Unveiling Nostalgia: Exploring Call Songs and Record Songs Through the Annals of Time
Anindya Banerjee
Abstract: This study delves into the captivating realms of call songs and record songs, timeless artifacts that echo through the corridors of history. Serving as auditory time capsules, these musical expressions not only mirror the cultural landscapes of their eras but also bear witness to the evolution of communication and recording technologies. Through a meticulous exploration of archival materials, musical compositions, and technological advancements, this research aims to illuminate the significance of call songs and record songs in preserving and transmitting cultural narratives. As we journey through the pages of the past, this investigation seeks to unravel the intricate tapestry of human expression embedded within these unique musical forms, fostering a deeper understanding of their enduring impact on societies across time.
অতীতের পাতা থেকে : কলের গান, রেকর্ডের গান
পণ্ডিত অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়
লেখাটা শুরু করা যাক প্রখ্যাত গায়িকা আঙ্গুরবালা দেবীর স্মৃতিচারণ দিয়ে।
স্কুলে যাওয়ার পথে একটি বাড়ির জানালার বাইরে ভিড় দেখে আর গানের আওয়াজ শুনে আমি আর আমার বোন বিজু দাঁড়িয়ে পড়লাম।
…জানলার গরাদের ভেতর দিয়ে ঘরের ভিতরে তাকিয়ে অবাক। …একটা কালো মতন কি যেন ঘুরছে আর একটা বিরাট চোঙের ভেতর থেকে একটা মেয়ে গান গাইছে।
বিজু বিজ্ঞ ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললে, ‘ওই যে বাক্স টা, ওটার মধ্যে একটা মেয়ে বসে গান গাইছে, আর চোঙটার ভিতর দিয়ে সেই গান বাইরে চলে আসছে’।
বিজু বললে, হাত পা সব কেটে নিয়ে, ছোট করে ওর মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে। গান তো গাইবে গলা দিয়ে, হাত পায়ের কি দরকার বল।
যারা কলের গান করে তাদের হাত-পা আগে থেকে কেটে কেটে ছোট করে দেয়।
আমি বললাম, মেয়েটা খাবে কি করে?
বিজু বললে, ‘ওই যে অতো বড় চোঙটা দেখছিস, ওটা তবে কি জন্যে? ওর ভেতর দিয়ে মাছ, মাংস, ভাত, রসোগোল্লা সব দিয়ে দেয়, আর মেয়েটা চোঙের ওপারে বাক্সোর ভেতর থেকে গপ্ গপ্ করে খেয়ে নেয়।
আঙ্গুরবালা দেবী এই স্মৃতিচারণা করেছেন দেশ পত্রিকার বিনোদন সংখ্যা বাংলার ১৩৯৯ ইংরেজি ১৯৯১ সালে। তার প্রায় ৯০ বছর আগে ১৯০১ সালের ২৭ শে জুলাই লন্ডনে ফোন কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসন হদ কলকাতায় এসে পৌঁছেছিলেন এদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্যে। কলকাতায় এসে ওয়াটসন বুঝেছিলেন, কলকাতা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল ব্যবসার জন্য আদর্শ জায়গা। তাই তিনি লন্ডনে গ্রামোফোন কোম্পানির কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন যে তারা যেন অবিলম্বে কলকাতায় একটি শাখা খোলেন এবং তার জন্য একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ রেকর্ডস পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কোম্পানির আবেদন কে গুরুত্ব দিয়ে ফ্রেডরিক উইলিয়াম গেইসবার্গ এবং তার সহকারী ডিলনার্টকে কলকাতায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। .১৯০২সালের ২৭শে অক্টোবর ছশো মোমের চাকতি আর রেকর্ডিং এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি নিয়ে কলকাতায় এসে উপস্থিত হন গেইসবার্গ ও ডিলনার্ট।
