ঠুমরি ও বিদূষী সবিতা দেবী-তন্ময় মজুমদার

Assistant professor
Raja Narendralal Khan Women’s College (Autonomous)
Ph.D. Scholar, Visva-Bharati University, Sangit Bhaban

 

সময়ের সাথে সাথে মানুষ নতুন উপায়ে সংগীত গ্রহণ করার চেষ্টা করেছিলেন। যার ফলস্বরূপ আমরা পাই গানের নতুন নতুন ধারা। প্রাচীনকালে উপশাস্ত্রীয় সংগীত ছাড়া যে সংগীতের প্রচলন ছিল তা হল ধ্রুপদ সংগীত, আজ থেকে প্রায় তিনশত থেকে চারশত বছর পূর্বে প্রচলন ছিল শাস্ত্রীয় সংগীত ধ্রুপদ এবং মুঘল শাসনের আগমনের পর আবির্ভাব ঘটে খেয়াল গানের। এরপর ক্রমবিবর্তন এর হাত ধরে ধীরে ধীরে ভারতীয় সংগীতে স্থান করে নেয় বিভিন্ন উপশাস্ত্রীয় সংগীত যেমন গজাল, ঠুমরি, দাদরা ইত্যাদি। আর এই উপশাস্ত্রীয় সংগীত গুলির মধ্যে উত্তর ভারতীয় সংগীতের জনপ্রিয় গানের ধারা গুলির মধ্যে ঠুংরির একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। এই ঠুংরির দুটি অঙ্গ কে আমরা সর্বত্র লক্ষ্য করি যা হলো পুরব অঙ্গ ও পাঞ্জাব অঙ্গের ঠুংরিকে। পূরব অঙ্গের ঠুংরিকে যে সকল শিল্পী ভারতীয় সংগীতের শীর্ষস্থানে নিয়ে গেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সিদ্ধেশ্বরী দেবী, গিরিজা দেবী, সবিতা দেবী প্রমুখ। সাবিতা দেবী হলেন প্রসিদ্ধ ঠুংরি গায়িকা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেয়ে । তিনি তার মায়ের মতই বেনারস ঠুংরির একজন ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি পূরব অঙ্গের ঠুমরি অর্থাৎ বেনারস ঘারানার ঠুংরির যে মূল বৈশিষ্ট্য তাকে বজায় রেখে আমাদের সংগীত সমাজকে বহু ঠুংরি উপহার দিয়েছেন। এবং বেনারস ঘারানার ঠুংরির বৈশিষ্ট্যকে বজায় রেখে তার নিজস্ব সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করে তার গায়কির মধ্যে এক নতুনত্বতা এনেছেন। তার সমসাময়িক বহু ঠুংরি গায়ক গায়িকা থাকা সত্ত্বেও তার গান যেন সকলের মনের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিল। তিনি নিজেকে তার শেষ বয়সেও বেনারস ঘারানার একজন দক্ষ সাংগীতিক সৈনিক হিসাবে নিযুক্ত করে রেখেছিলেন।

মূল শব্দগুচ্ছ: ঠুমরি, বেনারস ঘরানা, বিদুষী সাবিতা দেবী, প্রভৃতি

ভূমিকা: ভারতীয় সংগীতের ইতিহাসে কালের বিবর্তনে ধ্রুপদ সঙ্গীতকে সিংহাসন চ্যুত করেছে খেয়াল। প্রখ্যাত সংগীতশাস্ত্রী শ্রী কৃষ্ণধন বন্দোপাধ্যায় লিখেছেন “আশঙ্কা হয় যে ইহার লোক রঞ্জকততার শক্তি ক্রমে বৃদ্ধি হইয়া কোন সময় বা ধ্রুপদ খেয়ালকে সিংহাসন চ্যূত করে”__তার প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়। এই ঠুমরি গানের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর স্বনামধন্য দু-একজন সঙ্গীত গুনিদের ঠুমরী গান সম্পর্কে উক্তিগুলি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না।

