উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি রাগের দার্শনিক বিশ্লেষণ-ড. ছায়া রানী মন্ডল
শাস্ত্রীয় সংগীত বিভাগ, সংগীত ভবন, বিশ্বভারতী
Abstract
ভারতীয় দর্শন ও সংগীত এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের মাধ্যমে যুগযুগান্তর ধরে মানব সমাজে প্রবাহিত হয়েছে। দর্শনের মূল প্রশ্ন জগৎ, আত্মা এবং পরমতত্ত্বকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও, সংগীত সেই প্রশ্নগুলিকে মানবিক অনুভূতির স্তরে উপস্থাপন করেছে। বিশেষ করে উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে রাগ চর্চার মধ্য দিয়ে সামাজিক ও আধ্যাত্মিক দুই দিকের সুষম সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। রাগ শুধুমাত্র সুর বা ছন্দের সমষ্টি নয়, বরং একটি অভিজ্ঞতাজাত বিমূর্ত রূপ, যা শ্রোতা ও শিল্পীর মধ্যে ভাবের সেতুবন্ধন গড়ে তোলে। এই নিবন্ধে আলোচিত হয়েছে ভারতীয় দর্শন ও সংগীতের আন্তঃসম্পর্ক, সংগীতের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য, রাগের ধ্যানরূপ ও তার দর্শনশাস্ত্রীয় ব্যঞ্জনা। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাগের সময়, রস ও ভাব প্রকাশের ভিন্নতা এবং সেগুলির মাধ্যমে জীবনচেতনার পূর্ণতা অর্জনের দার্শনিক অভিপ্রায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মূলত সংগীতকে “Universal Language” হিসেবে বিবেচনা করে এখানে তুলে ধরা হয়েছে যে, শিল্পকলার শেষ নেই; বরং এটি এক অনন্ত সাধনার পথ, যা মানুষকে সীমা অতিক্রম করে অসীমের অনুভূতির দিকে নিয়ে যায়।
সূচক শব্দ
ভারতীয় দর্শন, সংগীত, রাগসংগীত, উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত, ভাব ও রস, Universal Language, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক চেতনা, শিল্প ও সাধনা, জীবনচেতনা, বিমূর্ত রূপ।
ভারতীয় দর্শন ও সংগীতের পরিসর অসীম। কাজেই এ সমস্তের সীমাকে স্পর্শ করার এক প্রয়াস মাত্র করা হয়েছে। দর্শন হচ্ছে এক গতিশীল শাস্ত্র। কারণ মানবের মানসিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়া তার উপর প্রশ্ন-উত্তর সবসময়ে পরিবর্তন হতে থাকে। সুতরাং দর্শনের গতিবৃদ্ধি অনেকটা দেহের গতি ও বৃদ্ধির মতো। এখানে দর্শনের মূল প্রশ্ন হচ্ছে, জগৎ-আত্মা এবং তার পরমতত্ত্ব। সমস্ত বিদ্যাকে দর্শন বলা যায় না, কারণ সব বিদ্যায় পরমতত্ত্ব থাকে না। প্রমাণ এবং প্রমেয়/জ্ঞান এবং জ্ঞেয়, এখানে জ্ঞেয় বস্তুর অন্তর্গত জীব, জগৎ এবং পরমার্থ। ভারতীয়র মতো ইউরোপীয় দর্শনেও প্রমাণ বা জ্ঞানের উৎপত্তির কথাটা বড় ভাবে দেখা যায়। এই সবের নিকট যাওয়া যায় প্রত্যক্ষ এবং অনুমান দ্বারা। দর্শনের রূপ এই কটি শব্দের দ্বারা গতিশীল হয়ে থাকে। সমাজে দার্শনিকের স্থান, এই বিষয়টি আলোচনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাচীন কালে যে সমস্ত বিদ্যা অধ্যয়ন হত সবটাই গুরুকূলে, আশ্রমে। তার মধ্যে সংগীত শিক্ষা একটা বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করত। যেখানে শুধু দর্শনের জগৎ-আত্মা-পরমতত্ত্বর জ্ঞান দ্বারা সংগীতকে দর্শানো হত। সংগীত দর্শন করাতো সামাজিক পরিবেশকে। সমাজের সমস্ত কিছুকে সংগীত তার শৃখংলিত অধ্যবসায়ে পরিশোধিত করে সুসংযত পরিবেশ গঠন করতে সাহায্য করত। কাজেই প্রতিটি সংগীত সাধক একটি একটি দার্শনিকের স্থান গ্রহণ করত। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ করা যায় ভারতীয় দর্শন সর্বপ্রথম স্থানে থাকা সত্ত্বেও সে সেইভাবে অন্য সমস্ত বিষয়কে তার রূপরেখার মাধ্যমে পরিপ্রকাশ করতে সচেষ্ট নয় বলে অনেকের ধারণা। যেখানে পাশ্চাত্য দর্শনে আরিস্ততলের সময় থেকে আজ পর্যন্ত মানব সমাজের সমস্ত জ্ঞানকে, বিদ্যাকে সুসংহত করবার চেষ্টায় ব্রতী হয়ে আছে, সেখানে ভারতীয় দর্শনের পরিসর খুবই সীমিত বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে। কাজেই সংগীতে বিশেষ রূপে উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে দর্শনের যে মেলবন্ধন তার এক অনুভূতি ব্যঞ্জনা এবং কিছু বিশেষভাবে নির্বাচিত রাগের বিমূর্তরূপ প্রকাশ করার প্রয়াস করা হচ্ছে মাত্র। ‘রাগ’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ভিন্ন ভিন্ন। কবিগুরুর কথায়, রঙ, সাংগীতিক ভাষায়, কতকগুলি স্বরের সমষ্টি যখন একটি নির্দিষ্ট ভাবের, রসকে প্রকাশ করে তখন তার একটি নাম দেওয়া হয়, যেমন ভৈরব, কাফি, কল্যাণ, বিলাবল ইত্যাদি ইত্যাদি। সবকিছু এক প্রকার শিল্পর পরিচয় নিয়ে স্থাপিত। এবং এই সমস্ত শিল্প দুটি মাধ্যমেই সম্পূর্ণ হয়। প্রথমটি ব্যক্তি, দ্বিতীয়টি সমাজ। “ব্যক্তির ভাবনা চিন্তা, প্রয়াস ও পরিশ্রম আনন্দবোধের সঙ্গে যুক্ত হলে প্রকাশের মাধ্যমে তার সার্থকতা খোঁজে, অন্যপক্ষে সমাজ সেই শিল্প সৃষ্টিতে নিজের আনন্দস্বরূপকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে। কাজেই ব্যক্তি এবং সমাজের মধ্যে আন্তরিকতা এবং সোহার্দ স্থাপনে অন্যতম কৌশল শিল্পরচনা।”১ ভারতীয় সংগীত হউক বা বিশ্বসংগীত হউক প্রত্যেক সাঙ্গীতিক ভাষা হচ্ছে বিশ্বজনীন “Universal Language” এই সংগীতের ভাষা মুখ্যতঃ ইচ্ছাশক্তি বা নিজস্ব কল্পনা প্রসূত।
