May 1, 2025

রবীন্দ্রসংগীতে বিষ্ণুপুরী ঘরানার গায়কীর প্রভাব – নাঈমা পারভীন 

LOKOGANDHAR ISSN : 2582-2705
Indigenous Art & Culture
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির প্রায় পাঁচ পুরুষের যে সংগীত চর্চার ব্যপ্তি ও ইতিহাস আছে তার এক গুরুত্বপূর্ণ নাম হলো রবীন্দ্রনাথ। ঠাকুরবাড়ির সংগীতরসিকরা যে শুধু কাব্যরসেই মজে ছিলেন তা নয় তারা শাস্ত্রীয় সংগীত বা রাগসংগীত ও গায়ন শৈলীর দিকেও বিশেষ নজর রেখেছিলেন তারই নিদর্শন হলো ঠাকুরবাড়িতে বিষ্ণুপুর ঘরানার চর্চা। যে ঘরানার গায়ন শৈলীর প্রভাব রবীন্দ্রনাথ সহ ঠাকুরবাড়ির অনেক সঙ্গীতরচয়িতার গানে পাওয়া যায়।বিষ্ণুপুর গুরু শিষ্য পরম্পরায় জোড়াসাঁকো ও রবীন্দ্রনাথের নামটি খুবই আলোচিত।
কোন ঘরানার সংগীতের গায়ন কৌশল ও কন্ঠ চর্চা কেমন হবে ও কন্ঠের বৈশিষ্ট্য কেমন হওয়া উচিত এসব কিছু নির্ভর করে ওই ঘরানার কোথায় অবস্থিত, সংস্কৃতি কেমন, চিন্তাধারা, ঐতিহ্য এবং সর্বোপরী তাদের কন্ঠচর্চার ধরন। ধ্রুপদ সংগীত ইতিহাসে “বিষ্ণুপুর ঘরানা’ এমন একটি নাম যা প্রায় দুশো বছর পুরোনো সংগীত রীতি হিসেবে পরিচিত এবং অন্য ঘরানা থেকে  স্বতন্ত্র ও নিজস্ব রীতি হিসেবে ভারতীয় উচ্চাংগ সংগীত ইতিহাসে উল্লেখিত। কথিত আছে যে, বিষ্ণুপুরের রাজা দ্বিতীয় রঘুনাথের আমন্ত্রণে অষ্টাদশ শতকে সেণী ঘরানার বাহাদুর খাঁ ও পীর বকস বিষ্ণুপুরের দরবারে নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং সেই সময় থেকেই বঙ্গদেশে ধ্রুপদ গানের চর্চা সূচিত হয় এবং বিস্তৃতি ও পরিচিতি হতে থাকে। অনেক গুনী শিল্পী এই ঘরানায় শিক্ষিত ও বিকশিত হয়ে বাংলার সংগীতাকাশের বিশিষ্ট নক্ষত্র হয়ে ওঠেন।
বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সুপরিচিত সংগীতকেন্দ্র বিষ্ণুপুর রাজ্য।সেকালীন বিষ্ণুপুর গুণীদের পরিবেশিত ধ্রুপদ পশ্চিমাঞ্চলের তুলনায় সরল প্রকৃতির। বিষ্ণুপুর ঘরানার গায়নরীতি অনুযায়ী সংগীতের রূপসৃষ্টি ও প্রকাশ ঘটে আতিশয্যবিহীন এক অপরূপ গীতশৈলীর মাধম্যে যা সরল, সহজ ও অলংকার বিরল; স্বচ্ছতা ও স্বাতন্ত্র্যে বৈশিষ্টপূর্ণ।অন্যদিকে রীতিগত স্বকীয়তা প্রতিফলিত হয়েছে বিভিন্ন রাগরূপের মাধ্যমে।যেমন বসন্ত রাগে শুদ্ধ ধৈবত, ভৈরবে কোমল নিষাদের স্পর্শ, পূরবীতে তে শুদ্ধ ধৈবতের প্রয়োগ, বিভাসে শুদ্ধ স্বরের সন্নিবেশ, রামকেলিতে কড়ি মধ্যমের বর্জন ইত্যাদি তার সুপষ্ট নিদর্শন। তোমনোম সহযোগে আলাপের মাধ্যমে রাগের ধ্যানরূপে ফুটিয়ে তুলে তারপর পাখোয়াজের সঙ্গতে আলাপের মাধ্যমে চারতুকের ধ্রুপদ গাওয়া হয়। ওস্তাদির উদ্ধত না দেখিয়ে ভক্তিতে নিবেদনের ভাব বজায় রেখে ঈশ্বর আরাধনা করাই এই ঘরানার বৈশিষ্ট্য।ধ্রুপদের আদি ও মূল উদ্দেশ্য হলো ঈশ্বর বন্দনা। বিষ্ণুপুর ঘরানার ধ্রুপদ সেই ঈশ্বরপ্রেম ও নিবেদনের রূপ অবিকৃতভাবে রক্ষিত হয়েছে।এমনি নানা স্বকীয়তা নিয়ে গড়ে ওঠেছে বিষ্ণুপুর আঞ্চলিক ধারা। কয়েক প্রজন্মের গুনীদের কৃতিত্বে তার গায়কীর এই নিজ্বস বৈশিষ্ট্যগুলি সূচিত ও অর্জিত। অথচ বিষ্ণুপুর সংগীত উৎস মূলে কেন্দ্রীয় ভারতের সংগীত ধারাই প্রবাহমান।
