January 1, 2020

Rights of Mundas in Mahasweta Devi’s ‘Aranyer Adhikar’

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Irabati Mondol

Abstract: Mahasweta Devi’s novel, ‘Aranyer Adhikar,’ delves into the intricate tapestry of the Munda community’s rights in the backdrop of socio-political complexities. The narrative unfolds in the dense forests of Jharkhand, shedding light on the struggles and resilience of the Mundas, an indigenous group. As the characters grapple with displacement, exploitation, and the erosion of their cultural heritage, the novel becomes a poignant exploration of the rights denied to the Mundas. Through a powerful narrative, Mahasweta Devi magnifies the importance of understanding and preserving the rights of marginalized communities in the face of oppressive forces, inviting readers to reflect on the broader implications of social justice and human rights.

অরণ্যের অধিকার : মুণ্ডাদের অধিকার রক্ষার আবহ সঙ্গীত, ইরাবতী মণ্ডল, অধ্যাপিকা, দমদম মতিঝিল কলেজ

জনজাগরণ মূলক সাহিত্যের ক্ষেত্রে গান এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গান এমন একটা জিনিস যার সুর-তাল-লয় মানুষের মনে গভীর ভাবে প্রভাব বিস্তার করে। মানুষের মধ্যে বৈপ্লবিক চেতনার বিস্তার ঘটানো র ক্ষেত্রে গানের ভূমিকা অপরীসীম। রবীন্দ্রনাথের মুক্তধারা’ নাটকের ধনঞ্জয় বৈরাগী চরিত্র গানের মাধ্যমেই শিবতরাইয়ের প্রজাদের মধ্যে বৈপ্লবিক চেতনার প্রসার ঘটিয়ে ছিল। অরণ্যের অধিকার’উপন্যাস তার ব্যতিক্রম নয়।

অরণ্যের অধিকার মুণ্ডা সমাজকেন্দ্রিক জনজাগরণেরই আখ্যান। ঔপন্যাসিক মহাশ্বেতা দেবী ১৮৯৯-১৯০০ সালের উলগুলানকে বিষয়ের কেন্দ্রে রেখে ভারতের তথা কৃষ্ণ ভারতের অধিকার রক্ষার আখ্যানকে এ উপন্যাসে জীবন্ত করেছেন। এক বিশাল জনগো ষ্ঠীর মানুষ বীরসাকে নেতা মেনে স্বাধিকার প্রাপ্তির লড়াইতে নেমেছিল। নেমেছিল শ্রেণী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে। ফলে এক বিশেষ সময়কালে ছােটনাগপুর, সিংভূম, পালামৌ এলাকার বিস্তৃত অঞ্চলের বিশাল জনগো ষ্ঠীর জাগরণ মন্ত্রে একদা কেঁপে উঠেছিল সময়। বীরসার উত্থান, নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা ও তেজোদৃপ্ত বিদ্রোহের মাধ্যমে সে জাগরণ এ উপন্যাসে মূর্ত হয়েছে। বীরসা নেতৃত্বে অধিকার রক্ষার এই সংগ্রামের আবহ সঙ্গীত হিসেবে ঔপন্যাসিক অরণ্যের অধিকারে বেশ কতকগুলি গান সংযো জনা করেছেন। এই উপন্যাসের গানগুলি এই প্রেক্ষিতেই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

অরণ্যের অধিকার উপন্যাসে গানের সংখ্যা ১২টি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে উপন্যাসের চরিত্রগুলির কেউ কেউ কখনো  একক ভাবে কখনো  সমবেত ভাবে গানগুলি গেয়েছে।

গানগুলি নিম্নরূপঃ

১।“হেওতে দিসুম সিরজাও”—হে পৃথিবীর স্রষ্টা

২।“বোলো পেবোলো পে হেগা মিসি হো নকা”–(ও ভাই, ও বোন, ও ছেলেরা, ছুটে যা, প্রাণ বাঁচা)

৩।“বেঠ বেগারী দিতে মোর কাদেঝরে লৌ গো ”

৪।“নে মুলুক দিসুম রে ধরতি আবায় হাইজি লেকায়ে ভাদ্রমাসে”(চল যাই আনন্দ করি, ধরতি আবাকে প্রমাণ করি।)