প্রাচীন যুগ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত দেখা যায় সংগীত তার স্বমহিমায় প্রবাহিত। তার না নিজস্ব ভাষা, সীমা, পরিচয় দরকার হয়, না কাহার নির্ভরশীলতা উপরে নির্ভর করতে হয়। কাজেই এই শাস্ত্রীয় সংগীতের বা রাগ সংগীতের ইতিহাসে যেমন আছে আবেগ ভাব, উদ্দীপনা, তেমনই রয়েছে বিশুদ্ধ কল্পনার ধ্যান এবং তার বিমূর্ত রূপ। রাগ সংগীতে এই বিমূর্তভাবকে প্রকাশ করতে হলে শুধু মাত্র সুর ও ছন্দ দিয়ে হয়না, কারণ সৃষ্টিতে যত রকম সংগীত আছে সমস্ত সংগীতে সুর ও তাল বা ছন্দের ব্যবহার দেখা যায়। কাজেই রাগ সংগীতের সম্পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায় তার অন্তর্নিহিত ভাব ও ছন্দের মিলনে এবং অবশ্যই তার গতির মাধ্যমে। একই রাগ, যখন অতি বিলম্বিত লয়ে বাজে তখন তার পরিবেশের অবস্থা-স্বভাব যেমন হবে, দ্রুত লয়ে করলে তার পরিবেশ ঠিক তেমনি ভাবে শ্রোতার কাছে ধরা দেবে না, কারণ গতি মানুষের মনে এনেদেয় ভিন্ন রকমের অনুভূতি। সুতরাং রাগ সংগীতে যখন ভাব প্রকাশের প্রশ্ন আসে, তখন শুধুমাত্র তার সুর ও ছন্দের সাধারণ ব্যবহারে এ তত্ত্ব সমাধান হয়না। সেই সব সুরের ব্যবহার নির্দিষ্ট নিয়মাবলী, পরিমিত অলংকরণের রূপায়ন, এক সুরের সাথে অপর একটি স্বরের মিশ্রণের প্রক্রিয়া ইত্যাদিকে দেখতে হয়। কারণ সুর মনে আনন্দ এনে দেয়, রাগ ও মনে আনন্দ এনে দেয়, তা বলে যে কোন সুরকে রাগ বলা যায় না। এর জন্য আবশ্যক সুরের সহজ আবেদন, স্বর মিশ্রণের প্রণালী ইত্যাদি। কারণ স্বর ব্যবহারের বৈশিষ্ট্য এবং তত সংগে মানসিক একাত্মবোধতা (ধ্যানমগ্নতা) থাকা একান্তই বাঞ্চনীয়। মানব জীবনের অভিজ্ঞতার দুটি দিক আছে। একটি সামাজিক অপরটি আধ্যাত্মিক। এই আধ্যাত্মিক শব্দটি কোন ধর্মীয় অর্থে ব্যবহার হয় না। এটি ব্যবহার হয় দার্শনিক অর্থে এবং এই সমস্ত ব্যবহার হয়, আনন্দময় প্রকাশের মাধ্যমে। কারণ যে কোনো শিল্প, সে কাব্য, চিত্র, নৃত্য, সঙ্গীত যাই হউক না কেন, প্রত্যেকে নিজের নিজের প্রকাশ আনন্দের-প্রেরণা মাধ্যমেই করে থাকে। যেখানে তার শেষ হয়, সেখান থেকেই আবার শুরু হয়। অর্থাৎ শিল্পকলার শেষ নেই। তার সমাপ্তিতে সমাপ্তি হয় না। তাইতো কবিগুরু বলেছেন-
“শেষ নাহি যে, শেষ কথা কে বলবে?
পুরাতনের হৃদয় টুটে আপনি নূতন উঠবে ফুটে,
জীবনে ফুল ফোটা হলে মরণে ফল ফলবে।”২
যখন কোন এক অনুষ্ঠানে কেউ রাগ ‘য়মন’ শোনার সময়, মাথা হেলিয়ে দুলিয়ে শুনতে থাকে, আবার যখন সমে এসে থামে তখন ‘বাঃ আঃ’ বলে উঠে, একদম শেষ হয়ে গেলে, এক অন্যন্য অনুভূতির সাথে ফিরে আসে, কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ হলেও শ্রোতা, শিল্পী কারুর মনে সমাপ্তির বিষাদ দেখা যায় না, বরং আনন্দে তার মন ভরে ওঠে। কারণ মন সীমাহীন সীমার মধ্যে বিচরণ করে সর্বসময়। কাজেই আনন্দময় প্রকাশ বা প্রকাশময় আনন্দ থামতে চায়না, তার অন্ত নাই। তাই বিশিষ্ট দার্শনিক, সংগীতজ্ঞ, তাদের কথায় বলছেন “গানের সুরের আলাপের মধ্যেও শিল্পী সুরের কথার লহরে তার আনন্দময় সত্তাকে প্রকাশ করতে থাকেন। তারপর সেই হৃদয়ভরা আনন্দকে একটি তালে ঢেলে দিয়ে শ্রোতাদের সংগে সংগে অসীমের রাজ্যে চলে যান। সেই অসীমতাতেই তো শিল্পের সার্থক প্রকাশ। তাই! কি তথ্য দিচ্ছি, তা বড়ো কথা নয়, কেমন করে কতটা সত্য আমার আনন্দময় চেতনা থেকে পরচিত্তে সংক্রমিত করতে পারছি তাই বড়ো কথা।”৩
শব্দ ও সুর এক নয় যা মনকে দেয় শাশ্বত অনুভূতির আনন্দ। যা জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে একটি নিত্যবস্তুর স্থান নিয়ে থাকে। মানুষ সেই নিত্য অনুভূতির অন্বেষণেই নিজকে উৎসর্গ করে থাকে, যা আসে বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা, যেমন রাগ, তাল, লয়, ছন্দ, ছবি, অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি। এ সমস্ত একটি শিল্পীর সহজাত ধর্ম বললে অত্যুক্তি হবে না। নিরন্তর অভিসার চলে, যা বিশেষ করে সংগীতের মধ্যে বেশী লক্ষ করা যায়। সংগীতের মধ্যে আমরা একটা বোধকে বা অনুভূতিকে পেয়ে থাকি। কবিগুরুর কথায় “যাকে যানা যায় না, যার সংজ্ঞা নির্ণয় করা যায় না, বাস্তুর ব্যবহারে যার মূল্য নেই, যাকে কেবল একান্ত ভাবে বোধ করা যায়, তারই প্রকাশ সাহিত্য কলায়, রস কলায়।”৪
