The Renaissance era and the Music of the Bengal People
Dr. Srabani Sen
Abstract: This study delves into the captivating intersection of the Renaissance era and the rich musical heritage of the Bengal people. Drawing parallels between the cultural efflorescence of the Renaissance in Europe and the artistic renaissance in Bengal, we examine how the intellectual and artistic fervor of the former influenced the musical expressions of the latter. From the fusion of classical European elements with traditional Bengali tunes to the emergence of new musical forms, this exploration uncovers the intricate threads connecting two seemingly disparate worlds. By unraveling the musical tapestry woven during this cross-cultural exchange, we gain valuable insights into the transformative power of artistic encounters across time and space.
বাঙালির নবজাগরণের গান- ড.শ্রাবণী সেন
সহকারী অধ্যাপিকা, সঙ্গীত বিভাগ,তারকেশ্বর ডিগ্রি কলেজ,তারকেশ্বর,হুগলী
বাংলা সাহিত্যে রাজনৈতিক অর্থে স্বদেশেচেতনার আবির্ভাব ঘটে ঊনবিংশ শতাব্দীতে।বস্তুত স্বদেশেতনা ও জাতীতাবোধর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উথ্থান ও তাদের ধারাবাহিক উপস্হিতি। তার আগে দেশে ছিল শুধু উচ্চবিত্ত আর বিত্তহীন,ভূস্বামী আর ভূমিদাস।সেই শতকের বাঙালি ইউরোপীয় সাহিত্যের স্বদেশপ্রেমে জারিত উদ্দীপনামূলক সাহিত্য থেকে প্রেরণা পেয়েছিলেন ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে। এ বিষয়ে তাঁদের উদ্বুদ্ধ করেছিল স্কট, বায়রনদের কবিতা। এ সবের সমাহারই উনিশ শতকে বাঙালীর মনে স্বদেশচেতনার সঞ্চার করেছে, যা প্রতিফলিত হয়েছে কাব্যে বা গানে।
বাংলা দেশাত্মবোধক তথা মুক্তির গানের প্রধান উৎস ছিল বাঙালির পরাধীনতাজনিত বিপর্যস্তবোধ। আমাদের দেশাত্মবোধক কবিতায় ও গানে বেদনা বিধুর সরের প্রাধান্য ছিল ঊনবিং শতকের চতুর্থ দশক পর্যন্ত। দীনবন্ধু মিত্রের নাটক ‘নীলদর্পণে'(১৮৬০) নীলকর-নির্যাতিত গ্রামবাংলার চাষীদের দুঃখবেদনা ভাষার মধ্যে দিয়ে সমাজচেতনার দ্বারোদ্ঘাটন ঘটে।নীল-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলার নিপীড়িত চাষীদের আন্দোলনের সূত্র ধরে বাঙালির স্বদেশ সম্পর্কে নতুন উপলব্ধি ঘটে এবং এই পটভূমিতেই বাংলা দেশাত্মবোধক কবিতা ও গানের সূত্রপাত হয়।
ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ঈশ্বর গুপ্তের কবিতায় স্বদেশিকতার প্রথম স্পন্দন ধরা পড়ে।পরে রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়,হেমচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়,মধুসূদন দত্ত,নবীনচন্দ্র সেন প্রমুখের কাব্যের জাতীয়তাবাদ সেই স্পন্দনের গতিকে বাড়িয়ে তুলেছিল। ক্রমশ কবি এবং গীতিকারেরা এই জাতীয় গান রচনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ায় বাংলা সঙ্গীতে এক নতুন ধারার সংযোজন ঘটৈ।
বাংলাসাহিত্যের নতুন আয়োজনে দেশাত্মবোধক গানের ধারা গতি পেয়েছিল।নতুন কণ্ঠস্বর ব্যপকতা ও ধারাবাহিকতা পেল ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ‘স্বদেশ’,’মাতৃভাষা’, মাইকেল মধুসূদন দওের ‘ভারত-ভূমি’, ‘বঙ্গভাষা’,’কবি-মাতৃভাষা’ ইত্যাদি কবিতায়। এভাবে দেশভক্তি, মাতৃভক্তি এবং মাতৃভাষাপ্রীতি ফুটে উঠতে থাকে কবিতায়।এরই সঙ্গে ঘটে বাংলা দেশাত্মবোধক গানের আবির্ভাব।মাতৃভূমির সঙ্গে ভূমিসন্তানের নাড়ীর সম্পর্কবোধ এই নবচেতনার অন্যতম লক্ষণ। মাতৃভাষার চেতনা নিধুবাবুর (১৭৪১-১৮৩৯) গানেও প্রকাশ পেয়েছে-
নানান দেশের নানান ভাষা।
বিনে স্বদেশীয় ভাষা পুরে কি আশা।।……
বাঙালীর নবজাগরণের গানের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা হিন্দুমেলা থেকেই শুরু।এই মেলার প্রথম সম্পাদক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খুড়তুতো ভাই গগণেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪১-১৮৬৯)। নতুন উদ্দীপনায় উদ্বুদ্ধ এই হিন্দুমেলাকে উপলক্ষ্য করেই স্বদেশী গান রচনার সূত্রপাত ঘটে এবং সঙ্গে সঙ্গে এই নবচেতনার গান রচনার প্রয়াস লক্ষ্য যায়।মেলার প্রথম সম্পাদক গগণেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম অধিবেশনের জন্য গান লিখেছিলেন –
লজ্জায় ভরতযশ গাইব কি করে।
লুটিতেছে পরে এই রত্নের আকরে।।….
