May 1, 2023

Parisodh’ and Dance Drama ‘Shyama’ : The Poet’s Intentions in the Duel of Transformation

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Priyanka Bhattacharya

“Parisodh” and “Shyama” are two distinct dramatic compositions that showcase the poetic intentions of their creators through the expressive mediums of song and dance. In both instances, the core theme revolves around the profound concept of transformation, emphasizing the multifaceted nature of human existence. In the context of “Parisodh,” the drama unfolds through a compelling interplay of music and narrative, with a central focus on the poet’s intentions. The use of songs within the drama serves as a powerful tool to convey the emotional depth and complexity of the characters’ journey towards transformation. Through the medium of song, the characters in “Parisodh” engage in a duel, not just physically but also ideologically, as they grapple with inner conflicts and external challenges. The abstract nature of the drama allows the audience to delve into the nuances of the characters’ struggles, reflecting the poet’s intention to explore the transformative power of human experiences. On the other hand, “Shyama” brings the element of dance drama into play to communicate the poet’s intentions in the duel of transformation. The integration of dance as a storytelling device enhances the visual and emotional impact of the narrative. The choreography becomes a language of its own, illustrating the characters’ evolution and the intricate dynamics of their transformations. Through the physicality of dance, “Shyama” creates a mesmerizing tapestry that captures the essence of the poet’s intentions, depicting the struggles, conflicts, and eventual metamorphosis of the characters involved in the duel. In both dramas, the duel of transformation serves as a metaphor for the broader human experience. The poets behind “Parisodh” and “Shyama” use the power of words, music, and dance to explore the profound themes of change, growth, and self-discovery. The abstract nature of these performances allows for a rich and multi-layered interpretation, inviting the audience to reflect on their journeys of transformation and the myriad challenges inherent in the human condition. Ultimately, through the synergy of drama, song, and dance, these compositions become vehicles for the poets’ intentions to resonate on a deeply emotional and universal level.

পরিশোধ নাট্যগীতি ও নৃত্যনাট্য শ্যামা : রূপান্তরের দ্বৈরথে কবিমানসের অভিপ্রায়

প্রিয়াংকা ভট্টাচার্য্য

সারসংক্ষেপ

রবীন্দ্রনাথ পরিশোধ নাট্যগীতি থেকে অনেক সংযোজন বিয়োজনের মাধ্যমে যে শ্যামা নৃত্যনাট্য রূপান্তর করেছিলেন তাতে বৌদ্ধ আখ্যানের মূল spirit অক্ষুণ্ণ রাখলেও ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত, সংঘাত ও দ্বন্দ্বের ভিতর দিয়ে যে নাটকীয়তা সৃষ্টি করেছে, তা শ্যামাকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মর্যাদা দিয়েছে। ‘শ্যামা’ নৃত্যনাট্যতে শুভাশুভের দ্বন্দ্বে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন মানুষের উত্তরণের পথ মঙ্গলেই। রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য ছিল ঘটনার বুননে চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ। মূল কাহিনীর কামনাময়ী শ্যামা রূপাসক্তি প্রেমিক বজ্রসেনের নিষ্ঠুর প্রত্যাখ্যানে বারংবার বিধ্বস্ত হলেও পরিণামে প্রেমেরই জয় ঘোষিত হয়েছে। বজ্রসেনকে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টায় সে অনায়াসে বলি দেয় উত্তীয়কে। এই অপরাবোধ তার মনকে পীড়ন করেছিল হয়তো, নয়তো কেনই বা সে বজ্রসেনের কাছে স্বীকার করবে এ কাহিনি? অন্য দিকে বজ্রসেনও মুগ্ধ প্রেমিক পুরুষ, কিন্তু পাপ-পুণ্যের বিবেচনার কঠিনহৃদয়। শ্যামাকে ত্যাগ করলেও তাকে ভুলতে পারে না। এই বিচিত্র কঠিন ট্র্যাজেডির রূপায়ণ খুব সহজসাধ্য নয় যা পরিশোধ নৃত্যনাট্যে অনুপস্থিত ছিল। ভাবের সৌকর্যে, ভাষার চারুত্বে, নৃত্য ও কাব্যগুণে এবং সর্বোপরি নাটকীয়তায় ‘শ্যামা’ রবীন্দ্রনাথের অসামান্য সৃষ্টি-Masterpiece। নাট্যগীতির সঙ্গে নৃত্যনাট্যের যথাসম্ভব রূপান্তরের তুলনামূলক অন্বেষণই এই প্রবন্ধের সামগ্রিক আলোচনার দৃশ্যপট।

শব্দ সংকেত

নাট্য-রূপান্তর, পরিশোধ, নৃত্যনাট্য শ্যামা, নাটকীয়তা, বজ্রসেন, মনস্তাত্ত্বিক, রবীন্দ্রনাথ, রূপান্তর  

