May 1, 2024

Shamapochan: The essence of Cursed Drama Lessons in Rabindra’s Drama Application

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Dr. Amartya Mukhopadhyay, Sangeet Bhawan, Visva-Bharati

শাপমোচন : রবীন্দ্রনাট্য প্রয়োগে অভিশপ্ত নাট্যপাঠের মর্মকথা

Abstract

This abstract delves into the profound exploration of curse-driven narratives within the realm of Rabindranath Tagore’s dramatic literature, particularly focusing on the concept of “Shapmochan” or “Curse-Liberation.” Rabindranath Tagore, the Nobel laureate poet, playwright, and philosopher, has left an indelible mark on the cultural landscape of India and beyond, with his insightful portrayal of human emotions, societal complexities, and spiritual quests. The essence of cursed drama in Tagore’s works is a nuanced exploration of the intricate interplay between fate, human agency, and redemption. Through a close examination of select plays such as “Raktakarabi” (Red Oleanders) and “Tasher Desh” (The Land of Cards), this abstract elucidates how Tagore employs the motif of curses to unravel the depths of human consciousness, moral dilemmas, and the quest for liberation. Drawing upon literary analysis and cultural contextualization, this abstract aims to elucidate how Tagore’s treatment of curses transcends mere superstition, serving as potent metaphors for societal injustices, personal conflicts, and the perennial struggle between tradition and modernity. Furthermore, it explores the spiritual dimensions of curse-breaking, wherein characters undergo profound transformations, leading to catharsis and eventual liberation from the shackles of destiny. In essence, this abstract seeks to unveil the enduring relevance of Tagore’s cursed dramas in contemporary discourse, shedding light on timeless themes of human suffering, resilience, and the eternal quest for freedom from the binds of fate.

ড. অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়

সহ-অধ্যাপক, নাটক ও নাট্যকলা,

সংগীত ভবন, বিশ্বভারতী

সূচক :

  • রবীন্দ্রনাটকের আঙ্গিকগত বৈচিত্র্য ও গুরুত্ব উপলব্ধি আবশ্যক।
  • রবীন্দ্রনাটক কি সত্যিই “Vehicle of Ideas”?
  • নৃত্যের সামগ্রিক বিস্তারে পর্যাপ্ত রবীন্দ্র-নৃত্যনাট্যের অভাব; ফলত রবীন্দ্রনাটককে নৃত্যনাট্য করে তোলার অপপ্রয়াস।
  • রবীন্দ্রনাথকে অবলম্বন করতে হলে রবীন্দ্ররচনা পড়তে হয়। তারপর সেই গান-নাচ-অভিনয়ের মিশ্রণ ঘটাতে হয় যথাযথভাবে-সময়ের মধ্যে, তখন একটি Composite Art রূপে নাট্য সমবেত প্রয়াসে সার্থকতা পায়।
  • রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে প্রগতিবাদী রূপদান করতে গিয়ে পৌরাণিকতার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা অনুচিত।
  • নৃত্যশিল্পীদের উপলব্ধি করা উচিত সব নাটকই নৃত্যনাট্যের উপযোগী নয়।

রবীন্দ্রনাথ বাংলা নাটক তথা ভারতীয় নাটকের এমন এক স্রষ্টা — যাঁর নাটক রচনায় রয়েছে বিচিত্র আঙ্গিকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বহুকাল নাট্যজনেরা সেই নাটকগুলিকে অভিনয় করবার জন্য আকুল হলেও Copyright এর জন্যে অভিনয় করতে চাননি। অনেকে পারতেন না আর ভাবতেন-ও না। বরং অনেক সহজ ছিল Edward Thompson এর মতো করে বলা যে রবীন্দ্রনাটকগুলি হল “Vehicle of Ideas” ।

রবীন্দ্রনাটক ‘রক্তকরবী’-র অভিনয় করেছিলেন ‘বহুরূপী’ নাট্যসংস্থা ১৯৫৪-তে। সেই নাটকও শম্ভু মিত্রকে অভিনয় করতে হয়েছিল বহু কাঠ-খড় পুড়িয়ে। কারণ বিশ্বভারতী থেকে প্রযোজনা বন্ধের নির্দেশ এসেছিল। সেখানে অভিযোগ ছিল, এত বাস্তবধর্মী-interpretation ও অভিনয় থেকে মনে হয়েছে— এতে শুধু ‘রক্তই আছে করবী নেই’।

ঐ যে ‘বিসর্জন’ নাটকে গোবিন্দমাণিক্যের সংলাপ আছে:

