May 1, 2021

বাংলা লোকসংগীতে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারে আধুনিকতা ও নান্দনিক দিক – প্রশেন রায়

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

লোকসঙ্গীতে বিভিন্ন প্রকার লোক বাদ্যের ব্যবহার

লোক সঙ্গীতের ভাব এক এক প্রকার। এগুলো নির্ভর করে বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতের উপর। ভৌগলিক অবস্থান থেকে শুরু করে মানুষের সামাজিক অবস্থা, জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবলী, অর্থনৈতিক অবস্থা, বিভিন্ন ধরনের কাজের ব্যবহৃত শ্রম ইত্যাদির উপরে লোকসঙ্গীতের ধরণ নির্ভর করে। বাংলাতেও বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে এক এক প্রকার লোকসঙ্গীতের প্রকাশ ঘটেছে। অঞ্চলভেদে বিভিন্ন লোকগানের মধ্যে কোথাও রয়েছে প্রাকৃতিক রুক্ষতা বা কমলতার প্রভাব, কোথাও আছে নিরন্তর অপেক্ষা অথবা অশ্রুসজল কারন, কোথাও আছে ঋতুকালীন উৎসব, আবার কোথাও আছে সামাজিক ও আর্থিক অবস্থার ব্যাঙ্গত্মক প্রকাশ। এইরূপ বহুমুখী লোকসঙ্গীতের বিভিন্ন প্রকার ভাব ধারাকে পরিস্ফূট করার জন্য সঠিক লোকবাদ্যাদির ব্যবহারও বিশেষ গুরুত্বপূর্ন। বাদ্যযন্ত্রের সঠিক প্রয়োগেই একটি লোকসঙ্গীত ভাবানুযায়ী প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারে। এই প্রসঙ্গে বাংলায় বিভিন্ন প্রকার লোকসঙ্গীতে বিভিন্ন প্রকার লোক বাদ্যাদির কিরূপ ব্যবহার হয় তা আলোচনা করা হচ্ছে।

বাউল গানে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র

বাউল গানের মধ্যে গুরুবাদী তত্ত্ব বা দেহতত্ত্বের ভাব ব্যাঞ্জনায় যে একাগ্রতা প্রকাশ পায় অথবা অসীম জগতের বিশালতার মাঝে যা উদাত্য সুর ধ্বনিত হয় সেই সুরকে এবং ভাবকে যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে একতারা বাদ্যটির একতন্ত্রীর স্পন্দন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বাউল গানের বিভিন্ন প্রকার শৈলী আছে। যেমন – গুরুবাদী, দেহতত্ত্ব, মুশি©দী ইত্যাদি গানের শৈলী। প্রত্যেকটি শৈলীরই নিজস্ব নিজস্ব ভাব প্রকাশের বিভিন্ন ব্যাঞ্জন আছে এবং ভাবের মুহুর্ত গুলিকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে আরো কিছু বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার হয়। যেমন – গুপগুপি বা আনন্দলহরী, গোপীযন্ত্র (এটিও একতার বিশিষ্ট),ঠুনঠুনে ইত্যাদি তত বাদ্য বংশী ইত্যাদী শুষির বাদ্য এবং আনদ্ধ বাদ্য হিসেবে বিশেষ করে শ্রীখোল বাদ্য বহুল পরিমানে ব্যবহৃত হয়।

৪৬

ভাটিয়ালী গানে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র

ভাটি শব্দ থেকেই ভাটিয়ালীর উৎপত্তি। আবার অনেকে বলেন, ভাটা শব্দ থেকে মাঝিদের টানটান সুরে এই গান গাইতে শোনা যায়। নদীমাতৃক দেশ (বাংলাদেশ) এ ভাটিয়ালী গান এর প্রচলন বেশী। দেহতত্ত্ব, বিচ্ছেদী, লৌকিক কৃষ্ণ প্রেম আঙ্গিক এর ভাটিয়ালী গান দোতারার সুর ও ছন্দে কারন্য রূপ ফুটে উঠে।

ছন্দ রক্ষার্থে এবং ভাটিয়ালী গানের ভাবানুযায়ী সুর সহযোগী বাদ্য হিসেবে দোতারাই শেষভাবে ব্যবহৃত হয়। দোতারার তারে ঘাত দ্বারা ছন্দের কাজ চলে। কখনো বাঁশীর সুর ও ভাটিয়ালীর ঔদার্য কে বিশেষভাবে প্রতিভাত করে। ভাওয়াইয়া গানে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র

