September 1, 2025

নতুন শিক্ষানীতি ২০২৪-২৫: চারুকলা শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু প্রশ্ন -রাহুল দেব মণ্ডল

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture

অধ্যাপক, নৃত্য বিভাগ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

Abstract

This paper critically examines India’s National Education Policy (NEP) 2020 and its revised framework of 2024–25 in relation to the future of fine arts and humanities education. While the policy emphasizes skill development, vocational training, digital learning, and the creation of a global workforce, it simultaneously marginalizes disciplines rooted in creativity, cultural plurality, and humanistic values. Drawing attention to institutions like Rabindra Bharati University, the study argues that the policy’s market-driven and technology-oriented framework poses a threat to traditional art forms, the guru-shishya pedagogy, and the philosophical vision of Rabindranath Tagore, who envisioned education as a means of holistic human development. The analysis highlights structural issues such as financial neglect of the arts, curriculum homogenization, reliance on online learning, and faculty recruitment challenges. The paper concludes that without safeguarding the autonomy of arts institutions and integrating cultural education into the mainstream curriculum, the NEP may erode India’s diverse artistic traditions and undermine the creative spirit essential for the making of complete human beings.

Key Words

National Education Policy (NEP) 2020; NEP 2024–25; Indian higher education; Fine arts education; Humanities; Rabindra Bharati University; Rabindranath Tagore; Guru-shishya pedagogy; Vocational education; Cultural plurality; Market-driven education; Creative learning; Educational reforms in India.


ভূমিকা

ভারতের নতুন শিক্ষানীতি ২০২০ এবং সাম্প্রতিক ২০২৪-২৫ সংস্করণ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ‘একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী’ করে তুলতে চায়। এর মূল লক্ষ্য হল প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত গুণগত শিক্ষা, দক্ষতা ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার প্রসার ঘটানো। কিন্তু এই নীতির কাঠামোতে যেভাবে বারবার ‘ব্যবহারিক’, ‘দক্ষতাভিত্তিক’ ও ‘কারিগরি’ শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে, তা এক ধরনের শিল্প-নির্ভর ও বাজারমুখী শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

ফলে মানবিক ও শিল্পকলা চর্চার ক্ষেত্রটি ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে — বিশেষ করে চারুকলা অনুষদ। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো যে প্রতিষ্ঠান রবীন্দ্রচেতনা ও শিল্প-সাহিত্যচর্চার ঐতিহ্য বুকে ধরে এগিয়ে চলেছে, সেই প্রতিষ্ঠানের নৃত্য, সংগীত, চিত্রকলা, নাট্যকলা প্রভৃতি বিষয় এই নতুন কাঠামোতে কীভাবে প্রান্তিক হয়ে পড়ছে — তা বিশ্লেষণ করাই এই লেখার উদ্দেশ্য।

ভারতবর্ষের শিক্ষা নীতি বারবারই দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাঠামোকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেছে। স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন থেকে শুরু করে জাতীয় শিক্ষা নীতি ১৯৬৮, ১৯৮৬, ১৯৯২-এর কর্মপরিকল্পনা, ২০০৫-এর ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক, ২০০৯-এর রাইট টু এডুকেশন, আর সাম্প্রতিক ২০২০ এবং ২০২৪-২৫ সংস্করণ — প্রতিটি পর্যায়ে শিক্ষানীতি নতুন রূপে এসেছে, দেশের প্রয়োজন ও সময়ের প্রেক্ষিতে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে — এই নতুন শিক্ষানীতি কি সত্যিই ভারতের চিরায়ত জ্ঞানচর্চা, শিল্প-সংস্কৃতিকে যথাযোগ্য স্থান দিচ্ছে? নাকি দক্ষতা-উন্নয়নবাজার-উপযোগী শিক্ষার মোড়কে মানবিক বিদ্যা ও চারুকলা অনুষদগুলো ক্রমেই প্রান্তিক হয়ে পড়ছে? বিশেষত, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনন্য চারুকলা-সংস্কৃতি-নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন আরও গভীর হয়ে ওঠে।

নতুন শিক্ষানীতি ২০২৪-২৫: কাঠামো ও মৌলিক লক্ষ্য

নতুন শিক্ষানীতি ২০২৪-২৫ এর মূলমন্ত্র — ‘Skill India’, ‘Digital India’ ও ‘Global India’-র স্বপ্নকে পূরণ করা। এই নীতি আগের ১০+২ কাঠামো ভেঙে ৫+৩+৩+৪ পদ্ধতিকে প্রবর্তন করেছে, যেখানে শিক্ষার স্তরগুলো বয়সভিত্তিকভাবে ভাগ করা হয়েছে — Foundational Stage, Preparatory Stage, Middle Stage, ও Secondary Stage