সংগীত অথবা শিল্পশাস্ত্রর মূল উদ্দেশ্য মানবের বাহির এবং অন্তরের অনুভবকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেবা, যার মধ্যে অনেকখানি সত্য এবং কিছু মিথ্যার অবিভক্ত বর্ণ পরিচয় পাওয়া যায়। একটি শিল্প, সে সংগীত হতে পারে, হতে পারে সাহিত্য, হতে পারে স্থাপত্য, কিম্বা চিত্রশিল্প সমস্ত কিছু দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে থাকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলীতে বলছেন- “শিল্পশাস্ত্র ঘাঁটিতেই যদি হয় তবে গোড়াতেই আমাদের দুটো বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে -কোনটা মত এবং কোনটা মন্ত্র এ দুয়ের সম্বন্ধে পরিস্কার ধারণাটি নিয়ে কাজ করতে হবে। মত জিনিসটা একজনের, দশজন সেটা মানতে পারে, নাও মানতে পারে। একের কাছে যেটা ঠিক, অন্যর কাছে সেটা ভুল, নানা মুনির নানা মত। মন্ত্রগুলি সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। মত একটা লোকের অভিমতকে ধরে প্রচারিত হল, আর মন্ত্র প্রকাশ করলে আপনাকে সব দিক দিয়ে যেটা সত্য সেইটে ধরে। শিল্পশাস্ত্রে মত এবং মন্ত্র দুটোই স্থান পেয়েছে, মতকে ইচ্ছা করলে শিল্পী বর্জন করতে পারেন, কিন্তু মন্ত্রকে ঠেলে ফেলা চলেনা।”৫ তবে মূলত উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয়সংগীত বা রাগসংগীত সম্পর্কে এখন ধারণা করা কতটা যুক্তিযুক্ত তা বিচার করা সময় সাপেক্ষ বা সহজসাধ্য নয়। কারণ এক রাগ তার গতির মাধ্যমে একসাথে দুই বা তার বেশী রসভাব সঞ্চার করে থাকে। যেমন “ভৈরবী” বিলম্বিত লয়ের সময় করুণ রস প্রকাশ করার সাথে সাথে, শৃঙ্গার, বাসূল্য ইত্যাদির ভাব প্রকাশ করে থাকে মধ্য বা দ্রুত লয়ে। এক্ষেত্রে মন্ত্র থেকে মতের ধারণা স্পষ্টভাবে রূপায়ন হয়ে থাকে। স্বর মিশ্রণের প্রণালী ও অলংকরণের কারুকার্যের মধ্য দিয়ে ভাব প্রকাশ রাগসঙ্গীতের একমাত্র অবলম্বন। কারণ শিল্পী সে তার নিজস্ব কল্পনা দিয়ে তা মতকে অভিমতকে পরিপ্রকাশ করে থাকে। কারণ “যে কোন শিল্পের শেষ বিচার মানবিক আবেদন, সুতরাং সুরের নিজস্ব একটা মন্ত্র থাকলেও, আশ্চর্য ধ্যানমগ্নতা থাকলেও নিছক অ্যাবষ্টাকশনে তার মন্ত্র অবশেষ হলে সঙ্গীতের পরম রূপটি অশ্রুত থাকবে। ভাবরূপের সঙ্গে একাত্মতা না ঘটলে শিল্পের সার্থকতা খন্ডিত হয়। সুর মনোরঞ্জন করে, রাগও মনোরঞ্জন করে, তথাপি সুর মাত্রই রাগ নয়, রাগের ছায়াও নয়।”৬ কারণ রাগসঙ্গীতের ধারণা আসে পূর্ণ জীবনচেতনা থেকে। শুধুমাত্র সুর, ছন্দপ্রবাহ বা ছন্দের চাতুর্যে বা বাণীর স্থায়ী অন্তরার মাধুর্যে নয়। এবং এই জীবনচেতনা যে কোনো শিল্পীর পরিবেশনায় লক্ষ করা যায় না, একমাত্র আত্মস্থ শিল্পীর ক্ষেত্রেই অনুভব করা যায়। এই অনুভব আসে জীবনের দুটি দিক থেকে। একটি ‘সামাজিক’, দ্বিতীয়টি ‘আধ্যাত্মিক’। ‘আধ্যাত্মিক’ শব্দটি প্রচলিত ধর্মীয় অর্থে ব্যবহৃত নয়, দার্শনিক অর্থে ব্যবহৃত। সামাজিক চেতনা থেকে যেমন কয়েকটি বিজ্ঞানের জয়, এই আধ্যাত্মিক চেতনা থেকে তেমনি শিল্পের জয় এই শিল্পের মধ্যে আবার সঙ্গীত চিন্তাতেই আধ্যাত্মিক শব্দটি সবচেয়ে বেশী প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। কারণ সঙ্গীত চর্চাতে যে ধরণের নিবিষ্টতা ও তন্ময়তা প্রয়োজন তা অনেকটা সাধনামার্গেরও বটে।”৭ শুধুমাত্র এই কারণে, গায়ক বা বাদক, যন্ত্র বা যন্ত্রীর আত্মিক অনুভূতি এনে দেয়, রাগের মধ্যে অন্তর্নিহিত ভাবরূপকে, যে কারণে ভৈরব ভৈরবী রামকেলী সুরে ভাবের পার্থক্য ধরা পড়ে। সুরের আবহে সময়ের ছায়াপাত হয়। সুরের আবহে মনের গতিও বলে দেয় তার চরম উপলব্ধিকে। কিছু সুরের সমষ্টি নিয়ে যে রাগসমূহের উপলব্ধি আমাদের বুঝিয়ে দেয়, নানা অনুভূতির, নানা রসের সার্থকতা, সেই সমস্ত রাগের মধ্যে এখানে বা একটি রাগের দার্শনিক সংক্ষিপ্ত রূপরেখা দেওয়ার প্রয়াস করা হয়েছে, যা আমাদের দিয়ে থাকে এক অনন্য অনুভূতি। সুরু থেকে যেমন প্রাতঃকাল, প্রভাত, মধ্যাহ্ন, সায়হ্ন (সন্ধ্যা), রাত্রী (মধ্যরাত্রী) সময়ের কিছু রাগ নির্বাচিত করা হয়েছে। যেমন ভৈরব, বেহাগ, তোড়ী, আশাবরী, পূর্বী, ইমন, ভৈরবী। উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে রাগরাগিনীর উৎপত্তি সম্বন্ধে সেইভাবে পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় না। অন্যদিকে রাগরাগিনী গুলির কাঠামোগত চিত্র সবিশেষ পাওয়া যায়, কিন্তু গুরুমুখী বিদ্যার মাধ্যমে রাগের যে ধ্যানরূপ পাওয়া যায় তা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে পাওয়া দুঃস্কর। কারণ এ দর্শন সেই চাক্ষুষ দর্শনের অন্তর্গত নয়। এর মধ্যে অন্তর এবং বাহ্যিক দৃশ্য এনে দেয় সুরের চরম সার্থকতা। ‘রাগ’ হচ্ছে ভারতীয় সঙ্গীতের প্রাণ। স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ মহাশয়ের কথায় “মানস প্রত্যক্ষ বা অনুভূতিসিদ্ধ যে তরঙ্গায়িত বস্তুকে আমারা স্বরের সাহায্যে কন্ঠ দিয়ে প্রকাশ করি, তাই ‘রাগ’। রাগে থাকে শব্দতরঙ্গ, শ্রুতমাধুয্য, লাবণ্য, ভাব ও রস। স্বরের বন্ধনে দেখি ও ব্যবহার করি এবং মন দিয়ে তার ভাব ও অভিব্যক্তি অনুভব করি বলেই মনোবৈজ্ঞানিকের ভাষায় রাগকে বলা হয় আন্তর-বাহ্যাবগাহী পদার্থ (Psycho-Physical Matter)। রাগকে পদার্থ বলার কারণ ব্যবহারিক জগতে তার উপযোগিতা আছে ও তার দ্বারা আমাদের প্রয়োজন সিদ্ধ হয়।”৮
