আলোর উৎসব : কুলকুলোতি
তুলসী প্রদীপ
পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, হুগলি জেলার জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কুলকুলোতি ব্রত ও উৎসব হয়ে থাকে। ‘কুলকুলোতি’ বা ‘কুলকুলতি’ গ্রামীন লোকাচার পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে বা হারিয়ে যাওয়া মানুষদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়ে থাকে।আবার কুলের মঙ্গল কামনাতেও এই ব্রত হয়ে থাকে। কার্তিক মাসের প্রথম দিন থেকেই এই ব্রত বা লোকাচারপালনের রীতি চালু রয়েছে। চলে কার্তিক সংক্রান্তি পর্যন্ত।
আশ্বিন মাস জুড়ে দুর্গা পুজো, তার পরেই লক্ষীপুজো, কালীপুজো চলে। আশ্বিনে লক্ষীর পুজো হয়ে থাকে। লক্ষ্মীর ব্রত হয় পৌষ মাসে। আশ্বিন মাস পুজোর মাস। কার্তিক মাসে ‘কুলকুলোতি’, অগ্রহায়ন মাসে নবান্ন, ইতু পুজো, পৌষ মাসে তুসু পুজো আর লক্ষীর ব্রত হয়। বাঙালির ঘরে ব্রত, আর পুজো অবশ্য সবই মিলে মিশে রয়েছে। কার্তিক, অগ্রহায়ন আর পৌষ এই তিন মাস বাংলার গ্রামাঞ্চল উৎসবমুখর হয়ে থাকে। ছোট-বড় সকলেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, যদিও সাধারণভাবে কুমারী ও সধবা মহিলারা এই উৎসবের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে শামিল হয়। কিন্তু তা’ সামগ্রিকভাবে সাধারণ মানুষদের জীবনযাত্রার সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িয়ে রয়েছে,।
কুল প্রতিহত তুলসী তলায় গর্ত খুঁড়ে প্রতি সন্ধ্যায় সেখানে ফুল ও কুল গাছের পাতা দূর্বাঘাস, তুলসীপাতা দিয়ে কোন দেবীর উদ্দেশ্যে গান গাওয়া হয়। এখনো হয়ে থাকে। আবার অনেকে তুলসী তলায় একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে আর টুকরো করে কাটা কলাগাছের খোলার ওপর প্রদীপ জ্বালিয়ে কিছু ফুল দিয়ে সেই কলার ভেলাটি পুকুরে বা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। কলার ভেলাটি ভাসানোর সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা গান গাইতে থাকে। ভেলা ভেসে চলে দূরের পানে। আলো নিয়ে ভেলা যায় পূর্ব প্রজন্মের মানুষদের কাছে।
সাধারণত ছোট ছোট মেয়েরাই এই ব্রত করে। তবে বাড়ির ছোট ছেলেরাও এই ব্রত পালনে অংশ নেয়। মা কাকিমাদের শাড়ি পরে গিন্নির মত সেজে আলো জ্বালানো, শাঁখ বাজানোর ব্রত যেন গার্হস্থ জীবনের হাতে খড়ি। এরা কার্তিক মাসের আগে থেকেই কাদামাটির প্রদীপ গড়ে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। কেউ কেউ উনুনের আঁচে বা কাঠের আগুনে একটু পুড়িয়েও নেয়। প্রতি দিন তিনটি করে প্রদীপ লাগে। তাই অনেক প্রদীপ গড়তে হয়। প্রদীপ গড়া নিয়ে বেশ প্রতিযোগিতাও চলে ছোটদের মধ্যে। কার্তিক মাসের প্রথম দিন থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় তিনটি কুলপাতা, তিনটি দূর্বা ঘাস নিয়ে তিনটি প্রদীপে তেল সলতে দিয়ে সাজাতে হয়। এরপর পুকুর ঘাট থেকে জল আনতে হয় একটি পাত্রে করে। জল আনার সময় পুকুর ঘাটে গান গাইতে হয়-
জলে আছে জলকুমারী,
ডাঙায় আছে হরি,
এক ঘটী জল দাও মা,
হরি পূজা করি।
পুকুর ঘাট থেকে জল এনে তুলসি তলায় জল ঢেলে প্রদীপ জ্বলানো হয়। প্রদীপ জ্বালানো হয় গান গেয়ে । প্রদীপ জ্বালানোর গান :
সাঁঝ সলতে পরমবাতি,
সন্ধ্যে দেখায় ভগবতী,
কোথায় আছে দেবগণ,
সন্ধ্যে দেখায় নারায়ণ।
পুজোর মন্ত্র
কুলকুলতি কুলের বাতি,
তোমার তলায় দিয়ে বাতি,
অরণ ঠাকুর বরণে,
ফুল ফুটেছে চরণে।
এ ফুলটি যে তুলবে,
সাত ভাইয়ের বংশে,
সাবিত্রী সত্যবান।
কার্তিক মাসে রাসে,
ধুপ ধুনো বাসে,
ধুপ, দীপায় নমঃ।
তুলসী গাছে জল ঢালার মন্ত্র
তুলসী তুলসী মাধবলতা,
ও তুলসী কৃষ্ণ কোথা?