ভাওয়াইয়া শব্দটির উৎপত্তি ভাব: কথাটি থেকে, ভাবের গান বলেই তা এই রূপ নামকরন করা হয়েছে। গলার স্বর ভেঙ্গে এক বিশেষ ঢঙ্গে টান টান সুরে এই গান গাওয়া হয়। নারী ঘটিত বিরহ ও প্রেমের কথাই এ গানের বিষয়। সাধারনতঃ পুরুষেরাই এ গান গেয়ে থাকেন। গায়ন ভঙ্গিমার জন্য দোতারাই হলো এ গানের এক মাত্র সঙ্গী, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঢোল জাতীয় বাদ্য ছন্দ রক্ষার্থে ব্যবহৃত হয়।

চটকা গানে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র

সাধারনতঃ প্রেম বিষয়ক হালকা চটুল কথাবার্তা নিয়েই চটকা গান রচিত হয়। সুর ও ছন্দের দিক থেকে চটকা গানের সুর চটুল বা নাচুনে এবং তার গতিও দ্রুত হয়। ভাওয়াইয়া গানের সঙ্গে ব্যবহৃত দোতারা এ গানের প্রধান আনুষাঙ্গিক যন্ত্র।

জারিগান এ ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র

এটা বিশেষ ধরনের ধমী©য় সঙ্গীত। বাংলার মুসলমানদের প্রিয় গান। এই গানের সুর অতি করুন। কারবালার ইমাম হাসান ও হুসেনের মৃত্যুর ঘটনাকে অবলম্বন করেই এই গান গড়ে উঠেছে। সারিগানের মত এটিও সমবেত সঙ্গীত। এই গানের সঙ্গে তাল দেওয়ার জন্য ঢোল বাজাবার রীতি প্রচলিত আছে ।

৪৭

তরজাগান এ ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র

তরজা গানের ইতিহাস খুব বেশী দিনের নয়। ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে হাওরার শালকিয়া অঞ্চলের মধুঠাকুর ও তারকপাল নামক দুজন রসিক মানুষই বাংলায় প্রথম| তরজা গানের প্রচলন করেন। তরজা গানের বিষয় বস্তু হল বেদ পুরান ও উপনিষদের কাহিনী। তরজা গানের বিশেষ কিছু অংশে ঢোলের ব্যবহার গানকে প্রাণবন্ত করে তোলে। 

শিবের গান এ ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র

গম্ভীরা গান, গাজন গান ও নীলের গান এই তিনটি গানই শিবের গান এর অন্তভু©ক্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে গম্ভীর শব্দ থেকেই গম্ভীরার উৎপত্তি। গম্ভীর হলেন শিব । মালদহ জেলার প্রধান লোক উৎসব হল গম্ভীরা। বৌদ্ধ শাসনের ভিতর থেকেই গম্ভীরার সূচনা এবং হিন্দুধর্মের পুনরভ্যুত্থানের সময় এই উৎসব শৈব উৎসবে রূপান্তরিত হয়। এই ধরনের গানে সমাজ ব্যবস্থার দোষ গুন, লাঞ্ছনা, উন্নতি-অবনতি প্রভৃতি নানা বিষয় নিয়ে কোন ব্যক্তিকে শিব সাজিয়ে তার সামনে উপস্থাপন করা হয়। এই ধরনের গান মনের মধ্যে যেমন ধর্ম ভাব জাগায় তেমনি সমাজ সংস্কারেও সাহায্য করে । পশ্চিমবঙ্গে ‘গাজন পূর্ব বাংলায় (বাংলাদেশ) নীল ও জলপাইগুড়িতে 1 গম্ভীরা মূলত সবকয়টিই শৈব উৎসবের নামান্তর। শৈব উৎসবের সবকয়টি গানে অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি ‘ঢোল ও বাঁশির ব্যবহার দেখা যায়। এছাড়াও বাঁশি, শিঙ্গা, দোতারা ইত্যাদি বাদ্যেরও প্রয়োগ হয়।

কবিগান এ ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র

তিনশ বছর পূর্বে বৃটিশ শাসনের গোরাতেই কবি গানের প্রচলন হয়েছিল, কবিগান বাংলার একান্ত নিজস্ব সম্পদ। কবি গানের প্রতি বাঙ্গালীর একটা স্বাভাবিক মমতা আছে। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আসরে দাড়িয়ে কবিওয়ালাদের মুখে মুখে গান বাঁধতে হয়। প্রাচীন পুরান রামায়ন, মহাভারত ইত্যাদির কাহিনী ছাড়াও বহু লৌকিক ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের উপরেও দুপক্ষের চাপা উত্তর হয়। কবি গানের অনুসাঙ্গিক যন্ত্রের মধ্যে ঢোল ও বাঁশী অন্যতম, এছাড়া শিঙ্গা জাতীয় শুষির বাদ্যের প্রয়োগও হয়। বর্তমানে এই ধরনের গানের প্রচলন অনেক কমে এসেছে এবং যা রয়েছে তার মধ্যে ও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে তাই অনেক ক্ষেত্রে হারমোনিয়াম ও সুর সহযোগী বাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৪৮

