November 1, 2020

রাঢ় অঞ্চলের সংগীত সংস্কৃতি ও সাধারণ মানুষের কথা

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

ডঃ সোমা দাস মণ্ডল

রাঢ় অঞ্চলের সংগীত সংস্কৃতিকে জানার জন্য এই এলাকার মানুষকে ও তাদের কর্মধারা, জীবিকা ইত্যাদি সম্বন্ধে জানা প্রয়ােজন। এই এলাকার প্রাকৃতিক গঠন, রুক্ষতা, নদী, বৃক্ষলতা ইত্যাদি সম্বন্ধেও জানা দরকার। এই অঞ্চলের মানুষদের মধ্যেকার জীবিকা নির্ভর করে ভূপ্রকৃতি ও ভৌগােলিক গঠনের উপর। এখানকার কাকুরে মাটি, খনি, বনাঞ্চলের সম্পদকে নিয়েই এদের সুখ দুঃখ। বিহার, ঝাড়গ্রাম থেকে বহু মানুষ এখানে আসে। আবার দীর্ঘকাল ধরে আদিবাসীরাও এখানে বসবাস করে চলেছে। সব কিছুর মধ্যেই এক মিশ্র সংস্কৃতির নানা প্রভাব পড়েছে এখানকার লােকগানে। এখানকার গানে এই রুক্ষতার কথা, খনি অঞ্চলের কথা নানাভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

Facebook

প্রাচীন বঙ্গের অন্যতম অংশ হল রাঢ়। এর ভৌগােলিক অবস্থান নির্ণয় করতে হলে বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থ ও কিছুটা অনুমানের উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে বিষয়টি বেশ বিতর্কমূলক ও জটিল। দীর্ঘকাল পরে পণ্ডিতগণ এই বিষয়ে নানা মত প্রকাশ করেছেন। রমেশচন্দ্র মজুমদার সাধারণভাবে পশ্চিমবঙ্গে প্রবাহিত গঙ্গায় পশ্চিম ও দক্ষিণাংশ রাঢ়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে মনে করেন। তাঁর মতে দক্ষিণে দামােদর এবং সম্ভবত’ রূপনারায়ণ নদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রাচীন রাঢ়ের চতুঃসীমা বলেছেন উত্তরে মুর্শিদাবাদ থেকে দক্ষিণে মেদিনীপুর, চব্বিশ পরগনা, পূর্বে হাওড়া কলকাতা থেকে পশ্চিমে পুরুলিয়া সাঁওতাল পরগনা। জৈনধর্মগ্রন্থ আচারঙ্গ সূত্র অনুসারে খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে রাঢ়ের ছিল দুটি অংশ—পশ্চিমাংশ বজ্জভূমি (বজ্রভূমি) আর পূর্বাংশ “সূক্ষ্মভূমি। ঝাড়খণ্ডের বিস্তৃত নিবিড় অরণ্য সহ প্রাচীন বীরভূমের পাহাড় টিলা, বন এবং রুক্ষ মেজাজের আদিবাসী অধ্যুষিত পশ্চিমাঞ্চল ছিল ‘বজ্জভূমি’র অন্তর্গত এবং বীরভূম জেলার পলিসমৃদ্ধ নদীবেষ্টিত বর্তমান বর্ধমানের পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে সূক্ষ্মভূমির অবস্থান ছিল। অনুমান হয়, বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার উত্তর-পশ্চিমাংশ অর্থাৎ কান্দিমহকুমা, সমগ্র বীরভূম জেলা এবং বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার উত্তরাংশ এই লইয়া উত্তর রাঢ়। মােটামুটি অজয় নদী এই উত্তর রাঢ়ের দক্ষিণ সীমা এবং দক্ষিণ রাঢ়ের উত্তর সীমা দক্ষিণ রাঢ়ের অন্তর্গত ছিল বর্তমান হাওড়া ও হুগলী জেলা এবং বর্ধমান জেলার অধিকাংশ। আশুতােষ ভট্টাচার্য বলেছেন, প্রাচীনকালে পূর্বে ভাগীরথী, উত্তরে ময়ূরাক্ষী, দক্ষিণে দামােদর ও পশ্চিমে ছােটনাগপুরের পার্বত্যভূমি এই সীমানাবেষ্টিত বিস্তৃত ভূভাগ রাঢ় নামে পরিচিত ছিল। ভৌগােলিক অবস্থান এবং সংস্কৃতির বিচার করে এই ভূখণ্ডকে দুটি ভাগে ভাগ করা হল পূর্বরাঢ় ও পশ্চিমরাঢ়। পূর্ব রাঢ় বলতে বােঝায়, (১) পশ্চিম মুর্শিদাবাদ (২) বীরভূম জেলার উত্তরাংশ (৩) পূর্ব বর্ধমান (৪) গােটা হুগলী (৫) গােটা হাওড়া (৬) পূর্ব মেদিনীপুর (৭) বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস থানা।

মল্লভূম-পশ্চিম রাঢ় অঞ্চল থেকে উদ্ভূত জনপদের প্রাক ইতিহাস - Bengali Koulal  Bangla | DailyHunt

