March 1, 2025

কীটপতঙ্গের নৃত্য ও যন্ত্রসংগীত: একটি সঙ্গীততাত্বিক বিশ্লেষণ-দেবাশিস মণ্ডল

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

 

সংক্ষিপ্তসার

কীটপতঙ্গ প্রকৃতির অন্যতম বিস্ময়কর শব্দ-সৃষ্টিকারী প্রাণী, যারা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছন্দবদ্ধ ও কাঠামোবদ্ধ শব্দ তৈরি করে। এখানে কীটপতঙ্গের শব্দ উৎপাদন প্রক্রিয়া, তার বিবর্তনমূলক গুরুত্ব এবং এর কার্যকরী ভূমিকা আলোচিত হয়েছে। কীটপতঙ্গরা প্রধানত ঘর্ষণ (Stridulation), টিম্বাল কম্পন (Tymbal Mechanism), ডানা স্পন্দন, মাটিতে আঘাত এবং স্থিতিস্থাপক কম্পনের মাধ্যমে শব্দ তৈরি করে। এই শব্দের মাধ্যমে তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে, সঙ্গী আকর্ষণ করে, নিজস্ব এলাকা চিহ্নিত করে এবং শত্রুর হাত থেকে আত্মরক্ষা করে। ঝিঁঝিঁ পোকা, সিকাডা ও মৌমাছির মতো কীটপতঙ্গের শব্দ উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই লেখাটি কীটপতঙ্গের সঙ্গীতের পরিবেশগত গুরুত্ব ও তাদের টিকে থাকার কৌশল তুলে ধরেছে। পাশাপাশি, কীটপতঙ্গের সুর ও মানুষের সঙ্গীতপ্রবণতার তুলনামূলক বিশ্লেষণও করা হয়েছে, যা জীবজগতের শব্দ ও ছন্দের সার্বজনীনতার প্রমাণ বহন করে। আলোচনার যে ফলাফল তাতে প্রাকৃতিক শব্দ পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরা হয়েছে। প্রকৃতির এই অনন্য প্রাণীগুলি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংগঠিত ও ছন্দময় শব্দ উৎপন্ন করে, যেমন স্ট্রিডুলেশন (ঘর্ষণজনিত শব্দ), টিম্বাল কম্পন, পাখার স্পন্দন, স্তরভিত্তিক ড্রামিং এবং স্থিতিস্থাপক কম্পন। এই শব্দসমূহ মূলত তাদের পারস্পরিক যোগাযোগ, সঙ্গী আহ্বান, এলাকা চিহ্নিতকরণ ও আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। ক্রিকেট, সিকাডা ও মৌমাছির মতো কীটপতঙ্গের শব্দ উৎপাদন প্রক্রিয়া বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই গবেষণায় তাদের পরিবেশগত গুরুত্ব এবং টিকে থাকার কৌশলগুলি তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও, এই গবেষণা কীটপতঙ্গের শব্দ ও মানব সংগীতের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে, যা প্রমাণ করে যে ছন্দ ও সুর প্রকৃতির সর্বজনীন ভাষা। ডারউইন থেকে শুরু করে আধুনিক বিজ্ঞানীদের গবেষণার আলোকে কীটপতঙ্গের ধ্বনির বিবর্তনগত অভিযোজনের বিষয়টি এখানে আলোচিত হয়েছে। “কীটপতঙ্গের সংগীত” ধারণাটি মৌমাছির ওয়াগল নৃত্যের (Waggle Dance) উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা একপ্রকার জটিল যোগাযোগ ব্যবস্থা, মানব নৃত্যরীতির সাযুজ্যপূর্ণ। গবেষণাটি আরও তুলে ধরে যে প্রাকৃতিক শব্দপরিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা শুধুমাত্র পরিবেশগত ভারসাম্যই বজায় রাখে না, বরং সাংস্কৃতিক ও সঙ্গীততাত্ত্বিক ভাবনাতেও গভীর প্রভাব ফেলে।

সূচক শব্দসমূহ:

কীটপতঙ্গ, শব্দ সৃষ্টি, ঘর্ষণ (Stridulation), টিম্বাল কম্পন (Tymbal Mechanism), ডানা স্পন্দন, শব্দ উৎপাদন প্রক্রিয়া, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সঙ্গী আকর্ষণ, পরিবেশগত গুরুত্ব, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, শত্রু প্রতিরক্ষা, প্রাকৃতিক শব্দ পরিবেশ, সঙ্গীতপ্রবণতা, ছন্দ ও শব্দের সার্বজনীনতা, ঝিঁঝিঁ পোকা, সিকাডা, মৌমাছি