বিয়ের গান এ ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র

বিবাহের স্ত্রী আচারের অঙ্গ হিসেবে যে গানগুলি সারা বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাই হল বিবাহ সঙ্গীত । পুর্ব বাংলায় মেয়েদের কণ্ঠে বিবাহ সঙ্গীত অন্যতম প্রধান। লোকসঙ্গীত। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শ্রীহট্ট (বাংলাদেশ) জেলার মেয়েদের বিয়ের গান, বিয়ের গানে সানাই, ঢোল অন্যতম বাদ্যযন্ত্র।

ত্রিনাথের গানে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র

সৃষ্ঠি, স্থিতি আর প্রলয়ের দেবতা হলেন ত্রিনাথ। পূর্ব বাংলায় হিন্দু সমাজে ত্রিনাথের গানের প্রচলন আছে। বর্তমানে এ গানের প্রসার ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গেও। ঢোলক এর বাদন শৈলী ত্রিনাথের গানকে সৌন্দর্য ময় করে তালে। এছাড়া শ্রীখোল ও বাঁশী, করতাল এবং বর্তমানকালে হারমোনিয়াম এর ব্যবহারও হয়।  প্রভাতী গান এ ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র বাংলায় প্রভাতী গান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কেউ কেউ এ জাতির গানকে টহলদারী গান বলে থাকেন। বাউল সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ ধরনের প্রভাতী গান করেন।

প্রভাতী গানে তাল যন্ত্র হিসেবে শ্রীখোল এবং অন্যান্য বাদ্য যন্ত্র হিসেবে বাঁশী, একতারা, আনন্দলহরী,  করতাল এর ব্যবহার দেখা যায়। হোলির গানে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র ফাল্গুন চৈত্রমাসে দোলযাত্রা উপলক্ষে সারা ভারতবর্ষে হোলির উৎসব ও হোলির গানের প্রচলন রয়েছে। বাংলার হোলির গান ততটা বণা©ঢ্য নয়। হোলির গানে অন্যান্য যন্ত্রের সাথে ঢালে, শ্রীখোল, করতাল এর ব্যবহার দেখা যায়।

ঝুমুর গানে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র

ঝুমুর গান সাধারনতঃ পুরুলিয়া, বাকুঁড়া, পশ্চিম বধ©মান, ঝাড়গ্রাম ইত্যাদি অঞ্চলে বহুল প্রচলিত। বাংলা ঝুমুর গান রাধাকৃষ্ণের বিরহের কথা নিয়ে রচিত । ঝুমুর গান সাঁওতাল এবং কোলভীলদের এক ধরনের গোষ্ঠী সঙ্গীত। সাওঁতালী ছেলে মেয়েরা বনফুলে সেজে মাদলের সাথে দল বেঁধে নাচের তালে তালে এই গান গেয়ে থাকেন। মাদল ছাড়াও ছোট বাঁশীর প্রয়োগ হয়।

৪৯

রাখালিয়া গান এ ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র

এই গান সাধারনতঃ রাখাল বালকেরা গরু চরাইবার সময় মাঠে গেয়ে থাকেন। অনেক সময় বাঁশী ও এই গানে বাজানো হয়। রাখালিয়া গানের বিষয়বস্তু কৃষক ও গোপবালকদের গোচরনকে উপলক্ষ্য করে লিখা হয়ে থাকে।

