March 28, 2021

Women’s Liberation Movement in Bengal

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Dr. Jayanti Mandal

Abstract:

This abstract provides a concise overview of the Women’s Liberation Movement in Bengal, tracing its origins, key milestones, and lasting impact on the socio-political landscape of the region. The Women’s Liberation Movement in Bengal emerged as a powerful force in the mid-20th century, fueled by a confluence of social, economic, and political factors. Rooted in the broader context of India’s struggle for independence, the movement in Bengal took on a unique character, reflecting the region’s distinct cultural and historical influences. The movement was characterized by a multifaceted approach, addressing issues ranging from gender-based discrimination and violence to economic inequality and political disenfranchisement. Influential women leaders and activists played pivotal roles in mobilizing communities and challenging patriarchal norms. Notable figures such as Begum Rokeya Sakhawat Hossain, Sucheta Kripalani, and others emerged as trailblazers, advocating for women’s rights and empowerment. The abstract explores key milestones in the movement, including the role of education as a catalyst for change, legal reforms addressing discriminatory practices, and the establishment of women’s organizations advocating for equality. Bengal’s unique cultural fabric, with its rich literary and artistic traditions, also played a crucial role in shaping feminist discourse and fostering solidarity among women. Furthermore, the abstract delves into the movement’s lasting impact on contemporary society, highlighting how it contributed to the transformation of gender roles, increased awareness of women’s rights, and the creation of a more inclusive public sphere. Despite significant progress, challenges persist, and the abstract briefly addresses ongoing efforts to address issues such as gender-based violence, workplace discrimination, and the need for continued advocacy. In conclusion, the Women’s Liberation Movement in Bengal stands as a testament to the resilience and determination of women who sought to break free from traditional constraints. By examining the movement’s historical trajectory, this abstract aims to provide insights into its complexities, achievements, and the ongoing journey towards gender equality in Bengal and beyond.

নারীমুক্তি আন্দোলন, জয়ন্তী নেজ

ঊনবিংশ শতাব্দী হল নারীমুক্তি আন্দোলনের শতাব্দী। এই নারী মুক্তির মধ্য দিয়েই অঙ্কুরোদ্গম হয় ‘নারী স্বাধীনতা’ নামের আন্দোলন। নারীর যাতনাময় জীবনে কঠোর বন্ধন, কঠিন কষ্টকর নিপিড়ন এবং শৃঙ্খলিত জীবন থেকে নারীরা বন্ধনমুক্ত হবার প্রেরণা বা বলা যায় মুক্তির পথ খুঁজে পায় এই শতাব্দীর মধ্যভাগে এসে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, তখনকার পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষের দ্বারা শৃঙ্খলিত নারীদের মুক্তি আন্দোলন কিন্তু সর্বপ্রথম পুরুষরাই শুরু করে ছিল উনিশ শতকের এই নারীমুক্তির পথিকৃৎ ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। রাজা রামমোহনের মৃত্যুর পর নারীমুক্তি আন্দোলনে যার অবদান সবচেয়ে বেশী তিনি হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। সনাতনপন্থী পরিবেশে রক্ষণশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করে এবং অজস্র কুসংস্কারযুক্ত হিন্দু সমাজে লালিত হয়েও বিদ্যাসাগর সমকালীন সামাজিক কুপমন্ডুকতা ও ধর্মের নামে ভন্ডামীতে নিজেকে নিবেদিত না করে বরং এসকলের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করেছিলেন। এর প্রধান কারণ সমাজকে তিনি প্রাধান্য দিয়েছিলেন।

            বিদ্যাসাগর দেখেছিলেন যে, দীর্ঘকাল থেকে চলে আসা বদ্ধমূল কুসংস্কার গুলোকে নারীরা নিজেরাই ছাড়তে পারছে না। যদিও সে সময় কিছু সংখ্যক নারী ‘নারীমুক্তির’ জন্য আন্দোলনে সামিল হতে চেয়েছিল কিন্তু সামাজিক অনুশাসনের কারণে পেরে ওঠেনি। নারী মুক্তি আন্দোলনে নারীরাই অন্তরায় সৃষ্টি করছেন দেখে তিনি নারী শিক্ষার তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। ১৮৪৯ সালের মে মাসে বিদ্যাসাগর বেথুন সাহেবের সহযোগিতায় মাত্র ২১ জন ছাত্রী নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বেথুন স্কুল’। ১৮৫৭ সালের নভেম্বর থেকে পরবর্তী ৭ মাসের মধ্যে তিনি বর্ধমান, হুগলী, মেদিনীপুর ও নদীয়ায় মোট ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এসব করতে গিয়ে বিদ্যাসাগর বহুবার বহুভাবে বহুধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। নারী জাতির প্রতি ছিল তাঁর গভীর শ্রদ্ধা।অন্যদিকে তিনি দেখেছিলেন নারীদের উপর প্রবল ধর্মীয় অনাচার ও অত্যাচার। যা সর্বদাই তাঁকে পীড়া দিয়েছে। তা দূর করার জন্য তিনি সবসময়ই নারী মুক্তির কথা ভেবেছেন। সফল ও স্বার্থক ভাবে গড়ে তুলেছেন নারী মুক্তি আন্দোলন।