পৌরাণিক যুগে দেবতাগণ চিত্ত বিনোদনের জন্য দেবরাজ ইন্দ্রের রাজসভায় অপ্সরা ও কিন্নরিগণ যে নৃত্য গীত পরিবেশন করতেন কালক্রমে সেটি রূপান্তরিত হয়ে ঠুমরী নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ঠুমরি শব্দের উৎপত্তি নিয়ে বলতে গেলে দেখা যায় “ঠমকি” শব্দ অপভ্রংশে ঠুমরি গান হয়েছে। ঠমকি শব্দটির অর্থ এক বিশেষ ছন্দের চলন। নৃত্যশিলার রমণীদের বিশেষ ছন্দের চলনের ক্ষেত্রেও ঠুমক বা ঠমকি শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অনেকের মতে ঠুমরি এক ধরনের তাল। কিন্তু মধ্যযুগে ঠুমরি নামে কোন তাল পাওয়া যায় না। ঠুমরি বিশেষত একটি লঘু চালের গান। তাই সেই দিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায় ঠুমরি গান লঘু চালের তাল গুলিতে এই পরিবেশন করা হয়। বিবর্তনের হাত ধরে যে সকল সঙ্গীতের সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে ঠুমরি হলো একটি প্রকার। হিন্দুস্তানি সংগীতের ইতিহাস চর্চা করলে যেমন দেখা যায় যে বিবর্তনের হাত ধরে প্রবন্ধ হতে ধীরে ধীরে খেয়াল সৃষ্টি হয়েছে ঠিক তেমনি খেয়ালের বিভিন্ন ঘারানাও সৃষ্টি হয়েছে তেমনি ঠুমরি গায়ন শৈলীর ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ঘারানার সৃষ্টি লক্ষ্য করা যায় যেমন লক্ষ্নৌ, বেনারস ও পাঞ্জাব।আমাদের এই ঠুমরি গায়ন শৈলীর সাথে যে সকল শিল্পীর নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে রয়েছে তার মধ্যে একজন শিল্পীর নাম প্রথমে উঠে আসে তিনি হলেন উত্তরপ্রদেশের অন্তর্গত অযোধ্যার শিল্পী নবাব ওয়াজিদ আলী শাহ (১৩।৭/১৮২২-২১/৯/১৮৮৭) নাম। এছাড়াও যে সকল শিল্পীর নাম আমরা পরবর্তীতে পাই তারা হলেন গওহরজান, জানকী বাঈ,বেগম আখতার, রাসুলান বাঈ, সিদ্ধেশ্বরী দেবী, গিরিজা দেবী , প্রভা আত্রে, ও সবিতা দেবী। এই সকল শিল্পীদের মধ্যে প্রায় সকলেই তারা তাদের মূল ঘরানার বৈশিষ্ট্যকে বজায় রেখে তাদের গায়ন শৈলীর মাধ্যমে ঘারানার মান কে বজায় রেখেছে। ঠুমরি ঘরানার মধ্যে দুইটি ভাগ লক্ষ্য করা যায় একটি পুরব অঙ্গ (যার মধ্যে রয়েছে বেনারস ও লখ্নৌ ঘারানা) আর একটি হলো পাঞ্জাব অঙ্গ। পাঞ্জাবি অঙ্গের ঠুমরি হল ঠুমরির একটি অনন্য শৈলী যা পাঞ্জাবের লোকসংগীত ও ধ্রুপদী ঐতিহ্যের দ্বারা প্রভাবিত। পাঞ্জাবি অঙ্গের ঠুমরির মধ্যে একটি মাটির অনুভূতি রয়েছে যার সাথে রয়েছে শক্তিশালী ছন্দ ময় জোর। পাঞ্জাবি অঙ্গের ঠুংরির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো ঠুমরি পদের মাঝে তান ও খটকা প্রয়োগ এই ঠুমরি শৈলীতে যে সকল শিল্পীর নাম পাই তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ওস্তাদ্ বড়ে গোলাম আলী খান। এছাড়াও আরেকটি অঙ্গ হল পুরব অঙ্গ। ১৯শ শতকে শাস্ত্রীয় নৃত্য কথক এর থেকে ঠুমরি গানের সৃষ্টি হয়। যাকে বলা হয় বন্দিশ কি ঠুমরি ।