কোন শিল্প বস্তুর প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো শিল্পের সৌন্দর্য। অসুন্দর কোন বস্তুই শিল্প বস্তুতে পরিনত হতে পারে না। এই সুন্দর মনের মধ্যে বিশেষভাবের উদ্ভেক করে, ভাব বিভিন্ন প্রকার বিভাব ও অনুভবের সম্মেলনে ঘনিভূত ভাবে পরিনত হয়। সেই ঘনিভূত ভাব থেকেই রসের উদ্ভেক হয় এবং রসাস্বাদনের মধ্য দিয়েই আনন্দ লাভ হয় আর এখানেই শিল্পের নান্দনিকতা প্রকাশ পায়। নন্দনতত্ত্ব বলতে আমরা সৌন্দর্যতত্ত্ব বা আনন্দতত্ত্বকে বুঝে থাকি। রসাস্বাদনের মাধ্যমে আনন্দলাভ ঘটলে ও রস শাস্ত্রের সঙ্গে সৌন্দর্য শাস্ত্রের প্রত্যক্ষ কোনো যোগাযোগ নেই। আবার অন্যদিক থেকে কোনো একটা জায়গায় এই দুইয়ের সম্মেলনেই আনন্দের উদ্ভব হয়। রস অভিনয়ের বস্তু। নাট্যের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ অভিনয়ের সুযোগ থাকে। কিন্তু গীত বাদ্য বা নৃত্যের সমন্বয়ে গঠিত সংগীত শিল্পের ক্ষেত্রে একমাত্র নৃত্য ছাড়া বাকীগুলোতে প্রত্যক্ষ অভিনয়ের সুযোগ নেই। তাই এক্ষেত্রে বিশিষ্ট গীতি বা ভঙ্গির দ্বারা অভিনয় প্রকাশ করা হয়। অবশ্য চিত্র বা ভাস্ককর্যের ক্ষেত্রে একটা স্থায়ী বক্তব্য প্রকাশ করা যায় বলে এক্ষেত্রেও সরাসরি ভাব তথা রসের উদ্ভেক হতে পারে।

সংগীত এমনি এক শিল্প যা বিমূর্ত। অর্থাৎ সংগীতের যে নাদময় রূপ তা শুধু শ্ৰবনগ্রাহ্য কিন্তু চাক্ষুষ নয়। যেহেতু সংগীত এক প্রকার শিল্প, অতএব সেই শিল্পের মধ্যে যেমন সৌন্দর্য থাকবে তেমনি থাকবে তার নান্দনিকতা। আলোচনা পর্বে আমরা দেখেছি, নন্দন বা আনন্দ লাভই শিল্পের প্রধান উদ্দেশ্য এবং যা রসাস্বাদনের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। অর্থাৎ সংগীতের ক্ষেত্রে ও তার বিশেষভাব এবং ভাব থেকে রসে পৌঁছতে হবে। যেহেতু রস অভিনয়ের বস্তু অতএব সংগীতের ক্ষেত্রেও অভিনয়কে প্রকাশ করতে হবে। বিমূর্ত সংগীতে একমাত্র বৈশিষ্ট্য স্বরভঙ্গি প্রয়োগের মাধ্যমেই অভিনয়কে প্রকাশ করা হয়। এই অভিনয় অবশ্যই নাদময় এবং এই নাদময় রূপ থেকেই বিভিন্ন বিভাব ও অনুভবের সাহায্যে স্থায়ীভাব তথা রস তথা আনন্দের সঞ্চার হয়। সংগীতের বিভিন্ন চরিত্র অনুযায়ী বিশিষ্ট স্বরভঙ্গি প্রয়োগ করা হয়। যেমন- রাগ সংগীত, দেশী সংগীত বা আঞ্চলিক সংগীত, লোকসংগীত ইত্যাদিতে বিশেষ বিশেষ ভাবকে প্রকাশ করবার জন্য বিশেষ বিশেষ আঞ্চলিক ভঙ্গির প্রয়োগ করা হয়। তবে শাস্ত্রীয় সংগীতের ক্ষেত্রে শুধু মাত্র আঞ্চলিক ভঙ্গি নয় তার সঙ্গে বিজ্ঞান সম্মতভাবে বিভিন্ন শ্রুতি প্রয়োগের মাধ্যমে স্বরভঙ্গি প্রকাশ করা হয়। লোকসংগীত এমনি এক সংগীত যা গ্রামীন সামাজিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এই সংগীত সাধারন মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, বিরহ-মিলন, বেদনা-যন্ত্রনার ভাষাকেই তুলে ধরে। বাংলার লোকসংগীতও এমনি এক সমৃদ্ধশালী সংগীত যার মধ্য দিয়ে সাধারন মানুষের আবেগের ধ্বনি সঞ্চারিত হয়।

৫০

লোক সংগীত এমনি এক ধরনের সংগীত যেখানে ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বরক্ষেপনের আঞ্চলিক গীত ভঙ্গির প্রভাব অধিক মাত্রায় পড়ে, যা ভৌগলিক পরিবেশ, আবহাওয়া ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। বাংলার লোক সংগীতের ক্ষেত্রেও ভৌগলিক পরিবেশ অনুযায়ী প্রধানতঃ দুটি ধারা আছে-