কৃষ্ণ গেছে গোচারণে।
তোমার শিরে ঢালি জল,
অন্তর থেকে দিও স্থল।
কোথাও আবার এই গানের ভিন্ন রূপও শোনা যায়।
তুলসী তুলসী মাধবীলতা
কও তুলসী মিষ্টি কথা
কিষ্ট কথা শুনলাম কানে
গড় করি মা শ্রীচরণে
জলে আছে জলকুমারী
ডাঙ্গায় আছে হরি
একঘটি জল দাওমা
তুলসী পূজা করি ।
তিনবার এই গান গেয়ে হাত জোড় করে কিশোরীরা বাড়ির মঙ্গল কামনা করে। এই গান গাওয়ার পরে কুলপাতা দেওয়ার পর্ব শুরু হয়। তখন গাওয়া হয় :
”কুলপাতা কুলপাতা ঝাঁকড়ি
সতীন বেটা মাকড়ি।
সাত সতীনের সাত কৌটা
আমার মায়ের নব কৌটা।
নব কৌটা নড়ে চড়ে
সাত সতীনের মুখটী পুড়ে।”
শাঁখ বাজানোর সময় গাওয়া হয়
শাঁখে আছে শঙ্খধ্বনি,
শাঁখ বাজায় মহামুনি।
দিকদিগন্ত ব্লগপোস্টে লেখা হয়েছে, ‘ছোট্ট মেয়েরা প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা এইভাবে পুজো করার পর, মাসের শেষ দিনে ভোগ দিতো। সেটা বেশ খুশির দিন। ভোগ তৈরি হতো চিঁড়ে, দুধ, কলা, বাতাসা দিয়ে। সঙ্গে থাকতো অন্যান্য ফল, আলাদা থালায়। রোজকার মতো ওইদিনও পুজো করে নিতে হতো সন্ধ্যেবেলা। কিন্তু ভাসানোটা ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগে। তখন তাদের বেশ কান্না পেতো। দুটো কারণ, এক – পুজো শেষ তাই মন খারাপ, দুই – ওই ভোরে ঠাণ্ডায় চান করা।
প্রদীপ ভাসানোর জন্যে কলার ভেলা তৈরি করতে হতো। কলার ভেলায় আবার প্রদীপ আর মোমবাতি ওই ভাবেই কুলপাতা, দুর্বা, অনেক ফুল দিয়ে সাজিয়ে আর একবার পুজো করতে হতো। যারা একই পুকুরে ভাসাতো তারা আবার একজায়গায় জুটে গল্প করতো। কার প্রদীপ কতক্ষণ অব্দি জ্বলে, কারটা আগে আগে নিভে গেলো? যার প্রদীপ যত বেশিক্ষণ জ্বলতো তার চোখ মুখও ঠিক ততক্ষণই থাকতো প্রদীপের শিখার মতো উজ্জ্বল।
তারপর আসতো চানের পালা। যে শীতকে অগ্রাহ্য করে ঝপাং করে জ্বলে পড়ে যেতো পারতো, সে-ই সেরা। সবাই সবসময় চান করতো না। যারা করতো না তারা পরেরদিন সকালের আলোচলার পাত্রী হয়ে উঠতো। তাই নিয়ে একটু আধটু চাপা রাগ, মুখ ব্যাঁকানো থাকতো বটে তবে আহামরি কিছু ঘটতো না। ধীরে ধীরে অনেকেই ঠাণ্ডার জন্যে চান করা বন্ধ করে দিয়েছিলো।
এখন তো পুরো পুজোই বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে আমার বাড়ির কচিকাঁচাদের কাছে জানতে চাইলাম তারা এই পুজো করে কিনা। জানা গেলো তারা করে না, এমনকি নামটাও আগে কখনো শোনেনি। পাড়ার কেউ করে কিনা চানতে চেয়েও “না” উত্তরটাই পেলাম। তারা বললো আমরা তোমার কাছেই নাম শুনছি, আমাদের বাড়িতে বা পাড়ায় এখন কেউ এটা করে না।’