 

পৃথিবীতে কত রকমের কীট-পতঙ্গ, পাখি, জীবজন্তু আছে জানা নেই। জানা নেই তাদের সবার জীবন যাত্রা, গান, সুর, ছন্দ। তাদের ভাষা আমাদের বোধগম্য নয়। কিন্তু আমাদের চারপাশে যে সব কীট-পতঙ্গ, পাখি, জীবজন্তুদের আমরা দেখি তাদের গান, বাজনা, সুর-তালের গতিবিধি আমাদের নজর এড়ায় না। হাজারো পতঙ্গ যাদের সবার নাম জানি না। এদের অনেকেরই নিজস্ব সুর আছে। নৃত্যও আছে এদের। যা অদ্ভুত ও অভিনব। নিজের সুর নিজের ছন্দ, নিজের নৃত্য। তাতে অনেকেরই সঙ্গে হয়তো মিল আছে, আবার অমিল আছে অনেক। একই প্রজাতির মধ্যে মিল বিস্তর। বিভিন্ন প্রজাতির সুর আলাদা, ছন্দ আলাদা আবার নৃত্যও আলাদা। আলাদা বলেই ডাক শুনে, রূপে গুনে, গন্ধে বর্ণে, নৃত্যে এরা  এদের নিজেদেরকে আলাদা করে চিনে নেয়। এরাও সগোত্রের প্রজাতিকে নিজের ডাক শুনে বা গন্ধে বর্ণে চিনতে পারে। একটি প্রজাতির মধ্যে নির্দিষ্ট সঙ্গীকে ডাক বা সুর শুনে চিনে নিতে ভুল হয় না। তা যদি না হোতো, ছোট ক্ষুদ্রাকার প্রাণী এই বৃহৎ পৃথিবীতে কীভাবে নিজের সঙ্গীসাথীদের খুঁজে পেত? কিভাবে হত তাদের ঘর সংসার? অনেক পতঙ্গের শ্রবণশক্তি যথেষ্ট । অনেক পাখি বা জীবজন্তুর শ্রবণশক্তি মানুষের চেয়ে অনেক বেশি। সুর শুনে সঙ্গীকে খুঁজে নেওয়া যেমন সহজ, তেমনি সুর শুনিয়ে আকর্ষণ করার প্রবণতা খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। “Every creature in nature relies on sound and rhythm in some form for communication. The calls of birds, the buzzing of insects and the roars of mammals are all fundamental tendencies shaped by evolution through natural selection. Through these melodies and rhythms, animals find their mates, warn their enemies, and ensure their survival.”[1] জীবজগতের প্রায় সব ধরণের প্রাণীই সুর সৃষ্টি করে নিজের প্রতি অন্যের আকর্ষণ বাড়াতে। এক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গেও কতকটা মিল রয়েছে। শিল্পসৃষ্টির অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মধ্যে একটা প্রশংসা পাওয়ার ইচ্ছা, দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

প্রকৃতিতে শব্দের এক অনন্য রূপ হলো কীট-পতঙ্গের সঙ্গীত। এটি শুধুমাত্র এক প্রকার শব্দ নয়, বরং প্রাণিজগতের ভাষা, যার মাধ্যমে কীটপতঙ্গরা যোগাযোগ স্থাপন করে, সঙ্গী আকর্ষণ করে এবং শত্রুর হাত থেকে আত্মরক্ষা করে। ডারউইন থেকে শুরু করে আধুনিক বিজ্ঞানীরা কীটপতঙ্গের এই সংগীত নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং এটি যে বিবর্তনীয় অভিযোজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, তা প্রমাণিত হয়েছে। কীটপতঙ্গদের এরকম কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হয় না। ডানার শব্দ, পিঠের উপরের পর্দার শব্দ, বুকের পাঁজর ঘসার শব্দ দিয়ে এরা শব্দ সৃষ্টি করে। যখন তা সুরে ছন্দে ধ্বনিত হয় তখন আমরা তাকে গান বা বাজনা বলি।