১) উত্তরবঙ্গীয়

২) পূর্ব ও দক্ষিন বঙ্গীয়

এখানে বাংলা বলতে আমরা অবিভক্ত বাংলাকেই বুঝাচ্ছি। উত্তর বঙ্গীয় ভৌগলিক অঞ্চল সমতল নয় এবং সেখানে গভীর বনভুমিও দেখা যায়। গ্রামের লোকালয়গুলির মধ্যে ব্যবধান বিস্তর। কৃষিকাযে©র ক্ষেত্রে বহু পরিশ্রম করতে হয়। আবার অন্যান্য জীবিকা হিসাবে হাতি, মেষ ইত্যাদি প্রাণীর রক্ষনাবেক্ষনও এসে পড়ে তাই এই কঠিন জীবন যাত্রায় মানুষের শারীরিক গঠন, উচ্চগ্রামের কণ্ঠস্বর, সামাজিক ও অথ©নৈতিক প্রভাব বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া গানের মধ্যে আমরা বিশেষ লক্ষন দেখতে পাই। উচ্চগ্রামে এই গান গাওয়া হয় এবং গানের সুর ও ছন্দ অনেক ক্ষেত্রে মাহুত চালিত হাতি অথবা মহিষ পালক চালিত মহিষের চলার ভঙ্গির উপর গঠিত হয়। গানের সুরে কিঞ্চিত স্বরভঙ্গ ভাওয়াইয়া গানের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। দোতারার সুর এই গানের ভাবকে ফুটিয়ে তুলতে বিশেষ সাহায্য করে, অপরপক্ষে দোতরার তারে এমন এক ছন্দ সৃষ্টি করা হয় যা মাহুত বন্ধু বা মইষাল বন্ধুকে কেন্দ্র করে তার গাওয়া গানের মধ্যে এক বিশেষ ভাবকে প্রকাশ করা হয়।

এরপর যদি আসা যায় ভাটিয়ালী গানের প্রসঙ্গে তবে আমরা দেখবো এই গান বাংলার প্রধান নদী, খাল-বিলের নৌকা চালক মাঝিমাল্লাদের গান। আবার ফাঁকা মাঠের গাছ তলায় বসে পথ চলার মাঝেও ভাটিয়ালী গান গাওয়া হয়, তাই একে মেঠো গানও বলা হয়।

আমরা যদি বাংলার বাউল গানের দিকে দৃষ্টিপাত করি তবে দেখবো এই গান এক অথে© বৈরাগ্যের গান। ঘরছাড়া বৈরাগী বাউন্ডেলারাই এই গান গেয়ে থাকেন। গানের বিষয় বস্তু মূলত লৌকিক ধর্মকে আশ্রয় করেই গড়ে উঠে। আবার সহজ সরল ভাষার অন্তরালে হিয়াঁলীর আকারে দেহতত্বের বহু জটিল বিষয়টিকেও অতি চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়। বাউল যখন একমনা তখন তার হাতে একতারার একটি সুরই তার চরম বৈরাগ্যের ভাবকে ফুটিয়ে তুলে। আবার বাউল যখন কোন আখরা বা মেলায় বা সভায় গান গাইবেন তখন সেই গানের আঙ্গিককে বিশেষভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য আনন্দলহরী, খমক এবং তালবাদ্য হিসাবে শ্রীখোল, খঞ্জনী ইত্যাদি সঠিক আনুষঙ্গিক বাদ্য। নৃত্যরত বাউলের পায়ে বাধাঁ ঘুঙ্গুরের ঝংকারে এক অপূর্ব ভাবময় তার প্রকাশ ঘটে।

৫১

বাংলার লোকসংগীতের যে উদ্ভব ঘটেছে তাকে আমরা আবার বিশেষ দুটি ধারায় বিভক্ত করতে পারি যেমন-