পশ্চিম রাঢ় বলতে বােঝায়, (১) সাঁওতাল পরগনা (২) বীরভূমের অধিকাংশ অংশ (৩) বর্ধমানের পশ্চিমাংশ (৪) ইন্দাস থানা বাদে বাঁকুড়া জেলা (৫) পুরুলিয়া জেলা (৬) ধানবাদ জেলা (৭) হাজারিবাগ জেলার (বর্তমান গিরিডি জেলা) কামার, পেটারওয়ার, গােলা, জেরিডি ও রামগড় প্রভৃতি এলাকা। (৮) রাঁচী জেলার সিল্লি সােনাহাতু, বুন্দু ও তামার থানা (৯) সিংভূম জেলা (১০) মেদিনীপুর জেলার ঝাড়গ্রাম মহকুমা, সদর উত্তর ও সদর দক্ষিণ মহকুমা ভৌগােলিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী জেলাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। পশ্চিম, মধ্য ও পূর্ব। পশ্চিম ও মধ্য বিভাগের অর্ধাংশ ছােটনাগপুর মালভূমির ক্রমবিস্তার। সুউচ্চ ভূপৃষ্ঠ শিলাময়, পাথুরে বা ল্যাটারাইট রুক্ষ অনুর্বর, কঙ্করময় এই রাঢ় অঞ্চল। জঙ্গলময় হওয়ার দরুন এখানে সেখানে শাল মহল পিয়ালের জঙ্গল, আম, জাম ও কাঁঠালের বন। মাঝে মাঝেই টিলা ছােটোবড়াে। কোথাও কেঁদ পলাশের সৌন্দর্য। সমতল ভূমি বললেই চলে। ভূমিখণ্ডের প্রায় সর্বত্রই ডাঙা ডহর ও তড়া-গড়া, টা(ই)ড় টিকর, বৃক্ষহীন প্রস্তরময় পাহাড় পর্বত আর ডুংরি-দাড়াংএ ভর্তি। কোথাও বেলেপাথর কোথাও গন্ডােয়ানা স্তরের পালল শিলা, নাইস নামক রূপান্তরিত শিলা, কোনাে স্থানে গ্রানিট গ্রাফাইট ক্লে-আয়রন ল্যাটেরাইট শিলা, কেথাও শ্লেট পাথরের ভাজ এবং অসংখ্য স্থানে বালি মেশানাে শুকনাে কাদামাটি। সর্বত্রই মাটিতে কর্কশ রূপ। পাহাড় পর্বত ভেদ করে গড়ে উঠেছে অনেক ছােট বড় নদ নদী। এই নদ-নদীগুলি দুটি ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন রূপ। গ্রীষ্মকালে নদীগুলি শুকিয়ে থাকে। শুধু বালি আর বালি। বর্ষাতে ভয়াল রূপ নেয়। দামােদর, কোপাই, দ্বারকেশ্বর, ময়ূরাক্ষী, সড়ক, অজয়, কংসাবতী প্রভৃতি নদী সেগুলির অন্যতম। এই নদীগুলি উৎস কোনাে কোনাে পাহাড়, নদী বা নদীর গুলির উপনদী বা শাখানদী থেকে। এই নদীগুলির গভীরতা বেশি হয়। ফলে বর্ষায় দুকূল ছাপানাে বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েও প্রতি বছরে বন্যা হয়ে থাকে। তবে বর্তমান কালে দামােদর, কুমারী, কংসাবতী গড়ে ওঠার জন্য বানভাসি’ থেকে মুক্তি পেয়েছে। পশ্চিম রাঢ়ের বহু গ্রামবাসী বা জনপদ। রাঢ়ে বন-জঙ্গলে বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালির সমারােহ দেখা যায়। কোথাও শাল পিয়াল, কোথাও বহড়া, বাবলা, শিরীষ, মহলঝাটি কুটুসের ঝােপঝাড়। কোথাও আবার বনখেজুর শেয়াকুল আবার কোথাও বাঘের নঘি, সুরগঁজা, কাশি প্রভৃতি গাছের প্রাচুর্য দেখা যায়। এক সময় এই ভূখন্ড ছিল জঙ্গলময়। পরবর্তীতে বন কেটে কেটে বসতি শুরু হয়। তার সাক্ষ্য বহন করে শালবনি, মহলবনি, জামবনি, মুড়াগ্রাম শালতােড়া, ঝাড়গ্রাম, পলাশবনি, শালডিহা, শালতােড়া প্রভৃতি নাম তার সাক্ষ্য বহন করে।

বর্দ্ধমান – দেবগ্রাম ও বিক্রমপুরের কিছু কথা – প্রথম পর্ব – BAARTA TODAY

রাঢ়ের আবহ পরিবেশ রুক্ষ কঠিন। বর্ষা ও শীতের দিনগুলি বাদ দিলে এখানে সারা বছর বয়ে চলে গরম বাতাস। গ্রীষ্মের প্রখর তাপে বনবাদার আকাশ-বাতাস জ্বলতে থাকে। চলতে হয় ফলে প্রকৃতির সাথে লড়াই করে চলতে হয়, এখানকার মানুষের। কৃষি ও নির্ভরশীল প্রকৃতির উপর। ভূমি অসমতল বলে চাষযােগ্য জমির পরিমাণও অনেক কম। অবশ্য সাম্প্রতিককালে ছােটো বড় নদনদী গড়ে ওঠায়

advance valentines day at purulia in tusu festival-Ebela.in

একদিকে যেমন বন্যার তাণ্ডব কমেছে অন্যদিকে চাষ-আবাদ করার সুযােগও হয়েছে।নীহাররঞ্জন রায় ভূপ্রকৃতির পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, রাজমহল দক্ষিণ হইতে আরম্ভ করিয়া এই পুরাভূমি প্রায় সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত। রাজমহল, সাঁওতালভূম, মানভূম, সিংভূম, ধলভূমের পূর্বাশায়ী মালভূমি এই পুরাভূমির অন্তর্গত তাহারই পূর্বদিক ঘেঁষিয়া মুর্শিদাবাদ বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমান ও মেদিনীপুর জেলার পশ্চিমাংশের উচ্চতর গৈরিকভূমি; ইহাও উক্ত পুরাভূমির অন্তর্গত। মালভূমির অংশ একান্তই পার্বত্য, বর্ণময়, অজলা, অনুর্বর। এখানে এই অংশে গভীর শালবন, পার্বত আকর, কয়লার খনি এবং ইহা সাধারণত অনু্বর। প্রাচীন উত্তর রাঢ়ের অনেকখানি অংশ, দক্ষিণ রাঢ়ের পশ্চিম অংশ এই মালভূমি এবং উচ্চতর গৈরিক ভূমির অন্তর্গত। দক্ষিণ রাঢ়ের পশ্চিম অংশ এই মালভূমি এবং উচ্চতর গৈরিক ভূমির অন্তর্গত। দক্ষিণ রাঢ়ের রাণীগঞ্জ-আসানসােলের পার্বত্য অঞ্চল, বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড় অঞ্চল, বন বিষ্ণুপুর রাজ্য, মেদিনীপুরের শালবনি—ঝাড়গ্রাম-গােপীবল্লভপুর সমস্তই এই পুরাভূমির নিম্ন অংশ। এইসব পার্বত্য অঞ্চল ভেদ করিয়াই ময়ুরাক্ষী, অজয়, দামােদর, দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী, কাসাই, সুবর্ণরেখা প্রভৃতি নদনদী সমতল ভূমিতে নামিয়া আসিতেছে। এখনাে ইহাদের জলস্রোত পার্বত্য লালমাটি বহন করিয়া আনে।” এই ভূখণ্ডকে তাই অরণ্যভূমি বললে বােধহয় ভুল হবে না। কোন এক সময় রাঢ়ের একটি অংশের নাম ছিল জঙ্গলমহল। সমগ্র জেলার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশে চাষবাস হয়। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ ঘন থেকে হালকা অরণ্যের অধিকারে। অরণ্যভূমি’ বলতে যারা বীরভূমের কথা বলে থাকেন। তাদের কথা একেবারেই নস্যাৎ করা যায় না। এই বন জঙ্গলে ডাকাত 1. ও সমাজ বিরােধীদের গােপনে ঘাঁটি বানায় আবার এই বনেই বাঘ ভালুক হাতি হায়না ও অন্যান্য হিংস্র ও অন্যান্য অহিংস্র জন্তু জানােয়ারও বাস করে। এই জঙ্গলের নানা জাতের বিষাক্ত সাপ ও পাইথন লােকমুখে প্রসিদ্ধ। গােলাম হােসেন তাে পশ্চিমের বনাঞ্চলে সিংহের অস্তিত্বের কথাও উল্লেখ করেছেন তার সিয়ার-উল-মুতাক্ষরীন গ্রন্থে। এই ধরনের সমাজ বিরােধী ও হিংস্র জন্তু জানােয়ারের পালের জন্য সুস্থ স্বাভাবিকভাবে জনপদ সৃষ্টি কৃষির বিস্তার করাতে দুস্তর বাধা।