মেলার অন্যতম উদ্যোক্তা মনোমোহন বসু বাংলা দেশাত্মবোধক গান রচনায় বিশেষ স্হান অধিকার করে আছেন। মনোমোহন বসুর বেশীরভাগ গানেই পাওয়া যায় সমসাময়িক ঘটনার প্রকাশ। মনোমোহন বসু রচিত কয়েকটি গান নবজাগরণের গানের ইতিহাসে অমূল্য হয়ে রয়েছে। তাঁর রচিত এই গানটি একাধিক অধিবেশনে গাওয়া হয়-
দিনের দিন সবে দীন হয়ে পরাধীন
অন্নাভাবে শীর্ণ, চিন্তাজ্বরে জীর্ণ অপমানে তনু ক্ষীণ।…..
গানটিতে পরাধীন ভারতের দারিদ্রতা ,হীনতা, দুঃখ-যাতনার মর্মম চিত্রফুটে উঠেছে।
হিন্দুমেলার যুগ থেকে শুরু করে যেসব গান রচিত হয়েছে তাতে অখণ্ড ভারতবাসীর স্বাজাত্যবোধের উদ্দপনা উণ্মেষের রূপটি প্রকাশিত হয়েছ। রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়ের (১৮২৭-১৮৮৭) ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে’ গানটিতে পরাধীনতার থকে ‘ক্ষণিকের স্বাধীনতা’য় স্বর্গসুখের আস্বাদনের ছবি ফুটে উঠেছে। ১৮৬৮ হিন্দুমেলার দ্বিতীয় অধিবেশনের উদ্বোধনী সংগীতরূপে গীত হয়েছিল সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত-
মিলে সবে ভারত সন্তান এক তান মনপ্রাণ
গাও ভারতের যশোগান।……
হিন্দুমেলা উপলক্ষ্যে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছিলেন –
মলিন মুখচন্দ্রমা ভারত তোমারি
রাত্রি দিবা ঝরিছে লোচন বারি।।….
গানটিতে ভারতবর্ষকে ক্রন্দসী জননীরূপে কল্পনা করে ভারত মাতার দৈন্য, হতাশা ও বিষাদকে গানের সুরে রূপ দিয়েছেন।
গোবিন্দচন্দ্র রায় লিখেছিলেন –
কতকাল পরে,বল ভারত রে
দুঃখ সাগর সাঁতারি পা হবে।….
১৮৮১ সালের বঙ্গদর্শনে বঙ্কিমচন্দ্রের যুগান্তকারী ‘বন্দেমাতরম্’ গানটি মানুষের মনে বিশেষ সাড়া ফেলেছিল।
বন্দে মাতরম্
সজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাং
শস্যশ্যামলং মাতরম্।……
ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ষষ্ঠ অধিবেশনে ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজের দেওয়া সুরে বন্দে মাতরম্ গানটি পরিবেশন করেন।সেই থেকেই গানটির জনপ্রিয়তার সূত্রপাত এবং স্বদেশী সংগীতরূপে বিপুল প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথের দেশভাবনা অভিব্যক্ত হয়েছে কাব্যে ও গদ্যে। হিন্দুমেলা, সঞ্জীবনী সভা প্রভৃতির পরিবেশে কবিগুরুর সৃজনী প্রতিভার উন্মেষ ঘটেছিল। ১৮৭৮ সালে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত ”জাতীয় সংগীত”গীতসংকলনের দ্বিতীয় সংকলনে রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি স্বদেশীগান স্হান পায়।রবীন্দ্রনাথ রচিত কয়েকটি স্বদেশীগান-
১)তোমারি তরে,মা,সঁপিনু এ দেহ।
তোমারি তরে,মা, সঁপিনু প্রাণ।।
২) ঢাকো রে মুখ, চন্দ্রমা, জলদে।
৩)এক সূত্র বাঁধিয়াছি সহস্রটি মন।
৪) এ কি অন্ধকার এ ভারতভূমি।
স্বদেশচেতনামূলক এই গানগুলো রবীন্দ্রনাথের গীতবিতানের ‘জাতীয় সংগীত’ শীর্ষক পর্বে সন্নিবেশিত হয়েছে।
রামপ্রসাদী সুরে গ্রথিত এবং কবির স্বকণ্ঠে গীত ‘আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে’ গানটি ১৮৮৬ সালে কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে পরিবেশিত হয়।বাংলা দেশের নিজস্ব রমপ্রসাদী সুরের কঠামোয় গানটিতে যে জাতীয় ঐক্যের সুর ধ্বনিত হয়েছিল তার আবেদনের গভীরতা অনেকদিন স্হায়ী হয়েছিল।
