November 1, 2025

Shaktism and spirituality -Dr. Srabani Sen

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

Associate Professor, Department of Music, Tarakeswar Degree College

e-mail- dr.ssen8693@gmail.com  Mobile no- 6290855102

Sakta philosophy a key branch of Hinduism, focuses on the worship of sakti, the divine feminine energy. The concept of sakti and its relation to spirituality. The eighteenth century in Bengali literature was a significant period for Sakta padavali, a genre of devotional poems dedicated to the Hindu Goddess, in the form of kali. The society of eighteenth century adopted Sakti Sadhana in a new form. Some people adopted the goddess as form of mother or daughter. Sakta poet Ramprasad Sen adopted God Kali as her mother, in sometime  daughter or supreme power of Universe. Ramprasad Sen was considered to be the first poet-devout of this poetic tradition. Ramprasad Sen and Kamalakanta Bhattacharyya composed many sakta songs.The style,from the diction and thematic  variety of Sakta songs took shape and maturity in their hands. Kamalakanta decorated the sakta song with artistic workmanship which was originally built by Ramprasad. Agamani, Vijaya, Bhakter Akuti etc. were the creations of Ramprasad in this Padavali tradition and Kmalakanta expanded it.

শাক্তধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা

একটি বিশ্বাসকে অবলম্বন করে  যখন একটি ধর্মমত গড়ে ওঠে তখন তার মধ্যে মুখ্য  একটি ধারা থাকলেও তার সাথে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন উৎস থেকে নানা ধারা যুক্ত হয়ে তাকে আরও পরিপুষ্ট করে তোলে। ধর্মমতের ক্রমাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঘটতে থাকে সমন্বয় ও স্বীকরণ, ফলে মূলধারা আর উপধারা চেনা শক্ত হয়ে ওঠে। ভারতবর্ষের শাক্তধর্ম ও শাক্তসাহিত্যের সম্বন্ধেও সেই কথা বলা চলে। আমরা শাক্ত সাহিত্যের মধ্যে উমাকে পাই, তিনি পার্বতী গিরিজা; আমরা দক্ষ-কন্যা সতীকে পাই- তিনি দশমহাবিদ্যা রূপে রূপান্তরিতা; একান্ন মহাপীঠে তার একান্ন দেহাংশ অবলম্বনে একান্ন দেবী; অসুর নাশিনী চন্ডী – তিনি দুর্গতিনাশিনী দুর্গা, অভয়দায়িনী অভয়া, মঙ্গলকারীণী সর্বমঙ্গলা; আর কালিকা বা কালীদেবীকে পাই শাক্তসাধকগণের আরাধ্যারূপে। এছাড়াও পুরাণ তন্ত্রের মধ্যেও একই মূল দেবীর সাথে অভিন্ন-রূপে দেবীর নানা রূপভেদে এমনকি মনসা, শীতলা, ও ষষ্ঠী প্রভৃতি আঞ্চলিক দেবীগণকেও মূল দেবীর সঙ্গে অভিন্না রূপে পূজিত হতে দেখা যায় যার উল্লেখ আমরা শাক্তধর্ম ও সাহিত্যের মধ্যে পেয়ে থাকি।

অষ্টাদশ শতাব্দী ও তার পরবর্তীকালে শক্তি তত্ত্বকে কেন্দ্র করে শাক্ত পদাবলী রচিত হলেও শক্তি তত্ত্বের একটি ধারা বহু প্রাচীন যুগ থেকে ভারতীয় জীবন, সভ্যতা, ঐতিহ্য সাধনার সাথে যুক্ত। ভারতীয় সাধনার দুটি ধারা- একটি পুরুষ প্রধান, অপরটি মাতৃপ্রধান। বাংলাদেশের জনসমাজে অনেক প্রাচীনকাল থেকে মাতৃতান্ত্রিকতার প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। মনে করা হয় মাতৃপূজা ও শক্তিসাধনা বৈদিক বা আর্যসংস্কৃতিজাত নয়, ভারতবর্ষের আর্যেতর আদিম জাতিগণের মধ্যে থেকে এই মাতৃ পূজার শক্তিসাধনা ক্রমে ক্রমে হিন্দুসমাজ-সংস্কৃতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এবং আর্যগণের তত্ত্ববুদ্ধির দ্বারা মন্ডিত হয়ে উচ্চকোটির জনগণের মধ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

বলা যায় সভ্যতার আদি স্তর থেকেই  মাতৃকা- মূর্তির পূজা প্রচলিত আছে। এমনকি মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পায় আবিষ্কৃত ভারতবর্ষের প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন স্বরূপ যে সমস্ত স্ত্রীমূর্তির সন্ধান পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে অনেকগুলো মাতৃদেবী মূর্তি। তাই বলা যায়  ভারতবর্ষে মাতৃকা মূর্তির পূজা যেমন  প্রাচীন ও সর্বব্যাপী, পৃথিবীর অন্য কোথাও আর দেখা যায় না।  ভারতবর্ষেও মাতৃদেবীর মূর্তি হল  মাতা পৃথিবীর মূর্তি।  ভারতবর্ষের অনার্য  জাতি গোষ্ঠীর দ্বারা পূজিতা মাতৃকা দেবী হলেন শস্য ও প্রজনন শক্তির প্রতীক। পরবর্তীকালে নানা জাতি গোষ্ঠীর সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আদান-প্রদানের ফলে শক্তি পূজা কোথাও উন্নত, কোথাও অবনত, কোথাও বা সমীকৃত হয়েছে আবার কোথাও নব রূপান্তর লাভ করেছে।