দিনের ছবি– “ভাদু” | Ekabinsha - Media/News/Publishing

আদিম মানবগােষ্ঠীর বিবর্তনের ফলে ইতিহাসের যুগকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। (i) আদি প্রস্তর যুগ বা পুরা প্রস্তর যুগ। (2) মধ্য প্রস্তরযুগ (3) শেষ প্রস্তর যুগ (4) নব্য প্রস্তরযুগ। এই নব্য প্রস্তর যুগেই মনুষ্য জাতির ক্রম বিবর্তনের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় রচনা করেছেন।

রাঢ় ভূমিকে নিম্নগাঙ্গেয় অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত বলা হলেও এই অঞ্চলের ভৌগােলিক পরিবেশ বিচিত্র। ভূভাগের গঠনগত বৈশিষ্ট্যের জন্য মােট তিনভাগে ভাগ করা যায়। মানব সভ্যতার উন্মেষ ও তার ক্রমবিকাশের ধারা ভৌগােলিক অবস্থানের উপর বসবাসকারী মানবগােষ্ঠীর জীবনধারণের উপায়, রীতি নীতি ও আচার আচরণ ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু প্রভৃতি ঐ স্থানের ভৌগােলিক অবস্থানের উপর যথেষ্ট নির্ভর করে। মানবসভ্যতা ও নদীপ্রবাহও উপরও এদের প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এই ভৌগােলিক পরিবেশ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ মানব জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করেও সভ্যতাকে অনেকাংশে চালনা করে। রুক্ষ মালভূমি অঞ্চলে মানবগােষ্ঠী ও নদী তীরবর্তী ভূভাগে বসবাসকারী মানবগােষ্ঠীর জীবনধারণের পদ্ধতি ভিন্ন প্রকৃতির। প্রথম গােষ্ঠীরা পশুপালনের উপর নির্ভর করে এবং শেষের গােষ্ঠীটি চাষের উন্নতির জন্য নতুন উপায়ে উদ্ভাবন করবে নিজেদের প্রয়ােজনের তাগিদে। আবার দেখা গেছে গভীর অরণ্যে বসবাসকারী মানবগােষ্ঠী পশুশিকার করে জীবনধারণের জন্য অস্ত্র তৈরির কলাকৌশল আয়ত্তের প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাবে। সেইজন্য পার্বত্য অঞ্চল, মালভূমি, পলিগঠিত সমভূমি, অরণ্যসঙ্কুল প্রদেশ অঞ্চলের ভৌগােলিক পরিবেশ মানবসভ্যতার সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করেছে।

PURULIA-Purulia - ভাদু উৎসব বা ভাদু পরব, লোককথা, রীতি,... | Facebook

মানবসভ্যতার উন্নতি ও অর্থনীতিতে বিকাশ ঘটাতে হলে শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্যের বিস্তৃতির প্রয়ােজন এবং এই খনিজ পদার্থ অনুসন্ধানের সময় দেখা গেছে যে, কঠিন ভূগর্ভের উপরিভাগ বালুকণা ও মৃত্তিকায় আচ্ছাদিত। রাঢ়ের পূর্বভাগে পলির গভীরতা অধিক এবং পশ্চিমদিকে পলির গভীরতা কম। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে আর্কিয়ান যুগের one of the most noteworthy rocks of Manbhum not from its bulk for its wide distribution is a peculiar silliceous and sometimes ferruginous rock which accompanies lines of faulting E. W. Vredenburg.

জেলার সামগ্রিক প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যটি একসাথে গাঁথলে মনে হয়, আদিমযুগে পাথুরে অতিকায় সরীসৃপের দল পশ্চিম থেকে পূর্বে নেমে এসেছিল দলবদ্ধভাবে। কোন অজ্ঞাত নিয়ন্ত্রক তাদের থামতে বলছিল এবং তারা থেমেও ছিল কিন্তু আজও তারা সেইভাবে স্থির আছে।

ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী জেলাকে তিনভাগে ভাগ করেছিলেন ভ্রেডেনবার্গ (১) উত্তরে রানীগঞ্জ ও ঝরিয়ার কয়লাখনি প্রধান দুটি অঞ্চলের মধ্যে শিলাস্তর তাদের বিচ্ছিন্ন করেছে। (২) মধ্যবর্তী অঞ্চল, যা জেলাটির মধ্যে সবচেয়ে প্রশস্ত এবং সম্পূর্ণ স্ফটিক শিলাদ্বারা গঠিত। (৩) দক্ষিণাঞ্চল, প্রাচীন শিলাস্তর শ্লেট দ্বারা গঠিত এবং যার সঙ্গে প্রাচীন আগ্নেয়শিলা-তাকে ভারতীয় ভূত্ত্ববিদদেরা ধারওয়ার নামে জানে।

এই পৃথিবীতে বৈচিত্র্যপূর্ণ শিলাময় লক্ষ লক্ষ বছর ধরে জেলার গর্ভস্থিত, ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া ও রূপান্তরের মাধ্যমে সমৃদ্ধ খনিজ ভাণ্ডার সৃষ্টি করেছে, যা আজও দেখা গেছে উদ্ঘাটিত হয়নি। উত্তরে কয়লাখনি প্রধান গন্ডোয়ানা অববাহিকার মধ্যে পাঁচেট অঞ্চলটি অবস্থিত। অঞ্চলটির দুটি ভাগ ও কয়েকটি উপভাগে বিভক্ত।

মধ্য গন্ডােয়ানা। নিম্ন গন্ডােয়ানা কামথি পাঁচেট দামােদর অঞ্চল তালচের রানীগঞ্জ অঞ্চল লােহা পাথর স্তর বরাকর অঞ্চল সন্ধান পাওয়া যায়। এই আর্কিয়ান শিলাস্তরের গঠন বৈশিষ্ট্য হল, এটি অর্ধবৃত্তাকার ও উপরিভাগ গম্বুজাকৃতি, ইলামনাইট, ম্যাগনেটাইট, চুনাপাথর, অভ্র প্রভৃতি খনিজ পদার্থের সন্ধান পাওয়া যায়।