পরিশোধ নাট্যগীতি ও নৃত্যনাট্য শ্যামাঃ রূপান্তরের দ্বৈরথে কবিমানসের অভিপ্রায়

বৌদ্ধ-আখ্যান থেকে কবিতা ও নাট্যগীতির মধ্য দিয়ে ধারাবাহিক বিবর্তনের পথ পেরিয়ে চূড়ান্ত পরিণতি পেয়েছে ‘নৃত্যনাট্য শ্যামা’-য়। ‘শ্যামা’ নৃত্যনাট্যতে শুভাশুভের দ্বন্দ্বে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন মানুষের উত্তরণের পথ মঙ্গলেই। রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য ছিল ঘটনার বুননে চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ। মূল কাহিনীর কামনাময়ী শ্যামা রূপাসক্তি প্রেমিক বজ্রসেনের নিষ্ঠুর প্রত্যাখ্যানে বারংবার বিধ্বস্ত হলেও প্রেমেরই জয় ঘোষিত হয়েছে। বজ্রসেনকে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টায় সে অনায়াসে বলি দেয় উত্তীয়কে। অন্য দিকে বজ্রসেনও মুগ্ধ প্রেমিক, কিন্তু পাপ-পুণ্যের বিবেচনার কঠিনহৃদয় পুরুষ। শ্যামাকে ত্যাগ করলেও তাকে ভুলতে পারে না। এই বিচিত্র কঠিন ট্র্যাজেডির রূপায়ণ খুব সহজসাধ্য নয়। পরিশোধ নাট্যগীতিকে নৃত্যনাট্যে রূপান্তরকালে কবি মূল ‘পরিশোধ’-এর পাঠকে ঢেলে সাজিয়েছেন। ছোটো ছোটো ত্রুটিগুলি সযত্নে সংশোধন করেছেন। নাট্যগীতির সঙ্গে নৃত্যনাট্যের যথাসম্ভব রূপান্তরের তুলনামূলক অন্বেষণই এই প্রবন্ধের সামগ্রিক আলোচনার দৃশ্যপট।

‘পরিশোধ নাট্যগীতি’ তে অভিনয়ের উৎকর্ষ-বৃদ্ধির জন্য প্রত্যেকবারই পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত হয়েছে। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “শ্যামা (‘পরিশোধ’ নাট্যগীতি) অনেকবারই শান্তিনিকেতনে অভিনীত হইয়াছে এবং রূপান্তরিত হইয়াছেও বহুবার।”[1] আশুতোষ কলেজ হলে অভিনয়ের পর ‘পরিশোধ’ দ্বিতীয়বার অভিনীত হয় শান্তিনিকেতনে ২৭ মার্চ ১৯৩৭। নাট্যগীতিটির প্রয়োজনীয় পাঠ সংশোধনের খবর জানিয়ে কবি নির্মলকুমারীকে লিখছেন, “…পরিশোধের পরিবর্তন পরিবর্ধন ও পরিযোজনার কাজ বউমা আমাকে লাগিয়ে দিয়েছেন তাই হাঁফ ছাড়বার সময় নেই, কথা বাঁধচি, সুর জুড়ছি, শেখাচ্ছি শান্তিকে (শান্তিদেব ঘোষকে)।”[2] দ্বিতীয় অভিনয়ের সময় উত্তীয় চরিত্র ও ঘাতকের দ্বারা তার হত্যার দৃশ্যটির যোগে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।[3] পরবর্তী অভিনয়গুলিতেও ‘পরিশোধ নাট্যগীতি’ ভাবে ও রূপে পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়েছে। ‘পরিশোধ নাট্যগীতি’-র চূড়ান্ত রূপান্তর সাধিত হয় ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ ও ৮ তারিখে, কলকাতার ‘শ্রী’ রঙ্গমঞ্চে অভিনয়ের সময়।[4] নামও পরিবর্তিত হয়, ‘নৃত্যনাট্য শ্যামা’-য়।

‘বিচিত্রা বৈদ্যুতিন রবীন্দ্র-রচনাসম্ভার’-এর অভিলেখাগারে সংরক্ষিত পাণ্ডুলিপি পর্যবেক্ষণ করলে, ‘পরিশোধ নাট্যগীতি’-র ধারাবাহিক বিবর্তনের পথে কীভাবে হয়ে উঠল ‘নৃত্যনাট্য শ্যামা’ তার স্বরূপটি স্পষ্টভাবে ধরা পড়বে। আশ্বিন ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে লেখা যে প্রথম পাণ্ডুলিপিটি যা ‘RBVBMS 173[1]’ সংখ্যাংকিত, তার পাঠ ‘প্রবাসী’ (কার্তিক ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ)-তে প্রকাশিত নাট্যগীতির পাঠের প্রায় কাছাকাছি। শুধুমাত্র শ্যামার ‘এবার ভাসিয়ে দিতে হবে আমার এই তরী’ গানের আগে নেপথ্যে ‘হায়, হায় রে, হায় পরবাসী’ গানের উল্লেখ আছে। চূড়ান্ত রূপ ‘নৃত্যনাট্য শ্যামা’-য় এই গান যুক্ত হয়েছে শ্যামা ও বজ্রসেনের গীতসংলাপ ‘প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোহারে’ গানের পর। পূর্বের মতো নেপথ্যে নয়; বরং, ‘সখী’-র কণ্ঠে প্রযুক্ত হল এই গান। ‘ওই রে তরী দিল খুলে’ গানের পর ‘বাজে গুরু গুরু শঙ্কার ডঙ্কা’ যুক্ত হয়েছে। ‘নৃত্যনাট্য শ্যামা’-য় বজ্রসেনের মুক্তির পর, শ্যামার সঙ্গে মিলনের পূর্ব মুহূর্তে এই গান যুক্ত হয়েছে। মিলনের আগে থেকে শ্যামা শঙ্কিত ছিল; উত্তীয়ের প্রাণদান বা হত্যা তাকে বেদনার্ত ও বিচলিত করেছে, এই গানে তা ব্যক্ত হয়েছে। শ্যামার অন্তর্দ্বন্দ্বের স্বরূপ স্পষ্ট হয়েছে। পাণ্ডুলিপির অবস্থান ততটা স্বচ্ছতা পায়নি। এই কারণেই হয়ত কবি অবস্থান বদলেছেন। সখীর পরামর্শমূলক গান ‘নীরবে থাকিস সখী’ও আলোচ্য পাণ্ডুলিপিতে পাওয়া যায়, যা ‘প্রবাসী’-র পূর্বে উল্লিখিত পাঠে ছিল না।

