An Analysis of Composer Rabindranath and the Modernity of Melody Applied in His Poetry
-Sanchita Bhowmick, (M.phil scholar, Rabindra Sangeet Department)
Abstract : Rabindra Sangeet is a miraculous wonder that touches all the joys and pains of life. In his
early life, Rabindranath, in an essay entitled ‘Sangeet O Bhav’, almost unconsciously
expressed the important role of his music creation. The words ‘Sangeet’ and ‘Geet’ are used
many times in his early creations, such as ‘Sandhya Sangeet’, ‘Prabhat Sangeet’, and again in
the poem ‘Hridaye Geetdhwani’. On the other hand, Gitikavya and Kavyagiti of Rabindranath
became both the wings of melody. Rabindranath easily turned poetry into songs and made
songs suitable for easy reading as poetry. He has combined the rhythm of the poetry and the
language of music. The musical inspiration of Rabindranath’s lyric poetry, ‘Kavyagiti’, has
made it possible to bridge between his poetic language and lyrical melody. The combination
of rhyme-melody-rhythm-words also brings his life to the extreme height of the light, so
many of these became ‘Param Bramha’. Also, his poems have become songs, and songs are
to be read as poems as ‘Gitikavya’. Rabindranath easily let them complement each other by,
‘…Janam Janam ei choleche, Maran kabhu tare thaamaye?’
কম্পোসার রবীন্দ্রনাথ এবং কবিতায় সুরপ্রয়োগের আধুনিকতা ও বিশ্লেষণ
সঞ্চিতা ভৌমিক, এম ফিল গবেষক
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় যন্ত্রসংগীত বিভাগ আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে উপস্থাপিত নিবন্ধ। সেমিনারের বিষয় ছিল- ‘থিম মিউজিক, মিডিয়া মিউজিক: রূপায়ণ, সৃজন ও বর্ণায়ন’
ভূমিকা:
রবীন্দ্রসংগীত মাত্র কটি অক্ষর এর মধ্যে এক অলৌকিক সৃষ্টি, বিপুল বিস্ময়ে সম্পাদিত হয়ে ওঠে যা জীবনের সকল আনন্দ বেদনা কে স্পর্শ করে, এই গান অসীম অব্যক্তের কন্ঠহার হয় । সমস্ত সাহিত্য শাখার মধ্যেই সংগীতের সোনারকাঠি ছুঁইয়ে দিয়ে কবি জীবনের পরম বাণীটি তিনি মনে হয় সম্পূর্ণ করে বলতে পেরেছেন। প্রথম জীবনে ‘সংগীত ও ভাব’ নামক একটি প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ প্রায় অজ্ঞাতসারেই তার পরবর্তী সংগীত সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি ব্যক্ত করে দিয়েছেন। কবি লিখেছিলেন ,“তাঁহারা সংগীতকে কতকগুলো চেতনাহীন জড়ের উপর স্থাপন করেন , আমি তাহাকে জীবন্ত অমর ভাবের উপস্থাপন করি।… তাঁহারা কথা বসাইয়া যান সুর বাহির করিবার জন্য,আমি সুর বসাইয়া যাই কথা বাহির করিবার জন্য।
বিষয়বস্তু ও মূলভাব :