এই মাস জুড়ে আকাশে স্বর্গ বাতি দেবার রীতিও উক্ত অঞ্চলগুলিতে প্রচলিত রয়েছে। কার্তিক মাসের প্রথম দিন থেকেই স্বর্গে বতি দেওয়া হয়। একটি লম্বা বাঁশ পোঁতা হয় বাড়ির কাছে বা পুকুর পাড়ে। বাঁশের ডগায় রঙ্গীন কাগজ দিয়ে ঘেরা এক পাটাতনের উপরে প্রদীপ জ্বেলে টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়। বা একটি লণ্ঠন জ্বেলে বাঁশের ডগায় টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়। রাত আলো জ্বলে। ধারণা হয় এই আলোয় পথ চিনে মর্তে আসবেন পূর্বপুরুষেরা। আবার কেউ কেউ আলো জ্বেলে ফানুস উড়িয়ে দেয় পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে। এটা পরে চালু হয়েছে। লণ্ঠন টাঙ্গিয়ে দেওয়ার রীতি চালু রয়েছে বহুকাল।
ডি এইচ সাহা তার ফেসবুকে লিখেছেন, পুরো কার্তিক রজনীতেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ আকাশ বাত্তি বা আকাশ প্রদীপ জ্বালিয়ে থাকেন। প্রতি সন্ধ্যায় ঘরের বাইরে একটি দীর্ঘ বাঁশের মাথায় ছোট বাঁশের ফ্রেমে, হরেক রঙিন কাগজে মোড়া বাক্সে প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বেলে তুলে দেওয়া হয়। দূরে থেকে গ্রামের এমন আলো আজও কোথাও কোথাও দেখা যায়। আবার কোথাও তুলসী তলায় একটি লম্বা খুঁটির মাথায় প্রদীপ জ্বেলে রাখা হয়। দীপাবলীর রাতে এই আকাশ প্রদীপ বা স্বর্গ বাতি জ্বলে পুরো চার প্রহর। মৃত আত্মীয়গণ স্বর্গ থেকে পথ দেখে আসার জন্য তাদের উত্তর পুরুষরা এই আয়োজন করে থাকেন। লোক-বিশ্বাস, এই আলোর পথে পূর্ব পুরুষেরা স্বর্গলোক থেকে নেমে এসে দেখে যাবেন তাঁদের রেখে যাওয়া ভিটেতে তাঁদের বংশধরেরা কেমন আছেন । ১
কুলকুলোতির গানে ভাতৃত্ব বোধ ও স্নেহবতীর সুখ স্বাচ্ছন্দের কামনা রয়েছে। কূলকুলোতি কথার অর্থ কুলের লক্ষী। আদর্শ বোন বা আদর্শ নারীর গুনাবলী অর্জনের লক্ষ্যে এবং ভাইদের মঙ্গল কামনায় এই ব্রত বা উৎসব। কুলকুলোতি সম্বন্ধে ছাপানো কোন বইতেই আলোচনা বা উল্লেখ নেই। শুধু ফেসবুকে কেউ কেউ এব্যাপারে তাদের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। সেই অভিজ্ঞতার নিরীখে এবং ওইসব অঞ্চলের মানুষদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কুলকুলোতি বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে কুলকুলোটি ব্রতর গান বা পাঁচালী গাওয়া হয়ে থাকে। এগুলি উদ্ধৃত করে আলোচনা করা হল।
অরুন ঠাকুর বরণে।
ফুল ফুটেছে চরণে।
এ ফুলটি তুলবে যে
সাত ভাইয়ের বোন সে।
সাত ভাইরে সাঁতুল তুল।
আমার বোনটি পারুল ফুল।
সাত সতীনের সাত কৌটো
আমার বোনের নবকৌটো।
নবকৌটো নড়ে চড়ে
সাত সতীনের মুখটি পুড়ে।
কার্তিক মাসের রাশে।
ধূপধুনো ভাসে।
গানটি সর্বত্র যে একই বা এক রকম সুরে গাওয়া হয় তা নয়, গানের কথা অনেক ক্ষেত্রে বদলে যায়, কোথাও বেশ দীর্ঘ হয় এই গান। তবে গানের মূলভাব বা বিষয়বস্তু একই থাকে। এটিকে ঠিক গান বলা যায় না। এটি অনেকটা পাঁচালী ঢঙের কবিতার মত করে পরিবেশন করা হয়। একসঙ্গে সকলে মিলে উচ্চারণ করার সময় স্বতঃস্ফূর্ত সুর যুক্ত হয়। তবে যেখানে সঙ্গী-সাথী থাকেনা সেখানে একা একাও গাওয়া হয়। বা আবৃত্তি করা হয়। প্রায় সব জায়গাতেই এই গানের সুর প্রায় একই রকম। ভিন্ন কথার ‘কুলকুলোতি’ গানের কয়েকটি উদাহরণ এখানে দেওয়া হল।