‘RBVBMS 173(2)’ সংখ্যাংকিত ও চৈত্র ১৩৪৩ সাল চিহ্নিত দ্বিতীয় পাণ্ডুলিপিতে বেশ কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে। প্রথমত, প্রথম দৃশ্যের অবস্থান শ্যামার গৃহ। সভাসদেরা বসে আছে- সখীদের প্রবেশ। সভাসদদের অভিবাদন’ – এই নাট্যনির্দেশ দিয়ে নৃত্যনাট্য শুরু। চূড়ান্তরূপ বা অন্যান্য পাণ্ডুলিপিতে এই অংশ নেই। দ্বিতীয়ত, উত্তীয় চরিত্রের সশরীরে উপস্থিতি ও গান এই পাণ্ডুলিপির নাটকীয়তা বৃদ্ধি করেছে। চূড়ান্ত রূপে উত্তীয়-কণ্ঠে সংযোজিত চারটি গান এই পাঠ থেকেই যুক্ত হয়েছে। সখী-কন্ঠে ‘ফাগুনের নবীন আনন্দে’ এই পাণ্ডুলিপিতে নতুন। ‘সখী’ চরিত্রের গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে বর্ধিত হয়েছে। ‘পরিশোধ নাট্যগীতি’-র শেষে ‘কঠিন বেদনার তাপস দোহে’ গান আলোচ্য পাণ্ডুলিপি থেকেই বর্জিত হয়েছে। ‘ক্ষমিতে পারিলাম না’ – গান শেষে যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ ‘পরিশোধ’ নাট্যগীতির শেষ পরিণতিতে নাট্যরসজনিত যে ত্রুটিগুলো ছিল, তা এই পাণ্ডুলিপিতেই দূর হয়েছে। আবার যে পাণ্ডুলিপিটি ভাদ্র ১৩৪৫ সাল চিহ্নিত এবং ‘RBVBMS 254’ সংখ্যাংকিত সেটি চূড়ান্ত রূপের প্রায় কাছাকাছি। ‘বন্ধু’ চরিত্র যোগ হয়েছে। সখীদের ভূমিকাও চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে।

সর্বশেষ পাণ্ডুলিপি ১লা ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ (মাঘ ১৩৪৫)-তে লেখা এবং RBVBMS 269(2) সংখ্যাংকিত। এই পাণ্ডুলিপিতে কয়েকটি নতুন গান যুক্ত হয়েছে। বিন্যাসের পরিবর্তন হয়েছে। চতুর্থ দৃশ্যে কোটালের চরিত্রে নতুন গান যুক্ত হয়েছে- ‘পুরী হতে পালিয়েছে যে পুরসুন্দরী’। সখীদের কন্ঠে নতুন গান এসেছে – ‘হে বিরহী হায়, চঞ্চল হিয়া তব’ ‘শাপমোচন’-এর জন্য রচিত গান। শ্যামার প্রেমপিপাসু বিরহিণী হৃদয়ের ছবি ভেসে ওঠে। অভিনয়ের দিকে লক্ষ্য রেখেই বারবার এই পাণ্ডুলিপির পরিবর্তন।

