May 1, 2023

Exploring the Influence of Music on Folk Drama

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Maitri Sinha, Research Scholar, Rabindra Bharati University

Abstract: Music has long been an integral component of cultural expression, with a profound impact on various forms of traditional art. This study delves into the intricate relationship between music and folk drama, examining how musical elements shape and enhance the narrative, emotional resonance, and overall experience of traditional performances. From ancient rituals to modern folk theatrics, the interplay of melody, rhythm, and lyrics serves as a dynamic force, weaving a rich tapestry that amplifies the cultural and historical significance of folk dramas. Through an interdisciplinary approach that combines cultural anthropology, musicology, and theatre studies, this research seeks to unravel the multifaceted ways in which music influences the themes, characters, and audience engagement in folk dramas across diverse global contexts. By exploring this symbiotic connection, we aim to deepen our understanding of the profound role that music plays in preserving and evolving the vibrant tradition of folk drama.

Tribal Museum: Bundelkhandi dancers bring their tribal dances to Bhopal – Times of India

লোকনাট্যে সঙ্গীতের প্রভাব, মৈত্রী সিনহা, গবেষক, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

লোকনাট্যে সঙ্গীতের প্রভাব কতটা তা আলোচনা করতে গেলে বলতে হয় লোকনাট্য অর্থাৎ লোকজীবনের নানা কাহিনীর উপর ভিত্তি করে রাচিত ও অভিহিত নাটকেই সাধারণত লোকনাট্যে বলে।লোকনাট্য দৃশ্য শ্রব্য ও অভিহিত হয়।লোকনাট্য সাধারাণত  অঞ্চল কেন্দ্রিক হয়। কোনো কাহিনী বা গল্পকে গানের নাচের ও অভিনেয়র মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করাই হল লোকনাট্যের মূল লক্ষ্য। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, বহু বছর আগে যখন  লেখার প্রচলন ছিলনা মানুষ তখন শুনে শুনে রামায়ণ, মহাভারত, পূরাণ,  উপনিষদ ও বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী মনে রাখতো, যাকে আমরা শ্রুতি বলি,সুর করে গান গাওয়া হতো ও তার সাথে অঙ্গভঙ্গি করে নাচের মধ্যে দিয়ে অভিনয় করা হতো আর এটাই হলো লোকনাট্যের প্রতি মানুষের প্রথম ধাপ।সুরই হল লোকনাট্যের প্রধান উল্লেখযোগ্য অংশ, তার ভাব বা অনুভূতির মূল উৎস।

প্রকৃতপক্ষে গান, নাচ ও সংলাপ এই তিনটির সহযোগেই লোকনাট্য গড়ে ওঠে। তার মধ্যে গান বা সুর হল লোকনাট্যের অন্যতম উপাদান। গান বা গানের কথাই হল লোকনাট্যের ভাষা। লোকনাট্য গীতি প্রধান রচনা। বাংলায় লোকনাট্য নিয়ে আলোচনা শুরুই হয় গানের সূত্র ধরে। বাংলার মানুষের জীবনে গান তাদের প্রতিটি কাজ ও অনুভূতির সাথে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে। বহুকাল আগে থেকেই বাংলার মানুষের গনমাধ্যম হিসেবে গান কাজ করে চলেছে উদাহরন স্বরূপ- চাষ করার সময় ধান বোনার গান, ধান কাটার গান,নৌকা বয়ার গান, পটুয়ার পট বিক্রির সময় পটের গান, পালকি চালকদের পালকির গান।

লোকনাট্যের উদ্ভব ও বৈশিষ্ঠ্য নিয়ে যে সব গুণী ব্যক্তিরা আলোচনা করেছেন তাদের অনেকের ধারানা – এগুলি আদিম যুগের ritual dance পরে এর সঙ্গীতাংশ কমে সংলাপের ভাগ বেড়ে লোকনাট্যর রূপ নিয়েছে। অধ্যাপক বরুণ চক্রবর্ত্তী বলেছেন –             “লোকনাট্যের মূলে যে যাদু অনুষ্ঠানের ভূমিকা সক্রিয় তা এক স্বীকৃত সত্য।‘’ (১)

আবার অধ্যাপক নির্মলেন্দু ভৌমিক লোকনাট্যের উদ্ভবের মূলে জাদু অনুষ্ঠানের ভূমিকা আছে বলে মনে করেন “মেছেনী লোকনাট্যের সম্ভাবনা” গ্রন্থে  তিনি লোকনাট্যের উদ্ভবের মূলে একাধিক কারন আছে বলে মত প্রকাশ করেন।“(২)

তবে লোকনাট্যের উদ্ভবের ইতিহাস অনুসরন করলে যা পাওয়া যায় তা হল- প্রাচীনকালে মানুষেরা যুদ্ধ জয়ের পর বা শিকার করে আনার পর হাতে তালি দিয়ে নাচ করার রীতি ছিলো, পরে বৈদিক যুগে যজ্ঞাগ্নীর চারিদিকে হাতে তালি দিয়ে  মন্ত্রের সাথে নাচের প্রচলন ও ছিল, সুর করে গান গেয়ে মন্ত্রচ্চারন ও প্রাচীন রীতি ছিল পরে সঙ্গীতের জায়গায় স্থান পায় আবৃত্তির। আবৃত্তির মধ্যে দিয়ে মানুষের মনের ইচ্ছে বা আবেগের প্রকাশ ঘটে।  এই প্রসঙ্গে সুকুমার সেন বলেছেন – “ এই ভাব প্রকাশক অঙ্গ সঞ্চালন  অর্থজ্ঞাপক আবৃত্তি এবং ঐক্যবদ্ধ কাহিনী থেকেই জন্ম নিল নাটক।“ (৩) সুতরাং বলা যেতে পারে লোকনাট্যই হল আদি নাট্য।