শক্তি দেবীর মহিমার বিশেষ প্রতিষ্ঠান ও প্রকাশ দেখা যায় তন্ত্র শাস্ত্রে । তন্ত্র বলতে  সাধন শাস্ত্র বোঝায়। শক্তিতত্ত্ব ও  উপাসনাপদ্ধতি বর্ণনাই তন্ত্রের উদ্দেশ্য। তন্ত্রের প্রধান উপাস্য মাতৃকাশক্তি। তন্ত্রে আর্য  ও আর্যেতর ধারার সংমিশ্রণ ঘটেছে বলা যায়।  আচারের সঙ্গে আধ্যাত্মিকতাও যুক্ত হয়েছে। তন্ত্রের ধ্যান, স্তব-স্তুতি, যজ্ঞ, হোম সমস্তই জগন্মাতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। তন্ত্রকে ‘শক্তি, উপাসনার কল্প ভান্ডার’ বলা যেতে পারে। মাতৃ উপাসনার এই ধারা পরবর্তীকালে মঙ্গলকাব্য, শিবায়ন কাব্য, কালিকামঙ্গল, অনুবাদিত  রামায়ণ-  ভাগবত প্রকৃতির মাধ্যমে শক্তিগীতি পদাবলীতে পরিণতি লাভ করেছে। শাক্ত পদাবলী শক্তিসাধনার সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শে রচিত।

তন্ত্রের মধ্যে দার্শনিক মতবাদের চেয়ে বড় হল দেহকেই যন্ত্রস্বরূপ করে কতগুলো গুহ্য সাধনপদ্ধতি। এই সাধনপদ্ধতিগুলো পরবর্তীকালের লোকায়ত বৌদ্ধ ধর্মের সাথে মিলে-মিশে বৌদ্ধ তন্ত্রের সৃষ্টি করেছে, যদিও বৌদ্ধ ‘প্রজ্ঞা- উপায়ে’র পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনাশ্রিত সাধনা, আর হিন্দু শিব-শক্তির পরিকল্পনা এবং দুয়ের সাধনার মধ্যে বিশেষ কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। এই তন্ত্রসাধনার একটি বিশেষ ধারা বৌদ্ধ দোহাকোষ এবং চর্যাগীতিগুলোর মধ্যে দিয়ে যে সহজিয়া রূপ ধারণ করেছে, তারই ঐতিহাসিক ক্রম-পরিণতি বাংলাদেশের বৈষ্ণব সহজ সাধনায় এবং বিশেষ বিশেষ বাউল সম্প্রদায়ের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়।

বাংলার তন্ত্র সাধনার  আশ্রয় শক্তি দেবীর প্রথম রূপের আভাস পাওয়া যায় ঋকবেদের একশ পঁচিশ সূক্তের দেবীবন্দনার মধ্যে, যার মধ্যে শক্তি দেবীর বীজ নিহিত ছিল।  এছাড়াও ঋকবেদের রাত্রিসূক্তে রাত্রিদেবীর বন্দনাকেও পরবর্তীকালে মাতৃদেবীর সাধনার উৎস বলে ধরা হয়ে থাকে। রাত্রিদেবীর কৃষ্ণবর্ণ ও তার সর্বকালব্যাপী রূপ তন্ত্রের দেবীর আদিরূপকেই তৈরী করেছে। সাধকেরা মনে করেন বেদ থেকেই তন্ত্রের উদ্ভব। বেদের মধ্যেই তাঁরা সন্ধান করেছেন তন্ত্রের উৎসের। কেউ কেউ মনে করেন বেদের যজ্ঞাগ্নি থেকেই শক্তিদেবীর উদ্ভব। অথর্ববেদেও শক্তির এমন রূপের আভাস পাওয়া যায়। অনেকে মনে করেন অথর্ববেদই শক্তি সাধনার উৎস। অথর্ববেদে শক্তি সাধনার তত্ত্ব, শাক্ত উপাসনা, তন্ত্রাচার, তান্ত্রিক রীতিতে দীক্ষাদানের প্রণালী, বিভিন্ন জাদুশক্তির উদ্ভাবনের প্রণালী ও মন্ত্রের উল্লেখ আছে। সেই কারণে অথর্ববেদকে শক্তি সাধনার আদি উৎস গ্রন্থ বলে ধরা হয়। অথর্ববেদের বিভিন্ন শ্লোকে পৃথিবীর সন্তানবৎসলা, মঙ্গলময়ী মাতৃমূর্তির বর্ণনা পাওয়া যায় যা পরবর্তীকালের শাক্ত সাহিত্যেও অব্যাহত ধারায় বিরাজমান। বিভিন্ন পুরাণ, উপ-পুরাণে উমা-সতী-দুর্গার-ধারা কালীর ধারার সঙ্গে মিশে শাক্ত সাধনায় কালীর প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মার্কন্ডেয় চন্ডীতে চন্ডী ও কালীর আলাদা রূপ পাওয়া যায়। অসুর বিনাশিনী চণ্ডীর সঙ্গে কালী এখানে অসুরদের রক্তবীজ গ্রহণকারিণী – কালীর এই ভয়ংকর রূপ ফুটে উঠেছে। কালীর এই ভয়ঙ্করী রূপ এবং তার পদতলে শিবের মূর্তিকেই সাধকরা তন্ত্রসাধনায় আশ্রয় করেছেন।