সে সুরেরও হয়তো ভাষা আছে। সে তাদেরই জানা। তবে সে গানের সুর এখন আমাদেরও সুর। সেই সুর আমাদের গানের মতই আবেদন সৃষ্টি করে। সাঁঝের বেলায় ঝিল্লির ডাক নিস্তব্ধতা বাড়িয়ে দেয়। নাটকে রাতের বা সন্ধ্যার দৃশ্য বোঝাতে গানই পরিবেশকে চিহ্নিত করে। বিভিন্ন পতঙ্গের গান, প্রকৃতির সব সুরই মানুষের শিল্প সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। এর বড় কারণ হল সৌন্দর্যবোধ বিশ্লেষণী ক্ষমতা। তা না হলে মানুষের গান এত নতুন ধারায় প্রবাহিত হত না। অন্যান্য জীব-জন্তুর মতই যান্ত্রিক হয়ে থেকে যেত। যাই হোক যে কথাটা আলোচনা করতে চাইছি তা হল অন্য জীবজগতের মধ্যে সুর বা ছন্দবোধ আছে কিনা? থাকলে তাকে তারা কিভাবে কাজে লাগাচ্ছে? বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। কিন্তু তা নিজস্ব অনুভূতির সঙ্গে মিলিয়ে বিচার করলে অনেক সহজ হয়ে যায়। কারণ সব জীবজন্তুর জীবনক্রিয়ার মধ্যে একটা মিল রয়েছে। সেই মিল থেকেই সুর ও ছন্দবোধ সম্পর্কে বা শব্দকে ছন্দের সঙ্গে মিলিয়ে সুরে পরিবেশন করার রীতি বিশ্লেষণ করলে জীব-জগতের সংগীতবোধের পরিচয় পাওয়া যাবে। এপ্রসঙ্গে Schafer, R. Murray  লিখেছেন, “সুর ও ছন্দ প্রকৃতির মৌলিক বৈশিষ্ট্য। পাখি, কীটপতঙ্গ ও অন্যান্য প্রাণী তাদের নিজস্ব ছন্দ ও ধ্বনির মাধ্যমে যোগাযোগ করে, যা এক ধরনের সংগীতেরই বহিঃপ্রকাশ। মানুষের সংগীতও প্রকৃতির এই ছন্দের অনুকরণ ও বিকাশ মাত্র।”[2]