কবিতা ঘোষাল ঘোষ তাঁর ছোট বেলার লোকাচার সম্বন্ধে উল্লেখ করে লিখেছেন, তাঁরা ছোটবেলায় বাড়িতে কুলকুলোতি পুজো করতেন। গান গেয়ে নানা লোক উপকরণ দিয়ে পুজো বা ব্রত উদজাপন করা হত। তাঁরা যে গান গাইতেন সেটি নীচে উল্লেখ করা হল।
কুলকুলোতি কুলোবতী,
সাত ঘরে দিয়ো বাতি ৷
অরুণঠাকুর বরণে,
ফুল ফুটেছে চরণে ৷
এই ফুলটি যে নেবে,
সাত ভাইয়ের বোন হবে৷
কার্তিক মাসে রাসে,
ধূপধূনো ভাসে৷
ফুলমালা আর আলোর মালা,
ছোট্টো ভেলা দোলায় দোলা৷
কুলোবতীর হাতের নাড়া,
ভেলা ভাসে গন্ধে ভরা৷
এই গন্ধ যেদিক যায়,
সাত ভাই পাই সেথায় ৷
এসো আমার সাত ভাই,
তার জন্য ভেলা ভাসাই ৷
সাতটি ঘরে বাতি দিই,
কুলোবতীর পুণ্যি নিই৷
দেহের ঘর শুদ্ধ করি,
তোমায় ঠাকুর গড় করি ৷২
গড়বেতার তপন আচার্য লিখেছেন, 19 January ·
‘দেখতে দেখতে কার্তিক থেকে পৌষ তিনটি গ্রাম্য উৎসবের মাস প্রত্যেক বৎসরের মতো অতিক্রান্ত হয়ে গেল। গড়বেতা ও সংলগ্ন গ্রামকেন্দ্রিক উৎসবগুলি আবহমান কাল ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং এগুলি গড়বেতার নিজস্ব উৎসব ও সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে। যদিও আধুনিকতার স্পর্শে এই তিনমাসের তিনটি মুখ্য উৎসব গৌণ হয়ে গেছে’।৩
কার্তিক মাসে কুলকুলোতি অঘ্রাণ মাসে ইতু পুজো, পৌষ মাসে টুসু ।
অনামিকা সরকার লিখেছেন, Anamika Sarkar 19 January
‘তিনমাস ধরে এই উৎসবগুলি একসময় প্রাণবন্ত করে রাখতো গড়বেতাকে। কুলকুলোতি টুসু ও ইতুপুজো ছিল একান্তই মেয়েদের। ইতুর কোন গান আমি করতে শুনিনি। টুসুপুজোও ছিল মূলতঃ গ্রাম্যসঙ্গীত নির্ভর। কুলকুলোতি হোত তুলসীতলায় একটি গর্ত খুঁড়ে প্রতি সন্ধ্যায় ফুল,কুলপাতা, তুলসী, দুর্বাঘাস নিয়ে সমবেত ভাবে গান গেয়ে পুজো করা হোত’।৪
অনামিকা সরকার উদ্ধৃত গানটি এই রকম-
ফুল দেওয়ার মন্ত্রগান ছিল-
কুলকুলোতি কুলোবতি,
সাত ঘরে সাত দিও বাতি;
অরণ ঠাকুর বরণে,
ফুল ফুটবে চরণে;
এই ফুলটি তুলবে যে
সাত ভাইয়ের বোন সে,
কার্তিক মাসের রাসে
কলার ভেলা ভাসে;
ফুল দিলাম, তুলসী দিলাম
স্বর্গে দিলাম বাতি
সব ঠাকুরকে প্রণাম করি
লক্ষ্মী সরস্বতী।
কুলপাতার মন্ত্রগান-
কুলগাছ কুলগাছ ঝাঁকুড়ি,
সতীন বেতীন মাকুড়ি,
সাত সতীনের সাত কৌটা,
আমার একটি নবকৌটা;
নবকৌটা নড়ে চড়ে,
সাত সতীনের মুখটি পোড়ে।
ওরে পাখি ময়না,
সতীন যেন হয়না।
দুর্বা দেওয়ার মন্ত্রগান –
দুর্বা দুর্বা নারায়ণ
তুমি দুর্বা ব্রাহ্মণ,
তোমার শিরে ঢালি জল
অন্তকালে পাবো ফল।
তুলসীপাতা দেওয়ার মন্ত্রগান-
তুলসী তুলসী মাধবীলতা,
তুমি তুলসী কৃষ্ণকথা,
কৃষ্ণকথা রইল মনে
জল ঢালি তোমার শ্রীচরণে।৫