ধ্রুপদ গায়নশৈলীর তারতম্য যদিও বিভিন্ন প্রকার বানীর মধ্যে উপলদ্ধ হয় তথাপি বিষ্ণুপুর ঘরানার ধ্রুপদ বানীর মধ্যে উপলব্ধ হয় তথাপি বিষ্ণুপুর ঘরানা ধ্রুপদ বানী হিসেবে চিহ্নিত হয়নি হয়েছে ‘ঘরানা’ নাম নিয়ে। বিষ্ণুপুর ঘরানার মূল উৎস পশ্চিমী আগ্রা বা মথুরা বলে গণ্য হলেও সেনী ঘরানার মতোই তার প্রাণকেন্দ্র হলো সংগীত পীঠস্থান গোয়ালিয়র।আরেকটি দিক হলো সেনী ঘরানার অনেক ধ্রুপদ বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রচলিত আছে। তবে এই ঘরানার ‘চাল’ বলতে অর্থাৎ সে বিশিষ্ট অন্যান্য পরম্পরা থেকে স্বতন্ত্র করেছে তাহলে গমকহীন, সরল ,অলংকার বিরল সুর মহিমা। বৃন্দাবন, মথুরা, রাজস্থান ও গুজরাটের বিভিন্ন মন্দিরের ভজন হিসেবে ধ্রুপদ্গানের যে প্রচলন আছে সেটা হলো হাবেলী সংগীত। বিষ্ণুপুর ঘরানার ধ্রুপদ গান ঐ হাবেলী সংগীতের অনূরূপ ভজন অর্থাৎ কালোয়াতি বিহীন সুরময়, ভাবময় ঈশ্বর সাধনার অভিব্যক্তি। সুরময় ভাবপ্রধান আদর্শ নিয়েই এ ঘরানার সম্পদ গঠিত।এই ঘরানার বানী শুদ্ধ আর সেজন্য তার নিজস্ব একটা মাধুর্য্য আছে। এই ঘরানার গায়কীর মধ্যে বিতিয়া ঘরানার কোন সাদৃশ্য নেই।গানের মধ্যে গমক, মীড়, মুর্ছনা ইত্যাদি একান্ত ভাবে পরিলক্ষিত হয়।সেইদিক থেকে সেনী ঘরানার সাথে বিষ্ণুপুর ঘরানার পার্থক্য সর্ববিষয়ে শুধু উচ্চারণভংগী বা বহিরঙ্গে নয়; গানের প্রাণ। অর্থাৎ ভাবরসের ক্ষেত্রেও গুরুতর পার্থক্য। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বিষ্ণুপুর ঘরানার গায়কীর মধ্যে একটা বিশেষত্ব আছে যা বিভিন্ন ঘরানার প্রচলিত গায়কীর থেকে ভিন্ন বলে প্রতীত হয়। অন্যদিকে ভারতবর্ষের অন্যান্য আদি ঘরানাগুলো যেভাবে মূল ঘরানা গোয়ালিওর ও মথুরা বৃন্দাবনের সাধক ধ্রুপদীয়াদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, বিষ্ণুপুর ঘরানার উৎপত্তি সেই মূল সূত্রের সংগে জড়িত। ফলে উত্তর ভারতে প্রচলিত ঘরানা সমূহের গায়কীর মধ্যে মূলত সামজ্যসতা থাকলেও শৈলীতে বিষ্ণুপুর ঘরানা বিশিষ্ট স্বতন্ত্রতার দাবী রাখে।ঘরানা বলতে গানের গায়কী ও তার বৈশিষ্ট্য। একই অস্থায়ী ও অন্তরা  একই গুরুর নিকট হেখা হলেও পরিবেশনকালে বিভিন্ন শিষ্যের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।এটা হয় বিভিন্ন শিল্পীর মনের চিন্তাধারা ও তার ধারন করার ক্ষমতার পার্থক্য অনুযায়ী। ভালো গলা, উন্নত বন্দনাশক্তিতে উন্নত পর্যায়ের গায়ন পরিবেশন সম্ভব।কিন্তু গায়কী রীতি বা পদ্ধতি যা ঘরোয়ানা নামের সংগেই যুক্ত তা প্রধানত আমাদের প্রকৃতি, রাগের কায়দা, তান পদ্ধতি, লয়কারি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে কিন্তু এই সবগুলোর সাথে শিল্পীর মার্জিত কন্ঠ, উন্নত বন্দনা শক্তির প্রভাব মিলিত হয়ে যখন কিছু সৃষ্টি করে তখন তার মধ্যে এই ঘরোয়ানার দুই শিল্পী হলেও পার্থক্য দৃষ্ট হয়।ফলে গায়কীর মধ্যে ধীরে ধীরে পরিবর্তন দেখা যায়। এইভাবে গায়ক তার নিজ্বস বৈশিষ্ট্য বা ধারাকে প্রতিষ্ঠা করে।