পৃথিবীতে অনুমানিক ৫.৫ মিলিয়ন থেকে ৭ মিলিয়ন প্রজাতির কীটপতঙ্গ রয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে মাত্র প্রায় ১০ লক্ষ (১ মিলিয়ন) প্রজাতি বর্ণিত হয়েছে। কীটপতঙ্গরা আর্থ্রোপোডা (Arthropoda) পর্বের অন্তর্গত এবং ইনসেক্টা (Insecta) শ্রেণির সদস্য। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় প্রাণীগোষ্ঠী। প্রধান কীটপতঙ্গের শ্রেণি বিভাগ করা যেতে পারে। কীটপতঙ্গদের বিভিন্ন গোষ্ঠীতে ভাগ করা হয়। কোলিওপ্টেরা (Coleoptera) – বিটল বা গুবরে পোকা, সবচেয়ে বড় কীটগোষ্ঠী, ৪,০০,০০০-এর বেশি প্রজাতি রয়েছে। লেপিডোপ্টেরা (Lepidoptera) – প্রজাপতি ও মথ। প্রায় ১,৬০,০০০ প্রজাতি। ডিপটেরা (Diptera) – মাছি ও মশা ১,২৫,০০০-এর বেশি প্রজাতি। হাইমেনোপ্টেরা (Hymenoptera) – মৌমাছি, পিঁপড়ে ও বোলতা প্রায় ১,৫০,০০০ প্রজাতি। হেমিপটেরা (Hemiptera) – সত্যিকারের বাগ বা দুধরনের মুখবিশিষ্ট পোকা প্রায় ৮০,০০০ প্রজাতি। অর্থোপ্টেরা (Orthoptera) – ঘাসফড়িং ও ঝিঁঝিঁ পোকা প্রায় ২০,০০০ প্রজাতি। ওডোনাটা (Odonata) – ফড়িং ও জলফড়িং প্রায় ৬,০০০ প্রজাতি। ব্ল্যাটোডিয়া (Blattodea) – তেলাপোকা ও উইপোকা প্রায় ৮,০০০ প্রজাতি। তবে এখনও অসংখ্য কীটপতঙ্গ প্রজাতি অজানা রয়ে গেছে এবং নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হচ্ছে। কীটপতঙ্গ পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা পরাগায়ন, পচন প্রক্রিয়া এবং খাদ্য শৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সব কীটপতঙ্গ শব্দ তৈরি করতে পারে না। এদের শরীরে শব্দ উৎপাদনের জন্য কোন যান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন কীটপতঙ্গ শব্দের পরিবর্তে অন্যভাবে যোগাযোগ করে। প্রজাপতি ও মথ (Lepidoptera) – বেশিরভাগই নীরব এবং রাসায়নিক সংকেত (Pheromones) ব্যবহার করে যোগাযোগ করে। পিঁপড়ে (Hymenoptera) – কিছু পিঁপড়ে মৃদু শব্দ করতে পারে, তবে প্রধানত গন্ধের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। এফিড ও অন্যান্য ছোট পোকা (Hemiptera) – সাধারণত রাসায়নিক বা স্পর্শের মাধ্যমে সংকেত পাঠায়। কিছু কীটপতঙ্গ কেন নীরব থাকে তারও নির্দিষ্ট কিছু কারন রয়েছে।  বেঁচে থাকার কৌশল শব্দ না করলে শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়। এদের বিকল্প যোগাযোগ পদ্ধতি রয়েছে। অনেকে রাসায়নিক পদ্ধতি দৃষ্টিসংকেত পদ্ধতি বা স্পর্শ পদ্ধতি ব্যবহার করে। শারীরিক সীমাবদ্ধতার জন্য অনেক কীটপতঙ্গের দেহে শব্দ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো থাকে না। এরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য বিকল্প কিছু ব্যবস্থা করে। অনেক কীটপতঙ্গ ফেরোমোন নিঃসরণ করে, যা সঙ্গী আকর্ষণ করে, এলাকা চিহ্নিতকরণ করে, বিপদের সংকেত পাঠায় গন্ধ দিয়ে। পিঁপড়েরা খাবারের অবস্থান চিহ্নিত করতে ফেরোমোনের সুগন্ধি পথ তৈরি করে। প্রজাপতি ও মথদের  স্ত্রী মথ দূর থেকে পুরুষকে আকর্ষণ করতে ফেরোমোন নিঃসরণ করে। কিছু কীটপতঙ্গ উজ্জ্বল রঙ, পাখার নকশা বা আলোক উৎপাদনের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জোনাকি পোকা (Firefly) বিশেষ আলোর ঝলকানি দিয়ে সঙ্গীকে আকর্ষণ করে। প্রজাপতি  উজ্জ্বল রঙের পাখা শত্রুদের ভয় দেখায় বা সঙ্গী আকর্ষণ করে।

মৌমাছিরা  খাবারের উৎসের দিক নির্দেশ করতে ‘ওয়াগল ডান্স’ করে। ওয়াগল ডান্স হল মৌমাছিদের (Apis mellifera) এক বিশেষ ও জটিল নৃত্যভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, যা তারা খাদ্যের উৎসের অবস্থান, দিক, দূরত্ব ও মান সম্পর্কে অন্য মৌমাছিদের জানাতে ব্যবহার করে। এখানে সংক্ষেপে ওয়াগল ডান্স সম্বন্ধে উল্লেখ করা হল। যখন একটি অনুসন্ধানী মৌমাছি (forager bee) ফুলের মধু বা পরাগধানী খুঁজে পায়, তখন এটি মৌচাকের ভেতরে বিশেষ ধরনের নৃত্য করে, যা অন্য মৌমাছিদের সেই খাদ্যের অবস্থান বুঝতে সাহায্য করে। এই নৃত্যের দুটি প্রধান ধাপ রয়েছে এক, সোজা ওয়াগল রান (Straight Waggle Run)। মৌমাছিটি পেট কাঁপিয়ে এবং ডানা ঝাঁপটিয়ে সামনে দিকে সোজা দৌড়ায়। এই দৌড়ের কোণ খাবারের অবস্থান ও সূর্যের অবস্থানের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে। ০° কোণ (উপরের দিকে সোজা) যার অর্থ হল খাদ্য সরাসরি সূর্যের দিকে অবস্থিত। ৯০° ডানদিকে কোণ এর অর্থ হল খাদ্য সূর্যের ডানদিকে অবস্থিত। “For cavity-nesting honey bees, like the western honey bee (Apis mellifera) or Apis nigrocincta, flowers that are located directly in line with the sun are represented by waggle runs in an upward direction on the vertical combs, and any angle to the right or left of the sun is coded by a corresponding angle to the right or left of the upward direction.”[3]  ফেরত লুপ (Return Loops) পদ্ধতিতে মৌমাছিটি সোজা দৌড়ানোর পর বাঁ দিকে বা ডান দিকে ঘুরে আবার ফিরে আসে। এটি একটি ইংরেজী আট(৪) এর মতো চিহ্ন (Figure-Eight Pattern) তৈরি করে। “The distance between hive and recruitment target is encoded in the duration of the waggle runs. The farther the target, the longer the waggle phase.”[4] মৌমাছিটি এই নৃত্য একাধিকবার পুনরাবৃত্তি করে।ওয়াগল ডান্স এর অর্থ হল খাদ্যের দিক নির্দেশ করা। ওয়াগল রান এর কোণ সূর্যের সাথে খাবারের অবস্থানের দিক নির্দেশ করে। দূরত্ব নির্দেশ করা। ওয়াগল রান-এর সময়কাল (যত বেশি সময়, তত দূরে খাদ্যের উৎস)। খাদ্যের মান নির্দেশ করা। নাচের শক্তি ও উৎসাহ (যত বেশি জোরে নাচ, তত ভালো খাদ্যের মান)।

