বাক্যন্ত্র : গঠণ ও সাঙ্গীতিক ব্যবহার
নূর নবী মীরণ
বাকযন্ত্র আদতে কি!
এটি (বাকযন্ত্র বা ভোকাল) সত্যিই একটি অনন্য বাদ্যযন্ত্র। যে যন্ত্রের আওয়াজ এর গুণগত মান এবং যন্ত্রের নাম প্রকাশের জন্য একটিই শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যন্ত্রটির আওয়াজের নামেই এটিকে চেনা যায়। একে চেনার জন্য এই যন্ত্রের সাহায্যে সৃষ্ট আওয়াজের বিশেষ ব্যাখ্যার দরকার হয় না। এই যন্ত্রটিকে ব্যবহারের সময় বা ব্যবহারের প্রয়োজনে ব্যবহারকারীকেই ব্যবহার উপযোগী করতে হয়। বাইরে থেকে বা ব্যবহারকারী ছাড়া অন্য কারও পক্ষে এটিকে তৈরি করে দেয়া সম্ভব নয়। কেননা এর কাঠামো পুরোটাই মানুষের শরীরের মধ্যে প্রচ্ছন্ন থাকে। বাইরে থেকে যন্ত্রটির কিছু খন্ডিত অংশ দেখা গেলেও পুরো যন্ত্রটি দেখা কোনভাবেই সম্ভব হয় না। সাধারণ বাদ্যযন্ত্রের মত এটি সাধারণ ছকে আবদ্ধ থাকে না। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্বতন্ত্র প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে এটিকে তৈরি করতে হয়। মূলত এটি পেশি, কোমলাস্থি এবং হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে। বাকযন্ত্র বা কন্ঠ নামে এই যন্ত্রটিকে নামকরণ করা হলেও এর যন্ত্রাংশগুলি আওয়াজ তৈরি ছাড়াও অন্য কাজ করে থাকে। যা আর কোন বাদ্যযন্ত্র করে না। করা সম্ভব নয়। এটি সাধারণ একটি আওয়াজকে বিভিন্ন রকম শব্দে রূপান্তর করতে পারে। এই যন্ত্রের বিচিত্র কার্যধারার বিশেষ দিক হল যন্ত্রটিকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভালো বা খারাপ অভ্যাস তৈরি হতে পারে। অর্থাৎ এটিকে সঠিক বা ভুল প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এই যন্ত্রটি সরাসরি মানুষের মস্তিষ্কের সাথে সম্পৃক্ত। প্রত্যেকবার ব্যবহারের সময় যন্ত্রটিকে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারিক ছকে রূপান্তর করতে হয়। আর ব্যবহার করার পর পর যন্ত্রাংশগুলি তার পূর্ববর্তী অবস্থানে ফেরত যায় এবং অন্য কাজে নিয়োজিত হয়।
মানুষের কন্ঠ নামক যন্ত্রটি এমন একটি যন্ত্র যা ব্যবহারকারীকে তৈরি করতে হয়। ব্যবহারকারী ছাড়া এই যন্ত্রটিকে আর কেউ ছকে এনে ব্যবহার করতে পারে না। যার কন্ঠ তাকে ব্যবহার করতে হয়। যেটি পৃথিবীর আর কোন বাদ্যযন্ত্রের বেলায় ঘটে না। মানবকণ্ঠ নামক বাদ্যযন্ত্র ছাড়া অন্যসব বাদ্যযন্ত্রের বেলায় দেখা যায় যন্ত্র প্রস্তুতকারী এবং ব্যবহারকারী আলাদা ব্যক্তি হয়ে থাকে। সেইসাথে কোন নির্দিষ্ট বাদ্যযন্ত্র একবার তৈরী হয়ে গেলে তার পুরো কাঠামো বাইরে থেকে দৃশ্যমান হয়। দৃশ্যমান অবয়ব দেখে আমরা কোন নির্দিষ্ট বাদ্যযন্ত্রকে চিনতে পারি। কিন্তু মানুষের কন্ঠ নামক যন্ত্রটি বাইরে থেকে দেখা যায় না। সে কারণে যন্ত্রটির কোন আকার আকৃতি বা অবয়ব আমরা দেখতে পাই না। আর দেখতে না পারার কারণে একে ব্যবহার করার বিধি বিধান আমাদের কাছে অপরিচ্ছন্ন রয়ে গেছে। তাই যন্ত্রটি ব্যবহারের বেলায় প্রতিনিয়ত আমাদেরকে ভুল—ঠিক এর গোলকধাঁধায় পড়তে হয়।
৫৬