রামপ্রসাদের গানে কালীর পায়ের স্পর্শে অসুরের শব শিবের রূপ ধারণ করেছে –

  শিব নয় মায়ের পদতলে।

  ওটা মিথ্যে লোকে বলে।।

দৈত্য বেটা ভূমে পড়ে,

 মা দাঁড়ায়ে তার উপরে,

     মায়ের পাদস্পর্শে দানবদেহ

       শিব রূপ হয় রণস্থলে।।… ১

 কালীর রূপের বর্ণনা পাওয়া যায় তন্ত্রসাধনার কোষগ্রন্থ ‘মহানির্বাণতন্ত্রে’। এই গ্রন্থে কালীর ভয়ঙ্করী রূপ, সাধনার ইতিবৃত্ত, কালিকা তথা আদিশক্তির সাধনায় নারীদেহের ভূমিকা ইত্যাদির বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। এইভাবে বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে কালী তন্ত্রসাধনার প্রধান দেবী ওঠে।  

 বাংলা সাহিত্যের দীর্ঘ মধ্যযুগে যে সমস্ত সাহিত্য রচনা হয়েছিল তার বেশিরভাগেরই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অবলম্বন ছিল দেবদেবী। মধ্যযুগের মঙ্গল কাব্যে আমরা যে সব দেবীর আবির্ভাব, পূজাপ্রতিষ্ঠা ও পূজাপ্রসার লক্ষ্য করি তারা স্থানীয় দেবী, অনেকাংশে চন্ডীমঙ্গলের চন্ডীও। মঙ্গলকাব্যের ভেতর দিয়ে আখ্যায়িকা  কাব্য রচনার ধারাটি খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে খণ্ডগীতিকাব্য রচনার মধ্যে একেবারে লুপ্ত হয়ে যায়। বৈষ্ণব গীতিকাব্যগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাবই এর একমাত্র কারণ। অষ্টাদ শতাব্দীর শেষ ভাগে বাংলা সাহিত্যের সব বিভাগেই বৈষ্ণব গীতিকবিতার প্রভাব অব্যাহত হয়ে ওঠে। এমনকি, সমসাময়িককালে রচিত ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল ও অন্যান্য  খন্ডগীতির প্রভাবের বশবর্তী হয়ে, যুগোচিৎ কতগুলো খন্ডগীতিকবিতা রচিত হয় যা শাক্তপদাবলী নামে পরিচিত হয়। দেবীপূজারূপে শাক্তধর্মকে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত বাংলাদেশে একটি গৌণ ধর্ম বলেই মনে করা হয়, যদিও দেহকে অবলম্বন করে এবং শক্তিকে অবলম্বন করে তান্ত্রিক সাধনা এই যুগে একটি বৃহৎ সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শাক্ত ধর্ম বাঙালির মধ্যে ব্যাপক ধর্মরূপ গৃহীত হয় খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতক থেকে।

সামাজিক প্রেক্ষাপটের বিচারে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে চৈতন্যের আন্দোলন ছিল ব্রাহ্মণ ও বিধর্মী শাসকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানবতার লড়াই। এই দুইয়ের বিরুদ্ধে চৈতন্য আপামর গরীব, অচ্ছুত, নিপীড়িত, শোষিত মানুষকেও মানবপ্রেমে বদ্ধ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বৃন্দাবনের গোস্বামীরা চৈতন্যের মানব প্রেমের ধর্মকে গৌড়ীয় ধর্মের শাস্ত্রীয় রূপ দেন। নবদ্বীপ সহ বাংলা, বৃন্দাবন সব জায়গা চৈতন্যের ভক্তিধর্মে প্লাবিত হয়ে উঠে। এই প্রেম ও ভক্তির প্রাবল্য শুধু সমাজ নয়, সাহিত্যও বৈষ্ণবতাকে ছাপিয়ে রচিত হওয়া সম্ভব ছিল না। আঠারো শতকে তৎকালীন রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় পরিবেশে শাক্ত সাধনা পুনরায় তন্ত্রসাধনার মধ্যে দিয়ে জনপ্রিয় ওঠে। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে প্রাধান্য বিস্তার করে ব্রাহ্মণ্য পৌরাণিক সংস্কৃতি। সমাজে ব্রাহ্মণ্য রীতিনীতি ও বিধিনিষেধ জনজীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে। লোকোদেবতার পরিবর্তে পৌরাণিক দেবতা সমাজে প্রধান্য বিস্তার করে। ফলে সমাজের মানুষের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠে পৌরাণিক সংস্কৃতি। এই শতকে তন্ত্রসাধনার উদ্ভবের এই ধর্মীয় পালাবদল ছিল একটি প্রধান কারণ।