রাঢ়ের প্রকৃতির অঞ্চলগুলি হল বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান, বীরভূম, মেদিনীপুর। এই জেলাগুলির অবস্থান হল পশ্চিম সীমান্তে। পুরুলিয়া ও অন্যান্য জেলার পশ্চিম অংশকে উচ্চভূমি বলা হয়। রুক্ষ পাথরের উপাদান বেশি এই ভূভাগে। কিন্তু হুগলী, মেদিনীপুর ও বর্ধমান জেলার পূর্বভাগ, মুর্শিদাবাদ ভূমিভাগ গঠিত হয়েছে। ছােটনাগপুরে উৎপন্ন নদীবাহিত পলিমাটি দ্বারা। নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ জেলার পলির মান সমান নয়। সমভাবে বলা যায় ভাগীরথীর পূর্ব ও পশ্চিম অবস্থিত পলিগঠিত সমভূমি একরকম নয়। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, মেদিনীপুর জেলার পশ্চিম অংশ এবং পলিগঠিত সমভূমির মধ্যবর্তী ভূভাগের মৃত্তিকা ল্যাটেরাইট বা লালমাটি। তাই একে লালমাটির দেশ বলা হয়। এই মাটির বৈশিষ্ট্য সর্বত্র সমান নয়। এই মৃত্তিকার প্রকৃতি শক্ত ও পাথুরে, তাই চাষবাস খুবই কষ্টকর। এই মাটি পুরুলিয়ায় সর্বত্র দেখা যায়। মেদিনীপুরের উত্তর ও পশ্চিম অংশ, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলার পশ্চিমাংশে এই মৃত্তিকা দেখা যায়। বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, বীরভূমের পূর্বভাগ, বর্ধমানের মধ্যভাগ ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার উপর পলি আচ্ছাদন থাকায় কৃষিকাজ অপেক্ষাকৃত সহজ হয়ে থাকে। কংসাবতী সুবর্ণরেখা, দ্বারকেশ্বর নদের উপত্যকা রাঢ়ভূমির সর্বোচ্চ অংশ। পুরুলিয়া সংলগ্ন দামােদর, অজয়, বরাকর নদের ভূমিভাগ বেশ উঁচু। মালভূমির প্রাকৃতিক অবস্থান বাঁকুড়া, পুরুলিয়া থেকে আলাদা। বেলেপাথর, কয়লা, শামুক ও গণ্ডোেয়ানা পলি দিয়ে তৈরি এই অঞ্চল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০ মিটার থেকে ১২৫ মিটারের মধ্যে। বীরভূম জেলার দক্ষিণভাগে দুবরাজপুর পাহাড়টি ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার মধ্যে অবস্থিত। যাকে স্থানীয় ভাষায় মামা-ভাগ্নের পাহাড় বলা হয়।

এই অঞ্চলটিতে কয়লা ছাড়াও চুনা, লােহা ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। পাঁচেট স্তরটি ঝরিয়া খনি পর্যন্ত এগিয়ে সেখানেই শেষ হয়ে গেছে। রানীগঞ্জ অঞ্চলের ব্যাপ্তি অনেকটা অংশ জুড়ে। পঞ্চকোট পাহাড়ের নীচেও স্তরটি নিহিত আছে। এই স্তরটি বালি পাথরে গঠিত। স্তরটির গভীরতা দেড় হাজার ফুট, কয়লা বিরল, প্রধানত লালমাটি ও বেলেপাথর দিয়ে তৈরি। উভচর প্রাণী ও একজাতীয় সরীসৃপের ফসিলও কখনও কখনও চোখে পড়ে। এই গন্ডােয়ানা অববাহিকার অন্তর্গত উত্তরের পরিমণ্ডলটির মােট এলাকা দুহাজার সাতশাে চল্লিশ মিটার। জেলার মধ্যে অবস্থিত কয়লাখনি প্রধানত নেতুড়িয়া থানার অন্তর্গত। কয়লা ছাড়ার মরিমণ্ডলটি চুনাপাথরের সঞ্চয়ে সমৃদ্ধ। সঞ্চয়ের সিংহভাগ আছে নেতুড়িয়া থানার হাসা পাথর এলাকায়। দ্বিতীয় সঞ্চয়টি ঝালদা থানার জাবর পাহাড়ের কাছাকাছি। তৃতীয় সঞ্চয়টি বাগমারা অঞ্চলে পাঁচেট পাহাড়ের কাছে গচ্ছিত আছে। ভূগর্ভের শিলাবৈচিত্র্য ভূপৃষ্ঠের উপর স্পষ্ট ছাপ ফেলেছে। চুনাপাথরের মধ্যে ম্যাগনেসিয়ামের ভাগ কম থাকায় জাবর পাহাড়ের সঞ্চয়ে সিমেন্ট তৈরির পক্ষে উপযােগী। ফলে এই অঞ্চলে একটি ছােট সিমেন্ট কারখানার প্রস্তাব বহুদিন ধরে চলে আসছে। উত্তরের পরিমণ্ডলে বড়সিনি থেকে রামকানালি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গ্রাফাইটের সঞ্চয় দেখা যায়। এই গ্রাফাইটে কার্বনের পরিমাণ বেশি। যা সঞ্চয় আছে, তার মধ্যে পঞ্চাশ টন সংগৃহীত হয়ে কাজে লাগতে পারে। এই খনিজটির বাণিজ্যিক উপযােগিতা সৃষ্টি করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতীয় মেটালার্জিকাল ল্যাবরেটরি। উত্তরতম পরিমণ্ডলের পূর্বদিকের সমতল ক্ষেত্রের মধ্যে হঠাৎ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে পাঁচেট পাহাড়। পঞ্চকোট হল তার পােশাকী নাম। সমুদ্র সমতল থেকে যােলশাে ফুট উঁচু চৌরাশি পরগনার অন্তর্গত। আকারে দীর্ঘ পাহাড়টি শৈলশিরায় দাগ কাটা কাটা, শীর্ষ মিলিত হয়েছে পূর্বান্তে ছােট ছােট ঘন জঙ্গলে ডাকা উত্তুঙ্গ খাড়াই, ভারবাহী পশু ও মানুষের পক্ষে গম্য। চাকাওয়ালা শকটের পক্ষে জটিল। আম ও মহুয়ার ছাড়া ছাড়া বন। মুর্শিদাবাদ জেলার উত্তরভাগে ফারাক্কা, দক্ষিণে কষ্টি পাথরের নির্মিত পাহাড় এবং সর্বশেষে পূর্বে বিদ্ধ্যপর্বতমালা। বর্ধমান জেলার এই অংশের সঙ্গে অন্য অংশের কোন মিল নাই। এক অংশে সুজলা-সুফলাএবং অন্য অংশে ল্যাটেরাইট, পাথর ও গন্ডােয়ানা শিলায় (কয়লা) ভর্তি। একইভাবে মেদিনীপুর জেলার পূর্ব ও উত্তর দক্ষিণের কোন মিল নাই। এই জেলার উত্তর-পশ্চিমে মাটির রং লাল কিন্তু অত্যন্ত শক্ত রূক্ষ। ফলে চাষআবাদ হয় না বললেই চলে। সমগ্র পশ্চিম অঞ্চলে শাল, সেগুন, মহুয়া জঙ্গলে পরিপূর্ণ। উভয় জেলার পূর্ব ও পশ্চিমভাগে শীত ও গ্রীষ্মকালের পার্থক্য বােঝা যায়। দক্ষিণভাগের সমতলভূমি হতে চুর্ণী, মাথাভাঙা, জলঙ্গী, ইছামতী নদীর প্রবাহ পথের দ্বারা এই সমভূমির অংশ নির্দিষ্ট আছে। এই সমভূমির মধ্যে দিয়েই ভাগীরথী নদী প্রবাহিত হয়েছে কিন্তু দেখা গেছে উভয় অংশের মধ্যেই কিছু পার্থক্য সূচিত হয়। ভাগীরথীর পশ্চিমভাগের সমভূমি হল প্রাচীন এবং ছােটনাগপুর অঞ্চল হতে আসা নদীর পলি থেকে গঠিত হয়েছিল। ভাগীরথীর পূর্বভাগ প্রধানত ভাগীরথী ও পদ্মানদীর শাখাগুলি পলির দ্বারা গঠিত হয়েছে। ২৪ পরগনা ও নদীয়া জেলার অসংখ্য খাল বিল পরিপূর্ণ এবং জলাভূমি ও খালবিলের সংখ্যা ক্রমে বেড়ে গেছে দক্ষিণ দিকে। তাই সীমান্তবর্তী ইচ্ছামতী হল সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ নদী। সুন্দরবনের জোয়ারের খাল হাড়িভাঙার সঙ্গে ইহা যুক্ত হয়েছে।