খ্রীষ্টীয় যুগের প্রারম্ভ থেকে প্রায় সমস্ত রকমের গীত রাগাশ্রয়ী ছিল। তবে সমস্ত রাগের মধ্যে বাণীর প্রভাব ছিল না। ছিল সুরাশ্রয়ী থাকে বলা হয় অনিবদ্ধ সঙ্গীত। এই অনিবদ্ধ সঙ্গীত, মুক্ত বিহঙ্গের মতো তাল ছাড়া শুধুই সুরের সাহায্যে রাগের প্রতিমা রচনা করতো, সুরের মধ্যে ভাব রস সমস্তের আর্বিভাব হত এবং পরে নিবদ্ধ সঙ্গীতে বা গানে তালের মধ্যে রাগ ভাব প্রকাশ করা হত। সীমার মধ্যে অসীমের প্রকাশের মতো। এই রাগ অনুশীলনের, প্রকাশের পিছনে এক দার্শনিক ভাবধারা সর্বদা উপস্থিত থাকত। ব্যক্তিবিশেষে তার ভাবধারা এবং রাগের ভাবধারা সব সময় এক ভাবে প্রকাশিত হত না। মাত্র যখন এক বিশেষ স্বর সমষ্টি তার নিজস্ব স্বভাবে বেজে উঠত তখন মানব মনের অন্তভাগে সৃষ্টি হত নির্দিষ্ট থাকা রসভাব। বেশীর ভাগ সময় বিশ্ব চরাচরের প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাদের মধ্যে এনে দিত এক অনন্য জাগতিক রসের স্পন্দন, যা ধ্বনীর মাধ্যমে প্রকাশ পেত। এই পরিপ্রেক্ষিতে, এখানে প্রকৃতির উদয়-অন্তের সময় সীমাকে ধরে প্রাতঃকালীন রাগ ‘ভৈরবে’র দার্শনিক রূপরেখার এক সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ করার প্রয়াস করা হচ্ছে। উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয়সংগীত ‘ভৈরব’ রাগকে আদি রাগ বলা হয়ে থাকে। ‘ভৈরব’ রাগকে শিবের সঙ্গে কল্পনা করা হয়েছে। শিব সম্পর্কে আমাদের একটি নিঃসংশয় ধারণা আছে, সেই চরিত্রকে আমরা শ্রদ্ধা করেছি, ভালোবেসেছি। তাঁর নিবাসক্ত উদার গম্ভীর ও শান্ত প্রকৃতগত আদর্শ বলে কল্পনা করেছি। এবং এই ভাবরূপটি থেকে এই আদি রাগটিতে শান্ত ও বীর রস আমরা লাভ করেছি।
‘ভৈরব’ রাগকে সন্ধিপ্রকাশ রাগ বলা হয়ে থাকে, রাত্রি ও দিনের মধ্যবর্তী কালের নাম ‘সন্ধি’, এই সন্ধিকে প্রকাশ করে যে রাগ তাকে বলা হয় সন্ধিপ্রকাশ রাগ। সন্ধিপ্রকাশ রাগকে মেলপ্রবেশক রাগও বলা হয়ে থাকে, কারণ কতকগুলি রাগের আলাপের পর অন্যান্য রাগ অনুশীলন করার প্রস্তুতি বা ক্ষেত্ররচনা করে সন্ধিপ্রকাশ রাগ। এখানে স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ ভৈরব রাগ সম্বন্ধে বলেছেন “বিশ্ববৈচিত্র্যের পরম কল্যাণ বিধান করেন সূর্য, কেননা বিশ্বের স্থিতি, বৃদ্ধি ও জীবন সকল কিছুর বিধায়ক তেজস্বান সূর্য বা আদিত্য। অগ্নি সূর্যের প্রতীক, তাই অগ্নিকে পৃথিবী বাসী ‘সূর্য’ বলে। শিব ও সূর্য অভিন্ন বলে রাত্রির অন্ধকার দূর করার শক্তি উভয়ের আছে। সূর্য প্রতীক অথবা সূর্যের অভিন্ন কল্যাণময় শিবকেই ভৈরব রাগ বলে কল্পনা করা হয়। তারি জন্য রাত্রির অবসান ও দিনের আগমন এই সন্ধিক্ষণে ভৈরব রাগের আলাপ করা হয়। আলাপের উদ্দেশ্য রাত্রিরূপ জড়তা ও দৈন্য দূর করা, অথবা মৃত্যুর বুকে নূতন জীবন ও নূতন চেতনাকে আহ্বান জানানো।”৯
এই ভৈরবের অনেক প্রকার আছে এবং এই নিয়েও অনেক মতভেদও আছে। কারুর মতে ভৈরব রাগ ৮ রকমের, কারুর মতে ১১ এবং ১২ রকমের শোনা যায়। সেগুলির মধ্যে শুদ্ধ ভৈরব, নট ভৈরব, আহীর ভৈরব প্রচলিত এবং “শিব ভৈরব, আনন্দ ভৈরব, জোগ ভৈরব, বঙ্গাল ভৈরব, বসন্ত ভৈরব, টঙ্ক ভৈরব, প্রভাত ভৈরব”১০ প্রভৃতির প্রচলন সেইভাবে নেই বললেও ভুল হবে না। বর্তমান উত্তর ভারতীয় হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয়সংগীত পদ্ধতিতে প্রচলিত ভৈরবের গঠন, সাতস্বরের সমষ্টিতে হয়ে থাকে। ফলে এই রাগের জাতি সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ। ভৈরব মেল বা থাটের অন্তর্গত। কোলল ধৈবত ও কোমল ঋষভের প্রয়োগ বেশী শুধুমাত্র বাদী-সম্বাদী বলে নয়, অতি সূক্ষ্ম কোমল ঋষভ ও কোমল ধৈবতের আন্দোলনে ভৈরব রাগের বিশিষ্ট চরিত্র ফুটে উঠেছে। এখানে একদিকে যেমন শান্ত ও বীর রসের আভাস মেলে অন্যদিকে ষড়জের পর ধীরে ধীরে অতি কোমল ঋষভের ব্যবহার ভোরবেলার প্রথম উন্মেষ ধরা পড়ে। কোমল ধৈবত ঋষভ বাদী-সংবাদী থাকা স্বত্বেও কেউ কেউ মধ্যস্বরকে বাদী বলেন। কারো কারো মত গান্ধার বাদী বা অংশ। ভৈরবের করুণ রস বিরহের নয়, বৈরাগ্যের, যা গম্ভীর ও শান্ত ভাব এনে দেয় মনে। অন্যদিকে “বিষ্ণুপুরপদ্ধতিতে, রামপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সংগীতমঞ্জরী গ্রন্থে ভৈরবের বাদী-মাধ্যম, সংবাদী-ষড়জ এবং অবরোহনে কোমল নিষাদের প্রয়োগ দেখিয়েছেন।” দার্শনিক ভিত্তিতে ভৈরব রাগের মধ্যে এক সমধিক স্ফুর্তি লক্ষ করা যায়। কার্যতঃ এই রাগে খুব দ্রুত লয়ের তান বা দ্রুত খেয়াল গাওয়ার পদ্ধতি প্রচলিত ছিলনা পূর্বে। এই সমস্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় ভৈরব রাগের দার্শনিক অনুভূতি ব্যঞ্জনা। মত বা মন্ত্রর পরিপ্রেক্ষিতে ভৈরব রাগের এক ঝলক দার্শনিক প্রতিধ্বনি Audio-Visual Record