আঠারো শতকের শুরুতে  বৈষ্ণবীয় প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয় বাংলা সমাজ ও সাহিত্য। শুরু হয় নতুন ধারায় সাহিত্য রচনা, লেখা হয় শিবায়ন, ধর্মমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, শাক্তসাহিত্য। সামাজিক, ধর্মীয় প্রেক্ষাপটেরও পরিবর্তন শুরু হয় ।  শাসকের অত্যাচার ও তাঁদের শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট মানুষ কালীকে মা ও মেয়ের সম্পর্কে বেঁধে মুক্তি পেতে চায়। বৈষ্ণব ধর্মে মুক্তির পরিবর্তে আজীবন রাধাভাবে বা  সখীভাবে ভক্তের ভগবানকে জন্ম-জন্মান্তর ধরে সেবা করে যাবার যে কামনা, অষ্টাদশ শতকে  মানুষ সেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তি চায় মায়ের কাছে। খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতক থেকে মাতৃপূজা এবং শক্তি সাধনার  নবরূপ লাভ করে এবং এই নবরূপই বাংলার সমাজ- সংস্কৃতিকে গভীরভাবে প্রভাবান্বিত করে।

শাক্ত পদাবলী শক্তিতত্ত্বেরই সাহিত্যরূপ। বাংলার শাক্ত সাধনার একমাত্র সর্বেশ্বরী দেবী কালিকা। অষ্টাদশ শতকের পূর্বে শাক্তপদের উদ্ভব হয়নি। বহু মাতৃসাধক সাধনার অঙ্গ হিসেবে পদ রচনা করেছেন যা মাতৃসংগীত, যা শাক্ত পদাবলী নামে সাহিত্যে স্থান লাভ করেছে। সাধারণ্যে সেগুলো উমাসংগীত, শ্যামাসঙ্গীত নামে প্রচলিত। অষ্টাদশ শতকের বাঙালি কবিরা  বাৎসল্যের গভীর হৃদয়ানুরাগে সিক্ত করে তাকে কাব্য সংগীতের উপজীব্য  বিষয় করে তোলেন।  পুরাণের ভয়ংকরী শক্তি মধুরা রূপে দেখা দিলেন বাঙালি কবির সৃষ্টিতে। এই দিক থেকে শাক্তসংগীতগুলো বাঙালি জীবনের এক নবতম আবিষ্কার বলা যায়।

মায়ের ভীষণা মূর্তিকে বাঙালি কবিরা মধুর করে তুলেছেন-

“রাঙ্গা কমল রাঙ্গা কোরে, রাঙ্গা কমল রাঙ্গা পায়।

রাঙ্গা মুখে রাঙ্গা হাসি,, রাঙ্গা মালা রাঙ্গা গায়।।”…..২

অষ্টাদশ শতকের শেষ দিক থেকে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত এই ধারায় শত শত বাঙালি কবি ও সংগীত কার গান রচনা করেছেন। বৈষ্ণব পদাবলীর প্রভাব ছিল এই গীতিধারার প্রবর্তনে এবং বৈষ্ণব পদসংগীত রচনায় ভাটা পড়লে শাক্তপদই বাংলা গানের ক্ষেত্রে নতুন প্রবাহ রচনা করে।

শাক্ত কবিদের প্রার্থনা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুক্তির জন্য প্রার্থনা। শাক্ত কবিগণ দেবীকে দেখিয়েছেন মাতৃরূপে। এই পদগুলোর মাধ্যমে কবিরা যেমন নিজেদের হৃদয় উন্মোচন করেছেন, যেমনভাবে ভক্তিরস-পিপাসু বাঙালী হৃদয় তাদের অন্তরের নিভৃতে এসব পদ গ্রহণ করেছে তা সম্ভবত বাংলা সাহিত্যে অন্য কোন ক্ষেত্রে ঘটেনি। মাতৃ চরণে শরণ, মায়ের চরণে  সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের নির্ভরতাই যে দুঃখকে জয় করার শ্রেষ্ঠ উপায় – এই আশ্বাসই তাঁরা গানের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে লাগলেন।  শাক্ত পদাবলী বলতে যে বিশিষ্ট সংগীতগুলো আমরা বুঝি, অষ্টাদশ শতকের কবি রামপ্রসাদ সেনের হাতে তা রূপ পরিগ্রহ করে। সাধন-সঙ্গীত হিসেবে শাক্তসংগীত রচিত হলেও এগুলো কোন সম্প্রদায়ের নয়, হৃদয়ের অকৃত্রিম আকুতির প্রকাশে তা যেন সর্বসাধারণের প্রাণের সম্পদ হয়ে উঠেছে।