বিষয়টিকে আরও বিস্তারিত ভাবে দেখার চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন একজন কন্ঠশিল্পী গান করছেন। তিনি আদতে কি করছেন? তিনি একাধারে কণ্ঠযন্ত্রটিকে ব্যবহার করার উপযোগী করছেন অর্থাৎ যন্ত্রটি নির্মাণ করছেন এবং একই সাথে ব্যবহার করছেন। ব্যবহারের ফল হিসেবে আমরা গান শুনতে পাই। কিন্তু এই কন্ঠযন্ত্রটি যা মানবদেহের একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে বর্তমান আছে, তা দিয়ে সবসময় সুরেলা আওয়াজ তৈরি হবে বা সে কণ্ঠ সর্বদা সুন্দর গান গাইবে এমনটা আমরা আশা করতে পারি না। বাস্তবে এরকম আমরা দেখতে পাই না। বাকযন্ত্রের প্রতিটি অংশ প্রত্যেক মানুষের শরীরে একই প্রক্রিয়ায় থাকা সত্ত্বেও তা থেকে সৃষ্ট আওয়াজের এত রকমের হয়ে থাকে। যদি বাকযন্ত্রটি অন্য কোন বাদ্যযন্ত্রের মত (বেহালা, গিটার, পিয়ানো) পরিপূর্ণ কাঠামোতে তৈরি থাকতো তাহলে প্রকৃতিগতভাবে সব মানুষ সুন্দরভাবে গান গাইতে পারতো। কিন্তু এ অভিজ্ঞতা আমাদের একেবারেই নেই। যদিও বাকযন্ত্রের প্রতিটি অংশ প্রত্যেক মানুষের মধ্যে একই আকৃতিতে বিদ্যমান, তবুও তা থেকে সৃষ্ট ধ্বনির এত ভিন্নতা। বাকযন্ত্রের অংশগুলিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারার জন্য মানুষ সাধারণভাবে সুন্দর আওয়াজ করতে পারে না। তাই প্রত্যেক বাচিকশিল্পী বা যিনি কণ্ঠস্বরকে সুন্দর করতে চান তাদের প্রত্যেককেই কণ্ঠ নামক যন্ত্রটির কাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া প্রথমে শিখতে হবে। যন্ত্রের কাঠামো সঠিকভাবে নির্মাণ না করে তাকে ব্যবহার করতে গেলে বিপর্যয় আসতে বাধ্য। এই বিবেচনায় বলা যেতে পারে একজন কণ্ঠশিল্পী বা একজন বাচিকশিল্পী প্রথমে একজন নির্মাতা তারপর ব্যবহারকারী। কেননা একজন কণ্ঠশিল্পীকে সর্বপ্রথম অংশগুলির সঠিক সমন্বয় করে যন্ত্রের কাঠামো নির্মাণ করতে হবে তারপর তাকে বাজাবার চেষ্টা করতে হবে।
আমরা যে যন্ত্রটির বিষয়ে কথা বলছি— কন্ঠযন্ত্র— এটি আওয়াজ তৈরি করা বা না করার বাইরে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী কিছু কাজ করে থাকে। যা মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। বাগযন্ত্রের অন্তর্গত মানুষের শারীরিক অঙ্গগুলির মূল কাজ হলো মানুষের বেঁচে থাকার প্রক্রিয়াকে সচল রাখা। শব্দ তৈরির প্রক্রিয়া সেই অঙ্গগুলির বাড়তি কাজ। যেহেতু অঙ্গগুলি শুধুমাত্র শব্দ তৈরীর জন্য মানবদেহে অন্তর্ভুক্ত হয়নি, তাই শব্দ তৈরীর ক্ষেত্রে তাদের ব্যবহার প্রক্রিয়াও সহজ সরল অংকের মত নয়। সেই কারণে শব্দ তৈরীর বেলাতে অঙ্গগুলির সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি জানা অত্যন্ত জরুরী। তাই শব্দ তৈরি করার ক্ষেত্রে বাকযন্ত্রের সংশ্লিষ্ট অঙ্গগুলির সঠিক ব্যবহার এর গুরুত্ব সর্বাধিক। কারণ সেই অঙ্গ গুলির সঠিক সমন্বিত ব্যবহারের ফলই হল সুন্দর শব্দ, ধ্বনি, বা আওয়াজ।
বাকযন্ত্র আদতে কি— ২
মানুষের কণ্ঠস্বর এমন একটি যন্ত্র যার পুরোটাই শরীরে প্রচ্ছন্ন থাকে।