৫।“পায়ে পড়ি বলো  কত দূর চাল কাড়।”

৬।“চল হে মিতা চাল কাড়ে যাই, বনের বুকে চাল কাড়ে যাই।”

৭।“বো লো পে বো লো পে হেগামসি হো ন কা…।”

৮। “সিমরারে ফিরুন রাজা জয়” (জয় স্বর্গের ঈশ্বরের)

৯।“কোন দেশেতে নতুন রাজার জন্ম হল হে।”

১০। “খুদা পিঁপড়া যেমন যায়, তেমন সার বেঁধে।” ১০

১১।“জমিদারের অত্যাচারের যন্ত্রনায়।” ১১

১২। “জিলিবা জিলিবা/জোলো বা জোলো বা”(মোদের হাতিয়ার জ্বলছে হাতে) ১২

ভরমী, ধানী, সুনারা, গো তং ও কোমতার বড় মেয়ে গেয়েছে একটা করে গান। বাকী গান সমবেত কণ্ঠে। আখ্যানের বিশেষ মুহূর্তে, চরিত্রের বিশেষ বাঁক পরিবর্তনে, লড়াইয়ের বিশেষ পরিস্থিতিতে, উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীরা গানগুলি গেয়েছে। বেশিরভাগ গান বীরসার প্রস্তুতিতে মুখর। কিছু গান মুণ্ডারি জীবনের দিশেহারা অবস্থা ও সে অবস্থা অতিক্রমী জোট বাঁধার আহ্বান মূলক। মুণ্ডাদের উপর দিকুদের অত্যাচারের স্বরূপ ও উঘটিত হয়েছে কিছু গানে। আর রয়েছে উলগুলান তথা বিদ্রোহের, লড়াইয়ের, উদ্দীপনায় সংপৃক্ত কিছু গান। মূলতঃ চার রকমের বিষয়কে ভিত্তিমূলে রেখে রচিত হওয়া গানগুলির মূল সুর মুণ্ডা জীবনের আবহমান আলো ড়ন কেন্দ্রিক। খুটকাট্টি গ্রাম থেকে দিকু কর্তৃক তাদের উচ্ছেদ হওয়া, নিঃস্ব হওয়া, অত্যাচার প্রপ্তি এবং শেষাবধিসমগ্র মুণ্ডা সমাজের বিদ্রোহেনামার সঙ্গে সমান ও সমান্তরাল মেজাজে ভরপুর গানগুলি।

আখ্যানে সংযোজিত গানের অর্ধাংশই বীরসার প্রসস্তিমূলক। অত্যাচার লাঞ্ছিত, অজ্ঞানতা লাঞ্ছিত, দিকুদের দ্বারা লাঞ্ছিত মুণ্ডা সমাজকে জনজাগরণে মাতিয়ে তুলেছিল বীরসা। অরণ্যের অধিকারের সবটুকু তাই বীরসাময়, – বীরসা কেন্দ্রিক। বীরসা উলগুলানের হো তা এবং বীরসা ধরতি আবা-বীরসার এ জীবন শুধু আখ্যানের ঘটনায় নয়, গানেও মূর্ত।

বীরসার প্রশস্তি মূলক গান গুলির প্রথম গান গাওয়া হয়েছে বীরসার মৃত্যুর পর। জেলে বীরসার মৃতদেহ সনাক্ত করণের জন্য সকল মুণ্ডা বন্দীদের বীরসার দেহ বেড় দিয়ে হাঁটানো র সময় ভরমি হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়েছে। পড়ে গাইতে শুরু করেছে “হেওতে দিসুম সিরজাও /নি’আলিয়া আনাসি’/ আলম আন্দুলিয়া/ আমা’ রেগে ভরো সা/ বিশ্বাস মেনা।।”১৩ (হে পৃথিবীর স্রষ্টা,/আমাদের প্রার্থণা ব্যর্থ কর না/ তো  মাতে আমদের পূর্ণ বিশ্বাস।।)