শাক্ত পদাবলীতে দেবী মূলত দুটি ধারায় অর্চিতা। একদিকে তিনি চন্ডী কন্যারূপিনী উমা, অন্যদিকে তিনি শ্যামা। উমাকে কেন্দ্র করে আগমনী- বিজয়া অংশ, আর শ্যামাকে কেন্দ্র করে জগজ্জননীর রূপ, ভক্তের আকুতি, মন দীক্ষা প্রভৃতি অংশ রচিত। এই উমা – পার্বতী, দক্ষ কন্যা সতী, দুর্গা, চণ্ডীকা ইত্যাদি নানা নামে অভিহিতা। পার্বতী, উমা, সতী, দুর্গা, চন্ডিকার ধারা মিলিত হয়ে পুরাণ-তন্ত্রে মহাদেবীর বিবর্তন দেখা যায় তা আবার মিলিত হয়েছে কালিকা বা কালি ধারায়। বাংলাদেশের শক্তি সাধনার ক্ষেত্রে এই কালি বা কালিকাই প্রধান।  সাধক কবি রামপ্রসাদ এই উভয় ধারার প্রতিষ্ঠাতা হলেও তাঁর পরবর্তীকালে  এই দুটি ধারা স্বতন্ত্রভাবে প্রবাহিত হতে থাকে। একটিতে গার্হস্থের সুর প্রবল আর একটিতে আধ্যাত্মিক সুর প্রবল হয়ে ওঠে। যার প্রথম ধারাটি আগমনী- বিজয়াগান ও দ্বিতীয় ধারাটি শ্যামাসংগীত নামে পরিচিত।

শাক্তপদাবলীর ভক্ত পাঠকের কাছে রামপ্রসাদ এবং কমলাকান্ত – এই দুটি নাম একেবারে অবিচ্ছেদ্য। সংস্কারহীন ভক্তি ও সহজমাতৃব্যাকুলতার প্রকাশে রামপ্রসাদের শ্যামা সংগীত বাংলা  ভক্তিগীতির ক্ষেত্রে একটি বিশিষ্ট  ধারার সৃষ্টি করেছে। রামপ্রসাদের লোকায়ত মাতৃব্যাকুলতাই তার শ্যামা সংগীতকে গভীরভাবে জনপ্রিয় করে তোলে। জগৎ জননী ও মানুষের মধ্যেকার ব্যবধান এই গানে ঘুচে গেছে এবং জগন্মাতা এখানে দেখা দিয়েছেন গৃহস্থকত্রী মাতৃরূপে। উপাস্য ও উপাসকের মধ্যে এখানে ব্যক্তিতান্ত্রিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। রামপ্রসাদ সেনের এক অসামান্য অবদান প্রসাদীসুর। রাগ সুরের সঙ্গে বাউল সুর মিশিয়ে তিনি যে সুরের ঢঙটি গঠন করেছিলেন তা  প্রসাদীসুর নামে খ্যাত। আগমনী নামে খ্যাত উমা সংগীতের ধারাটিও সূত্রপাত করেন কবিরঞ্জন রামপ্রসাদ।

রামপ্রসাদের মধ্যেই আমরা প্রথম লক্ষ্য করি, কালী-সাধনাকে সর্বপ্রকার গণ্ডির উর্দ্ধে উঠে তাকে একটা সর্বজনগ্রাহ্য রূপ দিতে। শ্যামাকে অবলম্বন করেই রামপ্রসাদ সেই পরম ব্রহ্মকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছেন, তাই শ্যামাই ব্রহ্ম। ব্রহ্ম নিরাকার, রামপ্রসাদও বলেছেন- ‘তারা আমার নিরাকারা’। অনন্তআকারে মধ্যে প্রতিভাত হয়েও মায়ের কোন আকার নেই-

শুধু ,তিমিরে তিমিরহরা!

                     হৃদি-পদ্ম উঠবে ফুটে, মনের আঁধার যাবে ছুটে,

                      তখন ধরাতলে পড়ব লুটে, তারা ব’লে হব সারা।।…. ২

পরব্রহ্ম-তত্ত্ব এবং কালী-তত্ত্বের মূলে একই তত্ত্ব রামপ্রসাদের এই ভাবদৃষ্টি পরবর্তী সব শাক্তসংগীতকারের উপর স্পষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল।

 যে নিরলঙ্কার ভাষায় মনের আকূতি সহজ করে তিনি মেলে ধরেছেন তাই এ জাতীয় সংগীতের আদর্শ হয়েছে এবং সেই ধরনের সংগীতই আবালবৃদ্ধবণিতার হৃদয় ভক্তিরসে আপ্লুত করেছে। শাক্তসংগীত উমার বাল্যলীলা, আগমনী, বিজয়া, জগজ্জননীর রূপ, মা কি ও কেমন, ভক্তের আকূতি, ইচ্ছাময়ী মা, করুণাময়ী মা, কালভয়হারিণী মা, লীলাময়ী মা, ব্রহ্মময়ী মা প্রভৃতি নানা পর্যায়ে বিভক্ত।