বস্তুত স্বদেশ চেতনামূলক গানের উণ্মেষ হিন্দুমেলার যুগে হলেও তার সার্থক বিকাশ ঘটেছে বঙ্গভঙ্গের যুগে। প্রথম যুগে প্রকাশ পেয়েছিল জাতীয় ভাবনার গান এবং দ্বিতীয় যুগে স্বদেশ চেতনা নিছক ভাবানুভূতির সঙ্কীর্ণ পরিমণ্ডল ছাপিয়ে রূপান্তরিত হয়েছিল দেশসেবার বাস্তবিক কর্মপ্রেরণায়। এই ধারারই অনুসরণে ‘অসহযোগ’, ‘আইন অমান্য’ প্রভৃতি আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সম্পূর্ণতা লাভ করে জাতীয় আন্দোলন। বলা যায় স্বদেশী গানগুলো রাজনৈতিক আন্দোলনে বাঙালিকে শক্তি যুগিয়েছে। ঊনিশ শতকের শেষ পর্যন্তই ছিল শুধু বন্দিত্বের আক্ষেপ।নবপর্যায়ে দেশাত্মবোধক গানে বিচ্ছিন্নতার পরিবরর্তে আসে একতা, নিষ্ক্রয়তার বদলে সক্রিয়তা, দেশমাতৃার প্রতি গভীর ভক্তি এবং আত্মীয়তাবোধজনিত স্বনির্ভরতার আকুলতা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল এ সবেরই ফলশ্রুতি। তারই সুন্দরতম প্রকাশ ছিল রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে রাখীবন্ধনের উৎসব।এই পর্বেই বাংলাভাষার উৎকৃষ্টতম দেশাত্মবোধক গানগুলো রচিত ও গীত হয়েছিল, যেগুলো পরবর্তীকালে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধেও প্রেরণা যুগিয়েছিল।এ যুগের নেতৃত্বে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ সময়ই তিনি তাঁর অধিকাংশ দেশাত্মোধক গান রচনা করেন।যেমন –
১)আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
২)ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা।
৩)বাংলার মাটি বাংলার জল,বাংলার বায়ু বাংলার ফল।
৪)আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি।
৫)বিধির বাঁধন কাটবে তুমি এমন শক্তিমান।
৬)সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।
৭)যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় যে সমস্ত গীতিকার উদ্দীপিত হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ প্রধানতম হলেও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়,অমৃতলাল বসু,রজনীকান্ত সেন,প্রমথনাথ চৌধুরী,অশ্বিনীকুমার দত্ত,সরলা দেবী,মুকুন্দ দাস,মনোমোহন চক্রবর্তী প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য।এছাড়াও বহু অজ্ঞাত গীতিকারের রচনা নবজাগরণের গানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছিল।
গীতিকার ও সুরকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের দেশাত্মবোধক গানগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের দাবী রাখে। ১)ধনধান্য পষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
২)বঙ্গ আমার!জননি আমার!ধাত্রি আমার!আমার দেশ
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের স্বদেশ পর্যায়ের আর একটি মৌলিক সৃষ্টি তাঁর হাস্যরসাত্ম গানগুলো। বিলেত ফের্তা,নন্দলাল প্রভৃতি গানগুলোতে শ্লেষ ও ব্যঙ্গের মাধ্যমে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করার চেষ্টা করেছিলেন।
স্বদেশ চেতনা সরব করেছে ভক্তকবি রজনীকান্ত সেনকেও।বঙ্গবঙ্গ আন্দোলনের সময় ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই’গানটির আবেগময় স্পর্শে বাঙালি জাতির মধ্যে এক রোমাঞ্চকর উন্মাদনার সৃষ্টি করেছিল।তাঁর কথায় সুরে রচিত গান –
১)নমো নমো নমো জননি বঙ্গ!
২)শ্যামল শস্যভরা
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে বাংলাভাষীদের প্রেরণা যুগিয়েছেন গীতিকার ও সুরকার অতুল প্রসাদ সেনের গান।
১)মোদের গরব মোদের আশা,
আ মরি বাংলা ভাষা!