সেখানে পুরো কার্তিকমাস জুড়ে আকাশপ্রদীপ জ্বালানো হোত। এখনো হয়। গড়বেতার তপন আচার্যর বাড়ির কাছে বা আশপাশের এলাকায় এই আকাশপ্রদীপ জ্বালাতেন ‘কুমোর পাড়ায় সুভাস দাস ও আলোক দাসের বাবা কাকারা। একমাস ধরে কুলকুলোতি পার্বণ পালন করার পর কলার ভেলায় একটি প্রদীপ জ্বেলে কুলকুলোতি ঠাকুরকে কোন পুকুরে বা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হোত। তারপর দিন থেকে শুরু হোত ইতুপূজা’।৬
আকাশ প্রদীপ কার উদ্দেশ্যে দেওয়া হত বা হয়ে থাকে তা নিয়ে মতান্তর আছে। বেশিরভাগ মানুষ পূর্বপুরুষের পথ চেনাতে আলো দেখানোর জন্য আকাশে আলো তুলে ধরেন। আবার কেউ কেউ দেবতাদের উদ্দেশ্যে আলো দেন। তাদের ধারণা দেবতারা সুখ সম্পদ শষ্য দান করে এই সময় আলো দেখালে। অনেকে আবার দুটোকেই বিশ্বাস করেন। একজন বিভিন্ন গ্রন্থের আলোচনা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘কার উদ্দেশে এই প্রদীপ জ্বালানো হয় বলা খুব মুশকিল। সুবলচন্দ্র মিত্রের সরল বাঙ্গালা অভিধান অনুয়ায়ী আকাশদীপ বা আকাশপ্রদীপ শব্দের অর্থ হল লক্ষ্মী-নারায়ণের উদ্দেশে কার্তিক মাসে উঁচু বাঁশ প্রভৃতির উপর শূন্যদেশে যে প্রদীপ দেওয়া হয়। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস সঙ্কলিত ও সম্পাদিত বাঙ্গালা ভাষার অভিধান অনুযায়ী হিন্দুগৃহে দেবোদ্দেশে আকাশে যে দীপ দেওয়া হয়; বাঁশ পুঁতিয়া তার আগায় এই দীপ বাঁধিয়া দেওয়া হয় এবং কার্তিকমাস-ভোর প্রতি সন্ধ্যায় ঐ দীপ জ্বালা হয়। রাজশেখর বসু সংকলিত চলন্তিকা আধুনিক বঙ্গভাষার অভিধান অনুযায়ী, কার্তিক মাসে উঁচু বাঁশ ইত্যাদির উপরে যে প্রদীপ দেওয়া হয়। প্রথমে নির্দিষ্ট ভাবে লক্ষ্মীনারায়ণের নাম করা হলেও পরে সার্বিক ভাবে দেবতার কথা বলা হল এবং শেষে কার উদ্দেশে এই প্রদীপ তার উল্লেখ নেই।’৭
বিভিন্ন বৈষ্ণবীয় গ্রন্থে কার্তিক মাসে দীপ জ্বালানোর কথা বলা হয়েছে। কার্তিক মাসে দীপ জ্বালালে স্বয়ং বিষ্ণু প্রীত হন। তিনি তার সব পাপ দূর করেন। এই রকম আরো নানা ক্তহা বলা হয়েছে। যেমন শ্রীহরিভক্তিবিলাস গ্রন্থের ১৬শ বিলাস অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কার্তিক মাসে দেবালয়ে ভক্তিভাবে দীপদান, অখন্ড দীপাবলীর আয়োজন, বাড়িতে বাড়িতে দীপমালা সজ্জা ও আকাশ প্রদীপ দান করলে ভগবান শ্রীহরি প্রীতিলাভ করেন। ‘স্কন্দ পুরাণে’ বলা হয়েছে যে যদি কেউ ঘিয়ের প্রদীপ বা তিল তৈলের প্রদীপ বিষ্ণু মন্দিরে কার্তিক মাসে প্রজ্জ্বলিত করেন তাহলে সে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ করেন। কারও বংশে কোন সন্তান যদি কার্তিক মাসে বিষ্ণু মন্দিরে দীপদান করার মাধ্যমে শ্রীবিষ্ণুর প্রীতিসাধনে উদ্যোগী হয়, তাহলে বংশের সকলেই মুক্তি লাভের অধিকারী হয়। এমনকি কারও যদি মন্দার পর্বতের মতো বিপুল পরিমাণ পাপও সঞ্চিত থাকে, কার্তিক মাসে ভক্তিসহকারে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের মন্দিরে দীপদান করলে নিঃসন্দেহে তাঁর সমস্ত পাপ বিনষ্ট নয়।৮