ভাদু_পরব ভাদু উৎসব বা ভাদু পরব,... - Purulia-পুরুলিয়া জেলা | Facebook

আদিম মানুষের বাসভূমি অরণ্য। দামােদর উপত্যকায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল একসময় অরণ্য অঞ্চলের রূপান্তরিত ছিল। আদি-মানব গােষ্ঠী বহু ছােট ছােট সম্প্রদায়ে একসময় বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। নানা জাতীয় টোটেম আশ্রয় করে গােষ্ঠীগুলি তাদের নিজেদের চিহ্নিত করতেন। অরণ্য এখনও তাদের পরিচয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। আদিম যুগে অরণ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না। প্রাচীন যুগে বনের ভাগ ছিল ৮টি। এই বনাঞ্চলগুলাে পরবর্তীতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে মহাকাব্য ও পুরাণে। উনিশ শতকের শেষদিকে সৃষ্টি হয়েছিল ছােটনাগপুর বনাঞ্চলভুক্তির। পূর্বে সৃষ্ট পালামৌ, হাজারিবাগ ও সিংভূম বনভূমি তার অন্তর্গত হয়েছিল। কসুম, পলাশ, শাল, মহুল, কেঁদ, সিধা, গলগলি, পিয়াশাল, রহড়া, শিউলি, অর্জুন, হরিতকী, আসন, বহেড়া, চালতা, গামার, বেল, পিয়াল ইত্যাদি প্রধান প্রধান গাছ ছিল। কোথাও কোথাও ছিল বাঁশবন।

অরণ্য একসময় অরণ্য সন্তানের আহার্য যােগাত। জীবিকার আশ্রয় ছিল। গ্রামীণ জীবনে যে বিশাল জনসংখ্যা কৃষিকাজে যুক্ত ছিল, বছরের অনেকগুলি মাস তারা কর্মহীন হয়ে থাকতে বাধ্য হত। মােট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ এ জাতীয় উপজীবিকায় যুক্ত থাকতেন। এই অরণ্য উৎপাদনের ফলে এই জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এখন বনের সাথে যে সমস্ত কাজ জড়িয়ে আছে, যেমন—কাঠ, বিড়িপাতা সংগ্রহ, পশুর খাদ্য ফুল ও বীজ সংগ্রহ। এই কাজে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ নিয়ােজিত হয়ে থাকতেন।

কুয়া !! বাংলার লাল মাটির কূপ খনন। Excavation of red soil in Bangladesh -  YouTube

কোনাে অঞ্চলের জলবায়ু যেমন মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, ঠিক তেমনিভাবে কৃষি শিল্প ও বনভূমির উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। প্রত্যক্ষভাবে দেখা যায়, বনভূমিই কিন্তু শিল্প ও জনজীবনের অর্থনৈতিক বিকাশের পথকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। ইতিহাস পড়লে দেখা যায়, অগভীর বনভূমি অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী এলাকায় গােচরণ ক্ষেত্রে হাজার হাজার গৃহপালিত পশুর বিচরণক্ষেত্র রূপে ধরা হয়েছিল। পরে এই গােচারণক্ষেত্রগুলির আশেপাশে এক বিশেষ সম্প্রদায়ের বসতি গড়ে উঠেছিল। পশ্চিমবঙ্গের মনভূমির পরিমাণ খুবই সীমিত। মাত্র ৪৮০০ বর্গ হেক্টর মালভূমির প্রত্যন্ত এবং ৪২০০ বর্গহেক্টর বন রয়েছে কাথি ও উপকূল অঞ্চলে। এই বনভূমিতে তাল, খেজুর, গামার, হলুদ, ধব, বট, অশ্বথ, ঝাউ, কেঁধ, রহরা, কুসুম পারাসি, শিশু, সেগুন, শাল, অর্জুন, হরিতকী প্রভৃতি স্বাভাবিক উদ্ভিদ জন্মে থাকে। লবণাত্মক পরিবেশের মধ্যে গেওয়া, সুন্দরী, দুল, রায়েন, নিপা প্রভৃতি বৃক্ষ প্রচুর জন্মায় এবং উপকূল অঞ্চলের কেয়া, বাঁশ, নারিকেল, খেজুর, তাল, ঝাউ ইত্যাদি বৃক্ষও প্রচুর জন্মে। আবার কোনাে অঞ্চলে উলুখড়, সাবাইঘাস, হােগলা, বেনা, শােলা ইত্যাদিও পাওয়া যায়। তবে কচুরিপানাও ক্ষতিকর জলজ উদ্ভিদের মধ্যে।

মানব সভ্যতার পূর্বে রাঢ়ের নদীর অবদান নিয়ে বলা যায় যে, সুদূর অতীতকাল থেকে মানুষের জীবিকা ও সভ্যতার নিবিড় সম্পর্ক আছে। যা চিরাচরিত বা শাশ্বত। এই যুগের মানুষ যখন স্থায়ীভাবে বাস করতে আরম্ভ করে এবং স্থায়ীভাবে বাস করার জন্য তারা নদীর তীরভূমি গুলােকেই বেছে নিয়েছিল, রাঢ়ের জনজীবনের উপর নদীর প্রভাব অপরিসীম। দেখা গেছে বিভিন্ন জেলার জনজীবন, শিল্প, কৃষি, গ্রাম ব্যবসা-বাণিজ্য, নগরপত্তন এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির উপর প্রভাব বিস্তারকারী নদীগুলির গুরুত্বপূর্ণ।