ঊনবিংশ শতকের বাংলার অবস্থাপন্ন জমিদার বাড়িগুলোতে গান বাজনার মজলিশের পাশাপাশি সংগীত চর্চাও বৃদ্ধি পায়। তখন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতেও সংগীত চর্চার চল ছিলো। মূলত ঠাকুরবাড়িতে দেবেন্দ্রনাথ হাত ধরেই ধ্রুপদ খেয়ালের চর্চা শুরু হয়। মৃতপ্রায় ধ্রুপদকে জাগিয়ে তুলেছিলেন তিনি এবং তার উৎসাহেই বিষ্ণুপুর ঘরানার সংগীত গুরুদের পদচারনা শুরু হয় ঠাকুরবাড়িতে।শুরু হয় জোড়াসাঁকো পরিবারে বিষ্ণুপুর ঘরানায় সংগীত শিক্ষা ও পরম্পরা।
          রবীন্দ্রনাথের গানেও বিষ্ণুপুরী চাল ও গায়কীর প্রভাব অনেক বেশি তবে কোথাও কোথাও এর ব্যতিক্রমও আছে; মূলত এই প্রবন্ধে রবীন্দ্রসংগীতে বিষ্ণুপুরী গায়কীর প্রভাব এবং বিষ্ণুপুরী গায়কীর ঢং ও চাল নিয়েই আলোচনা করবো।
           পূর্বেই বলেছি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে বিষ্ণুপুর ঘরানার গায়কীর প্রভাব সবচেয়ে বেশি এবং রবীন্দ্রনাথের সংগীত চর্চাতেও এর ব্যতিক্রম ছিলো না।সুতরাং ইহা বলা যেতেই আরে বিষ্ণুপুরী হিন্দুভাবাশ্রিত ধ্রুপদী সংগীতের প্রভাবেই রবীন্দ্রসংগীত প্রাণ পেয়েছিলো। যদিও তখন রবী বাবুর গান বলে পরিচিত ছিলো যা পরবর্তিতে রবীন্দ্রসংগীত নামে প্রতিষ্ঠা পায়।
          প্রসংগ যদি বরীন্দ্রনাথের গানে বিষ্ণুপুরী গায়কীর প্রভাবের কথা হয় তাহলে প্রথমের বিষ্ণুপুরী শিল্পীদের সাথে ঠাকুরবাড়ির সম্পর্কের কথা চলেই আসে। যেমন যদুভট্ট, রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংগে জোড়াসাঁকো পরিবারের যোগসুত্র ধরেই বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রসংগটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।
রবীন্দ্রনাথের ছোটবেলা থেকেই যাদের তালিম পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে যদুভট্ট ,রাধিকাপ্রসাদের মত নামগুলোই আগে উঠে আসে। তবে প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পীদের বিষ্ণুপুরে স্বলকালীন তালিম ছিলো এবং বাকি সময় তারা একাধিক ঘরানার সংস্পর্শে এসেছে। তবে এরা বিষ্ণুপুর ঘরানার চীজ বা বন্দিশের রাগরূপ ও তালের রূপকে পরিবর্তন করে তাদের সংগীত পরিবেশন করতে দেখা যেতো। উদাহরণস্বরুপ রাধিকাপ্রসাদের নাম করা যেতে পারে ।তিনি সংগীত চন্দ্রিকা গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ভীমপলশ্রী রাগের “এরি অব আনন্দ ভয়ো” বন্দিশে ব্যবহৃত শুদ্ধ নিষাদের পরিবর্তে উত্তর ভারতের সংগীত রীতির কোমলনিষাদকেই পছন্দ করতেন।আবার সংগীত চন্দ্রিকা গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত “যোগীয়া” – রাগের খেয়ালের আড়াঠেকা তালে নিবদ্ধ বন্দিশ “আজ মন ভাবনা যোগি আয়ে” এখানে চৌতালের পরিবর্তনের ধ্রুপদের বন্দিশরূপে সংগীতলিপি প্রস্তুত করেছিলেন।এইভাবে রাগরূপ, ছন্দরূপ, বা গীতিশৈলীর পরিবর্তন সাধারনত কোন ঘরানাদার শিল্পী করেন না সুতরাং ওনাকে পুরোপুরীভাবে বিষ্ণুপুরী ঘরানা শিল্পী বলা যৌক্তিক হবে না। এবং ওনার কাছে তালিম প্রাপ্ত শিষ্যরা পুরোপুরী বিষ্ণুপুরী চাল ব্যবহার করতেন না।