বস্তুত কবিতা হল রবীন্দ্রসংগীত রচনার মুখ্য প্রেরণা। এজন্যই রবীন্দ্র সংগীত বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যসঙ্গীত। কোন একটি অভিভাষণে তিনি বলেছিলেন ‘গানের কথা আমি বলি গানেতেই’। আবার ‘সঙ্গীত ও কবিতা’ প্রবন্ধ তিনি স্বীকার করেছিলেন যে ,কথা ও সুর ভাব প্রকাশের যুগ্ম উপকরণ। কবিতায় আমরা কথার ভাষা কে এবং সংগীতে সুরের ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি, তবে সঙ্গীত মনের একটি মাত্র স্থায়ী ভাব কে বেছে নেয় আর কবিতার কাজ ভাব থেকে ভাবান্তর এ গমন। কবির এই আজন্মলব্ধ সংগীত চেতনাই তার সংগীত বিষয়ক আলোচনা গুলিকে আরোও উজ্জ্বল করে রেখেছে।
- হৃদয়আকাশ (আমি ধরা দিয়েছি, কড়ি ও কোমল, ১২৯৩)
কবিতা–
আমি ধরা দিয়েছি গো আকাশের পাখি , নয়নে দেখেছি তব নূতন আকাশ ।
দুখানি আঁখির পাতে কী রেখেছ ঢাকি , হাসিলে ফুটিয়া পড়ে উষার আভাস ।
হৃদয় উড়িতে চায় হোথায় একাকী আঁখিতারকার দেশে করিবারে বাস ।
ঐ গগনেতে চেয়ে উঠিয়াছে ডাকি , হোথায় হারাতে চায় এ গীত – উচ্ছ্বাস ।
তোমার হৃদয়াকাশ অসীম বিজন — বিমল নীলিমা তার শান্ত সুকুমার
যদি নিয়ে যাই ওই শূন্য হয়ে পার আমার দুখানি পাখা কনক বরন ।
হৃদয় চাতক হয়ে চাবে অশ্রুধার , হৃদয় চকোর চাবে হাসির কিরণ ।
গান–
কবি তার উপর সুরারোপ করবার জন্য মূল কবিতা এবং গানের দৃঢ়বদ্ধ গঠন রক্ষিত করেননি।
ধরা দিয়েছি গো আমি আকাশের পাখি,নয়নে দেখেছি তব নূতন আকাশ ॥
দুখানি আঁখির পাতে কী রেখেছ ঢাকি,হাসিলে ফুটিয়া পড়ে ঊষার আভাস ॥
হৃদয় উড়িতে চায় হোথায় একাকী–আঁখিতারকার দেশে করিবারে বাস ।
ওই গগনেতে চেয়ে উঠিয়াছে ডাকি–হোথায় হারাতে চায় এ গীত-উচ্ছ্বাস ॥
“পঞ্চভূত” গ্রন্থের ‘গদ্য ও পদ্য’ প্রবন্ধে কবি বলেছেন ,অনন্ত আকাশ জুড়ে চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা জ্যোতিষ্ক মন্ডলীর ছন্দময় নৃত্য চলছে, তার বিশ্ব সংগীত কানে শোনা যায় না, চোখে দেখা যায় না, ছন্দ হল সংগীতের সেইরূপ যা কবিতায় ভাবের সঙ্গে যুক্ত হয়, সেইখানেই তো সঙ্গীতের মুক্তি।‘অন্তর বাহির’ প্রবন্ধে কবির ব্যাপ্তি, মানুষের বোধ কথার অতীত, মানুষ তাই ‘কাব্যে রচে বোবার বাণী’আর মানুষের বোধ সংগীতের রূপ নিয়ে কাব্য কে সুরের সীমায় বেঁধে তাকে বিচিত্র আবর্তনে নাচায়।
জীবনস্মৃতি গ্রন্থের ‘গান সম্বন্ধে প্রবন্ধ’ অধ্যায়ে কবি লিখেছেন –
“যেখানে অনির্বচনীয় সেখানে গানের প্রভাব। বাক্য যাহা বলিতে পারে না গান তাহাই বলে” সুতরাং কথার সঙ্গে সুরকে বিছিন্ন না করে সে কথা কেমন করে তার অর্থের সীমা অতিক্রম করে অনির্বচনীয় লোকে পাড়ি দেয় রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যিক জীবনী এই ভাবেই সংগীত কে গভীর মূল্য দান করে এসেছেন । অবশ্য গানকে সাহিত্য হিসেবে বিচার করার বাধা আছে। সুরের সহায়তায় গান আপনার বাগবন্ধের প্রাত্যহিকতা কে অনেক সময় অতিক্রম করে। সুরের পাখাতে ভর করে গান নন্দনলোকে উড়ে যায়।
রবীন্দ্রনাথ নিজে চিত্রাঙ্গদার ভূমিকায় লিখেছিলেন-
‘এ জাতীয় রচনায় স্বভাবতই সুর ভাষাকে বহুদূর অতিক্রম করে থাকে, এই কারণে সুরের সঙ্গ না পেলে এর বাক্য এবং ছন্দ পঙ্গু হয়ে থাকে।‘ যেমন চিত্রাঙ্গদার গানে কবি এভাবেই গান এবং কবিত্ব কে ছাড়িয়ে তাল এবং ছন্দের বেড়াজাল ভেঙে সৃষ্টি করেছিলেন এক অপূর্ব রচনা, এখানে সুর একাধারে প্রেমবিহ্বল চিত্রাঙ্গাদার অন্তরাত্মাকে প্রকাশ করে অপরদিকে স্বরূপের এমন বিচিত্রতায় আত্মমগ্ন কন্ঠ, নিজেকে দাঁড় করায় এক অনির্বাচনীয়তায়-
বঁধু, কোন্ আলো লাগল চোখে!