নদীগুলির প্রবাহ উত্তরপশ্চিম এবং দক্ষিণপূর্বে। নদীগুলির প্রকৃতি হল প্রাকৃতিক জলধারায় পরিপুষ্ট নদীগুলাের মতাে। শীত ও গ্রীষ্মে বেশিরভাগ সময় খাতগুলাে শুকিয়ে যায়। বছরের কোন সময়ই নাব্য থাকে না। একমাত্র দামােদর নদই বর্ষাকালে নাব্য হয়ে উঠতে দেখা যায়। তবে আচমকা নেমে আসে হড়পা বান, বেগ প্রচণ্ড। এর স্থায়িত্ব যদিও বর্ষাকালে বৃষ্টির জল বন্ধুর ভূভাগের গা বেয়ে অজস্ ধারায় নেমে আসে। এই ধারাগুলি মিলিত হয়ে যখন একটি বড় জলধারার সৃষ্টি করে, তাকে বলা হয় জোড়। অনেকগুলি জোড় মিলে সৃষ্টি হয় নদীর। এভাবেই রাঢ়ের অধিকাংশ নদনদীগুলি সৃষ্টি হয়েছে। দেশকে সুজলা সুফলা করতে নদীগুলি প্রভূত সহায়তা করে। রাঢ় অঞ্চলের নদীগুলি প্রাচীনকাল থেকে প্রবাহিত হয়ে আসছে।

গনগনি

জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নদী ও প্রাচীনকালে এসব নদীগুলি নাব্য ছিল। এরপর সারাবছর নদীতে জল থাকত। যাতায়াত-ব্যবসা বাণিজ্য পুরােদমে চলত। বর্তমানে যেসব নদীর নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। রাঢ় অঞ্চলের নদীগুলি সাধারণভাবে বর্ষাকালে ফুলে ফেঁপে ওঠে। গ্রীষ্মে শুকিয়ে যায় বা ক্ষীণ প্রবাহ থাকে। নদীর জলকে কেন্দ্র করে মানুষের জীবন জীবিকার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ফলে এখানকার গানে, গল্পে লােকজীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে নদী ও প্রবাহিত জীবনের কথা। নদীপথে যাতায়াত ছিল তুলনায় অনেক সহজ। দূর-দূরান্তে যাতায়াতের জন্য জলপথকে ব্যবহার করা হত। ব্যবসা বাণিজ্য ও যােগাযােগের পাশাপাশি নদী থেকে মাছ ধরা, নদীর আশেপাশে বনাঞ্চলে ফলমূল, পশুপাখি সংগ্রহ, কাঠ, জ্বালানি সংগ্রহ করা ছিল সহজ ও স্বাভাবিক। ফলে নদীর পাশাপাশি এলাকাতে বসবাস করার বহু আদিবাসী ও অন্যান্য মানুষ।

গনগনি

নদী ও বনাঞ্চলের পাশাপাশি নদীর অববাহিকা অঞ্চলে পলিমাটিতে চাষ হত। কৃষি ফসলের জন্যও বহু মানুষ এই সব জায়গায় বাস করত। ফলে রাঢ় অঞ্চলের নদী প্রবাহের গতিপথ, নদীর আশে পাশে গড়ে ওঠা গভীর জলাশয়গুলি সমাজ ও সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে ওঠে। রাঢ়ের প্রধান প্রধান নদীগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল ভাগিরথী, রূপনারায়ণ, দামােদর, ময়ূরাক্ষী, কাসাই, দ্বারকেশ্বর, শিলাই, সূবর্ণরেখা, কুন্তি, সরস্বতী, খড়ি, বাঁকা, জলঙ্গী, চূর্ণি, ইছামতী, কানা দামােদর, মুন্ডেশ্বরী, বল্লুকা, শিঙ্গারণ প্রভৃতি।

দামােদরের নামকরণই স্মরণ করিয়ে দেয় অস্ট্রিক সভ্যতার অস্তিত্ব। দা-মুণ্ডা অস্ট্রিক শব্দ। দা-মুণ্ডার অর্থ হল মুণ্ডাদের জল, দা-মুণ্ডা > দা মুদা > দামােদর। সাঁওতাল মুন্ডাদের কাছে দামােদর হল পবিত্র নদ। দামােদরের প্রবাহ নিম্ন। উৎস থেকে মােহনা পর্যন্ত দামােদরের দৈর্ঘ্য ৫৯২ কিমি। বাঁকুড়ার ভিতর দিয়ে প্রায় ২৫০ কিমি পথ অতিক্রম করেছে। হাজারিবাগ জেলায় হাজার খানেক ফুট উঁচু উপত্যকায় এসে নাম হয়েছে দামােদর। দামােদরের উপনদী হল শালী ও বােদাই, শালী নদী গঙ্গাজলঘাটি থানার কেশাড়া বালিখুনের জঙ্গলে উৎপত্তি হয়েছে। বেলিয়াতােড়ের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইন্দাস থানার ভিতর দিয়ে দামােদরের সঙ্গে মিশেছে ৭৪ কিমি এর গতিপথ।

ধলকিশােরের অপর নাম দ্বারকেশ্বর। এর উৎসমুখ পুরুলিয়া জেলার হুড়া থানার তিলাবনী পাহাড়ের কাছে। এটি ছাদনা থানার দুমদা গ্রামে বাঁকুড়ায় প্রবেশ করে শেষে ইন্দাস থানার নগাে তেঁতুল গ্রামের ভিতর আরামবাগ তথা হুগলি জেলায় মিশেছে। দ্বারকেশ্বর প্রবাহিত হয়েছে জয়পুর, পাত্রসায়ের এবং কোতলপুর ও ইন্দাস থানার সীমা চিহ্নিত করে। দ্বারকেশ্বরের উপনদী ও শাখানদীগুলি হল—শিলাবতী, গন্ধেশ্বরী, অড়কষা, কাঁসাচোরা, আমােদর ডাংরা। গন্ধেশ্বরীর উৎস শুশুনিয়া পাহাড়ের কাছে। ৩৮ কিমি পথ অতিক্রম করে বাঁকুড়া শহরের কিছু দুরে দ্বারকেশ্বরে এসে মিশেছে। বিড়াই নদী ওন্দা থেকে শুরু হয়ে বিষ্ণুপুর শহরের কিছু দূরে চাকদহে দ্বারকেশ্বরের সঙ্গে মিশেছে। ডাংরার জন্ম পুরুলিয়া জেলায়। ছাতনায় আমডিহার কাছে দ্বারকেশ্বরের সাথে মিলিত হয়েছে। শিলাই এর উৎপত্তি ও পুরুলিয়া জেলার পুঞ্চা থানায়। এটি মেদিনীপুর জেলার দ্বারকেশ্বরের সাথে মিশেছে। জয়পাণ্ডা, পুরন্দর, চাদাখালি শিলাবতীর উপনদী। এর উৎপত্তি ইন্দপুর থানার চৈতন্যডিহিতে, ভূতশহরের কাছে শিলাবতীর কাছে মিশেছে।