২)হও ধরমেতে ধীর হও করমেতে বীর,
হও উন্নতশীর নাহি ভয়।
পরাধীনতার রাজনৈতিক অবিচার ও সামাজিক যায় বিচারের বিরূদ্ধে জনজাগরণে মুকুন্দদাসের (১৮৭৮- ১৯৩৪) সংগ্রামী ভূমিকা আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।তাঁর স্বদেশী গানগুলো এক সময় খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রতিজ্ঞা প্রচারিত করতেন তাঁর গানগুলোতে।উচ্চ কণ্ঠে সুরের মাতনে মাতিয়ে দিয়ে বলতেন ‘আামি দশ হাজার প্রাণ যদি পেতাম /তবে ফিরিঙ্গী বণিকের গৌরব রবি/অতল জলে ডুবিয়ে দিতাম’।প্রমথনাথ রায়চৌধুরীর বঙ্গ-বন্দনা ‘নমঃ বঙ্গভূমি শ্যামাঙ্গিনী’,’জাগরণী শুভদিনে শুভক্ষণে গাহ আজি জয়’,’হে মাতঃ বঙ্গ’ গানগুলো নিবিড় দেশপ্রেমে কালোত্তীর্ণ।
বিশ শতকের প্রথম দশকে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় আবেগময় দেশাত্মবোধ। বাংলার গানে প্রকাশ পায় দেশমাতৃকার প্রতি গভীর ভক্তি। বিশ শতকের বিশের দশকের স্বদেশী আন্দোলন থেকেই বলতে গেলে বাঙালির অব্যক্ত জাগরণের গান সোচ্চার হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে অবিসংবাদিত নেতৃত্ব ছিল কাজী নজরুল ইসলামের।তিনি যেমন বিদেশী শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে উদ্দীপক ছিলেন তেমনই রচনা করেছেন কৃষকের গান,শ্রমিকের গান,নারী জাগরণের গান,ছা্ত্রদলের গান,সৈন্যদলের গান। তাঁর পরাধীনতার শিকল ভাঙার গান হয়ে উঠেছিল সর্ব শ্রেণীর -শ্রমিকের, কৃষকের, নারীর, যুবকের, জেলের, তাঁতীর,সর্বহারার, মজুরের মুক্তির গান। এছাড়াও নজরুল বিশেষ করে গাইলেন সম্প্রদায়িক হানাহানি আর সামাজিক অসাম্য থেকে মুক্তির গান।এই সোচ্চার কণ্ঠই আরো জোরদার হয় চল্লিশের গণনাট্য-আন্দোলনে এবং দেশ স্বাধীন হয় ১৯৪৭ সালে।এই গণসঙ্গীত আন্দোলন গড়ায় বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুথানে এবং বাঙালির একাত্তরের স্বাধীনতাসংগ্রামে।পরাধীনতার মর্মবেদনার বলিষ্ঠ প্রকাশ নজরুলের গান।’কারর ঐ লৌহ কপাট’, ‘দুর্গমগিরি কান্তার মরু’, ‘এই শিকল পরা ছল’,’জাগো অনশন বন্দী’প্রভৃতি গানগুলো সুরের ওজস্বীতায়,ছন্দের দীপ্তিমায় মুক্তির গানের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় সংযোজন নজরুল ইসলামের গানগুলো। নজরুল ইসলাম গানের যে ধারার প্রবর্তন করেন তা ভারতের রাজনৈতিক স্বাধীনতার সময় ও তার পরবর্তীকালেও অব্যাহত আছে।পরবর্তীকালে সলিল চৌধুরী,হেমাঙ্গ বিশ্বাস,বিনয় রায় প্রভৃতি অনেকেই এই ধারায় গান রচনা করে তাঁদের সৃজন প্রতিভার সাক্ষর রেখেগেছেন। জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র রচিত ‘এস মুক্ত কর, মুক্ত কর অন্ধকারের এই দ্বার’ মুক্তির গানের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে চিহ্ণিত হয়ে থাকবে।তাই বলা যায় গানগুলো সর্বকালের মানবের জাগরণের গান। ভাব,সুর ও ছন্দ মিশ্রিত এই গানের আবেদন তাই চিরকালীন।
তথ্যসূত্র
১।প্রফুল্ল কুমার চক্রবর্তী – রবীন্দ্রসঙ্গীত-বীক্ষা কথা ও সুর।
২।শান্তিদেব ঘোষ – রবীন্দ্রসঙ্গীত।
৩।কিরণশশী দে – রবীন্দ্রসঙ্গীত সুষমা।
৪।অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়- বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত
৫।সুকুমার সেন – বাংলা সাহিত্যের ইতিাস (৩য়খণ্ড)।
e-mail- srabanisn1@gmail.com Mobile no- 6290242709