বুঝি দীপ্তিরূপে ছিলে সূর্যলোকে!
ছিল মন তোমারি প্রতীক্ষা করি
যুগে যুগে দিন রাত্রি ধরি,
ছিল মর্মবেদনাঘন অন্ধকারে,
জন্ম-জনম গেল বিরহশোকে।
অস্ফুটমঞ্জরী কুঞ্জবনে,
সংগীতশূন্য বিষণ্ন মনে
সঙ্গীরিক্ত চিরদুঃখরাতি
পোহাব কি নির্জনে শয়ন পাতি!
সুন্দর হে, সুন্দর হে,
বরমাল্যখানি তব আনো বহে,
অবগুণ্ঠনছায়া ঘুচায়ে দিয়ে
হেরো লজ্জিত স্মিতমুখ শুভ আলোকে॥
হয়তো এই গীতিপ্রবণতা, সঙ্গীতাবেশ বা গীতিরাগ রবীন্দ্রনাথের সমস্ত রকম রচনার মূল নিহিত বলেই তিনি কবিতাকে সহজে গানে পরিণত করেছেন এবং গানকে কাব্য রূপে অনায়াস পাঠ করার উপযুক্ত করে তুলেছেন। তার কবিতার ভাষার সঙ্গে সংগীতের ভাষার বাহ্যিক ভেদ ততটা প্রবল নয় কিন্তু সংগীতের কাব্যের ছন্দ এবং গদ্যধর্মী সংগীতের ভাষাকে কোথাও যেন তিনি মিলিয়ে দিয়েছেন। সারা জীবনের কাব্যগ্রন্থের অনেক গুলিতে এমন কতগুলি কবিতা রয়েছে যেগুলি পৃথকভাবে গান রূপে পরিচিত আবার এমন কিছু কিছু কাব্য রয়েছে যেখানে সুরহীন আবৃত্তি যোগে নানা আয়তনের নানা ভাবের কবিতা রয়েছে। ‘সন্ধ্যা সংগীত’ এর প্রথম কবিতা ‘সন্ধ্যা’ তে গান শব্দটি অন্তত নয় বার ব্যবহৃত , আবার ‘ হৃদয়ের গীতধ্বনি’ কবিতায় সেই একই গানের অনুষঙ্গ —
‘গাহিতেছে একই গান একই গান একই গান
পারিনা সইতে আর একই গান একই গান’
সাধারণভাবে গানের কবিতা এবং গীতিকবিতার এই ভেদরেখা টি রবীন্দ্রনাথ যথার্থ নির্দেশ করেছেন।সুরের খাতিরে কোন কোন ক্ষেত্রে যে ছন্দের শিথিলতা ঘটে এবং তা গীতিকাব্য রূপে ঈষৎ ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এই আশঙ্কা নিয়ে কবি দিলীপ কুমার রায় কে একবার লিখেছিলেন,
“গোড়াতেই বলে রাখা দরকার গীতাঞ্জলি তে এমন অনেক কবিতা আছে যার ছন্দোরক্ষার বরাত দেওয়া হয়েছে গানের সুরের পরে । অতএব যে পাঠকের ছন্দের কান আছে তিনি গানের একমাত্রা কমবেশি নিজেই দুরস্ত করে নিয়ে পড়তে পারেন।“
শেষ বসন্তের মহুয়ার কবিতা গুলি গানের নিবিড় সংযোগে সৌরভে গীতবিতান-এ গভীরভাবে উল্লেখিত। কবিতায় সুরযোজিত হয়ে অর্থাৎ যথাযথ ও অবিকৃত গান পরিণত হয়েছে–
- বিজয়ী (বিরস দিন বিরলকাজ)।
কবিতা–
বিবশ দিন, বিরস কাজ, কে কোথা ছিনু দোঁহে,
সহসা প্রেম আসিলে আজ কী মহা সমারোহে।
নীরবে রয় অলস মন,আঁধারময় ভবনকোণ,
ভাঙিলে দ্বার কোন্ সে ক্ষণ অপরাজিত ওহে!