তাহলে এটা বলার অবকাশ রাখে না যে রবীন্দ্রনাথের সংগীত রচনার ক্ষেত্রেও কোথাও কোথাও উত্তরভারতীয় ঘরানার প্রভাব আছে। অপরদিকে যদুভট্টের হিন্দি ধ্রুপদ গানে রবীন্দ্রনাথ এতটাই মুগ্ধ ছিলেন যে ওনার অনেক হিন্দি ভাংগা গানের ওপর রবীন্দ্রনাথ বাংলা কথা বসিয়ে সুরারোপ করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ যদুভট্টের “শম্ভু হয় পদ যুগ ধ্যানি বখানি নাথ রঙ্গ তোরি” সুরফাক্তা তালের তিলোকামোদ রাগের এই ধ্রুপদকে রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টি করলেন “শান্তি করো বরিষণ নীরব ধারে নাথ চিত্ত মাঝে” আবার রুমঝুম বরখে আজু এই হিন্দি ধ্রুপদটিকে কাফি রাগের সুরফাক্তা তালের উপরই রচনা হলো “শুন্য হাতে ফিরি হে” কিংবা “জয় প্রবল বেগবতী” বৃন্দাবনী সারং রাগের তেওড়া তালে নিবদ্ধ ধ্রুপদ থেকে রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টি করেছিলেন “জয় তব বিচিত আনন্দ দে কবি”। এই গানগুলো এমনভাবেই রবীন্দ্রনাথ অনুসরণ করেছিলেন যে গায়নশৈলীতেও তার প্রভাব ছিলো। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ যদুভট্ট নিয়ে বলেছিলেন, “কি সৌখিন কি পেশাদার কোনও গায়কের কোন গান ভালো লাগিলেই, অমনি সেটি টুকিয়া লইয়া আমরা ব্রহ্মসংগীত রচনা করিতে বসিতাম।এইরূপে ব্রহ্মসংগীতে অনেক বড়ো বড়ো ওস্তাদীসুর ও তাল প্রবেশ লাভ করিয়াছে। বাংলার সংগীত জগতে উন্নতি এমনি করিয়াই হইয়াছে”।অপরদিকে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “আমার আদিযুগে রচিত গানে হিন্দুস্থানী ধ্রুবপদ্ধতির রাগ রাগিনীর সাক্ষিদল অতি বিশুদ্ধ প্রমাণসহ দূর ভাবীশতাব্দির প্রত্নতাত্ত্বিকদের নিদারুণ বাগবিতণ্ডার জন্যে অপেক্ষা করে আছে। ইচ্ছা করলেওসেই সংগীতকে আমি প্রত্যাখান করতে পারি নে; সেই সংগীত থেকেই আমি প্রেরণা লাভ করি একথা যারা জানে না তারাই হিন্দুস্থানী সংগীত জানে না”। সুতরাং একটা কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় রবীন্দ্রনাথের সুর রচনা ও গায়কীতে হিন্দুস্থানীর প্রভাব এবং বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রভাব এই প্রতক্ষ্য। এর আরো পরিস্কার ধারনা পাওইয়া যাবে রবীন্দ্রনাথের পরবর্তী শিক্ষকগুরুদের সম্বন্ধে জানার পরে।রাধিকাপ্রসাদ ও যদুভট্টের পর এবার গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় আসা যাক। তিনি পুরোপুরিভাবেই বিষ্ণুপুর ঘরানার শিল্পী ছিলেন সেটা অমরনাথ ভট্টাচার্য জোড় দিয়েই বলেছিলেনঃ “গোপেশ্বরবাবুই যথার্থ বিষ্ণুপুর ঘরানার গায়ক।তার ধ্রুপদেই খাটি বিষ্ণুপুরী চাল বজায় আছে”।
গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রভাব রবীন্দ্রনাথের গানে সরাসরি আছে কিনা তা কিছুটা আন্দাজ করা যায় গোপেশ্বরের এই উক্তিতে, “ঠাকুরবাড়ির যে সকল সুপ্রসিদ্ধ কবি ছিলেন, যথা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রভৃতি ইহারা প্রায়ই হিন্দীগানের অনুকরণে এবং অক্ষর সংখ্যায় একই বাংলা গান করেন কেবল ভাব ভিন্ন। যে সকল পুস্তকের গান ভাঙ্গিয়া করেন সেই সেই পুস্তকের নাম দেওয়া হইল,যথা ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী কৃত কন্ঠকৌমুদী, কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গীতসুত্রসার, রামপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় কৃত সংগীত মঞ্জরী এবং আমার কৃত সংগীত চন্দ্রিকা”।(ভারতীয় সংগীতের ইতিহাস ২য় খন্ড)
পূর্বেও উল্লেখ করেছি সংগীত চন্দ্রিকার কথা ও সংগীত মঞ্জরী থেকেও হিন্দী ভাংগা গান রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
সত্যেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথের নাম উল্লেখ করে গোপেশ্বর যে গান গানগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলোঃ
১. “আজি মম জীবনে নামিছে”
২. “কে বসিলো আজি হৃদয়াসনে”
৩.  “শূন্য হাতে ফিরি হে”
৪. “হৃদয় বাসনা পূর্ণ হল”- গানগুলো রবীন্দ্রনাথের রচনা। মূলত এই গানগুলো হলো অনুসরণমূলক সাংগীতিক রচনা।এখান থেকে অনুমান করা যায় হয়তো বিষ্ণুপুরী হিন্দী ভাংগা গানগুলো্র মধ্যে বার বার বিষ্ণুপুরী চালের প্রভাব থেকেই যায় কিন্তু এখানে সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হলো জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সাথে বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রভাব বিস্তারিত হবার কোন ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়নি এবং এর বিস্তারিত আলোচনা বা তথ্য কোথাও উল্লেখ নেই।ফলে শুধু রবীন্দ্রনাথের কিছু কিছু গানের প্রেক্ষিতে বিষ্ণুপুর ঘরানার কেও কেও তাদের সংকলিত সংগীতলিপি গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত গানের সুরের সমধর্মিতার কথা উল্লেখ করে সাংগীতিক প্রভাবের কথা বলা হয়েছে।অপরদিকে আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো বিষ্ণুপুর ঘরানা নিয়েও কোন নথিপত্রের উল্লেখ নেই।এই ঘরানার শিল্পীরা প্রচারবিমুখ ছিলেন এবং তেমনভাবে আত্নজীবনীর উল্লেখ পাওয়া যায় না।বিষ্ণুপুরের সংগীতের ইতিহাস হয়েছে মূলত কিংবদন্তি নির্ভর সেজন্যেই রয়েছে নানা মতভেদ, সন্দেহ ও মতবিরোধ।তবুও স্বরবিতানের গানগুলো বিশ্লেষণ করে অন্তত এটুকু বলা যেতেই পারে বিষ্ণুপুরী ধ্রুপদের গায়কী বা চালের প্রভাব রবীন্দ্রসংগীতে পরিলক্ষিত।বিষ্ণুপুরী ধ্রুপদ ঠিক যেনো সরল সহজ রাগাশ্রিত প্রবন্ধ যেখানে সরলতা ও ভাবের গভীরতা অনেক বেশি থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠিক যেন এই সরলতা ও ভাবেরই প্রেমে পড়েছিলেন। তার সুরারোপেও ঠিক যেন সেই সুর ও কথার সরলতা ও ভাবের সংমিশ্রণ ফুটে উঠে।