নৃত্যনাট্য ও শ্যামাতে চারটি দৃশ্য হলেও রূপান্তরকালে পুনর্বিন্যাস, সংযোজন ও বিয়োজনের ফলে আয়তনে পরিশোধের প্রায় দুই গুণ হল ‘শ্যামা’। পরিশোধে শ্যামার নাম না জানা অতিথির জন্য অপেক্ষার গান বর্জন করে শ্যামা শুরু হয়েছে বন্ধু ও বজ্রসেনের মধ্যে ইন্দ্রমণির হার সম্পর্কে কথোপকথন সংগীত দিয়ে।  প্রথম দৃশ্যের নতুন পরিকল্পনার দ্বারা নাট্য উপস্থাপনের প্রাথমিক ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলা যায়। পরিশোধের প্রথম দৃশ্যে শ্যামার অপেক্ষার গানের পরে প্রহরী ও বজ্রসেন প্রবেশ করার পরে শ্যামা মুগ্ধ হয়েছিল বজ্রসেনকে দেখে যেই দৃশ্য শ্যামায় বহুল পরিমাণে পরিবর্তিত হয়ে দ্বিতীয় দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। নৃত্যনাট্য শ্যামায় সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন নাট্যমঞ্চে ‘উত্তীয়’ চরিত্রের উপস্থিতি। উত্তীয়ের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নায়ক-নায়িকার মধ্যে তৃতীয় কোণ যোগ করায় নাটকীয়তার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘পরিশোধ’ কবিতা ও নাট্যগীতিতে উত্তীয়ের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি নেই। শ্যামার করুণ আবেদনে সাড়া দিয়ে সে যখন গায়, “ন্যায় অন্যায় জানি নে, জানি নে, শুধু তোমারে জানি’’, তখন তাতে তত্ত্বকথা বলতে চায়নি। বয়সে তরুণ উত্তীয় শ্যামাকে বোঝাতে চেয়েছিল সে শ্যামার জন্য সব কিছু করতে, সব কিছু হারাতে প্রস্তুত। আত্মদানের মাধ্যমে ইহজীবনের লৌকিক প্রেমকে শাশ্বত প্রেমে উন্নীত করেছে উত্তীয়। শ্যামা ও বজ্রসেনের মধ্যে যার মৃতদেহ চিরিদিনের জন্য শায়িত হয়ে তাদের মধ্যে চিরব্যবধান রচনা করল পরিশোধ নৃত্যনাট্যে তার অনুপস্থিতি ক্ষতিকারক হয়েছিল, যার ত্রুটি রবীন্দ্রনাথ ‘শ্যামা’য় মোচন করেছেন। ‘পরিশোধ’ ও ‘শ্যামা’ নৃত্যনাট্যে নীলাম্বরবস্ত্রের কথা নেই, কিন্তু নূপুর কুড়িয়ে নিয়ে আত্নগত চিন্তার কথা আছে। এখানেও শ্যামা পুনরায় প্রবেশ করলে প্রত্যাখ্যাত হয় কিন্তু তার পুনঃপ্রবেশের পূর্বে নূপুর কুড়িয়ে নেবার নির্দেশ থাকলেও পরে ফেলে দেবার নির্দেশ নেই।

চরিত্রগতভাবে তৃতীয় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সখীচরিত্রের গুরুত্ব বৃদ্ধি। নাট্যগীতিতেও সখী বা সহচরী চরিত্রের উল্লেখ ছিল। কিন্তু তাদের ভূমিকা একটিমাত্র গানে সীমাবদ্ধ ছিল। নৃত্যনাট্য ‘শ্যামা’য় সখীচরিত্রের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে গানের সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে। সখী চরিত্র কখনও একক, কখনও-বা সমবেতভাবে উপস্থিত হয়ে তাদের গানের দ্বারা শ্যামার মানসিকতাকে ভাষারূপ দিয়েছে, নাট্যপরিণতিকে আভাসিত করেছে। যেমন উত্তীয় আত্মদানে স্বীকৃত হলে সখীরা গেয়েছে-“তোমার প্রেমের বীর্যে।/ তোমার প্রবল প্রাণ সখীরে করিলে দান।/ তব মরণের ডোরে বাঁধিলে বাঁধিলে ওরে / অসীম পাপে / অনন্ত শাপে।/ তোমার চরম অর্ঘ্য / কিনিল সখীর লাগি নারকী প্রেমের স্বর্গ।[5]

শ্যামার চতুর্থ দৃশ্যের সূচনায় কোটালের সংলাপ, সখীদের ও প্রহরীর কথোপকথন নতুনভাবে চিত্রিত। কোটালের গানে শোনা যায়, ‘নগরের প্রাণের দুলালী’, ‘পুরসুন্দরী’ শ্যামা নগর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্যে আক্ষেপ করেছে। অর্থাৎ রাজনৰ্তকী হিসেবে শ্যামার সমাদর কতখানি ছিল তার পরিচয় পাওয়া যায় গানের মাধ্যমে।

শ্যামা ও বজ্রসেনের চরিত্রও নৃত্যনাট্যে নতুনভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। কবিতা ও নাট্যগীতির সঙ্গে নৃত্যনাট্যে শ্যামার প্রধান পার্থক্য, পূর্বের দুইরূপে জানা যায়নি শ্যামা কীভাবে উত্তীয়কে আত্মদানে প্ররোচিত করেছিল। কিন্তু নৃত্যনাট্যে দেখা যায়, শ্যামা এমন এক বীরকে আহ্বান করেছে সে একজন নিরপরাধকে অন্যায় অপবাদ থেকে মুক্ত করবে। রাষ্ট্রশক্তির চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য এক শক্তিশালী বীরপুরুষকে প্রার্থনা করেছে। শ্যামার আহ্বানে সাড়া দিয়েছে উত্তীয়। উত্তীয়ের আত্মদানের প্রাকমুহুর্তে তার অপরাধবোধ জাগ্রত হওয়ায় কোটালকে মিনতি করেছিল-

থাম্ রে, থাম্ রে, তোরে, ছেড়ে দে, ছেড়ে দে

দোষী ও যে নয় নয়, মিথ্যা মিথ্যা সবই,

আমারি ছলনা ও যে— বেঁধে নিয়ে যা মোরে

রাজার চরণে।[6]