১) বিভিন্ন লৌকিক উৎসব ও পালা পার্বন কেন্দ্রিক

২) বিভিন্ন সামাজিক বিষয় কেন্দ্রীক

বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বন। বিভিন্ন ধমী©য় উৎসব ছাড়াও বিভিন্ন ব্রত, ছড়া পাঁচালি ইত্যাদিতে আঞ্চলিক সংস্কৃতি অনুযায়ী লোকগান ও লোক নৃত্যের বহুল প্রসার আছে। মানভূম, সিংভূম, ধলভূম ও বাংলার অন্যান্য দেশে বিশেষ করে বাংলার পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভাদু পূজা ও টুসু পূজাকে কেন্দ্র করে কুমারী মেয়েদের যে ব্রত পালিত হয় তাতে ভাদুর গান, টুসুর গান গাওয়া হয়। এই গানগুলির সঙ্গে মাদলের তাল বাঁশীর সুর এক অপূর্ব পরিবেশের সৃষ্টি করে। এছাড়া চৈত্রমাসের নীল পূজাকে কেন্দ্র করে নীলের গান চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক পূজাকে কেন্দ্র করে চড়কের গান, আলকাফ গান, মা শীতলার গান, গো-মঙ্গল গান, মুশকিল আসান অর্থাৎ সত্যপীরের গান ফসল তোলার গান ইত্যাদি বাংলার বিভিন্ন বারব্রত পালা পার্বন উৎসবকে ঘিরে গীত হয়। দোতারা বা বাঁশীর সুরে ঢোল বা মাদলের ছন্দে বাংলার মানুষ বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ আনন্দ ও খুশিতে মেতে উঠে। বিবাহকে কেন্দ্র করেও বিভিন্ন পর্ব অনুযায়ী বাংলার লোক সংগীতের ধারা গ্রামীন সমাজে এখনো অনেকাংশে প্রচলিত আছে। এই উৎসবের অন্তর্গত হলুদ কোটা, জলসওয়া, দধিমঙ্গল ইত্যাদি পর্যায়গুলিতে বাড়ীর মেয়েরাই বিভিন্ন ধরনের গান গেয়ে থাকে। সাধারনতঃ এই সকল গান বাদ্য যন্ত্র ছাড়াই গীত হয়। তবে ঢোলের বোলে এর ছান্দিক নান্দনিকতা বিশেষভাবে ফুটে উঠে। বিভিন্ন উৎসকেই কেন্দ্র করে আবার তরজা গান, কবি গান ইত্যাদি পরিবেষ্টিত হয়। মূলত এই প্রকার গানে দুটি দলের মধ্যে এক প্রকার সাংগেতিক প্রতিদ্বন্দিতা চলে। পৌরানিক বা সামাজিক কোনো তত্ত্ব বিষয়ে এই ধরনের কাব্যিক লড়াই হয়। কাব্য ছন্দ্যে নাচের তালে তালে ঢোল, কাঁশি, বাঁশী ইত্যাদি বাদ্য এমনভাবে বেজে উঠে যে এই গানের মাধ্যমে প্রায় সকল শ্রোতা দর্শকই উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে এবং বিনোদনে মেতে উঠে।

লোক গানের সামাজিক ধারার মধ্যে সারিগান, চটকা, গম্ভীরা, ঘেঁটুর গান, ঘাটু গান, ঝুমুর গান ইত্যাদি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে যেমন সমবেত কণ্ঠে সারিগান গাওয়া হয় তেমনি আবার চটকা ঝুমুর ইত্যাদি গানের মধ্যে সামাজিক বা সাংসারিক বিষয়কে তুলে ধরা হয়। আবার কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে ও বিভিন্ন গানের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন সমস্যাকে তুলে ধরা হয়। উদাহরনস্বরূহ গম্ভীরাগান, ঘেটুর গান ইত্যাদি। সারি গানে তালের প্রাধান্য অধিক কারন তালের ছন্দেই সারিবদ্ধভাবে নৌকার দাঁড় টানা হয়। ঢোল জাতীয় বাদ্যই এই সমবেত ছন্দকে ধরে রাখে আবার ঝুমুর গানের সঙ্গে মাদল, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার এক অপূর্ব বিনোদনীয় পরিবেশের সৃষ্টি করে। মাদলাজেলার গম্ভীরা গান উত্তরবাংলার বর্ষ শেষের গান। এটি একপ্রকার উৎসব কেন্দ্রিক গান হলেও এখানে শিবকে কেন্দ্র করে তাঁর স্তোতী ও বন্দনার মধ্য দিয়েই জাতীর সমাজ ব্যবস্থার দোষ গুণ, জাতীর দুঃখ লাঞ্ছনার উন্নতি অবনতির প্রভৃতির নানা বিষয়কে তুলে ধরা হয়। এই ধরনের গান মনে যেমন ধর্মভাব জাগায় তেমনি সমাজ সংস্কারে ও সাহায্য করে। গম্ভীরা গানের শোভাযাত্রায় নানা রকমের সঙ্গ বের করা হয়। আগেকার দিনে কলকাতাতে ও জেলে পাড়ার সঙ্গ বা গঙ্গা পূঁজার সঙ্গ বের করা হতো।  বিভিন্ন সাজে সজ্জিত সঙ্গদের মুখ দিয়ে সমাজের নানা রকম ত্রুটি বিচ্যুতি ও প্রচলিত ব্যবস্থার কথা বলা হতো। গম্ভীরা ও সঙ্‌ জাতীয় গানের মধ্যে নাচের প্রভাব বেশী থাকায় ঢোল, কাঁশি, বাঁশী ও শিঙ্গা জাতীয় বাদ্যের ব্যবহার অধিক হয়। ঢোলের তালে তালে ও বাঁশির সুরে গ্রামাঞ্চলের লোক সংস্কৃতির ধারা বিশেষভাবে ফুটে উঠে। ঘেঁটুর গান ও এইরূপ ঘন্টার্কন বা ঘেঁটুকে কেন্দ্র করে যে ধর্মীয় সংগীত গাওয়া হয় তার মধ্যেও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইত্যাদি বিষয়বস্তু প্রতিফলিত হয়।