শাক্তপদাবলীর জগতে কবিরঞ্জন রামপ্রসাদ সেনের অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠত্ব। পদাবলী যেমন কীর্তন গানে নামান্তরিত হয়েছে, শাক্তপদাবলীও সেরূপ নামান্তর গ্রহণ করেছে ‘রামপ্রসাদী গানে’ বা কেবলমাত্র প্রসাদী গানে। শ্যাম-শ্যামার অভেদ তত্ত্বটি তাঁর কালী কীর্তন থেকে বোঝা যায়। ‘’ গিরিবর, আর আমি পারিনে হে’’, অথবা ‘‘মা ডাকিছে রে আয় সুরভি’’ প্রভৃতি কীর্তন ও ভজন গানে কালী বা উমার পরিবর্তে কৃষ্ণের শরণ – বলা যায় ‘‘ কালী কীর্তনের দেবলীলা ব্রজ-লীলারই নতুন রূপান্তর। শক্তিমূর্তির মধ্যে এই রূপ বৈষ্ণবীভাব ও  লীলার সৃষ্টি, প্রসাদের অভিনব সৃষ্টি। এরূপ সমন্বয়ের চিত্র কালী কীর্তনে পাওয়া যায়-

‘‘কালী হলি মা রাসবিহারী

     নটোবর বেশে বৃন্দাবনে।’’…৩

শুধু শ্যাম-শ্যামার অভেদ- তত্ত্ব নয়, অনুভূতির জগতে কালী, কৃষ্ণ, শিব, রাম- সবই তাঁর চোখে একাকার হয়ে গিয়েছিল। তিনি লিখেছেন-

“কালী ব্রহ্মময়ী গো

বেদাগম পুরাণে করিলাম কত খোঁজ তালাসি।

মহাকালী, কৃষ্ণ শিব রাম- সকল আমার এলোকেশী।

শিব-রূপে ধরো শিঙা, কৃষ্ণরূপে ধর বাঁশী

ওমা রাম-রূপে ধর ধনু, কালীরূপে কর অসি।।…. ৪

গভীর আধ্যাত্ম-অনুভূতির পদেও সারল্যই রামপ্রসাদের অলংকার। ভবসংসারে কালীর নামই সর্বাপেক্ষা সত্য, তা অনুধাবন করেছেন বলেই তাঁর রচনায় পাওয়া যায় –

“মন তোর এত ভাবনা কেনে।

        একবার কালী বলে বসরে ধ্যানে”।।….৫  

 উপমা ও রূপকের সরলতার মধ্যে দিয়ে তিনি সাধনার মর্ম-সত্য প্রকাশ করতে চেষ্টা করেছেন। ঘুড়ি ওড়াবার রূপকের মধ্যে “শ্যামা মা উড়াচ্ছে ঘুড়ি” বা “কালীপদ আকাশেতে” ইত্যাদি পদ বহুল প্রচারিত। এছাড়া  বাজিকরের রূপক, সুরা প্রস্তুত করার রূপক(ওরে সুরা পান করি না আমি), কৃষিকাজের রূপক (মন তুমি কৃষি কাজ জানো না) প্রভৃতি আজও  বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। মাতৃ সাধনার পথে সংসারিক দুঃখ দারিদ্র্যের প্রতিবন্ধকতা সম্বন্ধে বোঝাতে গিয়ে যেসব রূপক এবং উপমা  কবিরা প্রয়োগ করেছেন তাও একেবারে বাস্তব জীবনসম্ভূত।  যেমন-

“মা আমায় ঘুরাবি কত

          কলুর চোখ- ঢাকা বলদের মত।”

অথবা

 “মনরে কৃষিকাজ জানো না।

        এমন মানব- জমিন রইলো পতিত

        আবাদ করলে ফলত সোনা”।…. ৬

 আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে ভক্তি বলতে আমরা বুঝি উপাস্যের প্রতি পরম অনুরক্তি। ভক্তের আকুলতার মধ্যেই ভক্ত ও ভগবানের সম্বন্ধের প্রকৃতি নির্ভুলভাবে বোঝা যায়। ভক্তের আরাধ্যা দেবতার উদ্দেশ্যে আকুতি, তার প্রার্থনাও অন্তরকে উদ্ভাসিত করে তোলে। শাক্তকবিগণ দুঃখ থেকে মুক্তির জন্য মায়ের কাছে আকুতি জানিয়েছেন-

তনয়ে তার তারিণি

  ত্রিবিধ তপতে তারা, নিশিদিন হতেছি সারা,

বার বার বৃথা আর কাঁদায়ো না অনিবার।

অধম সন্তানের দুঃখ নাশ, ওমা দুঃখনাশিনি।…. ৭

দুঃখ যে মায়ের লীলামাত্র রামপ্রসাদের পদে পাওয়া যায় –

    ওমা কালী চিরকালই সং সাজালি এ সংসারে।

                         এ সং সাজায় নাইকো মজা, সাজা পাই মা অন্তরে।।…. ৮

দুঃখের শেষে থাকে মায়ের অভয় পদের প্রার্থনা, তাঁর নামের মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ। দাশরথি রায় তাই বলেছেন-