          রবীন্দ্রনাথ সংগীত চিন্তায় বলেছিলেন, “ রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী কেবল যে গানের সংগ্রহ ও রাগীনির রূপজ্ঞান ছিল তা নয়। তিনি গানের মধ্যে বিশেষ একটি রস সঞ্চার করতে পারতেন। সেটা ছিলো ওস্তাদির থেকেও বেশি ।তিন ঘরানার রীতিতে প্রশিক্ষিত হলেও রাধিকাপ্রসাদ আসরে গাইবার সময়, বিষ্ণুপুরী উচ্চারণে, প্রধানত বেতিয়া ঘরানাকেই অনুসরণ করতেন।অনন্তলালের দ্বিতীয় পুত্র গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৮৮০-১৯৬৩) প্রথমে বিষ্ণুপুর ঘরানায় পরে বেতিয়া ঘরানায় প্রশিক্ষিত হলেও বিষ্ণুপুরী চালের গায়ক হিসেবেই সারা ভারতে খ্যাতিলাভ করেন।জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামী বিষ্ণুপুর ঘরানার পাশাপাশি কিরানা, আগ্রা ও আরো অনেক ঘরানায় তালিম নেন কিন্তু গায়কীতে বিষ্ণুপুর ঘরানার চাল সুপষ্ট”। রবীন্দ্রনাথের এই উক্তিকে একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয় যে, বিষ্ণুপুর ঘরানার নিজ্বস স্টাইল বা গায়কী। বিষ্ণুপুরী শিল্পীরা অনেক ঘরানায় তালিম প্রাপ্ত হলেও বৈশিষ্টের দিকে তারা সর্বদা অটুট ছিলেন।এবং তাদের গানের সরলতা এবং ভাবগম্ভীর খোলা আওয়াজের  প্রবণতা রবীন্দ্রনাথের উপরেও প্রভাব ফেলেছিলো অনেকটা সেটা তার গানের স্বরলিপির কাঠামো লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়।এই বিষয়ে ড.সীমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “সে যুগে বাংলাদেশে বিষ্ণুপুরী ঘরানার চর্চা প্রাধান্য পাওয়ায় এবং এই ঘরানার খ্যাতিসম্পন্ন ওস্তাদদের অনেকের সংগে ঠাকুরবাড়ির যোগাযোগ নিবিড় থাকায় পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথও সেই প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন”।
এই বিষয়ে অনেক গবেষকের একি মতামত আছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মত হলঃ
প্রবন্ধকার ও রবীন্দ্রগবেষক দেবজ্যোতি দত্ত মজুমদার বলেছেন, পশ্চিমী সেনী ঘরানার গাইয়েদের মধ্যে যখন গানে ও ঢঙ্গে পরিবর্তন ঘটল তখনো কিছু বাঙ্গালি গাইয়ে বিষ্ণুপুর পূর্বাচার্যদের নিকট প্রথম পাওয়া রাগ রাগিনীর স্বরূপের উপর নিজেদের বৈশিষ্ট্যিই রক্ষা করে চলতে লাগলেন এবং সেই বৈশিষ্ট্যই শেষ পর্যন্ত বিষ্ণুপুর ঘরানার ঢং নামে বাংলা দেশে প্রসিদ্ধি লাভ করে।প্রথম যুগে রবীন্দ্রনাথের উচ্চাংগ সংগীতের আদর্শে গঠিত গানে উল্লেখিত বিষ্ণুপুরী ঢং নামে বাংলায় প্রচলিত পদ্ধতিরই প্রভাব বেশি। কারন হলো জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ওই ধারায় শিক্ষিত বাঙালী গায়করাই শিক্ষকরূপে বরাবর স্থান পেয়ে আসছিলেন। রবীন্দ্রনাথও সেই আবহাওয়ার মধ্যে মানুষ বলে তাঁর এই যুগের ভাংগা ও স্বাধীনভাবে রচিত রাগভিত্তিক গানগুলোতে এই ধারার প্রভাবই বেশি।
     সুতরাং, পূর্বসুরিদের মত অনুযায়ী এই কথাটা একদম অযৌক্তিক হবে না যদি বলি রবীন্দ্রসংগীত কমবেশি বিষ্ণুপুরী ধ্রুপদী ঐতিহ্যের বাহক।কারন তিনি এই বিষ্ণুপুরী চালের ধ্রুপদী ঐতিহ্য কে সরাসরি লালিত করেছিলেন।এরকম আরো উদাহরণ আছে যেমন বিষ্ণুপুর ঘরানার খাস চিজ বা বন্দিশের ভাংগা গানের স্বরলিপি পাওয়া যায় স্বরবিতানে। যেমনঃ “সংসারো কোন ভয় নাহি নাহি” গানটির মূল গান সংগীত মঞ্জরী গ্রন্থে উল্লেখিত গোপেস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত বন্দিশ “শ্যাম কো দরশন নাহি”।যদি প্রসংগ হয় মূলগান তাহলে এরকম উদাহরণ আরো আছে। কেননা গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও তার ভাই সুরেন্দ্রনাথের অনেক বন্দিশ শুনে শুনে রবীন্দ্রনাথ বহু গান রচনা করেছিলেন । যেমনঃ