সোমা দত্ত লিখেছেন, ‘আমার ছেলের হাতে বানানো #প্রদীপ…..এগুলো ঠিক দীপাবলীর প্রদীপ নয়…কারন ওগুলো হয় ,বেশ বড় আকারের এবং লম্বাটে…কিন্তু এগুলো গোল গোল আকৃতির এবং আকারে বেশ ছোট হয়….এগুলির নাম #কুলোবাতি….’৯
‘আমরা ছোটবেলায় জাঠতুতো ,খুড়তুতো সব বোনেরা মিলে কুলকুলোতি পূজা করতাম….পুকুর পাড়ের কুল গাছের গোড়া থেকে মাটি কেটে এনে …সেই মাটি দিয়ে গোল গোল পাকিয়ে এইরকম প্রদীপ বানাতাম…ছাদে রোদ্দুরে শুকিয়ে নিয়ে মনের মতন রঙ করতাম…পুরো কার্ত্তিক মাস ধরে প্রতি সন্ধ্যা বেলা তিনটি করে এই প্রদীপ, কুলপাতা এবং কুল সহযোগে কুলদেবীর আরাধনা করতাম এবং তিন কুলের(পিতৃকুল,মাতুলকুল ও শ্বশুর কুল) অমরত্ব প্রার্থনা করতাম …তখন অতটা বুঝতাম না…কেন কি কারনে এই পূজা …তবে সব বোনেরা মিলে তুলসীমঞ্চের সামনে যখন শাঁখ আর উলুধ্বনী দিয়ে পূজা করতাম …সারাবাড়ি গমগম করত….
মেয়ে তো নেই…. তাই ছেলেকেই প্রদীপ বানানো শেখালাম…ব্রত টা না করুক…ঐতিহ্যটা মনে রাখুক’.১০
কুলকুলোতি সম্বন্ধে হুগলী জেলার বিদগ্ধ মানুষ সুফল চন্দ্র বাগ১১ জানিয়েছেন, কুলকুলোতি আর ‘যমপুকুর ব্রত’ কিছুটা সমার্থক। কোনো অঞ্চলে একই ব্রতকে কুলকুলতি ব্রত বলা হয় আবার কোথাও একই ব্রতকে বলে যমপুকুর ব্রত। আসলে এই ব্রতর উদ্দেশ্য যমকে সন্তুষ্ট রাখা। যাতে সে পরিবারের কারো উপরে রুষ্ট না হয়। যমপুকুর ব্রতর নিয়ম কুলকুলোতি থেকে কিছুটা ভিন্ন। যমপুকুর ব্রত পালন করা হয় পুকুর পাড়ে। আর কুলকুলোতি তুলসি তলায় ও পুকুরে ভেলা ভাসিয়ে।
স্বর্গ বাতি বা আকাশ প্রদীপ জ্বালানোর রীতি সম্পর্কে কল্যান চক্রবর্তী লিখেছেন, আকাশপ্রদীপ জ্বালানোর শেষ দিন: পূর্বপুরুষ কিংবা লক্ষ্মীনারায়ণের উদ্দেশ্যে তিলতেল বা ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালানো হয় স্তম্ভের মাথায়, বাড়ির ছাদ বা টালির চালে কিংবা তুলসী তলায়। আজকাল মোমবাতি বা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর রেওয়াজ হয়েছে। কার্তিক সংক্রান্তিতেই আকাশপ্রদীপ জ্বালানোর সমাপ্তি।১২
আকাশ প্রদীপ সম্পর্কে অনেক কথা আছে
অনেক জায়গায়। পূর্ব পুরুষতো বটেই, বর্তমান প্রজন্মের মধ্যেও জীবন ও মরনের এক সেতু
বন্ধন। যেন মৃত্যুর পরেই সব শেষ নয় এই কথা আকাশ প্রমান সত্য। এটা প্রমান হয় আকাশ প্রদীপে।
এ সম্পর্কে প্রতিদিন পত্রিকায় অনির্বাণ চৌধুরী
লিখেছেন, এই প্রদীপ আসলে দেহেরই প্রতীক। ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম- এই পঞ্চভূতে যেমন তৈরি হয় এই নশ্বর শরীর, মাটির প্রদীপটিও তাই! ক্ষিতি বা মাটি তার কায়া তৈরি করে। অপ বা জলে তা আকার পায়। তেজ বা আগুন আত্মার মতোই স্থিত হয় তার অন্তরে। মরুৎ বা হাওয়া সেই আগুনকে জ্বলতে সাহায্য করে। আর ব্যোম বা অনন্ত শূন্য জেগে থাকে তার গর্ভে।