            মনেরই বাসনা শ্যামা শবাসনা, শোন মা বল বলি।

            অন্তিমকালে জিহ্বা যেন বলতে পায় মা কালী কালী।।…৯ 

 কালীরই রূপান্তর দুর্গতিনাশিনী দুর্গামূর্তির কাছে দুর্গানামের ধ্যান করে রামপ্রসাদ গেয়েছন-  

দুর্গা দুর্গা দুর্গা বলে তরে গেল পাপী কত।

                 একবার খুলে দে মা চোখের ঠুলি, দেখি শ্রীপদ মনের মত।। 

 ভক্তের মনে জাগে সত্যি যদি এমন দিন আসে, যেদিন এই চোখের ঠুলি খুলে যাবে, যেদিন প্রেমের অশ্রুতে মনের সব অন্ধকার ধুয়ে যাবে, যেদিন হৃদয় ভক্তিতে পদ্মের মতো ফুটে উঠবে মায়ের পায়ে নিবেদিত হওয়ার জন্য সেদিনের কথা কল্পনা করে রামপ্রসাদ অভিভূত হয়ে পড়েছেন। কবির এই আকুতি যেমন আন্তরিক তেমনি হৃদয়স্পর্শী-

এমন দিন কি হবে তারা,

                   যবে তারা তারা বলে তারা বেয়ে পড়বে ধারা।।

                            হৃদিপদ্ম উঠবে ফুটে,

                           মনের আঁধার যাবে টুঁটে,

                  তখন ধরাতলে পড়বো লুটে, তারা বলে হবো সারা।।…. ১০

রামপ্রসাদ যেমন তাঁর আগমনী- বিজয়ার পদে, অসংখ্য রূপকাশ্রিত পদে, সমন্বয়ের সুরে আপামর ভক্ত বাঙালিকে মুগ্ধ করেছেন – কমলাকান্তও তাঁর সুললিত পদমাধুর্যে সাধারণ বাঙালিকে মাতিয়ে রেখেছেন। রামপ্রসাদের অনুভূতি অনেক গভীর ও তীব্র হলেও, কাব্যদেহ খুব প্রসাধিত নয় অন্যদিকে কমলাকান্তের অনুভূতি সর্বত্র গভীর না হলেও কাব্যদেহ নির্মাণে, সাহিত্য-সৌন্দর্যে তিনি সচেতন শিল্পী –

“ সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনমোহিনী গো মা।

তুমি আপন সুখে আপনি নাচ, আপনি দেও মা করতালি।।

আদিভূতা সনাতনী, শূন্যরূপা শশীভালি।

যখন ব্রহ্মাণ্ড ছিল না হে মা, মুন্ডমালা কোথায় পেলি।….”১১

 আবার কখনো তিনি তাঁর মাকে ‘সর্বনাশী’ বলে সম্বোধন করে প্রকৃত অভিমান প্রকাশ করেছেন-

“অশান্ত কমলাকান্ত বলে দিয়ে গালাগালি

                     এবার সর্বনাশী, ধরে অসি, ধর্মাধর্ম দুটোই খেলি।।” ১২

রামপ্রসাদের মত কমলাকান্তের পদেও সমন্বয় সুর প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে ফুটে উঠেছে। শ্যামাকে তিনি কোন নারী-তত্ত্ব বলে গ্রহণ করেন নি, শ্যামা একাধারে নারী-পুরুষ সবই – শ্যামা হলেন ‘পরম কারণ’। এই পরম–কারণ রূপেই ‘আদরিণী শ্যামা মা’ যোগী – ভক্তগণের হৃদয়ে লুকিয়ে থাকেন।  তিনি বলেছেন –

“জাননারে মন! পরম কারণ

কালী কেবল মেয়ে নয়,

সে যে মেঘের বরণ করিয়ে ধারণ

কখন কখন পুরুষ হয়।।….১৩

 মায়ের রূপ কালী না কৃষ্ণের কমলাকান্তের চোখে যেন সবই একাকার হয়ে গিয়েছে। কমলাকান্তের শক্ত পদের অনুভূতি সাহিত্যিক উৎকর্ষ লাভ করেছে এবং ভক্ত রসিক চিত্তে তা উপভোগের সামগ্রী হয়ে উঠেছে। শুধু সাহিত্যের বিচারে নয়, ঐতিহাসিক মূল্যের দিক দিয়েও এদের গুরুত্ব কম নয়।

অধ্যাত্মবোধের কবিতা হলেও শাক্তপদাবলী প্রধানত আন্তরিকতা এবং ব্যক্তিগত অনুভূতির তীব্রতায় যথার্থ কাব্য হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে। গীতি-কবিতা হিসেবেও শক্ত পদাবলী নিতান্ত মূল্যহীন নয়।