‘রক্ত নহে ফুল আনিয়াছি মহাদেবী

ভক্তি শুধু হিংসা নহে বিভীষিকা নহে।’

বা

‘অজ্ঞান একান্ত অন্ধ, গর্ব চলে যায় অকাতরে

ক্ষুদ্রেরে দলিয়া পদতলে।’

ফলে, একদিকে ভক্তি-ফুল-নিবেদন করবার সময় ছিল এক।

আবার বিপরীতে, অনেক অপেক্ষার অবসান হলে ২০০০ সালের পর শুরু হলো ইচ্ছানুসারী রবীন্দ্র-নাটকের প্রযোজনার নামে অনেক ক্ষেত্রে যথেচ্ছাচার।… তখন আমরা ‘ডাকঘরে’র অমলকে দেখেছি – মনের জানলা না খুলে বিছানায় Laptop নিয়ে Windows-এ search করে জগত-সৌন্দর্য আস্বাদ করতে।

কিন্তু তার ফলেই যে নাট্যপ্রযোজনা আধুনিক হয়ে যায় না… একথা যদি নির্দেশক না বোঝেন, নাট্যদল না বোঝে তাহলে সব অন্ধকার।

একটি নাটকের কীভাবে বা কতভাবে নাট্যপ্রয়োগ হতে পারে সেটা সমস্যা নয়, সে তো নানান ভাবেই হতে পারে।’ সমস্যা হল নৃত্যের লোকেদের নাট্য কম পড়িয়াছে– তাই যাহা নাটক/নাটিকা তাহাকে ‘নৃত্যনাট্য’ বলিয়া অনর্গল অন্যায় প্রচারে— আজ অধিকাংশই নৃত্যনাট্য বলিয়া গণ্য হইতেছে। যেমন ‘নটীর পূজা, ‘শাপমোচন’, গদ্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা, ‘তাসের দেশ’, ‘নবীন’, ‘সুন্দর’, ‘শেষবর্ষণ’, ‘বসন্ত’ প্রভৃতি’।

আবার অন্যদিকে রয়েছে “অ-নাচের দল”/ নাটকের দল যারা পূর্বোক্ত নাটকগুলিতে নাচের উন্মেষকে অস্বীকার করে— প্রচলিত সংলাপনির্ভর নাট্য ও ২ কলি গানকে Relief এর মতো করে প্রয়োগ করছেন— ফলে সে যেন আদতে নাচ-গানের বিরুদ্ধতা ও রবীন্দ্র-নাট্যচিন্তার প্রতি বিদ্রোহ প্রকাশ করে বসছে।

এ অবস্থার নিরীখে রবীন্দ্রনাটকের মঞ্চায়ন প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক প্রয়োগধারায় যে লক্ষণগুলি দেখা যায় তার সমস্যা ও সমাধানের পথসন্ধান করাই আমাদের উদ্দেশ্য।

একথা প্রথমেই স্বীকার করা ভালো যে—

১। নিজেস্ব দুর্বলতা সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাটক ও অন্যান্য নাটকের অভিনয় করতে গিয়ে— নাটককারের বিষয় (content) ও অঙ্গিককে(form) বদলে ফেললেই অভিনবত্ব আসেনা।

২। নাটককারের নাটক পরিবর্তন করতে হলে আরো প্রকল্পিত ও পরিকল্পিত হওয়া আবশ্যক। তার জন্যে সর্বদাই সমকালের চলায় অতীতকে সঙ্গী করতে হয়। গবেষণা করতে হয়। ফলে তাতে নিছক নূতন/ অর্বাচীন না হয়ে প্রযোজনা নবীন হয়ে উঠতে পারে।

৩। রবীন্দ্রনাটক যখন নাট্য হয়ে উঠছে তখন

(ক) যদি কেউ রবীন্দ্রনাথের পাঠ বদলে দেন…

(খ) যদি কেউ কাহিনী বদলে দেন

(গ) যদি কেউ অর্থ বদলে দেন

(ঘ) যদি কেউ অভিঘাত বদলে দেন

(ঙ) যদি কেউ চরিত্রের বৈশিষ্ট্য বদলে দেন

তখনই গোল বাঁধে।

এর ফলে ফরাসী দার্শনিক রোলাঁ বার্তের ধারণায় যাকে ‘Death of Author’ বলে জানি, তাই ঘটে।

সংক্ষিপ্ত এই আলোচনায় সরাসরি প্রসঙ্গে আসি।

যেমন ১৯৩১-এ লেখা রবীন্দ্রনাথের ‘শাপমোচন’ কখনোই নৃত্যনাট্য নয়। ‘শাপমোচনে’র শুরুতেই আছে একটি বিবরণ। যা রবীন্দ্রোত্তরকালে নির্দেশকেরা বড় নাচের item করে ফেলেছেন।