কাঁসাই বা কংসাবতী পুরুলিয়া জেলার ঝালদা থানা থেকে উৎপত্তি। বাঁকুড়া জেলার খাতড়া থানার ভেদুয়া গ্রামে প্রবেশ করেছে, ৫৬ কিমি এর দৈর্ঘ্য। কংসাবতীর উপনদীগুলি হল তারাফেনী, কুমারী, ভৈরববাঁকা। অম্বিকানগরের কাছে কাঁসাই নদীর সঙ্গে মিশেছে। তারাফেনী মেদিনীপুর থেকে বাঁকুড়ায় এসে কংসাবতীতে মিশেছে। মুকুটমণিপুরে কাঁসাই নদীর উপর বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। প্রাচীন জৈন ও বৌদ্ধ মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে কাঁসাই নদীর উভয় তীরে। কংসাবতীর বাঁধ প্রকল্পের জন্য বহু গ্রাম নদীর গর্ভে নিমজ্জিত হয়েছে এবং বাস্তুহারাও হয়েছে বহু মানুষ। পুরুলিয়ার বাগমুণ্ডী থানার অযােধ্যা পাহাড়ে কুমারীর জন্ম। কাঁসাই এর মত কুমারীও প্রাচীন নদী। পুরাণ, মহাভারত প্রভৃতি গ্রন্থে কুমারীর উল্লেখ পাওয়া যায়।২০ কাসাই-এর আরাে ছােট ছােট কটি উপনদী আছে। পঠলই, সনফু ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য। পৌষ সংক্রান্তি ও বারুণী স্নানের সময় কাসাই ও কুমারীর তীরে তীরে মেলা বসে। টুসু, ভাদু ও ঝুমুর গানে ভরে ওঠে নদীতট।

ধীর সাঁওতাল রমণীর মত সুবর্ণরেখা নদী বয়ে গেছে জেলার পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে। বিহার রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিম বাংলার কিছু সীমানা নির্দেশ করেছে। এই নদীটির উৎপত্তি রাঁচি জেলায় নাগড়া গ্রামের কাছে। ডাঙ্গার উপর দিয়ে ৪৫ কিমি মাইল বয়ে এসেছে। আঁকাবাঁকা গতিপথ, পুরুলিয়া জেলার গরিয়ার কাছে ঢুকেছে। এই নদীর কটি উপনদীর নাম হল রূপাই, সালদা, সেপাহি, আতনা স্টেশনের কাছে সুবর্ণরেখা জেলা ছেড়ে সিংভূমে গিয়ে ঢুকেছে।

পুরুলিয়া জেলার পুঞ্চা থানার বাগদা গ্রামের কাছ থেকে উৎপন্ন হয়ে বাঁকুড়া জেলার সিমলাপালের উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে মেদিনীপুর জেলায় প্রবেশ করেছে। গড়বেতার নিকট একটি বাঁকের সৃষ্টি করে দ্বারকেশ্বরের সঙ্গে মিলিত হয়। মিলিত নদীদুটিকে একত্রে রূপনারায়ণ নদী বলা হয়ে থাকে।

শিলাইয়ের কতগুলি উপনদী হল পুরন্দর, গােপা, গুড়ি এবং কুবাই নদী হল প্রধান উপনদী। উপরােক্ত নদীগুলি ছাড়াও আরাে গতগুলি নদী শিলাইয়ের সঙ্গে মিশেছে।কেলেঘাই ভগবানপুর থানায় কপিলেশ্বরী ও টেংরাখালিতে কসাই নদীর জলধারার সঙ্গে মিশে সম্মিলিত ধারা হলদি নদী নামে মহিষাদল, নন্দীগ্রাম ও সুতাহাটার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হুগলী নদীতে মিলেছে। এই নদী মেদিনীপুর জেলার সাঁকরৈল থানায় উৎপন্ন হয়ে নারায়ণগড়, সবঙ্গ, ময়না, পটাশপুর, আমর্শি থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।২২ নিচের অংশের নদীখাতের চওড়া বেশি।

বাঁকা বাঁকা নদী গলসী থানার রামগােপালপুর গ্রামের উত্তর দিক থেকে নির্গত হয়ে পূর্বদিকে দামােদর নদের উত্তর অঞ্চল বরাবর বর্ধমান শহরে প্রবেশ করেছে। বর্ধমান শহর অতিক্রম করে মেমারী থানার পালশিট পর্যন্ত এসে এই নদী উত্তরপূর্ব দিকে মেমারী থানা অতিক্রম করে নান্না গ্রামের মায়া নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মেমারী, কালনা, মন্তেশ্বর, জলধারা সমুদ্রগড়ের উত্তরে খড়ি নদীতে সঙ্গমস্থলের সৃষ্টি করেছে।

কুনুর নদী হল অজয়ের প্রধান উপনদী। রানীগঞ্জ, অন্ডাল ও জামুরিয়া থানার কিছু অংশ নিয়ে কুনুর নদীর অববাহিকা অঞ্চল গঠিত। ভূ-প্রকৃতির ফলে পূর্বমুখী হওয়ার জন্য এই অঞ্চলের বেশির ভাগ বৃষ্টির জল কুনুরের খাতে প্রবাহিত হয়। ৮০ কিলােমিটার দৈর্ঘ্য নদীখাত প্রায় সর্বত্রই অগভীর থাকার জন্য বর্ষার সময় জল ধারণের ক্ষমতা থাকে না, ফলে মাঝারি বৃষ্টিপাতের নদীর দুকুল প্লাবিত হয়ে থাকে। একসময় দুর্গাপুর, কাঁকসা শালজঙ্গল বিস্তৃত ছিল কুনুরের প্রবাহপথে। সেই জন্য নদীখাতের গভীরতা হারিয়েছে। নদীখাত গ্রীষ্মকালে শুদ্ধ থাকে, তাই নাব্য নয়। এই নদীর তীরে বননবগ্রাম, মলদীঘি, গুসকরা প্রভৃতি স্থানের অবস্থিতি হলেও ঐতিহাসিক স্থানরূপে মঙ্গলকোট ও মঙ্গলকাব্যে বর্ণিত উজানী ও দ্রমরাদহের অবস্থিতির জন্য অজয় কুনুর সঙ্গমস্থলটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

দামােদর ও ভাগীরথীর পরই রূপনারায়ণের স্থান। এই নদীটি উৎসমুখ হতে মােহনা পর্যন্ত একই নামে প্রবাহিত হয়নি। উপর অংশের নাম দ্বারকেশ্বর এবং ঘাটালের উত্তর-পূর্বে শিলাইয়ের সঙ্গে মিলিত হওয়ায় উভয় নদী স্ব নাম পরিত্যাগ আগেই রূপনারায়ণ নামে তমলুক মহকুমার গেঁওখালিতে হুগলির সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের বন্যার জল দামােদরের মূল খাত জলধারণ করতে অসমর্থ হলে পশ্চিমদিকে একটি নতুন খাতের সৃষ্টি হয়েছিল। দামােদরের অধিকাংশ জলধারা মুণ্ডেশ্বরী খাতে প্রবাহিত হয়ে মেদিনীপুর জেলার কাশিয়াড়ার বিপরীত তীরে রূপনারায়ণের সঙ্গে মিশেছে। রূপনারায়ণ নদ প্রধানত কয়েকটি নদীর সংযােগে নতুন নামে প্রবাহিত হলেও দামােদরের মতাে বন্যাপ্রবণ ছিল না। বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময় জোয়ারের জল প্রবেশ করার ফলে কোলাঘাট পর্যন্ত অংশের জল লবণাক্ত থাকে।