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর “সংগীতচিন্তা”র “সংগীত ও ভাব” প্রবন্ধে বলেছেন “দেখা গিয়াছে আমাদের দিবাকালের রাগিনীতে কোমল রেখাব এবং কড়ি মধ্যমের যোগই বিশেষ লক্ষ করিবার বিষয় এবং ভৈঁরোতে কোমল রেখাব লাগে বটে কিন্তু কড়ি মাধ্যম লাগে না, শুদ্ধ মধ্যম লাগে, এই সামান্য প্রভেদেই প্রথমত সুরের মূর্তি অনেক পরিবর্তন হইয়া যায় তাহার পরে অন্যান্য প্রভেদও আছে। এইরূপ সুরের সামান্য পরিবর্তনের কেন যে ভাবের মূর্তি এত পরিবর্তিত হয় তাহা বলা আমার সাধ্যায়ত নহে। “১৩ সমস্ত কিছুর পরে, সুর যে কেবল ভাব সৃষ্টির একমাত্র মাধ্যম তা বলা যাবে না। কারণ গম্ভীর, করুণ রসের স্বর সমষ্টি যখন তার গতি বাড়িয়ে দ্রুত লয়ে সুর ছাড়ে তখন সেখানে করুণ ভাবের প্রকাশ না ঘটে সুখ বা চঞ্চলভাব প্রকাশ পেয়ে থাকে। প্রত্যেক সংগীত বা রাগ আবেগ থেকে শুরু হয়ে আবেগে শেষ হয়। কারণ যখন বিলম্বিত লয় দিয়ে শুরু হয় তখন শ্রোতা-গায়ক উভয় পক্ষে থাকে এক স্থিতপ্রজ্ঞ ভাব, আবার যখন শেষ দিকে দ্রুত লয় শুরু হয়, তখন তার মধ্যে সেই শুরুর ভাব চলে যায় আসে অন্য ভাবের আবেগ, “সঙ্গীত শুধুমাত্র শব্দের নিজস্ব অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনাকেই প্রকাশ করে। “১৪ আমার মনে হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাণী বা গানের কথা, সুর থেকে বেশী ভাব প্রকাশের পথ মুক্ত করে দেয়, কারণ ‘ভৈরব’ যখন গম্ভীর, শান্ত, ভক্তি ভাবের পরিচয় দিয়ে থাকে তার সুর সমষ্টির মাধ্যমে, সেখানে লক্ষণীয় কিছু কিছু বাণী বা কথা অন্য বিভিন্ন রসের ভাবকে তুলে ধরে একই সুর সমষ্টির মাধ্যমে যেমন-ভক্তি রসের-
সখিরী আজ মিল সব গীত গাও
ওস প্রভ্যুকে ধন্যবাদ
জিসকা রস নিত্য গাতে হৈঁ
গন্ধর্ব মুনিগণ ধন্যবাদ।
অন্তরা মন্দরো মে কন্দরো মৈঁ
পরবতাঁ কে শিখর পর
দেতে হৈ লগাতার সৌ সৌ
বার মুনিগণ ধন্যবাদ। ১৫
এই বন্দিসা বা বাণীর মাধ্যমে ভক্তি রসের উদ্রেক হচ্ছে, পর মূহুর্তে প্রকৃতি প্রেম সেই একই স্বর সমষ্টিতে, যেমন-
“বাদর ঝুম ঝুম আয়ে,
বরণ বরণ বরষত প্যারে। “১৬
আবার দেখা যায় বিরহ, বাৎসল্য, শৃঙ্গার প্রভৃতি রসের উদ্রেক যেমন বিরহের
এহুঁত বার বার জাউ তুচ্ছারে গুসেয়াঁ
হামরী মানলে প্যারে,
টাকে আবো তুম হমরে টিগবা
কহিলে বা কতিয়া ঔর গরু
গর হর বা প্যারে মোরে। ১৭
আবার
জাগো ব্রীজ রাজ কুবর
নন্দিকে দুলারে।
য়মুনাসে গেঁদ গর
গ্লালবাল সব ঠাড়
কালিফু-ফু কার করত
শ্যামহি এককার॥১৮
এই সমস্ত থেকে বোঝা যাচ্ছে মানুষের মত, ভাব ইত্যাদি থেকে রাগের দার্শনিক পরিচয় পাওয়া যায়। শাস্ত্রর মতে কোমল ঋষভ, কোমল ধৈর্বত কোমল মাত্র গম্ভীর রসের সৃষ্টিকারী নয়, মনের ভাব অনুযায়ী, সুরের গতি অনুযায়ী একই সুর মানুষের মনে এনে দেয় একসাথে বহুরসের অনন্য অনুভূতি।
রাগ সংগীত সৃষ্টির শিল্প-সুত্র এবং দার্শনিক প্রত্যয়
(A) সাপেক্ষবাদ (Preferentialism)
১. ক) ভাববাদ (Theory of feeling)
খ) অনুকৃতিবাদ (imitation Theory)
২. ক) আবেগবাদ (emotiveness)খ) উদ্দীপনবাদ (illuminating)
৩. প্রকাশ (expression)
(B) নিরপেক্ষবাদ (Absolutism)
১.ক) কল্পনাবাদ (Theory of imagination)
খ) বিমূর্তরূপবাদ (formalism)
গ) রূপকৈবল্যবাদ (Configurationalism)
২. প্রকরণলব্ধ (Structuralism)
৩. প্রকাশ (Expression)
(C) প্রতিভাবাদ (Intuitionalism)
১. ক) প্রজ্ঞাবাদ (Wisdom oriented)
খ) স্বজ্ঞাবাদ (Theory of self-knowledge)
২. প্রতিভালব্ধ (Intuitionalism)
৩. প্রকাশ (Expression)”১৯
‘প্রকাশ’ হচ্ছে লক্ষ্য, মাধ্যম যাই থাকনা কেন, সুন্দরের সৃষ্টির জন্য প্রকাশ চাই। কাজেই বিভিন্ন প্রক্রিয়ার শিল্পের ‘প্রকাশ’ থেকেই সুন্দরের উৎপত্তি, পরে হয় সঞ্চার (Communication)। এইভাবে যোগাযোগের পরিমণ্ডল বাড়তে থাকে, যার ফলস্বরূপ শিল্পী-শ্রোতা এবং সাধারণ মানব জীবন ও পরিমণ্ডল ভরে ওঠে দার্শনিক রস ও ভাবের প্লাবনে। কাজেই একটাই লক্ষ্য হয়ে দাড়ায় জীবনে, সেটা হচ্ছে আনন্দের প্রকাশ। দর্শনের এই বিভাজন শুধু সঙ্গীতে নয় শিল্পের সমস্ত ভাগগুলিতেও মেনে নেওয়া যায়। “শেষ বিচারে আমরা দেখব শিল্প মাত্রই ‘প্রকাশ’। শুধু সাপেক্ষ বা নিরপেক্ষ বা প্রতিভান বলে পৃথক কিছু নেই। প্রকাশিত না হলে শিল্প তার ভিত্তিভূমি স্পর্শ করে না।”