লোকনাট্যে গান গেয়ে বা গানের মধ্যে দিয়েই কাহিনী বর্ননা করার রীতি আছে যা ঋকবেদের সময়কাল থেকেই চলে আসছে,সুতরাং লোকনাট্য সম্পূর্নভাবেই সঙ্গীতের উপর নির্ভরশীল। লোকনাট্য গানের মধ্যে দিয়েই তার জীবন্ত সত্তা বহন করে চলেছে। লোকনাট্যের সংলাপ ও ভাব এই দুইইয়ের ফলে দর্শকের মনে রসবোধের উদয় হয়। সংলাপ সুর যুক্ত হওয়ায় সহজেই তা দর্শকের মনে দাগ কাটে। সংলাপের ভাষা সহজ ও সাবলিল হওয়ায় মানুষ খুব সহজেই মনে রাখতে পারে এবং এই সব গান করার জন্য কোন রকম তালিম নেওয়ার প্রয়োজন হয় না সেই জন্য সবাই এই সব গান করতে পারে। এই ভাবেই লোকনাট্যের সংলাপ ও গান জীবন্ত প্রামান্য দলিল।

লোকনাট্যের মধ্যে যে গান গুলি সাধারণত দেখা যায় তাকে মোটামুটি ভাবে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় –

১। কাহিনীর বিষয়বস্তু অনুসারে রচিত।

২। কাহিনীর প্রয়োজন নেই, সংলাপ বা গানের মাঝে গাওয়া হয়।

দ্বিতীয় প্রকার গানে কাহিনী বা গল্পের সাথে  সম্পর্ক না থাকলে ও তা বিনোদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্যপূর্ন।

লোকনাট্য গানের মধ্যে দিয়েই প্রকাশিত হয়।লোকনাট্যের সংলাপ গুলি পদ্য আকারের হলেও তা সুর করে গাওয়া হয়, এগুলি সংলাপাত্মক । আবার এই সংলাপ গুলির মধ্যেও গান গাওয়া হয় যা সংলাপাত্মক নয়। লোকনাট্যে গানের মধ্যে দিয়েই কাহিনীর বর্ননা ও ভাবের অদান-প্রদান হয়।

আমাদের বাংলায় প্রচলিত বহু লোকনাট্য দেখা যায়, তাদের মধ্যে আলকাপ, গম্ভীরা,দাশাই নাচ, খনের গান,লেটো, যাত্রা, প্রমূখ।

সম্প্রীতির আলকাপ

‘’আলকাপ’’ লোকনাট্যকে ভালো ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ‘আলকাপ’ শব্দটির অর্থ ‘আল’ অর্থাৎ তিক্ষ বা ধারালো, ‘কাপ’ অর্থাৎ কপটতা বা রঙ্গ ব্যঙ্গ। গান থেকেই লোকনাট্যে রূপান্তরিত হয়েছে। ইহা রঙ্গ ব্যঙ্গাত্মক লোকনাটক। অনেকেই মনে করেন চৈত্র সংক্রান্তির গাজন থেকে আলকাপের উৎপত্তি এর কারন বশত বলা যায় আদি আলকাপে শিবের গাজন গাওয়ার রীতি ছিল পরবর্তী সময় আলকাপ থেকে শিব মাহাত্ম্য মুছে যায়। মালদা,মূর্শিদাবাদ,বীরভূম অঞ্চলে ইহা ছ্যাঁচড় গান নামে পরিচিত। সময়ের সাথে পরে গানের অংশ কমে পদ্য যুক্ত হয়েছে এবং অভিনয়ের অংশ বেড়েছে। আদি আলকাপে চারটি পর্ব ছিল। যথা – বন্দনা পর্ব ,ছড়া বন্দনা, কৌতুক পর্ব, পালা গান। সুতরাং দেখা যায় আলকাপে গানের প্রাধান্যই বেশি ছিল যা পরবর্তিকালে সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে।

গান বা সঙ্গীতই হল লোকনাট্যের মূল উপাদান বা ভাষা সঙ্গীত ছাড়া লোকনাট্য নির্বাক।সুরের বা গানের মধ্যে দিয়েই লোকনাট্য সময়ের সাথে নিরন্তর প্রবাহিত হয়ে চলেছে।

তথ্যসূত্র

১। বাংলার লোকসাহিত্য চর্চার ইতিহাস, বরুণ কুমার চক্রবর্ত্তী, পৃষ্ঠা -৫২৭।

২।  নাটকের কথা,অজিত কুমার ঘোষ, পৃষ্ঠা- ২১২।

৩। নট নাট্য নাটক, সুকুমার সেন, পৃষ্ঠা – ৬।

গ্রন্থপজ্ঞী

১) চট্টোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ (২০০৭), লোকায়ত পশ্চিমরাঢ়, কলিকাতাঃ লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র

২) রায়, ভব, (২০১৮), রাঢ় বাংলার মাটি মানুষ ও সংস্কৃতি, কলকাতাঃ মর্ডান কলাম

৩) গোস্বামী, দিলীপ কুমার (২০১৬), সীমান্ত রাঢ়ের লোকসংস্কৃতি, পুরুলিয়াঃ পারিজাত প্রকাশনী

৪) চক্রবর্ত্তী, বরুণ কুমার(১৯৯৯), বাংলার লোকসাহিত্য চর্চার ইতিহাস, কলকাতাঃ পুস্তক বিপনী

৫) ঘোষ, অজিত কুমার (১৯৯৬), নাটকের কথা, কলকাতাঃ কলকাতা সাহিত্যলোক

৬) সেন, , সুকুমার (১৯৭২), নট নাট্য নাটক, কলকাতাঃ মিত্র ও ঘোষ