিল্পী সম্মান লাভ করেন। আনন্দের সাথে বলতে হয় এমন গৌরবময় সম্মান এখন উদয়পুরে প্রায় নিয়মিত ঘটনা।
উৎসাহিত হয়ে উদয়পুরের আরো নতুন নতুন ছেলে মেয়েরা নৃত্যের সাথে যুক্ত হচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উদয়পুরে আরো নৃত্য সংস্থা নৃত্যকে নিয়ে বেশি পরিমাণে উদ্যমী হচ্ছে যা উদয়পুরে নৃত্য চর্চাকে করে তুলেছে উন্নততর। মঞ্চ, পোশাক, আলো, রূপসজ্জা সহ শিল্পীদের আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামগ্রিক উন্নতি হয়েছে ও ব্যবস্থাপনার মান বেড়েছে। একটা অংশের নৃত্য শিল্পীরা নৃত্যকেই মূল পেশা হিসাবে বেছে নিয়ে এগিয়ে চলেছে। উদয়পুরের কয়েকজন শিল্পী ইতি মধ্যেই নৃত্য বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। আরো বেশ কিছু সংখ্যক উৎসাহী ছেলেমেয়েরা নৃত্য বিষয়কে লক্ষ্য করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেদেরকে তৈরি করে চলেছে।
উদয়পুর শহরে এখন প্রায় তিন হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী প্রাতিষ্ঠানিক (সরকারি ও বেসরকারি) নৃত্য শিক্ষার সাথে যুক্ত আছে। প্রয়াগ সঙ্গীত সমিতি – এলাহাবাদ, ভাতখন্ডে সঙ্গীত বিদ্যাপীঠ- লখনৌ, বঙ্গীয় সঙ্গীত পরিষদ-কলকাতা, বঙ্গীয় সঙ্গীত কলা কেন্দ্র-কলকাতা, প্রাচীন কলাকেন্দ্র-চন্ডিগড়, ত্রিপুরা সঙ্গীত পরিষদ, আগরতলা-এর মত আরো কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-এর মাধ্যমে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু আছে এই শহরেই। বিভিন্ন পড়ার স্কুলে এক্সট্রা কারিকুলাম হিসেবে আরোকিছু ছেলেমেয়েরা নৃত্যকে বেছে নিয়েছে। তাছাড়া বহু সংখ্যক ছেলে মেয়েরা অনিয়মিত ভাবে হলেও নৃত্যচর্চার সাথে যুক্ত আছে। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে বলতে গেলে উদয়পুর শহরে নৃত্য চর্চা এক ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের শহর আজ নৃত্যকে নিয়ে আরো নতুন নতুন স্বপ্ন দেখার সাহস যোগাচ্ছে। কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত ও প্রায় সাড়ে চোদ্দশ বছরের ইতিহাস সম্পন্ন এই শহরের নৃত্য চর্চা বিভিন্ন উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্কৃতিকে একীভূত করে তৈরি করে চলেছে তার নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতি।
তথ্যপঞ্জি :
১. রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস- কৈলাস চন্দ্রসিংহ।সরস্বতী প্রেস। কলকাতা। প্রকাশিত ১৩০৪ বাংলা (1896 A.D) কুমিল্লা।
২. শ্রীরাজমালা– কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ লহর। উপজাতি সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র। ত্রিপুরা সরকার। আগরতলা
৩. ত্রিপুরা রাজমালা- পুরঞ্জন প্রসাদ চক্রবর্তী। পারুল প্রকাশনী।২০০২
৪. উদয়পুর বিবরণ–ব্রজেন্দ্র চন্দ্র দত্ত। ১৯৩০
৫. উদয়পুরের নাট্যচর্চার একাল-সেকাল–স্বপন ভট্টাচার্য্য।রিফর্মিস্ট পত্রিকা। প্রথম সংখ্যা। রিফর্মিস্ট সোসাইটি। ২০১৭
৬. সম্পাদকের প্রতিবেদন- নবদ্বীপ চন্দ্র দাস। রজত জয়ন্তী বর্ষ স্মরণিকা। রবীন্দ্র পরিষদ। ২০০৪
৭. আমার শহর, আমার সংস্কৃতি /১৩৬ – পার্থ প্রতিম চক্রবর্তী। ফেসবুক দেওয়াল।
৮. উদয়পুরেরনৃত্য শৈলির একাল-ওকাল– শাশ্বতী কর্মকার। রিফর্মিস্ট পত্রিকা। দ্বিতীয় সংখ্যা। রিফর্মিস্ট সোসাইটি। ২০১৮
৯. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Rajmala
১০. http://www.tripura.org.in/rajmala.htm
১১. http://www.tripura.org.in/tipraor.htm
……………………………………………………….
লেখক পরিচয় : রত্নদীপ রায়। সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। লেখকের পিতা ত্রিপুরার উদয়পুর শহরের স্বর্গীয় সুকুমার রায়। ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কত্থক নৃত্যে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর। নৃত্য শিক্ষা শুরু মা রীনা রায়ের কাছে। তার পরে উদয়পুর রবীন্দ্র পরিষদে নবদ্বীপ চন্দ্র দাস এর কাছে প্রথাগত ভাবে নৃত্য শিক্ষা এবং ওনার তত্ত্বাবধানে শাশ্বতী কর্মকার এবং মৈত্রী ভট্টাচার্যের কাছে নৃত্য শিক্ষা। বর্তমানে ত্রিপুরার বিখ্যাত কত্থক নৃত্য গুরু শ্রী চিন্ময় দাস এর কাছে দীর্ঘ বছর যাবত শিক্ষা। বিভিন্ন সময়ে ভাস্বতী মিশ্র, রাজেন্দ্র গঙ্গানী, জিতেন সিংহ, হরে কৃষ্ণ রায়, রমাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, সুবীর ঠাকুর, ডঃ পদ্মিনী চক্রবর্তী, ডঃ উমাশঙ্কর চক্রবর্তী, অভিজিৎ রায়, কাজল হাজরা এবং দেবজ্যোতি লস্করের সান্নিধ্য লাভ। ২০০৬ সালে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে প্রথম হয়ে জাতীয় যুব উৎসবে অংশ গ্রহণ। বঙ্গীয় সঙ্গীত পরিষদের নৃত্য প্রবর ও নৃত্য রত্ন পরীক্ষায় স্বর্ণ ও রোপ্য পদক লাভ। ‘রিফরমিস্ট’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক। ‘দ্য ইন্টারনিটি’ এবং ‘হৃদয়পুরের নৃত্যধারা’ অনুষ্ঠানের ডিরেক্টর। বর্তমানে বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত ভবনে গবেষণারত।