একদিকে আত্মসুখের জন্য নিরপরাধ উত্তীয়কে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া আর অন্যদিকে সেই মৃত্যুর জন্যই বজ্রসেনের প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে সব হারায় শ্যামা, বেদনা হয় তীব্রতর। “এক প্রেমিক রিক্তহস্তে ও হাসিমুখে বিদায় লইয়াছে, আর এক প্রিয়তমের নির্দয় করুণ ধিক্কার ও তাড়না অজস্র বর্ষিত হইয়াছে তাহার অন্তরে বাহিরে; ইহার পরে আসক্তির মূল্য, পাপের মূল্য – আসক্তিই মৌলিক পাপদুঃখ দিয়া শোধে করিতে বসিয়াছে সে।”[7] এখানেই শ্যামার যন্ত্রণা।

শ্যামার মত বজ্রসেন চরিত্রেরও নতুনভাবে চিত্রিত হয়েছে। শ্যামাকে সে ভালাবাসে, কিন্তু উত্তীয়ের মৃত্যুর ঘটনায় শ্যামাকে সে গ্রহণ করতে পারেনা। কবিতা এবং নৃত্যনাট্যে শ্যামাকে আঘাত, পরে মানসলোকে আহ্বান এবং সর্বশেষ প্রত্যাখ্যানের পর বজ্রসেন কণ্ঠে যে অনুশোচনা ধ্বনিত হয়েছে, সেখানে প্রেম নিয়তির ভূমিকায় অবতীর্ণ। প্রমথনাথ বিশী বলেছেন , “প্রেম ও পাপ, বিচার ও ক্ষমার মধ্যে দোদুল্যমান বজ্রসেনের চরিত্র অশ্বথ পত্ৰশীর্ষে কম্পমান শিশিরবিন্দুর মতো অসহায় এবং করুণারপাত্র। ইহা সর্বতোভাবে রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব, মূলে ইহার কিছুই নাই।”[8] “ন্যায়-নীতি-মূল্যবাধের সঙ্গে ব্যক্তিগত প্রেমের, শ্রেয়র সঙ্গে প্রেয়র দ্বন্দ্বে যাকে ক্ষমা করেনি সে যত কাঁদে নিজেও তার চেয়ে কম বেদনাহত হয় না। কর্তব্য যেখানে বস্তুতই জটিল এবং দ্বিধাবিভক্ত, সেখানে নিরুপায় সমাধান ট্র্যাজিক হয়ে পড়ে অনেক সময়। যেমন হয়েছে বজ্রসেনের ক্ষেত্রে, বলেছেন আবু সয়ীদ আইয়ুর”।[9] নাট্যগীতি ও নৃত্যনাট্য শ্যামার শেষ পরিণামের রূপ ভিন্ন। নাট্যগীতিতে পরিণতি-দৃশ্যের অনেক আগে ‘ক্ষমিতে পারিলাম না যে / ক্ষমো হে মম দীনতা’ গানটি সংযোজিত হয়েছে। এই অনুতাপের পরেও শ্যামা প্রত্যাখ্যাত ও লাঞ্ছিত হয়েছে। আর, অন্তিমে ‘কঠিন বেদনায় তাপস দোঁহে, যাও চিরবিরহের সাধনায়’ গানটি গ্রীক কোরাস বা নিয়তির ধরনে উপদেশগীত হওয়ায় নাট্যরস ক্ষুন্ন হয়েছে। কিন্তু নৃত্যনাট্যের শেষে বজ্ৰসেন গেয়েছে – “ক্ষমিবে না, ক্ষমিবে না আমার ক্ষমাহীনতা/  পাপীজনশরণ প্রভু।”[10] বজ্রসেনের এই পরিণামকে অনেকে ট্র্যাজেডি বলে আখ্যায়িত করেছেন।

শ্যামার সম্পূর্ণ গানের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। গানগুলি হল- ‘ফিরে যাও কেন ফিরে ফিরে যাও’, ‘মায়াবনবিহারিনী হরিণী’, ‘জীবনে পরম লগন’, ‘ধরা সে যে দেয় নাই ’, ‘সুন্দরের বন্ধন ’, ‘আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া’, ‘প্রেমের জোয়ারে ভাসাবে দোহারে’, ‘হায় হায় রে হায় পরবাসী’, ‘নীরবে থাকিস সখী’,‘ক্ষমিতে পারিলাম না যে’। সংলাপ গানে পরিণত হওয়ায় এবং সেই গানের লক্ষ্য নৃত্যাভিনয় হওয়ায় ভাব, কবিতার উচ্ছাস অনেক সংহত হয়েছে। যেমন – “তোমা লাগি যা করেছি / কঠিন সে কাজ / আরো সুকঠিন আজ তোমারে সে কথা বলা।/ বালক কিশোর উত্তীয় তার নাম, / ব্যর্থ প্রেমে মোর মত অধীর;/ মোর অনুনয়ে তব চুরি-অপবাদ নিজ-পরে লয়ে সঁপেছে আপন প্রাণ।”[11] (নৃত্যনাট্য শ্যামা)