উনিশ শতকে বঙ্গে তথা ভারতীয় সমাজে হিন্দু বিধবাদের দুর্গতি ছিলো সবচেয়ে দুর্বিষহ ও যন্ত্রণাদায়ক। অন্যায় অত্যাচার এবং নিপীড়ণে জর্জরিত হিন্দুবিধবা নারীদের মুক্তির কোনো পথ ছিলনা। অন্যদিকে পুরুষদের একাধিক বিয়েতে কোন বাধা ছিলনা। তারা ইচ্ছে করলেই একাধিক বিয়ে করত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখাগেছে বিয়ে করেও পত্নীকে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়নি। বাঁদি বা দাসী করে সংসারের এক কোনে বা বাগান বাড়িতে ফেলে রাখা হয়েছে। এমন কি বারাঙ্গনাদের সান্নিধ্য নেয়া তাদের জন্যে বৈধ বা উন্মুক্ত ছিলো। অপর দিকে আট বা দশ বছরের হিন্দু বাল্যবিধবাকে পুনরায় বিয়ে দেয়াটা পর্যন্ত ছিলো সম্পূর্ণ শাস্ত্র বিরুদ্ধ।  জানা যায় তখনকার সময় শাস্ত্র অমান্য করে যদি কেউ বিধবাকে বিয়ে করেছে তো মরেছে; তাকে একঘরি করা হতো, সমাজচ্যুত করা হতো। সমস্ত সমাজের ভেতরে প্রচলিত এই প্রথা বা ব্যবস্থা বিদ্যাসাগরের বিবেক এবং মূল্যবোধকে চরমভাবে আঘাত করে। তিনি বিধবা বিবাহ নিয়ে গভীর চিন্তামগ্ন হয়ে পড়েন। এবং এক সময় শাস্ত্র ঘেঁটে শেষ পর্যন্ত তিনি ‘পরাশর সংহিতা’ নামক ধর্ম শাস্ত্রে বিধবা বিবাহের পক্ষে সমর্থন পেয়ে যান। এই গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, বিবাহিতা নারীর স্বামী যদি উন্মাদ হয়, মারা যায়, সন্ন্যাসী হয়, ক্লীবত্ব প্রাপ্ত হয় এবং সমাজচ্যুত হয় তবে স্ত্রীর পুনরায় বিবাহ শাস্ত্র সম্মত। সমাজের চোখের সামনে শাস্ত্র স্বীকৃত এ ধরনের প্রমাণ্য দলিল তুলে ধরে বিদ্যাসাগর প্রমাণ করেন যে, বিধবা বিবাহ শাস্ত্র সম্মত। কিন্তু শত প্রচেষ্টাতে সামাজিক স্বীকৃতি আদায় করতে পারলেন না একচ্ছত্র পুরুষ শাসিত এই সমাজে। পারলেন না বিধবাদের বিবাহ দিয়ে বৈধব্যের দুঃখ-দুর্দশাকে ঘুচাতে। তখনকার সমাজে দেখা গেছে বিধবা বিবাহ প্রচলিত না থাকায় বাল্য বিধবাদের অনেকেই বৈধব্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্যে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়েছেন অবৈধ গোপন প্রণয়ে। এমন কি কেউ কেউ সামাজিক কলঙ্ক থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আত্মহত্যা  পর্যন্ত করতে বাধ্য হয়েছেন। আবার কেউ বা যন্ত্রণা আর উপদ্রপ সহ্য করতে না পেরে পথে নেমেছেন, এবং জীবনে বেঁচে থাকার তাগিদে বাধ্য হয়ে বেশ্যাবৃত্তি অবলম্বন করেছেন। বিদ্যাসাগর হিন্দু বিধবা বিবাহের পক্ষে আন্দোলন করেছিলেন মূলত সমাজে উৎকেন্দ্রিক জীবনযাত্রা থেকে সমাজকে রক্ষা করা এবং সমাজে হিন্দু বিধবাদের যে ঘৃণিত, শৃঙ্খলিত জীবন ছিলো সেই জীবন থেকে তাঁদের মুক্তি দেয়ার জন্যে। আইন প্রয়োগ ছাড়া সম্ভব হবে না ভেবে বিদ্যাসাগর ১৮৫৫ সালের অক্টোবর মাসে সমাজের শিক্ষিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বাক্ষর সহ একটি আবেদন সরকার সমীপে পাঠান। বহু চড়াই-উৎরাই পার হয়ে ১৮৫৬ সালে জুলাই মাসে বিধবা বিবাহ সমর্থনের পক্ষে আইন প্রণীত হয়। এবং এই একই বছর ডিসেম্বর মাসে বিদ্যাসাগর বহু অর্থ ব্যয় করে প্রথম বিধবা বিবাহ দেন। অতঃপর প্রচুর অর্থ ব্যয়ে ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০ টির মতো বিধবা বিবাহ দেন। তাতে করে বিদ্যাসাগর এক সময় ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে আরো একটি মারাত্নক সামাজিক ব্যধি প্রকট হয়ে দেখা দেয়েছিলো। তা ছিলো, ‘বহু-বিবাহ’ নামক প্রথা। এই প্রথা চালু থাকায় প্রচুর অর্থের বিনিময়ে কুলীন পুরুষরা একাধিক কুলীন কন্যাকে বিয়ে করতেন। সামাজিক মান-মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে কুলীন পিতা-মাতা প্রচুর অর্থ পণ দিয়ে বয়ষ্ক মৃত্যুপথযাত্রী কুলীন পাত্রের কাছে কন্যাকে বিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করতেন না। ফলে কুলীন কন্যারা অচিরেই বিধবা হতেন। এই সমস্যাও সমাজ সংস্কারক বিদ্যাসাগরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ব্যাপারে শুধু পত্র-পত্রিকায় তিনি লেখালেখি করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি বইও লিখেছিলেন। এক্ষেত্রেও বিদ্যাসাগর দেখলেন যে, আইন প্রণয়নের প্রয়োজন আছে। বিদ্যাসাগর তাই ১৮৫৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ‘বহু-বিবাহ নিষিদ্ধ’ এই মর্মে আইন প্রণয়নের জন্যে সরকারের কাছ আবেদন করেন। কিন্তু বহুবিদ জঠিল কারণে এ ব্যাপারে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ সম্ভব হয়নি।