সহসা প্রেম আসিলে আজ বিপুল বিদ্রোহে।
কানন-‘পর ছায়া বুলায়, ঘনায় ঘনঘটা।
গঙ্গা যেন হেসে দুলায় ধূর্জটির জটা।
যে যেথা রয় ছাড়িল পথ, ছুটালে ওই বিজয়রথ,
আঁখি তোমার তড়িৎবৎ ঘন ঘুমের মোহে।
সহসা প্রেম আসিলে আজ বেদনা দান বহে।
গান–
কবিতার সঙ্গে গানের অনেক পাঠভেদ উল্লেখযোগ্য। গানটি প্রতিটি স্তবকে কবিতার ধর্মেই গেয়েছে। পুনরাবৃত্তি অবকাশ নেই। এটি যথার্থই কাব্য সঙ্গীত।
বিরস দিন বিরল কাজ, প্রবল বিদ্রোহে
এসেছ প্রেম, এসেছ আজ কী মহা সমারোহে॥
একেলা রই অলসমন, নীরব এই ভবনকোণ,
ভাঙিলে দ্বার কোন্ সে ক্ষণ অপরাজিত ওহে॥
কানন-‘পরছায়া বুলায়, ঘনায় ঘনঘটা।
গঙ্গা যেন হেসে দুলায় ধূর্জটির জটা।
যেথা যে রয় ছাড়িল পথ, ছুটালে ওই বিজয়রথ,
আঁখি তোমার তড়িতবৎ ঘনঘুমের মোহে॥
তাহলে রবীন্দ্রনাথের গানের ভাষা আর কবিতার ভাষা কি স্বতন্ত্র? ‘পঞ্চশরে দগ্ধ করে করেছ একী সন্ন্যাসী’- একটি বিশুদ্ধ কবিতা আর গীতাঞ্জলি’র ‘আমার মাথা নত করে দাও’ গীত হওয়ার জন্য রচিত কবিতা।
শেষবয়সের কবি ছন্দকবিতাও সুরারোপ করেছিলেন সুতরাং গদ্য ভঙ্গিক রুপে প্রচলিত করতে তার দ্বিধা না থাকাই স্বাভাবিক তবু আমাদের মনে হয় রবীন্দ্রনাথের গানের ভাষা এবং কবিতার ভাষার মধ্যে গভীর পার্থক্য নেই । গান রচনা এবং কবিতার মধ্যে তিনি কোন পার্থক্য অনুভব করেননি বরং কবিতার তুলনায় গানের প্রতি তার দুর্বলতা সমধিক হলেও জীবনের নানা পর্বে তিনি কবিতার উপর সুরারোপ করে সেগুলিকে কাব্যসঙ্গীত এ পরিণত করেছেন। মূলত সে ক্ষেত্রে সংগীত এ পরিণত হবার জন্য কবিতার ভাষায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি।
যেমন, প্রবাসী (পরবাসী চলে এসো ঘরে) ১৩৩৩ বৈশাখ সংখ্যায় ‘আশীর্বাণী’ পত্রিকায় কবিতাটি দ্বিখণ্ডিত করে ‘পরবাসী চলে এসো ঘরে’ এবং ‘এসো এসো প্রাণের উৎসবে’ দুটি গান রচনা করেন। মূল কবিতার দ্বিতীয় স্তবকের দুই চরণে গানের সঞ্চারী রচিত ‘পরবাসী বাহিরে অন্তরে’ চরণটি গানে হয়েছে ‘নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে’।
পরবাসী, চলে এসো ঘরে অনুকূল সমীরণ-ভরে॥
ওই দেখো কতবার হল খেয়া-পারাবার, সারিগান উঠিল অম্বরে॥
আকাশে আকাশে আয়োজন, বাতাসে বাতাসে আমন্ত্রণ।
মন যে দিল না সাড়া, তাই তুমি গৃহছাড়া নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে॥
আবার, গানে রূপান্তরিত হবার পূর্বে আরো কয়েকটি পাঠান্তর আছে- ‘এসো এসো মাটির উৎসবে দক্ষিণ বায়ুর বেনু রবে’ । শেষ স্তবকটি বর্জন করে ‘এসো এসো প্রাণের উৎসবে’ গানটি রচনা করেন।