এ পাপ কি-না, কিংবা সর্বাধিক পাপ কি-না, বা গৌরবময় পাপ কি-না সে বিচার প্রেমিকের, ঐ ভয়ংকর করুণ ঘটনা বর্ণনার পর আর কিছু বলতে পারে না শ্যামা। আসলে এখানে মূল্য পেয়েছে সুর, মূল্য পেয়েছে নাটক।”[12] ‘সঁপেছে আপন প্রাণ’ – এই কথাটিতেই শ্যামার নিদারুণ যন্ত্রণা, আর্তনাদ বাঙ্‌ময় হয়েছে। আর কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়নি। নৃত্যনাট্য শ্যামায় গীতসংলাপগুলিতে ‘কহো বিবরিয়া’, ‘করিয়া’ ‘আছ জাগিয়া’ ইত্যাদি সাধু ক্রিয়াপদ এবং ‘মোদের’, ‘মোরে’, ‘তাহার’ ইত্যাদি সর্বনাম গানের বাঁধা হয়ে ওঠেনি, কবিতার মিল ও ছন্দের দোলা গানগুলির মধ্যে উঠে আসায় এবং  গীতসংলাপগুলিতে কথোপকথনধর্মী বৈশিষ্ট্যর জন্য ভাষা অনেক প্রাণবন্ত ও স্বাধীন হয়ে উঠেছে। প্রথম দৃশ্যে বন্ধু ও বজ্রসেনের সংলাপে, বজ্ৰসেন, কোটালের সংলাপেও এই তৎসমগন্ধী বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

শ্যামার অনেক গানেও একই শব্দ দু-তিনবার পুনরুচ্চারিত হয়ে একটি নিজস্ব গড়ন তৈরি হয়েছে। যেমন উত্তীয়ের-  ‘ন্যায় অন্যায় জানিনে, জানি নে, জানি নে’।[13] “কথার উপর জোর দেবার জন্যই বিভিন্ন শব্দে এই পুনরুচ্চারণ, আর কথার ভিতরকার জোরটি প্রাণ পায় সুরেরই বৈচিত্র্য। …এই শেষ পর্বের (নৃত্যনাট্য) কথা ও সুর পেয়েছে পরস্পর নিবিড় সংগতি ও নির্ভরতা”।[14]

রবীন্দ্রনাথ শিল্পীধর্মে রোমান্টিক। রোমান্টিক কবির কাছে প্রেমের মূল্য ন্যায়-নীতিবোধের অনেক উপরে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে শ্যামায় ন্যায়-নীতিবোধের তাড়নায় প্রেম-মিলন সম্পূর্ণ হয়নি। আলোচকের ভাষায়, “রোমান্টিক কবির চোখে রোমান্টিক প্রেমের চেয়ে বড় সত্য আর কিছু নেই। মনে হয় শ্যামা রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ দ্বিধাগ্রস্ত চিত্তে, শাশ্বত ধর্ম-ভাবনার সঙ্গে কবির সংরক্ত অনুভূতিকে মেলাতে পারেননি। এই ব্যঞ্জনা-দ্বৈধের ফলে নাটক কিন্তু খণ্ডিত হয়নি, নাটকীয় মূল্যে সমৃদ্ধতর হয়েছে।[15] ন্যায়-নীতিবোধের কাছে শেষ পর্যন্ত প্রেমের অপমৃত্যু ঘটেছে। পরিণতি হয়েছে তীব্র বিষাদ করুণ। কিন্তু একে কোনো অভিধায় ভূষিত করা যাবে না পাশ্চাত্য ট্র্যাজেডির সংজ্ঞা মনে রেখেও বলা যায়, শ্যামাকে ক্ষমা করতে না পারায় বজ্রসেনের নিজের হৃদয়বিদারক যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য নিজের অপরাধবোধের ভাব ঈশ্বরের চরণে সমর্পণ করে তার শরণ নেওয়ায় পরিণামী ট্র্যাজিক আবেদনকে ভিন্নমাত্রা প্রদান করেছে। এ ঠিক পাশ্চাত্য ট্র্যাজেডির গোত্রীয়। হয়নি। এই দিক থেকেও রবীন্দ্র-সৃষ্টিতে শ্যামা অনন্য।

আঙ্গিকের বিচারে প্রাথমিকভাবে ‘পরিশোধ’ নাট্যগীতিকে ‘নাট্যগীতি’ বলার চেয়ে গীতিনাট্য’ বলা অধিকতর যুক্তিসংগত বলে মনে হতে পারে। রবীন্দ্রগীতিনাট্যের মতো নাট্যগীতির সব সংলাপই গান। এই গান আবার নৃত্যোপযোগীও। গানের সংলাপ আর নৃত্যের অভিনয়ের দ্বারা নাট্যদ্বন্দ্বও প্রকাশিত হয়েছে। হয়ত তা চূড়ান্ত পরিণতিতে পৌঁছেই দ্রুত চরম পরিণতির দিকে অগ্রসর হয়েছে। তাহলে ‘নাট্যগীতি’ কেন বলা হচ্ছে? কারণ ‘পরিশোধ’ নাট্যগীতির মধ্যে নাট্যদ্বন্দ্ব থাকলেও তা ততটা জমাট বাঁধেনি। সাহিত্যের রূপরীতির ভাষায় নাট্যক্রিয়ার প্রবৃদ্ধি বা জটিলতা স্পষ্ট হয়নি। যা ঘটেছে স্বল্পসময়ের মধ্যে। চরিত্রের বিকাশ ও পরিণতি দ্রুত। তাই গান ও নৃত্য সহযোগে অভিনীত হলেও একে গীতিনাটক বা পরিপূর্ণ নৃত্যনাট্য না বলে নাট্যগীতি বলা হয়েছে। একথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে রবীন্দ্র-নির্মিত নাট্যগীতি প্রচলিত নাট্যগীতির ধারা থেকে পৃথক।