১৯১০-এ ‘রাজা’, ১৯২০ তে ‘অরূপরতনে’র পরে রবীন্দ্রনাথ ‘শাপমোচন’ রচনা করেছিলেন ১৯৩১-এ যার অভিনয় হতে থাকে সেই সময় থেকেই। আর ইতিমধ্যে ‘The King of the Dark Chamber’-ও প্রকাশ পেয়েছিল। ‘শাপমোচন’ নামে যে কবিতা ‘পুনশ্চ’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত তাকেই কথিকা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

আমাদের আলোচনা রবীন্দ্রনাথের এমন একটি নাটক নিয়ে যে সময়টি ১৯২৬-এ নৃত্য আকাঙ্ক্ষার সূচনাগত প্রকাশ ও ১৯৩৬এর নৃত্যনাট্যের সম্পূর্ণতা প্রাপ্তির মধ্যবর্তী ১৯৩১ সাল। অর্থাৎ ‘নটীর পূজা’ (১৯২৬) আর ‘নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা’ (১৯৩৬) এর মধ্যবর্তী ‘শাপমোচন’ (১৯৩১) ।

মনে রাখতে হবে ‘নটীর পূজা’-তে শাস্ত্রীয় নৃত্যপটিয়সী শ্রীমতী নৃত্য করতে অস্বীকার করেছিল। ‘শাপমোচনে’ উর্বশীর নৃত্য ছিল উল্লিখিত বিবরণে, আর ‘চিত্রাঙ্গদা’র আঙ্গিকই নৃত্যনাট্য বলে বিবেচিত।

তাই প্রথমত, ‘শাপমোচন’ নৃত্যনাট্য নয় এবং দ্বিতীয়ত, শাপমোচনে ‘রাজা’ ও ‘অরূপরতন’ এর সূক্ষ্ম যোগ থাকলেও এ কাহিনীর তাৎপর্য সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। এটি কখনোই ‘রাজা’ ও ‘অরপরতন’ এর ভঙ্গিমায় রচিত নাটক-ই নয়। এতে রয়েছে নৃত্য, গীত, অভিনয়ের মিলিত সম্ভাবনাযুক্ত এক মিশ্রশিল্পরূপ।

লক্ষণীয়—

১। শাপমোচনে কোনো অঙ্ক বা দৃশ্য বিভাগ নেই।

২। এতে নেই কোনো প্রবেশ-প্রস্থান বা অন্য কোনো নির্দেশ।

৩। এতে নানান ইঙ্গিত রয়েছে কাহিনীতে দৃশ্য-বিন্যাস বা স্থানান্তরের যা অভিনয়ের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়।

৪। রাজা পূর্ববর্তী নাটকগুলির মতো নেপথ্যে থাকে না— রঙ্গমঞ্চেই থাকে এবং প্রায় অদৃশ্য হয়েই থাকে, অন্ততঃ কমলিকার পক্ষে।

৫। দর্শকেরা তাকে কায়া-ছায়া যেরূপে হোক দেখতে পারেন।

এতকাল এসব নানান দিক লক্ষিত হয়েও – অবশ্যই প্রাথমিক ভাবে অরুণেশ্বরের চরিত্রে এসেছে অন্যান্য রাজাদের কথনভঙ্গি ও নৃত্যপ্রয়োগ এবং নৃত্য করেছে কমলিকাও।

ফলে ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ, যে বস্তুজগৎ থেকে ক্ষণকালের ছুটি নিয়ে কল্পজগতের লীলার কথা বলেন- সে আস্বাদ ‘শাপমোচন’ এর অভিনয় আমাদের দিতে পারে না। তার মধ্যে নৃত্যরূপের মাধ্যমেই সন্ধান করা হয় অরূপের। কিন্তু সেই বার্তা তো রবীন্দ্রনাথ দেবেন ‘চিত্রাঙ্গদা’য়।

সমস্যা এখানেই যে এতদিনের একটি রবীন্দ্রনাটকের অভিনয় এত আকর্ষণীয় হয়েও মঞ্চে তার যথার্থ ব্যঞ্জনা জাগাতে পারে নি।

কেননা প্রথমেই আমরা ইন্দ্রসভায় উর্বশীর নাচ দেখাতে তৎপর হয়েছি, যে নাচ কখনোই রবীন্দ্রনৃত্য নয়— চরিত্রের বাস্তবতায়— তাই আদিনৃত্য ‘ভরতনাট্যমের’ আঙ্গিককে গ্রহণ করা হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই।