এসো এসো প্রাণের উৎসবে, দক্ষিণবায়ুর বেণুরবে॥
পাখির প্রভাতী গানে এসো এসো পুণ্যস্নানে আলোকের অমৃতনির্ঝরে॥
এসো এসো তুমি উদাসীন। এসো এসো তুমি দিশাহীন।
প্রিয়েরে বরিতে হবে, বরমাল্য আনো তবে–দক্ষিণা দক্ষিণ তব করে॥
দুঃখ আছে অপেক্ষিয়া দ্বারে– বীর, তুমি বক্ষে লহো তারে।
পথের কণ্টক দলি এসো চলি, এসো চলি ঝটিকার মেঘমন্দ্রস্বরে॥
উপসংহার :
রবীন্দ্রজীবনের কাব্য গুলিতে ‘সংগীত’ ও ‘গান’ শব্দ দু’টি ব্যবহৃত ব্যাপক। ‘সন্ধ্যা সংগীত’, ‘প্রভাত সঙ্গীত’ কাব্যগ্রন্থ হওয়া সত্বেও নামকরনে ‘সংগীত’ শব্দেরপ্রতি কবির দুর্বলতা মনে রাখার যোগ্য । তাছাড়া ‘ছবি ও গান ’‘কড়ি ও কোমল’ দুটিতেও গান ও গানের প্রসঙ্গ রয়েছে। শেষ বয়সের কাব্যের নামে তিনি ‘পূরবী’ ‘শেষ সপ্তক’ ‘সানাই’ প্রভৃতি সঙ্গীতার্থকশব্দ ব্যবহার করেছেন ।
“আমার মনে যে সুর জমে ছিল, সে সুর যখন প্রকাশিত হতে চাইলে তখন কথার সঙ্গে গলাগলি করে সে দেখা দিল। ছেলেবেলা থেকে গানের প্রতি আমার নিবিড় ভালোবাসা যখন আপনাকে ব্যক্ত করতে গেল, তখন অবিমিশ্র সংগীতের রূপ সে রচনা করলে না। সংগীত কে কাব্যের সঙ্গে মিলিয়ে দিলে, কোনটা বড় কোনটা ছোট বোঝা গেল না।” (আমাদের সঙ্গীত,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )
রবীন্দ্রনাথের গীতিকাব্য এবং কাব্যগীতি অর্থাৎ কবিতা ও সুরাশ্রিত গান একই পল্লবের যুগ্ম কিশলয়। তাই কবির কাব্য গ্রন্থের মধ্যেও গানের অবিরাম যাতায়াত আবার গানের গ্রন্থে কবিতার স্থায়ী বাসা । রবীন্দ্রনাথের গীতিকবিতার সংগীতময় প্রেরণাই তার কাব্য ভাষা এবং গীতভাষার সম্ভাব্য দূরত্ব অপনোদিত করেছে , মিলন ঘটেছে ছন্দের-সুরের-তালের-কথার তাই তাঁর প্রথম জীবন থেকে শেষ জীবনের শেষ প্রহর গুলিতেও সংগীত যেন কথার অর্থের কাঠিন্যকে সুরের চরম উচ্চতায় উঠিয়ে নিয়ে জীবিত করে তোলে তাই তার বহু কবিতা হয়েছে গান আবার গান হয়েছে কবিতা, যেন একে অপরের পরিপূরক, ‘জনম জনম এই চলেছে, মরণ কভু তারে থামায়?’।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি
- বাংলা কাব্যসঙ্গীত ও রবীন্দ্রসংগীত: অরুণকুমার বসু, পৃ: ৩২২
- উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য (১৪০৩) রবীন্দ্র কাব্য পরিক্রমা, ওরিয়েন্ট কোম্পানি কলকাতা
- প্রমথনাথ বিশী (১৪০৪), রবীন্দ্র কাব্যপ্রবাহ, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লি কলকাতা
- অধ্যাপক ড. ক্ষুদিরাম দাস (১৯৯৬), রবীন্দ্র-প্রতিভার পরিচয়, মল্লিক ব্রাদার্স, কলকাতা