            এক সময় যখন বিদ্যাসাগর দেখলেন যে, দীর্ঘকাল থেকে চলে আসা বদ্ধমূল কুসংস্কার গুলোকে নারী নিজেরাই ছাড়ছে না। যদিও কিছু সংখ্যক নারী মুক্তির জন্যে আন্দোলনমুখী হতে চাইতো কিন্তু সামাজিক অনুশাসনের কারণে পেরে ওঠতো না। অর্থাৎ নারী মুক্তি আন্দোলনে নারীরাই অন্তরায় সৃষ্টি করছেন দেখে তিনি নারী শিক্ষার তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। এমন কি বহু সাধনার ফলে ১৮৪৯ সালের মে মাসে বিদ্যাসাগর বেথুন সাহেবের সহযোগীতায় মাত্র ২১ জন ছাত্রী নিয়ে প্রতিষ্টিত করেন ‘বেথুন স্কুল’। শিক্ষা বিস্তারের এ সংগ্রাম থামেনি তাই ১৮৫৭ সালের নভেম্বর থেকে পরবর্তী ৭ মাসের মধ্যে তিনি বর্ধমান, হুগলী, মেদিনীপুর ও নদীয়ায় মোট ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এসকল করতে গিয়ে বিদ্যাসাগর বহুবার বহুভাবে বহুধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কিন্তু হাল ছাড়েননি। কারণ বিদ্যাসাগর’র বুকের ভেতর জুড়ে ছিলো মানবতাবোধ এবং নারীদের প্রতি ছিলো সহজাত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সেই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আলোকবর্তিকা পাণে ছুটেছেন সারা জীবন এবং সফল স্বার্থক ভাবে গড়ে তুলতে পেরেছেন নারী মুক্তি আন্দোলন।

            প্রথমদিকে যে সব মহিলারা শিক্ষা সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন: বামা সুন্দরী, দোর্গামোহন দাস’র স্ত্রী ব্রাহ্মময়ী দেবী, নিস্তারিণী, রাজলক্ষী সেন, রাধারাণী লাহিড়ী, মনোরমা মজুমদার, চন্দ্রমুখী বসু, জ্যোতির্ময়ী গঙ্গোপাধ্যায়, তটিনী দাস, দুর্গাপুরী দেবী এবং রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। এখানে উল্লেখ্য, নবাব ফয়জুন নেসাই প্রথম মুসলমান মহিলা যিনি মেয়েদের জন্যে কুমিল্লায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলেছিলেন। এই স্কুল তাঁর মৃত্যুর অনেক পরে ১৯৩১ সালে উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। অপরপক্ষে, রোকেয়া সাখায়াত হোসেন ১৯০৯ যে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন, কয়েক বছর পরই তা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়।