মৌমাছির বিভিন্ন ধরনের নাচ। ওয়াগল ডান্স  ১০০ মিটারের বেশি দূরের খাদ্যের উৎস নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। রাউন্ড ডান্স  ১০০ মিটারের মধ্যে থাকা খাবারের জন্য ব্যবহৃত হয়, কিন্তু এতে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকে না। “A waggle dance consists of one to 100 or more circuits, each of which consists of two phases: the waggle phase and the return phase. A worker bee’s waggle dance involves running through a small figure-eight pattern: a waggle run (aka waggle phase) followed by a turn to the right to circle back to the starting point (aka return phase), another waggle run, followed by a turn and circle to the left, and so on in a regular alternation between right and left turns after waggle runs.”[5]

কিছু পতঙ্গ স্পর্শের মাধ্যমে যোগাযোগ (Tactile Communication) করে। কিছু কীটপতঙ্গ অ্যান্টেনা, পা বা শরীরের অন্যান্য অংশ দিয়ে স্পর্শের মাধ্যমে সংকেত পাঠায়। পিঁপড়া ও উইপোকা একে অপরের শরীর স্পর্শ করে খাদ্য, বিপদ বা পথনির্দেশ সংক্রান্ত তথ্য দেয়। তেলাপোকা তাদের অ্যান্টেনা ব্যবহার করে চারপাশের পরিবেশ বুঝতে পারে।

কম্পন বা স্পন্দনের মাধ্যমে যোগাযোগ (Substrate Vibrations) করে বেশ কিছু প্রজাতির পোকা। এরা গাছের পাতা, মাটি বা অন্য কোনো কঠিন বস্তুকে কাঁপিয়ে সংকেত পাঠায়। গাছফড়িং ও এফিড (Treehoppers & Aphids) গাছের কাণ্ডে কম্পন সৃষ্টি করে সংকেত পাঠায়। মাকড়সা (যদিও এটি কীট নয়) জালের কম্পন থেকে শিকার বা সঙ্গীর উপস্থিতি বোঝে। ছদ্মবেশ ও আচরণগত কৌশল (Mimicry & Behavioral Adaptation) এর মাধ্যমেও অনেকে সংকেত পাঠায়। কিছু কীটপতঙ্গ অন্য প্রজাতির আচরণ বা শব্দ অনুকরণ করে বেঁচে থাকার কৌশল নেয়। পাতাপোকা ও কাঠপোকা নিজেদের গাছের পাতা বা ডালের মতো করে রাখে, যাতে শিকারিরা বুঝতে না পারে। কিছু প্রজাপতি বিষাক্ত প্রজাতির রঙ অনুকরণ করে শিকারিদের ভয় দেখায়। যদিও অনেক কীটপতঙ্গ শব্দ তৈরি করতে পারে না, তারা রাসায়নিক, দৃষ্টিগত, স্পর্শজনিত ও কম্পনের মাধ্যমে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করে। প্রকৃতির এই কৌশলগুলি তাদের বেঁচে থাকা, খাদ্য সংগ্রহ, এলাকা রক্ষা ও সঙ্গী নির্বাচনে সাহায্য করে।

গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য, ‘বাংলার কীট পতঙ্গ’ গ্রন্থে তাঁর নিজের এরকম কিছু অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। তাঁর জানা একজন, প্রায় প্রতিদিন বেহালা বাজাতেন। সে সময় প্রতিদিনই একটি মাকড়সা কিছু এগিয়ে এসে ছাদ থেকে সুতো ছেড়ে তাতে ঝুলে থাকতো। বাজনা বন্ধ হলেই আবার সুতো বেয়ে মাকড়সাটি উপরে উঠে যেত। ধাতব তারে আঘাতের শব্দে মাকড়সা ছন্দের সাথে সাথে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। দু’টি ঘটনাই কীট পতঙ্গের সংগীত প্রীতি, সুর ও ছন্দবোধ সম্পর্কে ধারণা দেয়। একটি পুরাতন বাড়িতে একটি মাকড়সাকে নিজের জাল থেকে অনেকটা নেমে এসে ঝুলে থাকতে প্রত্যক্ষ করা গেছে। গান শেষ হবার পর সে নিজের জালে ফিরে যেত। গোপাল ভট্টাচার্য লিখেছেন আর একটি অভিজ্ঞতার কথা। সন্ধ্যায় খোলা জায়গায় বন্ধুরা মিলে গান বাজনা করার সময় একটি একটি করে একদল ঝি ঝি পোকা এসে বসেছে তাদের গায়ে। আবার গান শেষ হতেই ফিরে গেছে নিজেদের জায়গায়। আবার গান শুরু হতেই একই ভাবে হাজির হয়েছে গানের আসরে। ড. স্কাভার নামের আর একজন গবেষক সজারুর কাঁটাকে ঘাসে সুর রচনা করতেন। আর আশপাশের সব ঝিঁঝি পোকার সুর রচনা করেই সে সুরের জবাব দিত। ভাবতে খুবই অবাক লাগে এত নিম্ন শ্রেণীর এবং ক্ষুদ্র প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে সম্পর্কে গভীর ভালবাসা কিভাবে সৃষ্টি হল? সুর ও ছন্দকে কিভাবে আয়ত্ব করল? আমরা দেখেছি সুর তাদের জীবনের বেশ কিছু ক্ষেত্রে জরুরী প্রয়োজন। পাশাপাশি হয়তো অনর্থক অন্য কারণে, নিজেকে এবং অন্যদের আনন্দ দেওয়া।

কীটপতঙ্গের শব্দ উৎপাদন পদ্ধতিগুলিও নানা ধরণের। বলা যায় এরা কণ্ঠ সঙ্গীত করে না। এদের সবই যন্ত্র সঙ্গীত। তবে এদের যন্ত্র হল এদের ‘গাত্র বীনা’। শরীর থেকেই যন্ত্রের মতো করে এরা সঙ্গীত সৃষ্টি করে বিভিন্ন পদ্ধতিতে। স্ট্রিডুলেশন (Stridulation) প্রক্রিয়ায় শরীরের দুটি অংশ ঘষে শব্দ তৈরি করা হয়। যেমন, ঝিঁঝিঁ পোকা (Cricket) ও গ্রাসহুপার (Grasshopper) ডানা বা পায়ের খাঁজযুক্ত অংশ ঘষে সংগীত সৃষ্টি করে (Alexander, 1962)। টিম্বল কম্পন (Tymbal Mechanism) করে শব্দ উতপাদন করে মূলত সিকাডা (Cicada)। তাদের উদরের পাশের ঝিল্লির আস্তরণ যুক্ত দুটি ড্রামের মতো অঙ্গ কম্পিত হয়। তার থেকে উচ্চ শব্দ তৈরি করে। “Contraction of the tymbal muscle causes the tymbal plate to swing inwards, acting as a lever so that the surface of the tymbal moves through more than twice the distance of muscle shortening.”[6] ডানা ও দেহের অংশের সংঘর্ষ (Wing Beating and Body Percussion)। কিছু পোকা তাদের ডানা দ্রুত স্পন্দিত করে শব্দ তৈরি করে। যেমন, মশা ও মৌমাছিরা ডানার দ্রুত কম্পনের মাধ্যমে গুনগুন শব্দ সৃষ্টি করে (Hoy & Robert, 1996)[7]। মাটিতে বা গাছে আঘাত (Drumming or Tapping) কিছু কীটপতঙ্গ যেমন উইপোকা (Termite) বা বিটল (Beetle) মাটিতে মাথা বা শরীর আঘাত করে সংকেত পাঠায় (Howse, 1984)[8]। বায়ু নির্গমন করে কিছু কীটপতঙ্গ তাদের শরীর থেকে জোর করে বাতাস বের করে শব্দ তৈরি করে। ফড়িং এবং মৌমাছিরা তাদের পেটের বায়ু থলি সক্রিয়ভাবে পাম্প করে শরীরের মধ্যে বায়ু প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

