Embodied Modernity: A Cultural Exploration of Bairati Dance in Cooch Behar
Ambika Bhandari
Abstract:
This research delves into the dynamic intersection of tradition and modernity within the context of Bairati dance in Cooch Behar. Bairati dance, a traditional folk art form, has evolved over time, embodying cultural shifts and adapting to contemporary influences. This study examines the ways in which Bairati dance reflects and negotiates modernity, considering both the preservation of its rich historical roots and its responsiveness to changing social, cultural, and technological landscapes. By analyzing the choreographic elements, costumes, and performances, this research aims to uncover the nuanced expressions of modernity within the Bairati dance tradition, shedding light on the intricate balance between heritage and innovation in the cultural tapestry of Cooch Behar.
কোচবিহারের বৈরাতী নৃত্যে আধুনিকতা
অম্বিকা ভান্ডারী
উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলার লোকসংস্কৃতির উপাদান গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লোকনৃত্য। সেই লোকনৃত্য গুলির মধ্যে ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্য হল বৈরাতী নৃত্য। এই বৈরাতী নৃত্য সাধারণত বিয়ের অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত। আগে কোচবিহারের গ্রামগুলিতে বিয়ের দিন ঠিক হবার দিন থেকে শুরু করে বর কনে বিদায়ের দিন অবধি এই নৃত্য উপস্থাপন করা হতো। বিয়ে বাড়িতে বর ও কনের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে এমন একজন মহিলাকে বৈরাতী নির্বাচন করা হতো। বাড়ির কোন বৌদি স্থানীয় মহিলা কে অথবা বাড়িতে বৌদি তৎ সম্বন্ধীয় কোন মহিলা না থাকলে গ্রামের কোন মহিলাকে নিয়ে আসা হতো বৈরাতী হিসেবে। এই বৈরাতির উপর বিয়ের আচার-অনুষ্ঠানের নানান দায়িত্ব থাকতো। বিশেষ করে বর-কনের দায়িত্ব। কনের বাড়িতে কনে কে বরণ করতে করতে কনেকে ঘিরে এবং বর আসলে বরকে বরণ করতে করতে ঘুরে ঘুরে এই নাচ করা হয়ে থাকে। বৈরাতির সাথে বাড়ির অন্যান্য মহিলারাও এই নাচে অংশগ্রহণ করতেন। এই বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রতিটি পর্বের ভিন্ন ভিন্ন গান আছে এবং তার সাথে নাচ। বৈরাতী নাচের ক্ষেত্রে দেখা যেত ঘরে পড়া ভালো শাড়ি পরে নাচ পরিবেশন করতেন শিল্পীরা, সাজসজ্জাও অতি সাধারণ করা হতো। তবে এ বৈরাতী নাচের সময় বৈরাতির হাতে থাকে চাইলন। চাইলন অর্থাৎ বরণডালা। এটি দেখতে কানা উঁচু থালার মতো। কান্না গুলো পাঁচ ইঞ্চির মতো উঁচু থাকে। তার মধ্যে থাকে আটিয়া কলা, বাতি এবং বরণের সামগ্রী।
বর্তমানে আস্তে আস্তে এই বৈরাতী নৃত্যের প্রথা প্রায় লুপ্ত হয়ে গিয়েছে গ্রামগুলিতে খুঁজলে হয়তো পাওয়া যেতেও পারে সেই সমস্ত বৈরাতী এবং বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে এই বৈরাতী নৃত্য। এখন এই আধুনিকতার যুগে দাঁড়িয়ে আমরা হারাতে বসেছি আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য গুলিকে। বর্তমানে কোচবিহার জেলার এই বৈরাতী নৃত্য আর প্রথাগতভাবে পরিবেশিত হয় না। এই বৈরাতী নৃত্য এখন আধুনিকতার যুগে মঞ্চে অবতীর্ণ হয়েছে। তৈরি হয়েছে বৈরাতী নাচের নানা নৃত্য গোষ্ঠী।
2