এই ঠুমরির সৃষ্টিকর্তা হিসাবে লখনৌ নবাব ওয়াজীদ আলি শাহ এর নাম উঠে আসে। এই ধরনের গান মূলত তবায়ফতে গাওয়া হয়ে থাকে। ঐতিহাসিক দিক থেকে দেখলে দেখা যায় ১৯শ শতকের পরেরদিকে এই ঠুমরি নৃত্যশৈলী থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে একটি নিজের রাজ্য প্রতিস্থাপন করতে সমর্থ হয়েছে। উত্তর ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বেনারস শহর প্রাচীনকাল থেকে দেশের একটি বিখ্যাত ধর্মীয় স্থান ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একটি প্রধান কেন্দ্র এখানকার সঙ্গীতজ্ঞরা প্রাচীনকাল থেকেই তাদের গান-বাজনা এবং নৃত্যের জন্য বিখ্যাত। বেনারসি ঠুমরির উৎপত্তি ও বিকাশ প্রেক্ষাপটে দেখা যায় দীর্ঘকাল ধরে বেনারসি সঙ্গীতজ্ঞদের মধ্যে কথক জাতির অনেক গায়ক বাদক নৃত্যশিল্পী বসতি স্থাপন করেছিলেন, যারা সংগীতের পরিবেশন এর পাশাপাশি সেখানকার পতিতাদের গান ও নৃত্য শিখিয়েছিলেন। এই কথক শ্রেণীর পরিবারের সাথে বিভিন্ন সংগীত শিল্পী যেমন বিন্দাদিন মহারাজ ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কের কারণে বেনারসি শিষ্যদের অনেক লোক তাদের কাছে ঠুমরি ও কথক শিখেছিলেন। বিন্দাদিন এর ছোট ভাই কালিকা প্রসাদ ও বেনারসে থাকতেন এবং তার শিষ্যদের ঠুমরি গান শেখাতেন। অতএব বলা যায় বিন্দাদিন মহারাজ ও তার পরিবার এবং শিষ্যরা বেনারসে ঠুমরি গানের ধারা প্রচলন করেছিলেন। আধুনিক ঠুমরি আয়ধের রাজদরবারে বিকশিত হয়েছিল। এর জন্য দরবারের বিলাসবহুল পরিবেশ পুষ্ট হয়েছিল এবং এর সাথে সাথে সেই যুগের কবিতার ও প্রভাব ছিল। এর সাথে জড়িত নৃত্যশৈলীর কারণে এর নামকরণ করা হয়েছিল ঠুমারি। পুরব অঙ্গের ঠুমরি পূর্ব ভারতে অর্থাৎ উত্তর প্রদেশ ও বিহার পূর্বাঞ্চলে বিখ্যাত ছিল। কাজরি, চৈতি, ঝুলা, দাদরা প্রভৃতি প্রাকৃতিক লোকসংগীতের প্রত্যক্ষভাবে পূর্ব অঙ্গের ওপর প্রতিফলিত হয়। উত্তরপ্রদেশের ঠুমরির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল লক্ষনৌ। পূর্ববঙ্গের ঠুমরির গায়কের সখ্যতা, দক্ষতা, সাহিত্যের কথার অভিজাত প্রদর্শন উর্দু ও ব্রজের মিশ্র ভাষার প্রানবন্ততা, ধ্রুপদী রাগের প্রতিমুগ্ধতা এবং খেয়াল গানের মাধ্যমে ঠুমরি অঙ্গের বিশেষত্ব প্রদর্শন।বেনারসি ঠুমরির রূপটি মূলত গান মুখি এবং গীতিমূলক ছিল এবং পরে এটি বেনারসি ঠুমরি নামে বিখ্যাত হয়ে ওঠে।। পূর্ব অঙ্গের ঠুমরির দুইটি শাখা লক্ষনৌ ও বেনারসির মধ্যে শুধুমাত্র বেনারসি ঠুমরি পূরব অঙ্গের ঠুমরি হিসাবে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। যদিও আরও অনেক গায়ক বেনারসি ঠুমরি প্রচারে অবদান রেখেছেন যেমন আজম গরের জগদীপ মিশ্র, বেনারসের মইজুদ্দিন খান, মিঠাই লাল, বাড়ে রামদাস জি, এলাহাবাদের পন্ডিত ভোলানাথ ভট্ট প্রমুখ। গায়িকাদের মধ্যে যারা ঠুমরি গানকে প্রচার করেছিলেন তাদের মধ্যে রাজেশ্বরী দেবী চম্পা বাঈ, ভাগীরথী এবং কাশি বাঈ ও সিদ্ধেশ্বরী দেবী এর নাম উঠে আসে। এছাড়াও শ্রীমতি রাসূলনা বাঈ, গিরিজা দেবী, মানিক বর্মা উল্লেখযোগ্য। বেনারসি ঠুমরির বিশেষত্ব হলো এটি উত্তরপ্রদেশের পূর্ব অঞ্চলের লোকসংস্কৃতির দ্বারা বেশি প্রভাবিত। এই ঠুমরি গানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে কাজরি, হরি, চৈতি ইত্যাদি।