প্রথমে চৌরঙ্গী ওপরে ডালহৌসিতে গ্রামোফোন কোম্পানি তাদের অফিস খুলেছিল। গান রেকর্ড করার মতন উপযুক্ত শিল্পীর সন্ধানে তারা কলকাতার বেশ কয়েকটি থিয়েটার হলে যাতায়াত শুরু করেন। তখন থিয়েটারে অভিনেতা-অভিনেত্রীর গলায় গান শুনতে দর্শকরা ছিলেন আকুল। এই ব্যাপারে তাদের সাহায্য করেছিলেন জন ওয়াটসন হদ। ক্লাসিক থিয়েটারের অমরেন্দ্রনাথ দত্ত করিন্থিয়ান থিয়েটারের জামসেদজি ফ্লেমজি ম্যাডাম। একদিন এক ধনী বাঙালি বাবুর বাড়িতে নিমন্ত্রণে গিয়ে গান শুনলেন সেযুগের কিংবদন্তি শিল্পী গহরজানের কন্ঠে। আর তখনই তারা মনস্থির করে ফেলেছিলেন যে এই গহরজানের গান দিয়েই শুরু করবেন রেকর্ডিং। গওহরজান রেকর্ডিং করে্ন ১৯০২ সালের ১১ ও ১২ নভেম্বর। ৯টি বিভিন্ন ভাষায় গান গেয়ে গান রেকর্ড করে পারিশ্রমিক হিসেবে পেয়েছিলেন ৩০০০ টাকা। গহরজানের রেকর্ডিং-এর আগে ৮ নভেম্বর ১৯০২ সালে গেইসবার্গ শহরের একটি হোটেলে পরীক্ষামূলকভাবে রেকর্ডিং শুরু করেন অয়াল্টার স্ট্যানলে বার্কের এবং ক্লাসিক থিয়েটারের ১৪ ও ১৬ বছর বয়সী শশীমুখী ও ফনীবালার গান দিয়ে। গহরজান ছাড়াও আর যাদের গান রেকর্ডিং করেছিলেন সেইসব শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন শৈলী বা শীলাবাঈ, হরিমতি, সুশিলা, মিস আচারিয়া,মিস মহতাল,মিস কিরণ, পান্নালাল সরকার, লালচাঁদ বড়াল, ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
সেই সময় শিল্পীদের গান রেকর্ড করা হত মোমের চাকতিতে। পরে পাঠানো হতো জার্মানির হ্যানোভার শহরে। সেখান থেকে গলার রেকর্ডে ছাপ নিয়ে আসতো এদেশে। ১৯০৮-এ বেলেঘাটায় স্থাপিত হয় গ্রামোফোন কোম্পানির কারখানা। পরে এই কারখানা চলে আসে দমদমে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য থাকলেও ওয়াটসন চেষ্টা করেছিলেন এদেশের সংগীত সম্পদ, যা কিনা আটকে ছিল রাজদরবারের চার দেওয়ালের মধ্যে, জমিদারদের জলসাঘরে কিংবা বাঈজিদের কোঠায় সেই ঐতিহ্যকে রেকর্ডের মাধ্যমে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে। গ্রামোফোন রেকর্ড এর মাধ্যমে এদেশের ‘পপুলার কালচার’ যেমন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল, তেমনি হয়ে উঠেছিল সুখী গৃহকোণের প্রতীক।
গোড়ার দিকে গ্রামোফোন কোম্পানি ৭ ও ১০ ইঞ্চি রেকর্ড প্রকাশ করার পর ১২ ইঞ্চি রেকর্ড প্রকাশ করে। এগুলি বাজতে সময় নিত যথাক্রমে দেড়, তিন ও চার মিনিট। গ্রামোফোন কোম্পানি ছাড়াও কলকাতায় আরো বেশ কিছু রেকর্ড কোম্পানি গড়ে ওঠে সেগুলো হল হেমেন্দ্র মোহন বসুর এইচ বোসেস রেকর্ড, ফ্রান্সের প্যাথোফোন কোম্পানি,বেকা রেকর্ডস, জিতেন্দ্রনাথ ঘোষের মেগাফোন, চণ্ডীচরণ সাহার হিন্দুস্থান রেকর্ডস, ডোয়ার্কিন অ্যান্ড সন্স, ইউনিভার্সাল রেকর্ড, নেলোফোন ডিস্ক ফোনগ্রাফ রেকর্ড, রয়াল রেকর্ড, রামাগ্রাফ রেকর্ড, জেমস অপেরা রেকর্ড, সিঙ্গার রেকর্ড, ওডিয়ন রেকর্ড, এলিফোন রেকর্ড, সান ডিস্ক রেকর্ড, কমলা রেকর্ড ইত্যাদি।
গানের পাশাপাশি সে সময় রেকর্ডিং প্রকাশিত নাটকের অংশ হাসির গান ইত্যাদি রবীন্দ্রনাথের গানের রেকর্ডিং রবীন্দ্র সংগীত শব্দটির ব্যবহার শুরু হয় অনেক পরে প্রথমদিকে গীতিকার ও সুরকার উল্লেখ থাকত না বরাবরই রেকর্ড কোম্পানিগুলোর নিজেদের শিল্পী তালিকায় শ্রেষ্ঠ দের ধরে রাখতে তখন শিল্পী একটি রেকর্ড কোম্পানি চুক্তিবদ্ধ হয় অন্য কোম্পানিতে গান করতে পারতেন না আবার ব্যতিক্রম ছিল একই শিল্পী একাধিক কোম্পানিতে রেকর্ড করেছেন তবে এ ব্যাপারে কয়েকজন শিল্পীর আপত্তি থাকায় তাদের গান কখনো রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি।
গ্রামোফোন রেকর্ড বাতিল হওয়া শুরু হয় পঞ্চাশের দশক থেকে। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে বাজারে আসে বৈদ্যুতিন রেকর্ড। ষাটের দশক থেকে কমতে থাকে গ্রামোফোন রেকর্ড। একসময় সেটাও হারিয়ে যায়। ১৯৫৮ সালে এইচএমভি মাইক্রোগ্রুপ রেকর্ড প্রকাশ করে প্রথমবারের মতন। ১৯৫৯ সালে দমদমে লং প্লেইং রেকর্ড প্রসেসিং কারখানা স্থাপন করা হয়। এর সঙ্গে প্রকাশিত হতে থাকে ই পি রেকর্ড ও। এইচএমভি-র দেখাদেখি হিন্দুস্থান, সোনেলা, মেগাফোনও লং প্লেইং রেকর্ড-প্রকাশ করতে শুরু করে। যা অব্যাহত ছিল নব্বইয়ের দশকের শুরু পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় প্রযুক্তির নব নব উদ্ভাবনে ক্যাসেট সিডির রমরমা। আর স্মৃতির খাতায় নাম লেখালো গ্রামোফোন রেকর্ড বা কলের গান।