মানুষের জীবন প্রবাহকে সঠিক রাখার কাজে নিয়োজিত কিছু অংশের সমন্বয় করে এই বাকযন্ত্র তৈরি করা হয়েছে। এর নামকরণ মানুষের দেয়া। মানুষ নিজের প্রয়োজনে এই ভয়েস বা বাকযন্ত্রের অবতারণা করেছে। এই বাকযন্ত্রের যন্ত্রগুলির মূল কাজ কিন্তু ধ্বনি বা আওয়াজ তৈরি করা নয়। এদের মূল কাজ হলো জীবন বাঁচিয়ে রাখার উপকরণ কে সরবরাহ করা। জীবনধারণের জন্য যে সব উপকরণ অপরিহার্য সেসবকে শরীরে চালান করার কিছু মাধ্যম। যেমন মুখ, দাঁত হলো খাবার গ্রহণ করার মাধ্যম। জিভ হলো খাবারকে খাদ্যনালীতে পার করার উপকরণ। ফুসফুস হলো বাতাস থেকে অক্সিজেনকে শরীরে সরবরাহ করার মাধ্যম। ভোকাল কর্ড ফুসফুসে বাতাস ঢোকা এবং বের হবার গেটওয়ে হিসেবে কাজ করে। আর ডায়াফ্রাম ফুসফুসে বাতাস ঢুকানো ও বের করার পাম্প হিসাবে কাজ করে। এইসব কাজ মানুষের জীবন রক্ষার জন্য কতটা প্রয়োজনীয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
৫৭
বাকযন্ত্র ছাড়া অন্য সকল বাদ্যযন্ত্র পুরোটাই বাইরে থেকে দেখা যায়। প্রত্যেক বাদ্যযন্ত্রের অবয়ব, আকার-আকৃতি, গঠনশৈলী ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে যন্ত্রের নাম করন করা হয়। যা দেখে আমরা খুব সহজেই চিনতে পারি কোনটি বেহালা, কোনটি গিটার বা কোনটি হারমোনিয়াম। এবং এইসব বাদ্যযন্ত্রের কাঠামো নির্দিষ্ট থাকে। যেহেতু এই সব বাদ্যযন্ত্র একটি নির্দিষ্ট কাঠামোতে বাঁধা থাকে তাই এগুলোকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে একজন বাদকই যথেষ্ট। একজন বাদক নির্দিষ্ট বাদ্যযন্ত্রের বাদন প্রক্রিয়া যত ভালোভাবে রপ্ত করতে পারবেন তিনি ততো ভালো বাদক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাদন কৌশল হলো মুখ্য বিষয়।
কিন্তু বাকযন্ত্রের ক্ষেত্রে বিষয়টিকে অতটা সহজ সরলীকরণ করা যাবে না। আওয়াজ তৈরীর কাজ ছাড়া যন্ত্রগুলি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের স্বতন্ত্র অন্য কিছু কাজের সাথে আলাদা আলাদাভাবে প্রতিনিয়ত সম্পৃক্ত থাকে। আবার সেই যন্ত্রাংশগুলোর সমন্বয়ে আওয়াজ তৈরীর বেলাতেও বাড়তি কিছু বিষয় এর সাথে সংযুক্ত হয়। যে বিষয়গুলি বাকযন্ত্র ছাড়া অন্য কোন বাদ্যযন্ত্রের বেলায় তেমন ভূমিকা রাখে না। বাকযন্ত্রকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশ একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রাথমিকভাবে এসব পরিবেশের প্রভাবকে উপেক্ষা করা যায় না। এছাড়া আরও একটি বিষয় বিশেষভাবে এর সাথে জড়িত তা হলো যন্ত্র ব্যবহারকারীর তাৎক্ষণিক মানসিক অবস্থা। যদিও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি নিবিড় ভাবে জড়িত, তবে পার্থক্য হলো অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের ক্ষেত্রে বাদক ঠিকভাবে বাজাতে না পারলেও যন্ত্রটি কিন্তু তার নিয়ম মত ঠিক বাজে। বাদকের অসুবিধার জন্য যন্ত্রের নিজস্ব প্রক্রিয়ার কোন পরিবর্তন হয়না। বাদকের অপরিপক্কতা প্রকাশ পায়। অথচ বাকযন্ত্রের বেলাতে বাদকের সার্বিক অবস্থার উপর যন্ত্রের অবস্থা পুরোপুরি নির্ভর করে। বাদকের ভুল প্রক্রিয়ার জন্য যন্ত্রের কাঠামো ভুলভাবে তৈরি হয় এবং ভুলভাবে বাজে। অর্থাৎ বাদকের বাদনশৈলীর উপর সরাসরি নির্ভর করছে যন্ত্রের কাঠামো। বাকযন্ত্রের ক্ষেত্রে বাদক একাধারে যন্ত্র তৈরি করে এবং বাজায়। একসাথে যন্ত্র নির্মাতা ও ব্যবহারকারী। এই পর্ব নিরন্তর চলতে থাকে। সুতরাং বাদকের সামান্যতম ভুলের জন্য যন্ত্রের কাঠামো পাল্টে যেতে পারে। কোন একটি বাদ্যযন্ত্রের কাঠামো যদি পাল্টে যায় তাহলে সেই যন্ত্র যে ঠিকভাবে কাজ করবে না সে বিষয়ে আমরা সবাই কম বেশি বুঝতে পারি।