২০ দার্শনিক সূত্রের মধ্যে যে শব্দগুলির ব্যবহার হয়েছে মূলতঃ সেইগুলি অন্তর্নিহিত তত্ত্বর উপর নির্ভর করে। রাগ সংগীত সৃষ্টির যে দার্শনিক প্রত্যয় তা মোট তিনভাগে বিভাগীকরণ করা হয়েছে প্রথমটি হচ্ছে ‘সাপেক্ষবাদ’। সাপেক্ষর অর্থ কোন বস্তুনিয়মের অপেক্ষায় থাকা, অর্থাৎ সেই বস্তুনিচয়ের সঙ্গে আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতালব্ধ ভাবধারার সাযুজ্য কল্পনা করা। পূর্বে ঘটে যাওয়া ক্রিয়াকলাপের উপর নির্ভর করে বর্তমানের সাপেক্ষবাদ এগিয়ে যাওয়া। এই নির্ভর করা আবার দুই ভাবে হয়ে থাকে, এক হচ্ছে অনুকরণের মাধ্যমে আর অন্যটি হচ্ছে ‘ভাবাবেগের’ মাধ্যমে। যেমন আমাদের শাস্ত্রেতে আছে সংগীতের সাতস্বর প্রকৃতির জীবজন্তুর ডাককে অনুকরণ করে সৃষ্টি হয়েছে। যেমন ময়ূরের ডাক থেকে ‘সড়জ স্বর’ আর কোকিলের ডাক থেকে ‘পঞ্চম স্বরে’র উদ্ভব হয়েছে। এই অনুকরণবাদ হচ্ছে মানবের সহজাত প্রবৃত্তি। কার্যতঃ মানুষ তার লক্ষ পথে পৌঁছানোর জন্য বহু ঘটনা বিজড়িত ক্রিয়াকলাপের মধ্যে অগ্রসর হয়ে থাকে। মাত্র সমস্ত কিছুকে সে অনুকরণ করে না। বিশেষ কিছু তথ্য সে তার বিবেক-ভাবনা-বুদ্ধির দ্বারা যাচাই করে অনুকরণ করে থাকে বারে বারে। এই অনুকরণের মাধ্যমে মানুষ তার স্বরকে প্রতিনিয়ত এক গতি বা অন্তর্নিহিত ভাব প্রকাশের তাগিদে সে তাকে প্রকাশ করে থাকে। কাজেই অনুকরণ থেকে ভাববাদে রূপান্তর হয় নিত্যান্তই আবশ্যকতার জন্য। যেমন রাগ ভৈরব-
“গুরুনাথ সবনকে
নিতসুমরে মন জীবিত ছিনভংগুর
যো চাহে তু চতুর সুখ সম্পদ
মংগল নাম কমল মুখ সংবদ
জাকে কৃপা সব পুরত কাম।”২১
এই স্থায়ীর অংশটি প্রথমে খুব সহজ ভাবে শিখানো হয়, পরে রাগের স্বরসমষ্টির সহ বিভিন্ন ভাবে একে প্রকাশ করা হয়, শিল্পীর ভাব দ্বারাই এই পর্যায়গুলি ধরা দিয়ে থাকে মনের মানসপটে। তাই প্রথমে অনুকরণ, পরে ভাবের স্বরধ্বনী। কাজেই “অনুকরণবাদীদের ধারণায় শিল্পীর কাজ বিচিত্র জগতের স্বরূপকে নিজ-অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জানা, ভাববাদীরা সেখানে নিজস্ব ঐকান্তিক অনুভবেরই দ্বারস্থ হন।”২২ দুই/তিনজন প্রবাদপ্রতিম শিল্পীর ভাবধারায় উপরোক্ত ভৈরব রাগের স্থায়ী অংশটি ভীমষেণ জোশী, তারাপদ চক্রবর্তী, অব্দুল করিম খাঁ। কোন শিল্পী যখন পূর্ব অনুসৃত বিষয়টিকে বা রাগটিকে তার মানসপটে রেখে সংগীতের ভাবধারা, অনুযায়ী প্রকাশ করে তখন অনুকরণজাত শিল্প সংগীতকে আমরা পাই ভারতীয় ঘরানা সংগীতের মধ্য দিয়েই অনুকরণ বৃত্তিটি পরিস্ফুট হয়েছে বার বার। যে কোন বড় শিল্পীর শিষ্য যখন তাঁর গুরুদেবের শিক্ষা দ্বারা প্রাপ্ত রাগটি গাইতেন তখন তিনি নিছক অনুকরণবৃত্তির সাহায্য নিয়ে গাইতেন, তবে মধ্যে থাকত নিজস্ব কিছু ভাবধারা। অনুকরণের সংগে ভাবধারার মিশ্রণ ঘটে। কারণ নিজের মানস পটে অন্যর অনুকরণের ভাবধারার সংযোগ ঘটে। এই ভাবধারা বা ভাববাদ থেকে দুটি বিশেষ অনুভূতির সৃষ্টি হয়ে থাকে। একটা আবেগবাদ (emotion or emotive) অপরটি উদ্দীপনাবাদ (Illumination or Illuminating)। যখন শিল্পীর ভাবগত অনুভূতির তীব্রতা বৃদ্ধি পায় তখন তার নির্দিষ্ট রাগটির এক বিশেষ স্থানের অধিকারী হয়ে থাকে। এখানে পণ্ডিত ভীমষেণ যোশী, সঙ্গীতাচার্য পণ্ডিত তারাপদ চক্রবর্তী, পণ্ডিত অব্দুল করিম খাঁ সাহেবের গীত রাগ সমূহ যে অনুভূতি জাগায় সেই অনুভূতি অন্য আরো অনেক গুণীজনের রাগে পাওয়া যায়না। কারণ অনুভূতি পূর্ণ আবেগ আমাদের মনে গভীর ভাবে স্থান পেয়ে থাকে। এরপর আসে “উদ্দীপনাবাদ” এই অনুভূতি আবেগরই ঘনীভূত তাৎক্ষণিক রূপ। যেমন আমরা বহু শ্রুত বা প্রবাদ শুনেছি, মধ্যযুগে শিল্পীরা বিশেষ কিছু রাগ গেয়ে বৃষ্টির পরিবেশ এনে দিতেন। তানসেন ‘দীপক’ রাগ গেয়ে অগ্নির আবির্ভাব ঘটিয়েছিলেন। সুতরাং এই সময় শিল্পীর সংগীত বা রাগ পরিবেষণায় হঠাৎ চরম উৎকর্ষ ঘটে, যাকে বলা হয় আবেগের ঘনীভূত তাৎক্ষণিক রূপ। যা সৃষ্টি হয় উদ্দীপনা থেকে। যার বৈজ্ঞানিক বা যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণ করা অসম্ভব। এখানে একধরনের চমৎকার বলা যেতে পারে, যাকে আমরা বলে থাকি (Mystical Experience) | এই সম্পর্কে একটি ঘটনা অরূণ ভট্টাচার্য তাঁর সংগীতে সুন্দরের ধারণা প্রবন্ধে বলেছেন, “খেয়ালিয়া রহমৎ খাঁ কিশোর সঙ্গীতশিল্পী খৌজুদ্দিনের গান শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। বিনা শিক্ষায়, বিনা পরিশ্রমে এমন গান যে সম্ভব তা রহমৎ খাঁ কোনভাবেই বুঝতে পারেননি। মৌজুদ্দিনের সংগীত সৃষ্টির মূল প্রেরণা হয়তো বা এই উদ্দীপনাবাদে নিহিত। উদ্দীপন বিষয়টির সংগে প্রেরণাও অবশ্যই যুক্ত। আবেগের সঙ্গে উদ্দীপনার মিল এবং আবেগের ঘনীভূত তাৎক্ষণিক রূপই হচ্ছে উদ্দীপন। এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ নির্ভর নয়। নিছক আবেগ দ্বারা পরিচালিত সংগীত অনেক সময়ে সংযম রক্ষা করে না, কিন্তু উদ্দীপনা জাত সঙ্গীত সব সময়েই শ্রোতাকে এক বিশেষ ভাবলোকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। উদ্দীপনার মূল সূত্র তাৎক্ষণিক মূহুর্তে এক মহনীয় উপলব্ধি।”