এর সঙ্গে রয়েছে —

  • মাতৃভাষা ভিত্তিক শিক্ষা: প্রাথমিক স্তরে স্থানীয় ভাষাকে গুরুত্ব।
  • প্রাথমিক সাক্ষরতা ও সংখ্যাজ্ঞান: তৃতীয় শ্রেণির মধ্যেই।
  • বাধ্যতামূলক ভোকেশনাল শিক্ষা: ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।
  • উচ্চশিক্ষায় একক নিয়ন্ত্রক সংস্থা: ইউজিসি, AICTE, NCTE মিলিয়ে HECI।
  • প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা: অনলাইন, ডিস্ট্যান্স, AI ও ডিজিটাল লার্নিং।

নীতির লক্ষ্য — একবিংশ শতাব্দীর গ্লোবাল ওয়ার্কফোর্স তৈরী করা, যেখানে থিওরি নয়, দক্ষতা ও বাস্তবজ্ঞান মুখ্য।

নতুন কাঠামোর মূল বক্তব্য

নতুন শিক্ষানীতির সবচেয়ে বড় কাঠামোগত পরিবর্তন হল ১০+২ পদ্ধতির পরিবর্তে ৫+৩+৩+৪ ধাপে ভাগ। শিশুর শৈশব থেকে শুরু করে কৈশোর ও যৌবন পর্যন্ত তার মানসিক ও শারীরিক বিকাশের স্তর ধরে পাঠ্যক্রম সাজানো হয়েছে। শুরুতেই মাতৃভাষায় শিক্ষা, মৌলিক সাক্ষরতা, সংখ্যা জ্ঞান, এবং দ্রুত দক্ষতা অর্জনের উপর জোর। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলকভাবে ‘ভোকেশনাল এডুকেশন’ বা কারিগরি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত।

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইউজিসি, AICTE, NCTE ইত্যাদি স্বতন্ত্র নিয়ামক সংস্থা বাতিল করে Higher Education Commission of India (HECI)-কে একক ছাতার নিচে আনা হয়েছে। এই কাঠামো আইন ও চিকিৎসা ছাড়া সকল উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রকে এক ছাতার নিচে পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে।

দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার ঢেউ: চারুকলার সাথে সাংঘর্ষিক?

শিল্পকলার প্রকৃতি কী?
চারুকলা — চিত্রকলা, ভাস্কর্য, নাটক, সংগীত, নৃত্য — এগুলি দক্ষতা মাত্র নয়, এগুলি সৃজনশীলতা, মানবিক বোধ ও আত্মিক পরিপূর্ণতার এক অনুপম মঞ্চ। কিন্তু NEP ২০২৪-২৫ যে ‘Experiential Learning’ বা ‘Vocational Skill Development’-কে কেন্দ্রীয় স্তম্ভ করে তুলেছে, তাতে চারুকলা অনুষদের বিষয়গুলো ‘Skill Training Centre’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ঝুঁকিতে। ফলে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-অভিনয়-গবেষণার গভীর দিকগুলো আড়ালে চলে যাচ্ছে।

চারুকলা অনুষদের সঙ্কট

১. দক্ষতা বনাম সৃজনশীলতা
নতুন শিক্ষানীতি বারবার বলছে ‘দক্ষতা বিকাশ’ ও ‘কারিগরি শিক্ষা’। কিন্তু চারুকলা অনুষদের প্রাণ হল সৃজনশীলতা, কল্পনা ও মানবিক অনুরণন। নৃত্য, নাটক, চিত্রকলা, সংগীত — এইসব শিল্পশিক্ষা কোনো ‘দক্ষতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ নয়, এরা মানুষের মনন ও সংস্কৃতির মুল ভিত্তি। দক্ষতা-নির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি চারুকলার জটিল আবেগময় ও দর্শনভিত্তিক শিক্ষাকে যান্ত্রিক করে তুলছে। ফলত তাঁর প্রকাশ অনেকাংশেই প্রাণহীন জড়ের মতো , স্বত্বাহীন হয়ে পরেছে ।   