এই নদী হল বীরভূম জেলার দ্বিতীয় বড়াে নদী। সাঁওতাল পরগনা থেকে উৎপন্ন হয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার কাথি মহকুমায় প্রবেশ করেছে। সাঁওতাল পরগনা থেকে বক্রেশ্বর নদ উৎপন্ন হয়ে বক্রেশ্বরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কোপাই নদীর সঙ্গে মিলেছে।২৬

সাঁওতাল পরগনা থেকে উৎপত্তিস্থল। হিঙ্গুলা নদী খয়রাসােল থানা অতিক্রম করে দক্ষিণে অজয় নদের সঙ্গে মিশেছে। বীরভূম জেলার এই নদীর প্রবাহপথের দৈর্ঘ্য ২৫ কিলােমিটার মাত্র।

বীরভূম জেলার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ নদী হল ময়ূরাক্ষী। এই নদীর সাঁওতাল পরগনার দেওঘরের কাছে পাহাড়ে নিন্নমালভূমিতে উৎপন্ন হয়েছে। নদীখাতটি পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার দত্তবাটিতে ভাগীরথী নদীতে মিশেছে। ময়ূরাক্ষী অববাহিকায় বীরভূম জেলার মধ্যভাগের অঞ্চল অবস্থিত। ময়ূরাক্ষীর তীরে খটঙ্গা, রায়পুর, ভান্ডীরবন, অজয়পুর, দুর্গাপুর, সাঁইথিয়া অবস্থিত। ময়ূরাক্ষী নদীর গভীরতা অপেক্ষা বিস্তার বেশি। মূল শাখাটি দুভাগে বিভক্ত হওয়ার পর কুয়ে ও দ্বারকার সঙ্গে মিলিত হয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার মৌগ্রামে ভাগীরথীতে মিশেছে। ময়ূরাক্ষী নদীর মােট দৈর্ঘ্য ২৪০ কিলােমিটার। এর মধ্যে বীরভূমি প্রবাহপথের দৈর্ঘ্য মাত্র ৫০ কিলােমিটার। প্রায় ৮৪০০ বর্গকিলােমিটার এই নদীর অববাহিকার আয়তন।

রসুলপুর মেদিনীপুর জেলার পশ্চিম অংশে বাগদা নদী উৎপন্ন হয়ে সদর খালের সঙ্গে মিলিত হয়ে যুক্ত ধারা রসুলপুর নামে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে লাইট হাউসের সন্নিকটে হুগলী নদীতে মিশেছে। নদীর উৎসস্থলে অনেক নদী মিলিত হওয়ার জন্য রসুলপুরের জলধারা পুষ্ট হয়েছে। এই নদী বেশ প্রশস্ত।

নদীগুলিকে কেন্দ্র করে জীবনজীবিকার উপকরণ সংগ্রহ করার পাশাপাশি এখানকার জনজীবনে সাংস্কৃতিক সম্পর্কও অত্যন্ত উন্নত হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন এক জায়গায় বসবাস করার ফলে এদের চিন্তা চেতনার মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। নানা উৎসবের বিকাশ হয়েছে, লােকাচার ছাড়া। গান, গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। এই গানে গল্পে তাদের জীবন জীবিকার কথায় বেশি করে এসেছে। এখানকার নদী, জল বনাঞ্চল, পশুপাখি ও সাধারণ মানুষের কথা স্থান পেয়েছে এখানকার লােকগানে।।

দুটি ঝুমুর গানের উদাহরণ নিম্নে দেওয়া হল

১. ‘ঝট ঝট রাধ গাে, বালি তুলতে যাব আমার দুজনে।

ডুলুং নদীর বালি খাদানে।

ঝাকা ঝাকা পান্তা ভাত

টিফিনকারী ভরা

কাধে লিব কাইটা আর

মাথায় লিব ঝরা

আমিও তাের সঙ্গে যাব,

ভাবিছি মনে মনে

২. বল বল কাসাই নদীর জল

বল বল শিলাই নদীর জল

বল রে ডুলং নদী জল

কি করে মুছাবাে আমার

পিয়ার চোখের জল।

রে সা মহুলের বন

বল বল কেদ পিয়ালের বন

বল রে শিমুল পলাশ বন

কোথায় গেলে পাব আমি

পিরীতি রতন

বল বল কাসাই নদীর জল

বল বল শিলাই নদীর জল

বল রে ডুলুং নদীর জল

কি করে মুছাবাে আমার

পিয়ার চোখের জল।

বলরে বন পলাশের ফুল

বল বল যুথিকা বকুল

বল রে চামেলী পারুল

সজনীকে না দেখে আজ মন করে আকুল।

তথ্যসূত্র

১। রমেশচন্দ্র মজুমদার বাংলা দেশের ইতিহাস ১ম খন্ড/কলিকাতা ১৩৭৩, পৃষ্ঠা-৭

২. নীহাররঞ্জন রায়/বাঙালীর ইতিহাস আদিপর্ব প্রথমখন্ড পশ্চিমবঙ্গ নিরক্ষরতা দূরীকরণ সমিতি প্রকাশিত হয়, ১৯৮০, পৃঃ১৫৫

৩. তদেব, পৃষ্ঠা ১৫৬

৪. রাঢ়শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার/আনন্দমার্গ কেন্দ্রীয় প্রকাশন সচিব, পৃষ্ঠা ৩

৫. তদেব পৃষ্ঠা ৩

৬. রাঢ়ের গ্রামদেবতা/মিহির চৌধুরী/কামিল্যা, পৃষ্ঠা ৪৬

৭. শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় লােকায়ত পশ্চিমরাঢ়লােকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র পৃষ্ঠা-৮

৮. যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী/রাঢ়ের সংস্কৃতির ইতিহাস/পৃষ্ঠা-৩৫

৯. তদেব, পৃষ্ঠা-৪১

১০. লােকায়ত পশ্চিমরাঢ়/শিবপ্রসাদ শাস্ত্রী, লােকসংস্কৃতি আদিবাসী কেন্দ্র, পৃষ্ঠা-১৪৭

১১. তদেব পৃষ্ঠা-১৪২

১২. যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী রাঢ়ের সংস্কৃতির ইতিহাস পৃষ্ঠা ৪২

১৩. তদেব পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮

১৪. তদেব, পৃষ্ঠা ৩৮

১৫. তরুণ দেব/পুরুলিয়া/ফার্মা কে, এল, এম, প্রাইভেট লিমিটেড, পৃষ্ঠা ৩৪

১৬. Purulia People, Problems and Potentialities- N Chatterjee. IFS. (২০,৯.১৯৬৮, Monograph)

১৭. রাঢ়ের সাংস্কৃতিক ইতিহাস

১৮, দামােদর নদ সম্বন্ধে বিশদ বিবরণের জন্য দ্রষ্টব্য, পৃষ্ঠা-৪৩.১৯।বাঁকুড়া-তরুনদেব ভট্টাচার্য, পৃষ্ঠা-৪২-৫১।