১. “আজি এ আনন্দসন্ধ্যা”
২. “কোথা হতে বাজে প্রেমবেদনারে”
৩. “জয় তব বিচিত্র আনন্দ কবি”
৪. “জাগো জাগো রে জাগো সংগীত”
৫.  “ডাকে বার বার ডাকে”
৬.  “তিমিরময় নিবিড় নিশা”
এই গানগুলোর উৎস বা মূলগান সংগীত মঞ্জুরী এ সংগীত চন্দ্রিকা থেকে পাওয়া যায়।আবার ব্যক্তিক্রম উদাহরন ও আছে। যেমন বিষ্ণুপুরের ‘বসন্ত’ রাগে (অন্যান্য ঘরানায় এই রাগটি শুদ্ধ বসন্ত নামে পরিচিত) রচিত এই গানের কাব্যভাবকে আত্নীকরণ করে রবীন্দ্রনাথ ৭৫ বছর বয়সে লিখেছিলেনঃ
                            নিবিড় অন্তরতর বসন্ত এল প্রাণে।
                            জগতজন হৃদয়ধন, চাহি তব পানে।।
রবীন্দ্রনাথের এই গানের কাব্যভাব, শব্দ নির্মাণ ও ছন্দের সংগে অনন্তলালের সাদরার সামঞ্জস্য থাকলেও রাগরূপ ও সুরের পার্থক্য লক্ষ্যণীয়।একথা ভুলে গেলে চলবে না সংগীতলিপিজাত সাংগেতিক রূপের প্রাণপ্রতিষ্ঠা সংগীতশিল্পীর গায়নশৈলীর উপর নির্ভরশীল ।আর সংগীতলিপির মধ্যে নিজ্বস ঘরানার শৈলীকে শিল্পী উপস্থাপিত করার কৌশল ও সাফল্য ঘরানাজাত তালিমের উপর নির্ভর করে ঘরানাজাত। আর এই সব কথা মনে রাখার জন্যেই গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় সত্যেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের বিষ্ণুপুরী শিল্পীদের সঙ্গীতলিপির আশ্রয় করে গান রচনা করার কথা উল্লেখ করে ঘরানাজাত প্রভাবের উপর জোর দিয়েছিলেন।রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে এই ঘরানার আরেকজন আলোচিত গুনী শিল্পী সত্যকিংকর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “রবীন্দ্রনাথের সুরের ও রাগরূপের উপর দখল এবং সংগীত শিক্ষার সম্বন্ধীয় বিষয়ের পরিচয় যদি বিশ্বের দরবারে রাখা হয়, তাহলে একমাত্র তাতে বিষ্ণুপুর ঘরানার নাম থাকবে”। রবীন্দ্রসংগীতে মূল গান রূপে চিহ্নিত করা সংগীত মঞ্জরী বা এবং সংগীত চন্দ্রিকার বন্দিশগুলো যেভাবে কাব্যসংগীত রূপে প্রকাশ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ; এভাবেই ধীরে ধীরে ররীন্দ্রসংগীতে বিষ্ণুপুরী প্রভাব বিষয়ে একটি মিথ গড়ে ওঠে।কিন্ত একটা প্রশ্ন এখনো বিদ্যমান তা হলো রবীন্দ্রসংগীতে বিষ্ণুপুরী ঘরানার প্রভাব যদি সেই অর্থে থেকে থাকে তাহলে ধ্রুপদের বিস্তৃত আলাপ, বাট, বা উপাজের মত উপাদান বা অংগগুলো কী কোন রবীন্দ্রসংগীতে আছে? তাছাড়া ধ্রুপদের বন্দিশরীতি অনুসারী মীড়, গমক, আশ, গমকের মত অলংকার কোন রবীন্দ্রসংগীতে পাওয়া যায় না।এমনি ধ্রুপদ, খেয়াল, টপ্পা, তারানা বা ঠুমরী গীতিশৈলীর মন বন্দিশের গায়নভঙ্গি রবীন্দ্রসংগীতে শোনা যায় না তাহলে এটা এখানে গায়নরীতির প্রভাব কথাটি কতটা যৌক্তিক? এটা অবশ্য অন্য দৃষ্টিতে বিচার করা যেতেই পারে যেটা আমিও পুর্বেও বলেছি যে,রবীন্দ্রনাথ বিষ্ণুপুরী খাস চিজ বা বন্দিশের যে সুরারোপ করতেন তা অবিকল বিষ্ণুপুরী রাগরূপ বজায় রেখেছিলেন তা স্বরবিতানেও একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়। যেমনঃ শূণ্য হাতে ফিরি হে” গানটিতে বিষ্ণুপুরী কাফি রাগের বৈশিষ্ট্য মেনেই শুদ্ধ ও কোমল দুটো নিষাদ এখানে ব্যবহার হয়।