সংস্কারহীন ভক্তি ও সহজ মাতৃব্যাকুলতার প্রকাশ ঘটেছে বলে রামপ্রসাদের শ্যামা সংগীত বাংলা ভক্তিগীতি ক্ষেত্রে এক বিশিষ্ট ধারার সৃষ্টি করেছে। মাতৃব্যাকুলতার জন্য শ্যামা সঙ্গীতের এই অসীম জনপ্রিয়তা। রামপ্রসাদ প্রবর্তিত শাক্ত সংগীতের ধারা পরবর্তীকালে প্রায় নজরুল ইসলাম পর্যন্ত নানাভাবে নানা সংগীতকারের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়েছে। রামপ্রসাদের পরবর্তী   রামনিধি গুপ্ত বা নিধুবাবু বাংলা কাব্যগীতির ক্ষেত্রে এক যুগান্তরের প্রবর্তন ঘটান। শ্যাম বা শ্যামার মাহাত্ম্য বর্ণনা যা ছিল কাব্যগীতির প্রধান বিষয় তার পরিবর্তে মানুষের হৃদয় বেদনা গানে মুখ্য হয়ে ওঠে। অষ্টাদশ শতকের প্রায় শেষ থেকে বাংলা কাব্যগীতির ক্ষেত্রে দুটি ধারা সুস্পষ্ট হয়- একদিকে দেব-দেবীর মাহাত্ম্য বর্ণনা, আধ্যাত্মিকতার প্রকাশ; আর অন্যদিকে মর্ত্যমানবের জগৎকেন্দ্রিক পিপাসা। ক্রমে এই মানবকেন্দ্রিক সংগীতের ধারা সমৃদ্ধ হয়ে বহু শাখায়িত রূপ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলা কাব্য সংগীতের প্রধান অধ্যায়টি গড়ে তোলে।

তথ্যসূত্র

১। দাশগুপ্ত শশিভষণ, ভারতের শক্তি-সাধনা ও শাক্তসাহিত্য, কলিকাতা, সাহিত্য সংসদ, ১৩৬৭, পৃঃ–১০

২। দাশগুপ্ত শশিভষণ, ভারতের শক্তি-সাধনা ও শাক্তসাহিত্য, কলিকাতা, সাহিত্য সংসদ, ১৩৬৭,- পৃঃ-২৬৪

৩। বসু অরুণকুমার,নবসংস্করন শাক্তপদাবলী, গ্রন্থ বিকাশ,৯/৩ রামনাথ মজুমদার স্ট্রীট,কলকাতা ৭০০০০৯, জানুয়ারি ২০০১,পৃঃ- ৪৩

৪। দাশগুপ্ত শশিভষণ, ভারতের শক্তি-সাধনা ও শাক্তসাহিত্য, কলিকাতা, সাহিত্য সংসদ, ১৩৬৭,- পৃঃ- ৩৪

৫। দাশগুপ্ত শশিভষণ, ভারতের শক্তি-সাধনা ও শাক্তসাহিত্য, কলিকাতা, সাহিত্য সংসদ, ১৩৬৭,- পৃঃ-৩৫

৬। বসু অরুণকুমার,নবসংস্করন শাক্তপদাবলী, গ্রন্থ বিকাশ,৯/৩ রামনাথ মজুমদার স্ট্রীট,কলকাতা ৭০০০০৯, জানুয়ারি ২০০১,পৃঃ- ২১৬

৭। চট্টোপাধ্যায় ডঃ হীরেন – শাক্ত পদাবলীর রূপরেখা পৃঃ-২৬

৮। শশিভষণ দাশগুপ্ত, ভারতের শক্তি- সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য, কলিকাতা, সাহিত্য সংসদ, ১৩৬৭,  পৃঃ–২৭

৯। শশিভষণ দাশগুপ্ত, ভারতের শক্তি- সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য, কলিকাতা, সাহিত্য সংসদ, ১৩৬৭,  পৃঃ-৩৯০

১০। শশিভষণ দাশগুপ্ত, ভারতের শক্তি- সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য, কলিকাতা, সাহিত্য সংসদ, ১৩৬৭, পৃঃ–২৭২

১১। বসু অরুণকুমার,নবসংস্করন শাক্তপদাবলী, গ্রন্থ বিকাশ,৯/৩ রামনাথ মজুমদার স্ট্রীট,কলকাতা ৭০০০০৯, জানুয়ারি ২০০১,পৃঃ- ১৭৯

১২। শশিভষণ দাশগুপ্ত, ভারতের শক্তি- সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য, কলিকাতা, সাহিত্য সংসদ, ১৩৬৭, পৃঃ- ৩৮

১৩। শশিভষণ দাশগুপ্ত, ভারতের শক্তি- সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য, কলিকাতা, সাহিত্য সংসদ, ১৩৬৭, পৃঃ- ৪০

গ্রন্থপঞ্জি

১। ভারতের শক্তি- সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য, শশিভষণ দাশগুপ্ত

২। শাক্ত পদাবলীর রূপরেখা – ডঃ হীরেন চট্টোপাধ্যায়

৩। শাক্ত পদাবলী – ধ্রুবকুমার মুখোপাধ্যায়

৪। অরুণকুমার বসু-নবসংস্করন শাক্তপদাবলী