তারা বৈরাতী নৃত্য শুধু বরণের অংশটুকু পরিবেশন করছে অশোক মন্ডলীর সামনে। তবে এই মঞ্চে উপস্থাপিত বৈরাতী নৃত্য ও আস্তে আস্তে দর্শকের কাছে অতিরঞ্জিত করে তোলার তাগিদে বৈরাতী নৃত্যের আঙ্গিকে এসেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। অর্থাৎ বর্তমান যুগের দর্শকদের চাহিদা পূরণের জন্য এবং বৈরাতী নৃত্য কে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য আধুনিক আঙ্গিক, পোশাক, গহনা, মেকাপ ও বাদ্যযন্ত্রের মিশ্রণ ঘটেছে। আঙ্গিকের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে আগে বরনের থালা অর্থাৎ চাইলন বাতি ধরে মজার ছলে এই নৃত্য পরিবেশন করতো গ্রামের বৈরাতী ও মহিলাগণ বর ও কনে কে ঘিরে। কিন্তু বর্তমানে গানের কথা অনুযায়ী নাচের অঙ্গ সঞ্চালন ও ভাব প্রকাশ করা হয়। মঞ্চে উপস্থাপনের জন্য নানান ধরনের নৃত্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে যাতে দেখা যাচ্ছে মহিলারা কখনো সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়াচ্ছে, কখনো পাশাপাশি দুটি লাইনে দাঁড়াচ্ছে আবার কখনো গোল করে ঘুরছেন।
পোশাকের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে আগে পরার ভালো শাড়ি পরে বৃত্ত পরিবেশন করতেন শিল্পীরা কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে লাল পাড় সাদা শাড়ি অথবা লাল পাড় হলুদ শাড়ি, লাল ব্লাউজ কখনো আবার পাঠানি ও রাজবংশী চাদর পরা হচ্ছে। কখনো আবার দেখা যাচ্ছে রঙিন এক রঙের শাড়ি ও পরছেন। গহনার ক্ষেত্রে এখন দেখা যাচ্ছে পুঁতির মালা, সোনালী অথবা পাথর বসানো নকল
3
গহনা করছেন শিল্পীরা। মুখের মধ্যে আগে কোন মেকাপ করা হতো না, শুধু আলতা সিঁদুর টিপ পরা হতো তবে এখন আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মেকাপ করে থাকেন শিল্পীরা,যা ভালোই লাগে। তবে বাদ্যযন্ত্রের যেমন আগে বাংলার ঢাক, দোতারা বাজানো হতো,এখন এই বৈরাতী নৃত্যে যেটি দেখা যায় তা হল ঢাক ও দোতারার সাথে বাঁশির যোগ হয়েছে আবার কিছু নৃত্য গোষ্ঠী ক্যাসিওর ব্যবহারও করছেন। এছাড়া এখনকার বৈরাতী নৃত্যে দেখা যায় অবিবাহিত মহিলারাও এই নৃত্যে অংশগ্রহণ করছেন। আগে শুধুমাত্র বিবাহিত মহিলারা এই নৃত্যে অংশ গ্রহণ করতেন।
এই বৈরাতী নৃত্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ যে পরিবর্তন এসেছে সেটি হল বিয়ের অনুষ্ঠান ছাড়াও কোচবিহার জেলায় কোন সম্মানীয় অতিথি আসলে তাকে বরন নৃত্যের দ্বারা স্বাগত জানানো হচ্ছে। শিল্পীরা অতীতের দিকে মুখ করে হাতে চাইলন নিয়ে নাচতে নাচতে অতিথি কে অতি সম্মানের সাথে মঞ্চের কাছে নিয়ে আসেন। এই বরন নৃত্যের ক্ষেত্রে শুধু বাজনার সাথে সাথে নাচ করা হয়,কোন গান ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু যখন মঞ্চে বৈরাতী নৃত্য উপস্থাপন করা হয় তখন গানের সাথে নাচ করা হয়। মঞ্চে বৈরাতী নৃত্য উপস্থাপনার ক্ষেত্রে কিছু নৃত্যগোষ্ঠী নৃত্যনাট্যের মতো করে বিয়ের প্রতিটি আচার-অনুষ্ঠান দেখিয়ে বৈরাতী নৃত্য উপস্থাপন করেন।
কোচবিহারের এই লোকনৃত্য লুপ্ত হয়ে গেলেও আধুনিক যুগের মঞ্চের জন্য বৈরাতী নৃত্যের অল্প কিছু অংশ আজও বেঁচে রয়েছে। তার মধ্যে প্রাচীনত্বের ছোঁয়া তুলনায় আধুনিকতার প্রভাব বেশি থাকলেও কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী বৈরাতী নৃত্য বেঁচে রয়েছে।
4
তথ্যসূত্র:-
১)দে,ডঃ দিলীপ কুমার।কোচবিহারের লোকসংস্কৃতি,অনিমা প্রকাশনী,আগস্ট 2015।
২)বর্মন,ধনেশ্বর।উত্তরবঙ্গের জনজীবন ও লোকাচার,প্রগতিশীল প্রকাশক,এপ্রিল 2011।
সাক্ষাৎকার:-
১)নির্মল দাস,নিউ কোচবিহার,তারিখ:-20/12/2020,দুপুর 12:40।
২)শ্রীপর্ণা সরকার,রানীবাগান,কোচবিহার,তারিখ:-20/12/2020,সন্ধ্যা 8 টা।
৩)জয়জিৎ বর্মা,তুফানগঞ্জ,কোচবিহার,তারিখ:-26/12/2020,সকাল 11টা।
৪)সুখেশ্বর দেউরী,শালবাড়ী,কোচবিহার,তারিখ:-26/12/2020,দুপুর 2 টা
৫)সুশীলা রায়,হাজরা পাড়া,কোচবিহার,তারিখ:-22/9/2019,19/12/2020,সকাল-৯ টা