২. আর্থিক বরাদ্দ ও গুরুত্বহীনতা
শিল্পকলার চর্চা কখনওই বাজারে লাভজনক পণ্য নয়। সুতরাং, নীতিনির্ধারকেরা যখন শিক্ষা খাতকে শিল্পোৎপাদন ও বাজারের সাথে সরাসরি যুক্ত করতে চান, তখন চারুকলা অনুষদের আর্থিক ও কাঠামোগত সঙ্কোচন অবধারিত। শিল্পকলার জন্য আর্থিক বরাদ্দ বরাবরই নগণ্য। নতুন নীতিতে শিক্ষা খাতে GDP-র ৬% ব্যয় লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও, বাস্তবে তার সিংহভাগই যাবে STEM, AI, Start-up শিক্ষায়।

চারুকলা অনুষদে কাঠামো উন্নয়ন, গবেষণার তহবিল, নব-নিয়োগ বা নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের বৃত্তি — এ সমস্তই অবহেলিত থেকে যাবে যদি বাজেটের অগ্রাধিকারে কারিগরি খাত একচ্ছত্র প্রাধান্য পায়।

৩. এক দেশ, এক কারিকুলামনীতি
রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান তার স্বকীয়তা, আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও ভাষাভিত্তিক শিল্পচর্চার মধ্য দিয়েই স্বতন্ত্র। কিন্তু কেন্দ্রীভূত কারিকুলাম ‘ন্যাশনালিজম’-এর নামে আঞ্চলিক শিল্পরূপ ও লোকশিল্পের বৈচিত্র্যকে উপেক্ষা করছে, এর ফলে বহু আঞ্চলিক নৃত্য , সংগীত বাদ্য , লোকগাঁথা যা পাঠ্যক্রম থেকে বাদ গেলে , ঐতিহ্য সংস্কৃতির শিকড় ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থেকেই যাচ্ছে ।

৪. শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ও নিয়োগ সঙ্কট
এই নীতির ফলে চারুকলা অনুষদের নতুন পদের সৃষ্টির সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষায় ‘ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট’ প্রাধান্য পাচ্ছে, ফলে বহু ক্ষেত্রে শিল্পকলার প্রকৃত শিক্ষক বা গুরুদের নিয়োগের সুযোগ সীমিত হয়ে যাবে। আজও চারুকলা অনুষদে পর্যাপ্ত স্থায়ী শিক্ষক নেই — নতুন নীতি এটিকে আরও খারাপ করবে। Guest Faculty-ভিত্তিক নিয়োগ বাড়বে, শিল্পী ও গুরুর চাকরি স্থায়িত্ব থাকবে না। ফলে নবীন শিল্পী-গবেষকরা চারুকলায় শিক্ষকতা পেশা বেছে নিতে ভয় পাবেন।

৫. অনলাইন শিক্ষা ও শিল্পশিক্ষার অন্তরায়
এই নীতি প্রযুক্তিনির্ভর অনলাইন শিক্ষাকে উৎসাহ দিচ্ছে। কিন্তু শাস্ত্রীয় নৃত্য, নাট্যশিক্ষা, সংগীত চর্চা — এরা গুরু-শিষ্য পরম্পরায়, সরাসরি শারীরিক মিথস্ক্রিয়ায় বিকশিত হয়। অনলাইন পদ্ধতি এই জীবন্ত শিক্ষা-পরিসরকে যান্ত্রিক ও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।নৃত্য, নাটক, গানের রেওয়াজ, মঞ্চাভিনয় — এগুলো সরাসরি শরীরী শিক্ষা। Online Skill Module দিয়ে কতটা সম্ভব? লকডাউনে অনলাইন ক্লাসে শাস্ত্রীয় নৃত্যের মান কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। অথচ NEP ২০২৪-২৫ এটাই স্থায়ীভাবে Flexible Mode হিসেবে চাপিয়ে দিচ্ছে।

৬ কারিগরি শিক্ষা ও চারুকলার দ্বন্দ্ব

NEP ২০২৪-২৫ ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ভোকেশনাল শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে — ভালো উদ্যোগ মনে হলেও বাস্তবে এই ‘ভোকেশনাল’ অর্থ মূলত হাতে-কলমে কাজ শেখা — যেমন দর্জি, ইলেকট্রিক, কারপেন্ট্রি, কোডিং, মেকানিক ইত্যাদি।

নৃত্য, সংগীত কি এই তালিকায় ভোকেশনাল সাবজেক্ট হিসেবে স্থান পাবে? পেলে কীভাবে? কয়টি স্কুলে শাস্ত্রীয় গুরু নিয়োগ হবে? এর স্পষ্ট নির্দেশনা নেই।

৭ সংস্কৃতি ও বহুত্ববাদ: হুমকির মুখে

ভারতের চারুকলা হাজার বছরের বহুধা ধারায় গড়ে উঠেছে — অঞ্চলভেদে আলাদা ঘরানা, ভাষা, লোকশিল্প। কেন্দ্রীয় একছত্র নিয়ন্ত্রণ এই বৈচিত্র্যকে মূল্যায়ন করবে তো?