প্রেম মানুষের জীবনের মূল্যবান সম্পদ, পরম ঐশ্বর্য। শ্যামা যেভাবে তার প্রণয়াস্পদকে লাভ করেছে, এই পথে অর্জিত প্রেম কখনই ঐশ্বর্যময় হতে পারে না। প্রেমকে হতে হবে মঙ্গলময়। তবেই তা সুন্দর হবে। এই মঙ্গলের ব্যাখ্যা কবি অন্যত্র দিয়েছেন, “মঙ্গলমাত্রেরই সমস্ত জগতের সঙ্গে একটা গভীরতম সামঞ্জস্য আছে, সকল মানুষের মনের সঙ্গে তাহার নিগূঢ় মিল আছে। সত্যের সঙ্গে মঙ্গলের সেই পূর্ণ সামঞ্জস্য দেখিতে পাইলেই তাহার সৌন্দর্য আর আমাদের অগোচর থাকে না। …সৌন্দর্য মূর্তিই মঙ্গলের পূর্ণমূর্তি সৌন্দর্যের পূর্ণ স্বরূপ”।[16] সাধারণভাবে শ্যামা ও বজ্রসেনের প্রেমে গভীরতা ও নিষ্ঠার অভাব নেই। কিন্তু তাদের মিলনের মাঝখানে রয়েছে অপর এক নির্দোষ প্রণয়ীর প্রাণহীন অস্তিত্ব। এই কারণেই রবীন্দ্র-সৃষ্ট শ্যামা বজ্রসেনের প্রেমের পরিণতি বৌদ্ধকাহিনীর অনুরূপ মিলনে নয়— হয়েছে এক মর্মান্তিক বিষাদঘন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার ও তাঁর শরণাগত হবার মধ্য দিয়ে। নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা রচনার সময় কবির সামনে নৃত্যনাট্যের আদর্শ ছিল না। তাই বেশ কিছু পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, প্রথম নৃত্যনাট্যে। কিন্তু ‘নৃত্যনাট্য শ্যামা’ রচনাকালে রবীন্দ্রনাথ সম্পূর্ণ দ্বিধামুক্ত। এর আগে চণ্ডালিকায় ‘গদ্য-গান রচনা করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তাছাড়া নৃত্যনাট্য শ্যামা লেখার আগে পরিশোধ নাট্যগীতিতে ‘পরিশোধ’ কবিতার পদ্যপংক্তিকে সুরারোপিত করবার সফল অভিজ্ঞতাও তাঁর আছে। শ্যামায় স্বয়ংসম্পূর্ণ গানগুলি ছাড়া বেশিরভাগ গীতসংলাপই ‘পরিশোধ’ কবিতার ছন্দ ও ভাষাকে অবলম্বন করে রচিত।

বৌদ্ধনীতিকথামূলক ধর্মীয় কাহিনী রবীন্দ্রকল্পনা-স্পর্শে শাশ্বত রসসাহিত্যের স্তরে উন্নীত হয়েছে। প্রাচীনকালের জাতকের নায়ক-নায়িকা বজ্রসেন-শ্যামা কবির সূক্ষ্মানুভূতি রসে জারিত হয়ে রোমান্টিক কবিহৃদয়ের ছায়ায় নির্মিত কবিতা চূড়ান্ত পর্যায়ে নৃত্যনাট্য শ্যামায় রূপান্তরিত হয়ে যে ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত সংঘাত ও দ্বন্দ্বের ভিতর দিয়ে যে নাটকীয়তা সৃষ্টি করেছে, তা শ্যামাকে রবীন্দ্রনাট্য-ধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মর্যাদা দিয়েছে। বৌদ্ধ-কাহিনীকে কবি তাঁর কল্পনা ও অনুভূতি তুলির পরশে করেছেন নাটকীয়, যোগ করেছেন গভীর মানবমাত্রা ও দর্শন। নিজের যুগ থেকে রচনাগুলি উত্তীর্ণ হয়েছে চিরকালীন সত্যে। কাব্যনাট্য, গদ্যনাট্য ও কবিতায় যা বাঁধা ছিল নিছক সংলাপ বা বিবরণের সীমায়, নৃত্যনাট্যে তা পেয়েছে নাট্যযোগ্য সক্রিয়তা ও মুক্তি। চিত্রাঙ্গদা-চণ্ডালিকার পথ ধরে তারই চূড়ান্ত পরিণতি শ্যামায়। ভাবের সৌকর্যে, ভাষার চারুত্বে, নৃত্য ও কাব্যগুণে এবং সর্বোপরি নাটকীয়তায় ‘শ্যামা’ রবীন্দ্রনাথের অসামান্য সৃষ্টি।