৫২

পরিশেষে আমরা এ কথাই বলতে পারি বাংলার লোক সংগীতের বিভিন্ন আঙ্গিক অনুযায়ি বিভিন্ন প্রকার লোকবাদ্যের যে সুচারু ব্যবহার দেখা যায় তা গ্রাম বাংলার লোক সংস্কৃতিকে অতি নান্দনিকভাবে মানব মনে প্রবাহিত করে।

লোকসংগীতের বিস্তৃতি এতটাই ব্যাপক যে একটি দুটি লাইনে এর সঠিক সংজ্ঞা নিরূপন করা সম্ভব নয়। সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশের লোকসংগীত নিয়ে অনেক গবেষনা হয়েছে এবং গবেষনালব্ধ ফল থেকে মোটামুটি একটা সিদ্ধান্তে আসা গেছে যে লোক সঙ্গীত মূলত গ্রামাঞ্চলের সঙ্গীত এবং মানুষের জীবন যাত্রার বিভিন্ন ধারাকে কেন্দ্র করে এই সংগীত গড়ে উঠেছে। গীত বাদ্য এবং নৃত্যের সমন্বয়ে যেমন সংগীত গড়ে উঠে তেমনি লোকসংগীতের মধ্যে ত্রিধারা প্রবাহমান। সামাজিক অথ©নৈতিক,সংস্কৃতির বিষয়ের সঙ্গে জড়িত গ্রামীন মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না , বিরহ-মিলনের কথাই এই সংগীত বলে। আবার লোকগানের মধ্য দিয়ে মানুষ নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরে আবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। লোক সঙ্গীত মূলত গ্রামাঞ্চলের গান হলেও পরবর্তী কালে দেখা গেছে শহরাঞ্চলের অনেক বিষয় বস্তুকে কেন্দ্র করে বহু লোকগান রচিত হয়েছে ।

আমি যে বিষয়ে আলোচনা করেছি তা বাংলার লোকসংগীতকে (অখন্ড বাংলা) কেন্দ্র করে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মতো বাংলার লোকসংগীত ও সংগীত ভান্ডারের এক অমূল্য সম্পদ। বাংলার বিভিন্ন জেলা বা গ্রামীণ অঞ্চলে যে সকল লোকসঙ্গীতের ধারা আছে তা বিশেষ বৈচিত্রপূর্ণ এবং হৃদয়গ্রাহী। ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালীর ছন্দ ও সুরের বৈচিত্র ঔদার্য বাউল গানের বৈরাগ্য, ঝুমুর গানে খুলির নেশা অথবা কবি গানে কবিত্ব প্রতিভা মানুষের মনে এক গভীর সংবেদন সৃষ্টি করে।

লোকগান ও লোকনৃত্যকে সুরে, ছন্দে তালে প্রানবন্ত করে তোলে নানা লোকবাদ্য। বাউলের একতারার তারে যেমন একনিষ্ঠ্য হবার সুর বাজে তেমনি ভাটিয়ালী বা ভাওয়াইয়ার সুরকে বয়ে নিয়ে যায় দুতারার দুটি তার । ঝুমুরের মাদল অথবা গম্ভীরার ঢোল কাঁশি জাগিয়ে তোলে এক অপূর্ব ছন্দ, যা হৃদয়ের প্রত্যেকটি স্পন্দন এর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এই সকল লোকবাদ্য যন্ত্রাদির সুচারু ব্যবহারে লোক সংগীতের মধ্যে যে সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয় তাই মানবমনকে এক নিবিড় ভাবে নিমগ্ন করায় এবং যার পরিনতি রসাস্বাদনের মাধ্যমে আনন্দলোকে প্রবেশ।