কীটপতঙ্গ বিভিন্ন কারণে শব্দ তৈরি করে, যার মধ্যে রয়েছে, সঙ্গীকে আকৃষ্ট করা। অনেক পুরুষ কীটপতঙ্গ স্ত্রীদের আকৃষ্ট করার জন্য শব্দ তৈরি করে। ৯৫৭ সালে, টমাস জে. ওয়াকার পুরুষ ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক এবং স্ত্রী পোকার প্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি দেখান যে স্ত্রী ঝিঁঝিঁ পোকা নির্দিষ্ট ছন্দের ডাক পছন্দ করে। ওয়াকারের এই গবেষণা কীটপতঙ্গের সংগীতের প্রধান উদ্দেশ্য সঙ্গী আকৃষ্ট করা বোঝাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিপদ থেকে রক্ষা, কিছু কীটপতঙ্গ বিপদ অনুভব করলে শব্দ করে অন্যদের সতর্ক করে। পুরুষ পোকারা তাদের নিজস্ব এলাকা ঘোষণা করতে এবং প্রতিযোগীদের সতর্ক করতে বিভিন্ন উপায়ে শব্দ ব্যবহার করে। উই পোকার সৈনিকরা তাদের অ্যান্টেনা দিয়ে দিক নির্ণয় করে এবং মাটিতে মাথা পিটিয়ে শব্দ তৈরি করে শত্রুর আগমন বার্তা প্রেরণ করে। এভাবে, শব্দের মাধ্যমে তারা তাদের এলাকা রক্ষা এবং প্রতিযোগীদের সতর্ক করতে সক্ষম হয়। যোগাযোগ, কীটপতঙ্গ একে অপরের সাথে যোগাযোগের জন্য শব্দ ব্যবহার করে। পুরুষ পোকারা নিজেদের এলাকা ঘোষণা করতে এবং প্রতিযোগীদের সতর্ক করতেও শব্দ ব্যবহার করে। শিকারি থেকে আত্মরক্ষার জন্য কিছু কীটপতঙ্গ উচ্চ কম্পাঙ্কযুক্ত শব্দ তৈরি করে যা শিকারিদের বিভ্রান্ত করতে সাহায্য করে। কিছু মথ বাদুড়ের আল্ট্রাসোনিক শব্দ শনাক্ত করতে পারে এবং প্রতিক্রিয়া হিসেবে নিজেও প্রতিরক্ষামূলক শব্দ তৈরি করে (Fullard, 1988)। . থমাস ডি. সিলি (Thomas D. Seeley) তার ১৯৯৫ সালে  “The Wisdom of the Hive: The Social Physiology of Honey Bee Colonies গ্রন্থে  মৌমাছিদের সামাজিক আচরণ, বিশেষত তাদের যোগাযোগের পদ্ধতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। এই বইয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন কিভাবে মৌমাছিরা বিশেষ ধরনের গুঞ্জনধ্বনি এবং নাচের মাধ্যমে নিজেদের কলোনির অন্যান্য সদস্যদের খাবারের উৎস সম্পর্কে তথ্য জানায়। এটি মৌমাছিদের জটিল সামাজিক কাঠামো ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া বোঝার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা।