বাকযন্ত্রের মাধ্যমে শব্দ তৈরীর ক্ষেত্রে তিনটি প্রক্রিয়া একই সাথে কাজ করে।
মানুষের বাকযন্ত্র এমন একটি যন্ত্র যার মাধ্যে তিনটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া একই সাথে কাজ করে। তিনটি প্রক্রিয়ার সমন্বিত ফলাফল আমরা শুনতে পাই।
১) ধ্বনি উৎপাদন প্রক্রিয়া ২) ধ্বনি সহযোগী প্রক্রিয়া এবং ৩) শব্দ তৈরি করন প্রক্রিয়া। বাকযন্ত্রের এই তিনটি পৃথক এবং স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া যখন সঠিকভাবে নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করে, অত্যন্ত সুষম এবং একইসাথে সচল হয় তখনই একটি সুন্দর শব্দ তৈরি হতে পারে। এই তিনটি প্রক্রিয়ার কোনোটিতে গন্ডগোল হলে পুরো প্রক্রিয়াটি নষ্ট হয়ে যায়। সুন্দর শব্দ তৈরি হয় না। আর সুন্দর শব্দ ছাড়া সুন্দর সংগীত সম্ভব নয়।
৫৮
ধ্বনি উৎপাদন প্রক্রিয়া
ধ্বনি উৎপাদন উপকরণে দুই ধরনের শারীরিক অংশ প্রত্যক্ষ ভাবে কাজ করে। কিছু স্থির অংশ আর কিছু অস্থির বা পরিবর্তনশীল অংশ। পরিবর্তনশীল অংশগুলির মধ্যে রয়েছে— ল্যারিংস, ভোকাল কর্ড, গলার কিছু পেশী, জীভের গোড়ার অংশ এবং নরম তালু। আর স্থির অংশগুলির মধ্যে রয়েছে— নাকের ফাঁপা অংশ, তিনটি ফ্যারিংস এলাকা এবং সাইনাস এলাকা। এই অংশগুলি প্রত্যক্ষ এবং সক্রিয় ভূমিকার ফলে ধ্বনি বা আওয়াজ শোনার উপযোগী হয়ে থাকে।
ধ্বনি সহযোগী প্রক্রিয়া থেকে বাতাস প্রবাহ ভোকাল কর্ডের ভিতর দিয়ে পার হবার সময় ভোকাল কর্ডে কম্পনের সৃষ্টি করে। সেই কম্পনের ফলে সৃষ্ট আওয়াজ হলো মূল ধ্বনি। এই পর্যায়ে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ভোকাল কর্ডের ভিতর দিয়ে বাতাস প্রবাহ প্রবাহিত করার পরও কিন্তু ধ্বনি তৈরি হবে এমনটি নিশ্চিত নয়। তার কারণ ধ্বনি তৈরীর জন্য ভোকাল কর্ডে একটি টানটান ভাব তৈরি করতে হয়। সেই টানটান ভাব ধ্বনি বা আওয়াজ তৈরিতে সাহায্য করে। সুতরাং বলা যেতে পারে যখন আওয়াজ তৈরি করার ইচ্ছা বা চেষ্টা করা হবে তখনই আওয়াজ সৃষ্টি হবে। অন্যথায় হবে না। এর মূল কারণ হলো আওয়াজ তৈরি করা ছাড়া শরীরের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিনিয়ত ফুসফুসে বাতাস ঢুকে এবং বের হয়। যেহেতু ফুসফুসে বাতাস ঢোকা ও বের হবার একমাত্র পথ হল ভোকাল কর্ড। কিন্তু আমরা যখন কোন শব্দ না করে চুপচাপ বসে থাকি তখনও ফুসফুস বাতাস নেয়া এবং বের করে দেয়ার কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। তখন ভোকাল কর্ড দিয়ে বাতাস বের হবার সময় কোন আওয়াজ হয় না।
ভোকাল কর্ড থেকে সৃষ্ট ধ্বনি ভোকাল কর্ডের উপরের অংশ যেমন— তিনটি ফ্যারিংস এলাকা, নাকের ফাঁপা অংশ, সাইনাস এবং মুখের নরম তালু ইত্যাদি অংশে এসে আন্দোলিত হয়ে শ্রবণযোগ্য হয়ে ওঠে। এইভাবেই একটি ধ্বনি বা শব্দ তৈরি হয় এবং আমরা শুনতে পাই। ভোকাল কর্ডের নিচের এবং উপরের অংশকে সঠিক কাঠামোতে এনে ধ্বনি তৈরি করতে পারলে একটি সুন্দর প্রাণবন্ত আওয়াজ তৈরি করা সম্ভব।