নাটক -অরণ্যের অধিকার

জেল সুপার আনডার সন চাইছিল বীরসাকে সামান্য মানুষ বলে প্রতিপন্ন করতে তার বিরুদ্ধে ভরমির এই গান। ভরমি যেন, সমগ্র মুণ্ডার হয়ে জানিয়ে দেয় ভগবান বীরসার প্রতি তাদের অটুট বিশ্বাস আছে। ভগবানের মরণ নেই, উলগুলানের ও শেষ নেই।

বীরসা নিজেকে ভগবান বলে ঘোষণা করার পর হাজারো  মুণ্ডা তাকে দেখতে চলেছে। পথে যেতে যেতে তারা গান ধরেছে। সেই গান সুনারা শুনেছে—“নে মুলুক দিসুমরে ধরতি আবায়ে হাইজি লেখায়ে ভাদ্রমাসে/মানো য়া হো নকো রসিক তানারে ভাদ্রমসে….”। ১৪ (এই দেশেতে ধরতি আবা জন্মালো  গো  ভাদ্রমাসে… চল যাই আনন্দ করি…. সে আমাদের দুশমনদের বন্দী করবে ভাদ্রমাসে।)* পথিক মুণ্ডাদের এই গান কেবলমাত্র বীরসার উপর ভগবানত্ব আরো পিত হওয়ার জন্য প্রসস্তি নয়—বরং দিকু, অত্যাচারী, মুণ্ডাদের সুখ-শান্তি স্বাচ্ছন্দ্য কেড়ে নিয়েছে যারা, বীরসা তাদের বন্দী করবে এমন বাস্তবসন্দর্ভের ইঙ্গিত আছে এর মধ্যে।

“পায়ে পড়ি বলো  কতদূর চাল কাড়? আমি ধীরে যাব, শুনবতার বাণী”১৯ কিম্বা “চল হেমিতা চাল কাড়ে যাই,বনের বুকে চাল কাড়ে যাই/ তারে দেখতে চল যাই/সবাই যায় মো রাও চল তারে দেখতে যাই…।”১৫

এই গান দুটি ও সুনারা শুনেছে। সুনারার প্রেক্ষিতে গান দুটির তাৎপর্য অনেক। কেন না, বালক সুনারা যে একদিন সেবক পাট্টা নামক  দীর্ঘদিনের অভিশাপ ভেঙে বেরিয়ে আসবে, আসবে বীরসার উলগুলানের মন্ত্রে মাতো  য়ারা হয়ে— এগান তারই উদ্দীপন ভিত্তি। আখ্যানের সঙ্গে সঙ্গীত সম আবহে বাঁধা। আখ্যান যে জন চেতনার কথা বলছে গানে রয়েছে তার ইঙ্গিত। গান তাই মারাত্মক রকমের প্রাসঙ্গিক। অরণ্যের অধিকার উপন্যাসের একটি গান—‘বেঠ বৈরাগীর দিতে মোর কাঁদে ঝরে লৌগো’১৬ একই সঙ্গে মুণ্ডাদের উপর নেমে আসা দিকুদের অত্যাচারে নিপীড়নের স্বরূপকে যেমন উঘটিত করেছে, তেমনি একদা স্বচ্ছন্দে থাকা মুণ্ডাদের জীবনের বর্তমান রিক্ততার ও প্রকাশ ঘটিয়েছে।

অরণ্যবাসীদের উৎসব

দিকুদের অত্যাচারে বাস্তুচ্যুত, স্বধর্ম চ্যুত মুণ্ডা সমাজ স্বাধিকার প্রাপ্তির জন্য বার বার বিদ্রোহ করেছে। ১৮৩১-৩২ সালের কোল বিদ্রোহ, ১৮৫৫-৫৭ সালের হুলে, ১৮৮৮-৯০ সালের মুলকুই লড়াইয়ে তার প্রমাণ মেলে। মুণ্ডারা দলবদ্ধ হয়েছে, নেতৃত্ব বিহনে কখনো  দিশেহারা হয়েছে, পুনরায় জোট বেঁধেছে। মুণ্ডা জীবনের এই ধারাক্রম, তাদের দিশেহারা অবস্থা ও সে অবস্থা অতিক্রমী জোট বাঁধার আহ্বান মূলক একটি গান অরণ্যের অধিকারে সংযুক্ত।