অপ্সরা উর্বশী যখন নাচে সে নাচ হবে নতুন ও অপরূপ, আকর্ষণীয়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যেই উর্বশীকে নাচ করতে হবে কেন? আমার মনে সে প্রশ্ন জাগে।

অনেকক্ষেত্রে নাচই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে— তালভঙ্গ ও অভিশাপ ও অভিশাপ-মুক্তির চেয়েও।

সৌরসেন অভিশাপ পেয়ে হয়ে যায় বিকৃত, কুশ্রী। অরুণেশ্বর নামে তার জন্ম হয় গান্ধাররাজগৃহে।

তার প্রেয়সী মধুশ্রী কিন্তু অভিশাপ পায়নি। সে অনুনয়ে অবশেষে অনুমতি পেল, আদেশ পেল এবং আশ্বাস পেল ইন্দ্রের যে, সে-ই শাপমোচন করবে সৌরসেনের।

ইন্দ্র বললেন “তথাস্তু, যাও মর্তে, সেখানে দুঃখ পাবে, দুঃখ দেবে। সেই দুঃখে ছন্দঃপাতন অপরাধের ক্ষয়।”

এটিই হল শাপ-মোচন করবার সূত্র। যেখানে স্বর্গীয় জীবন ছেড়ে দুঃখ পাবে কমলিকা— আর দুঃখ দেবে অরুণেশ্বরকে; ফলে যে বিরহবেদনা মর্তজীবনে সঙ্গে এনেছে অরুণেশ্বর— তা আরো বাড়বে।

প্রেয়সী মধুশ্রী সুমেরুশিখরে সূর্যপ্রদক্ষিণে গিয়েছিল আলো দেখতে, আর সৌরসেন তালভঙ্গ করেছিল তার বিচ্ছেদ-বেদনায়; এখন মর্তজীবনে সে দহনজ্বালা আরো বৃদ্ধি পাবে- যেহেতু প্রেয়সীকে স্ত্রীরূপে পেয়েও সে জানেনা বা আলোয় দেখা দিতে পারেনা তার কুশ্রীরূপ নিয়ে।

যতই কমলিকা দেখতে পায় না, তত দুঃখ পায় ঠিকই – তবু, আসলে সে আরো অধিক দুঃখ দেয় অরুণেশ্বরকে আলোয় দেখতে চেয়ে। কেননা, অরুণেশ্বর বিরহব্যথিত হলেও দেখা দিতে পারেনা; হঠাৎ যখন আলোয় দেখা দেয়, কমলিকা চলে যায় দূরে— বনের মধ্যে। তবেই তো- অরুণেশ্বর

“সারাদিন সঙ্গোপনে

সুধারস ঢালবে মনে।

পরানের পদ্মবনে

বিরহের বীণাপাণি” হয়েই বিষাদের সুর বাজিয়ে চলবে- এই তো অভিশাপ। তখনই তো তারা আবার বিদায়ের পাত্রকে মিলনের উৎসবে হৃদয়ের নূতন বাণী দিয়ে ভরিয়ে তুলবে।

তাই বারবার রাজাকে রানীর আলোয় দেখতে চাওয়া ও না পাওয়ার বেদনার থেকেও অধিক বেদনাহত হবে অরুণেশ্বর আলোর সভায় দেখা দিতে না পেরে।— আর সেই দুঃখেই তার অপরাধের ক্ষয় হবে।

কিন্তু এই নাটক অভিনয়ে মনে হয় বারবার ভুল করছে বুঝি কমলিকা, সে অন্তরের সৌন্দর্য দিয়ে দেখতে পারছে না। তাই সে রাজাকে পাচ্ছে না। রাজা যেন অধ্যাপকের মতো তাকে বোঝাতে থাকে, আর কমলিকা বোঝেই না, বুঝতে পারেনা।

কিন্তু এই text approach অবশ্যই বিপরীতমুখী সম্ভাবনা প্রস্তুত করে। কেননা রাজা উত্তরোত্তর অভিশপ্ত জীবনের অসহায়তা উপলব্ধি করলেই শাপমোচন হবে।

এই বোধ ও ভাবটি প্রকাশ না পাওয়ার ফলে আমাদের মধ্যে ধারণা প্রচলিত হয়েছে যে এটি ‘রাজা’-‘অরূপরতন’ এর নৃত্যনাটিকার রূপ, নৃত্যনাট্যের রূপ। অথচ, তাই কি? বা শুধুই কি তাই?