পিতা আরও বলতেন, কার্তিক মাস ধরে এই প্রদীপ দেওয়া শুধুই বিষ্ণুর আশীর্বাদ যাচনা নয়। তাঁকে তো স্মরণ করতেই হবে। এই পৃথিবীকে পালন করেন তিনি, মৃত্যুর পরেও মানুষের উপরে রয়েছে তাঁরই অধিকার। তাই আকাশপ্রদীপ দেওয়ার সময় উচ্চারণ করা হয় মন্ত্র- ‘’আকাশে সলক্ষ্মীক বিষ্ণোস্তোষার্থং দীয়মানে প্রদীপঃ শাকব তৎ।‘’ আকাশে লক্ষ্মীর সঙ্গে অবস্থান করছেন যে বিষ্ণু, তাঁর উদ্দেশে দেওয়া হল এই প্রদীপ। এ বাদেও আকাশপ্রদীপ শীতঋতুতে মানুষের অগ্নিসঞ্চয়ের অভ্যাস। যা অনেক পরে রূপান্তরিত হয়েছে ব্রাহ্মণদের অগ্নিহোত্র রক্ষার আচারে।১৩
প্রানের বাংলা ডট কমও একথাই লিখেছে। এখানে শীলা চৌধুরী লিখেছেন, ‘আকাশপ্রদীপ ওই বিদেহী আত্মাদের আলোর কাঠি ,তার আলোতেই ওই আত্মারা স্বর্গে ফেরেন। তাই কার্তিক মাস এলেই দেখতাম বরেন্দ্র জেঠু, কেশব দাদা , মাখন দাদা নন্দ পিসিদের বাড়ির বাঁশ ঝাড় থেকে সবচেয়ে লম্বা বাঁশ কেটে খুব ভালো করে পরিস্কার করে সেই বাঁশের উপরের দিকে একটা ঢোলের মতো ফ্রেম কাপড় দিয়ে বানাতো। সন্ধ্যা হবার সঙ্গে সঙ্গেই মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে সেই ঢোলাকৃতির ফ্রেমের ভেতর বসিয়ে সূতো দিয়ে টেনে টেনে সেটাকে বাঁশের উপরে বেঁধে রাখতেন । আমাদের বাড়িতে আলাদা প্রতি বংশের ঘরেই এই আকাশ প্রদীপ পূর্ব পুরুষদের আত্মার উদ্দেশ্যে পুরো কার্তিক মাস জুড়েই জ্বালানো হয়’।১৩
কুলকুলোতি সম্বন্ধে বর্তমান বৈজ্ঞানিক ধারণা অন্য রকম। সেখানে বলা হয় কার্তিক মাসে আমন ধানের শিষে চাল জন্মানো শুরু হয় বা ধানে দুধের মতো তরল জন্মে। এটা খুবই সুস্বাদু। তাই প্রচুর পোকা জন্মে ধান ক্ষেতে। একরকম সবুজ রঙের ছোট্টো ছোট্টো পোকার নাম শ্যামা পোকা। এরা সব ধানের রস শুষে নেয়। ফসল নষ্ট করে। এই কীট পতঙ্গদের দমন করার উদ্দেশ্যেই আলো দান। আলোর দিকে তারা ধাবিত হয়। আগুনে পুড়ে মরে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রতিটি আলোর পাশে হাজার লক্ষ পতঙ্গ ভীড় করে থাকে ও পুড়ে মারা যায়। প্রতি বাড়িতে বা পুকুরে এরকম হয়। যখন ভেলায় আলো জ্বলে, পতঙ্গকূল আগুনের দিকে ছুটে আসে আর জলে পড়ে। মাছেরা তাদের খেয়ে ফেলে।
‘কার্তিক অমাবস্যায় যেখানে উত্তর ভারতে লক্ষ্মীর পূজা চলছে, পশ্চিমবঙ্গে দারুণ জাঁকজমকে ঘটা করে পালন করা হয় কালীপূজা। অবশ্য সেদিন আদি পশ্চিমবঙ্গ বাসিন্দারা, ঘটিরা, বাড়িতে লক্ষ্মীর পূজাও করে থাকেন। তবে আদি বাংলাদেশি হিন্দুদের, বাঙালদের, এই নিয়ম নেই; তা অনেকে বাড়িতেও কালী পুজো করেন, যদিও এই পুজোর বারোয়ারি ভাবে পালন হওয়ার প্রচলন বেশি। কদাচিৎ কালীপুজোর দিন আর দেওয়ালির দিন পৃথকও হতে পারে; দেওয়ালির তারিখটা একদিন পরে কিংবা আগেও পড়া সম্ভব। কেননা কালীপূজার লগ্ন অমাবস্যার মাঝরাত্রিতে ঠিক হয়, আবার দীপাবলির লক্ষ্মী পূজার লগ্ন নিশ্চিত করা হয় অমাবস্যার সন্ধ্যেতে, তাই পুজোর লগ্ন অনুযায়ী দুই পুজোর তারিখে মাঝে মাঝে অন্তর ঘটে থাকে। দেওয়ালির দিনে প্রদীপের আলোয় বাড়ি-বাড়ি ঝকমক করে ওঠে। নানান রঙের বাজিতে আকাশটাও রীতিমত চকচক করে থাকে। দীপাবলি সারি-সারি প্রদীপের আলোকে স্বর্গের দেবতাকে মর্তের কুটিরে বরণ করে নেবার উৎসব’।[১৪]