উদাহরণস্বরূপ, বাংলা, ওড়িয়া বা আসামের লোকনৃত্য, দক্ষিণ ভারতের ভারতনাট্যম, কুচিপুড়ি, ভরতনাট্যম — এগুলোর ঘরানা ধরে রাখতে স্থানীয় বিদ্যালয়, গুরু ও আঞ্চলিক বোর্ড দরকার। অথচ নতুন কাঠামোতে এক Single National Board

৮ রবীন্দ্র চেতনার বিরুদ্ধে এক নীরব আঘাত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বাস করতেন পূর্ণাঙ্গ মানুষ গঠনের জন্য সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, নৃত্যকলা সমান গুরুত্বপূর্ণ। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সেই চেতনারই উত্তরসূরি। অথচ এই নতুন নীতি রবীন্দ্র ভাবনাকে কার্যত অস্বীকার করছে। কারণ এখানে ‘মানুষ গড়া’র থেকে ‘কর্মী গড়া’ই মুখ্য।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর শিক্ষাদর্শে বলেছিলেন — “শিল্পের মধ্যে দিয়েই সত্যের প্রকাশ ঘটে।” রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় গঠিতই হয়েছে সেই দার্শনিক শিক্ষা-অন্তরদৃষ্টি থেকে। এখানে নৃত্য, সংগীত, চিত্রকলা, নাট্যকলা — সবই গুরু-শিষ্য পরম্পরার শারীরিক ও মানসিক সাধনার ফসল।

কিন্তু প্রযুক্তি-নির্ভর ও বাজার-নির্ভর কাঠামো সেই গুরু-শিষ্য পরম্পরাকে ভিডিও লেকচার বা MOOC-এর ভেতর সংকুচিত করছে। গুরুর ছোঁয়া, ছাত্রের সরাসরি শিখন, মঞ্চের পারফর্মেন্স — এই জীবন্ত চর্চাগুলো কি শুধু ডিজিটাল টুল দিয়ে সম্ভব?

বিকল্প কী হতে পারত?

১. শিল্পকলাকে জাতীয় মূলস্রোতে আনা
শিল্পকলাকে আলাদা ‘কো-কারিকুলার’ নয়, মূল কারিকুলামের অংশ করতে হবে।

২. গুরু-শিষ্য পরম্পরার আধুনিকীকরণ
শাস্ত্রীয় শিল্পকলার জন্য আলাদা শিক্ষাপদ্ধতি, নীতি ও বাজেট থাকা জরুরি।

৩. আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা
রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্বভারতী  বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় নীতির মধ্যে নিজেদের আলাদা ঐতিহ্য রক্ষার পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে না হলে সৃজন কলা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে । 

উপসংহার

নতুন শিক্ষানীতি ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় বহুমুখী সংস্কার আনছে — এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই সংস্কারের ঢেউ যদি চারুকলা, মানবিক বিদ্যা, ও সংস্কৃতিচর্চার শিকড় উপড়ে ফেলে, তাহলে আমরা একবিংশ শতাব্দীতে উন্নত প্রযুক্তির শ্রমিক তৈরি করতে পারি, কিন্তু পূর্ণ মানুষ গড়তে পারব না।

রবীন্দ্রনাথের ভাষায় — মানুষের মুক্তি তার সৃজনশীলতাতেই।
সেই সৃজনশীলতার কেন্দ্রস্থলই যদি ক্রমশ নিঃশেষিত হয়, তাহলে নতুন শিক্ষানীতি ভারতের শিক্ষা-সংস্কৃতির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হবে। এই বিষয়ে শিক্ষক সমাজ, নীতিনির্ধারক ও সংস্কৃতিপ্রেমী নাগরিকদের সচেতন ও সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।

প্রাথমিক তথ্যসূত্র

  • Government of India, National Education Policy 2020, Ministry of Education.
  • Sen, Amartya. The Argumentative Indian. Allen Lane, 2005.
  • Tagore, Rabindranath. Sadhana: The Realisation of Life. Macmillan, 1913.
  • Tagore, Rabindranath. Sahitya. Visva-Bharati.
  • Draft National Education Policy 2023-24 Updates, Ministry of Education, Govt. of India.