| “বো লো পে বো লো পে হেগা মিসি হো ন কো।/ হো ইও ডুডুগার হিজুতানা,/ বো লো পে / ও তে রে ডুডুগার সিরমা রে কো আনসি।/দিসুম তাবুবুআল তানা/ বেলো পে…/ তাই ওম তে দো হো রা কাপেনামিয়া / দিসুম তাবুনুবা জানা / বো লো পে….।“ ১৭  (ও ভাই, ও বো ন, ও ছেলেরা, ছুটে যা, প্রাণ বাঁচা/ আঁধি উঠেছে/ ও ভাই…। ঝড় মাটির বুকে, আকাশ ঢাকা কুয়াশায়।/ আমাদের দেশ দেখ ওই ছিনিয়ে নিয়ে গেল।/ ও ভাই…/ পরে আর পথ পাবিনে রে।/ সব যে আঁধারে আঁধারে।/ ও ভাই….)

এ গান আহ্বানের গান। সকলকে ডাকার গান। এ গান যেমন দিশেহারা হবার গান তেমনি জোট বাঁধার আহ্বানের ও গান। লড়ায়ের গানের প্রসঙ্গে “জিলিবা জিলিবা/ জোলো বা জোলো বা/পান তিয়া কানালে বীরসা হে।/ তিরো দা সেদেরা / লেনগা তিরিয়া/ জোম তিরেসার / পান তিয়া কানালে বীরসা হে।”১৮ (মো দের হাতিয়ার জ্বলছে হাতে/ ও বীরসা। আমরা চলেছি সার বেঁধে / বা হাতে ধনুক ডান হাতে তীর / মো দের হাতিয়ার জ্বলছে তাতে/ ও বীরসা আমারা চলেছিসার বেঁধে।) উলগুলানের চূড়ান্ত যত সমাগত ততই মুণ্ডারা তৈরি হয়েছে। লড়াইতে নামার জন্য উন্মুখ হয়েছে। হয়েছে নির্ভীক। আখ্যানের সত্য বচন এখানে গানের ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। সমবেত কণ্ঠে গীত এই গান কাহিনীর বাহক। উলগুলানের জন্য সমগ্র মুণ্ডারি সমাজ যে কতটা উন্মুখ,কতটা উৎকণ্ঠাময়, তার প্রমাণ এই গান।

উপসংহারে বলা যায় অরণ্যের অধিকারের গনগুলি সে অর্থে কাব্যমূল্য প্রধান নয়। কাব্য কৌশলের সূক্ষতা কিংবা রো মান্টিকতার সুরেলা ঝংকার তুলে সার্থকতা পায় না এ গান। বরং গানগুলি ভারবাহী,বক্তব্য প্রধান। বক্তব্য প্রধান অরণ্যের অধিকারের বক্তব্য প্রধান গানগুলি স্বতন্ত্র শিল্প মানদণ্ডে বিচারের দাবী রাখে। জন জাগরণের গীত মন্ত্রোচ্চারণ হিসেবে এ উপন্যাসের গানগুলি সত্যই তাৎপর্যবাহী, প্রাসঙ্গিকও।

তথ্যসূত্রঃ

১-১২। ডঃ সোহরাব হোসেন, জনজাগরণের উপন্যাস, অরণ্যের অধিকার,করুণা প্রকাশনী।

প্রথম প্রকাশঃজুলাই ২০০৫।  পৃষ্ঠা-৯৩

১৩।ঐ পৃষ্ঠা-৯৪

১৪। ঐ পৃষ্ঠা-৯৫

১৫। ঐ পৃষ্ঠা-৯৫

১৬। ঐ পৃষ্ঠা-৯৬

১৭। ঐ পৃষ্ঠা-৯৭

১৮। ঐ পৃষ্ঠা-৯৮

Reviewers: Dr. Chitta Mandal, Former Head, Dept of Life Long Learning, Rabindra Bharati University, Kolkata, West Bengal & Dr. Saswati Sinhababu, Assistant Professor, Saldiha College