কালীপূজোর দিনে সন্ধ্যায় এইসব অঞ্চলে ‘ম্যড়াগাছ’ পোড়ানো হয়। আলোর রোসনাইও পোড়ে। সেও আলো-আগুনের উৎসব। প্রতি বাড়িতে একটি বড়ো লম্বা কাঁচা বাঁশের প্রতিটি গাঁটে দুটি করে তাল গাছের শুকনো পাতা বেঁধে বাঁশটিকে দশ বারোজন মিলে একটি গর্তের উপর দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। এটিকেই ‘ম্যাড়া গাছ’ বলে। সন্ধ্যায় বাড়ির সকলে মিলে একসঙ্গে ওই বাঁশের তালপাতা যুক্ত মহীরুহের সামনে জড়ো হয়। লম্বা পাট কাঠির গুচ্ছ সবাই হাতে নেয়, সকলেই সেগুলিতে আগে আগুন জ্বালিয়ে নিয়ে ওই দণ্ডায়মান শুকনো তালপাতার ‘ম্যাড়াগাছ’টিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ‘ম্যাড়াগাছ’। আর সবাই মিলে চিৎকার করে বলতে থাকে ‘ইঁজোলারে পিঁজোলা’। এই কথাটির হয়তো কোন বিশেষ অর্থ থাকবে, কিন্তু আমার তা জানা নেই। অজস্র পোকা- মাকড় ধানের ক্ষেত থেকে ছুটে আসে ‘ম্যাড়াগাছের’ দিকে। পুড়ে মরে।
কালী পুজোর উৎসবে ঘরে ঘরে দরজা-জানালায়, উঠোনে, তুলসি তলায়, দেব দেবীর বিগ্রহের সামনে আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘক্ষন ধরে আলো জ্বলে। পতঙ্গকূল পোড়ে। দীপালিকার মাহাত্ম এখানেই।
তথ্যসূত্র
১।https://www.facebook.com/permalink.php?id=171692543018713&story_fbid=317711441750155
২। https://www.facebook.com/search/top/?q=কুলকুলোতি&epa=SEARCH
৩।https://www.facebook.com/search/top/?q=কুলকুলোতি&epa=SEARCH.
৪।https://www.facebook.com/search/top/?q=কুলকুলোতি&epa=SEARCH/BOX ৫।https://www.facebook.com/search/top/?q=কুলকুলোতি&epa=SEARCH/BOX
৬।https://www.facebook.com/search/top/?q=কুলকুলোতি&epa=SEARCH/BOX
৮। https://www.facebook.com/sagar.bhowmick.58/posts/2469502046625787
৯।https://www.facebook.com/search/top/?q=কুলকুলোতি&epa=SEARCH ১০।https://www.facebook.com/search/top/?q=কুলকুলোতি&epa=SEARCH
১১। সুফল চন্দ্র বাগ হুগলী জেলার কালীপুর অঞ্চলের একজন বিখ্যাত লোক শিল্পী। গ্রামীন শিল্প ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে তাঁর চেতনা গভীর। একজন সাংস্কৃতিক কর্মী ও যাত্রা শিল্পী হিসাবে তিনি অধিক পরিচিত।
১২।কল্যানচক্রবর্তী-https://m.dailyhunt.in/news/india/bangla/presscard+news-epaper-pressc/kartik+sankrantir+katha-newsid-86546582
১৩। https://pranerbangla.com/আকাশ-প্রদীপ/#.XbsIwDAzbIU
১৪।https://bn.wikipedia.org/wiki/দিপাবলী