২৩ এরপর দার্শনিক প্রত্যয়ের দ্বিতীয় ধাপ-নিরপেক্ষবাদ। সঙ্গীতে নিরপেক্ষবাদ, সাপেক্ষবাদ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, সাপেক্ষবাদ পূর্ব শিক্ষার পূর্ণঃ অভ্যাস যাকে সহজভাবে বললে পূর্ব পাঠের আলোচনা হিসাবে বোঝা যায়, সেখানে নিরপেক্ষবাদ হচ্ছে পূর্বে অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বে যখন এক মানব মন স্বতঃ তাঁর বিশুদ্ধ কল্পনার মাধ্যমে সঙ্গীতের, শিল্পের সৃষ্টি করে তখন তাকে দার্শনিক পরিভাষায় নিরপেক্ষবাদ বলা হয়ে থাকে। নিরপেক্ষর দার্শনিক অর্থ, তাত্ত্বিক অর্থ হচ্ছে, ‘সনাতন’ বা ‘সত্য’। কারণ নাদ ব্রহ্মই সঙ্গীত। আর নাদব্রহ্ম হচ্ছে অনাদি নির্গুণ, নিরাকার, এর শেষ নেই, স্বতঃ মানব মনে আসে স্বরের ধারা তাকেই বলে নিরপেক্ষ সঙ্গীত। এর কোন নির্দিষ্ট রূপ নেই। এই সঙ্গীত হচ্ছে বিমূর্ত, এ আসে কল্পনার দ্বারা, যে কল্পনা প্রতি মূহূর্তে তার রূপের পরিভাষা পরিবর্তন করে থাকে। আবার তার মধ্যে আসে রূপকৈবল্যবাদ, রূপের আভাস অরূপের মধ্যে। নিরপেক্ষবাদে, কল্পনাবাদ, বিমূর্তবাদ, রূপকৈবল্যবাদ মাধ্যমে শিল্প চিহ্নিত হয় আর নিজস্ব কল্পনা দ্বারা এক রাগ প্রতিটি শিল্পীর পরিবেষণায় ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দিয়ে থাকে যেমন একটা ছোট উদাহরণ থেকে বোঝা যায় কল্পনাবাদের রূপ।
রাগ বেহাগ-
i. পানিসাগা, মা গা, মাগারে সা।
ii. সামা গা (সা), নিসাগারেসা।
iii. নিসা গামাপা, গা মা গা
iv. গা মা পা, গা মা গা, পা রে গা মা পা
V. গাসা, নিপা, মা পা, মাগা মাগারেসা।
এই স্বরগুলি বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন স্বর থেকে আরম্ভ। কারণ মানুষ তার নিজের কল্পনা থেকে যখন যেমন ভাবে, তখন সেইভাবে সে সুরু করে থাকে। অথচ প্রতিটি স্বর সমষ্টি একই রাগকে, একই রাগরূপকে দেখায়েচ্ছে। মাত্র নিরপেক্ষবাদ কল্পনার জন্য সবসময় একই ভাবে পরিবেষণা হয় না। কারণ কল্পনা শক্তিই রাগরে রূপ প্রকাশের প্রধান বাহক ভাবে বিবেচ্য। এই ধারাতে রাগের সময়ও তেমন মান্যতা রাখে না। এখানে আবেগ-অনুভূতি-প্রথাগত যুক্তির তেমন প্রাধান্য বা স্থান নেই বললেই চলে। কারণ এ সমস্তর উপরে ‘প্রতিভা’ বিষয়টির এক মৌলিক বৈশিষ্ট্য আছে। অপরপক্ষে কল্পনার মধ্যে এ সমস্ত থাকা একান্তই আবশ্যক। কারণ আমাদের শাস্ত্রীয় সংগীত ধারাটাই রূপের মধ্যে অরূপের ভাব খোজাঁ তাই এখানে কবিগুরু দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘সংগীতচিন্তা’র ‘সংগীতের মুক্তি’ প্রবন্ধে বলেছেন “সংগীত জিনিসটাই ভূমার সুর, তার বৈরাগ্য, তার শান্তি, তার গম্ভীরতা সমস্ত সংকীর্ণ উত্তেজনাকে নষ্ট করিয়া দিবার জন্যই। এই একই কারণে হাস্যরস আমাদের সংগীতে আপস জিনিস নয়। কেননা বিকৃতিকে লইয়াই বিদ্রূপ।”২৪ “আবার বলছেন যেখানে সংগীতই মূখ্য সেখানে তার সঙ্গের কথাটি কেবলই বলিতে থাকে, আমি কেহই না, আমি কিছুই না, আমার মহিমা সুরে।”২৫ এইজন্য উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে গানের কথাটার তেমন গুরুত্ব থাকেনা। যেমন “আলাহিয়া বিলাবল” রাগের গান-
মন হরবা রে,
মৈকা হরি হরি চুড়িয়াঁ দে হো মগাঁয়,
রগ রগীলী ঔর চটকীলী
তাপর ধতক টংকেলী। ইত্যাদি
ভাবার্থ – “হে প্রিয়তম, আমার জন্য রঙ চঙে আকর্ষণীয় সবুজ চুড়ি আনিয়ে দাও।”২৬
এই সামান্য কথাটাকে একটি রাগের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে বহু মনকে শান্ত করে রাখা খুবই কঠিন কাজ। শিল্পী তার সুরের যাদুকরীতে সামান্য বাণীকেও স্বর্গীয় ভাবধারাতে আনীত করে থাকে যা কল্পনা প্রসূত। এই “কল্পনা বুদ্ধিজাত নয়, কল্পনা বুদ্ধি এবং ইন্দ্রিয় নিরপেক্ষ একটি স্বাধীন স্বয়ং সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র মানবিক বৃত্তি যা নিরন্তর সৃজনশীল।”২৭ নিরপেক্ষবাদীর দ্বিতীয়-তৃতীয় ধাপ হচ্ছে বিমূর্তরূপবাদ (Formalism), রূপকৈবল্যবাদ (Configuranalism) এই দুই ধারা বা রীতি বলে “কল্পনা আমাদের কাছে শিল্পসৃষ্টির সূত্র বটে, কিন্তু যে রূপ সৃষ্টি, তাই আমাদের কাছে প্রধান বিচার্য, কল্পনার রাস্তা ধরে হাঁটতে রাজি আছে, কিন্তু আমাদের ধ্যান কল্পনাতেই পর্যবসিত নয়, আমাদের ধ্যান নির্দিষ্ট রয়েছে রূপের প্রতি।”