সহায়ক গ্রন্থতালিকা

  • ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ গীতবিতান’ (অখণ্ড), বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, ১৩৭১ বঙ্গাব্দ।
  • ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড), বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, ১৪১০ বঙ্গাব্দ।
  • ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ‘রবীন্দ্রনাট্যসংগ্রহ’ (দ্বিতীয় খণ্ড), বিশ্বভারতী, কলকাতা, মাঘ ১৪০৬ বঙ্গাব্দ।  
  • মুখোপাধ্যায়, প্রভাতকুমার রবীন্দ্রজীবনী ও রবীন্দ্রসাহিত্য প্রবেশক (চতুর্থ খণ্ড), বিশ্বভারতী, কলকাতা, ১৪১১ বঙ্গাব্দ।   
  • ঘোষ, শান্তিদেব ‘শান্তিনিকেতনের নৃত্যধারা’, বিশ্বভারতী, কলকাতা, আশ্বিন ১৪১৫ বঙ্গাব্দ।
  • ঘোষ, শান্তিদেব গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ও আধুনিক ভারতীয় নৃত্য’, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৪১৭ বঙ্গাব্দ। 
  • বিশী, প্রমথনাথ রবীন্দ্রনাট্যপ্রবাহ, ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানি, কলকাতা, ২০১০ সাল।   
  • রায়, ড. আলপনা আলাপ থেকে বিস্তার’, প্যাপিরাস, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৪ সাল।
  • আইয়ুব, আবু সয়ীদ পান্থজনের সখা’, দে’জ পাবলিশিং , কলকাতা, ২০০৬ সাল।
  • সামন্ত, কানাই রবীন্দ্রপ্রতিভা, ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি প্রালি, কলকাতা, ১৩৬৮ বঙ্গাব্দ।

মুঠোফোন +৯১৮২৭৪৯২৫১৫০, ইমেইলঃ priyanka1995.bd@gmail.com

৪র্থ সেমিস্টার, স্নাতকোত্তর, রবীন্দ্রসংগীত বিভাগ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

(বাংলাদেশী শিক্ষার্থী)


 [1] রবীন্দ্রজীবনী ও রবীন্দ্রসাহিত্য প্রবেশক, চতুর্থ খণ্ড – প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, বিশ্বভারতী, কলকাতা, ১৪১১, পৃ. ৮০।

      [2] গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ও আধুনিক ভারতীয় নৃত্য – শান্তিদেব ঘোষ, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৪১৭, পৃ. ২১২।

      [3] রবীন্দ্রসংগীত, ‘শান্তিনিকেতনের নৃত্যধারা’ – শান্তিদেব ঘোষ, বিশ্বভারতী, কলকাতা, আশ্বিন ১৪১৫, পৃ. ১৬২।

   [4] গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ও আধুনিক ভারতীয় নৃত্য – শান্তিদেব ঘোষ, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৪১৭, পৃ. ২২৪।

[5]রবীন্দ্র-নাট্য-সংগ্রহ, দ্বিতীয় খণ্ড, ‘নৃত্যনাট্য শ্যামা’, – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী, কলকাতা, পৃ. ৭৬৩।   

[6] রবীন্দ্রপ্রতিভা – কানাই সামন্ত, ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি প্রালি, কলকাতা, ১৩৬৮, পৃ. ৪৮।     

[7] রবীন্দ্রনাট্যপ্রবাহ, রূপান্তর ও নামান্তর’ – প্রমথনাথ বিশী, ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানি, কলকাতা, ২০১০, পৃ. ৩২০।

[8] পান্থজনের সখা, ‘এ দুর্লভ প্রেম’ –  আবু সয়ীদ আইয়ুব, কলকাতা, দে’জ, ২০০৬, পৃ. ৮৪।       

[9] রবীন্দ্র-নাট্য-সংগ্রহ, দ্বিতীয় খণ্ড, ‘নৃত্যনাট্য শ্যামা’, – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী, কলকাতা, পৃ. ৭৭০।    

[10] রবীন্দ্ররচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, ‘সৌন্দর্যবোধ’, ‘সাহিত্য’ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী, কলকাতা, ১৪১৭, পৃ. ৬৩৪।

[11] রবীন্দ্র-নাট্য-সংগ্রহ, দ্বিতীয় খণ্ড, ‘নৃত্যনাট্য শ্যামা’, – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী, কলকাতা, পৃ. ৭৬৭।      

[12] আলাপ থেকে বিস্তার, ‘রবীন্দ্র-নৃত্যনাট্যের ভাষা’ – আলপনা রায়, প্যাপিরাস, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৪, পৃ. ৪৬।

[13] রবীন্দ্র-নাট্য-সংগ্রহ, দ্বিতীয় খণ্ড, ‘নৃত্যনাট্য শ্যামা’, – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী, কলকাতা, পৃ. ৭৬২।     

[14] আলাপ থেকে বিস্তার, ‘রবীন্দ্র-নৃত্যনাট্যের ভাষা’ – আলপনা রায়, প্যাপিরাস, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৪, পৃ. ৫৭।

[15] পান্থজনের সখা, ‘এ দুর্লভ প্রেম’ –  আবু সয়ীদ আইয়ুব, কলকাতা, দে’জ, ২০০৬, পৃ. ৪৫।

[16] রবীন্দ্ররচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, কথা ও কাহিনী, ‘পরিশোধ’ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী, কলকাতা, পৌষ ১৪১৭, পৃ. ৪৫।