বিজ্ঞানীরা কীটপতঙ্গের সংগীতের মাধ্যমে কীটনিয়ন্ত্রণ (Pest Control) করার উপায় খুঁজছেন। বিজ্ঞানীরা কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য সঙ্গীত বা শব্দ ব্যবহার করে নতুন পদ্ধতি অনুসন্ধান করছেন। এই পদ্ধতিতে কীটপতঙ্গের আচরণে প্রভাব ফেলে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ ব্যবহার করে কীটপতঙ্গের প্রজনন বা খাওয়ার অভ্যাসে বাধা সৃষ্টি করা সম্ভব। এটি একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি হতে পারে, কারণ এতে রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার কমানো যায়। কীটপতঙ্গের সংগীত প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি, যা শুধু সৌন্দর্যের প্রতিফলন নয়, বরং জীববৈচিত্র্যের টিকে থাকার একটি অপরিহার্য অংশ। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ এই সংগীতকে পর্যবেক্ষণ করছে এবং আধুনিক বিজ্ঞান এর গভীরে প্রবেশ করে তার তাৎপর্য অনুধাবন করছে।

গ্রন্থপঞ্জি

  1. Bhattacharjee, Gopal Chandra. Banglar Kit Patanga. Kolkata: Bangiya Sahitya Parishad, 1950.
  2. Schafer, R. Murray. The Soundscape: Our Sonic Environment and the Tuning of the World. Rochester, VT: Destiny Books, 1977.
  3. Darwin, Charles. The Descent of Man, and Selection in Relation to Sex. London: John Murray, 1871.
  4. Wilson, Edward O. The Insect Societies. Cambridge, MA: Harvard University Press, 1971.
  5. Walker, Thomas J. “Acoustic Communication in Insects.” Science, vol. 166, no. 3906, 1969, pp. 891-895.
  6. Alexander, Richard D. Animal Communication: Sound Production in Arthropods and Vertebrates. Bloomington, IN: Indiana University Press, 1967.
  7. Huber, Franz, et al. Cricket Behavior and Neurobiology. Ithaca, NY: Cornell University Press, 1989.
  8. Michelsen, Axel. “Biophysics of Sound Communication in Insects.” Trends in Neurosciences, vol. 21, no. 6, 1998, pp. 279-286.
  9. Drosopoulos, S., & Claridge, M. F. Insect Sounds and Communication: Physiology, Behaviour, Ecology, and Evolution. Boca Raton, FL: CRC Press, 2005.
  10. Heinrich, Bernd. The Hot-Blooded Insects: Strategies and Mechanisms of Thermoregulation. Cambridge, MA: Harvard University Press, 1993.
  11. Römer, Heiner. Insect Hearing and Acoustic Communication. Springer, 2023.
  12. Von Frisch, Karl. The Dance Language and Orientation of Bees. Cambridge, MA: Harvard University Press, 1967.
  13. Kettlewell, H. B. D. The Evolution of Melanism: The Study of a Recurring Necessity. Oxford: Oxford University Press, 1973.
  14. Fletcher, N. H., & Tarnopolsky, A. “Acoustics of Cricket Songs.” Journal of the Acoustical Society of America, vol. 57, no. 1, 1975, pp. 127-133.
  15. Otte, Daniel. Cricket Phylogeny and Insect Song Evolution. Lawrence, KS: University of Kansas Press, 1992.
  16. Lewis, Tom (Ed.). Insect Communication. London: Academic Press, 1984.
  17. Simmons, Andrea. “The Evolution of Insect Hearing: An Overview.” Bioacoustics, vol. 19, no. 1-2, 2010, pp. 21-44.

তথ্যসূত্র

[1] Marler, P., & Slabbekoorn, H. (2004). Nature’s Music: The Science of Birdsong. Academic Press. This quotation complements your argument by emphasizing how various species use sound and rhythm for communication, attraction, and survival, similar to how music functions in human society.

[2] Schafer, R. Murray. The Soundscape: Our Sonic Environment and the Tuning of the World, 1977. এই গ্রন্থে Schafer প্রকৃতির বিভিন্ন ধ্বনির সংগীততাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন এবং দেখিয়েছেন কীভাবে তা মানুষের সৃষ্ট সংগীতের ওপর প্রভাব ফেলে।

 

[3] https://en.wikipedia.org/wiki/Waggle_dance?utm_source=chatgpt.com

[4] https://en.wikipedia.org/wiki/Waggle_dance?utm_source=chatgpt.com

[5] https://en.wikipedia.org/wiki/Waggle_dance?utm_source=chatgpt.com

[6] D YoungH Bennet-Clark, The role of the tymbal in cicada sound production

[7] Hoy, R. R., & Robert, D. (1996). Tympanal hearing in insects. Annual Review of Entomology, 41(1), 433-450.

[8] Howse, P. E. (1984). Ultrasound and communication in insects. In Insect Communication (pp. 287-312). Academic Press.