“বাংলার লোকসংগীতে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার” এই প্রসঙ্গে যে আলোচনা করা হলো তাকে পাচঁটি অধ্যায়ের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। লোকবাদ্যে আলোচনার পূর্বে বাংলার বিভিন্ন প্রকার লোক সংগীতের শৈলী ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর এই সংগীতে ব্যবহৃত নানা প্রকার লোক বাদ্যাদির নাম ও তাদের গঠন সম্পর্কে একটা ধারনা দেবার চেষ্টা করেছি। এমন অনেক লোকসংগীত আছে যা হয়তো আমাদের সকলের কাছে পরিচিত নয় এবং সেই সকল লোকসংগীতের গায়ন শৈলীর সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার লোকবাদ্যের ব্যবহার ও তাদের বাদন শৈলীর সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারনা আমরা পেতে পারি। সবশেষে বিভিন্ন প্রকার লোকসংগীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার লোকবাদ্য যন্ত্রাদির ব্যবহারের যে একটা যৌক্তিকতা আছে এবং একটা নান্দনিক দিক আছে সে সম্পর্কে যথাসম্ভব আলোচনা করেছি। আশা করি আমার এই গবেষনামূলক আলোচনা পত্রটি সঠিকভাবে বিবেচিত হবে।

৫৩

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী

১) গীত বাদ্যম (১ম খন্ড),লেখক- লক্ষীনারায়ন ঘোষ। প্রকাশক : প্রতাপ নারায়ন ঘোষ, বি, কম, শিশির ভাদুরী সরনী মানিকতলা স্ট্রীট, কলকাতা

২) সংগীত মূল্যায়ন বক্তৃতামালা (৩য় খন্ড), সম্পাদনা – ডঃ উৎপল গোস্বামী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমি। তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার

৩) লোক সংগীত বিভাকর (১ম খন্ড),লেখক – সুবোধ গঙ্গোপাধ্যায়, প্রকাশক : ফামা© কে-এল-এম প্রাইভেট লিমিটেড। বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী স্ট্রীট, কলকাতা

৪) আরও স্বরলিপি লোকগীতি, লেখক – বুদ্ধদেব রায়, সঙ্গীত প্ৰকাশনের পক্ষে -মীরা নাথ, আর কে চ্যাটার্জী রোড, কলকাতা

৫) গানের বাহিরানা, লেখক – হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সম্পাদনা – মৈনাক বিশ্বাস, গনেন্দ্র মিত্র লেন, কলকাতা

৬) উত্তরবঙ্গের লোকসঙ্গীত লেখক – ডঃ মুহম্মদ আবদুল জলিল, প্রকাশক – তোফাজ্জল হোসেন, বিশ্বসাহিত্য ভবন, বাংলা বাজার, ঢাকা

৭) প্রসঙ্গঃ লোকসংস্কৃতি, – সৌগত চট্টপাধ্যায়, পুস্তক বিপনি, বেনিয়াটোলা লেন, কলকাতা

৮) ভাওয়াইয়া লোকসঙ্গীত চয়নিকা, – নীহার মজুমদার, প্রকাশক – অমল সাহা,ভি, আই, পি, পার্ক, কলকাতা

৯) সঙ্গীত তত্ত্ব, দেবব্রত দত্ত, প্রকাশক – দেবী দত্ত, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রোড, কলকাতা

১০) বাদ্যযন্ত্র প্রসঙ্গ ,- মোবারক হোসেন খান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা।

১১) তবলা বিজ্ঞান (দ্বিতীয় খন্ড), – ইন্দুভূষন রায়, ভারতী প্রকাশনী, চৌধুরী পাড়া রোড, বারাসাত উঃ ২৪ পরগনা

১২) লোক-সাংগেতিকী, লেখক – বুদ্ধদেব রায়, প্রকাশনা -ফার্মা কে, এল, এম প্রাইভেট

৫৪

১৩) বঙ্গীয় লোকসংগীতে রত্নাকর (প্রথম খন্ড)। – আশুতোষ ভট্টাচার্য

১৪) নিবারন পন্ডিতের গান। তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশিমবঙ্গ সরকার

১৫) জন্ম শতবর্ষে কবিয়াল লম্বোদর চক্রবর্তী, – হীরেন ভট্টাচার্য, – ভারতীয় গননাট্য সংঘ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি

১৬) নীলের গান, লেখক – শামসুর রহমান, প্রকাশনা – জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র, বাংলাদেশ