বেনারসের ঠুমরি এবং দাদরা লোকসংগীত দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত হয়েছিল এবং লোকসঙ্গীতের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকৃতি ও এই জনপ্রিয় ধারায় প্রবেশ করেছে অতএব বেনারসের ঠুমরিতেও লোকসঙ্গীতের ছোঁয়া রয়েছে। যেকোনো ঠুমরির সুর আরোপের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা এবং এক ধরনের প্রাকৃতিক শক্তি বা উত্তপ্ততা রয়েছে। যা বেশির ভাগই বেনারসের ঠুমরিতে পাওয়া যায়। এবং যার মধ্যে লোকগানের সুর ও শোনা যায়। নাম থেকেই বোঝা যায় বেনারস স্টাইলের ধর্মীয় একই নামকরণকারী স্থানের সাথে সম্পর্কিত।এই ঠুমরি শৈলীতে শব্দ গঠনের একটি বিশেষ রূপ রয়েছে যা কাকুর সাথে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়, ঠুমরি রচনা অনুসারে আবেগ এবং অনুভূতিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা অত্যন্ত মধুর এবং হৃদয় স্পর্শী। একটি নির্দিষ্ট শব্দ বলার প্রক্রিয়া থাকায় বেনারসি ঠুমরিকে কাহন ঠুমরিও বলা হত এবং বোল বানাও কি ঠুমরিও বলা হতো। বেনারসি ঐতিহ্যের ঠুমরি গায়িকাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল যে তারা ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল ,ঠুংরি ইত্যাদি চারটি বিভিন্ন ধরনের গানের ওপর সমানভাবে আধিপত্য বিস্তার করতেন। সকল গায়িকারা তাদের গায়ন শৈলির দ্বারা সকলের মন জয় করতে পেরেছিলেন তাদের মধ্যে সিদ্ধেশ্বরী দেবী, গিরিজা দেবী, বেগম আখতার, সবিতা দেবী এনাদের নাম উল্লেখযোগ্য। তারা তাদের গানের মাধ্যমে ভারতীয় সংগীতকে সুসজ্জিত ও সুন্দর করে তুলেছিলেন। এই সকল মহিলা গায়িকারা সংগীত জগতে এক নতুন মাত্রা দিয়েছেন। সমসাময়িক বহু শিল্পীদের মধ্যে সিদ্ধেশ্বরী দেবী এর কন্যা বিদূষী সাবিতা দেবী তার মায়ের মতনই একজন দক্ষ ঠুমরি শিল্পী হয়ে উঠেছিলেন। তার গায়েন শৈলীর মধ্যে বেনারস ঘারানার গায়ন বৈশিষ্ট্য গুলি ফুলের সুবাসের মতো ছড়িয়ে পড়ত । তিনি তার ষাট বছর ধরে জীবনকে হালকা ভাবে বহন করেছেন। তিনি প্রথম দিকে পন্ডিত রবিশঙ্করজির কাছে সেতার শিখলেও পড়ে তিনি তার মায়ের কাছেই সংগীত শিক্ষা শুরু করেন এবং এই সংগীতকেই তিনি তার জীবনের অঙ্গ হিসাবে বেছে নেয়।তিনি একটি সাক্ষাৎকারে তার জীবনের গান শেখা নিয়ে আলোচনা করার সময় বলেছেন তিনি প্রথমে সুরে অর্থহীন ভাবে সুর লাগাতেন,স সেই সময় থেকে তার মা তিনি বেনারস ঘারানার ঠুমরি দাদরা চৈতি কাজরি টপ্পা ইত্যাদি শিখেছিলেন তার মা সিদ্ধেশ্বরী দেবী জির কাছ থেকে। তিনি তার মায়ের সম্পূর্ণ জীবনীকে তুলে ধরেছিলেন তার একটি মূল্যবান পুস্তকের মধ্য দিয়ে যার নাম দিয়েছিলেন মা সিদ্ধেশ্বরী।তিনি এই বইটির সম্পর্কে তার বক্তব্য দিয়েছিলেন যে এই বইটির উদ্দেশ্য হল আমার মায়ের জন্ম শৈশব সংগ্রাম ব্যক্তিত্ব এবং সঙ্গীতের ক্ষেত্রে অর্জনের লিপিবদ্ধ করুন।তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৪০ সালে বেনারস শহরে তিনি তার গায়োন শৈলী ও তার সৃজনশীলতার দ্বারা বেনারস ঘারানার ঠুমরির মধ্যে একটি নতুনত্বতা এনেছিলেন। তার একটি ঠুমরি গান বড়জরি করনা মোষে হরি মে গানের এই পরিবেশনটি প্রেমের প্রকাশ সংগ্রহ থেকে নেওয়া হয়েছে যা সেই সর্বোচ্চ আবেগ চিরন্তন প্রেমকে তার সমস্ত রং এবং মাত্রায় সবচেয়ে উদ্দীপক এবং মাটির ধ্রুপদী রূপ ঠুমরি এবং দাদরা মাধ্যমে প্রকাশ করে। সাবিতা দেবী সর্বত্রই নিশ্চিত করেন যে তার ঠুমরি তার খেয়ালে বা বিপরীতে উপচে না পড়ে একইভাবে তার ঠুমরি হরি কাজরি চৈতি এবং দাদরা তাদের পৃথক পরিচয় বজায় রাখে। তিনি তার ঠুংরি গায়েন শৈলীতে একটি কথাকে তার নিজস্ব সৃজনশীলতার দ্বারা তার ভাবকে বজায় রেখে সুন্দরভাবে বিভিন্ন আঙ্গিকে ফুটিয়ে তোলেন। এবং একটি কথা কত সময় ধরে টেনে রাখতে হবে ও একটি কথাকে কতটা সূক্ষ্ম সুরের সাহায্যে পরিবেশন করতে হবে তা তিনি তার সমস্ত দাদরা কাজরি চৈতি ঠুমরি ইত্যাদি তে দেখিয়েছেনতিনি একটি পুরি রচনা করেছিলেন সেটি হল barasat রং আনন্দ”। এছাড়াও তিনি বহু কাজরি ঠুমরি দাদরা রচনা করেছিলেন।এবং তিনি তার এই গায়ন শৈলী ও রচনা তার দেশে ও বিদেশে সমস্ত জায়গার শিষ্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। যারা তার গায়েন শৈলীর উত্তরসূরী হিসাবে আজও বহন করে চলেছে এনাদের মধ্যে যারা তার গাইন শৈলীকে প্রচার ও প্রসার করতে সক্ষম হয়েছিলেন তারা হলেন মিণাক্ষী প্রসাদ,ইন্দিরা মুখার্জি, তার পুত্র অজয় মহারাজ ইত্যাদি প্রমুখ। কর্মজীবনে তিনি বেশ কিছুদিন দৌলত রাম কলেজে সংগীতের বিভাগীয় প্রধান হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন।

উপসংহার:
ভারতীয় সংগীতের এই উপশাস্ত্রীয় সংগীত ঠুমরি আজ সংগীত প্রেমী মানুষদের অন্তরের মনিকোঠায় বসবাস করে। এবং এই ঠুংরির ঘরানা ও অঞ্চলভেদে দুটি দিকে বিভক্ত হয়ে যায় একটি পূর্ব ও পাঞ্জাব। পূর্ব অঙ্গের ঠুমরি হল বেনারস ঘারানার ঠুমরি এই ঘারানার একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বর্তমান। এবং এই বৈশিষ্ট্যকে প্রাধান্য দিয়ে নিজস্ব গায়ন শৈলীর দ্বারা এই গানকে প্রচার ও প্রসার করতে সক্ষম হয়েছিলেন এই বেনারস ঘরানার শিল্পী সবিতা দেবী। তিনি তার নিজস্ব গায়েনশৈলী দ্বারা বেনারস ধারনার বৈশিষ্ট্যকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ঠুমরি কাজরি চৈতি দাদরা রচনা করেছিলেন এবং যার মধ্যে বহু রচনা সংগীত সমাজে সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। তিনি তার শেষ জীবনেও ঠুমরি সংগীত চর্চা ও বিভিন্ন দিকে গবেষণা করে গেছেন।
তথ্যসূত্র
1. Thumri ki utpati, Vikas AVN shailiyan-Dr Shatrughan Shukla
2Thumri singing in Kolkata: A new dimension of stylization and application- Dr Swati Sharma
3. Thumri, dadra, toppa, kajri, chaiti etc (semi classical and light classical form Hindustani music )- Susheela Mishra
4. Thumri saili aur uski Yatra -Charu Sharma
5. Thumri ,ghazal and modernty in Hindustani culture- Peter L Manual
6. ঠুমরী গানের ঐতিহ্য- ডঃ প্রদীপ কুমার ঘোষ