এতে এসেছে কথিকা। যেখানে মূল কবিতায় পাই—

  • “রাজার কন্ঠের সুরে লাগল অশ্রুর ছোঁয়া।”
  • “রাজা দেখা দেবার আগে বলে, “তাই হোক, ভীরুতা যাক কেটে”
  • “বীণাধ্বনির আর্তরাগিনী” …
  • “কোন হতাশের বিরহ-তার বিরহ জাগিয়ে তোলে”!
  • “বীণায় বাজতে থাকে বেহাগ”
  • “বীণায় পরজের বিহ্বল মীড়”
  • “ওগো কাতর, ওগো হতাশ আর ডেকোনা”,
  • “রাজার গলার স্বর জলে-ভরা মেঘের দূর গুরু গুরু ধ্বনির মতো।

মহিষী অরুণেশ্বরের মধ্যে সুন্দর রূপ দেখতে পারলো বলেই— মর্তজীবনের বিরহকাতরতার ব্যথিত জীবন থেকে তাদের শাপমোচন হল।

সত্য হল— ‘শাপমোচনে’ কখনোই অরুণেশ্বরের দুঃখ, অসহায় অভিশপ্ত জীবনকে আমরা অভিনীত হতে দেখিনা। তাই, দুঃখ পেলেও কমলিকাকে দোষী করি— ভুলে যাই ইন্দ্রের অনুকম্পা, আশীর্বাদপূর্ণ আদেশ যা শাপ-মোচনের সূত্র ও শর্ত ‘দুঃখ দেবে’ কথাটিকে। তাই

১। কখনোই আমরা শাপমোচনের আবর্তন-বৃত্তকে সম্পূর্ণ হতে দেখিনা।

২। নৃত্যমূলক ও নৃত্যপ্রধান অভিনয় করি।

৩। কমলিকাকে দোষী বলে মনে করি।

৪। ইন্দ্রের অভিশাপ ও শর্তাবলীকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিই না।

৫। ‘শাপমোচনে’ পুরুষের শাপমোচন যে হয়েছে নারীর দ্বারাই এই বোধ আমাদের মধ্যে জাগে না।

৬। আমরা আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দৃষ্টিতে এই নাটকের অভিনয় করি।

কিন্তু ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্যেরও পূর্বে রবীন্দ্রনাথ ১৯৩১এর ‘শাপমোচন’ এ নারীকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। পুরুষ প্রেমিকের জন্যে নারীর Sacrifice ও নারীর দ্বারা পুরুষকে উদ্ধার!

‘চিত্রাঙ্গদা’ নাট্যকাব্যে রবীন্দ্রনাথ ১৮৯২এ যা করেছিলেন- তাকে নৃত্যনাট্য করতে ১৯৩৬ পর্যন্ত সময় অতিক্রান্ত হল।

সেদিক থেকে শাপমোচনের text সময়ের হিসেবে- নারীর দ্বারাই পুরুষের মুক্তির কথা বলেছে তৎপূর্বেই।

এখানে নারীর ত্যাগ, তিতিক্ষা, পুরুষকে শাপমুক্ত করা আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

আর আধুনিক এই নাটকে হঠাৎই যে পুরাণ-প্রসঙ্গ উর্বশীর নাচের অংশে অতিরিক্ততা এসে পড়ছে তার মধ্যে কোনো আধুনিকতার ছাপ তো নেই, উপরন্তু প্রগতিবাদী চিন্তা পশ্চাৎমুখী ও পৌরাণিক হয়ে উঠছে এর ফলে নাটকটির সম্বন্ধে সাধারণ ধারণাও পরিবর্তিত হচ্ছে, যা কখনোই বাঞ্ছনীয় নয়।

অভিনয়ের ক্ষেত্রে বিবেচনাপূর্ণ প্রযোজনা নিশ্চয়ই কোনোদিন ভ্রান্তিমোচন করে ‘শাপমোচন’-এর যথাযথ রূপ প্রকাশ করবে এই আশায় এই আলোচনা করা গেল।

সহায়ক গ্রন্থ:

১) রবীন্দ্রসংগীত, শান্তিদেব ঘোষ, কলকাতা: বিশ্বভারতী, ১৯৭৮।

২) নৃত্য, প্রতিমাদেবী, কলকাতা: বিশ্বভারতী, ১৯৬১।

৩) গীতবিতান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কলকাতা: বিশ্বভারতী, ১৪০৬।

৪) শাপমোচন: পুনশ্চ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,কলকাতা: বিশ্বভারতী, ১৯৩১ : ১৯৩২।

৫) রাজা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কলকাতা: বিশ্বভারতী, ২০০০।

৬) অরূপরতন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কলকাতা: বিশ্বভারতী, ২০০০।