২৮ সংগীতে দার্শনিক রূপরেখার শেষ কথা বলে কিছু হয়না, তাই যদি প্রারম্ভের কথা বলে ধরি তবে ‘প্রতিভাবাদ’ কে ভাবা যেতে পারে, যার কোন যুক্তিগ্রাহ্য সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়না। কিছু ব্যক্তি বা শিল্পী আছেন যাদের শিক্ষা ছাড়াও জ্ঞান ভরপুর থাকে মননে-চিন্তনে। একে রহস্যও বলা যেতে পারে। এর মধ্যে আছে, প্রজ্ঞাবাদ ও সংজ্ঞাবাদ এই দুই শিল্পীর শিল্প অতি প্রখর থাকে। সুতরাং প্রাথমিক শিক্ষার পরেই দেখা যাচ্ছে একজন যেটুকু গ্রহণ করেছিল সেটুকু নিজের যুক্তি, বুদ্ধিদ্বারা, সম্পূর্ণ যুক্তি দ্বারা এসব বোঝানো যাবে না। তার জন্য দরকার উপযুক্ত প্রতিভা। কাজেই জীবনের সূরের থেকে সমস্ত সঙ্গীত শিল্প এই দার্শনিক ভিত্তিভূমির উপর স্থাপিত। কাজেই শাস্ত্রীয়সংগীত ক্ষেত্রে দার্শনিক ভাবধারার মৌলিক চিন্তাগুলির আলোচনা খুবই দায়িত্বপূর্ণ। দার্শনিক ভাবধারায় নির্দিষ্ট কিছু রাগের রূপ বিভিন্ন সংগীত শিল্পীদের কণ্ঠে।
তথ্যসূচী –
১. ভট্টাচার্য্য, অরুন- ‘সুন্দরের ধারণা, উত্তরসূরী প্রকাশনী, ইন্দিয়ান-১৯৮১, পৃ. ২২৬
২. ভট্টাচার্য্য, উমেশচন্দ্র ও ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ‘গীতবিতান’, পূজা ধর্মীয়, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, ১৩৯৮ পৃ. ২৩৮
৩. মুখোপাধ্যায়, তরূণ ‘নন্দনতত্ত্ব জিজ্ঞাসা’, পুস্তক বিপণী, ১৯৯৪, পৃ. ২৩০
৪. ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ, ‘সাহিত্য ধর্ম’, সাহিত্যের পথে, বিশ্বভারতী, পৃ. ৭৪
৫. ঠাকুর, শ্রী অবনীন্দ্রনাথ, ‘বাগেশ্বরী প্রবন্ধাবলী’, স্বপ্না প্রিন্টিং ত্বাকর্স, কলকাতা ১৯৫৯, পৃ. ১১০
৬. ভট্টাচার্য্য, অরূণ- ‘রাগ সংগীতের ভাবরূপ, উত্তরমুখী প্রকাশনী, ১৯৮১, পৃ. ১৯০
৭. ভট্টাচার্য্য, অরূণ- ‘রাগ সংগীতের ভাবরূপ, উত্তরমুখী প্রকাশনী, ১৯৮১, পৃ. ১৯০
৮. স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ-‘রাগ ও রূপ’ (উত্তর ভাগ), শ্রী রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ, কলকাতা-৫, ১৯৯১, পৃ. ১৯
৯. স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ, ‘রাগ ও রূপ’ (পূর্ব ভাগ) শ্রী রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ, দার্জিলিং, ১৯৬৫, পৃ. ১৯৮
১০. স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ, ‘রাগ ও রূপ’ (পূর্ব ভাগ) শ্রী রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ, দার্জিলিং, ১৯৬৫, পৃ. ১৯৯
১১. স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ,’রাগ ও রূপ’ (পূর্ব ভাগ) শ্রী রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ, দার্জিলিং, ১৯৬৫, পৃ.২০৭
১২. স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ, ‘রাগ ও রূপ’ (পূর্ব ভাগ) শ্রী রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ, দার্জিলিং, ১৯৬৫, পৃ. ২০৮
১৩. ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ-‘সংগীত চিন্তা’ বিশ্বভারতী সংগীত সমিতি- ১৪২১, পৃ. ১০
১৪. ভট্টাচার্য্য, অরূণ- ‘সংগীতে সুন্দরের ধারণা’ – উত্তর পূর্বীপ্রকাশন, ১৯৮১, পৃ. ১৪৮
১৫. সেনাপতি, ডঃ মোহন চরণ- ‘রাগ সংগীত’ (২য় ভাগ), উৎকল সংগীত মহাবিদ্যালয়, ভূবনেশ্বর, ০২, ১৯৯২, পৃ. ৭১
১৬. পণ্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখণ্ড ‘ক্রমিক পুস্তক মালিকা’ (২য় ভাগ), সংগীত কার্যালয়, হাতরস, ২০০৪, পৃ. ২২১
১৭. মজুমদার, দিপ্তী প্রকাশ-জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ ও সংগীত শিক্ষা, আমার ভারতী প্রকাশনী, ২০০৪, পৃ. ৫২
১৮. মজুমদার, দিপ্তী প্রকাশ- ‘জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ ও সংগীত শিক্ষা; আমার ভারতী প্রকাশনী, ২০০৪, পৃ. ৫৩
১৯. মজুমদার, দিপ্তী প্রকাশ- ‘জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ ও সংগীত শিক্ষা; আমার ভারতী প্রকাশনী, ২০০৪, পৃ.২৪৯
২০. মজুমদার, দিপ্তী প্রকাশ- ‘জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ ও সংগীত শিক্ষা; আমার ভারতী প্রকাশনী, ২০০৪, পৃ. ২৫০
২১. বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখণ্ড-‘ক্রমিক পুস্তক মালিকা’ (১ম ভাগ), সংগীত কার্যালয়, হাসরস, পৃ. ২১
২২. ভট্টাচার্য্য, অরূণ-‘সংগীতে সুন্দরের ধারণা, পৃ.২৫২
২৩. ভট্টাচার্য্য, অরূণ-‘সংগীতে সুন্দরের ধারণা, পৃ.২৫৪
২৪. ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ – ‘সংগীত চিন্তা, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, পৃ. ৪৯
২৫. ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ- ‘সংগীত চিন্তা’ বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, পৃ. ৪৮
২৬. মজুমদার, দিপ্তী প্রকাশ-‘জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ ও সংগীত শিক্ষা; আমার ভারতী প্রকাশনী, ২০০৪, পৃ. ৩৫
২৭. ভট্টাচার্য্য, অরূণ- ‘সঙ্গীত সুন্দরের ধারণা’ পৃ.২৫৮
২৮. ভট্টাচার্য্য, অরূণ- ‘সঙ্গীত সুন্দরের ধারণা’- পৃ.২৫১