         এ কথা অনস্বীকার্য যে, বাংলা গানের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি এটা নিজেও বলেছেন অনেকবার; রাগ সংগীত রচনা করতে চান নি আবার এটাও সত্য শাস্ত্রীয় সংগীত ও সংগীত ঘরানাকে পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারেন নি।তিনি তার ভাবনার কথা খুব স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “বাংলায় হিন্দুস্থানীর বিশেষ পরিণতি ঘটতে ঘটতে একটা নতুন সৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে। এই সৃষ্টি প্রাণবান, গতিবান, এ সৃষ্টি সৌখিন বিলাসীর নয় কলা বিধাতার”। সুতরাং বলা যায় যে, রবীন্দ্রনাথ রাগ সংগীতের গীতিশৈলীর বন্দিশ আশ্রিত রাগরূপের নির্দিষ্ট সুরবিন্যাস বা চলনকেই ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।রাগ সংগীতের আধারে কোন বাংলা বন্দিশ নয় বরং কাব্য সংগীতের জগতের এক নতুক দিক উন্মোচন করার প্রয়াস ছিলো এটা।আর এই রাগরূপ আশ্রিত বাংলা গান রচনায় যে ঘরানার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত সেটি হলো বাংলার একমাত্র ঘরানা বিষ্ণুপুর ঘরানা। মূল গান বা তুলনীয় গান আর বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রভাব কথাটি বিতর্কিত কিন্তু উক্ত আলোচনার পরে এটিকে একদম পুরোপুরিভাবে অস্বীকার করা যায় না যে রবীন্দ্রনাথের গানে বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রভাব আংশিক হলেও বিদ্যমান।
 গ্রন্থপঞ্জী
 ১.বসু মানস,জোড়াসাকো ঠাকুরবাড়ির জীবনধারা ও গান, দে’জ পাবলিশিং, জানুয়ারি ২০১৪, মাঘ ১৪২০।
 ২. ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ, সংগীতচিন্তা, বিশ্ব ভারতী গ্রন্থন বিভাগ, ২৫ বৈশাখ ১৩৯৯।
 ৩. শ্রীমানী শান্তা, ঠাকুরবাড়ির বাবু মজলিশ, পত্রলেখা, জানুয়ারি ২০১৯।
 ৪. চৌধুরী সুভাষ, রবীন্দ্রসংগতে অলংকার প্রয়োগ ও মূল্যায়ন প্রসংগে,প্রকাশনা ২০০৫ (সুচিপত্র১৪৯) আকাদেমি পত্রিকা ৭, পশ্চিমবংগ রাজ্য সংগীত আকাদেমি, ২০০৫।
 ৫. বন্দ্যোপাধ্যায় রামপ্রসন্ন, সংগীত মঞ্জরী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমি, ২০০৯।
 ৭. Das Minakshi, A Critical Analysis of the Hindustani Vocal Classical Music in West Bengal,First, Indira Kala Sangit Vishwavidyalaya. Khairaghar.
৮।মৈত্র ড.বিনতা, বিষ্ণুপুর ঘরানা ও সংগীত নায়ক গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশনা ২০০৮ সূচিপত্র (১০), রাজ্য সংগীত আকাদেমি ২০০৮।

লেখক পরিচিতি :

 নাঈমা পারভীন
 গবেষক
 ইন্দিরা কলা সংগীত বিশ্ববিদ্যালয়।
 8697729759
 naimaparven@gmail,com